বন্ধ দরজা পর্ব ২২

#বন্ধ_দরজা
পর্ব-২২
লেখা-মিম
পরদিন সকালে ভার্সিটি গিয়েছে সুহায়লা। সকালে নাস্তা সেড়ে দুজন একসাথেই বেড়িয়েছিলো। তানভীর চলে গেছে অফিসে আর সুহায়লা গেছে ভার্সিটিতে। দুপুর দুইটার দিকে মিটিংয়ে ছিলো তানভীর। একটা আননোন নম্বর থেকে ফোন আসছে। মিটিংটা ইমপরটেন্ট ছিলো তাই সে ফোন সাইলেন্ট করে রেখে দিয়েছে। পরপর ফোনে চারবার কল আসলো। ফোন রিসিভ করলো না সে। সেই নম্বর থেকে টেক্সট আসলো। কিন্তু সেটা নজরে পড়েনি তানভীরের। আধাঘন্টা পর মিটিং শেষে ফোন হাতে নিলো সেই নম্বরে কল ব্যাক করবে বলে। ফোন হাতে নিতেই চোখে পড়লো মেসেজ এসেছে। মেসেজটা ওপেন করলো তানভীর। লিখা আছে
-” ভাইয়া আমি সাদমান। ফোনটা রিসিভ করেন জলদি।”
মেসেজটা পড়ে সঙ্গেসঙ্গেই কল ব্যাক করলো তানভীর।
-” সরি সাদি। আমি মিটিংয়ে ছিলাম।”
-” ভাইয়া, সুহা তো এক্সিডেন্ট করেছে।”
সুহা এক্সিডেন্ট করেছে শুনেই তানভীরের আত্মার পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। গতকালই তো মেয়েটা বলেছে মরে যাওয়ার জন্য দোয়া করছে। দোয়া কি তাহলে কবুল হয়ে গেলো? সে তো ভুলও শুনতে পারে। সিউর হওয়ার জন্য আবার জিজ্ঞেস করলো
-” কি বলেছো?”
– ” সুহা এগারোটার দিকে এক্সিডেন্ট করেছে।”
-” কোন হসপিটালে আছে?”
-” হসপিটাল থেকে বাসায় নিয়ে এসেছি মাত্র।”
-” কোন বাসা?”
-” আপনার বাসায়।”
-” আসছি আমি।”
তানভীর দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে অফিস থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠলো। রাস্তা মোটামোটি ফাঁকা ছিলো। তাই আসতে খুব বেশি দেরি হয়নি। ঘরে ঢুকেই ড্রইং রুমে দেখলো সাবা ফোনে কাঁদছে আর কথা বলছে। সাবাকে কাঁদতে দেখে তানভীরের কলিজায় ধুক করে উঠলো। মেয়েটারকি অবস্থা খুব বেশি খারাপ?
-” সাবা,তোমার বোন কোথায়?”
-” উপরে।”
দৌঁড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এসেছে তানভীর। রুমে ঢুকে দেখে সুহায়লা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে। মাথায় ব্যান্ডেজ, ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলে প্লাস্টার করা। পায়ের পাতার উপর ছিলে গেছে। সেখানে মলম লাগানো। সুহায়লার পাশে বসে আছে সাদমান। সুহায়লার পাশে দাঁড়িয়ে ওর মাথায় হাত রাখলো তানভীর। সাদমানকে জিজ্ঞেস করলো,
-” সাড়ে এগারোটায় এক্সিডেন্ট হয়েছে আর তুমি আমাকে এতক্ষনে ফোন করলে?”
-” আমাকেই তো ফোন করেছে একটার দিকে। শুনেই হাসপাতালে ছুটেছি। ওকে দেখে মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছিলো। কাকে ফোন করবো কি করবো না মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো। পরে মনে হলো আপনাকে ফোন করতে হবে।”
-” তুমি আমাকে কেনো ফোন করলে সুহায়লা?”
সুহায়লা কোনো উত্তর দিচ্ছে না। চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে। তানভীরের কেনো যেনো মনে হচ্ছে সুহায়লা ইচ্ছা করে এক্সিডেন্ট করেছে। কারন এই মেয়ে মরার ধান্দায় আছে।
-” এক্সিডেন্ট হলো কিভাবে তোমার? তুমি না কলেজ ছিলে? সাড়ে এগারোটায় তো কলেজ ছুটি হওয়ার কথা না। তুমি কলেজ থেকে বের হয়েছো কেনো?”
