বর্ষার ছোঁয়া পর্ব -০১

–“ আর একবার যদি আপনি আমার শরীরে হাত দেন, তাইলে কিন্তু আপনার নামে ধর্ষণের মামলা দিমু বলে দিলাম,” বলে অন্য দিকে ঘুরে শুয়ে রইলো বর্ষা।

নিজের বউয়ের শরীর স্পর্শ না করলে কার শরীর স্পর্শ করমু এই টাইপের একটা সৃজনশীল প্রশ্ন মস্তিষ্ক জুড়ে শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত করে কি এক্টা যা-তা অবস্থা।

সেই গানটার কয়েকটি শব্দ পরিবর্তন করে গাইতে ইচ্ছে করছে,– একা থাকা ছিল ভালো সুখী তো ছিলাম, বিয়ে করতে গিয়ে কেন মরিতে গেলাম।

মানে বিয়ে করার আগে কেবল বিয়ে না করার হতাশা ছিল, এখন তো বিয়ে করে এত সাধের বউকে ছুঁতে না পারার হতাশা, বউয়ের দেওয়া হুমকিধামকির হতাশা, বউ পাশে থাকতেও সেই সিঙ্গেল লাইফের অনুভূতির হতাশা, আরও ভেবেছিলাম শীতে দুজনের উষ্ণতায় দ্রুত কম্বলের ভেতর থেকে শীত পালাবে, কিন্তু বিয়ের পরেও সিঙ্গেল কম্বলের নিচে শীত শীত অনুভুতির হতাশা। হতাশার প্রেশারে ইচ্ছে করতেছে জীবনের নাম হতাশা রেখে দেই পারমানেন্ট।

বউ আসলে যাকে বিদায় করার কথা ছিল, বউয়ের ধমকে নিরুপায় হয়ে চুপচাপ তাকেই জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছি। কার কথা বললাম নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, হ্যা কোলবালিশের কথা।
কোলবালিশ ছিল, কোলবালিশ আছে, এবং বউয়ের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে কোলবালিশ ইন ফিউচারেও থাকবে।

একবুক বেদনা আর হতাশার চাপে আবেগের উৎপত্তি হইলো বুকে, সেই আবেগ কন্ট্রোল করতে না পেরে কোলবালিশটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দুটো চুমু খেলাম এই ভেবে যে কোলবালিশ এত দিনের সঙ্গী।

চুমুর শব্দ শুনে ফটাস্ করে ঘুরে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বর্ষা বললো,– নিরীহ কোলবালিশটাও এই লুচ্চা বেডার হাত থেকে রক্ষা পেলনা, কোলবালিশ-টিজিং।

ইভটিজিং এর কথা অনেক শুনছি, কোলবালিশ-টিজিং এই প্রথমবার বর্ষার মুখে শুনে অতি কৌতুহল সামলাইতে না পেরে প্রায় আধাঘন্টা গুগলে ঘাটাঘাটি করলাম কোলবালিশ-টিজিং সম্পর্কে, অবশেষে এই বিষয়ে তথ্য দিতে গুগল ব্যর্থ। আমিও আবার হতাশ হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললা।

বর্ষা ফস করে উঠে বললো,– এইডা কি দীর্ঘশ্বাস নাকি একটা দমকা হাওয়া বয়ে গেল?!

আমি চুপ, একদম চুপ, এমন ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস পরিচালনা করছি যে নিজেই কনফিউজড বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি।

কিছুক্ষণ পরে বর্ষা বলে উঠলো,– মরার মতো ঘুমিয়ে থাকলে হবে! আমার ভয় করে, আপনি সজাগ থাকেন আমি ঘুমাবো।

কোলবালিশ ছেড়ে বর্ষার দিকে ফিরলাম। আমি যে স্বেচ্ছায় শ্বাস-প্রশ্বাসের মুখে সাইলেন্সার লাগিয়ে সাইলেন্ট মুডে ছিলাম সেকথা বর্ষা যদি জানতো!

এই বেদনা বহিরাগতদের সম্মুখে প্রকাশ করার মতো নয়, বউয়ের সাথে দূরত্বের এই বেদনায় আমার নিস্পাপ কচি মন হ্যান্ড মাইক নিয়ে চিল্লাইয়া একটাই সঙ্গীত পরিবেশন করতে চায়,– আমি কুল হারা কলঙ্কিনী, আমারে কেউ ছুঁইয়ো না গো সজনী।

এমন বিয়ে করার চেয়ে পরীমনির লুঙ্গিড্যান্স দেখে জীবন অতিবাহিত করা অনেক ভালো।

আমি দরদের সুরে বর্ষাকে বললাম,– ভয় করলে এসো আমার বক্ষে এসো সুন্দরী।

বর্ষা ঠোঁট বেঁকিয়ে বললো,– এহ! সে গুড়ে বালি, ভয় নিয়ে এত রাইতে বাগানে যেতে রাজি, তবু আপনার বুকে যামুনা।

: কেন আমার বুকে আসবানা বলে কি প্রতিজ্ঞা করা আছে নাকি?

