১.
‘আগামীকাল আমার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে কিন্তু আমি এই বিয়ে করতে পারব না আমির ভাই।’
নিজের বন্ধুর বোনের মুখে এরকম একটা কথা শুনে বিরক্তিতে আমিরের চোখ মুখ কুচকে আসে। মোনালিসা তখনও আমিরের সামনে দাড়িয়ে তার প্রেমের কাব্য শোনাতে ব্যস্ত ছিল।
‘সেই স্কুল থেকেই তোমার উপর আমার ক্রাশ ছিল। জীবনে অনেক ছেলে দেখেছি কিন্তু তাদের কাউকে পছন্দ হয়নি আমার। আমি শুধু তোমাকে চাই আমির ভাই।’
আমিরের ধৈর্যের বাধ ভেঙে যায়। নিজেকে সামলানোর জন্য সে পকেট থেকে একটা সি’গারে’ট বের করে খায়। সিগা’রে’টের ধোয়াগুলো মোনালিসার মুখের দিকে উড়িয়ে দেয় আমির। মোনালিসা সেই বি’শ্রী গন্ধ সহ্য করতে না পেরে নাকে হাত চেপে ধরে কাশতে থাকে।
মোনালিসার ফর্সা মুখ পুরো লাল হয়ে যায়। আমিরের একটুও দয়া হয়না মেয়েটার উপর। আমির মোনালিসার এই অবস্থা দেখে খুব মজা পায়।
মোনালিসাঃআমার এই অবস্থা আর তুমি হাসছ।
আমিরঃঠিকই তো করেছি। যেই মেয়ে আমার সিগা’রে’টের ধোয়া সহ্য করতে পারে না সে নাকি আবার আমাকে বিয়ে করা বউ হবে। শোন আমার বউ হতে গেলে তাকে আমার সবকিছু মেনে নিতে হবে। আর এই সিগা’রেট হলো তার মধ্যে অন্যতম।
কথাটা শুনেই মোনালিসা আমিরের হাত থেকে সি’গা’রেটের প্যাকেট কেড়ে নিল। একটা সি’গা’রে’ট বের করে মুখে নিয়ে নিল খাওয়ার জন্য। আগু’ন জ্বা’লা’নোর আগেই আমির তার হাত থেকে দিয়া’শলাই কে’ড়ে নেয়। মোনালিসা আমিরের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আমির মোনালিসার এই ব্যবহারে বিরক্তির তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে।
মোনালিসার কোন ভাবান্তর নেই। সে আবার আমিরের কাছে অনুরোধ করে তাকে একটি বার সুযোগ দেওয়ার জন্য।
আমিরঃএসব পাগলামী বন্ধ কর। কাল তোর বিয়ে। আগে বললে নাহয় একটা কথা ছিল কিন্তু এখন আর কোনকিছু করা সম্ভব নয়।
মোনালিসাঃকেন সম্ভব নয় আমির ভাই? তুমি তো আমায় পালিয়ে নিয়ে যেতে পারো। সেটা কেন করছ না? চলো আমরা দুজন পালিয়ে যাই। তারপর সুন্দর একটা সংসার গড়ে তুলি।
আমিরঃপাগলের মতো কথা বলিস না। এসব আর সম্ভব নয়। আমি তোর সাথে কোন সম্পর্কে জড়াতে চাইনা। তোর মা-বাবা যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছে তুই তাকেই বিয়ে কর।
মোনালিসাঃহ্যাঁ আমি পাগল। তোমার প্রেমে পাগল হয়েছি আমি। এবার এই পাগলের পাগলামিটাও দেখবে। মনে রেখো আমির ভাই আমি শুধু তোমাকেই চাই। তোমাকে না পেলে আমি অন্য কাউকে তোমার হতে দেব না আর না নিজে হবো অন্য কারো।
আমিরঃ২০ বছর হয়ে গেল এখনো তার বাচ্চামো গেল না। যা আমার সামনে থেকে।
মোনালিসাঃএখনই হাপি’য়ে গেলে চলবে আমির ভাই? আমি যে তোমার বউ হবো। তখন কি করবে?