-” আশ্চর্য! এতো জেরা করছো কেনো? আমি কি সেধে সেধে এক্সিডেন্ট করেছি নাকি?”
– ” আমার তো মনে হচ্ছে সেধে সেধেই করেছো। কথা না ঘুরিয়ে যেটা জিেস করেছি সেটার উত্তর দাও।সাড়ে এগারোটায় কলেজের বাহিরে কেনো গিয়েছো?”
-” তেমন ইমপরটেন্ট ক্লাস ছিলো না। তাই বের হয়ে নিউ মার্কেটের দিকে যাচ্ছিলাম।”
-” ইমপরটেন্ট ক্লাস ছিলো না তাহলে ভার্সিটিতে গিয়েছো কেনো?”
-” তোমার এসব জেরা কিন্তু আমার অসহ্যলাগছে।”
-” তুই ক্ষেপে যাচ্ছিস কেনো? উনি তো তোকে খারাপ কিছু জিজ্ঞেস করে নি।”
-” এত জেরা আমার মোটেই পছন্দ না সাদি।”
-” জেরা করলো কোথায়? উনি তো……”
-” সাদি থামো । হ্যাঁ আমি তোমাকে জেরাই করছি। উত্তর দাও।”
তানভীরের মুখ দেখে সুহায়লা দিব্যি টের পাচ্ছে তানভীর ক্ষেপে যাচ্ছে। আর উল্টাপাল্টা উত্তর না দিয়ে ঠিকঠাকভাবে উত্তর দিতে লাগলো।
-” আমার এ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার ডেট ছিলো আজ। তাই গিয়েছিলাম।”
-” হুম তারপর?”
-” কলেজ থেকে বের হয়ে মার্কেটে যাচ্ছিলাম। ফোনে কথা বলতে বলতে রোড ক্রস করতে যাচ্ছিলাম। তখনই উল্টা দিক থেকেএকটা গাড়ি ধাক্কা দিয়ে দিলো।”
সুহায়লার উপর তুমুল মেজাজ খারাপ হচ্ছে তানভীরের ও এখন পুরোপুরি সিউর হয়ে গেছে কাজটা সুহায়লা ইচ্ছা করেই করেছে। নয়নকে চিৎকার করে ডাকছে সে। কিছুক্ষন বাদে নয়ন এলো রুমে।
-” ভাই ডাকছেন?”
-” মসলা যে পিষে সেটাকে কি বে?”
-” ব্লেন্ডার।”
-” না আরেকটা যে আছে পাথরের। নামটা কি ভুলে গেছি।”
-” শিল- পাটা?”
-” হুম শিল পাটা। আছে না ঘরে?”
-” হ আছে তো।”
-” শিলটা নিয়ে আসো।”
-কিকরবেন ভাই?”
-” আনতে বলেছি আনো। এত কথা বলছো কেনো?”
তানভীরের ধমক খেয়ে দৌড়ে নিচে চলে গেলো নয়ন। ওরা তিন ভাইবোনই তানভীরের মাথায় কি চলছে সেটা বুঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষন বাদে শিল নিয়ে এলো নয়ন। শিলটা এক হাতে নিলো অন্য হাতে সুহায়লার মোবাইল। ফোনটা ফ্লোরে রেখে শিল দিয়ে ছেঁচে ফোনটা গুঁড়া করছে তানভীর আর বলছে,
-” নিজেকে খুব ট্যালেন্ট ভাবো তাই না? তোমার কাহিনী আমি ধরতে পারবো না ভেবেছো? ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হও তাই না? ছুটাচ্ছি তোমার ফোনে কথা বলা। আজকের পর থেকে ফোন ইউজ করা বন্ধ। শুধুমাত্র বাসার ল্যান্ডফোন ইউজ করবা তুমি। কলেজ যাওয়াও বন্ধ। শুধুমাত্র এক্সাম টাইমে যাবা। এ্যাসাইনমেন্ট হাবিজাবি যা জমা দিতে হবে সেটা আমি ব্যবস্থা করবো। আর তুমি যে আশায় বসে আছো না সেটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। এর পরিনতি কিন্তু ভয়াবহ হবে।”
তানভীর কথা আর কান্ড দুটোই ওরা তিনজন হা করে দেখছে। তাদের ধারনার বাইরে ছিলো তানভীর ফোনটাকে এভাবে গুঁড়া করবে। সাদমানের মনে প্রশ্ন জেগেছে কি আশার কথা বলছে উনি? কি চালাকি করেছে সুহায়লা? তানভীরকে কি জিজ্ঞেস করবে? এই মূহূর্তে জিজ্ঞেস করা কি ঠিক হবে? শেষমেষ প্রচন্ড কৌতুহলের চাপাচাপিতে জিজ্ঞেস করেই ফেললো,
-” কি হয়েছে ভাইয়া? কিসের আশা, চালাকির কথা বলছেন?”
