#প্রিয়ন্তিকা
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |২৫|
অনুরাগ প্রাপ্তবয়স্ক যুবক। বিয়ের বিষয়ে সে একাই সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। তাই প্রিয়ন্তিকে বিয়ে করার সিদ্ধান্তে অনুরাগের বাবা মা কোনরূপ দিরুক্তি করেন নি। ছেলের ইচ্ছেকেই প্রাধান্য দিয়েছেন তারা। অনুরাগ যথেষ্ট ম্যাচিউর একজন ছেলে। নিজের জীবনসঙ্গীর ব্যাপারে সে কোনো ছেলেমানুষী করবে না, এটা অনুরাগের বাবা মা জানেন বলেই হয়ত তারা এই বিয়েতে রাজি হয়েছেন। অনুরাগের কথামত তার বাবা মা একজন ঘটক ধরেছেন। ঘটক প্রিয়ন্তির বাবার সঙ্গে কথা বলে তাদের জানিয়েছে, তারা আগামীকাল যেতে পারে। কিন্তু অনুরাগ শুনেনি ঘটকের কথা। তার মন এমনিতেই কু ডাকছে। কোনো অঘটন ঘটতে যাচ্ছে বোধ হচ্ছে। প্রিয়ন্তিকে এখনো নিজের ভালোবাসার কথা জানায় নি অনুরাগ। একদম সোজা বিয়ের প্রস্তাব দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে। কিন্তু এখন মাহতিমের কথা শুনে মনে হচ্ছে, এটা ঠিক হয়নি। প্রপোজ করেই বিয়ের কথাটা তুললে বোধহয় ভালো হত। প্রপোজ করলে প্রিয়ন্তির রাজি হবার সম্ভাবনা কম হলেও, নেহাৎ অসম্ভব নয়। প্রিয়ন্তিকে নিজের করে নেওয়ার অর্ধেক শিউরিটি পাক্কা করে তারপর বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া গেলে বোধহয় বেশি ভালো হত। কিন্তু যা হবার হয়েছে। এখন এসব ভাবা বোকামি। অনুরাগ ঘটককে স্পষ্ট বলে দিল,
‘মেয়ে দেখতে যাচ্ছি, খেতে নয়। তাই আজই যাব। আগামীকাল হবার আগেই যদি অনিশ্চিত কিছু ঘটে যায়, এটার রিস্ক আমি নিতে পারব না।’
ঘটক নিজের কথা বলেন,
‘ বাবা, সবকিছুরই একটা নিয়ম আছে। নিয়ম মেনেই আগালে বোধহয় বেশি ভালো হয়। ‘
‘ নিয়ম ভাঙব না। নিয়ম মেনেই সবকিছু হবে। কিন্তু আমি চাই, বিয়েটা যতদ্রুত সম্ভব পাকা হোক। বাকি সবকিছুর নিয়ম মেনেই হবে। চিন্তা করবেন না। ‘
অনুরাগের বাবা মায়েরও অনুরাগের সিদ্ধান্তই মেনে নিয়েছেন। ঘটক আর কি বলবেন? পাত্র যেখান নিজেই বিয়ে করার জন্যে উতলা হয়ে আছে, সেখানে উনি মানা করার কে? তবে পাত্র বড্ড অদ্ভুত আচরণ করছে। বিয়ের জন্যে বাবা মায়ের থেকে বেশি পাগল পাত্র, এমন নির্লজ্জ পাত্র খুব কমই চোখে দেখেছেন ঘটক মশাই। তাই তিনি অনুরাগের বিষয়ে আর মাথা ঘামালেন না। ছাতা হাতে করে কেটে পরলেন।
__________________
‘ ওরা আজ আসবে? ‘
মাহতিমের তীক্ষ্ম কণ্ঠের প্রশ্ন শুনে কেমন যেন আঁটসাঁট হয়ে গেল তার ছেলেপেলে। তারা নির্মল কণ্ঠে বলল,
‘ জ্বি, ভাই। একটু পরই বেরুবে। ‘
