প্রেমিক-অপ্রেমিকের গল্প
লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা
|৭|
ধ্রুবর দেওয়া বাহাত্তর ঘন্টা যেন কর্পূরের মতো উড়ে গেল। তখন শীতকাল। অথচ সারাবেলা আষাঢ়িয়া বর্ষা। ঝুমঝুম করে জল পড়ছে। আমি উত্তেজনা আর ভয়ে ঘরময় পায়চারী করছি। প্রিয়তা মুখের সামনে বিশাল এক আয়না ধরে রূপচর্চায় ব্যস্ত। তার মনে এখন বিশাল দুঃখ। সুন্দর, ঢুলঢুলে মুখখানিতে অ্যালোবেরা মেখে মাঝে মাঝেই দুঃখী দুঃখী চোখে তাকাচ্ছে। সম্প্রতি তার ধারণা হয়েছে, ধ্রুবর সাথে আমার ‘মহাপাপ’ ধরনের সম্পর্ক আছে। এই ‘মহাপাপ’ সম্পর্কের ‘মহাপাপী’ কে সে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছে না। দুঃখে তার প্রাণটা ফেঁটে যাচ্ছে। টাইটানিক পোজে, সাংকিপাড়ার রেললাইনটাতে মাথা দিতে ইচ্ছে করছে এই নিয়ে তেরো বার।
‘ কামডা কিন্তু আপনে ঠিক করেন নাই আফা। আপনে বড় ভাইজানের সাথে পেরেম করেন এইডা আমারে কইলে কী আমি কাউরে কইতাম? কইতাম না। এই জমিলা কতা লাগানোর মানুষ না। নিচের তলার রিনি আফা যে উত্তরের বিল্ডিংয়ের পোলাডার লগে পেরেম করে, আমি কাউরে কইছি? কই নাই।’
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। পায়চারি থামিয়ে জমিলা আপার মুখোমুখি বসলাম। জমিলা আপা এই বিল্ডিংয়ের সরকারি আপা। বাচ্চা থেকে বুড়ো সবার তাকে ‘আপা’ বলে ডাকতে হয়। কার ঘরে কী হচ্ছে? কোন তলার ভাবী নতুন শাড়ি কিনেছে? কার বর বউয়ের আঁচলে বন্ধী? কোন মেয়েটা ভেগে গিয়েছে? কোন মেয়েটা কত নাম্বার ছ্যাঁকা খেয়েছে? সবকিছুই তার কাছে আবহাওয়া কর্মীদের মতোই ঝকঝকে, পরিষ্কার। আমি তাকে মধু গলায় আপা ডাকলাম। বললাম,
‘ জমিলা আপা? আপনার বড় ভাইজানের সাথে আমার কোনো প্রেম ট্রেম চলছে না। যে আপনাকে খবরটা দিয়েছে, সে অত্যন্ত মিথ্যাবাদী। দ্বিতীয়বার দেখা হলে তাকে কষে একটা চড় মারবেন। এক চড়ের জন্য একশো টাকা।’
জমিলা আপা আমার কথা বিশ্বাস করলেন না। পুঁইশাকের ডাঁটা বাছতে বাছতে মুখ বাঁকালেন। চোখদুটো সর্বজান্তার মতো চিকচিক করে উঠল। বললেন,
‘ এখন আর মিছা কইয়া কী হইবো আফা? বিল্ডিংয়ের বেবাকে জানে আপনার লগে বড় ভাইজানের ইটিশ পিটিশ সম্পর্ক। বড় ভাইজানই তো আপনাগো এই বাসাটা খুঁইজা দিছে। সঙ্গে পাঁচশো টাকা ফিরি। বড় ভাইজান তো আমাগো মাটির মানুষ। নইলে পাঁচশো টাকা ফিরি দিতো?’
