গল্প :- বড্ড ভালোবাসি
পর্ব :- ৪৯
Writer :- Labiba Islam Roja
:
:
:
সকালে নাস্তা করে আমাকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলেন রিহান।আমাকে বাসায় পৌছে অফিস যাবেন উনি।সব টেস্ট কমপ্লিট কিন্তু রিপোর্ট এখন পাওয়া যাবেনা।বিকালে অফিস থেকে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবেন উনি।বাসায় যাওয়ার জন্য গাড়িতে বসে আছি আমি।ড্রাইভিং সিটে বসে কিছু একটা ভেবে চলেছেন উনি।যদিও কি ভাবছেন সেটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়।কিছু ভালো লাগছে না আমার গা ঘোলাচ্ছে।কি ভাবছেন সেটা জানতেও তেমন আগ্রহী নই আমি কারণ এই মুহূর্তে বাসায় যাওয়াটাই ইম্পরট্যান্ট আমার কাছে।।তবুও জিজ্ঞেস করলাম….
.
কি হলো কি ভাবছেন…?বাসায় যাবেন না?
.
না কিছুনা!!শরীর খারাপ করছে।আমি মাথা নাড়িয়ে না জানালাম।আচ্ছা এক মিনিট বসো আমি আসছি নাকি আমার সাথে যাবে।
.
না এখানেই ঠিক আছি আমি!!আপনি যান।
.
ওকে টেইক কেয়ার!!গাড়ির বাইরে মুখ করে তাকিয়ে আছি আমি।এখন কিছুটা ভালো লাগছে।কোথাও একটা গিয়েছেন উনি কিন্তু কোথায়।কিছুক্ষণ পর আইসক্রিম আর চকলেট হাতে ফিরে এলেন উনি।
.
এই নাও এখন আইসক্রিম খাও।চকলেট বাসায় গিয়ে দুপুরে খাওয়ার পর তবেই খাবে ঠিক আছে।ফাস্টফুড তোমার শরীরের জন্য ভালো নয় তাই এগুলো থাক অন্য সময় খাওয়া যাবে।
.
আইসক্রিম দেখেই মন খুশীতে ভরে গেলো আমার।গপাগপ খেয়ে নিলাম আমি।অর্ধেক খাওয়ার পর উনার দিকে তাকালাম আমি।উনি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।উনাকে এভাবে তাকাতে দেখে কিছুটা অস্বস্তি হচ্ছে আমার।আমার অস্বস্তি হচ্ছে হয়তো বুঝতে পেরে অন্য দিকে মুখ করে তাকালেন উনি।আপনি খাবেন না…?
.
হুম খাবো তো বলেই আমার আইসক্রিম থেকে খেয়ে নিলেন উনি।এটা কি হলো আপনি আমার আইসক্রিম খেলেন কেন?ওই তো ওখানে আরো আছে ওগুলো খেতে পারলেন না।
.
নাহ পারলাম না!!ওগুলো তো আমার বৌয়ের স্পর্শ নেই।কিন্তু এটাতে ছিলো আর এটার মতো টেস্টি আর কোনোটা হবেনা।
.
সবসময় আমার জিনিস খাওয়ার ধান্দা।
.
হুম তোমার সবই তো আমার।তাই সবকিছুতে আমার অধিকার তোমার আগে।
.
ইসস!!ওদিকে তাকান নাহলে আবার নজর দিবেন।মুচকি হেসে গাড়িতে স্টার্ট দিলেন উনি।
.
