–একজন বিবাহিতা মহিলার পরপুরুষের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়ানোর কারণ কি হতে পারে??চাহিদা,ভালোবাসা নাকি কোন অতৃপ্ত বাসনা?কি মনে হয়, ইমরান সাহেব?
–হ….হঠাৎ এ…এসব কথা আমাকে কেন বলছো?
–আপনার মতামত জানতে চাচ্ছি।
–চুপচাপ কাজে বসো,যাও।
–জ্বী আচ্ছা।
ইমরান সাহেব কুলকুল করে ঘামছেন।”সায়ন এগুলো কি বলে গেল??তবে কি সে আমার আর তনয়ার ব্যাপারটা জানতে পেরে গেল?নাহ্!তনয়াকে সাবধান করতে হবে।”ইমরান সাহেব ফোনটা হাতে নিয়ে তনয়ার নাম্বার ডায়াল করলেন।রিং হচ্ছে কিন্তু তনয়া ফোন ধরছে না।এমন তো কখনো হয় না।একবার রিং হতেই তনয়া ফোন রিসিভ করে তবে আজ কেন ব্যতিক্রম?চিন্তায় প্রেশার বাড়তে লাগল ইমরান সাহেবের।শেষমেষ ভেবেই ফেললেন বাড়ি গিয়ে তনয়ার সাথে দেখা করে আসবেন।পি.এ কে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে নিজের টয়োটা মডেল-২০০৭ এর গাড়িটিতে চড়ে বসলেন।ড্রাইভারকে আগেই ছুটি দিয়ে রেখেছেন তিনি।তনয়ার বাড়িটা লোকালয় থেকে বেশ দূরে এবং আশেপাশে আর কোন বাড়িও নেই।ফলে অবাধে তিনি সেখানে যাতায়াত করতে পারেন।তনয়াকে তিনি প্রথম দেখেছিলেন সায়নের জন্মদিনে।অফিসে টিফিন হাতে এসেছিল সে।নীলপাড় সাদা শাড়ি,চুলে রজনীগন্ধার খোপা তবে এসবের চেয়ে ইমরান সাহেবের যা নজরে বেশি এসেছিল তা হলো তনয়ার নেশার্ত চোখ,মাতাল করা সেই দৃষ্টিতে তিনি ধরাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন।পুরুষদের দৃষ্টিতে হয়তো একটা সময় স্ত্রী ব্যতীত পরনারীকেই ভালো লাগতে শুরু করে।ইমরান সাহেবের ক্ষেত্রেও হয়তো তাই হয়েছে।নিজের অসুস্থ বউয়ের কথা ভুলে কি এক উন্মাদনায় মেতেছিলেন তিনি।ভাবতে ভাবতেই তনয়ার দোতলা সাদা রঙের পুরনো বাড়িটার সামনে এসে পড়লেন তিনি।গাড়ি থামিয়ে মুখে এক লম্বা হাসি ঝুলিয়ে কলিং বেলের দিকে হাত রাখতে গেলেন।হঠাৎ মনে হলো তনয়াকে একটা সারপ্রাইজ দেওয়া দরকার।বাড়ির ডুপ্লিকেট চাবি হাতাতে নিয়ে তার মনে পড়ল ফোনটা তিনি অফিসেই ফেলে এসেছেন।সেসবের পাত্তা না দিয়ে চাবিটা লকে ঘুরাতেই খট করে একটা শব্দে দরজাটা খুলে গেল।দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই ইমরান সাহেব অনুভব করলেন অদ্ভুত এক পিনপতন নীরবতা সারা বাড়ি জুড়ে।হাতঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলেন কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে এগারোটা।এই সময়টায় তো তনয়া নিজের প্রিয় সিরিয়াল নিয়ে টিভির সামনে ব্যস্ত থাকে।এক মিনিটও এদিক-সেদিক হয় না।আজ কেন তার ব্যতিক্রম?অদ্ভুত এক আতঙ্ক ঘিরে রয়েছে ইমরান সাহেবকে।ধীর পায়ে তনয়ার শোবার ঘরের দিকে যেতে লাগলেন তিনি।শোবার ঘরের দরজা খুলতেই দেখলেন তনয়া বিছানায় শুয়ে।হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন ইমরান সাহেব।আলতো পায়ে এগোলেন তনয়ার দিকে।”