#বর্ষণের সেই রাতে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব: ২৫
.
অনিমার ফেস রিয়াকশন দেখে আদ্রিয়ানের খুব হাসি পাচ্ছে। মেয়েটা ওর মজাও বোঝেনা। হাসিটা চেপে রেখে অনিমাকে বলল,
— ” কী হলো বলো? ভালো হবেনা?”
অনিমা বিরক্ত হয়ে বলল,
— ” মাথা খারাপ হয়ে গেছে আপনার। লিভ ইন রিলেশনসিপ এর মানে বোঝেন?”
অাদ্রিয়ান অনিমার আরেকটু কাছে গিয়ে বলল,
— ” না বোঝার কী আছে? দুজন পরস্পর বিপরীত লিঙ্গের মানুষ যদি বিয়ে না করেই স্বামী স্ত্রীর মতো লাইফ লিড করে তাহলেই তাকে লিভ ইন রিলেশনশিপ বলে, রাইট? তুমি যখন বিয়ে করবেই না তখন এটাই বেটার অপশন না?”
অনিমা বিরক্ত হয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল,
— ” লোকে ঠিকি বলে সেলিব্রেটিদের ক্যারেক্টার এরোকমি হয়। সবগুলো অসভ্য।”
আদ্রিয়ান অনিমার একদম কাছে গিয়ে বলল,
— ” আমি কতোটা অসভ্য সেটা সময় এলে বুঝিয়ে দেবো। আপাদত কথাটা তুলে রাখলাম।”
অনিমার পেছানোর আর নূন্যতম জায়গাও নেই। তাই একটু ইতস্তত করে বলল
— ” একটু দূরে সরে বসুন প্লিজ।”
আদ্রিয়ান বুঝতে পেরেও অনিমাকে জ্বালাতে বলল,
— ” কেনো?”
— ” আমার আনইজি লাগছে।”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে সরে এলো অনিমার কাছ থেকে, তারপর ফোন স্ক্রল করতে লাগল। অনিমা মুখের ওপরে পরা চুলগুলো কানে গুজে একটু সংকোচ নিয়ে বলল
— ” ইয়ে.. এভাবে হাফ এডাম হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেনো?”
আদ্রিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
— ” আমার ইচ্ছে।”
অনিমা বিরক্ত হয়ে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো। কিছু একটা মনে হতেই ও চমকে গিয়ে বলল
— “আচ্ছা এটা আপনার এপার্টমেন্ট?”
আদ্রিয়ান ফোন টিপতে টিপতেই বলল
— ” নাহ। এটার মালিক আমাকে ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছে। ”
অনিমা একটা মুখ ভেংচি দিলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল
— ” আমার স্কুটি কোথায়?”
— ” বিক্রি করে দিয়েছি। আসলে পকেটে টাকা নেই। ওটা বেচে যা পেয়েছি সেটা দিয়ে মাস খানেক চলে যাবে।”
অনিমা এবার খুব বিরক্ত হয়ে বলল
— ” আপনি কী সোজাভাবে কথা বলতে পারেন না?”
আদ্রিয়ান এবার মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে বলল
— ” আমার কী দোষ? তুমি প্রশ্নগুলোই এমন করো। এবার এসব আউলফাউল প্রশ্ন করা বন্ধ করে এক্সাক্টলি কী জানতে চাইছো বলো?”
অনিমা এবার মাথা নিচু করে হাত কচলাতে কচলাতে বলল,
— ” আচ্ছা কাল রাতে আপনি কোথায় ঘুমিয়েছেন?”
আদ্রিয়ান এবার ফোনটা রেখে হেসে বলল,
— ” ওহ তাহলে এটাই ম্যাডামের মূল প্রশ্ন?
অনিমা মাথা নিচু করে আছে আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,
— ” আমি আমার বেড ছাড়া কোথায় ঘুমোবো?”
অনিমা একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,
— ” মানে আপনি আমার পাশে শুয়েছেন?”
