#প্রিয়দর্শিনী🍂
#সুমাইয়া_যোহা
পর্ব-১৪
তিনদিন হয়ে গেছে সারা আফিসে আসছে না। অফিসে সবার ব্যবহার সবকিছুই স্বাভাবিক। মাহিম ভাইয়া যে আমাদের বস সেইটা উনার ব্যবহারে বুঝা মুশকিল। বস হিসেবে যখন সবাই উনাকে স্যার ডাকা শুরু করে তখন উনি নিজেই বললেন-
: আমি আপনাদের বস হলেও আগে যেইভাবে আপনাদের সাথে আমার যেমন সম্পর্ক ছিল আমাকে যে যেভাবে ডাকতেন সেইভাবেই ডাকবেন।
মাহিম ভাইয়ার সাথে কাজের বাইরে তেমন কোনো কথা হয় না আমার। তবে সারার না আসার কারন জানতে চাইলে তাকে কিছু বলতে পারি নি। মাঝে মাঝে মাহিম ভাইয়ার এই শান্ত এবং হাসি মাখা মুখশ্রীটা দেখলে বড্ড মায়া লাগে। আর এদিকে সারাটাও লাপাত্তা হয়ে আছে। আবার উপর থেকে সারার ফোনটাও অফ। এসব কিছুর ভিড়ে নিজের ডেস্কে বসে কাজ করছি এমন সময় মাহিম ভাইয়া আবার ডাক দেন। আমি নক করে উনার কেবিনে ঢুকতেই উনি বললেন-
: ব্যাপার কি তরুনিমা? সারা অফিসে আসছে না কেন? আপনি কি জানেন কিছু? উনাকে তো কখনো এইভাবে মিস দিতে দেখিনি। আবার ফোনও তো কখনো অফ থাকে না ওনার। ওনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করুন। আর হ্যাঁ আপনাকে ঢাকা যেতে হবে পরসু দিন। আপনাকে ওখানে এক মাস থাকতে হবে। “টি-টেক” কোম্পানি যদির এই ডিলটা ফাইনাল হয়ে যায় তাহলে আমরা একটা ভালো প্রফিট গেইন করতে পারবো। এখন আপনার প্রশ্ন হতে পারে যে, “আপনাকে কেন বললাম?” অন্যকাউকে দেয়া যেত তবে আমার কাছে মনে হয়েছে আপনি ভালো করবেন আর ওই শহর তো আপনার চেনা শহর এবং আপনার পরিবারও থাকে তাই আপনাকেই চুজ করেছি। আর ডিলটা ফাইনাল আপনিই করবেন। এরপরে নিশ্চয়ই আপনার কোনো প্রশ্ন থাকবে না। আর আপনার স্থানে সারা দেখবে সব। তাই উনার এখানে থাকাটা অনেক জরুরি।
মাহিম ভাইয়ার মুখে ঢাকা যাওয়ার কথাটা শুনে হঠাৎ করে কোনো এক স্থানে এক অদ্ভুদ অস্বস্তি কাজ করা শুরু করেছে। ঠিকমতো যেন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। যেই শহরে কখনো ফিরে যাবো না বলে ছেড়ে এসেছি আবার সেই শহরেই আমাকে যেতে হবে। আমি কিছু বলতেও পারছি না। কারন উনি আমার উপর ভরসা করে আমাকে বলেছেন। মাত্র দুজন মানুষের জন্য আমি বাকি মানুষগুলোকে তো আর কষ্ট দিতে পারি না। তাই এবার যেতে হবে আমাকে।
: হোয়াট?!
