#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
১৯.
আদ্রিয়ান আজ একটু রাত করেই বাড়িতে এলো। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। ড্রয়িং রুমে এসে দেখল অভ্র সোফায় শুয়ে শুয়ে গান শুনছে। আদ্রিয়ান আশেপাশে চোখ বুলিয়ে আবার অভ্রর দিকে তাকালো। অাদ্রিয়ানের আসার আওয়াজ পেয়ে অভ্র তাড়াতাড়ি হেডফোন কান থেকে নামিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
” স্যার চলে এসছেন?”
আদ্রিয়ান আবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল,
” বাকি সবাই কোথায়?”
অভ্র বুঝতে পারল যে আদ্রিয়ান অনিমাকেই খুঁজছে তবুও একটু দুষ্টুমি করে বলল,
” জাবিন তো নিজের রুমেই ঘুমোচ্ছে। আর সার্ভেন্টরা সবাই আছে, আপনি বললেই চলে আসবে।”
” আর সবাই?”
অভ্র বুঝতে পারেনি এমন একটা ভাব করে বলল,
” আর কে?”
আদ্রিয়ান বুঝতে পারল যে অভ্র দুষ্টুমি করছে। তাই চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই অভ্র একটু হকচকিয়ে গিয়ে বলল,
” রুমে, হ্যাঁ রুমেই আছেন ম্যাম। ঘুমোচ্ছে মনে হয়।”
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে ওপরের দিকে তাকিয়ে আবার অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল,
” সবাই খেয়েছে?”
” জি স্যার, আমি আর আপনি বাদে।”
আদ্রিয়ান এবার একটু বেশিই অবাক হলো। যত রাতই হোক অনিমা ও ফেরার আগে রাতে খায়না আর ওপরেও যায়না। আজ কী হল? শরীর খারাপ না-কি? নানারকম ভাবনা ভাবতে ভাবতে আদ্রিয়ান অভ্রকে বলল,
” তুমি খাবার সার্ভ করতে বলে টেবিলে বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
অভ্র মাথা নেড়ে চলে গেল। অভ্র একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। এই লোকটা যেমন ভয়ানক তার বোনটাও তেমন। কিছুক্ষণ আগেই জাবিন যেচে পরে ঝগড়া করেছে এসে ওর সাথে। আসলে ও সিঁড়ি দিয়ে উঠছিল আর জাবিন নামছিল। জাবিনকে নামতে দেখে অভ্র সাইড দিয়েই যাচ্ছিল কিন্তু কীকরে জাবিনের সাথে ধাক্কা লাগলো নিজেই বুঝে উঠতে পারল না। আর তখনই জাবিনের বিখ্যাত হুমকি ধমকি শুরু হয়ে গেল। রাগী গলায় বলল,
” কী সমস্যা হ্যাঁ? সুন্দরী মেয়ে দেখলেই খালি গায়ে পরতে ইচ্ছে করে না?”
অভ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল জাবিনের দিকে। মেয়েটা সুন্দরী সেটা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু কেউ যে সেটা এতো দম্ভের সাথে বলে বেড়াতে পারে সেটা ভাবেনি। অভ্র একটু গলা ঝেড়ে বলল,
” ইচ্ছে করে দেই নি লেগে গেছে।”
” বললেই হল হ্যাঁ? আপনি ইচ্ছে করেই দিয়েছেন। এসব বলে এখন আমায় বোকা বানাতে আসবেন না ঠিকাছে? আপনাদের মত ছেলেদের চেনা আছে। হুহ।”
অভ্রর এবার সত্যিই একটু রাগ হলো। তাই ও জাবিনের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর কোমরে স্লাইড করে হাত রেখে একটানে নিজের দিকে এনে বলল,
” যদি ইচ্ছে করে ছোঁয়ার হত তো এভাবে ছুঁয়ে দিতাম। ওভাবে নয়।”
বলে জাবিনকে ছেড়ে দিয়ে ওপরে চলে গেছিল। জাবিনও বোকার মত কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল ওখানে। এই প্রথম কোন অন্য ছেলে ওকে এভাবে টাচ করেছে। যদিও নামার সময় ধাক্কাটা ও ইচ্ছে করেই দিয়েছিল। কারণ অভ্র ডোন্ট কেয়ার ভাবটা। মানছে ছেলেটা একটু সুন্দর টাইপ ছেলেদের দলেই পরে তাই বলে এতো ভাব নেওয়ার কী আছে? কিন্তু ওর চালটা যে অভ্র ওর দিকেই এভাবে ঘুরিয়ে দেবে সেটা ভাবতে পারেনি ও।