আমাকে বাসায় পৌছে অফিসে চলে গেলেন উনি।যাওয়ার আগে স্ট্রিট বলে গেছেন টাইমলি যেন খেয়ে নিই নাহলে আজ আমার কপালে শনি আছে।বাসায় এসেই একগাধা বমি করেছি আমি।বড্ড ক্লান্ত লাগছে দুপুরে খেয়েই ঘুমিয়ে পরেছি।ঘুম থেকে জেগেই দেখি চারদিক অন্ধকার নেমে গেছে তার মানে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। উঠেই ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গেলাম আমি।মা আমার হাতে কফি ধরিয়ে জোর করে রুমে পাঠিয়ে দিলেন আমায়।ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছি আর ভাবছি কি আসবে আজকের রিপোর্টে।খারাপ কিছু হবে না তো।আচ্ছা যদি খারাপ কিছু হয় যদি রিহানের কাছ থেকে দূরে যেতে হয় তাহলে।না না আর ভাবতে পারছিনা।এসব ভাবছি আর কফি খাচ্ছি আমি।হঠাৎ পেছনে কারো দাঁড়িয়ে থাকার আবাস পেলাম।এই ঘ্রাণটা আমার খুব পরিচিত।হুম রিহান এসেছে। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম এক হাতে কোমড় ধরে অন্য হাতে রিপোর্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন উনি।উনার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে Something is Wrong….কিন্তু কি আছে ওই রিপোর্টে যার জন্য এতটা টেন্স উনি।তাহলে কি আমার ভাবনাই ঠিক।উনার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছি আমি।
.
দেখেছো আমার কথা না শুনে শুনে কতবড় অসুখ বাধিয়েছো।আমার কথা শুনলে কি খুব খারাপ হতো রোজ।আমি কি তোমার খারাপ চাই বলো তো।আজ যদি আমার কথা শুনতে তাহলে এমন কিছুই হতো না।
.
উনার কথা শুনে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আমার।শেষ পর্যন্ত আমার ভাবনাই ঠিক হলো।ককেন ককি হহয়েছে আআমার….?খুউব খারাপ কিছু কী…?
.
হুম খুব খারাপ!!রোজ তুমি সত্যি কিছুই বুঝতে পারোনি।এতবড় একটা রোগ তোমার শরীরে বাসা বেধেছে আর তুমি কিছুই টের পাওনি।
.
আমি মাথা নারিয়ে না জানালাম।কিন্তু আমার কি হয়েছে সেটা তো বলবেন?
.
উনি আমার কাছে এসে জরিয়ে ধরলেন উনি।আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা কি হয়েছে
.
রোজ তুমি
.
হুম আমি
.
কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলেন…. ইয়াহুু তুমি মা হতে যাচ্ছ রোজ আর আমি বাবা।বলেই আরো শক্ত করে চেপে ধরলেন আমায়।
.
নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিনা আমি।কি বলছেন উনি আমি মা..।আমি ফ্রিজড হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।এখন শুধু একটা কথাই আওরাচ্ছি আমি মা….
.
হ্যাঁ রোজ হ্যাঁ এটাই সত্যি।এবার আর কোনো অনিয়ম নয়।টাইমলি খাওয়া দাওয়া করতে হবে।তুমি ভাবতে পারছো আমাদের একটা ছোট্র প্রিন্সেস আসছে।আজ মনে হচ্ছে আমি পৃথিবীর সব সুখ পেয়ে গেছি।তুমি জানো খবরটা পেয়ে আমি কতটা হ্যাপী।
.
সত্যি বলছেন আপনি…?
.
হুম সত্যি!!বলেই কপালে চুমো একে কোলে তুলে বিছানায় বসালেন আমায়।উনার চোখে অদ্ভুত এক খুশী দেখতে পাচ্ছি আমি।প্রথমবার বাবা হওয়ার অনুভূতি হয়তো এতটাই সুখ দেয় মানুষকে।আনন্দে আমার চোখে পানি চলে এলো।আমার চোখে পানি দেখে জিজ্ঞেস করলেন উনি….
.
তুমি কাঁদছো কেন রোজ?তুমি কি খুশী নও রোজ।
.
এমনি!!আমি এটা ভাবতেও পারিনি।থ্যাংকস রিহান আমাকে পরিপূর্ণ করে দেওয়ার জন্য।এরচেয়ে খুশীর খবর আর কি হতে পারে।আমার নারী জন্ম স্বার্থক রিহান।#বড্ড_ভালোবাসি আপনাকে।আচ্ছা আপনি তখন কিসব বললেন?
.