হঠাৎ করেই আমার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে মাহিম ভাইয়ার বিস্ময়কর কন্ঠ শুনে আমি উনার দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করি উনার হাতে একটা কাগজ। আর সেটা দেখে উনি ভ্রু গুলো কুচকে আছে। চেহারায় অনেক বিরক্তি এবং প্রশ্ন। উনি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে কাগজটা এগিয়ে দিয়ে দেখতে বললে আমি কাগজটা নিয়ে যা দেখলাম তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
————————————————–
পান্থ রোগী দেখা শেষ করে নিজের চেম্বারে এসে চেয়ারের উপর সাদা এপ্রোনটা রেখে ওয়াশরুমে গিয়ে হাত ধুতে ধুতে হঠাৎ আয়নায় তাকিয়ে নিজেই নিজের সাথে আনমনে হেসে দেয়। যেই হাসিতে রয়েছে কারো প্রতি জমিয়ে রাখা অনুভূতি যা আয়নায় গভীরভাবে প্রকাশ পেয়েছে। রুমালে হাত মুছতে মুছতে পান্থ বেরিয়ে এসে দেখে রিন্তা বসে আছে ওর কেবিনে। রিন্তা একজন নিউরোলজির স্টুডেন্ট। রিন্তার চোখগুলো মারবেলের মতো গোল গোল। গায়ের রং শ্যামবর্ণ তবে ঠোঁটের কোণে ছোট করে কালো তিল থাকায় হাসলে ওকে অপূর্ব সুন্দরী লাগে। পান্থর সাথে রিন্তার অনেক ভালো সম্পর্ক। রিন্তা পান্থর চেয়ে বয়সে অনেক ছোট। কিন্তু ওদের কথোপকথনের বুঝা মুশকিল যে ওরা সমবয়সী নয়। পান্থকে নিয়ে রিন্তার সবসময় একটা ওভার পজেসিভনেস আছে। পান্থর বাবার সাথে রিন্তার বাবা মিস্টার আসিফ শিকদারের ব্যবসায়িক ভাবে খুব ভালো বন্ধুত্ব। আসিফ শিকদার তার মেয়েকে সবসময় সবকিছুতে স্বাধীনতা দিয়েছেন। এমনকি মেয়ে যাকে পছন্দ করবে তার সাথেই মেয়েকে বিয়ে দিবেন। পান্থ রিন্তার ব্যবহারে মাঝে মাঝে হতভম্ব হয়ে যায় তবুও ছোট ভেবে কিছু বলে না। পান্থ নিজের চেয়ারে বসে রিন্তাকে কিছু বলার আগেই রিন্তা অস্থিরচিত্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করে-
: কি ব্যাপার? এতোদিন পর বুঝি শহরের কথা মনে পড়লো? সিলেটে বাতাস খেয়ে তো এখানের সবার কথাই ভুলেই গেছো। এতো ফোন দিলাম একটাবারও কি ফোন দেয়া যেত না? নাকি আমাকে ভুলে গিয়েছিলে?
পান্থ রিন্তার কথা শুনে একগাল হাসলো। রিন্তাকে যেন পান্থর হাসিটাই ওর মায়ায় জড়িয়ে নিতে সাহায্য করছে। পান্থ কলম দিয়ে স্টিকি নোটে কিছু লিখতে লিখতেই বলল-
: তুমি ঠিকই বলেছো রিন্তা সিলেটের বাতাস খেয়ে তোমাকে ভুলে গেছি।
পান্থ কথাটা বলতে বলতে ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
: মায়া কাকে বলে তা জানি না। তবে তোমার এই হাসিটাই আমাকে বারবার তোমার মায়ায় জড়িয়ে ফেলে।
রিন্তা কথাগুলো বিরবির করে বলায় পান্থর কান অবদি কথাগুলো পৌঁছায় নি। পান্থ রিন্তার দিকে কিঞ্চিত ভ্রু কুচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে-
: কি ব্যাপার? কি বিরবির করছো তুমি? প্লিজ তুমি আবার ক্ষেপে যেও না। এমনিতেই একজনের জন্য…
পান্থ অর্ধেক কথাটা বলে থেমে যায়। রিন্তা ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিষয়টা বুঝার জন্য। পান্থ একটা মেকি হাসি দিয়ে কথা ঘুরানোর চেষ্টা করে বলল-
: ক্লাস শেষ তোমার নাকি বাকি আছে?