আমি হতভম্ব চোখে চেয়ে রইলাম। মাথার উপর বিশাল আকাশটা টুপ টুপ করে ভেঙে পড়ে গেল। পাঁচশো টাকা ফিরি! মানে কী? আমি প্রেমিকের ফিরি দেওয়া বাসায় থাকছি? এতোবড় অপমান! রাগ আর বিস্ময়ে থমথমে মুখে বসে রইলাম আমি। প্রিয়তার মুখটা সদ্য স্বামীহারা বিধবার মতো ফ্যাকাশে হয়ে গেল। হাতের আয়নাটা ছুঁড়ে ফেলে এক ছুটে আমার পাশের সোফায় এসে বসলো। চোখ বড় বড় করে চেয়ে বলল,
‘ পাঁচশো টাকা ফিরি থুক্কু পাঁচশো টাকা ফ্রী! নিশু? তুই চুপিচুপি পাঁচশো টাকা মেরে দিচ্ছিস অথচ আমাকে বলিসনি? ইয়া আল্লাহ! ইয়া খোদা! আমি এসব কী শুনছি? জমিলা আপা? আমাকে টেনেহিঁচড়ে রেললাইনের উপর ফেলে দিয়ে আসেন। আমি আর বাঁচতে চাই না।’
আমি ফুঁস করে নিঃশ্বাস ফেললাম। দুই হাতে মাথা চেপে স্থির চোখে চেয়ে রইলাম সাদা ধবধবে ফ্লোরে। জমিলা আপাকে কঠিন কিছু কথা শোনাতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু ইচ্ছে সফল হলো না। প্রিয়তা আর জমিলা আপার আহাজারিতে দিশেহারা হয়ে পড়লো আমার সাদামাটা উত্তর। মাস দুই আগে যখন বাবা বাসা ঠিক করে দিয়েছিলেন, তখন যে আমি ‘জমিলা আপার বড় ভাইজান’ তো দূর বড় ভাইজানের বাবাকেও চিনতাম না, সে কথা কেউ বিশ্বাস অব্দি করলো না। প্রচন্ড রাগে আমার মাথাটা দাউদাউ করে জ্বলতে লাগলো। চোখ-মুখ শক্ত করে বললাম,
‘ আমার বাবার যথেষ্ট টাকা আছে। আপনার বড় ভাইজানের পাঁচশো টাকার অফার আমার প্রয়োজন নেই। এসব ছাঁইপাশ কথা আমাকে বলবেন না। তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’
প্রিয়তা ভ্রু উঁচিয়ে চাইল। ঠোঁট উল্টে প্রায় কেঁদে ফেলার মতো করে বলল,
‘ সম্পর্ক নেই? সিঁড়ির তলায় দাঁড়িয়ে চুমু টুমু খেয়ে ফেলছিস আর বলছিস সম্পর্ক নেই? তুই আমাকে এভাবে ধোঁকা দিতে পারলি নিশু? আমি তোকে নিজের আত্মা মনে করি আর তুই!’
আমি দাঁতে দাঁত চেপে প্রিয়তার দিকে চাইলাম। জমিলা আপা আকস্মিক ব্রেকিং নিউজে চোখ বড় বড় করে চাইলেন। কয়েক সেকেন্ড কোনো কথা খোঁজে না পেয়ে গগনবিদারী চিৎকারে কাঁপিয়ে দিলেন সারা ঘর। হয়তো-বা পুরো ময়মনসিংহ শহর। মার্বেলের মতো গোল গোল চোখদুটো দিয়ে আমায় এক রকম ছেঁকে ফেলে বললেন,
‘ হায় আল্লাহ! কয় কী? এই কতাখান খালাম্মারে আমি কেমনে কমু? আস্তাগফিরুল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ! বড় ভাইজানের মতো এমুন ভালা মানুষ এগোলান করে? আমার তো দুনিয়াডা ঘুরতাছে আফা। আফা আজকে আমার ছুটি। আমি আজকে রাঁন্ধন বাড়ন করতে পারতাম না। আমার কলিজাডা ধুকপুক ধুকপুক করতাছে।’
আমি হতাশ চোখে চাইলাম। জমিলা আপার ধুকপুক ধুকপুক যে আজ রাতের মাঝেই পুরো দেশের ধুকপুক বাড়িয়ে দিবে তাতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহও রইলো না। রাগে দুঃখে প্রিয়তার পিঠে সটান একটা চড় বসালাম। প্রিয়তার কোনো ভাবান্তর হলো না। টি-টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি গিলে মাতালের মতো পড়ে রইলো। আমি একা একা পাঁচশো টাকা মেরে দিয়েছি এই ভয়াবহ সংবাদ তার হজম হচ্ছে না। আমার এতোবড় বিশ্বাসঘাতকতা মেনে নেওয়া অসম্ভব! আমার মনটা হঠাৎই খুব খারাপ হয়ে গেল। এই অযাচিত ঝামেলাগুলো মনে পড়েই চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হলো। বুকের ভেতর সাধু-সন্ন্যাসীর মতো বসে থাকা বেয়াদব মনটা তীর্যক হেসে বলল,