‘ ওহ, ফাইন। আমরাও এখন বের হব। শোন, তোরা পাই পাই করে পাহারা দিবি তাদের। প্রিয়ন্তিদের বাড়ি আসার সমস্ত পথ যাতে বন্ধ থাকে। একচুলও যেন খালি না থাকে রাস্তা। খালি রাস্তা পেলেই গ্যা”ঞ্জাম লাগিয়ে দিবি। পুলিশ আমি ম্যানেজ করব ভাইকে বলে। ডোন্ট ওয়ারি। ‘
ছেলেপেলে সব মাথা দুলাল। যেন মাহতিম ভাইয়ের আদেশই শিরোধার্য। দুনিয়া এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যাবে কিন্তু মাহতিম ভাইয়ের আদেশের কোনো নড়চড় হবে না। এই বিষয়ে তারা যেন বদ্ধ পরিকর। মাহতিম মৃদু হাসে। শার্টের উপর দুটো বোতাম খুলে গলার দিকটা আলগা করে দেয়। বাইরের বাতাস ঝরঝর করে ছুঁইয়ে দেয় মাহতিমের গৌড় বর্নের গলদেশ। ঘাম শুকিয়ে যেতে থাকে। মাহতিম শার্টের কলার ধরে শার্ট পেছনে ঠেলে দেয়। কপালে পরে থাকা চুল আঙুলের ফাঁকে পেছনে ঠেলে দিয়ে সহাস্যে বলে,
‘ অনুরাগের বাচ্চা। ঘুঘু দেখেছিস। ফাঁদ দেখিস নি। এবার ফাঁদও দেখবি। জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড সি। ‘
ছেলেপেলে কিছু একটা আন্দাজ করে। আগ্রহ সহকারে মাহতিমকে জিজ্ঞেস করে,
‘ ভাই, অনুরাগ দাদাকে সামনে পেলে কি করবে? জানতে ইচ্ছে করছে খুব। ‘
মাহতিমের চেহারায় হিংস্রতা দেখা যায়। সে বড্ড কঠোর হয়ে জবাব দেয়,
‘ দুই কা”মড়ে ওর কলিজা খেয়ে লম্বা এক ঢেঁকুর তুলে হজম করে বাথরুমে ছেড়ে দিয়ে আসব। ‘
ছেলেপেলে মাহতিমের কথার ধরন দেখে হা হা করে হেসে উঠে। মাহতিমও সকল রাগ একপাশে রেখে হাসিতে তাল দেয়।
______________________
গাড়িতে গরমে একপ্রকার সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে অনুরাগ। গাড়ির এসিটা দুদিন হল নষ্ট। কাজ করতে করতে এখন অবসর নিয়েছে হয়ত। জ্যাম লেগেছে রাস্তায়। যাকে বলে ভয়াবহ জ্যাম। ছাড়ার নামগন্ধ নেই। মেইন পয়েন্টে নাকি ছোটখাটো একটা অ্যা”ক্সিডেন্ট হয়েছে। সেটাকে ঘিরে পুলিশ ফোর্স দাড়িয়ে আছে। অনুরাগ বেশ খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর গাড়ি ঘুরাল। সরু গলি দিয়ে যাবার চেষ্টা করল। কিছুদূর যাবার পর সেখানে আরেক বিপদ দেখল। রাস্তার মোড়ে কিছু উঠটি বয়সী ছেলেরা মারামারি করছে। এলাকার লোকেরা মা”রামা”রি থামানোর চেষ্টা করছে। সেই দৃশ্য দেখার জন্যে পুরো গলির মানুষ এসে ভিড় করে দাড়িয়েছে রাস্তার মোড়ে। অনুরাগের এবার রাগ হল ভীষন। এসব মা”রামা”রি, এ”ক্সিডেন্ট করার আর সময় পেল না। আজই এসব হতে হল? অনুরাগ আবার গাড়ি ঘুরাল। এটাই শেষ রাস্তা। এটার মোড়ে আসতেই দেখল একই মা”রামা”রির দৃশ্য। অনুরাগ হতভম্ব হয়ে গেল। এই মা”রামা”রির ঠেলাও সম্ভব না। শেষে দেখা যাবে, সবাই মিলে অনুরাগকেই উত্তম মধ্যম দিয়ে দিচ্ছে। কি করবে? আজকেই এসব হতে হল? অনুরাগের মেজাজ চড়ে যাচ্ছে। পেছন থেকে অনুরাগের বাবা বললেন,