আদ্রিয়ান ভ্রু কিঞ্চিত উচু করে মুচকি হেসে অনিমার দিকে তাকালো, অর্থাৎ হ্যাঁ তো? অনিমা চুপ করে আছে আসলে কী বলবে বুঝতে পারছেনা। অনিমার চেহারা দেখে আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,
— ” আরে আমি সোফাতেই ঘুমিয়েছি, সো চিল।”
এটা শুনে অনিমা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে আবার ফোনে মনোযোগ দিল। দুজনেই বেশ অনেকক্ষণ চুপ ছিলো। হঠাৎ করেই ওর রিকের কথা মনে পরলো। রিক তো বলেছিলো আজ ওকে নিয়ে যেতে আসবে। এরপর যদি এসে ওকে না পায়, আর যদি এটা জানতে পারে যে ও আদ্রিয়ানের কাছে আছে তাহলে? তাহলে তো ওরা আদ্রিয়ানকে মেরে ফেলবে। আর এসব জেনেও অনিমা এভাবে বসে আদ্রিয়ানের সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলছে? আদ্রিয়ান জানেনা অনিমা আদ্রিয়ানের জন্যে কতো বড় বিপদ, কিন্তু অনিমা তো জানে। তাহলে ও কীকরে এই ভূলটা করছে? না আদ্রিয়ানকে বাঁচাতে ও সেচ্ছায় ঐ নরকে ফিরে যেতেও রাজী আছে। ওর যতোই কষ্ট হোক আদ্রিয়ান তো ভালো থাকবে।অনিমা উঠে দাঁড়িয়ে বলল
— ” আমি আমার ফ্লাটে যাবো। ”
আদ্রিয়ান ফোনে চোখ রেখেই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল
— ” যতোদিন না তুমি আমাকে সবটা ক্লিয়ার করে বলছো আমি তোমাকে কোথাও যেতে দিচ্ছিনা। সবটা জেনে তারপর ঠিক করব যে যেতে দেবো নাকি নিজের কাছে আটকে রাখব।”
অনিমা একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করল। আদ্রিয়ানের ভালোর জন্যেই এখন ওকে আদ্রিয়ানের সাথে রুড হতেই হবে। অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে রেগে তাকিয়ে চেচিয়ে বলল
— ” কী পেয়েছেন কী আপনি হ্যাঁ? যা ইচ্ছে হবে তাই করবেন? কোন অধিকারে এতোটা জোর খাটাচ্ছেন আমার ওপর? কে হন আপনি আমার যে আপনাকে সবটা বলতে হবে? আমার যা ইচ্ছে হবে আমি করব, যেখানে ইচ্ছে হবে সেখানে যাবো। এসব নিয়ে কথা বলার আ..”
এটুকু বলে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আতকে উঠল অনিমা। আদ্রিয়ানের চোখ লালচে হয়ে গেছে, হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে, হাতের রগগুলো ফুলে উঠেছে। অনিমা বেশ ভয় পেয়ে গেলেও সেই ভয়কে পাত্তা না দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল
— ” সো আমার বিষয়ে নাক গলানোটা বন্ধ করুন। আর নেক্সট টাইম আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করবেননা, আপনার কোনো অধিকার নেই এসব করার।”
এটুকু বলে অনিমা চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান একটানে ওকে নিজের কাছে নিয়ে এলো। এরপর দাঁতে দাঁতে চেপে বলল
— ” তাহলে কার অধিকার আছে ওই রিক চৌধুরীর?”
অনিমা চমকে গেলো আদ্রিয়ানের কথায়। কালকে তো শুধু অাদ্রিয়ান রিকের গলার আওয়াজ শুনেছে, অদ্ভূতভাবে কোনো প্রশ্নও করেনি ওকে। কিন্তু নাম কীকরে জানলো? অনিমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদ্রিয়ান বলল
— ” কী ভাবছো? আমি কীকরে জানলাম তাইতো?
অনিমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অাদ্রিয়ানের দিকে, আদ্রিয়ান অনিমাকে আরেকটু নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলল
— “আমার নজর থেকে কিচ্ছু এড়ায় না। সেদিন রাতে ও এসছিলো না তোমার ফ্লাটে?”
অনিমা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান শক্ত কন্ঠে বলল
— ” কী সম্পর্ক ওর সাথে তোমার? ওসব কথা কেনো বলছিলো তোমাকে?”
অনিমা কিছু না বলে ছলছলে চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান ধমকি দিয়ে বলল
— ” বলো? কেনো আসে ও তোমার কাছে?”
অনিমা নিজেকে সামলে আদ্রিয়ানের চোখে চোখ রেখে চড়া গলায় বলল
— ” বললাম না এসব আমার পার্সোনাল ব্যাপার। আপনাকে বলতে বাদ্ধ নই আমি। আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্কই সম্ভব নয়। আমাদের দুজনের লাইফস্টাইল, স্টেটাস সব আলাদা। সো স্টে এওয়ে ফ্রম মি এন্ড লেট মি গো প্লিজ।”
অনিমার কথায় আদ্রিয়ানের রাগ আরো বেড়ে গেলো অনিমার দুই বাহু চেপে ধরে বলল
— ” তাহলে প্রথমেই কেনো দূরে সরিয়ে দেওনি? কেনো এসছিলে এতো কাছে? কেনো বন্ধুত্ব করছিলে আমার সাথে? তখন এসব মনে ছিলোনা?”