এই গরমেও মেয়েটা কাঁথা গায়ে দিয়েছে!!”কাঁথা সরাতেই চোখ কপালে ওঠে ইমরান সাহেবের।তনয়ার সারা শরীর রক্তে মাখামাখি।পা থেকে হাঁটু অবধি বেশ কয়েকটা কাঁটা দাগ,পেটে চাকু দিয়ে বারকয়েক আঘাত করা হয়েছে,গলার মাঝ বরাবর আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে,কালশিটে পড়ে গেছে সেখানে।ইমরান সাহেবের হাত-পা থরথর করে কাঁপছে।তনয়ার মাথার কাছে একটা কাগজ পড়ে রয়েছে।বাইরে থেকে রক্তমাখা।কাঁপা হাতে কাগজটা হাতে নিয়ে মেলে ধরলেন ইমরান সাহেব।নীল কাগজে স্বচ্ছ সাদা কালিতে লেখা,
“তোমরা জিনার ধারে কাছেও যেয়ো না: কারণ এটি একটি লজ্জাজনক ও নিকৃষ্ট কর্ম, যা অন্যান্য নিকৃষ্ট কর্মের পথ খুলে দেয়।”
— কুরআন, সূরা ১৭ (আল-ইসরা/বনি ইস্রাঈল), আয়াত ৩২
কাগজটি পড়ে ইমরান সাহেবের অন্তঃআত্মা অবধি কেঁপে উঠল।রক্তে ভিজে উঠেছে ইমরান সাহেবের হাত।ইমরান সাহেব কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।বড় ধাক্কাটা তার তখন লাগল যখন পুলিশের গাড়ির সাইরেন কানে আসল।ইমরান সাহেব কাগজটা ফেলে নিচে দৌড় দিলেন।দরজার কাছে যেতেই দেখলেন একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর আর তিনজন হাবিলদার।রীতিমতো ঘামতে লাগলেন ইমরান সাহেব।এখন যদি তিনি বলেন তিনি খুন করেন নি তাহলে কি আদৌ পুলিশ বিশ্বাস করবে?
–এই বাড়িতে একটা খুন হয়েছে।আমরা সংবাদ পেয়েছি।আপনি কে??
–আমি…না….মানে…আসলে….
–হাবিলদার রহমত,যাও তল্লাশি নাও।
–ত…ত…তল্লাশি কেন? এখানে কোন খুন-টুন হয়নি।আপনারা আসতে পারেন।
–বাসার বাইরে নেমপ্লেটে তো সায়ন আহমেদ আর তনয়া আহমেদের নাম লেখা।আপনি কে?
–আমি….মানে….আমি আসলে….
হাবিলদার রহমতের ডাকে ভিতরে গেলেন সবাই।বিছানায় তনয়ার রক্তে মাখা লাশ দেখে ইমরান সাহেবের দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকাল ইন্সপেক্টর রাজিব।
–অফিসার,বিশ্বাস করুন।আমি কিচ্ছুই করিনি।আমি এই খুন করিনি অফিসার।
–আপনি ছাড়া এই বাড়িতে কেউ নেই।আপনার হাতে রক্ত লেগে আছে তো খুন করলটা কে??
–অফিসার!!ওর স্বামী ওকে মেরে ফেলেছে।
–আপনি যদি ওর স্বামী না হন,তাহলে আপনি কে??
–আমি আসলে ওর স্বামী সায়নের অফিসের বস।আমি মাঝেমধ্যেই তনয়ার কাছে আসতাম আর সেজন্যই সায়ন ওকে মেরে ফেলেছে।দেখুন ওখানে,কাগজে কি কি লেখা আছে!ওসব আমি কেন লিখতে যাবো?
–হাবিলদার, কোন কাগজ পেয়েছো?
–না স্যার।এখানে তো কোন কাগজ নেই।
–কীহহহ!!এটা কি করে হতে পারে?কাগজটা তো ওখানেই ছিল।অফিসার,আপনি চলুন আমার সাথে।সায়নকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই ও ভয় পেয়ে সব বলবে।
–চলুন।
কুলকুল করে ঘামছেন ইমরান সাহেব।অফিসে পৌঁছাতেই তিনি ছুটলেন সায়নের কেবিনের দিকে।কিন্তু সায়নের কেবিন খালি দেখে পুলিশের সন্দিহান দৃষ্টি আবার এসে পড়ল ইমরান সাহেবের দিকে।ইমরান সাহেব পি.এ সাদকে ডাক দিলেন।
–সাদ,সায়ন কোথায়?