‘ পড়ো! আরও পড়ো ময়মনসিংহ। বাবা মানা করেছিল না? এবার মন দিয়ে প্রেমের পড়া পড়ো।’
আমি অসহায় মুখে বসে রইলাম। বসার ঘর থেকে উঠে নিজের ঘরে দোর দিতেই চোখ ছাপিয়ে জল গড়ালো। ঘড়ির কাঁটা গুলো টং টং করে জানান দিলো, আর মাত্র চল্লিশ ঘন্টা! মাত্র চল্লিশ ঘন্টায় কী করে কী করব আমি? ক্যাম্পাসে, মহল্লায় মাইক মারব? নাকি দেওয়ালে দেওয়ালে পোস্টার লাগাব? নাকি ফেস্টুন নিয়ে জনসভা করব? নিজের অসহায়ত্বে নিজেরই খুব মায়া হলো এবার। মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে ইচ্ছে করল, আহারে! ভোলাভালা, অবুঝ বাচ্চাটা! থাক, কান্না করে না।
দুপুরে গড়িয়ে বিকেল হতেই আচমকা থেমে গেল বৃষ্টি। আকাশ ছাপিয়ে ঝকঝকে রোদ উঠল। আমি আকাশ-পাতাল চিন্তা করতে করতে বারান্দায় চেয়ার টেনে বসলাম। বারান্দার পাঁচিলে মাথা হেলিয়ে চুপচাপ আকাশের দিকে চাইলাম। মাথার উপর ঝকঝকে আকাশ দেখতে দেখতেই বুঝি চিন্তারা সব মিলিয়ে গেল। বুকের ভেতর ভর করলো প্রেমময় রবীন্দ্র। ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে নিঃশব্দ মনটা আলতো আলতো নড়েচড়ে উঠল,
‘ হাল ছেড়ে আজ বসে আছি আমি,
ছুটি নে কাহারো পিছুতে;
মন নাহি মোর কিছুতেই, নাই কিছুতে।’
রবীন্দ্র ভাবটা বেশিক্ষণ টিকল না। মুখের উপর আচমকা জল এসে পড়ায় কবি কবিভাব উবে গেল। হতচকিত আমি সোজা হয়ে বসলাম। প্রথম দফায় কিচ্ছুটা বুঝতে না পেরে বোকার মতো মুখ মুছলাম। কয়েক সেকেন্ড থম ধরে বসে থেকে পাঁচ তলার বারান্দার দিকে চাইলাম। আর তারপরই বিস্ময়ে চোখ বড় বড় হয়ে গেল আমার। পাঁচ তলার বারান্দায় পা ছড়িয়ে বসে আছে চিওমিও। ছোট্ট একটা মগ থেকে হাতখানি বড় এক পাইপে জল ঢালছে। আর সেই জল এসে পড়ছে আমার বারান্দায়। আমি বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম। এদের তিন ভাইয়ের নতুন নতুন নাটক দেখে আমি বিভ্রান্ত, হতচকিত। তবে চিওমিওয়ের মাঝে কোনো ভাবান্তর হলো না। সে মনের সুখে আমাকে লক্ষ্য করে জল ছুঁড়াছুঁড়ির চেষ্টা চালাতে লাগল। আমি বরাবরই চুপচাপ। বড় ভাই জোরপূর্বক বাচ্চার বাবা হয়ে যাচ্ছে তাকেই কিছু বলতে পারিনি। ছোটোজনকে কিছু বলবো এ যেন এক অলীক কল্পনা। তবে প্রিয়তা থেমে থাকল না। সে আমাকে স্তব্ধ হয়ে উপরের দিকে চেয়ে থাকতে দেখে ছুটে এলো বাইরে। পাঁচিলে ছড়িয়ে রাখা জামা-কাপড়ের এহেন দশা দেখে হাহাকার করে উঠল। বারান্দা থেকে ঝুঁকে উপরের দিকে চেয়েই লম্বা হাত দিকে টেনে ধরলো পাইপের মুখ। চিওমিও ছোট্ট গোল মুখটা হেলিয়ে পাইপ আটকে যাওয়ার কারণ দেখলো। তারপর প্রাণপণ উপরের দিকে টানতে টানতে বলল,
‘ আমার! আমার!’
