প্রেম প্রিয়জন পর্ব ১১

#প্রেম__প্রিয়জন🌸
#Writer_Sumaiya_Karim

~একাদশ পর্ব~

কাজি সাহেব ও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এসে পড়েন। কাজি সাহেব পরির অবস্থা দেখে বিয়ে পড়াতে চাচ্ছিলেন না তাই এহসান তাকে ও টাকার লোভ দেখায়। টাকার কাছে সব মানুষ বিক্রি হতে সময় বেশি নেয় না। সেটাই হলো। তিনি ও এবার খুশি মনেই বিয়ে পড়াতে শুরু করলেন। পরির শুধু অসহায় চোখ দুটো অনড়। মানুষ এতো খারাপ কিভাবে হতে পারে? টাকা ই কি তাহলে সব?

এহসান খুব দ্রুতই কবুল বলে দেয়। তা দেখে জেঠা জেঠি টাকা গনার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কিছু সময়ের জন্য তো পরি কেই সোনার পুতুল মনে হচ্ছিলো। যা বিক্রি করে তারা এতো টাকা পাবেন!

পরি কবুল বলে না। চড় আরো কয়েক টা পড়ে। ফর্সা গাল দুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করে আছে। টকটকে লাল রক্ত ফোঁটা গাল থেকে ঘসে নিচে পড়লো বলে!

–‘কি হলো কবুল বল!’

পরি কিছুতেই মুখ থেকে কবুল শব্দ টা বের করতে নারাজ। এক পর্যায়ে জেঠি প্রচন্ড রেগে হুংকার ছাড়েন। আর পরির গলা চেপে ধরেন। জেঠা ও ছুটাতে পারছে না। এহসান বলে,

–‘এটা কি করছেন আপনি? আমি বিয়ে করার আগেই ওকে মেরে ফেলবেন নাকি! ও মরে গেলে কিন্তু আপনাদের দুই লাখ টাকা একেবারে ধুলোয় মিশে যাবে!’

এহসানের কথা শুনে ঝট করে পরির গলা ছেড়ে দেয় জেঠি। তখনি তাদের পিছন থেকে হাতে শব্দ করে তালি বাজাতে বাজাতে কেউ এগিয়ে আসে।

সবাই চোখ উঠিয়ে দেখলো কেউ একজন তাদের দিকেই আসছে। পূর্ণ কে আসতে দেখে সর্বপ্রথম তার বাবা মায়ের চোখ কপালে উঠে গেছে। সব শুনে ফেলেছে পূর্ণ এবার তাদের কি হবে?

পূর্ণ হাত নামিয়ে এবার গগন কাঁপিয়ে হাসতে থাকে। সবাই দৃষ্টি সেদিকে। এহসান বলে,

–‘এই ছেলে টা কে? পরির প্রেমিক নাকি? শুনো ছোকরা তোমার প্রেমিকা কে আমি কিনে নিয়েছে। সরে পড়ো এখান থেকে!’

কথাটা বলেই এহসান ও হাসে। জেঠা জেঠি কিছু বলতেও পারছে না। ভয়ে দুজনার গলা শুকিয়ে আসছে।

পূর্ণ হঠাৎ ই এহসানের কথায় বাজ পড়ার মতো গর্জে উঠে। সিংহের হুংকারের ন্যায় চেঁচিয়ে উঠে ও। আর সোজা গিয়েই এহসানের বুকের কাছে পাঞ্জাবি জাপটে ধরে। সজোড়ে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,

–‘টাকা দিয়ে কিনেছিস তুই?’

–‘এই ছেলে ছাড় বলছি আমাকে। তোর এতো বড় সাহস তোর? তুই আমার গায়ে হাত তুললি! দেখ আমি এখন তোর প্রেমিকা কে কি করি!’

–‘সাহস থাকে তো টাচ্ করে দেখ!’

–‘সাহসের কথা বলছিস তুই আমার? তাহলে দেখ আমার সাহস!’

