পড়ন্ত বিকেলে বিচ্ছেদ পর্ব শেষ

❄️পড়ন্ত বিকালের বিচ্ছেদ❄️
অন্তিম পর্ব
মিহি

–সায়ন কোথায়?

–কাস্টাডিতে আছে স্যার।আপনি সিগন্যাল দেওয়ার পরেই আমরা চলে এসেছিলাম।

–সায়ন কিছু স্বীকার করেছে?

–না স্যার।

–আচ্ছা চলো।

রহস্য রাজিবকে সাথে নিয়ে সায়নের দিকে যেতে লাগল।রহস্য ঠিকমতো কিছু মনে করতে পারছেনা।হঠাৎ করেই কি করে অজ্ঞান হয়ে গেল সে?অবশ্য সায়নের পরিচয় জানার পরেই সে রাজিবকে সিগন্যাল পাঠিয়েছিল রহস্যের বাড়িতে আসার জন্য।তবে আদৌ কি সায়নের মধ্যে এমন কোন অলৌকিক শক্তি আছে যার কারণে সে রহস্যকে অজ্ঞান করতে পেরেছিল।সায়নের হাতে থাকা ঐ বইটাই কি কোন অলৌকিক শক্তির ঠিকানা??অদ্ভুত সব চিন্তার মাঝে বাস্তবতাটাই যেন সাজানো মনে হচ্ছে রহস্যের কাছে।

হাতের বইটা শক্ত করে আকড়ে ধরে আছে সায়ন।মুখের ভাবভঙ্গি বারবার পরিবর্তন হচ্ছে।হঠাৎ মুখটা হাসিতে প্রজ্জ্বলিত তো হঠাৎ বিষণ্ণতায় মলিন।সায়নের মানসিক অবস্থা নিয়েও এখন সন্দেহ হচ্ছে রহস্যের।সবাইকে বের করে দিয়ে সায়নের মুখোমুখি বসল রহস্য।সায়নের ভাবভঙ্গি এখন স্বাভাবিক যেন এতক্ষণ নাটক করছিল সে।এতটাই নিখুঁত অভিনয় যা যে কোন স্বাভাবিক মানুষকে দ্বিধায় ফেলে দিতে বাধ্য।

–কেন মেরেছো তনয়াকে?

–আমি মারিনি ওকে।ও নিজেই নিজেকে মেরে ফেলেছে ঐ অলৌকিক শক্তির লোভে।

–আবার ঐ শক্তি!!কিসের শক্তি??মেন্টালি সিক তোমরা।তোমার হাইড-আউট থেকে তনয়ার লাশ আমরা পেয়েছি।ডক্টর ব্লাড রিপোর্টে সাফ সাফ বলেছেন তনয়া ড্রাগ নিত।তোমার হাইড-আউট থেকেও ড্রাগ পাওয়া গেছে।এর মানে কি বুঝবো আমি??হয় তোমরা দুজনেই ড্রাগ-এডিক্টেড বা তুমি তনয়াকে জোরপূর্বক ড্রাগস দিতে।

–ড্রাগ?ওগুলো ড্রাগ নয়,ওগুলো তো অমৃত!এই শক্তি অর্জনের পন্থা।

–শাট আপ!!এইসব আলতু ফালতু কথা বাদ দাও নয়তো এখানে তোমাকে শ্যুট করে দাফন করে দিলেও কেউ আমাকে কিচ্ছু বলতে পারবেনা।বিকজ কোন প্রুভ নেই।সো,যা সত্যি বলে ফেলো।

–আমি বলছিই তো আমি তনয়াকে মারিনি।তনয়া নিজেই নিজেকে মেরে ফেলেছে!

–ওহ!তার মানে তনয়া নিজেই নিজের হাঁটুতে ব্লেড দিয়ে কেটেছে নাকি নিজেই নিজের পেটে চাকু মেরে আবার নিজেই নিজের গলার কাছে আগুনের ছ্যাঁকা লাগিয়েছে । এসব বিলিভ করার মতো মনে হয়?তনয়ার বডিতে তোমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া গেছে।ইমরান সাহেবের বডিতেও অতিমাত্রায় ড্রাগস পাওয়া গেছে এবার ঐ ড্রাগসের কারণে ওনার হ্যালুসিনেশন হয় যে তুমি ওনার সাথে কথা বলেছো অথচ তুমি ওখানে ছিলেই না।

–আমি কোন ড্রাগস দেইনি ওকে।কিচ্ছু করিনি আমি।

–বইটা এদিকে দাও।

–না!!আমি দিব না বই।দিব না আমি!!দূরে যাও!!দূরে যাও আমার থেকে।

রহস্য সায়নের হাত থেকে বইটি নিল।বইয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা ফাঁকা,একেবারেই সাদা।রহস্য এবার যেন আরও স্পষ্টভাবে বিশ্বাস করল সায়নের মাথায় সমস্যা রয়েছে।সায়নের হাত থেকে বই নেওয়ার পর তার আচরণ আরও অদ্ভুত হয়ে গেল,উন্মাদের মতো ছটফট করতে লাগল সে।বইটা নাকের কাছে আনতেই অদ্ভুত একটা স্মেল পেল রহস্য।নেশাকর একটা স্মেল ।বেশ কয়েকটা বিষয় মাথায় খেলে গেল রহস্যের।মুচকি হেসে বইটা পাশে রাখল রহস্য।