‘ আজ থাক আব্বা। আমরা আগামীকাল যাব। নিয়ম ভাঙলে এমনই হবে। আল্লাহ চায়নাই আজ আমরা যাই। তাই এতসব বিপদ দিতাসে। আজ যাই, আমরা নাহয় কাল আসব। ‘
অনুরাগ কথা বলে না। শুধু ভ্রু কুচকে চেয়ে থাকে সামনের মারামারির দিকে। গভীর কিছু একটা চিন্তা করছে সে। অনুরাগের মা বললেন,
‘ অনু, তোর আব্বার শরীর গরমে কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। আজ থাক না বাপ। কাল যাই আমরা? ‘
অনুরাগ পেছনে তাকায়। তার বাবা গরমে লাল হয়ে যাচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে তাদের বোঝা যাচ্ছে। অনুরাগ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। গাড়ি ঘুরায়। এসি ঠিক করে আগামীকাল আসবে সে। তবুও এত কিছু হয়ে গেল। অনুরাগের কোথায় যেন একটা সংকোচ থেকে গেল। কেন হল এসব? বুঝতে পারছে না অনুরাগ। চিন্তা করছে আর আনমনে গাড়ি চালাচ্ছে।
______________________
‘ কাজ কমপ্লিট? ‘
‘ হ ভাই। এরা ফেরত যাইতাসে। ‘
‘ ওহ, ভেরি গুড জয়। এটার জন্যেই তোরে কোনো কাজ দিলে তুই আমাকে নিরাশ করিস না। ব্রেভ ম্যান। ‘
‘ এটা কি কইন ভাই। আপনার কাম করতে পারলে এটা তো আমার সৌভাগ্য। ‘
জয় হয়ত লজ্জা পেল। তার এই লজ্জা ফোনের মধ্যে ঠিকঠাক বুঝা গেল না। তবে কথার ধরনে হালকা বুঝতে পেরেই মৃদু হাসল মাহতিম। মাহতিম ফোন রেখে দেয়। গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে সীমান্ত ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,
‘ ফোনের মধ্যে কিসের কাজের কথা বলছিলি? ‘
মাহতিম ফোন পকেটে রাখে। তারপর হেসে বলে,
‘ চাকরির ফাইলের কথা, ভাইয়া। কাউকে বলেছিলাম,ফাইলটা যেন ডিলেট করে দেয়। সম্পূর্ণ অদরকারি একটা ফাইল। ডিলেট করা খুব প্রয়োজন ছিল। কাজ হয়েছে। সেটাই বলছিলাম ফোনে। আর কিছু না। ‘
সীমান্ত আর কথা বাড়ায় না। মৃদু নিঃশ্বাস ছেড়ে গাড়ি চালানোয় মন দেয়।
#প্রিয়ন্তিকা
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |২৬|