আমিরঃতুই পাগ’লামো বন্ধ কর। তোর ব্যবহার আমার স্বাভাবিক মনে হচ্ছেনা।
মোনালিসাঃঅস্বাভাবিকতা কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি সেটা এবার তুমি বুঝবে। তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি গোটা পৃথিবীকে শে’ষ করে দিতেও প্রস্তুত আমির ভাই৷ সেখানে এটা তো শুধু একটা বিয়েই।
আমিরঃআমি যদি বলি তুই কখনো আমায় পাবিনা।
মোনালিসাঃআমি তোমাকে না পেলেও তুমি আমারই থাকবে সবসময়।
‘মোনা তুই এখানে কি করছিস? আম্মু তোকে ডাকছে যা নিচে যা।’
মোনালিসার বড় ভাই মিরাজ তাকে এই কথাটাই এসে বলল। মিরাজের কথা শুনে মোনালিসা আমিরকে বেশ ভাব দেখিয়ে হেলেদুলে তার সামন থেকে চলে যায়। মোনালিসা চলে যেতেই আমির স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়। মিরাজ আমিরের দিকে অন্যরকম ভাবে তাকিয়ে থাকে। আমির মিরাজের এই তাকানোটা ঠিক মেনে নিতে পারেনা।
আমিরঃআমাকে এভাবে কি দেখছিস?
মিরাজঃআমার বোনকে তুই এভাবে ফিরিয়ে দিলি কেন? আমার বোনের মতো এত সুন্দর একটা মেয়ে যে তোর মতো ফাল’তু বে’কার ছেলেকে বিয়ে করতে চেয়েছে সেটাই তোর ভাগ্য। আর তুই আমার বোনকে এভাবে বললি?
আমিরঃতোর এত সুন্দরী বোনের আমার দরকার নেই। আর তুইওবা কেমন ভাই যে নিজের বোনের বিয়ের আগের দিন তাকে অন্য একজনের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছিস।
মিরাজঃআমি আমার বোনকে খুব ভালোবাসি। ওর জন্য সব করতে পারি। আমি আমার বোনকে কথা দিয়েছি যে করেই হোক তোর সাথে ওকে মিলিয়ে দেবো। আমি আমার কথা রাখব। মিলিয়ে নিস তুই।
আমিরঃতোর বোন তো পা’গল ছিলই এখন তুইও কি পা’গল হয়ে গেলি? কি বলছিস একবার ভেবে দেখেছিস?
মিরাজঃভাবাভাবির কিছু নেই। ভালো চাইলে আমার বোনকে বিয়ে করে নে। কাল তোদের পালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা আমি করে দেব। যদি পালিয়ে না যাস তাহলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিলাম।
আমিরঃকি করবি তুই?
মিরাজঃসেটা কাল টের পাবি।
২.