অনিমা নিজের চোখের জল আটকানোর চেষ্টা করে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল
— ” না ছিলোনা, কিছু সময়ের জন্যে আবেগে ভেসে গেছিলাম, বাস্তবতা বুঝতে পারিনি।”
আদ্রিয়ান রাগে আগুন হয়ে বলল
— ” ও তা এখন তোমাকে বাস্তবতা কে বোঝালো? রিক চোধুরী?”
অনিমা আদ্রিয়ানকে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে বলল
— ” হ্যাঁ ওনিই বুঝিয়েছেন। আমার আসল জায়গা কী সেটা উনিই দেখিয়ে দিয়েছেন আমাকে।”
এটুকু বলে অনিমা চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান অনিমার হাত ধরে একটানে বেডে ফেলে দিলো। অনিমা আবাক হয়ে তাকাতেই আদ্রিয়ান অনিমার কাছে এসে ওর গালে হাত রেখে বলল
— ” এবার আমি তোমাকে তোমার আসল জায়গা দেখাবো।”
এটুকু বলে উঠে গিয়ে ড্রয়ার থেকে দড়ি বের করে নিয়ে এলো আদ্রিয়ান। অনিমা আদ্রিয়ানের চোখ মুখ দেখেই ভয়ে একটু পিছিয়ে গেলো। অাদ্রিয়ান অনিমার কাছে যেতেই অনিমা বলল
— ” আদ্রিয়ান আপ..”
আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান অনিমার হাত পা বেধে দিলো। অনিমা রেগে গিয়ে বলল
— ” কেনো করছেন এরকম? কী চান আপনি?”
আদ্রিয়ান কঠিন গলায় বলল
— ” তোমাকে উত্তর দিতে বাধ্য নই আমি। তোমার যেটা ইচ্ছে হয়েছে করেছো, এবার আমার যেটা ইচ্ছে হবে সেটাই করব।”
অনিমা এবার আর কান্নাটা আটকে রাখতে পারলোনা। অনিমা কেঁদে দিয়ে বলল
— ” প্লিজ আমার কথাটা শুনুন।”
আদ্রিয়ান অনিমার আর কোনো কথা না শুনে রুমাল দিয়ে ওর মুখও বেধে দিলো। অনিমা করুণ চোখে তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ানের ও খারাপ লাগছে অনিমাকে এভাবে দেখে কিন্তু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রুম লক করে হনহনিয়ে চলে গেলো ওখান থেকে। কী ভাবছে কী মেয়েটা? ও মুখে যা বলে সেটাই মেনে নেবে? আদ্রিয়ান তো অনিমার চোখ দেখেই ওর মনের কথা পরতে পারে। ও জানে অনিমা যা বলছে সব বাধ্য হয়ে বলছে। সবার ভালোর জন্যে আনিমা নিজে ঐ বিপদে নিজেকে জরাতে চাইলেও, আদ্রিয়ান অনিমাকে ওই বিপদে ছেড়ে দিতে পারবেনা। এতে যদি ওকে নিজের কাছে অাটকে রাখতে হয় তো ও সেটাই করবে। আর অনিমা ওভাবেই খাটে বসে চোখেল জল ফেলে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান তো কিছুতেই বুঝতে চাইছেনা, কী করে আদ্রিয়ানকে বাঁচাবে ও? কীকরে?
________________
রিকের নিজের রুমে এসে সবকিছু ভাঙচূড় করে চলেছে। রাগে সব কিছু ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে ওর। কালরাত থেকেই অনিমার ফোন বন্ধ পেয়ে এমনিতেই মাথা গরম ছিলো। তাই সকালেই চলে গেছিলো অনিমার ফ্লাটে ওখানে গিয়ে অনিমার ফ্লাটে তালা দেখে ওর রাগ আরো বেড়ে গেলো। শুক্রবার নিশ্চয়ই অফিসে যায় নি তাহলে? এরপর সারাদিন অনিমাকে সারা শহরে লোক লাগিয়ে খুজেছে কিন্তু কোনো খোজ পায় নি। মোবাইল ট্রেস করেও কোনো হদিস পায় নি। একটা লোক এসে ভয়ে ভয়ে বলল
— ” ভাই আসবো?”