আদ্রিয়ান ওপরে গিয়ে আগে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিল। এরপর অনিমার রুমে গিয়ে হালকা করে দুবার নক করল। কিন্তু কোন সাড়া না পেয়ে চাবি বের করে দরজাটা আর্ধেক খুলে উঁকি দেখল অনিমা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে, ঘুমিয়ে পরেছে নিশ্চয়ই? আদ্রিয়ান ভেতরে ঢুকে অনিমার কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত রেখে দেখল জ্বর এসছে কি-না। কিন্তু সবটা স্বাভাবিক দেখে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। মনটা খারাপ হয়ে গেল হঠাৎই। কালরাতের পর থেকে মেয়েটার সাথে ভালোভাবে কথাও বলতে পারছেনা। আর মেয়েটাও কেমন পালাই পালাই করছে। সমস্যা কী হল সেটাই বুঝতে পারছেনা। ঔষধের বক্সটা চেক করে দেখল যে ঔষধ খেয়েছে। অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আলতো করে দুবার ‘অনি’ বলে ডেকেছিল কিন্তু অনিমা কোন রেসপন্স করেনি। কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে ছোট্ট একটা শ্বাস নিয়ে উঠে চলে গেল আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান চলে যেতেই অনিমা চোখ খুলে তাকাল। ইচ্ছে করেই ঘুমের ভান করছিল। খুব বেশি দরকার না থাকলে যাবেইনা ও আর আদ্রিয়ানের কাছে, কথাও বলবেনা। মনের ভেতরে কিছু অন্যায় অনুভূতিতে জায়গা দিয়ে ফেলেছে, সেগুলো আগে মেটাতে হবে। বেশি বেশি ভেবে নিয়েছিল ও। তাই হয়তো এভাবে ধাক্কাটা খেতে হলো। উনি যখন স্মৃতিকেই ভালোবাসে তো ওর কাছে কেন আসে? থাকুক না স্মৃতিকে নিয়েই। ও আর যাই হোক কারো লাভ স্টোরির ভিলেন হতে পারবেনা। এরকম সব চিন্তা করতে করতে ঘুমোনোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে শুরু করল।
_____________
নিজের কেবিনে টেবিলে হাত রেখে গভীর ভাবনাতে মজে আছেন রঞ্জিত চৌধুরী। নিজের অতীত বর্তমানের হিসেব মেলাচ্ছেন উনি। যেখানে দেশের এত বড় বড় মাথারা ওনার কাছে কিছুই না। সেখানে ঐ পিচ্ছি একটা মেয়ের ভয়ে থাকতে হচ্ছে ওনাকে। কখন কী করে বসে ঠিক নেই। ও যদি এখন ঠিক থাকে আর কোনভাবে ঐ মহিলার কাছে পৌঁছে যায় তাহলে খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে ওনার। ঐ মহিলাটাও কোথায় লুকিয়ে আছে সেটাও তো জানেনা। এরমধ্যেই কবির শেখ এসে বসল রঞ্জিত চৌধুরীর সামনের চেয়ারে। ফলের ঝুড়ি থেকে একটা আপেল নিয়ে সেটাতে কামড় বসিয়ে বলল,
” কী এতো ভাবছেন?”
রঞ্জিত চৌধুরী দুইহাতের একত্রিত আঙ্গুলগুলো নাড়াতে নাড়াতে বলল,
” মেয়েটা কী হাওয়ায় মিলিয়ে গেল না-কি?”
” এমনও হতে পারে বেঁচেই নেই।”
রঞ্জিত চৌধুরী চমকে তাকাল কবির শেখের দিকে। কবির শেখ বললেন,
” দেখুন। দিনকাল খারাপ। ওর যাওয়ারও জায়গা নেই। এমনিতেও একটা মেয়েকে এরকম একা পেয়ে ছেড়ে দেবে? এতো ভালো মানুষ আছে না-কি?”
” যদি সেটা হয় তাহলেতো বেশ ভালোই।”
রঞ্জিত চৌধুরী চিন্তিত মুখ করে বললেন,
” কিন্তু যদি সেটা না হয়? তাহলে কী হবে?”
” কী না হলে কী হবে?”
দুজনেই চমকে তাকিয়ে দেখে দরজার কাছে রিক দাঁড়িয়ে আছে। ওনারা নিজেদের সামলে নিয়ে একটু ঠিকঠাক হয়ে বসল। রঞ্জিত চৌধুরী কথা ঘুরিয়ে বললেন,
” যাক অবশেষে এলে তুমি?”
