প্রেমের রঙ পর্ব -১৪

#প্রেমের_রঙ
#পর্ব_১৪
#মোহনা_হক

‘ইজহানের কথায় পদ্ম ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কখনো এই লোক ভালো হবে না, সে ভালো করেই জানে। তার কি একটুও লজ্জাবোধ নেই? একটা অসহায় মেয়ে কে পেয়ে এসব বলে। ইজহান পদ্মের মলম লাগানো শেষ করে আবার জায়গা মতো মলম রেখে দেয়।’

“শুনো এটা আবার লাগিয়ে নিও। প্রত্যেকবার যে আমি লাগিয়ে দিবো সেটা ভেবো না।”

‘ইজহানের কন্ঠ স্বাভাবিক। পদ্মের ভিষণ অভিমান হলো কথাটি শুনে। দ্রুত পায়ে রুম থেকে চলে আসলো। নিচে হায়াৎ শেখ আর মুনিরা শেখ বসে কথা বলছেন। পদ্ম তাদের কাছেই গেলো।’

‘পদ্মকে দেখে হায়াৎ শেখ বললেন-‘

“কি গো তোমার বরের সেবা শেষ হয়েছে?”

‘পদ্ম সৌজন্যবোধক হাসি দিলো তবে কিছু বললো না। মুনিরা শেখ পদ্মকে ওনার পাশে বসিয়েছেন।’

‘মুনিরা শেখ পদ্মের চিবুক ধরে বললো-‘

“পরের বার দেখে শুনে হাঁটবে। বড় হয়েছো বিয়ে হয়েছে সবদিকেই খেয়াল রাখতে হবে।”

‘পদ্ম মাথা নাড়িয়ে বললো-‘
“জ্বী মা।”

‘হায়াৎ শেখ পদ্মের কাঁধে হাত দিয়ে বললো-‘

“মুনিরা তোমার ছেলের বউকে কিন্তু আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।”

‘পদ্ম মুচকি হাসলো। ছোট থেকেই কেউ যদি তার সামনে তাকে নিয়েই প্রশংসা করে তাহলে সে খুব খুশি হয়। মন চায় প্রজাপতির মতো ডানা মেলে উড়তে।’

‘তাদের তিনজনের মাঝে ইজহানের আগমন ঘটলো। ইজহান পদ্মের পাশে বসেছে। শুধুমাত্র এখানে মুনিরা শেখ আর হায়াৎ শেখ আছেন বলে উঠে যেতে পারছে না। নাহলে তার শ্বাশুড়ি শত প্রশ্ন করবেন। ইচ্ছে করছে উঠে যেতে পরিস্থিতি এমন যে সে উঠতে পারছে না।’

‘হায়াৎ শেখ ইজহানের উদ্দেশ্যে বললেন-‘

“ইজহান কি তোমার ওই ফ্ল্যাটে থাকো?”

‘ইজহানের কোনো হেলদোল নেই। সোফায় একেবারে আধশোয়া হয়ে বসেছে।’

“হুম থাকি তবে অন্য কোথাও চাকরি নিলে হসপিটাল থেকে কাছে হলে থাকবো নাহলে এখানে পদ্মকে রেখে যাবো আমি আলাদা থাকবো।”

‘ইজহানের কথায় মুনিরা শেখ আর পদ্ম দু’জনেই অবাক হয়ে যায়। পদ্ম মনে মনে বলছে এই লোকটা এমন বলছে কেনো? কি আবোলতাবোল বলা শুরু করেছে?

‘মুনিরা শেখ অবাক কন্ঠে বললো-‘

“অন্য কোথাও চাকরি মানে? কি বলছিস তুই এসব?”

‘ইজহান যে অবস্থায় ছিলো ওই অবস্থায় থেকে উত্তর দিলো।’

“এই হসপিটালের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। অন্য কোথাও চাকরি নিবো।”

“কোথায় নিবি এখন?”