সায়ন উন্মাদের মতো লাফাচ্ছে যা রহস্যের সন্দেহকে সত্যি প্রমাণ করে দিচ্ছে।

–সো,মি.সায়ন!এবার বুঝতে পারলাম সবকিছু।স্মাগলিংয়ের সাথে তনয়া জড়িত।ইমরান সাহেব এবং আর্শাদ লোকটাও স্মাগলিংয়ের সাথে জড়িত।টাকার জন্য মানুষ কতটা নিচে নামতে পারে।

রহস্য সায়নকে রেখে বাইরে চলে আসলো।রাজিবকে সাথে নিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছে রহস্য। রাজিব বেশ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বেশ কিছুক্ষণ ধরে । শেষমেশ বলেই ফেলল,”স্যার!কেসটা কি হলো বুঝলাম না।”রাজিবের কথায় মুচকি হাসলো সায়ন।

“ব্যাপারটা তেমন বিশেষ কিছু নয় রাজিব।তনয়া মেয়েটাকে আমি কলেজ লাইফে ভালোবাসতাম।পরে বিয়ে হয়ে যায় । তনয়ার বরাবরই দামী জিনিসে ব্যাপক আগ্রহ । আর সায়ন তো তনয়ার এসব ডিমান্ড পূরণ করতে পারবে না । সেজন্য প্রথমে সায়নের বসের সাথে সম্পর্ক করে তনয়া কিন্তু তাও বিশেষ কোন লাভ না পেয়ে ড্রাগ মাফিয়া আর্শাদের সাথে সম্পর্কে জড়ায় । আর্শাদের প্রতি ওর কোন ভালোবাসা ছিল না , যা ছিল টাকার লোভ । আর্শাদের টাকা নিয়ে পালানোর ব্যবস্থা করছিল তনয়া । টাকাগুলো খুব সম্ভবত সায়নের ঐ হাইড-আউটে পাওয়া যাবে । তো তারপর,তনয়ার সাথে বসের অ্যাফায়ারের কথা জানার পর থেকেই রেগে ছিল সায়ন । বস যখন অফিসের কাজে তাকে খুলনা পাঠায় তখনি ভেবে নেয় তনয়াকে মেরে ইমরান সাহেবের দিকে দোষ চাপাবে । এজন্য ঐদিনই ইমরান সাহেবের খাবারে ড্রাগস মেশায় সায়ন । পরেরদিন ড্রাগসের কারণে হ্যালুসিনেশন হয় আর তার মস্তিষ্কে যে ভয় ছিল সায়নকে নিয়ে যে সায়ন যদি তাদের সম্পর্কের কথা জেনে যায় সেটাই তার চোখের সামনে ভেসেছে । হড়বড়িয়ে তনয়ার বাড়ির দিকে যাত্রা করেন তিনি । সায়ন ভেবে রেখেছিল ততক্ষণে তনয়াকে মেরে ফেলবে কিন্তু বাড়িতে গিয়ে দেখে আর্শাদ তনয়াকে মেরে পালাচ্ছে । আর্শাদ চলে যেতেই সায়ন তনয়ার পায়ে কাঁটা দাগ দেয় আর গলায় আগুনের ছ্যাঁকা ।এসব যে তনয়ার মৃত্যুর পর করা হয়েছে তা ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে আসলে কনফার্ম করা যাবে । ইমরান সাহেব আসাতে সায়ন পেছনের গেট দিয়ে পালিয়ে যায় । হ্যালুসিনশেনের কারণে তখনো ঠিকমতো মাথা কাজ করছিল না ইমরান সাহেবের । আতঙ্কে আর ড্রাগের ডোজের কারণে প্রেশার অনেকটাই বেড়ে যায় ইমরান সাহেবের । তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন । পরবর্তীতে সেই ভয়টাই বড়সড় আকার ধারণ করে কারণ হয়ে দাঁড়ায় তার মৃত্যুর । এই ছিল ঘটনা ।”এক নিঃশ্বাসে শেষ করল রহস্য ।

–কিন্তু স্যার!ও আপনাকে অজ্ঞান করল কি করে?

–রোজ রাতে আমি বাসায় ঢুকেই ব্ল্যাক কফি খাই । সেদিনও খেয়েছিলাম । কফি সিডসে ঘুমের ওষুধ ছিল যার কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি আমি ।

–কিন্তু স্যার এই অলৌকিক শক্তি কি?সায়ন কেন বারবার সে শক্তির কথা বলছে?

–যে বই ধরে সায়ন ঐসব কথা বলছে তার প্রতিটি পৃষ্ঠায় ড্রাগ পাউডার মেশানো।আর্শাদকে মারতেও ড্রাগই ইউজ করেছে সায়ন।

–গ্রেট স্যার।এতকিছু এত সহজে কি করে বুঝলেন আপনি?

–গেস করলাম(চোখ টিপ মেরে)

রহস্যের এহেন কাণ্ডে ভ্যাঁবাচাঁকা খেয়ে গেল রাজিব।সত্যিই এই লোকটা আস্ত একটা রহস্য!!গেস করে কেউ একটা কেস সমাধান করে ফেলতে পারে তা আজ জানল সে।গাড়ি রহস্যের বাড়ির সামনে এসে থামল।রহস্য নেমে গেলে রাজিব গাড়িটা নিয়ে গেল । রহস্য বাসার দিকে হাঁটতে লাগল । পেঁচাটা আজও বিদঘুটে কণ্ঠে ডেকে যাচ্ছে । পেঁচার ডাক শুনেই রহস্যের মনে পড়লো নীল মলাটের পুরনো ডায়েরিটার কথা । বাসায় ফিরে ডায়েরিটা খুঁজতে লাগল রহস্য । কিন্তু নাহ্!!ডায়েরিটা নেই!!

সমাপ্ত ।

[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here