ওটা আমি মজা করে বলেছিলাম।আমিও ভালোবাসি আমার বৌটাকে।জানো তুমি দুমাসের প্রেগন্যান্ট অথচ এই ব্যাপারটা মেয়ে হিসাবে সবার আগে তোমার বোঝা উচিৎ ছিলো কিন্তু আমার বউ তো এখনও পিচ্চি আছে তাই বুঝতে পারিনি।প্রবলেম নেই এখন তো জানতে পেরেছি এই অনেক।এই যে প্রিন্সেস (পেটে চুমো দিয়ে) পাপা সবার আগে এমনকি তোমার মায়ের আগেও তোমাকে কোলে নিয়েছে চুমো দিয়েছে।অতএব এখনই বোঝে যাও তোমাকে কে বেশি ভালোবাসে।উনার এই পাগলামো দেখে শব্দ করেই হেসে উঠলাম আমি।সত্যি আপনি পারেন ও।আচ্ছা আপনি খুশী তো রিহান?আপনি তো এখন ওকে চাননি?
.
কি বলছো রোজ তুমি আমাকে দেখে বুঝতে পারছোনা আমি কতটা খুশী।দু দুটটো বাচ্চা আসবে এ বাড়িতে।হুম আমি তোমার কথা ভেবে বলেছিলাম বাট এখন যখন ও আসছে সেখানে অখুশী হওয়ার প্রশ্নই উঠেনা।আমি আজ ভীষণ খুশী।ভাবো আমি প্রথম বাবা হচ্ছি।ওই পিচ্চিটা যখন পাপা বলবে তখন কেমন অনুভূতি হবে বুঝতে পারছো তুমি।
.
উনার খুশীগুলো যেন ধরছেইনা।কত খুশী উনি।জানেন আমি চাই ভাইয়ার একটা প্রিন্স আসুক আর আমার প্রিন্সেস।ভাইয়া যেমন সারাজীবন আমাকে বুকে আগলে বড় করেছে সেভাবে যেনো আমার প্রিন্সেসকে প্রিন্স আগলে রাখতে পারে।
.
আল্লাহ অবশ্যই তোমার সব আশা পূরণ করবেন।
.
হুম!!আচ্ছা মা বাবা ভাইয়া কাউকে বলেছেন?
.
হুম অলরেডি সবাই জেনে গেছে।ভাইয়ারা এতক্ষণে হয়তো আমাদের বাসায় চলে এসেছেন আর আম্মু একটু পর আসবে তোমার সাথে দেখা করতে।
.
এসে গেছি(দুধ হাতে রুমে ঢুকলেন মা)নাও মা এটা খেয়ে নাও।আর এত উপরনিচ করবেনা।একদম পা টিপে টিপে হাঁটবে।রাহা আসতে চেয়েছিলো আমি না করেছি।এখন থেকে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করবে।আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম।আব্বু আম্মু ভাইয়া খবরটায় অনেক খুশী।সবাই এসে দেখা করে গেছে আমার সাথে।
.
সকালে ভাবির সাথে বসে গল্প করছি আমি।হঠাৎ পেটে হাত দিয়ে আহহ!করে উঠলেন ভাবি
কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম কিছু বুঝতে না পেরে ডাক দিলাম মাকে।রিহান রুমেই আছে আমার চিৎকার শুনে দৌড়ে রুমে এলেন উনি।ততক্ষণে বুঝে গেছি ভাবির লিভার পেইন শুরু হয়ে গেছে।চট করে ভাইয়াকে কল দিলাম আমি।সবাই ভাবিকে নিয়ে হসপিটাল যাচ্ছি। ভাইয়া আগে হসপিটালে এসো সব ঠিক করে রেখেছে।আধ ঘন্টা হয়ে গেলো অটিতে নিয়ে গেছে ভাবিকে।ভাইয়া পায়চারী করছে আজকে বুঝতে পারছি ভাইয়া কতটা ভালোবাসে ভাবিকে।সবসময় নিজের ভালোবাসাকে একটা গন্ডির মধ্যে রাখলেও আজকে তাকে কিছুতেই আটকে রাখতে পারছেনা।নিজের গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসছে।চোখ দুটো অশ্রুতে টলমল করছে।ভাইয়ার কাঁধে হাত রাখতেই ভাইয়া অবুঝ বাচ্চর মতো তাকালো আমার দিকে।আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম কিচ্ছু হবেনা সব ঠিক হয়ে যাবে।আম্মু মা সবাই প্রতিনিয়ত ডেকে চলেছেন আল্লাহকে।
হসপিটালের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে রিহান।চোখে মুখে চিন্তার চাপ স্পষ্ট।আমার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছেন উনি।
.