পান্থর হুট করে এমন প্রশ্নে রিন্তা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। কারন পান্থ কোনোদিন ওর ক্লাসের কথা জিজ্ঞেস করেনি। সে পান্থ দিকে গোল গোল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল-
: না নেই। শেষ দেখেই তো তোমার চেম্বারে আসলাম তোমার ষাথে দেখা করতে।
: যাক ভালোই হয়েছে। আমারও এখন আর কোনো কাজ নেই। যেহেতু বাইরের ওয়েদারটাও অনেক জোস। বৃষ্টি ভেজা রাস্তা, আকাশটাও অনেকটা মেঘাচ্ছন্ন। উপর থেকে মৃদু মিষ্টি বাতাস। এক কাপ চা খাওয়া যেতে পারে বাইরে। কি বলো? ইফ ইউ ডোন্ট হ্যাভ এনি প্রবলেম।
পান্থর সাথে রিন্তা এই আবহাওয়ায় চা খাবে ভাবতেই ওর যেন এখন নাচতে ইচ্ছে করছে। কারন পান্থকে তো ও এইটাই জিজ্ঞেস করতে এসেছিল। রিন্তা পান্থর প্রপোজালে রাজি হয়ে যায়। পান্থ আর রিন্তা দুজনেই চা খেতে বেরিয়ে যায়। পান্থ আর রিন্তা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে। রিন্তা চা খাওয়ার চেয়ে বেশি পান্থর দিকে তাকিয়ে আছে। পান্থর চূলগুলো বাতাসে বারবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। পান্থ সেই চুলগুলো ঠিক করছে আবার চায়ে মনোযোগ দিচ্ছে। রিন্তা এসব দেখে আড়ালে হেসে নেয়।
পান্থ রিন্তাকে ওর বাড়ি ড্রপ করে দিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। গতকালই পান্থ সহ ওর পরিবারের সবাই ঢাকায় ব্যাক করে। পান্থ বাসায় এসেই সোজা নিজের ঘরে গিয়ে জামাকাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হঋএ বসতেই মিসেস রুবিনা ট্রে তে করে খাবার হাতে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করেন।তিনি খাবারের ট্রে-টা বেডের পাশে থাকা ছোট টেবিলটায় রেখে নিজের ছেলেকে উদ্দেশ্যে করে বললেন-
: আবার কবে ঢাকা ফিরছো?
মিসেস রুবিনার হঠাৎ এমন প্রশ্নে পান্থ ভড়কে যায়। কিন্তু সে ঠিকই বুঝতে পেরেছে যে তার মামনি কেন তাকে এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছেন। সে অত্যন্ত নরম সুরে বলল-
: দেখি কবে যাওয়া যায়।
: ফোন কেন অফ তোমার? ফোনটা ওপেন করো। মেহু তোমাকে না পেয়ে পরে আমাকে ফোন দিয়েছে। তোমার জন্য একটা গুড নিউজ আছে বলে।
পান্থ চটজলদি ফোনটা চার্জ দিয়ে ওপেন করতেই পাঁচ সেকেন্ডের মাথায় মেহুর একটা ভয়েস টেক্সট পায়।পান্থ ভয়েসটা শুনেই যেন একটা হাসি দেয় যেই হাসিতে লুকিয়ে রয়েছে কোনো কিছু পেয়ে যাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা।
#প্রিয়দর্শিনী🍂
#সুমাইয়া_যোহা
পর্ব-১৫
প্রায় পনেরো মিনিট যাবত সারার ফ্লাটের দরজায় বেল বাজিয়ে যাচ্ছি। আমার জানামতে সারা ওর ফ্যামিলিকে নিয়ে থাকে। ওর কাছে আমি এটাই শুনেছি। যদিও ওর বাসায় আজ পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ হয়নি। কিন্তু আজ এক প্রকার বাধ্য হয়ে এসেছি। কাউকে কোনো কিছু না জানিয়ে হুট করেই রেজিগনেশন লেটার পাঠিয়ে দিবে সেইটা কল্পনাতেও আসেনি আমার। এমন কি হলো যার ফলশ্রুতিতে সারা চাকরি ছেড়ে দিতে চাইল?
: কে আপনি?
হুট করেই পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে পিছনে তাকাতেই দেখি সারা দাঁড়িয়ে আছে। ও আমাকে দেখে একটু অবাক হলেও নিজেকে পুরোপুরি স্বাভাবিক রেখে বলল-
: তরু আপু, তুমি এখানে? কখন এলে?
: পনেরো মিনিট হলো বেল বাজাচ্ছি। বাসায় কেউ নেই?