মাহতিম এবং তার পুরো পরিবার বসে আছে প্রিয়ন্তিদের বসার ঘরে। প্রিয়ন্তির বাবা হাবিব গল্প করছেন তার দুই ছাত্রের সঙ্গে। প্রিয়ন্তি যখন শুনেছে তার বাড়িতে মাহতিম এসেছে, তখন থেকেই নিজের ঘরে ঘাপটি মেরে বসে ছিল। এক পা-ও হেলে নি নিজ জায়গা থেকে। প্রিয়ন্তির মা রান্নাঘরে যেতে পারছেন না। চুলোর আঁচ তার সহ্য হয়না। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। তাই তিনি মেয়েকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রান্নাঘরে নিয়ে এলেন। প্রিয়ন্তির রাগের কারণ তিনি জানেন না। তবে যাদেরকে প্রিয়ন্তির বাবা বেশ খুশিমনে ঘরে নিয়ে এসেছে, তাদের অ্যাপায়নের ত্রুটি হলে তাদেরই বদনাম। প্রিয়ন্তি রান্না করছে। কড়াইতে হলুদ লবণ মেশানো মাছ কটা রেখে সেটা ভাজা শুরু করে। মাছ উল্টাচ্ছে আর বিড়বিড় করছে,
‘ এসেছে কেন ও? আসবে যখন খেয়ে যাবে কেন? সেদিনের কথা ভুলে গেছে? ও ভুললেও আমি ভুলিনি। ইচ্ছে করছে খাবারে…’
আর কথা বলল না প্রিয়ন্তি। বিবেকে বাঁধলো বাকি কথা বলতে। চুপ করে মাছের শেষ টুকরো চুলো থেকে নামিয়ে চুলোর আঁচ কমিয়ে দিল। ভাত চড়াল চুলোয়।
রান্নার ফাঁকে ফাঁকে বারবার উকি দিয়ে দেখছে। মাহতিম বেশ হাসিখুশি। কথা বলছে প্রিয়ন্তির বাবার সঙ্গে। কি বিনয়-ই না দেখাচ্ছে। অভিনেতা কোথাকার। কিন্তু প্রিয়ন্তি জানে, মাহতিম কতবড় বেয়াদব একটা ছেলে। জীবনটা জাহান্নাম বানিয়ে দিয়েছে প্রিয়ন্তির। প্রিয়ন্তির চোখে আবার জল জমছে। প্রিয়ন্তি চোখের জলটুকু মুছে নিল আড়ালে।
সীমান্ত চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বেশ হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় তাকাল স্যারের দিকে। বলল,
‘ স্যার, একটা আবদার আছে আপনার কাছে। আপনি অনুমতি দিলে তুলব এখন। ‘
হাবিব ভ্রু কুঁচকে চাইলেন। আবদারটা কি সেটা তিনি বুঝতে পারছেন না। তাই হাবিব মৃদু হেসে বললেন,
‘ বলে ফেল। সাধ্যে থাকলে রাখার চেষ্টা করব। ‘
সীমান্ত তার বাবার দিকে তাকাল। বলল,
‘ বাবা তুমি বলো। ‘
মাহতিমের বাবা কথা বলতে প্রস্তুত হলেন। সুন্দর সাবলীল এবং নম্র ভাষায় প্রথম কথাটা তুললেন প্রিয়ন্তির বাবার সামনে,
‘ স্যার, আমাদের পরিবার চাইছে আপনার সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করতে। সীমান্তের মায়েরও তাই মত। আপনার মেয়ের কথা আর কিইবা জানব। গুনবতী, বড্ড ভালো স্বভাবের মেয়ে আজকাল পাওয়া যায় না। আমরা ঠিক প্রিয়ন্তি মায়ের মতই একজন পাত্রী খুঁজছি আপনার ছাত্র মাহতিমের জন্য। মাহতিম এবং প্রিয়ন্তি একে অপরকে পছন্দ করে। যেখানে ছেলে মেয়েরা নিজেদের জীবনসঙ্গী পছন্দ করে রেখেছে, সেখানে আমাদের উচিত তাদের পছন্দকে গ্রহন করে নেওয়া। মাহতিমের জন্যে আমরা আপনার মেয়ে প্রিয়ন্তির হাত চাইতে এসেছি আজ। অনুগ্রহ করে আমাদের খালি হাতে ফেরাবেন না। আমরা অনেক আশা নিয়ে এসেছি আপনার কাছে। ‘