এত চিন্তা করছেন কেন…?সব ঠিক হয়ে যাবে।আপনি এভাবে ভেঙ্গে পরলে কি করে হবে।
.
তাই যেনো হয় রোজ!!দেখ তো কতক্ষণ হয়ে গেলো এখনও ডক্টর বাইরে এলো না।অটিতে এতক্ষণ লাগে নাকি।
.
কই কতক্ষণ হলো!কথার বলার মাঝেই কানে এলো বাচ্চার কান্নার আওয়াজ।আজ কান্নাকেও এত সুমধুর লাগছে।মুহূর্তেই সবার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।একটুপর একজন ডক্টর সাথে একজন নার্স বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বেড়িয়ে এলেন।কনগ্রেচুলেশন মিঃরাহাত আপনি পুএ সন্তানের বাবা হয়েছেন।
.
থ্যাংকস ডক্টর!! আমার ওয়াইফ কেমন আছে…?
.
হুমম ভালো আছেন।একটু পর বেডে দেওয়া হবে তখন দেখা করে আসবেন।তখনই নার্স বললো আমাদের মিষ্টি কই?
.
সব হবে!!নার্স বাচ্চাটাকে ভাইয়ার কোলে দিলো।কোলে নিয়েই কপালে চুমো একে দিলেন।অদ্ভুত এক খুশী ঘিরে ধরেছে ভাইয়াকে। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলেন ভাইয়া।রোজ দেখ একদম তোর মতো হয়েছে।ভাইয়ার কথায় এগিয়ে গেলাম বাচ্চাটার কাছে।কিভাবে ড্যাব ড্যাব করে তাকাচ্ছে!!ওকে কোলে নিতেই রিহান এসে পাশে দাঁড়ালো আমার দুজনেই চেয়ে আছি পিচ্চিটার দিকে।একে একে সবাই কোলে নিয়ে আদর করছেন ওকে।
.
চারদিন পর ডিসচার্জ করে দিলো ভাবিকে।এরমধ্যে ওর নামও ঠিক করে ফেলেছি আমি।রায়হান তানভীর রাফি।কিন্তু ভাবি বাচ্চাকে নিয়ে নিজের বাড়িতে চলে যাবে কথাটা শুনেই মন খারাপ হয়ে গেলো আমার।এখন ইচ্ছে হলেই ওকে ছুঁতে পারবোনা আমি।তবুও হাসিমুখে বিদায় দিলাম ওদের।যাওয়ার সময় পিচ্চিটা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। আমার মন খারাপ দেখে রিহান বললো…আমরা যাবো রোজ ওর সাথে দেখা করতে আর মন খারাপ করোনা প্লিজ।উনার কথায় কিছুটা হাসার চেষ্টা করলাম আমি।
.
.গল্প :- বড্ড ভালোবাসি
পর্ব :- ৫০
Writer :- Labiba Islam Roja
:
:
:
:- পরেরদিন থেকে আমার উপর শুরু হলো কেয়ারিং নামের অত্যাচার।খালি পেটে থাকা যাবে কিছুক্ষণ পর পর কিছুনা কিছু খেতে হবে।তাড়াহুড়ো করে হাঁটা যাবে না।দিনে তিন বারের বেশি নিচে যাওয়া যাবেনা।ছাদে যাওয়া একেবারে নিষিদ্ধ আমার জন্য।এতকিছু মেনে চলা আমার পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পরেছে।যখন যার ইচ্ছা হচ্ছে সে আমাকে খাইয়ে দিয়ে যাচ্ছে।যেন বেবি ক্যারি করে রাক্ষসে পরিণত হয়েছি আমি।
.