প্রিয়তাও কম যায় না। পাইপটি টেনে ধরে রেখে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ আমার!’
চিওমিওের তখন কেঁদে ফেলার দশা। তিনটা ভাই-ই ভয়াবহ ড্রামাবাজ। সুযোগ বুঝেই দুনিয়া হেলিয়ে দেওয়ার মতো চেঁচিয়ে উঠে বলল,
‘ আমার। ছাড়! ছাড়! বাইয়া!’
ঠিক তখনই চিলের মতো উড়ে এসে রেলিঙের উপর ঝুঁকে পড়ল একটা মুখ। নিচের দিকে চেয়ে চোখ বড় বড় করে বলল,
‘ এই ঝগড়াঝাঁটি? তুমি আমার ভাইয়ের খেলনা নিয়ে টানাটানি করছ কেন? ছাড়ো।’
প্রিয়তা ফুঁসে উঠে বলল,
‘ আরেকবার ঝগড়াঝাঁটি বললে ইট ছুঁড়ে মারব। আমাদের জামা কাপড়ের এহেন দশা করে এখন আমাকেই ধমক! পাইপ আমি ছাড়বো না। জোর যার মুলুক তার। দেখি কে জেতে? নিশু?ধর!’
আমি হতাশ দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আবির খপ করে পাইপের অন্য মাথা চেপে ধরল। প্রিয়তা চেঁচামেচি করে ঘর মাথায় করলো। জমিলা আপাকে একশো টাকার লোভ দেখিয়ে নিজের দলে বেড়িয়ে নিয়েই চললো প্রাণপণ লড়াই। আমি হতভম্ব হয়ে এদের পাগলামি দেখলাম। আবির অভিমানী কন্ঠে বলল,
‘ ভাবী! তোমার চোখের সামনে এমন ভয়াবহ একটা কান্ড ঘটে যাচ্ছে আর তুমি কিচ্ছু বলছো না? তোমার ইনোসেন্ট দেবর দুটোর প্রতি কী কোনো মায়া দয়া নেই?’