পরির গালের কাছেই হাত টা একটু ছুঁতে বাকি পূর্ণ এই ঘুষি মেরে এহসান কে সরিয়ে নেয়। প্রচন্ড রেগে যায় ও। চোখ থেকে যেনো আগুনের ফুলকি ঝরছে। এহসান পূর্ণের সাথে পেরে উঠছিলো না। এক পর্যায়ে যেই হাত দিয়ে পরি কে টাচ্ করতে চেয়েছিলো সেই হাত টাই মচকে দেয় পূর্ণ। পুষ্পা অবস্থা বেগতিক দেখে ভয় পেয়ে যায়। আর পুলিশ কে ফোন দিতে বাধ্য হয়। তা নাহলে পূর্ণ কে থামানোর সাহস আর কারো নেই! সে পূর্ণের পেছন পেছন ই এসেছে। প্রথমে নিজের মা কে ফোন দিয়েছিলো। যখন উনি ফোন ধরলেন না তখন একজন মহিলা ধরলো। আর সে এই সব বিষয় বলে দেয় পুষ্পা কে। আর সে ছুটে আসে।

পূর্ণ এহসান কে ছেড়ে দিয়ে এবার কাজির মুখে ঠাস করে একটা বসিয়ে দেয়।

–‘বিয়ে পড়াচ্ছিলি তুই ওকে?’

সব কিছু এতো তাড়াতাড়ি হয়েছে যে সবার চোখ কপালে। পূর্ণর কাছে গিয়ে তাকে আটকাবে সেই সাহস কারোই হলো না। ফলে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে দেখতে থাকলো সব। পরি একনাগাড়ে নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁদছিলো। তার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা শুধুমাত্র এটিই ছিলো!

পুলিশ এসে দেখে সব কিছু লন্ডভন্ড হয়ে আছে। পূর্ণ কে থামায় তারাই। এহসান নিজেকে ভালো প্রমাণ করার জন্য বললো,

–‘অফিসার দেখেন না ঐ ছেলে টা আমাদের কে কি হাল করেছে!’

পূর্ণ চেঁচিয়ে বললো,

–‘তোকে এখনো জ্যান্ত রেখেছি এটাই তোর ভাগ্য। বুড়ো হয়েছিস এখনো বিয়ের ভূত নামে নি মাথা থেকে? আরে তোর মেয়ের মতো হবে ও। লজ্জা করলো না নিজের মেয়ের মতো একজন কে বিয়ে করতে চাওয়ার জন্য?’

–‘না করেনি!’

–‘বুড়ো হয়েছিস এখনো শখ মিটে নি না তোর? তোকে তো আমি!’

পূর্ণ আবার এহসান কে মারতে গেলে পুলিশ ওকে আবারো ধরে ফেলে।

–‘শান্ত হোন আপনি পূর্ণ! কি হয়েছে এখানে!’

পরির মুখ থেকে শুনতে চাইলে সে কেঁদে কেঁদে সব খুলে বলে। অপরাধী এখানে পূর্ণের বাবা মা ও। পুলিশ উনাদের ও জেলে নিয়ে যেতে চাইলে পূর্ণ বাঁধা দেয়।

–‘আপনি এখন এই শুয়োরের বাচ্চা টা কেই নিয়ে যান!’

এহসানের সাথে থাকা মহিলা টি পালাতে নিলে পুষ্পা তাকে ধরে নিয়ে এসে বলে,

–‘আরে আপনি পালাচ্ছেন কোথায়! মামা বাড়ি যেতে হবে তো নাকি?’

কাজি কেও পুলিশ নিতে চায়!

–‘এখন আপাতত এই দুজন কেই নিয়ে যান। এই কাজি সাহেবের প্রয়োজন আছে!’

–‘আপনি বলছেন বলেই এনাদের তিন কে ছেড়ে দিলাম। সমান দোষে দোষী কিন্তু এই তিন জন ও!’

–‘আমি এনাদের দেখছি অফিসার!’

পূর্ণের পরিচিতি হওয়ায় পুলিশ এহসান আর ভদ্রমহিলা কেই নিয়ে যায়। কাজি কাচুমাচু হয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। ভাবছে গরু মার কি সে আরো খাবে পূর্ণের হাতে? ভয়ে বেচারার জান শেষ! কয়েক টাকার লোভে এই ফল হবে কে জানতো? আসলেই লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু! এই মার এ জীবনে আর কখনো খায় নি বেচারা! ভাবছে এখানে থেকে পালাতে পারলে নিজের কাজিগিরি ই ছেড়েছুড়ে দৌড়ে কোথায় চলে যাবে!