রিক চেয়ার টেনে বসে বলল,
” শর্ত একটাই ড্যাড। অনিকে আমি খুঁজে আনার পর ওর সাথে পাবলিকলি আমাদের বিয়ে হবে এন্ড তুমিও কোন ঝামেলা ছাড়াই সেটা মেনে নেবে। এন্ড ওকেও নরমালি নিজের পুত্রবধু হিসেবে মেনে নেবে।”
রঞ্জিত চৌধুরী কবির শেখের দিকে তাকাতেই সে চোখের ইশারা করল। রঞ্জিত চৌধুরী হেসে বলল,
” আরে সেটা তো অনেক আগেই আমি মেনে নিয়েছি।”
রিক চোখ ছোট ছোট করে তাকাল রঞ্জিত চৌধুরীর দিকে। কবির শেখ ব্যাপারটা সামলাতে বলল,
” পেয়েছো মেয়ে..মানে অনিমাকে?”
” এখনও না। জানিনা কোথায় চলে গেছে। তারচেয়ে বড় কথা ও ঠিক আছে কি-না।”
বলে রিক নিজের ভাবনায় মগ্ন হয় গেল। কবির শেখ আর রঞ্জিত চৌধুরী একে ওপরের চোখের দিকে তাকিয়ে এরপর নিজের কাজে মনোযোগ দিল।
____________
আজকে ক্লাস নেই। অনিমা সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আজ আর আদ্রিয়ানকে কফি দিতে যায়নি। সার্ভেন্ট দিয়ে পাঠিয়ে দিয়ে রুমে এসে বসে ছিল। অনেক সময় পর নিচে আসার সময় সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে দেখল। আদিব আর রাইমা এসছে। আদ্রিয়ান, অভ্র, জাবিনও বসে আছে সোফাতে। অনিমা নিচে নামতেই জাবিন বলল,
” ঐ তো অনি আপু এসে গেছে।”
এটা শুনে সবাই তাকালো অনিমার দিকে। অনি একটু এগোতেই রাইমা উঠে এসে জড়িয়ে ধরল ওকে, ওও হেসে রাইমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
” কেমন আছো?”
” আমি ভালো। তুমি ভালো আছো আপু?”
” একদম।”
রাইমা অনিমাকে নিয়েই সোফায় বসল। আদ্রিয়ান সুক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে কিন্তু অনিমা একবারও তাকায় নি। অনিমা আদিবের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
” ভালো আছেন ভাইয়া?”
” আলহামদুলিল্লাহ্।”
” আশিস ভাইয়া আসেন নি?”
” না ওর আজ একটু কাজ আছে।”
” আচ্ছা।”
” শোনো, সামনের পনেরো তারিখ আমার আর রাইমার বিয়ে। তোমারও ইনভেটেশন রইল কিন্তু। একটা বাংলো বুক করে নিয়েছি, তেরো তারিখে আদ্রিয়ানের সাথে চলে আসবে। যদিও আদ্রিয়ানকে বলা মানেই তো তোমাকে বলা।”
অনিমা মুচকি হেসে বলল,
” না ভাইয়া উনি আর আমি দুজন পুরোটাই আলাদা মানুষ। তাই ওনাকে বলা আর আমায় বলা কোনদিন এক হতে পারেনা। তবুও যখন আপনি আমাকে বলেছেন, অবশ্যই যাবো।”
সবাই একটু অবাক হল অনিমার কথায়। আদ্রিয়ানও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। আদিব একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল,
” আর হ্যাঁ। অরু, তীব্র, স্নেহা ওদেরকেও বলতে হবে কিন্তু। তাই ঠিক করেছি একটা ট্রিট এর আয়োজন করব তাড়াতাড়ি ওখানেই ওদের সাথে কথা হয়ে যাবে কী বল?”
” আপনি যেটা ভালো মনে করেন।”
এরপর ওরা সবাই ব্রেকফাস্ট করতে বসল। অনিমা রাইমা ওদের সাথে বিভিন্ন কথা বলছে আর খাচ্ছে। কিন্তু আদ্রিয়ান খাচ্ছে কম অনিমাকেই বেশি দেখছে। এটুকু বুঝতে পেরে গেছে যে অনিমা ইচ্ছে করেই ওকে ইগনোর করে যাচ্ছে। কাল রাতে যে অনিমা জেগে ছিল সেটাও জানে ও আসার সময় ওকে পেছন ঘুরে তাকাতে দেখেছে, সকালে কফিটা অবধি দিতে আসেনি। এভাবে ইগনোর করার কারণটা বুঝতে পারছেনা ও। আদিব বলল,
” জাবিন এখানেই ভর্তি হয়ে যাবে?”
