বর্ষার ছোঁয়া পর্ব -শেষ

গল্পঃ বর্ষার ছোঁয়া। ( তৃতীয় এবং শেষ পর্ব )

–‘ বর্ষা, এভাবে একলা ফেলে চলে না এসে রাতে সেই চাকু দিয়ে আমাকেও শেষ করে দিয়ে আসতে, অন্তত তোমার মনে ঠাই না পেলেও ইতিহাসের পাতায় ঠাই পেতাম যে বউয়ের ভালোবাসা চেয়ে স্ত্রীর হাতে খুন হওয়া যুবক।’ আমি বর্ষাকে এক নিশ্বাসে বললাম।

বর্ষা ফিক করে হেসে ফেলে বললো,– বউয়ের ভালোবাসা চেয়ে স্ত্রীর হাতে খুন, হা হা হা!

: এতে হাসার কি আছে বর্ষা!

: আপনি বউ থাকতে স্ত্রীর কাছে কেন যাবেন, যেকোনো একজনকে আঁকড়ে থাকলেই তো হয়।

: আরে বউ আর স্ত্রী কি আলাদা নাকি।

: বললেন তো বউয়ের ভালোবাসা চেয়ে স্ত্রীর হাতে খুন!

: আরে ঐটা তো কথার কথা, তুমিই আমার বউ, তুমিই আমার স্ত্রী, তুমিই আমার গার্লফ্রেন্ড, তুমিই আমার পেয়ার, তুমিই আমার মহব্বত, তুমিই আমার ইয়ে…ইয়ে…

: থাক থাক, খুঁজে না পেলে আর বলতে হবেনা।

: আসলে পৃথিবীর সব উপমা দিয়েও তোমার প্রতি ভালোলাগা প্রকাশ করা যাবেনা। আমার কাছে তুমিই পৃথিবীর সেরা সৌন্দর্য।

: হইছে আর পাম দিতে হবেনা।

: পাম! প্রশংসাকে পাম বলে অপবাদ দিয়ে আঘাত করোনা বর্ষা, তাহলে একদিন প্রশংসা শব্দটা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর স্বামীর চোখে যদি স্ত্রী সুন্দর না হয় সেখানে ভালোবাসা থাকেনা, সংসার সুখের হয়না। একটু খুলে করো বর্ষা।

: খুলে করবো মানে! ঐ কিসব কন এগুলো?

: আরে মন বিবেকের দরজা খুলে চিন্তা করো, সেটা বলছি, খালি নেগেটিভ চিন্তাভাবনা!

: ঐ, নেগেটিভ চিন্তাভাবনা মানে কি হুম! আপনি ডবল মিনিং মার্কা কথা বলেন ক্যান?

: ও, ডবল মিনিং মার্কা কথা বোঝো, আর ভালোবাসা বোঝো না!

বর্ষা মুচকি হেসে ঘরে চলে গেল। বিশ্বাস করেন বর্ষা এই হাসি দেখলে মনের সকল ক্লান্তি অশান্তি নিমিষেই গায়েব হয়ে যায়।

দুপুরের পরে দেখি বর্ষাদের বদ স্কোয়াড পুকুর ঘাটে বসে মিটিংয়ে ব্যস্ত। বর্ষা ছাড়া বাকি তিনজন হাল্কার উপ্রে বদ, বর্ষার ঐ তিন বান্ধবী আমার আর বর্ষার বয়সের গ্যাপ নিয়ে বর্ষাকে উস্কানি দেয় সম্ভবত, কারন প্রায়ই দেখি বর্ষা বাবার বাড়িতে এলে ঐ তিনজন হাজির হয়ে বর্ষাকে নিয়ে গুপ্ত মিটিংয়ের আয়োজন করে, যে কারণে বর্ষা আমার কাছে ধরা দিতে গিয়েও দিতে চায়না।

আমি ওদের দিকে এগিয়ে গেলাম। বর্ষা তার একজন বান্ধবীকে দেখিয়ে বললো,– ওর নাম রাশমি।

আমি হেসে বললাম,– ওর জামাই হবে ইমরান হাসমি।

সবাই হেসে উঠলো।

রাশমি ঠোঁট বেঁকিয়ে বললো,– হইলেও সমস্যা নেই, সে আমার ফেবারিট। ভাত না পাইলেও পেটভরে কিসমিস তো খাওয়া যাবে।

বর্ষা অন্য একজনকে দেখিয়ে বললো,– ওর নাম রিহা।

আমি রিহাকে বললাম,– বস্তাভরা বদবুদ্ধি নিয়ে বর্ষার কাছে কি হা?

আবার সবাই হেসে উঠলো।

এবার তৃতীয় জনকে দেখিয়ে বর্ষা বললো,– ও জান্নাত।

আমি জান্নাতের উদ্দেশ্যে বললাম,– সে বদ হইলেও বেশি কিছু বলবো না, কারণ পরকালের একটা ব্যাপারস্যাপার তার নামের মধ্যে বিরাজমান।

এবার সবাই এমন ভাবে হেসে উঠলো, মনে হচ্ছে পেত্নীদের হাসাহাসির প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।

যা-ই হোক, বান্ধবীরা যেন দ্রুত স্বামী প্রাপ্ত হয় এই শীতে, সেই দোয়া করে দিলাম। আমার কি শীত কী গরম, বিয়ে করা বউও কাছে আসতে পায় শরম! তবে বউয়ের মনডা নরম, অল্প করে মেজাজও গরম, কিন্তু আমি তারে ভালোবাসি চরম।

রাতে খেয়েদেয়ে রুমে গিয়ে দেখি একটাই কম্বল বিছানায়,
পরাণ আমার করে উঠলো হায় হায়! বউ ভালোবাসা দিবেনা কষ্ট হইলেও সহ্য করি, তাই বলে এখন কম্বলও দিবেনা!