ঘরে বসে বসে বোর হয়ে গেছি আমি।আমার স্বামী মহোদয় এখন খুব কম সময় অফিসে থাকেন।আর বাবা বিজনেস সামলান।সবার ধারণা তিনি বাসায় থাকলে নাকি আমি একটু নীরব থাকি নাহলে দৌড়াদোড়ি করি।উনি বাসায় থাকায় মা বাবা খুশী হলেও আমি বড্ড অখুশী।বাসায় থাকলে এটা খাও ওটা খাও এরা করবেনা ওটা করবেনা উফ অসহ্য।খেতে খেতে এখন খাবার দেখলেও ভয় পাই আমি।এতকিছুর পরও একটা ব্যাপার খুব ভালো লাগে আমার।এই বাচ্চাটার আগমনে সবাই কতখুশী।ওর আসার অপেক্ষায় এখন সবাই দিন গুণছে।একটু পর উনি বাসায় ফিরবেন।বমিটা এখন বড্ড বেড়েছে কিছু খেয়ে হজম করতে পারিনা আমি।
.
ওয়াশরুমে গিয়ে একগাধা বমি করেছি আমি।আমি এসে বিছানায় হাঁপাচ্ছি তখন রুমে প্রবেশ করলেন উনি।আমাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে ছুটে আমার কাছে এলেন উনি।
.
কি হয়েছে রোজ।এভাবে হাঁপাচ্ছ কেন….?পরে গিয়েছিলে নাকি…?তোমাকে কতবার বলেছি দেখে চলাফেরা করতে।কিন্তু তুমি তো আমার একটা কথাও শুনবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেছো তাইনা।
.
উফফ রিলাক্স!!আমাকেও কিছু বলতে দিন।আমি পরে যাইনি এখন বমি করেছি।
.
অহহ!আগে বলবে তো।আচ্ছা ঠিক আছে এখন শুয়ে পরো।আমাকে শুইয়ে দিয়ে কাতা টেনে দিলেন গায়ে।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।ঘুম আসলে ঘুমিয়ে পরো।
.
আগে কি করে বলবো।আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিয়েছেন আপনি…?আপনি না দিনদিন কেমন হয়ে যাচ্ছেন একবার কথা বলা শুরু করলে আর থামতেই চান না।আগে কত ভালো ছিলেন এত কথা বলতেন না।
.
দেখতে হবে তো এখন কার সাথে থাকি।এখন বকবক শুনতে শুনতে নিজেও এমন হয়ে গেছি।লোকে এমনি এমনি এমনি বলে সঙ্গদোষ বড় দোষ।(টাই খুলতে খুলতে)
.
কিহহ!!কথাগুলো আপনি কি আমায় মিন করে বললেন….?
.
কই না তো!!তোমাকে বলতে যাবো কেন…?(ইনোসেন্ট ফেইস নিয়ে)তুমি সবসময় কত চুপচাপ থাকো।একদম শান্ত শিষ্ট একটা মেয়ে।তোমাকে আমি কিছু বলতে পারি নাকি।
.
তার মানে আপনি ইনডিরেক্টলি কথাগুলে আমায় বললেন তো…?আপনার কথায় তো এটাই বোঝা যাচ্ছে আমি চঞ্চল দুষ্টু একটা মেয়ে।
.
এই দেখ তুমি শুধু শুধু নিজেকে দোষারোপ করছো।আমি কখন তোমার নাম নিলাম আমি শুধু বললাম।এখন শিখে গেছি।আর এটাকে নিয়ে এখনও পরে আছো।
.
আপনি যে বললেন সঙ্গদোষ!!তাহলে আমি ছাড়া এ বাড়িতে আর কে আছে যে আপনি তার কাছ থেকে এসব শিখেছেন।আচ্ছা আপনি কি কারো সাথে রিলেশনে আছেন….?