” হ্যাঁ ভাইয়া। এখানেই থাকব এখন থেকে।”
কথাটা শুনে অভ্র বিষম খেল। এই মেয়ে এখানে পার্মানেন্ট হয়ে গেলে ওর কী অবস্থা হবে? খাওয়া দাওয়া শেষে ওদের বিদায় দিয়ে অনিমা কিচেনে গিয়ে সব ঠিক করে দেখল আদ্রিয়ান পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনিমা বলল,
” কিছু লাগবে আপনার?”
” না।”
অনিমা পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান বলল,
” শোনো।”
” আমার কাজ আছে।”
বলে অনিমা দ্রুত পায়ে ওখান থেকে চলে গেল নিজের রুমে। আদ্রিয়ান পেছন থেকে কয়েকবার ডাকার পরেও শোনেনি ও। আদ্রিয়ান রেগে দেয়ালে একটা লাথি মারলো। অনিমা রুমে গিয়ে অরুমিতার সাথে কথা বলল। যদিও বেশিক্ষণ কথা বলেনি। কিন্তু অরুমিতার কন্ঠটা কেমন যেন লাগল ওর কাছে। অরুমিতা ফোন কেটে ম্যাসেঞ্জারে মেসেজ রিকোয়েস্ট চেক করতে গিয়ে দেখে আশিসের আইডি থেকে মেসেজ এসছে ‘কেমন আছো?’ অরুমিতার এবার রাগ হল। ও কেমন আছে সেটা জেনে ঐ লোকটা কী করবে? সব ভুলে যখন নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে ভালো থাকতে শিখেছে তখনই আসতে হল একে ওর শান্তি নষ্ট করতে? ও একবার ভাবল ব্লক করে দেবে। পরে ভাবল যে যেখানে ঐ মানুটাই ওর কাছে মেটার করেনা। সেখানে এসব কেন করবে? তাই ওভাবেই রেখে দিল। আর ওর সেই প্রথম দিনের কথা মনে পরল। সেদিন আশিস নামক ব্যাক্তিটি এসছিল ওর জীবনে। এরকমই একসময়। রিল্যাক্স মুডে মেসেজ রিকোয়েস্ট চেক করতে গিয়েই চোখে পরেছিল আশিস নামক আইডিটি। আর একটা মেসেজ যেখানে লেখা ছিল শুধু ‘হাই’। যদিও অপরিচিত আইডি বলে অরুমিতা রিপ্লে না করে ওভাবেই রেখে দিয়েছিল। কথাটা ভেবে ছোট্ট শ্বাস ফেলে ফোন স্ক্রোলিং এ মনোযোগ দিল ও।
____________
আরও একটা দিন কেটে গেছে। অনিমা আদ্রিয়ানকে এভাবেই ইগনোর করে যাচ্ছে। ও ওর সময়মত ভার্সিটি থেকে এসে নিজের মত সময় কাটাচ্ছে, জাবিনের সাথে গল্প করছে। নিজের হাতে আদ্রিয়ানকে আর কফি করে দেয়নি। আদ্রিয়ান এতো কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু অনি শুধু জরুরি কথারই উত্তর দিয়েছে বেশি কথা বলেনি। আদ্রিয়ানের মন মেজাজ সবকিছুই প্রচন্ডরকম খারাপ হয়ে আছে এইজন্য। এতক্ষণ ঠান্ডা মাথায় সামলাতে চাইলেও এবার রাগ হচ্ছে।
রাতের খাবারের পর অনিমা কারো সাথে কথা না বলেই চলে গেল। মন এমনিতেই ভালো নেই ওর। নিজের ওপরই রাগ হয়। কী দরকার ছিল আদ্রিয়ানকে নিয়ে আগে আগেই এতো বেশি চিন্তা করে ফেলার। এখন নিজেই কষ্ট পাচ্ছে। বিষন্ন মনে বিছানাটা গুছিয়ে যেই শুতে যাবে। তখনই দরজা লাগানোর শব্দে একটু চমকে পেছনে তাকালো। তাকিয়ে দেখে আদ্রিয়ান অনেকটা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ও আদ্রিয়ানের চোখ মুখ দেখে ভয় পেলেও বালিশটা রেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তোতলানো কন্ঠে বলল,
” ক-কিছু বলবেন? এতো রাতে এখানে কেন এসছেন?”
আদ্রিয়ান এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
” এটা আমার বাড়ি তাই এই বাড়ির প্রতিটা কর্ণারে যাওয়ার রাইট যেমন আমার আছে তেমনই এ বাড়িতে যারা থাকে তাদের ওপরও অধিকার আছে আমার।”
অনিমা নিজেকে সামলে বালিশ সামলে বালিশ ঠিক করতে করতে বলল,
” আদ্রিয়ান এখন আমার ঘুম পাচ্ছে খুব। পরে কথা বলব।”
হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান অনির হাত ধরে টান নিয়ে নিজের কাছে নিয়ে দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরল। চোখে সত্যি এবার লালচে আভা এসছে আদ্রিয়ানের। অনিমা ভীত আর হতভম্ব দৃষ্টিতে দেখছে ওকে।
#চলবে…
[ এতোদিন কেন দেইনি কাল বলে দিয়েছি। তাই কমেন্টে একই প্রশ্ন করে বিব্রত করবেন না। হ্যাপি রিডিং 😊]বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
২০.