“কতো হসপিটাল বসে আছে আমার জন্য। বাদ দাও এসব কথা, আমারটা আমাকে ভাবতে দাও।”

‘পদ্ম পিছন ফিরে ইজহানের দিকে তাকালো। ইজহান তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ইজহানের দৃষ্টি যেনো খুব গভীর। তৎক্ষনাত পদ্ম আবার সামনে ফিরে গেলো।’

‘মুনিরা শেখ অসহায় কন্ঠে বললো-‘

“তোকে নিয়ে আমি আর পারি না। কেনো যে হুটহাট সিদ্ধান্ত নিস। আমি শুধু তোর ভালো চাই। ”

ইজহান পদ্মের দিকে তাকিয়ে বললো-‘

“ভালোই আছি যে বউ বিয়ে করিয়েছো।”

‘সবাই একদম পদ্মের দিকেই তাকালো। যা দেখে পুদ্মের অস্বস্থি লাগা শুরু করলো। মাথা টা নিচু করে ফেললো।’

‘হায়াৎ শেখ বললেন-‘

“এরকম সুন্দরী বউ বিয়ে করলে তো ভালো থাকার কথা। ”

‘ইজহান হেসে বললো-‘
“এইজন্যই তো ভালো আছি।”

‘হঠাৎ ক্রলিং বেজে উঠলো মুনিরা শেখ উঠে তাড়াতাড়ি দরজা খুললেন। হুমায়ুন শেখ এসেছেন। পদ্ম হুমায়ুন শেখের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললো। তিনি খুব অমায়িক একজন মানুষ তা দেখলেই বোঝা যায়। পদ্মকে ওনার মেয়ে মতোই স্নেহ করেন। বুঝতেই দেন না যে ওনি পদ্মের শ্বশুড় ঠিক তার বাবার মতোই ভালোবাসেন। পদ্মের বাবা চলে যাওয়ার পর এই প্রথম পদ্মের কোনো আফসোস হয়নি এই বাড়িতে এসে কারণ হুমায়ুন শেখ যেনো বুঝতেই দেননি কিছু। ওনি রুমে চলে গেলেন। ওনার পিছন পিছন মুনিরা শেখ ও গেলেন। শুধু রয়ে গেলো ইজহান, তার ফুপ্পি আর পদ্ম।’

‘হায়াৎ শেখ পদ্মকে উদ্দেশ্য করে বললেন-‘

“তা পদ্ম আমরা দাদি ডাক শুনবো কবে?”

‘পদ্ম তো যেনো লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। পদ্মকে লজ্জা দিতে ইজহান আরও বললো-‘

“তুমি কবে দাদি ডাক শুনতে চাও বলো?”

“যেদিন তোমরা শুনাবে সেদিনই তো শুনতে পারবো তাই না!”

“আহহা ফুপ্পি থাক তুমি বেশি টেনশন নিও না তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি দাদি ডাক শোনানোর দায়িত্ব নিলাম।”

‘পদ্ম তো রীতিমতো কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিয়েছে। তারা কিসব কথা শুরু করেছে। লজ্জা করছে না তাদের। পদ্মের মন চাচ্ছে এখান থেকে উঠে চলে আসতে।’

‘হায়াৎ শেখ হেসে বললেন-‘

“বিয়ের আগে তো ইজহান শেখ এমন ছিলে না। হঠাৎ কিভাবে বদলে গেলো? ”

“বউয়ের সঙ্গ পেয়ে বদলে গিয়েছি ফুপ্পি।”

‘হায়াৎ শেখ আরও কিছুক্ষণ বসে ইজহানের সাথে কথা বললেন। তিনি এবার উঠে নিজের রুমে গিয়েছেন। পদ্মও উঠে গেলো আর সাথে সাথে ইজহান পদ্মের হাত ধরে ফেললো।’

“উঠে যাচ্ছো কেনো?”

“তা নাহলে এখানে বসে কি করবো? আপনার লাগামহীন কথাবার্তা শুনবো?”

“আশ্চর্য আমি কি আগে শুরু করেছি নাকি?”

“হাত ছাড়ুন আমার।”

“ছাড়লে কোথায় যাবে?”

‘পদ্ম একটু মজা করে বললো-‘
“আপনার থেকে দূরে চলে যাবো।

‘সাথে সাথে ইজহান পদ্মকে বুকে টেনে নিলো।’
” উহুম কোথাও যেতে দিবো না। আমার বক্ষঃস্থলে একেবারে লুকিয়ে রেখে দিবো।”

“এ্যাহ ভালো লাগছে না এসব। ছাড়ুন কেউ এসে পড়লে কি ভাববে।”

‘ইজহান ছেড়ে দিলো পদ্মকে।’

“যাও এই ইজহান আর আটকাবে না তোমাকে।”

‘ছাড়া পেয়ে পদ্ম ছুটে চলে গিয়েছে। আর ইজহান একা একা বসে ফোন টিপছে।’
‘রাতে সবাই একসাথে ডিনার করলো। ডিনার শেষে সবাই বসে বসে কথা বলছে। ইজহান কে হুনায়ুন শেখ বললেন-‘

“তুমি নাকি অন্য হসপিটালে চাকরি নিবে? তোমার মা বললো।”

“হ্যাঁ।”

“এই কথা কেনো বলছো? ওই হসপিটালে সমস্যা কোথায়? আর তুমি তো প্রথম থেকে ওখানে আছো হঠাৎ কি এমন হলো যে এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছো। কোনো সমস্যা হয়েছে কি?”