.
আমার কথায় চোখ বড় বড় করে তাকালেন উনি।টাওয়াল হাতে আমার কাছে এসে ঝুকে বসলেন উনি।এই যে পিচ্চি রিলেশন সেটা শুধু আপনার সাথেই ছিল আছে আর আমৃত্যু থাকবে(কপালে চুমো দিয়ে)।মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন আর সঙ্গদোষ বলতে আপনাকেই বুঝিয়েছি এবার শান্তি(ফিসফিস করে)হয়েছেন হুমম।আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন উনি।আমি কত কথা বললাম কিন্তু কিছুই না শুনার ভান করে শাওয়ার নিতে শুরু করলেন যেন এখানে কিছুই হয়নি।আমারও ঘুম চলে এসেছে তাই ঘুমিয়ে পরলাম আমি।
.
চোখ খুলেই উনার বাহুডোরে নিজেকে আবিষ্কার করলাম আমি।হয়তো ফ্রেশ হয়েই ঘুমিয়ে পরেছেন কিন্তু আমি টেরই পাইনি।কেমন বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছেন।এই লোকটা আমার স্বামী যাকে নিয়ে হাজারো মেয়ে স্বপ্ন দেখতো আর এখন আমার বাচ্চার বাবাও।সত্যি খুব লাকি আমি।উনার নাকটাকে কেমন রসগোল্লার মতো লাগছে।ইচ্ছা করছে গপ করে খেয়ে ফেলি। উনার এই ঘুমটা এখন সহ্য হচ্ছে না আমার।খুব ইচ্ছা করছে দুষ্টুমি করে জাগিয়ে দেই উনাকে।উনার চুলগুলো এলোমেলো করে দিলাম আমি।এতে কিছুটা নড়ে আবারও ঘুমিয়ে পরলেন উনি।তাই এখন নিজের ইচ্ছাটাকেই প্রাধান্য দিতেই হবে।আমি আবার নিজের ইচ্ছাগুলোকে বেশীক্ষণ চেপে রাখতে পারিনা।তাই আমার কাজে লেগে পরলাম আমি।
.
মুখ একদম উনার কাছে নিয়ে নাকে হালকা কামড় বসিয়ে দিলাম আমি।আহহ!!বলে মুখে চরম বিরক্তি নিয়ে নাকে হাত বুলাতে বুলাতে বিছানায় উঠে বসলেন উনি।উনার মুখ দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছি আমি।
.
তুমি হাসছো!!রোজ এটা কোন ধরণের পাগলামি…?এরকম কেউ করে নাকি….?
.
উনার কথা শুনে আবারও হেসে উঠলাম আমি।
.
আমার নাকের বারোটা বাজিয়ে এখন খুব হাসি পাচ্ছে তোমার…?(মুখ কালো করে)
.
আমি(হাসি থামিয়ে)আমি আবার কি করলাম….?
.
কিচ্ছু জানো না তাইনা!!
.
কিচ্ছু জানিনা এমনটা নয় কিছুটা জানি।
.
কি জানো বলো…?
.
আপনার বউ আপনার নাকে কামড়ে দিয়েছে তার জন্য আপনি আমায় দোষারোপ করছেন।আসলে ওটা আপনার বউয়ের অনেক দিনের ইচ্ছা ওই রসগোল্লার মতো নাক কামড়ে দেওয়ার থ্যাংকস গড আজকে সেই ইচ্ছাটা পূরণ হয়েছে।
.
এসব অদ্ভুত অদ্ভুত ইচ্ছা আমার বউ ছাড়া আর কারোর যে হবে না সেটা জানি আমি।এরকম ইচ্ছাও মানুষের হয় ওহহ সরি ভুল হয়ে গেছে।তুমি তো মানুষ নও পেত্নী।
.
কিহহ!!আপনি আবার আমায় পেত্নী বললেন।আমি পেত্নী হলেও আপনার থেকে ভালো আছি।আপনার মতো রাক্ষুস তো নই।
.