–সায়ন স্যার?সায়ন স্যারকে তো আপনিই দুদিন আগে অফিসের কাজে খুলনা পাঠিয়েছেন।
–আমি??কি বলছো তুমি?সকালেই তো সায়ন অফিসে এসেছিল।সকালে আমার কেবিনে বসে আমার সাথে কথাও বলেছে।
–এসব কি বলছেন,স্যার?সকালে অফিসে তো দূর,গতকাল বিকাল থেকে সায়ন স্যার ঢাকাতেই নেই।
পুলিশ সবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারল সায়ন আহমেদ সত্যিই আজ অফিসে আসেননি।প্রেশার মারাত্মকভাবে বেড়ে গেল ইমরান সাহেবের।মাইনর স্ট্রোক হলো তার।
সায়ন আহমেদ এগিয়ে আসছে ইমরান সাহেবের দিকে।চোখদুটো অসম্ভব লাল,ভয়ঙ্কর চাহনি।কঠিন গলায় বলে উঠলেন তিনি,
“ব্যভিচারের দায়ে অভিযুক্ত পুরুষ ও নারী যারা,- তাদের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত প্রদান কর: তাদের বিষয়ে করুণা যেন তোমাদেরকে দুর্বল না করে, এমন একটি বিষয়ে যা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হয়েছে, যদি তোমরা আল্লাহ এবং মহাপ্রলয় দিবসের উপর বিশ্বাস রাখো: এবং বিশ্বাসীদের একদলকে তাদের শাস্তির সাক্ষী করে রাখো।”
[— কুরআন, সূরা ২৪ (আন-নুর), আয়াত ২]
সায়ন আহমেদের কথা শুনে ইমরান সাহেব লাফ দিয়ে উঠে বসলেন।চিৎকার করতে লাগলেন, “বাঁচাও …..বাঁচাও আমাকে….মেরে ফেলল আমায়!!”ইমরান সাহেবের চিৎকার শুনে পুলিশ ছুটে আসলো কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই।পুলিশ অফিসার রাজিব ডক্টরকে বললেন ইমরান সাহেবের চেক-আপ করতে।তিনি চেক করলেন,প্রেশার এখনো স্বাভাবিক হয়নি।ঘুমের ওষুধের ডোজটা বাড়িয়ে দিলেন তিনি।ঘুমের ওষুধের প্রভাবে ছটফটানি কমে আসল ইমরান সাহেবের ।
❄️
“পড়ন্ত বিকালবেলা।মাত্র ছ’হাজার টাকা বেতনের চাকরির হলুদ খামটা হাতে পেয়েছিলাম।সেই হলুদ খামের ঔজ্জ্বল্যই যে আমার জীবনকে এত রঙিন করে তুলবে ভাবিনি।মা আমার জন্য তোমায় পছন্দ করে আনলেন।তোমায় যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই ভালোবেসে ফেলেছিলাম।যেদিন প্রথম তোমার দীঘল কেশে রজনীগন্ধার গাজরাটা পড়িয়ে দিয়েছিলাম,মনে হয়েছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ বোধহয় আমি।ধীরে ধীরে তোমার মায়ায় নিজেকে পুরোপুরি জড়িয়ে নিলাম তনয়া।”হঠাৎ জানালার পাশে পেঁচার ডাক শুনে বিরক্ত হলো রহস্য।এরকম একটা মোমেন্টে পেঁচার ডাক!!নীল মলাটের পুরনো ডায়েরিটা বন্ধ করল রহস্য।তনয়ার খুনের কেসেই এসিপি রহস্যকে ডাকা হয়েছে।তনয়ার বাড়ি তল্লাশি করে কেবলমাত্র এই ডায়েরিটাই নিয়ে এসেছে রহস্য।জানালাটা বন্ধ করে রান্নাঘরের দিকে গেল রহস্য।এই সময়টায় ব্ল্যাক কফি খায় রহস্য।ব্ল্যাক কফি খাওয়ার অবশ্য একটা কারণ আছে।ব্ল্যাক কফিতে উপস্থিত ক্যাফাইন মেটাবলিজম বাড়ায় এবং শরীরে এনার্জি লেভেল বাড়াতে সাহায্য করে ফলে খিদে কমতে সাহায্য হয়।এজন্যই রাতে মিষ্টি ছাড়া ব্ল্যাক কফি খায় রহস্য।ব্ল্যাক কফির মগ হাতে নিয়ে আবার টেবিলে এসে বসে রহস্য।কফিতে এক চুমুক দিয়ে ভাবতে লাগল রহস্য।সেও ভালোবেসেছিল কোন এক তনয়াকে অবশ্য যে মারা গেছে তার লাশটা এখন অবধি দেখেনি রহস্য।অদ্ভুত ব্যপার হলো বাড়িতেও তাদের একটা ছবি অবধি নেই।সায়নকেও এখনো পাওয়া যায়নি নিজের ভালোবাসার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে টেবিলের দিকে তাকায় রহস্য আর টেবিলে তাকাতেই বড়সড় ধাক্কা খেল রহস্য।নীল মলাটের ডায়েরিটা টেবিলে নেই অথচ রহস্যের স্পষ্ট মনে আছে ডায়েরিটা সে এখানে রেখেই কফি বানাতে গিয়েছিল।তাহলে কোথায় গেল ডায়েরিটা?
চলবে…..
❄️পড়ন্ত বিকালের বিচ্ছেদ❄️
সূচনা পর্ব
মিহি
[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আশা করছি সবার ভালো লাগবে গল্পটা।সবাই নিজেদের মতামত জানিয়ে পাশে থাকবেন।সবাইকে ধন্যবাদ।]