অনিমার সেই দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে আদ্রিয়ান শক্ত করে ওকে নিজের দিকে টেনে নিল। এতো শক্ত করে ধরেছে যে হাতে ব্যাথা পাচ্ছে ও। আদ্রিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” সমস্যা কী তোমার?”
অনিমা কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলল,
” আমার কোন সমস্যা নেই। আর সমস্যা কেন হতে যাবে?”
” তাহলে এসব কী হ্যাঁ?”
” কোনসব?”
আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস ফেলে অনিমার চোখে চোখ রেখে বলল,
” অনি প্লিজ আমায় রাগীও না। রেগে গেলে কিন্তু আমার মাথা ঠিক থাকেনা। আই ডোন্ট ওয়ান টু হার্ট ইউ। সো প্লিজ ডোন্ট মেক মি।”
অনিমা ভ্রু কুচকে বলল,
” বুঝতে পারছিনা কী করেছি আমি? আগে সেটা তো ক্লিয়ার করুন।”
” সত্যিই বুঝতে পারছ না? না কি বুঝতে চাইছ না? এরকম কেন করছ? তিনদিন যাবত কথা বলা তো দূর ঠিক করে তাকাচ্ছোনা আমার দিকে। তোমার মুখটা দেখতেও আমাকে একপ্রকার যুদ্ধ করতে হচ্ছে। বেড়োনোর আগে তোমাকে খুঁজে পাইনা, বাড়ি ফিরে দেখি দরজা লক করে রেখে দিয়েছ। বুঝতে পারোনা তোমার সাথে কথা বলতে না পারলে, তোমাকে দেখতে না পারলে আমার কষ্ট হয়? দম বন্ধ হয়ে আসে?মেরে ফেলতে চাও আমাকে? কী করেছি কী আমি? এমন ব্যবহার করছো কেন?”
অনিমা এতক্ষণ শান্ত চোখে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আদ্রিয়ানের কথা শেষ হতেই ও ধীর গলায় বলল,
” আমি আপনার সাথে কথা না বললে, কাছে না আসলে, আপনার এতো খারাপ লাগার তো কিছু নেই। কী হই আমি আপনার? আমাদের মধ্যে না কোন আত্মীয়তা আছে আর না কোন সম্পর্ক। আমিতো শুধুমাত্র আপনার আশ্রিতা, তাইনা?”
কথাটা শুনে আদ্রিয়ান অনিমার হাত ছেড়ে দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল অনিমার দিকে। তারপর বলল,
” আশ্রিতা?”
অনিমা এবারও একই ভঙ্গিতে বলল,
” নই?”
” তোমার কী সেটাই মনে হয়?”
” অন্যকিছু মনে হওয়ার কারণ আছে কী?”
আদ্রিয়ান অনিমাকে কিছু বলবে তখনই ওর ফোন বেজে উঠল। আদ্রিয়ান পকেট থেকে ফোন বেড় করে অনিমার দিকে একপলক তাকিয়ে ফোন রিসিভ করে হনহনে পায়ে বাইরে চলে গেল। অনিমা গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে রুমে বসে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিল। কী পেয়েছে কী লোকটা? এতো আলগা পিরীত কীসের? নিশ্চয়ই ঐ স্মৃতি ফোন করেছে তাইতো চলে গেল। যাবেই যখন আসার কী দরকার ছিল? এভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে ওকে দুর্বল না করে দিলে কী লোকটার হচ্ছেনা, না-কি? মানছে যে ওকে আশ্রয় দিয়েছে। তাই বলে এভাবে বারবার মনে আঘাত করবে? না চাইতেও কেঁদে দিল অনিমা। বিরক্তি নিয়ে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরল। এইটুকু বয়সে জীবনের এতো এতো জটিলতা ভালো লাগছেনা ওর।
___________
জানালা দিয়ে সূর্যের আলো মুখে পরার সাথেসাথেই ভ্রু কুচকে ফেলল রিক। অনেক রাত করে শুয়েছে তাই চোখে এখনও ঘুম আছে। সেইজন্য উল্টো ঘুরে শুয়ে পরল। স্নিগ্ধা কফি নিয়ে রুমে এসে দেখে রিক এখনও ঘুমোচ্ছে। ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে এগারোটা চুয়ান্ন বাজে। এতোক্ষণ অবধি একটা ইয়াং ছেলে কীকরে ঘুমায় সেটাই বুঝে উঠতে পারেনা স্নিগ্ধা। তারওপর ছেলেটা না-কি আবার একজন ডাক্তার! ভাবা যায়! ও কফির কাপটা টি-টেবিলে রেখে রিকের কাঁধে হাত রেখে বলল,
” রিকদা? ওঠো?”
