প্রেম পর্ব ৬

#প্রেম
#সিজন ২
#পর্বঃ৬
#Tanisha Sultana (Writer)

ইফাদ তুলির বাবা মায়ের সাথে খেতে বসে গেছে৷ তুলির হাত পা কাঁপছে এই বুঝি বলে দেবে আজ তুলি কোচিং এ যায় নি। বাবা নিশ্চয় খুব বকবে। কোথায় গেছিলাম জানতে চাইবে। কি বলবো আমি? জীমের কথা বলে দিবো। বাবা তো জীমকে খুব বকবে। কি করবো আমি

“মিষ্টি দাঁড়িয়ে আছো কেনো খেতে বসো

বাবার কথায় মিষ্টি ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়। জোর পূর্বক একটু হেসে টেবিলে বসে। ইফাদ আড়চোখে মিষ্টির দিকে তাকায়।
ইফাদ আর মিষ্টির বাবা অনেক কথা বলছে কিন্তু মিষ্টির কোনো দিকে খেয়াল নেই। মনটা জীমের কাছে পড়ে আছে। জীমের অনুপস্থিতিতেও মনে হচ্ছে জীম আশেপাশে আছে। খাচ্ছে আর জীমের কথা ভাবছে মিষ্টি

“মিষ্টি কি ভাবছো তুমি?

ইফাদ জিজ্ঞেস করে। মিষ্টি চমকে ইফাদের দিকে তাকায়। ইফাদ ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে কি?
মিষ্টি মাথা নারায়। মানে কিছু না।

খাওয়া শেষে মিষ্টি রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
” এটা কি হচ্ছে আমার সাথে? সারাহ্মণ লেজ ছাড়া বাঁদর টার কথা কেনো মনে পড়ছে। তাহলে কি আমি সত্যিই ওর প্রেমে পড়ে গেলাম। ধ্যাত আমিও কিসব ভাবছি।

পাঁচদিন হলো জীম মিষ্টির সামনে যায়। যদিও সামনে পড়ে যায় হাই হেলো ছাড়া আর কোনো কথা বলে না। মিষ্টি হারে হারে টের পাচ্চে জীমের শূন্যতা। সারা জীমের কথায় ঘোরে মিষ্টির মাথায়।

“চোখে চোখে এতো কথা
মুখে কেনো বলো না…..
এতো আশা তবু ভাষা মন কেনো পেলো না
একি খেলা বলো না
কেনো করো প্রিয়া বলো ছলনা…….

গানের সুরে মিষ্টি বেলকনিতে চলে যায়। জীম জীমের বেলকনিতে বসে গান গাইছে। মিষ্টি মুচকি হাসে। গান শেষে জীম দেখে মিষ্টি হাসছে

” ওই ফুলটুসি

মিষ্টি তাকায়

“বলেন লেজ ছাড়া বাঁদর

” ভালোবাসি

মিষ্টি আনমনেই বলে ওঠে

“আমিও

” কিহহহ

জীম লাফ দিয়ে উঠে বসে বলে। মিষ্টি এতোখনে বুঝতে পারলো কি বলেছি

“না মানে কিছু না

” আমি শুনে ফেলেছি

“আমি কিছু বলি নি

” আমিও শুনেছি

“ধ্যাত

মিষ্টি রুমে চলে যায়। জীম নাচতে নাচতে ডিনার করতে যায়।

” লেজ ছাড়া বাঁদর এভাবে লাফাচ্ছেন কেনো?

“আহহ সব সময় ছেলেটার পেছনে না লাগলে হয় না

” তোমার ছেলেকে বলো একটু ভালো হতে

জীম বাবা মায়ের মাঝখানে বসে

“আমি ভালো হয়ে গেছি অলরেডি

” এ্যাঁ

“ইয়াহ বাবা। কাল থেকে কাজ করবো

” মাটি কাটবা

“রাইয়ান রহমান জীম মাটি কেনো কাঁটবে? বিশ্ব জয় করবে
” তুমি ঠিক আছো
জীমের বাবা জীমের কপালে হাত দিয়ে বলে।

“একদম পারফেক্ট আছি। মা খেতে দাও

জীমের মা খেতে দেয়। জীম এটিটিউটের সাথে খাবার খেয়ে রুমে চলে আসে। জীমের বাবা তো হা। হলো কি এর।

মিষ্টি বই পড়ছিলো। মিষ্টির ভাই আসে

” আপি বল

“বাপি ডাকছে?