চুপচাপ খাটে শুয়ে পড়লাম, শীতে মৃদু কাঁপছি। বর্ষা ঘুরে আমার দিকে ফিরে শুয়ে বললো,– এই যে কম্বলের বাইরে থাকলে তো শীতে জমে তক্তা হয়ে যাবেন।

আমি বললাম,– কম্বলের বাইরে রাখলে তক্তা হওয়া ছাড়া উপায় কি!

বর্ষা মুচকি হেসে বললো,– আসেন জনাব ভেতরে আসেন, নাকি ফুলের মালা গলায় দিয়ে বরণ করে আনতে হবে।

বর্ষার কথা শুনে খুশিতে ভিরমি খাই খাই করেও খেলাম না, এই মুহূর্তে ভিরমি খেয়ে সময় অপচয় মানেই চরম মুর্খতার পরিচয়। মনে মনে ভাবছি আজ সূর্য কোনদিন থেকে উঠেছিল! নিজের মনের গালে চড় মারলাম এই ভেবে যে সূর্য তো পূর্ব দিক থেকেই ওঠে, এতে আবার ভাবাবাভির কি আছে!

বিদ্যুৎ বেগে কম্বলের ভেতর ঢুকে বর্ষাকে জড়িয়ে ধরলাম।

বর্ষা হেসে ফেলে বললো,– দীর্ঘদিন উপোস থাকার পরে সামনে খাবার পেলে যা হয় আরকি!

আমি বললাম,– বর্ষা, যাকিছু ঘটছে সব সত্যি তো! নাকি স্বপ্ন দেখছি?

বর্ষা এই প্রথম আমাকে জড়িয়ে ধরলো, তারপর বললো,– আসলে এতদিন হিসাব করে অবশেষে ফলাফল পেলাম এই যে, ভালোবাসার সামনে বয়সের গ্যাপ কিচ্ছু না। এই যে আমি আপনাকে এত ইগনোর করার পরেও প্রতিটি মুহূর্ত হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করেছেন, রেখেছেন, এটাই আসল বিষয়। প্রতিটি মেয়ে চায় তার স্বামী প্রতি মূহুর্তে তার খেয়াল রাখুক, ভালো বাসুক, আপনি ঠিক তেমনই একজন স্বামী। মানুষ এই আছে এই নেই, সুতরাং বয়সের হিসাবটা বোকামি, মৃত্যুর আগ মুহুর্তেও যার ভালোবাসায় শেষবারের মতোও ভাবা যায় জীবনটা সুখী ছিল, জীবন সঙ্গী হিসেবে সেই বেস্ট। আসলে আমি বাবার বাড়িতে এসে যতক্ষণ একা ছিলাম প্রতিটি মুহূর্ত মিস করেছি আপনার এই ভালোবাসা, মিষ্টি ফাজলামো, খেয়াল রাখা এসব। এসবে আমি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি মানে আপনাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। মানে জীবনের বাকিটা পথ আপনার সাথে পাড়ি দিতে পারবো নির্ভয়ে।

কথা শেষে বর্ষা আমার ঠোঁটে চুমু খেলো।

বর্ষার কিস খেয়ে আমি খিস খেয়ে গেছি প্রায়, এ তো মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো; পানি না চাইতে পেপসির মতো; ভাত না চাইতে বিরিয়ানি প্রাপ্তির মতো।

বর্ষাকে বললাম,– আসলেই তুমি আমাকে কিস করছো?

বর্ষা আবারও আমার ঠোঁটে কিস করলো।

ইয়াহু বলে আনন্দে খাটের একহাত ওপরে লাফিয়ে উঠে আবার ধড়াম করে খাটের ওপর পড়লাম। হাল্কা ব্যাথা পাইলেও লজ্জায় প্রকাশ করতে পারলাম না।

বর্ষা মুখ চেপে হেসে বললো,– খুশিতে শ্বশুরের লস করলে চলবে! খাট তো এখনই ভাঙতো!

আমি বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে গলায়, ঠোঁটে, গালে, কপালে কমপক্ষে একশোটা চুমু খেয়ে বললাম,– এই খুশিতে খাট ভাঙা তেমন মারাত্মক কিছু না। খাটের চিন্তা পরে করো আগে ইয়ের কথা চিন্তা করো।

: ইয়ে মানে?

: ইয়ে মানে ইয়ে, লাইট অফ করে আসি তারপর ইয়ের বিস্তারিত বর্ননা দিচ্ছি।

বর্ষা মুচকি হেসে বললো,– আপনি পারেনও বটে।

আমি হেসেফেলে বললাম,– তুমিও পারবা, স্পেশাল ট্রেনিং চলবে এখন!

তারপর– তার পরের ঘটনা কমুনা, লজ্জা শরমের একটা বিষয় আছে। আম জনতা আম খাক, আমাদের বিষয় গোপন থাক।

অবশেষে বর্ষাকে পেলাম আপন করে, আর পেয়ে গেলাম বর্ষার ছোঁয়া।

সমাপ্ত।

লেখাঃ ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here