হাবিব এসব শুনে একদিকে যেমন অবাক হোন, অপরদিকে তেমন খুশিও হোন। মাহতিমদের পরিবার সর্বদাই বেশ গণমান্য। তাদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্য সুশীল এবং ভদ্র। তাছাড়া ইয়ান ছোটবেলায় দুরন্তপনা করলেও, ছেলে হিসেবে সে বড্ড ভালো। প্রিয়ন্তিকে পাগলের মত পছন্দ করে সেটা তিনি তার আচরণ থেকেই বুঝতে পেরেছেন। তবুও হাবিব নিজের খুশি প্রকাশ করেন না তাদের সামনে। তিনি বলেন,
‘ এটা তো অতি উত্তম প্রস্তাব। ইয়ানকে ছেলে হিসেবে আমি খারাপ বলব না। তবে প্রিয়ন্তিকে একবার জিজ্ঞেস করতে হবে। তার মতামত না জেনে আমি বিয়েতে হ্যা বলতে পারছি না। ‘
মাহতিম এবার কথা তুলে,
‘ স্যার, প্রিয়ন্তির সঙ্গে কদিন আমার অভিমান চলছে। ও আমাকে বিয়ে করতে আপাতত রাজি নাও হতে পারে। স্যার বুঝেনিই তো, মেয়েদের মন। কখন কি চায়, এরা নিজেরাও জানে না। আপনি একটু বুদ্ধি করে ওকে জিজ্ঞেস করবেন। আশা করি, ও মানা করবে না। ‘
হাবিব বুঝতে পারেন। মেয়ে এমনিতেই একটু রাগি তার। একটুতেই মেজাজ চড়ে যায়। তাই মাহতিমের কথা নেহাৎ ফেলে দেবার মত নয়। তাই হাবিব বলেন,
‘ আচ্ছা, আমি দেখছি বিষয়টা। ভেতর থেকে জেনে আসছি। আপনারা একটু অপেক্ষা করুন। ‘
হাবিব উঠে পরেন নিজের জায়গা থেকে। ভেতরে যান। প্রিয়ন্তির মাকে ডেকে বলেন সম্পূর্ন ব্যাপার। প্রিয়ন্তির মায়েরও আপত্তি নেই এতে। এবার প্রিয়ন্তি কি বলে তাই দেখার পালা। হাবিব বলেন,
‘ মেয়েকে ডেকে আনো। দেখি কি বলে। ‘
প্রিয়ন্তির মা রান্নাঘর থেকে প্রিয়ন্তিকে ডেকে আনেন। প্রিয়ন্তি ওড়নার অগ্রাংশে ভেজা হাত মুছতে মুছতে বাবার কাছ আসে।
‘ কি বলবে বাবা? ‘
হাবিব গম্ভীর হবার চেষ্টা করেন। এসব গুরুত্তপূর্ণ বিষয়ে গম্ভীর হওয়াটা হচ্ছে প্রধান বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য। হেসে অবহেলা করা হচ্ছে বোকামি। হাবিব বলেন,
‘ তুমি কি কাউকে পছন্দ করো? ‘
প্রিয়ন্তি হকচকিয়ে যায়। বাবা আজই কেন এসব জিজ্ঞেস করছেন? প্রিয়ন্তি নার্ভাস হয়ে যায়। অনুরাগের কথা বলবে সেটাও সম্ভব না। কারণ অনুরাগকে প্রিয়ন্তি এখনো ততটা ভালোবাসতে পারেনি। প্রিয়ন্তির ধারণা, অনুরাগ শুধুমাত্র প্রিয়ন্তির একটা আকর্ষন। তাছাড়া আর কিছুই নয়। তাছাড়া, অনুরাগও তো প্রিয়ন্তিকে ভালোবাসার কথা জানায় নি। তাই একটা নাম না জানা সম্পর্কের কথা প্রিয়ন্তি বাবার সামনে তুলবে কি করে? হ্যাঁ, সেদিন মাহতিমের সামনে তাকে অনুরাগের সঙ্গে তুলনা করেছে প্রিয়ন্তি। কিন্তু সেটা শুধুমাত্রই মাহতিমকে তার আচরণ বুঝানোর জন্যেই করা। এছাড়া অনুরাগের সম্পর্কে প্রিয়ন্তি একটা ভালো লাগা অনুভব করে, তবে সেটা ভালোবাসা কি না জানে না সে। প্রিয়ন্তি অনেক চিন্তা করে বলে,