রিক ঘুমে ঘোরে আড়মোরা ভেঙ্গে বলল,
” নীলপরী মাথায় হাত বুলিয়ে দাও তো একটু। ঘুম পাচ্ছে আরও।”
স্নিগ্ধা বোকার মত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে বলল,
” খবিশ লোকটা ঘুমের ঘোরেও নীলপরীকেই দেখে। সারাদিন শুধু নীলপরী আর নীলপরী। যা খুশি করুক আমার কী? আমি এত বকবক কেন করছি? ডাকার কাজ ডেকে দেই।”
স্নিগ্ধা এবার জোরে জোরে ডাকতেই রিক বিরক্তি নিয়ে স্নেহার হাত ধরে টান দিয়ে বসিয়ে বলল,
” নীলপরী তুমি..”
এটুকু বলে চোখ খুলে তাকিয়ে স্নিগ্ধাকে দেখে নিজেকে সামলে নিয়ে কপাল কুচকে বলল,
” কী হয়েছে কী? এভাবে চেচাচ্ছিস কেন?”
স্নিগ্ধা মেকি হেসে বলল,
” নীলপরীর স্বপ্ন দেখা শেষ হলে এবার কফিটা নিয়ে আমাকে উদ্ধার করো।”
রিক চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসে বলল,
” কেন? তোর জ্বলছে?”
স্নিগ্ধা একটা ভেংচি কেটে বলল,
” বয়ে গেছে আমার। যেই বানর মার্কা চেহারা। তারজন্য আমার জ্বলবে। আমার পেছনে না আরও হ্যান্ডসাম হ্যান্ডসাম ছেলেরা ঘোরে। বুঝলে?”
রিক হাতে ভর দিয়ে আধশোয়া হয়ে বলল,
” তাই?”
” জি হ্যাঁ। তাই আমি তোমার মত ক্যাবলাকান্ত লোকেদের পাত্তা দেইনা।”
” তুই জানিস? মেডিকেলের মেয়েরা ক্লাসে ক্লাস করত কম, আমাকে দেখতো বেশি।”
” জানিতো! ওরা দেখত আর এটাই ভাবতো যে মানুষের কলেজে বনমানুষ এলো কোথাথেকে?”
রিক চোখ ছোট ছোট করে বলল,
” তাই না?”
স্নিগ্ধা দাঁত বের করে হেসে বলল,
” তাই তো।”
” তোকে তো..”
বলে রিক উঠতে নিলেই স্নিগ্ধা এক দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। রিক স্নিগ্ধার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেসে দিল। অনিমা যাওয়ার পর এই প্রথম এভাবে হাসল ও।
____________
ভার্সিটির একটা ক্লাস শেষ হওয়ার পর লম্বা ঘন্টা দুয়েক এর একটা ব্রেক আছে। তাই অনিমা আর অরুমিতা ক্যান্টিনে গিয়ে বসেছে। স্টুডেন্টরা বিরতিতে এখানেই এসে বসে আড্ডা দেয়। তাই জায়গাটায় ভার্সিটির বেশ অনেক ছাত্র ছাত্রীরাই আছে। অনিমা একদম চুপচাপ বসে আছে। কিছুই ভালো লাগছেনা ওর। মন ভালো না থাকলে কিছুই ভালোলাগবে না এটাই স্বাভাবিক। ক্যান্টিনেও শুধু একটু কফিই খেয়েছে কিন্তু আর কিছুই খায়নি। অরুমিতা গালে হাত দিয়ে দেখছে অনিমাকে। তীব্র আর স্নেহা আজ এখনও আসেনি। বলেছে আসতে ঘন্টাখানেক লেট হবে। ওরা নেক্সট ক্লাস জয়েন করবে এসে। অরুমিতা বলল,
” তোর কী হয়েছে বলতো? কিছুই তো খেলিনা?”
” খেলাম তো। খিদে ছিলোনা বেশি।”
” অনিমা আমার মনে হয় তুই বেশি ভাবছিস। আদ্রিয়ান ভাই কী নিজে একবারও বলেছে সে স্মৃতিকে ভালোবাসে?”