” চল

মিষ্টি বই বন্ধ করে ভাইয়ের হাত ধরে বাবা মায়ের রুমে যায়

“বাপি ডাকছিলে

” হুমম সোনা। আমার পাশে বসো

মিষ্টি বাবার পাশে বসে। বাবা মিষ্টির মাথায় হাত বুলায়

“কাজের চাপে তোমায় সময় দিতে পারি না। বাট অলওয়েজ মিস করি

মিষ্টি বাবার কোলে মাথা রেখে বলে

” আমিও মিস করি

“এখন থেকে আর কাজ কাজ করবো না। আগে আমার ছেলে মেয়ে তারপর কাজ

” এতো আদর বাদ দাও। মেয়ের বিয়ের পরে কি করবে? (মা)

“আমার মেয়েকে ভালো আর ভদ্র ছেলের সাথে বিয়ে দেবো। আমার মেয়ে আমার কাছেই থাকবে

মিষ্টি ভাবে

” বাবা কি জীমকে মেনে নেবে? না কি আলাদা হয়ে যেতে হবে জীমের থেকে? পারবো তো? আমি এরকম কেনো ভাবছি সব ঠিক হবে

“মামনি আজ আমার সাথে ঘুমাবে

” নাহ বাপি। অনেক পড়া বাকি কমপ্লিট করতে হবে

“ওকে।

মিষ্টি রুমে এসে দেখে জীম বসে আছে

” আপনি

“এতোখন কোথায় ছিলি?

” বাপির কাছে

“এবার বরের কাছে থাকবি

” মানে কি?

জীম দরজা বন্ধ করে দেয়।

“ভালোবাসিস কিন্তু স্বীকার কেনো করিস না

” আমার আর আপনার মেচিং হয় না

“কে বললো?

” জানি আমি

“তাহলে কি? চলে যাবো? ভুলে যাবো তোকে?

মিষ্টি কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। জীম মিষ্টির কাছে গিয়ে থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে

” ওই বল

“জানি না

” তুই যা বলবি তাই করবো

“ভালো হতে পারবেন? সিগারেট মদ ছাঁড়তে পারবেন

” নাহহহ

“কেনো?

“যখন তুই ছিলি না তখন এগুলো ছিলো আমার সাথে। আবার যখন ফিউচারে তুই থাকবি না তখনও এগুলোই থাকবে আমার সাথে। মদ সিগারেট আমাকে কখনো ধোঁকা দেবে না। কিন্তু তুই দিতেই পারিস। ইনফেক্ট দিবি। কারণ আমার ফিউচার ব্রাইট না।

মিষ্টি কিছু না বলে শক্ত করে জীমকে জড়িয়ে ধরে। জীমও মিষ্টিকে জড়িয়ে ধরে

” এই মিষ্টি

“হুম

” আমি কিন্তু সিগারেট মদ খায়

“চলবে

” ক্যারেকটারলেস

“চলবে

” অল্পতেই রেগে যায়

“চলবে

” আমার ফিউচার অন্ধকার

“তাও চলবে। আমার জীমকে চায়। শুধু জীমকেই

” লাভ ইউ ফুলটুসি

“লাভ ইউ টু লেজ ছাড়া বাঁদর।

“এভাবে আর কতোখন

মিষ্টি জীমকে ছেড়ে দেয়। একটু লজ্জা পায়

” এতে লজ্জার কি হলো

মিষ্টি বই বের করে পড়ার টেবিলে বসে। জীম বই বন্ধ করে দেয়

“এটা কি হলো

” যখন আমি তোর সাথে থাকবো তখন বই দুরে থাকবে

“আমার কাছে বই প্রিয়

” আমার থেকেও

“আপনার কাছে যদি সিগারেট আমার থেকেও বেশি প্রিয় হয় তবে আমার কাছেও বই বেশি প্রিয়

” বলতে পারলি এটা

“কেনো পারবো না। আমার লাইফে আগে আপনি ছিলেন না বই ছিলো ফিউচারে আপনি নাও থাকতে পারেন বাট বই থাকবে

” আমার কথাই আমাকে ফেরত দিচ্ছিস

“কমন সেন্স

” থাক তুই তোর মতো

জীম রেগেমেগে চলে যায়।

“যাহহ বাবা এই ছেলেটা এমন কেন?

মিষ্টি জীমকে ফোন দেয় জীম ফোন কেটে ফোন বন্ধ করে দেয়। মিষ্টি জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে জীম মদ গিলছে

” কি এমন বললাম আমি? এভাবে কথায় কথায় রাগ করলে রিলেশন টিকবে কি করে?

মিষ্টি জীমের চিন্তা মাথা থেকে বের করে বই নিয়ে বসে।

সকালে কলেজের জন্য তৈরি হয়ে মা বাবাকে বাই বলে বেরিয়ে পরে মিষ্টি। বাড়ির গেটের কাছে গিয়ে দেখে জীম বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিষ্টি কোনো কথা না বলে মুচকি হেসে বাইকে ওঠে।

জীম মিষ্টিকে কলেজের দিকে নিয়ে যাচ্ছে

“আজ কলেজে যাবো না

” তো

“ছিনেমা দেখতে যাবো

জীম বাইক থামিয়ে হেলমেট খুলে মিষ্টির দিকে তাকায়

” এভাবে তাকানোর কি আছে

“তুই বললি?

