#বন্ধ_দরজা
১৬
লেখা-মিম
আটবার ফোন করার পর ফোন রিসিভ করলো ফাহিম।
-” সমস্যা কি তোর? ফোন রিসিভ করছিলি না কেনো?”
-” আরে মিটিংয়ে ছিলাম। তোর কথায় মনে হচ্ছে খুব অস্থির হয়ে আছিস। কি হয়েছে?”
-” সুহায়লার সাথে কন্টাক্ট করতে পারছিনা। সকালে নাকি বাবার বাসায় গেছে। সারাদিনে একটা ফোনও করেনি। আমি ফোন দিলাম। কিন্তু ফোন যাচ্ছে না। সুইচ অফ। এমনকি আজকে যে বাবার বাসায় যাবে সেটাওআমাকে বলেনি। ও তো কখনো এমন করেনা। ঘন্টায় ঘন্টায় আমাকে ফোন করে। অথচ আজ….. তুই একটু ওর বাসায় যেয়ে দেখে আয় না ও কোথায় আছে? ফোনটা কেনো সুইচ অফ? মেয়েটারজন্য চিন্তা হচ্ছে খুব। তানভীরের কথা শুনে ফাহিমের জ্ঞান হারাবার উপক্রম হচ্ছে কি শুনছে সে এসব? তানভীর চিন্তা করছে সুহায়লার জন্য? এটা কেমন করে সম্ভব?
-” তুই তানভীর তো? নাকি অন্য কেউ?”
-” দেখ ফাহিম, আমি কিন্তু টেনশনে আছি। এমন মজা করার কোনো মানেই হয়না।”
-” তুই চিন্তা করছিস সুহায়লার জন্য? এখন কি এই কথা আমাকে বিশ্বাস করগে হবে?”
-” কেনো করবি না? ও আমার ওয়াইফ। ওর জন্য চিন্তা হওয়াটাই স্বাভাবিক।”
-” ওয়াইফ? তুই সুস্থ আছিস তো?”
-” ফাহিম তুই কিন্তু অতিরিক্ত করছিস। তুই কি যাবি নাকি যাবি না সেটা বল।”
-” আমি এখনও লাঞ্চ করিনি। তিনটা বেজে গেছে। লাঞ্চ করে এরপর যাবো।”
-” একদিন একটু লেটে লাঞ্চ করলে কিছু হবে না। লাঞ্চ পরে করিস। আগে তুই সুহায়লার বাসায় যা।”
-” আমার ক্ষুদা লেগেছে খুব।”
-” তুই কি বুঝতে পারছিস না আমি টেনশনে আছি? এমন করছিস কেনো আমার সাথে?”
-” আচ্ছা যাচ্ছি। তবু তুই চেঁচামেচি করিস না।”
ফোনটা কেটেই ফাহিম রওয়ানা হলো সুহায়লাদের বাসায়। সেখানে পৌঁছানোর পর তানভীর তিনবার ফোন করেছে ফাহিমকে। কিন্তু ফাহিম একটাও রিসিভ করেনি। দুই ঘন্টা পর সেখান থেকে ফিরে এসে তানভীরকে ফোন দিলো ফাহিম।
-কতবার ফোন দিলাম। ফোন রিসিভ করিসনি কেনো? সুহায়লা কোথায়? ওকে ফোন দে।”
-” তানভীর তোকে কিছু কথা বলবো। একটু মন দিয়ে শোন।”
-” সেসব পরে শুনবো। আগে তুই ফোনটা সুহায়লাকে দে । ওর সাথে কথা বলবো আমি।”
-” সুহায়লা নেই আমার সাথে। আমি সেখান থেকে চলে এসেছি।”
-” ওকে বলিসনি ফোন ওপেন করতে?”
-” তানভীর তুই আগে আমার কথা তো শোন?”
-” কি?”
-” সুহায়লাদের বাসায় যেয়ে দেখি ও বেঘোর ঘুম ঘুমাচ্ছে। দুই তিনবার ডাকলাম। কোনো সাড়া শব্দ নেই। পরে ওর মায়ের কাছ থেকে শুনলাম ও নাকি স্লিপিং পিল খেয়েছে।”
-” স্লিপিং পিল? কেনো? কন্ডিশন কি খুব খারাপ? ওকে হসপিটাল না নিয়ে ঘরে বসে আছে কেনো?”
-” আরে হসপিটাল নিবে কেনো? ও কি একগাদা খেয়েছে নাকি? একটা লো পাওয়ারের ট্যাবলেট খেয়েছে ঘুমানোর জন্য।”
-” ওহ্। ওর মা কে বলে আসিস নি যে ও ঘুম থেকে উঠেই যেনো আমাকে ফোন করে?”