অনিমা অসহায় দৃষ্টিতে না বোধক মাথা নাড়ল। অরুমিতা ভ্রু নাচিয়ে বলল,
” তাহলে?”
” কিন্তু এটাতো বলেছে যে অন্যকাউকে ভালোবাসে।”
অরুমিতা এবার অবাক হয়ে বলল,
” সত্যিই উনি বলেছেন যে তোকে না অন্য কাউকে ভালোবাসেন?”
অনিমা মুখ ছোট করে বলল,
” বলেছে কাউকে একটা ভালোবাসে।”
” সেটাতো তুই হতে পারিস?”
” সেটা হলেতো সরাসরিই বলতো যে উনি আমাকে ভালোবাসেন।”
” এখানে ভালোবাসা বাসির কথা চলছে বুঝি? আমাদের সাথেও একটু বলো? আমরাও তো শুনি?”
হঠাৎ পেছন থেকে কারো গলার আওয়াজ পেয়ে পেছনে চমকে তাকাল অনিমা আর অরুমিতা। তাকিয়ে দেখে রবিন ওর গ্যাং নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনিমা আর অরুমিতা দুজনেই উঠে দাঁড়াল। অনিমা রবিনের দিকে বিরক্তির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
” অরু চল?”
বলে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই অনিমার ওড়নাটা হাত টেনে ধরল। অনিমা দ্রুত ওড়নাটা হাত দিয়ে ধরে রেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো রবিনের দিকে। ক্যান্টিনে বসা সবার দৃষ্টি এখন ওদের দিকে। অনিমা ভাবতেও পারেনি রবিন সবার সামনে এটা করবে। অনিমা ওড়না ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা। ওর কেঁদে দেওয়ার মত অবস্থা হয়েছে। কেউ কিছু বলতেও পারছেনা কারণ রবিনকে ওরা সবাই মোটামুটি ভয় পায়। অরুমিতা বলল,
” ভাইয়া ওড়না ছাড়ুন ওর।”
রবিন বাঁকা হেসে ওড়না টেনে অনিমাকে নিজের দিকে টেনে নিল। অনিমা এবার রাগে কেঁদেই দিল। অরুমিতার ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। ও বুঝে উঠতে পারছেনা কী করবে। অনিমা কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল,
” ছাড়ুন আমাকে।”
রবিন একটু হাসল। সাথে ওর গ্যাং এর ছেলেরাও। ওড়নাটা হাত দিয়ে একটু পেঁচিয়ে নিয়ে বলল,
” সেদিনতো খুব তেজ দেখাচ্ছিলে? আজ কী হল? আর তোমার সেই বন্ধু কী জেন নাম? হ্যাঁ তীব্র কই? সেদিন তো খুব হিরো সাজছিল।”
অনিমা এবার রেগে থাপ্পড় মারতে গেলে রবিন হাত ধরে বলল,
” আ.. আ, একবার থাপ্পড় মেরেছিলে তাই আজ এখন এভাবে আছো। আবার একই ভুল করছ?”
অরুমিতা বলল,
” ভাইয়া এটা কিন্তু ঠিক করছেন না ছেড়ে দিন ওকে।”
রবিন ঘাড় বাঁকা করে অরুর দিকে তাকিয়ে বলল,
” তুমি কী চাইছ তোমাকে ধরি?”
অনিমা এবার একটু চেঁচিয়ে বলল,
” ছাড়ুন বলছি।”
অনিমার এমন উঁচু গলাতে রবিন আরও রেগে গেল। ওড়নাটা জোরে টান দিল। ওড়নাটা পিন দিয়ে লাগানো থাকায় কাধ থেকে শুরু করে হাতার অনেকটা জায়গা নিমেষেই ছিড়ে গেল। পিনের তীব্র খোঁচায় কাধের অনেকটা জায়গা কেটেও গেল। ব্যাথা পেয়ে মৃদু আর্তনাদ করে উঠল ও। হাত দিয়ে নিজেকে ঢাকতেও পারছেনা কারণ রবিন একহাত ধরে আছে। অনিমা যতই হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে রবিন আরও শক্ত করে ধরছে। এবার ও অনিমার হাত মোচড় দিয়ে ধরল। এতো জোরে ধরেছে যে অনিমার মনে হচ্ছে ওর হাত সত্যিই ভেঙ্গে যাবে। এতোগুলো মানুষের মধ্যে কেউ এগোচ্ছেনা বরং অনেকে মজা নিচ্ছে। অরুমিতা বুঝে গেছে ও কিছুই করতে পারবেনা। তাই একটু দূরে গিয়ে কাউকে একটা ফোন করল। রবিন রাগে গজগজ করে বলল,
” আমাকে এই হাত দিয়ে থাপ্পড় মেরেছিলি না। এবার দেখি কত তেজ আছে তোর দেখা! আমাকে অপমান করা না? এবার দেখ সবার সামনে অপমানিত হতে কেমন লাগে!”