সারা ফ্লাটের দরজা খুলতে খুলতে অত্যন্ত স্বাভাবিক কন্ঠে বলল-
: আর কে থাকবে? আমি একাই থাকি। আমার রুমমেট যেই আপু ছিল সেও কিছুদিন আগে অন্য শহরে চলে গেছে।
সারা দরজা খুলে ঘরের ভিতর প্রবেশ করলে আমি দেখলাম সারার বাসাটা দুই রুম আর একটি কিচেন রয়েছে। ওর ঘরটায় নিয়ে গিয়ে আমাকে বসায়। ঘরে কোনো বেড নেই। ফ্লোরে বিছানা করা হয়েছে। আর অন্য ঘরটায় তালা দেওয়া। হয়তো ওর রুমমেট চলে যাওয়ায় ওই ঘরটা বন্ধ। ও ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে গেলে আমি ওর ঘরটা পুরো দেখছি। ওর একটা ছোট স্টাডি টেবিল পাশেই রাখা আছে সেখানে অনেক খাতা পত্র বই। একটা খাতা খুলে দেখতেই আমার চোখ যেন ছানাবড়া হয়ে যায়। নিজের চোখদুটো যেন ওর লেখাগুলোর উপর আটকে আছে। হঠাৎ করেই সেদিনে মাহিম ভাইয়ার দেয়া চিঠির হাতের লেখাগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
পার্টির দিনটিতে…………
মাহিম তরুনিমাকে পকেট থেকে একটা চিঠি বের করে এগিয়ি দেয়ার পর তরুনিমা সে চিঠিটি খুলে চমকে গিয়েছিল। সে মাহিম ভাইয়ার দিকে একবার তাকিয়ে সেই চিঠিটি গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়া শুরু করল-
“কিভাবে শুরু করবো তা আমার জানা নেই। আপনাকে আমি ভার্সিটির এক বর্ষবরণ উৎসবে প্রথম দেখেছিলাম। কখনো ভাবিনি পড়াশুনার বাইরে কখনো কাউকে এতোটা ভালো লাগবে। প্রথমত ভেবেছিলাম এই ভালো লাগা হয়তো মোহ। কারন মোহ চিরস্থায়ী নয়। কিন্তু এটা যে মোহ নয় সেটা বুঝতে আমার দেরি হলো না। তবে সাহস হয়ে উঠে নি বলার যে ভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ারের পড়ুয়া এক মেয়ে আপনাকে পছন্দ করে। কখনো ভয়ে আপনার সামনে যাওয়ার সাহস করতে পারেনি। কিন্তু যখন জানলাম যে পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে আপনি অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখনই মনে হলো এইবার আর ভীতু হলে চলবে না। দুটো বছর ধরে যেই ভালোবাসাটিকে নিজের অন্তরীক্ষের আড়ালে বপন করেছি সেইটা বলে দেয়াই শ্রেয়। যাকে ভালোবাসি তাকে সেই কথাটা বলে দিতে হয়। নতুবা আফসোস করতে হবে এই ভেবে যে তাকে চাইলেই নিজের করে নিতে পারতাম হয়তো কিন্তু বলতে সাহস হয়নি। তাই সে আজ অন্যকারো। তাই একটু সাহস জুগিয়ে এই চিঠিটা লিখলাম। কারন আপনার সামনে গিয়ে এই কথাগুলো বলতে পারবো না। অন্যত্র চলে যাওয়ার আগে একটি বার আমার সাথে দেখা করার অনুরোধ রইল। ভার্সিটির পিছনে যে বড় কৃষ্ণচূড়া গাছটা রয়েছে সেই গাছটার নিচে আমি অপেক্ষা করবো। অনুরোধ রইল আপনি আমাকে নিরাশ করবেন না।”
তরুনিমা চিঠিটা পরে বাকহীন ভাবে তাকিয়ে ছিল মাহিমের দিকে। মাহিম চিঠিটা তরুনিমার হাত থেকে নিয়ে ভাজ করে আবার নিজের পকেটে রেখে ম্লান হেসে বলল-
: মেয়েটার নাম তিথি। ওইদিন তিথির চিঠিটা পেতে আমার অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। আমার ফ্রেন্ড জাবেদের কাছে চিঠিটা দিয়েছিল সে। কিন্তু আফসোস সেই চিঠিটা জাবেদের থেকে দোলা নিয়ে নেয়। দোলা আমাকে পছন্দ করতো বিধায় সে চায়নি আমি চিঠিটা পাই। পরবর্তীতে জাবেদের জোরাজুরির কারনেই দোলা আমাকে চিঠিটা দিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল কিন্তু সেই চিঠিটা আমার হাতে আসে তিন বছর পর। ততোদিনে তিথির আর কোনো খোঁজ আমি পায়নি। জাবেদ শুধু ওর নামটা জানতো। ওর ফ্রেন্ডরাও জানতো না ও কোথায় চলে গিয়েছে। কারন পরীক্ষা ছাড়া তিথি আর ভার্সটিতে আসেনি।
: তারপর?