: যাবোনা তো যাবোই না।

: আরে পাগল এ বুকে বাঘ, ভাল্লুক নেই যে তোমাকে চিবিয়ে খাবে, এবুকে তোমার জন্য এক পৃথিবী প্যার ছাড়া কিছুই পাবেনা।

: এক পৃথিবী প্যার মানে।

: আরে হিন্দিতে যাকে ভালোবাসা বলে সেই প্যার।

: হা হা হা, আপনার মতো আপনার হিন্দিও অদ্ভুত!

এত বিরহের মাঝেও বর্ষার হাসি জেনারেটর হয়ে মনের অন্ধকার গলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ফকফকা আলোর বন্যায় ভাসালো।

মুহুর্তে ভুলে গেলাম শুরুতে দেয়া বর্ষার সেই হুশিয়ারি সংকেত। মিষ্টি হেসে বললাম,– বর্ষা, পৃথিবী যদি অন্ধকারে ঢেকে যায় তোমার মায়াবী চোখের তারা জ্বলবে, সে আলোতে এ জীবন তোমার চোখে চেয়ে পথ চলবে।

বর্ষার চেহারায় মোটামুটি একটা ইমোশনাল ভাব স্পষ্ট।

এইতো মোক্ষম সময় বউকে ঘায়েল করার।

আবার বললাম,– কানদুটো সার্থক তোমার হাসি শুনে, জীবনের সমাপ্তিকালে কানের কাছে একটু করে হেসে দিয়ো। এক পৃথিবী তৃপ্তি নিয়ে মরবো আমি, জেনে নিয়ো।

বর্ষা আরও ইমোশনাল। আসলে ভালোবাসার মানুষটার প্রতি হৃদয় থেকে আসা গভীর প্রেমের অনুভূতির গাঁথা কথাগুলো ভালোবাসার মানুষটাকে আকৃষ্ট, বিমোহিত করবেই যদি অনুভূতি হয় পবিত্র। ইচ্ছেরা হয় সত্য।

প্রিয়জন পাশে থাকলে ভালো লাগার, ভালোবাসার হাজার শব্দ একত্রিত হয়ে কবিতার রূপ নেয়। আমিও শব্দ সাজালাম–

ঠিক বর্ষা দিনে টিনের চালে,
রিনিঝিনি ছন্দ তোলা,
মন মাতানো শব্দ যেমন–

বুকের মাঝে মুক্তো লুকায়,
যত্ন করে ঝিনুক যেমন–

আমার কাছে তুমি তেমন।

থমকে যাওয়া দমকা হাওয়া,
জোছনা ছাড়া আকাশ যেমন–
পানি ছাড়া নদী যেমন,
ডানা ছাড়া পাখি যেমন–

তুমি ছাড়া আমি তেমন।

কালো মেঘে ঢাকলে আকাশ,
আধার ঘেরা পৃথিবীটা খুব অসহায়,
আলোহীন এই পৃথিবীটা লাগবে কেমন?

একটা কথা জেনে রেখো বর্ষা তুমি–
তুমিহীনা আমিও তেমন।

বর্ষা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছে আমার কবিতা, আর অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি সুযোগ বুঝে কবিতার আরও কয়েকটি লাইন বর্ষার হাতে হাত রেখে বৃদ্ধি করবো ভেবে বর্ষার হাতে হাত রাখতেই বর্ষা তার অন্য হাত দিয়ে আমার হাতে এমন চিমটি কাটলো যে ফিলিংসের বানর মনের ডাল থেকে লাফিয়ে পড়ে পাঁচশো কিলোমিটার গতিতে দৌড়ে পালালো। কবিতার শব্দ বর্ষার চিমটিতে জব্দ।

বর্ষা মিষ্টি হেসে বললো,– এই যে, কবিতা শুনিয়ে উদ্দেশ্য হাসিলের ধান্ধা তাই না! সেটা হবেনা।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও মন বললো,– বর্ষা জাতে মাতাল, তালে ঠিক! এত কিছু করেও বর্ষাকে পুরোপুরি বশ করতে ব্যর্থ।

মুচকি হেসে কম্বল মুড়ি দিয়ে বর্ষা বললো,– এই যে আমি ঘুমাবো, আপনি কিন্তু সজাগ থাকবেন, পাহারা দিবেন, নইলে আমার ভয় লাগবে।

আমি মনে মনে বললাম,– আমার আর ঘুম! তোমাকে জয় করে তবেই গলা ধরে এক বালিশে দুইটা মাথা রেখে এক কম্বলের নিচে জড়াজড়ি করে না শোয়া অব্দি ঘুম হবেনা। যেখানে মিশন ইম্পসিবল, সেখানে ঘুম কি করে পসিবল! মন, প্রাণ, হৃদয় জুড়ে যার বিচরণ, তার একটু স্পর্শ আমার কাছে এখন স্বপ্ন, আমি শতবার ছুয়ে দিলেও কি এসে যায়, মন তো ততক্ষণ নিষ্প্রাণ যতক্ষণে ভালোবেসে বর্ষা ছুয়ে না দিচ্ছে, যতক্ষনে না পাচ্ছি একান্তে বর্ষার ছোঁয়া।

চলবে…

গল্পঃ বর্ষার ছোঁয়া। ( প্রথম পর্ব )

লেখাঃ ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here