” না আসলে আমি চাচ্ছি না ওখানে থাকতে, অবশ্যই কোনো সমস্যা হয়েছে দেখেই তো আমি থাকতে চাচ্ছি না।”

“কি হয়েছে খুলে বলো।”

“আমার বিষয়ে আমাকে ভাবতে দাও সব ম্যানেজ করে নিবো।”

“এসব ছাড়া আর কিইবা বলবে? শুনো ইজহান তুমি ভুলে যেও না পদ্ম কিন্তু তোমার জীবনের সাথে এখন জড়িয়ে আছে। সব সময় নিজের কথা কে বেশি গুরুত্ব দিলে হবে না। মেয়েটা তোমার ভরসাই থাকবে সারাজীবন। তার কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিও। বাবা মা কে তো পাত্তা দাও না। তুমি তো মনে করো আমরা তোমার ভালো চাইনা। কখনো আমার কথা পাত্তা দিয়েছো?নিজের যা মনে আসে তাই করো। কেয়ারলেস ছেলে কোথাকার।”

‘ইজহান খুব কষ্ট করে কথাগুলো হজম করলো।’

“কে বলেছে আমি তোমাদের কথা পাত্তা দিই না? তোমার কথায় আমি পদ্মকে বিয়ে করেছি। হ্যাঁ মানছি আমি তোমার শুধু একটা কথা শুনি নি তুমি চেয়েছিলে আমি সেনাবাহিনী তে জব করি এই কথাই তো শুনিনি। কিভাবে তুমি আমাকে এসব অপবাদ দিচ্ছো? এমন না তো তোমাদের কোনো কথা আমি কখনো পাত্তাই দিই না। আর পদ্ম তাকে কি আমি অসুখে রেখেছি? ওই হসপিটাল থেকে আরও ভালো হসপিটালে চাকরি করবো। কেনো ওই হসপিটালে থাকবো না সেটা নিয়ে আর যেনো কেউ মাথা না ঘামায়। এসব কথা শুনতে পারি না আমি। আর কি বলেছো কেয়ারলেস ছেলে কোন ভিত্তিতে এটা বলেছো? কি এমন করেছি তোমার সাথে যে তুমি আমাকে এরকম উপাধি দিয়েছো। আমি বাচ্চা ছেলে না যে এসব কথা মেনে নিবো। যদি নেক্সট টাইম এসব কেউ আমাক বলে আমি কিন্তু এসব শোনার জন্য বসে থাকবো না।”

‘ইজহান হনহন করে চলে গেলো উপরে। পদ্ম ভয়ে চুপসে গিয়েছে। কখনো ইজহান কে এভাবে কথা বলতে দেখেনি সে। তার জন্যই তো এসব হচ্ছে। মাথা কাজ করছে না। যদি বাসার সবাই জেনে যায় তার জন্য ইজহান এমন করেছে তাহলে তো সবাই তাকে ভুল বুঝবে। অনুশোচনায় পদ্মের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আবার কেউ দেখে ফেলার আগেই মুছে ফেলছে।’

‘হুমায়ুন শেখ রেগে বললেন-‘
“এই ছেলে সব সময় এমন করে। ছেলে কে ঠিকমতো শাসন করতে পারো নি মুনিরা। তোমার ছেলে তার বাবার সাথে এভাবে কথা বলেছে একটিবার ডাক ও দাওনি। নিজের মর্জিমতো চলবে সে। দুনিয়া এতো সোজা না। তোমার আশকারা পেয়ে ইজহান এমন অভদ্র হয়েছে।”

‘হুমায়ুন শেখের কথা মুনিরা শেখ কেঁদে ফেললেন। হায়াৎ শেখ বললেন-‘

“এতো বড় ছেলে কে কি শাসন করবে? তুই কি মাকে কম জ্বালিয়েছিস নাকি? কেমন বদ ছিলি আমি কি কিছু জানি না?আর ইজহান যে ডক্টর ও ভালো হসপিটালে চাকরি করতে পারবে। তুই কেনো মুনিরা কে বকাবকি করছিস। অবুঝের মতো ব্যবহার। আর তোর ছেলে তোর মতোই হয়েছে বাপ ক্যা বেটা। হুদাই ক্যাচাল বন্ধ কর। তোর ডাক দেওয়া উচিৎ হয়নি ওর ভালো ও ছাড়া কেউ বুঝবে না।”