‘আমি গায়ে হলুদ মাখব না।’
মোনালিসার এমন কথায় তার মা মুনিয়া চৌধুরী প্রচণ্ড রেগে যান। মোনালিসার কান টেনে ধ’রেন তিনি।
‘কাল তোর বিয়ে আর আজ তুই বলছিস গায়ে হলুদ মাখবি না।’
মোনালিসাঃআম্মি আমি গায়ে হলুদ মাখলে আমার এই ফর্সা গায়ের রং হলুদ হয়ে যাবে। তখন আমায় ভালো লাগবে না আম্মি।
মুনিয়াঃপাগলি মেয়ে কোথাকার। পানি দিলে তো হলুদ উঠে যাবে। তুই গায়ে হলুদ মেখে নে।
মোনালিসা সবার সামনে কাদতে থাকে। সে কিছুতেই গায়ে হলুদ মাখবে না। মোনালিসার এমন জেদ দেখে মুনিয়া চৌধুরী বলেই দেন,
‘কোন গায়ে হলুদ হবে না। আমার হয়েছে যত সমস্যা।’
মোনালিসা খুব খুশি হয় তার আম্মির কথা শুনে। সে তো এটাই চেয়েছিল যেকোনভাবে গায়ে হলুদ বাতিল করতে। এখন বিয়ের আগে পালিয়ে যেতে পারলেই হবে।
মিরাজ আর মোনালিসা মিলে প্ল্যান করছিল কিভাবে এই বিয়েটা ছেড়ে পালানো যায় যায়।
মিরাজঃতুই একটা কাজ কর আজ রাতেই পালিয়ে যা।
মোনালিসাঃআজ পালাবো না। কাল বিয়ের আগে পালাবো।
মিরাজঃআচ্ছা বেশ। তুই থাক তাহলে কাল পালাতে না পারলে বুঝবি তখন।
মোনালিসা হাসে। তার হাসিমুখই প্রমাণ করে সে কোন দুষ্টবুদ্ধি করেছে।
আমির মোনালিসার রুমে চলে আসে। আমিরকে দেখে মোনালিসা,মিরাজ দুজনেই মিটিমিটি হাসে। আমির তাদের এই হাসির কোন কারণ খুঁজে পায়না। আমিরকে বোকার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে মিরাজ বলে,
‘আমার বোনের হবু বর তুই এই রুমে এসেছিস কেন? আমার বোনের সাথে কথা বলবি বুঝি?’
আমিরঃতোদের এই পাগলামি বন্ধ কর বলছি। তোরা দেখছি কোন সর্বনা’শ না করে থামবি না। তোরা কিন্তু আগু’ন নিয়ে খেলছিস।
মোনালিসাঃতা তো খেলছিই। তোমাকে পাওয়ার জন্য প্রয়োজন হলে আমি দা’বা’ন’ল তৈরি করব।
আমিরঃসেই দা’বা’ন’লে তোকেই পুড়’তে হবে।
মোনালিসাঃভালোবাসার অ’ন’লে পুড়েও শান্তি।
মুনিয়া চৌধুরী এসে মোনালিসাকে ডেকে নিয়ে যান। আমির মিরাজকে আরো একবার সাবধান করে যাতে সে কোন স’ম’স্যা তৈরি না করে। মিরাজ শুধুমাত্র মৃদু হেসে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করে।
আমির সিদ্ধান্ত নেয় সে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে আজ এক্ষুনি। আমির রুম থেকে বের হতে যাবে তখন মিরাজ তাকে ঘ’রে ব’ন্দি করে রাখে।
আমির তো পুরোই অবাক হয়ে যায় তার বন্ধুর এই ব্যবহারে!
রাতের দিকে মোনালিসা এসে আমিরকে বের করে দেয়। তারপর আমিরের হাত ধরে পালিয়ে যায় অনিশ্চিত গন্তব্যে। আমির চিৎকার করতে গিয়েও থেমে যায়। কারণ মোনালিসা নিজের গ’লায় ছু’রি ধরে ছিল এবং হু’ম’কি দেয় যে,
‘যদি আমার কথা না শোন তাহলে আমি কিন্তু নিজেকে শে’ষ করে দেব।’
মিরাজ ছাদে দাড়িয়ে থেকে তার বোনকে আমিরের সাথে এভাবে চলে যেতে দেখে স্বস্তি পায়।
‘তুই সুখী হ মোনা। তোর এই ভাই যতটুকু করতে পারত ততটুকুই করেছে। এবার তোর আগামীটা অন্তত যেন সুখী হয়। আমি জানি আমির তোকে খুব ভালো রাখবে।’
‘মোনালিসা পালিয়ে গেছে!’
মুনিয়া চৌধুরীর কথাটা শুনে তার স্বামী আনোয়ার চৌধুরীর বুকে ব্যাথা উঠে যায়।
চলবে কি?
#প্রেমে_পাগল_হয়েছি_আমি
#পর্বঃ১
#