অনিমা ব্যাথায় চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিঃশব্দে কাঁদছে। সকলের সামনে এভাবে হেনস্তা হতে হবে কল্পণাও করেনি ও। রবিন বলল,
” ক্যাম্পাস বলে এইটুকুতেই ছেড়ে দিলাম। বাইরে কোথাও পেলে বুঝিয়ে দিতাম আমি কী জিনিস।”
বলে ধাক্কা দিয়ে ওখানে ফেলে রেখে চলে গেল। অরুমিতা দৌড়ে এসে দ্রুত ওড়নাটা তুলে অনিমার গায়ে ভালোভাবে জড়িয়ে ঢেকে দিয়ে উঠিয়ে চেয়ারে বসালো। অনিমা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। এরমধ্যেই ওখানে ডিপার্টমেন্টের একটা ম্যাম এলেন। আসলে অনিমারই দুজন ক্লাসমেট গিয়ে ডেকে এনেছেন। অবাক করা বিষয় হল উনি এসে অনিমাকে কিছু জিজ্ঞেস না করেই সকলের সামনে অনিমাকে উল্টোপাল্টা কথা শোনাতে শুরু করলে, জঘন্যরকম কথাও শোনালেন, এমনকি চরিত্র নিয়েও কথা বললেন। অনিমা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিল ওনার দিকে। এখানে ওর দোষ কোথায়? বাকিরাও অবাক হয়েছে, কিছু না জেনেই হঠাৎ এই মহিলার এই অস্বাভাবিক আচরণে। কিন্তু ওখানে উপস্থিত কেউ কিছুই বলল না। এবারেও একইভাবে মজা দেখল। অরুমিতা কিছু বলতে গেছিল ম্যাম ধমকে থামিয়ে দিয়েছে। শেষে যাওয়ার আগে বলে গেলেন,
” এসব নষ্টামি করতে ভার্সিটিতে আসার দরকার নেই। এখানে ভদ্র মেয়েরা পড়াশোনা করতে আসে। তোমাদের মত মেয়েদের জন্যেই আজকাল ভার্সিটির বদনাম হয়। যত্তসব।”
অনিমা এতক্ষণ ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না আটে রাখলেও ম্যাম যাওয়ার পর জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। অরুমিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ম্যামের যাওয়ার দিকে। কী হল বুঝতেই পারল না ও। অনিমার কাধের সাইডটা ভীষণ জ্বালা করছে ওর, হাতেও ব্যাথা করছে। অরুমিতা দুবার চেষ্টা করেছে ওকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে এখান থেকে। কিন্তু অনিমা শক্ত হয়ে বসে কান্না করছে। আস্তে আস্তে সবাই আস্তে আস্তে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল। অনিমার কাঁদতে কাঁদতে হিঁচকি উঠে গেছে। অরুমিতাও কেঁদে দিয়েছে। এরমধ্যেই হন্তদন্ত হয়ে ক্যান্টিনে ঢুকল আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানকে দেখে ওখানের সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। বিশ্বাস হচ্ছেনা কারও যে আদ্রিয়ান এসছে। আদ্রিয়ান চোখ অনিমার দিকে পরতেই ওর পায়ের গতি ধীর হয়ে গেল। অনিমাকে এভাবে দেখে চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেছে ওর। মুহূর্তেই মুখের রং বদলে গেল।ধীরপায়ে অনিমার সামনে দাঁড়াল। অনিমার চোখ আদ্রিয়ানের ওপর পরতে ও কোনরকমে উঠে দাঁড়িয়ে আদ্রিয়ানের মুখের দিকে তাকালো। আদ্রিয়ান ধীরে ওর গালে হাত রাখতেই ওর ঠোঁট আপনাআপনি ভেঙে এলো। দুবার ফোঁপানোর মত করে আওয়াজ করে আস্তে করে ঢলে পরল আদ্রিয়ানের বুকে।
#চলবে…
কেনো মেয়েদের এতো ছোট করো? সত্যি কি বাংলাদেশ এ মেয়েরা একটুও সুরক্ষিত নয়? সব সময় একটা ছেলে চাই মেয়েদের বাঁচানোর জন্য? বাঙালি মেয়েরা কি সারাক্ষন কাঁদতেই থাকে? এই সব গল্পে পড়ে বাইরের দেশে থাকা মানুষ জন বাঙালি মেয়েদের কত অসহায় ভাবে একটু ভেবে দেখবে