‘হায়াৎ শেখের কথা হুমায়ুন শেখ একেবারে চুপ হয়ে গেলেন। তিনি ধপাধপ পায়ে চলে গেলেন। মুনিরা শেখ পদ্মকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে দিলো। যাই পদ্ম এতোক্ষণ আড়ালে কেঁদেছে এখন তার শ্বাশুড়ির কান্না দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।’

‘মুনিরা শেখ পদ্মকে জড়িয়ে ধরে বললো-‘
“আমার কপাল টা খারাপই ছিলো মা। আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে তোমার জীবনটা ও খারাপ করে দিলাম। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও পদ্ম।”

‘বেশ কিছুক্ষণ মুনিরা শেখ পদ্মকে জড়িয়ে ধরে নানা কথা বললো। হায়াৎ শেখ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এতোক্ষণ বউ আর শ্বাশুড়ির কান্না দেখলো।’

“তোমরা দু’জন গিয়ে এখন তাদের রাগ ভাঙ্গাও। ওদের বোঝাও। আর কান্না-কাটি করো না অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।”


‘পদ্ম পা টিপে টিপে রুমে আসলো। রুম পুরো অন্ধকার করে রেখেছে ইজহান। বাহিরের আবছা আবছা আলো বারান্দায় এসে পৌঁছেছে। পদ্ম ভয় পেয়ে দৌড়ে ইজহানের কাছে আসলো।’

‘পদ্ম ইজহন কে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলো। ইজহান হাত সরিয়ে দিলো। আবারও পদ্ম ইজহানকে একই ভাবে জড়িয়ে ধরেছে। তাও আগের থেকে আরও শক্ত করে।’

‘ইজহানের গম্ভীর কণ্ঠ শোনা গেলো।’
“পদ্ম তোমাকে আমার থেকে ছাড়াতে এক মিনিট ও লাগবে না। সো জোরাজোরি করার আগেই ছেড়ে দাও।”

‘পদ্ম মোলায়েম কন্ঠে বললো-‘
“উফফ ডাক্তার সাহেব এতো রাগ করছেন কেনো? ভালোবাসি তো।”

‘ইজহান আর ছাড়ানোর চেষ্টা করলো না এভাবেই কিছু সময় দু’জনে দাঁড়িয়ে থাকলো। পদ্ম ইজহানকে ছেড়ে সামনে দাঁড়া করালো।’

‘পদ্ম ইজহানের চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে বললো-‘
“সব সময় রাগ করলে হয় না। অনেক সময় কিছু কথা শুনে থাকতে হয়। বড়রা কখনো খারাপের জন্য বলেন না আর বাবারা তো একদমই না। এভাবে হুটহাট মেজাজ গরম করা উচিৎ নয়।”

‘ইজহান চোখ ছোট ছোট করে পদ্মকে দেখলো। কিভাবে পদ্ম ছেলেমানুষী ছেড়ে একদম একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের মতো কথা বলছে? ইজহান পদ্মকে টেনে দেয়ালের পাশে দাঁড়া করালো। যদিও সে ব্যাথা পেয়েছে তাও টু শব্দ পর্যন্ত করেনি। মুখ খিঁচে রইলো।’

‘ইজহান পদ্মের পাশে দেয়ালে হাত রেখে বললো-‘
“তারপর?”

‘পদ্ম ঘাবড়ে গেলো।’
“তারপর আরকি!”

“আর বলবেন না ম্যাডাম? আপনার কথা বলা শেষ।?”

‘পদ্ম আমতা আমতা করে বললো-‘
“ঘুমাবো চলুন না।”

‘ইজহান পদ্মের কথা শুনলো। পদ্মের হাত ধরে রুমে নিয়ে আসলো। পদ্ম এক কোণায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে৷ ইজহান তা দেখে পদ্মকে টেনে তার কাছে নিয়ে আসলো। পদ্মের মাথাটা তার বক্ষে মিশিয়ে বললো-‘

“পদ্ম তোমার ডাক্তার সাহেব দিনদিন অভদ্র হয়ে যাচ্ছে। সে আর ভদ্র বরের মতো সেজে থাকতে পারছে না। মনে খুব প্রেমের পিপাসা পেয়েছে পদ্মফুল। কেনো এমন হচ্ছে বলো তো?”

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here