-” তানভীর, তোর বউ তোর সাথে আর যোগাযোগ রাখতে চাচ্ছেনা ও তোর ঘর ছেড়ে একেবারে বাবার বাড়ি চলে এসেছে। সাদমানের বিয়ের পর ডিভোর্স দিবে তোকে সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
ফাহিমের কথাগুলো শুনে মনে হচ্ছে তার মাথায় কেউ হাতুরিপেটা করছে। পাগলের মতো কিসব বলে যাচ্ছে ফাহিম?
-” বুঝে শুনে বলছিস তো ফাহিম?”
-” হুম। যা বলছি ঠিকই বলছি।”
-” এভাবে তো আমাকে ও ছেড়ে ও চলে যেতে পারে না। ওর সাথে আমার বিগত দুমাসে কোনো দ্বন্দই হয়নি। আমি ওর সাথে কোনো ধরনের মিসবিহেভ করিনি। তাহলে কেনো ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে?”
-” নতুন করে আর কি মিসবিহেভ করবি তুই? এই দেড়বছরে কম তো আর করিস নি। মেয়েটার লাইফপুরোপুরি হেল বানিয়ে ছেড়ে ছিলি তুই। আর রাহাতের সাথে যে ঘটনা হয়েছে সেদিন রাতে তুই ওকে কি বলেছিস তা তুই নিজে ঠান্ডা মাথায় একবার ভেবে দেখ তো কতটা জঘন্য ছিলো।’
-” সেসব তুই জানিস কিভাবে?”
-” নিশাত বলেছে।”
-” সুহায়লা কি সত্যিই চলে গেছে নাকি তুই অহেতুক মজা নেয়ার জন্য আমাকে টেনশন দিচ্ছিস?”
-” পাগল নাকি তুই? এমন সিরিয়াস ম্যাটার নিয়ে কেউ মজা করে?”
ফোনটা কেটে দিলো তানভীর। তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না সুহায়লা চলে গেছে। যে মেয়ে এত কষ্টের সময় ওকে ছেড়ে দেয়নি সেখানে এখন কেনো ওকে ছেড়ে দিবে। তানভীর তো বিগত দুমাসে একটু মিসবিহেভ ও করেনি। তাছাড়া আগের কথা যদি ও মনে ধরেই রাখতো তাহলে কি এতদিন ওর সেবা করতো? সত্যিটা জানার জন্য নয়ন কে ফোন করলো।
-” হ্যালো”
-” নয়ন, সুহায়লা নাকি একেবারে চলে গেছে?”
-” হ ভাই। ভাবী তো এক্কেরে গেছে গিয়া। ভাবীর যত্ত জিনিস ছিলো সব নিয়া গেছে। কইছে উনার ভাইয়ের বিয়াত পর আপনেরে তালাক্বদিবো। আর আপনের লাইগা একটা চিঠি রাইখা গেছে। কইসে আপনে আইলে আপনেরে দিতে।”
ফোনটা কেটে দিয়েছে তানভীর।মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে ওর। এতক্ষনে তার হুঁশ হচ্ছে কেনো সুহায়লা গতকাল ওকে সেসব বলছিলো। ইচ্ছে হচ্ছে সুহায়লাকে ধরে ইচ্ছেমতো ধোলাই দিতে। এটা কি করলো ও? যাওয়ার আগে একটাবার ওকে বলে গেলে তো পারতো। ভুলটা ওরই হয়েছে। সুহায়লা ওর মনে কতটুক জায়গা করে নিয়েছে সেটা ওকে বলে দেয়া উচিত ছিলো। গত দেড় বছরের সমস্ত খারাপ ব্যবহারের জন্য ও অনুতপ্ত সেটা ওকে বলা উচিত ছিলো। সুহায়লা যখন ওকে বলছিলো কোন জিনিসটা কোথায় আছে তখনই কেনো ও বুঝলো না এই মেয়েটা চলে যাবে ওকে ফেলে? এখনই যেতে হবে ওকে সুহায়লার কাছে। ওকে যেয়ে নিয়ে আসতে হবে। অনেক দূরে সরিয়ে রেখেছে মেয়েটাকে। আর না। ম্যানেজার কে ডেকে এনে বললো,
-” নেক্সট ফ্লাইট কখন খবর নাও। যেভাবে পারো টিকিট ম্যানেজ করো। ”
-” কেনো স্যার?”
-” আমি ঢাকা যাবো।”
-” আপনি এখনই চলে গেলে কিভাবে হবে। কাল, পরশু আরো দুইটা মিটিং আছে।”
-” আমার বদলে সেগুলো তুমি হ্যান্ডেল করবে।”
-” আপনাকে ছাড়া আমি কিভাবে…..”