আমি উত্তর দিলাম না। আবির জমিলা আপাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘ জমিলা আপা? আমি তোমাকে দুশো দেব। ছেড়ে দাও।’
জমিলা আপা গদগদ হেসে হাতের পাঁকড়টা কিছু হালকা করতেই চোখ পাকিয়ে তাকাল প্রিয়তা,
‘ আমি তিনশো দেব।’
জমিলা আপা আবারও বদ্ধ পরিকর হয়ে ষাঁড়ের শক্তিতে নিচের দিকে টান লাগালেন। আবির ব্যস্ত হয়ে বলল,
‘ আমি চারশো দেব।’
চিওমিও পাইপটা ছেড়ে দিয়ে আবিরের দিকে চাইল। ছোট্ট ছোট্ট হাতে ভাইয়ের গালে হাত বুলিয়ে হাত পাতলো,
‘ আমি চাশো নিব। দাও।’
এই বৃহৎ নাটকের এই পর্যায়ে ভীষণ বাবু সেজে নিচের দিকে উঁকি দিল পেটানো শরীরের ভয়াবহ অসভ্য লোকটা। নেশা ধরানো গম্ভীর চোখদুটো মেলে আমার দিকে চেয়ে রইলো। স্থির, অপলক। কোনো এক অদৃশ্য জাদুবলে আমার চোখদুটোও ঠেকলো তার চোখে। কয়েক সেকেন্ডের নীরব হিল্লোল শেষে ডান ভ্রুটা খানিক উঁচু করল সে। মূর্তির মতো কাটা কাটা মুখটি স্থির থাকলেও নেশালু চোখদুটোতে বয়ে গেল মৃদু হাসির ঢেউ। আমার দিকে চোখ রেখেই নিচু হয়ে এক টানেই ছিনিয়ে নিলো গোটা পাইপ। প্রিয়তা আর জমিলা আপা নিজের খালি হাতের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থেকে একবার ধ্রুব তো একবার আমার দিকে চাইল। ধ্রুব তখনও আমার দিকে চেয়ে আছে। এদিকে চেয়েই একটু একটু করে গুটিয়ে নিচ্ছে পাতলা, লম্বা পাইপ। প্রিয়তা ধ্রুবর দৃষ্টি খেয়াল করেই সাপের মতো ফুঁসে উঠল। জ্বলে উঠে বলল,
‘ তোর বরের জন্য হেরে গিয়েছি। নিজের বরকে একটু হাতে রাখতে পারিস না?’
জমিলা আপাও সুর তুললেন,
‘ আপনে ভাইজানরে কইলেই কিন্তু আমরা জিত্তা যাইতাম। আপনের জন্য পাঁচশো টাকা ফিরি দিছে আর একটা পাইপ ফিরি দিতে পারতো না?’
আমার মেজাজটা আবারও গ্যাস বেলুনের মতো ফুলে উঠল। জমিলা আপাকে একটা রাম ধমক দিয়ে কটমটে চোখে ধ্রুবর দিকে চাইলাম। ধ্রুব তখনও শান্ত, স্থির। অথচ তার চোখদুটোতে মিষ্টি হাসির হুল্লোড়। আমি দপদপে রাগ নিয়ে ব্যালকণি ছেড়ে শোয়ার ঘরে এলাম। আগেপিছে কিছু না ভেবেই কালকে যে নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছিল সে নাম্বারে ডায়াল করলাম। বেশ কিছুক্ষণ বাজার পর ফোন রিসিভ হলো। ওপাশ থেকে হাসি হাসি গলায় উত্তর এলো,
‘ বলো।’
আমি রাগান্বিত কন্ঠে বললাম,
‘ বলো! কীসের বলো? আপনি হাসছেন কেন?’
আমার অধৈর্যে গলায় আওয়াজ করে হেসে ফেলল ধ্রুব। কৌতুক করে বলল,
‘ পাঁচশো টাকা ছাঁড় দিয়েছি তবু হাসতে পারব না?’
ধ্রুব আমায় ইচ্ছে করে রাগাতে চাইছে বুঝতে পেরেও রাগে-দুঃখে শরীর জ্বলে উঠল আমার। দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
‘ তাহলে এসব আপনার কাজ! জমিলা আপাকে আপনিই বলেছেন এসব?’
‘ উঁহু। মায়ের কাছে শুনলাম। তিনিও বোধহয় জমিলা আপার থেকেই শুনেছেন। তাঁর লক্ষ্মীমন্ত ছেলে চারতলার মেয়েটার প্রেমে ভেসে যাচ্ছে, এই দুঃখ তিনি মেনে নিতে পারছেন না। পাশের বাড়ির আন্টির কল্যাণে তিনি বিশ্বাস করেছেন, তুমি আমাকে ঔষধ করেছ। নয়তো এতো ভালো ছেলেটার এমন মাথা খারাপ হওয়ার কথা নয়। সত্যিই করেছ নাকি অ-প্রেমিকা?’
এই পর্যায়ে এসে রেগে যাওয়ার মতো ধৈর্যও আমার রইলো না। ভীষণ ক্লান্ত গা’টা বিছানায় এলিয়ে দিয়ে বললাম,
‘ আপনি এতো খারাপ কেন অ-প্রেমিক?’
#চলবে……
(