‘ না বাবা, তেমন কেউই নেই। ‘
হাবিব প্রশ্ন করেন,
‘ মাহতিম ইয়নকে চেনো? কেমন ছেলে সে? তুমি তাকে ছেলে হিসেবে কত নাম্বার দেবে? ‘
প্রিয়ন্তি এবার যেন আকাশ থেকে পরে। বাবার এইসব প্রশ্ন করার হেতু এবার তার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। মাহতিমরা সপরিবারে তাহলে বিয়ের প্রস্তাব দিতে এসেছে। প্রিয়ন্তি বাবার দিকে তাকায়।
‘ প্রেমিক হিসেবে নয়, তাকে ছেলে হিসেবে তুমি কত মার্ক দেবে? বাবার দিকে চেয়ে সত্যি করে বলবে! ‘
এবার প্রিয়ন্তি কিছুটা দ্বিধায় পরে যায়। প্রেমিক হিসেবে মাহতিমকে প্রিয়ন্তির সহ্য না হলেও, ছেলে হিসেবে মাহতিম অনন্য। এ কথা মিথ্যা নয়। প্রিয়ন্তি কি উত্তর দেবে এখন? মিথ্যা বলবে? বাবা শিক্ষক হবার সুবাদে মিথ্যা চট করে ধরে ফেলতে পারেন। তাছাড়া প্রিয়ন্তি সবার সামনে মিথ্যা বললেও, বাবার সামনে কখনোই মিথ্যা কথা বলে না। মাহতিমকে ছেলে হিসেবে খারাপ বলা মানে মাহতিমকে বদনাম করা। সেটা কিভাবে করবে প্রিয়ন্তি? যতই হোক, মাহতিমের প্রতি প্রিয়ন্তির আলাদা একটা টান আছে। সেটা একেবারেই অগ্রাহ্য করতে পারে না প্রিয়ন্তি। আর ভালো বললেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না। অনেক চিন্তা ভাবনা করে প্রিয়ন্তি উত্তর দেয়,
‘ সে ছেলে হিসেবে ভালো। ‘
‘ কিরকম ভালো? খুব নাকি অল্প? ‘
প্রিয়ন্তি কিছুটা দ্বিধা নিয়ে উত্তর দেয়,
‘ খুব ভালো। ‘
‘ তার সাথে তুমি সংসার করতে পারবে? সে কি সেটার যোগ্য? ‘
প্রিয়ন্তি এবার আর সহ্য করতে পারে না। রাগ নিয়ে বলে,
‘ মোটেও না। আমি তাকে বিয়ে করব না, বাবা। তুমি আমাকে প্লিজ জোর করো না। ‘
‘ কেন? তোমাদের ঝগড়া হয়েছে? ‘
‘ না, বিষয়টা এমন নয় বাবা। তুমি বুঝতে পারছ না। তার সঙ্গে আমার যায় না। ‘
হাবিব বুঝতে পারেন, মেয়ের সত্যি সত্যিই ঝগড়া হয়েছে ইয়ানের সঙ্গে। তাই হাবিব আর কথা বাড়ান না। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ান।
যেতে যেতে পেছন ফেরে প্রিয়ন্তিকে বলেন,
‘ আশা করি, বাবার সিদ্ধান্ত তোমার জন্যে সবচেয়ে উত্তম হবে। একসময় এই সিদ্ধান্তের জন্যেই আমাকে ধন্যবাদ জানাবে। বাবা কখনোই তোমার অমঙ্গল চাইব না, প্রিয়ন্তি মা। তৈরি থাকো। ‘
#চলবে
929533097975216