” হুমমম

“আসলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো তো তাই

🙄

“কিন্তু আমি ছিনেমা হলে যাবো না

” কেনো

“কাজ আছে আমার

” কি কাজ

“তোকে কেনো বলবো?

মিষ্টির মন খারাপ হয়ে যায়। ছোট করে বলে

” ওহহ

জীম মিষ্টিকে কলেজের সামনে নামিয়ে দিয়ে একটুও দেরি করে না
মিষ্টিকে বাইও বলে না। চলে যায়। মিষ্টির এবার কান্না পাচ্ছে। জীম এমন বিহেব কেনো করছে?

মন খারাপ করে কোচিং এ যায় মিষ্টি। আজ তিথি আসে নি। ফাস্ট ছিটে বসেছে মিষ্টি

“মিষ্টি

” হুমম স্যার

“মুড অফ

” না

“তাহলে

” এমনিতেই ভাল্লাগছে না

ইফাদ মিষ্টির কপালে হাত দেয়

“আই এম ওকে স্যার

“ঠিক আছে

ইফাদ পড়ানো শুরু করে। ক্লাস শেষ করে মিষ্টি বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। ইফাদ অনেক করে বলে মিষ্টিকে ডপ করে দেবে কিন্তু মিষ্টি যাবে না। অবশেষে বাস চলে আসে। মিষ্টি বাসে উঠে পড়ে। মিষ্টি ভেবেছিলো জীম আসবে। কিন্তু আসলো না।

বাসায় ফিরে মিষ্টি জীমের রুমে উঁকি মারে দেখে লাইট অফ। এবার মিষ্টির রাগ হয়। বাবা গলা শুনে মিষ্টি রুম থেকে বের হয়

” বাবা কি হয়েছে

“আর বলো না। পাশের বাসার জীম আছে না এতো বেয়াদব একটা ছেলে বলার বাহিরে

জীম নামটা শুনে মিষ্টির বুকের ভেতর ধক করে উঠে

” কেনো বাপি কি করেছে?

“রাস্তায় মারপিট করছিলো।দুইটা ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। জীমও আঘাত পেয়েছে। একটু প্রমাণ পায় ছেলেটাকে আমি লকাবে পুরবো। গুন্ডা একটা

” ওহহহ

“একদম ওই ছেলেটার সাথে কথা বলবা না। কাল তাজকে দেখলাম ওর সাথে ফুটবল খেলছে। আমি তাজকেও না করে দেবো। মনে থাকবে

” হুমমম

“যাও পড়তে বসো

মিষ্টি রুমে চলে যায়। কেনো জানি খুব কান্না পাচ্ছে। জীম আঘাত পেয়েছে এটা শুনে জীমকে দেখতে ইচ্ছে করছে।

এবার জীমের রুমে আলো জ্বলে। মিষ্টি বেলকনিতে চলে যায়। দেখে জীম শার্ট খুলে পিঠে দেখার চেষ্টা করছে কতোটা কেটেছে। মিষ্টি দেখতে পায় অনেকটা কেটে গেছে।

জীম যেমন করে মিষ্টির রুমে আসে মিষ্টিও এবার বেলকনি দিয়ে লাফিয়ে জীমের রুমে যায়। কিছু পড়ার শব্দে জীম পেছনে তাকিয়ে মিষ্টিকে দেখে

” তুই এখানে

মিষ্টি হরহর করে রুমে ঢুলে জীমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়

“কাঁদছিস কেনো?

” আপনি এমন কেনো? খুব খারাপ আপনি। খুব খারাপ

জীম মিষ্টির মাথায় হাত বুলায়

“এতো অভিমান কেনো? বাপি গুন্ডা বলেছে তার জন্য না কি আমার সাথে মিশতে না করছে তার জন্য

মিষ্টি জীমকে ছেড়ে বলে

” আপনি কি করে জানলেন

“কমন সেন্স। তোর বাপি আমাকপ যে ভাবে বলেছে তাতেই আমার বোঝা হয়ে গেছে সে শুধু তোকে না আমার বাবা কেও বলবে

” আমার অভিমান আপনার অঘাতের জন্য। আপনি গুন্ডা এটা জেনেই আমি ভালোবেসেছি। আজ যদি আপনি আমার সাথে থাকতেন এসব কিচ্ছু হতো না

“শিওর

” হুমমম

“আমি তোর সাথে থাকলেও এটা হতো তার জন্যই তোর সাথে ছিলাম না

” বুঝলাম না

“বুঝতে হবে না। মলম লাগিয়ে দে

” আগে বলেন

“খুব ব্যাথা করছে

মিষ্টি পরম যত্নে জীমের পিঠে মলম লাগিয়ে দেয়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here