পূর্ণ চোখ গরম করে কাজি কে বলে,

–‘এদিকে আয়। বিয়ে পড়া!’

পূর্ণের কথা শুনে তার বাবা মায়ের চোখ খুলে হাতে চলে আসার উপক্রম। জেঠি হুংকার ছেড়ে এতোক্ষণ চুপ থাকার পর এই মুখ খুললেন।

–‘এসব কি হচ্ছে পূর্ণ? কিসের বিয়ে? বিয়ে তো নিজেই ভেঙ্গে দিলি না? কার বিয়ে হবে এখানে আর?’

পুষ্পা শুধু চুপটি করে দেখে গেলো সব। পূর্ণ জবাব প্রদান করলো,

–‘আমার আর পরির!’

–‘কিহহ…!’

ছেলের কথায় এবার দুজন ই অবাক হয়। পরি তার চেয়ে বেশি অবাক। এসব স্বপ্ন নাকি সত্যি বুঝতে পারছে না সে। মাথা টা কেমন ঝিম মেরে আসছে। গা গুলাচ্ছে তার!

–‘নাহ এই বিয়ে আমরা মানি না! তুই আমাদের ছেলে হয়ে এটা করতে পারিস না!’

পূর্ণের শর্টকাট জবাব!

–‘আমি কি করতে পারি আর না পারি সে সম্পর্কে আপনাদের ধারণা কম!’

কাজি কে ধমক দিয়ে বললো,

–‘বিয়ে পড়াতে বলেছি না তোকে আমি?’

কাজি সাহেব কনফিউজড কার কথা শুনবে! মা বাবার নাকি ছেলের! বাবা মার কোনো কথা কে পূর্ণ পাত্তা ই দিচ্ছে না দেখে এবার তারা পুষ্পার কাছে যায়!

–‘পুষ্পা এটা কি করতে যাচ্ছে পূর্ণ? তুই ওকে আটকা মা!’

পুষ্পা ও নিজের বাবা মায়ের উপর প্রচন্ড ক্ষিপ্ত। দুটো মানুষ এতো টা নিকৃষ্ট কিভাবে হতে পারে। পরির হাত পা গাল সব প্রমাণ দিচ্ছে তার উপর কেমন অত্যাচার চলেছে! যার মূলেই ছিলেন এই দুজন ব্যাক্তি! এদের কে মা বাবা বলতে ঘৃণা হচ্ছে পুষ্পার। টাকার জন্য তো তাহলে এরা তার সাথে ও এমন করতে দুবার ভাববে না! পুষ্পা ক্রুদ্ধ স্বরে বললো,

–‘ভাইয়া যা করতে যাচ্ছে ভালোই করছে। বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন না আপনারা ওকে? নিন বিয়ে হচ্ছে পরির! চুপচাপ সেটা দেখতে থাকুন!’

একদম অপরিচিতের মতো ব্যবহার করলো পুষ্পা। মেয়ের কথা শুনে এবার আরো হতাশ হন তারা।

পূর্ণ আবার ধমক দেওয়ায় কাজি বিয়ে পড়াতে শুরু করে।

পূর্ণ কবুল বলে দেয়। এবার পালা আসে পরির! সে কবুল বলে না। পুষ্পা গিয়ে পরির হাত ধরে। আর নরম স্বরে বলে,

–‘কবুল বল!’

পরি অশ্রুসিক্ত চোখ দুটো দিয়ে একবার পুষ্পা কে দেখলো। পুষ্পা আস্বস্ত করলো তাকে। পরি আবার নিচের দিকে দৃষ্টি নত করে। দাঁত মুখ খিচে আধো ধরা গলায় ‘কবুল’ বলেই লুটিয়ে পড়ে পূর্ণের কাঁধে! চোখ টা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়। আর তারপর ই পরি সেন্স হারিয়ে ফেলে!

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here