তুমি কি সেদিনের শাস্তির কথা ভুলে গেছো রোজ!!আজকে আবার মনে করিয়ে দেবো নাকি।(ডেবিল স্মাইল দিয়ে)
.
ওরে বাবা আবার সেই কামড়!না না রোজ কিছু একটা কর নাহলে আজকে এই রাক্ষুস আবার তোকে কামড়ে দেবে!! দেখেছিস প্রিন্সেস তোর পাপা তোর মাম্মামকে কত অত্যাচার করছে।এখন তোর মাম্মাম কে মারবে বলছে।তোর পাপা কে একটু বকে দে তো।
.
মাই প্রিন্সেস কিছুই বলবে না তাইনা সোনা!!(পেটে চুমো দিয়ে)প্রিন্সেস জানে তো তার পাপা কখনও কোনো অন্যায় করতেই পারেনা কি পাপা ঠিক বলছে তো।এই দেখো বেবি হ্যাঁ বলছে!!(পেটে কান পেতে)
.
কচু বলছে!!একদম বাবার মতো হবে।রাক্ষুসের মেয়ে বলে কথা।আমার মতো ভালো হবে কি করে।
.
তাও ঠিক!!এত ভালো হয়ে কাজ নেই।আমার মেয়ে আমার মতোই হউক আমিও এটা….উনার কথা শেষ হওয়ার আগেই দৌড় লাগালাম ওয়াশরুমে গিয়েই বমি শুরু হয়ে গেলো আমার।উনিও পেছন পেছন ছুটলেন আমার।আমাকে পরিষ্কার করে কোলে করে বিছানায় বসালেন উনি।এখন কেমন লাগছে…?
.
আগের থেকে বেটার।
.
ঘুম থেকে উঠে খেয়েছো…?আমি না জানাতেই উনার মুখে অমাবস্যায় ডেকে গেলো।উনার এমন মুখ দেখে বুঝলাম এখন শুরু হবে বকাঝকা।শুধু বকাঝকা না যাকে বলে রোমান্টিক বকাঝকা যা এখন শুনতে একটুও ভালো লাগবেনা আমার। প্লিজ প্লিজ বকবেন না।আপনার বকা এখন আমার সহ্য হবেনা।আমি এখন ঘুমাবো গুড নাইট।
.
নো ঘুম!!চুপ করে এখানে বসে থাকবে আমি এক্ষুণি খাবার নিয়ে আসছি।
.
না আমি খাবো না!!আমার কথা যেনো কানেই গেলো না উনার।রুম থেকে বেড়িয়ে রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে গেলেন উনি।একটু পর কিছু ফল সাথে একটা লাটি নিয়ে রুমে প্রবেশ করলেন উনি।এটা দেখেই খুব ভালো বুঝতে পারছি আমি।এখন না খেলে এই লাটির বারি পরবে আমার পিঠে।
.
এই নাও কিছু ফল এগিয়ে দিলেন আমার দিকে।এগুলো খাও নাহলে তো বুঝতেই পারছো এই লাটি দিয়ে এখন কি হবে।
.
আমি খাবোনা!!আপনি আমায় মারবেন(ন্যাকা কান্না করে)
.
হুম মারবো!!আদর দিয়ে বাদর বানিয়েছি এখন মেরেও যদি একটু ভালো বানানো যায় তাহলে ক্ষতি কি।কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খাও।(মুখের সামনে ধরে)
.
মুখকে পেঁচার মতো করে খাচ্ছি আমি।রাক্ষসের জন্য একটুও শান্তি নাই আমার।
.
এত বকাবকি করে লাভ নাই।যা করছি বেবির ভালোর জন্যই করছি।সো না বকে ঝটপট খেয়ে নাও।
.
ওহহ গড!!সামনে তো কিছু বলতে পারিনা মনে মনে কথা বলেও যদি শান্তি পেতাম।এখন বুঝ খাবারের অত্যাচার কাকে বলে কত প্রকার…..!!
.
.
চলবে….
.