তানভীর কোনো উত্তর দিচ্ছে না। সুহায়লার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। সাদমান কতক্ষন চুপ থেকে আবার জিজ্ঞেস করলো
-” আপনাদের ঝগড়া কি এখনও শেষ হয়নি?”
-” না না। কি বলিস? ঝগড়া তো কখনই শেষ। আমাকে এই অবস্থায় দেখছে তো তাই তানভীর এমন করছে।”
-” বিলিভ মি সুহায়লা, ফের যদি কখনো দেখি তুমি এ ধরনের কাজ আবার করেছো…… আশা করি বাকিটুক আমাকে বলতে হবে না।”
সাদমান ঠিকই বুঝতে পারছে সুহায়লা যতই অস্বীকার করুককিছু একটা চলছে দুজনেরমধ্যে। আর নয়তো তানভীর এসব কথা বলবে কেনো? মনের মধ্যে খোঁচাখুঁচি চলছে সাদমানের। কিন্তু এ মূহূর্তে আর প্রশ্ন না করাটাই শ্রেয় ভাবছে সে। হঠাৎ তার খেয়াল হলো অফিস থেকে না বলেই বেরিয়ে এসেছে সে। অফিস যেতে হবে তাকে। কাজ ফেলে এসেছে।
-” আচ্ছা, আমি এখন আসি। অফিস যেতে হবে। আর সাবাকে রেখে যাচ্ছি। ও কিছুদিন এখানে থাকুক। আর ভাইয়া, আমি আব্বা আম্মাকে সুহার কথা কিছু জানাইনি। জানালে উনারা টেনশন করতে করতে উল্টো অসুস্থহয়ে পড়বে। আপনি প্লিজ উনাদের কিছু জানাবেন না।”
-” ঠিকাছে বলবো না। তুমি খাওয়া দাওয়া করে যাও।”
-” না। অন্য আরেকদিন করবো। আজ আসি।”
-” তর্ক করবা না তো সাদি। এমনিতেই মেজাজ বিগড়ে আছে নতুন আমার মেজাজ আর গরম করতে আসবে না। এই সাবা, নিচে যাও। সাদমানকে নিয়ে খেতে বসো। আর নয়নকে যেয়ে বোলো সুহায়লার জন্য উপরে খাবার নিয়ে আসতে। আমি খাইয়ে দিবো।”
-” ঠিকাছে দুলাভাই।”
-” আমি তোমার হাতে খাবো না। সাবা আমাকে খাইয়ে দিবে।”
-” কেনো? আমার হাতে খেলে কি তোমার মুখে ফোস্কা পড়বে? সাবা খাওয়াতে পারে আর আমি পারি না তাইনা? ”
-” আমি খাবো না।”
-” বেশি বাড়াবাড়ি করলে মেরে এমন হাল করবো যাতে নড়াচড়া না করতে পারো। সারাজিবন প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পড়ে থাকবে। নড়তেও পারবে না, মুখে এত খই ফুটবেও না।”
-” সুহা, দুলাভাই তোকে খাওয়াতে চাচ্ছে খেয়ে নে। এত নাটক কেনো করছিস?”
-” ঠিকই তো সেই কখন থকে দেখছি তুই তানভীর ভাইয়ের সাথে রাগ দেখাচ্ছিস। তুই এক্সিডেন্ট করেছিস সেটাও উনাকে বলতে না করেছিলি। সমস্যাটা কি? এমন করছিস কেনো?”
-” তোমার বোনকে ভালোবাসি তো তাই এমন করে আমার সাথে। আমাকে কষ্ট দিতে মজা পায় ও। আমার মনের কথাগুলো একটুও বুঝতে চেষ্টা করে না।”
সাদমানের মনে অনেক অনেক প্রশ্ন জাগছে সেটা সাবা তার ভাইয়ের মুখ দেখেই বুঝতে পারছে। কথার প্রসঙ্গ পাল্টে সে তানভীরকে বললো
-” দুলাভাই আপনি ড্রেস চেইন্জ করে ফ্রেশ হয়ে আসেন। আমি নয়ন আপাকে দিয়ে খাবার পাঠাচ্ছি। সাদি, নিচে চল। খেয়ে এরপর অফিসে যাস।
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here