-” তোমাকে মান্থলি সেভেনটি থাউসেন্ড পে করা হয়। তোমার গাড়ির খরচ, মোবাইল বিল সব কোম্পানি থেকে দেয়া হয়। সব মিলিয়ে তোমার পিছনে আমার এক লাখ টাকা খরচ প্রতি মাসে হয়। এমনি এমনি তোমাকে এই সেলারি দেই না। যদি সামান্য দুটা মিটিং সামাল না দিতে পারো তাহলে জব ছেড়ে দাও।”
-” জ্বি স্যার, আমি পারবো”
-” এখন যাও আমার টিকিট ব্যবস্থা করো।”
রাত সাড়ে আটটার ফ্লাইটের টিকিট বুক করা হয়েছে তানভীরের জন্য। সাড়ে নয়টায় ঢাকা এয়ারপোর্টে পৌঁছেছে সে। গাড়িতে উঠে তার মনে হলো একটাবার সুহায়লার চিঠিটাআগে পড়া উচিত। ড্রাইভার কে বললো গাড়ি বনশ্রীতে নিয়ে যেতে।
কিছুক্ষন আগে ঘুম থেকে উঠেছে সুহায়লা। সেই সকালের ঘুম এতক্ষনে ভেঙেছে ওর। ঘুমের নেশা এখনো ঠিকমতো কাটেনি। বাবার ডাকে উঠে এসেছে রাতের খাবার খেতে। খাবার টেবিলে বসে সাদমান জিজ্ঞেস করলো,
-” কি রে কি ঘুম দিলি কিছুই বুঝলাম না। আম্মা বললো সেই সকালে ঘুমিয়েছেস।”
-” হুম। অনেকদিন ঠিকমতো ঘুমাইনা। তাই ঘুমালাম এতক্ষন।”
-” জামাই কি তোকে নিতে আসবে?( বাবা)
-” না আমি থাকবো এখানে। এইবার আমি পুরো দুমাস থাকবো”
বাবা আর সাদমান বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সুহায়লার দিকে।
-” তুই থাকবি দুইমাস?”
-” হুম। কেনো?”
-” বিয়ের পর একরাতও তুই আমাদের বাড়িতে থাকিসনি। সকালে আসতি আবার সন্ধ্যায়চলে যেতি। আর এইবার তুই দুইমাস থাকবি?”
-” তোর কি তানভীর ভাইয়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে?”
-” আরে নাহ্। ঝগড়া হবে কেনো? তোর বিয়ে সামনে। নিজ হাতে সব শপিং করবো। তাছাড়া এই দেড় বছর তো থাকিনি তাই এবার থাকবো অনেকদিন। ”
-” সত্যি তো?”
-” সাদি তুই এমন জেরা করছিস কেনো? আমি যে এখানে থাকবো সেটা কি তোর পছন্দ হচ্ছে না?”
-” আরে তুই রেগে যাচ্ছিস কেনো? তুই তো কখনো থাকিস না এখানে।”
-” না না তাই বললাম। কতদিন তোকে বলেছি রাতে থেকে যা। সারারাত গল্প করবো। তুই তো কখনো শুনিস নি। বিয়ের পর তো আবার ভুলেই গেছিস। আর তুই দুই মাস কেনো? চারমাস থেকে যা। আমার বোন আমার সাথে থাকবে আমি খুশি হবো না?
-” সুহা, চল না আজ তুই আমি আর সাদি মিলে সারারাত গল্প করি।”
-” না আমার এখনো ঘুম কমপ্লিট হয়নি। আমি আরো ঘুমাবো। কাল গল্প করিস।”
-” হুম কাল আমার অফিস আছে। আজ ঘুমাতে হবে। পরশু অফিস ছুটি। কাল গল্প করবো। ”
-” আচ্ছা তাহলে ইমরানকে কাল চলে আসতে বলবো। সবাই একসাথে গল্প করবো।”
-” সুহা, তানভীর ভাইকেও কাল চলে আসতে বল।”
-” ও ঢাকা নেই। চিটাগাং গেছে।”
-” ওহ। কতদিন থাকবে?”
-” তিনদিন।”
-” তাহলে তিনদিন পর এখানে আসতে বলিস। উনি তো সচরাচর এ বাড়িতে আসে না। দেড়বছরে মাত্র একরাত ছিলো এখানে। কাপড় চোপড় নিয়ে আসতে বলবি। দুদিন থেকে যাবে।”
-” ও থাকবে না, আসবেও না।”
-” কেনো?”
-” কেনো আবার? দেখিস না কেমন কাজ পাগল। কাজ ছাড়া কিছু বুঝে নাকি ও?”
-” আচ্ছা তাহলে আমি ফোন করবো।”
-” না, তোকে ফোন করতে হবে না। আমিই বলবো ওকে আসতে।”
খাওয়া শেষে বিছানায় শুয়ে ভাবছে সুহায়লা। সাদমানের সাথে তানভীরের কথা হওয়ার আগে সুহায়লাকে কথা বলতে হবে। ওকে বলতে হবে সাদমানের ফোন যেনো ও আপাতত রিসিভ নাকরে। আর যদি করেও তাহলে যেনো সুহায়লার চলে আসার ব্যাপারে কিছু না বলে। কাল সকালেই তানভীরকে ফোন করবে সে।
চলবে..