রিক রাগে গজগজ করে বলল
— ” কাজের কথা বল।”
— ” ভাই এডিকে আজ সারাদিন কোথাও দেখা যায় নি।”
রিক হাতের ইশারায় যেতে বললেই লোকটা চলে গেলো। রিক রাগে আগুন হয়ে একটা শো পিছ আছাড় মেরে ভেঙে ফেলল। এতোক্ষণ সন্দেহ করলেও রিক এবার নিশ্চিত যে অনিমা আদ্রিয়ানের কাছেই আছে। রিক জোরে গর্জন করে উঠল, তারপর রাগে ফুসতে ফুসতে বলল
— ” কাজটা তুমি ঠিক করোনি বেইবি। আমার সাথে বিট্রে করার পরিণাম কতোটা ভয়ংকর সেটা এবার বুঝবে। আর আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের তুমি নিজেও জানোনা তুমি কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছো। এবার মরার জন্যে তৈরী হও।”
এসব বলে আবার ভাঙচুর শুরু করলো রিক। কবির শেখ হন্তদন্ত হয়ে রিকের রুমে এসে রিক কে থামিয়ে বলল
— ” বাবাই কী করছো কী? মাথা ঠান্ডা করো।”
রিক কবির শেখকে ঝাড়া দিতে সরিয়ে বলল
— ” চুপ করো মামা। তোমার জন্যেই সব হলো সব তোমার জন্যে হয়েছে। যদি সেদিনি ঐ আদ্রিয়ানকে মেরে অনিমাকে আমার কাছে নিয়ে আসতাম তাহলে এসব হতোনা। আজ ঐ মেয়েটা আমার কাছেই থাকতো।”
কবির শেখ বিচলিত হয়ে বললেন
— ” বাবাই আমার কথা..”
— ” নাহ আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাইনা। ওদেরকেতো আমি খুজে বের করবোই। খুব তাড়াতাড়ি তারপর আগে ঐ মেয়ের সামনেই আদ্রিয়ানকে খুন করবো তারপর ঐ মেয়েকে এমন শিক্ষা দেবো ও ভাবতেও পারছেনা।”
এটুকো বলে চলে গেলো রিক। কবির শেখ বাকা হেসে বলল
— ” বাহ বাহ এবার খেলা জমবে। কথায় বলেনা এক বনে দুই সিংহ থাকতে পারেনা। আর যদি থাকে তো শিকারীকে কষ্ট করে দুটো সিংহ মারতে হয়না। কারণ একটা সিংহকে মারার কাজ ওপর সিংহ করে দেয়। এবার এই দুই সিংহের মধ্যে কোন সিংহ মরবে সেটাতো আমার জানা নেই তবে যেই মরুক লাভ তো আমারি। তাই আমি এখন এই খেলায় হাত লাগাবো না, যেমন চলছে চলতে থাক। সময় এলে দেখা যাবে।”
__________________
সন্ধ্যায় আদ্রিয়ান রুমে এসে দেখলো অনিমা উপুর হয়ে ঘুমিয়ে আছে। বারোটার দিকে এসে খাইয়ে দিয়ে গেছিলো আর কিছুই খায় নি মেয়েটা এখোনো, অাদ্রিয়ান সার্ভেন্ট কে খাবার আনতে বলে অনিমার কাছে এসে বসল। উপুর হয়ে শুয়ে থাকায় চুলগুলো মুখের ওপর পরে আছে আদ্রিয়ান আলতো হাতে চুলগুলো সরিয়ে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরেছে। আদ্রিয়ানের অনিমাকে এভাবে দেখতে ভালো লাগছে না, অনিমাকে কষ্ট দিতে চাইছেনা ও, কিন্তু ও নিরুপায়। খাবার আসতেই অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে আলতো গলায় ডাকল আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের ডাকে চোখ খুলে তাকালো অনিমা। হাত পা মুখ সব বাধা তাই উঠে বসতে কষ্ট হচ্ছে। আদ্রিয়ান নিজেই বসিয়ে দিলো ওকে। অনিমা চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, আদ্রিয়ান অনিমার মুখ থেকে কাপড়টা নিচে নামিয়ে দিলো। তারপর খাবারটা ওর দিকে বারিয়ে দিলো। অনিমা কোনো টু শব্দ না করে চুপচাপ খেয়ে নিলো। অনিমার এই নিরবতাও আদ্রিয়ানের বুকে ছুড়ি আঘাত করছে। আদ্রিয়ান অনিমাকে খাইয়ে দিয়ে প্লেট রেখে এসে দেখে অনিমা উপর হয়ে শুয়ে আবার কাদছে। আদ্রিয়ান অনিমার পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
— ” এভাবে কেঁদোনা প্লিজ। প্রবলেম টা কোথায় বলবে তো?”