: তারপর! হাহ… ওর পরিবারের খোঁজ নিয়েছিলাম তারা শুধু বলেছে সে বিয়ে করবে না বলে পালিয়ে গেছে। আর কিছুদিন পর জানায় এই শহরে থাকে। এখনো খুঁজে বেরাচ্ছি তাকে আমি এই শহরে। প্রথমে আপনাকে তরুনিমা ভেবেছিলাম আপনি হয়তো তিথি। কিন্তু আপনি আমার ধারনা আগেই ভুল করে দিয়েছেন যেদিন আমি আপনাকে পান্থর সাথে দেখেছিলাম। আপনাকে এসব বলার একটাই কারন আপনি যাতে আমাকে ভুল না বুঝেন।
: আপনি তো শুধু তার নাম জানেন তাকে কেন ভালোবাসতে যাবেন?
: কোনো কারন নেই। তবে এতোটুকু জানি যে, যেই মানুষটা আমাকে এতোগুলো বছর ভালোবাসতে পারে এমনকি এখনো অবদি ভালোবাসে, সেই মানুষটার ভালোবাসাকে পরিপূর্ণতা দেয়ার দায়িত্ব আমারই।
তরুনিমা কেবল মাহিমের কথাগুলো নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুনেছিল।
সারা ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ বের হয়ে ঠোঁটের কোণে একটা ছোট হাসি দিয়ে বলল-
: কি দেখছো এইভাবে আপু আমার খাতায়? কোনো মহামূল্যবান বস্তু খুঁজে পেলে নাকি?
সারা কথা শুনে আমি ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসি। তারপর ওর দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললাম-
: এর চেয়েও বেশি কিছু খুঁজে পেয়েছি।
: তা আমাকেও বলো কি এমন পেলে?
: তুমি যে সারা নও তুমি তিথি। তাই খুঁজে পেলাম।
সারা আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। সে একটা মেকি হাসি দিতে না বুঝার ভঙ্গিতে বলল-
: তিথি? কে তিথি? এখানে কোনো তিথি থাকে না।
আমি সারার দিকে এগিয়ে গিয়ে জোরালো কন্ঠে বলল-
: সত্যিই তুমি তিথিকে চিনো না? আর কতো নিজেকে আড়াল করে রাখবে তুমি? নিজের পরিচয় আর কতোদিন লুকোবে?
: পরিচয় লুকাবো কেন তরু আপু? আর তোমার কাছে কি প্রমাণ আছে যে আমি তিথি?
আমি আর কিছু বলতে নিয়েও থেমে যাই। ও যে সারা নয় তিথি এইটা আমার কাছে পানির মতো পরিষ্কার। আর তার প্রমাণ হলো ওইদিন পার্টিতে মাহিম ভাইয়ার দেখানো ওই চিঠিটা। ওই চিঠির হাতে লেখা আর এই খাতায় সারার হাতের লেখা সম্পূর্ণ এক। সময়ের সাথে সাথে আর যাই হোক একটা মানুষের হাতের লেখা বদলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ওইদিন পার্টিতে ও কেন মাহিম ভাইয়ার আসল পরিচয় জেনে অবাক হয়নি সেটাও আজ বুঝতে পারছি। নিজেকে শান্ত রাখি যাতে ও যেন কিছু না বুঝতে পারে। মাহিম ভাইয়া সবকিছু জানাতে হবে এবং ও নাম পরিবর্তন করে চাকরিতেও কিভাবে চান্স পেল তাও জানতে হবে আমার। তাই সারাকে খুব শান্ত গলায় আমি বললাম-
: একটা কথা রাখবে আমার। আমি এক মাসের জন্য ঢাকায় যাচ্ছি। আমার অবর্তমানে তোমাকে সামলাতে হবে সবকিছু। আমি জানি তুমি চাকরিটা ছেড়ে দিতে চাইছো। আর তার জন্য রেজিগনেশন লেটারও পাঠিয়েছো মাহিম ভাইয়ার কাছে। উনি তোমার এইটা কাজের জন্য অনেকটা রেগে গেছেন। উনাকে এইভাবে রেগে যেতে আজ প্রথম দেখেছি। এই একটা মাস তুমি চাকরিটা করো। তোমার বড় বোনের এই সাহায্যটুকু করো। আমি আসার পরে তুমি চলে যেও। আমি তখন আটকে রাখবো না তোমাকে।
সারা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর ওর যেন আমার কথায় রাজি হয়। আমিও হাফ ছেড়ে বাঁচি। সারা থেকে বিদায় নিয়ে সোজা বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিয়ে উল্টো পথে আবার যাওয়া শুরু করি।
#চলবে____
(