অনিমা কষ্ট করে উঠে বসে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
— ” আপনি কেনো বুঝছেন না আমায় যেতে হবে?”
আদ্রিয়ান অনিমার কাছে যেয়ে বলল
— ” কেনো? আমার কাছে থাকতে সমস্যা কোথায় তোমার?”
অনিমা চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিলো। কীকরে বলবে আদ্রিয়ানকে ও? আদ্রিয়ান তো কিছু বুঝতেই চাইছে না। অনিমাকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান ওকে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরে বলল
— ” কীসের শাস্তি দিচ্ছো আমাকে? কেনো এমন করছো? কেনো? কেনো পোড়াচ্ছো এভাবে? আমার দোষটা কোথায়? ”
অনিমা এবার শব্দ কর কেঁদে দিলো, ওকে এভাবে কাঁদতে দেখে অাদ্রিয়ানের বুক ছ্যাত করে উঠল। ও কিছু বলবে তার আগেই অনিমা বলল
— ” প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন, প্লিজ।”
— ” বুঝতেই তো চাইছি বলো কী হয়েছে? ”
— ” আমি ঠিক নই আপনার জন্যে। ইনফ্যাক্ট আমি কারো জন্যেই ঠিক নই। কারণ আমি অশুভ, অভিশাপ আমি একটা। আমি যার জীবণে যাবো তার জীবণটাই শেষ হয়ে যাবে, অভিশপ্ত হয়ে যাবে। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। অনেক কিছু হারিয়েছি আমি আর হারানোর ক্ষমতা নেই আমার মধ্যে, প্লিজ।”
কথাটা শেষ করে আবারো কাঁদতে লাগল ও। আদ্রিয়ান আলতো হাতে অনিমা চোখ মুছে দিয়ে বলল
— ” তুমি যদি অশুভ, অভিশাপ হও তো শুভ আর আশির্বাদ বলে কোনো শব্দই নেই পৃথিবীতে। আর যদি হওও তাহলে তোমার কারণে সব অশুভ জিনিস ও আমার কাছে শুভ। তোমার কারণে পাওয়া সব অভিশাপকেও আশির্বাদে পরিণত করে নেবো আমি। কিন্তু তুমি না থাকলে তো সবকিছুই আমার কাছে অশুভ, সব দোয়াও অভিশাপ। তাই যেকোনো পরিস্হিতিতেই আই জাস্ট ওয়ান্ট ইউ ইয়ার।”
— “কেনো? কেনো চান আপনি আমাকে? কীসের এতো প্রয়োজন আমাকে?”
আদ্রিয়ান অনিমাকে একদম নিজের কাছে টেনে নিলো, ওদের মধ্যে কেবল এক ইঞ্চির দূরত্ব আছে। আদ্রিয়ান একটা শ্বাস নিয়ে বলল
— ” বিকজ আই লাভ ইউ। হ্যাঁ ভালোবাসি আমি তোমাকে। নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসি। আমার নিশ্বাস তুমি, আমার অস্তিত্ব, আমার হৃদস্পন্দন সব তুমিই। আর সেই ভালোবাসার জোরেই বলছি তোমাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব আজ থেকে আমার। আর সেটা তুমি চাইলেও আর না চাইলেও। আর আমিই তোমার ভাগ্য, তোমার ইচ্ছে না থাকলেও সেই ভাগ্যকে তোমায় মেনে নিতে হবে, তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে। কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
অনিমা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। এটা প্রপোজ ছিলো? ওর তো ভিলনদের থ্রেট মনে হলো। ফিল্মে,সিরিয়ালে,রিয়েল লাইফে কতোজনকে লাভ কনফেশন করতে দেখেছে কিন্তু এভাবে হাত পা বেধে হুমকির স্টাইলে কাউকে লাভ কনফেশন করতে এই প্রথম দেখলো। ওর জীবণটাই শুধু অদ্ভুত না, ওর জীবণে যেসব মানুষ আসে তারাও অদ্ভুত একটু বেশিই অদ্ভুত।
.
#চলবে…
.
(