#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#পর্বঃ২৭
,
,
অপুর আসার শব্দ পেয়েই নোমান শোয়া থেকে উঠে বসে।
অপু খুশিমনে এসে নোমানের পাশে বসে।
বলে,
—বাহ!আজ দেখি ঘুমাননি আপনি?
আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন বুঝি?
নোমান উল্টোমুখ করে বসে ছিলো।অপুর কথা শুনে এদিকে ঘোরে।
অপু কিছুটা আঁতকে ওঠে।
এলোমেলো চুলের অগোছালো নোমানকে বড্ড বিদ্ধস্ত দেখায়।
রক্তিম চোখদুটো দেখে ভয় লাগে।
রাগলে নোমানের চোখ লাল হয় একথা একবার শুনেছিলো অপু।কিন্তু এখন কি সে রেগে আছে নাকি সেটাই বুঝতে পারেনা।
কাঁপা কাপা স্বরে নোমানকে বলে,
—কককি হয়েছে আপনার?এমন দেখাচ্ছে কেনো আপনাকে?
আপনি কি কোন কারনে রেগে আছেন?
কথাটা নোমানের কর্নগোচর হয় কি না তা বোঝা যায় না।
দূর্বল শরীরে নোমান চোখ পিটপিট করে অপুকে দেখার চেষ্টা চালায়।
অপু এবার এগিয়ে এসে নোমানের হাত ধরে ঝাকায়,
—শুনছেন?
হাত ধরায় শরীরের উষ্ণতা উপলব্ধি করে অপু।
তড়িৎ গতিতে কপালে হাত রাখে।
এতো তাপ দেখে চোখ বড়বড় হয় তার।
তাড়াহুড়ো করে একটা বাটিতে পানি নিয়ে হাজির হয়।
একটুকরো কাপড় পানিতে ভিজিয়ে নোমানের কপালে ধরে।
বালিশ একটু উচু করে রেখে নোমানকে সাবধানে শোয়ায়।
নোমানও বাধ্য বালকের মতো অপুর কথা মতো কাজ করে।
প্লেটের খাবার একটু একটু করে নোমানের মুখের সামনে ধরে।
নোমান প্রথমে খাওয়ায় অনিহা করে,মুখ চোখ কুঁচকালেও পরমুহূর্তে ঠিকই খাবার মুখে নেয়।
তবে তা খুবই সামান্য।
অল্প একটু খেয়ে আর খেতে পারেনা সে।
অপুও আর জোর করেনা।
ড্রয়ার থেকে জ্বরের ঔষধ বের করে নোমানকে খাওয়ায়।
খাওয়ানো শেষ করে আবার পানি ও কাপড়ের টুকরো হাতে তুলে নেয়।
অপু যখন পরম মমতায় কপালে জলপটি দিতে ব্যস্ত তখন নোমানের নেশাতুর দৃষ্টি ব্যস্ত অপুকে পর্যবেক্ষন করতে।
অপু কাজের ফাকে নোমানের দিকে তাকাতেই দুজনার চোখাচোখি হয়।নোমানের তীক্ষ্ণ চোখের দৃষ্টির সামনে অপু তাকাতে পারেনা।চোখ নামিয়ে নেয়।
নোমান তবু নির্বাক।সে একধ্যানে তাকিয়ে থাকে।
ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অপুর লজ্জা অনুভূত হয়।
খাট ছেড়ে উঠে দাড়াতে চেয়েও পারেনা।
হাতে হেঁচকা টান লাগে।
আকস্মিক ঘটনায় অপু ছিটকে পরে খাটের উপর।
কিছুক্ষণ চুপ করে চোখ বন্ধ করে থাকে।
কোথায় পরেছে সেটা বোঝার চেষ্টা করে।
নাকে মোহনীয় ঘ্রান ভেসে আসে।
হাত দিয়ে বুঝতে পারে এটা বিছানা নয়, কারও বুক।
কোন পুরুষালী শক্ত বুকে আছড়ে পরেছে সে।
উঠে দাড়াতে চায় কিন্তু পারেনা।
পিঠের ওপর নোমানের শক্ত হাত বন্ধন সৃষ্টি করে রেখেছে।
ছুটাছুটি করেও লাভ হয়না।
একচুলও এদিকওদিক নড়তে পারেনা সে।
ব্যার্থ হয়ে বলে,
—কি করছেনটা কি? ছাড়ুন।
নোমান মুখটা অপুর কানের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
—হুশশশ!একটাও কথা না।
অপুর সারা শরীরে শিহরণ বয়।এমন নেশাতুর কন্ঠ শুনলেও হয়তো নেশা হয়ে যায়।
অপু তো সে নেশায়ই ডুবে মরতে চায়।
—–
সকালের মিষ্টি রোদ চোখে মুখে পরায়,ঘুম ভাঙে অপুর।
নিজেকে নোমানের বাহুডোরে আবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পেয়ে লজ্জায় নুয়ে পরে সে।
তাড়াতাড়ি নোমানকে ছাড়িয়ে ওয়াশরুমে ঢোকে।
ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে।
ফুলিকে দেখতে পায়।
ফুলি কফি বানাচ্ছিলো।
অপুকে দেখে ফুলি বলে,
—কিছু লাগবো ম্যাডাম?
—উহু।
একটু উকি দিয়ে বলে,
কি বানাচ্ছো তুমি?
—জে কফি।
–তোমার স্যারের জন্য?
—হ।
—আমাকে দাও,আমি আজ বানাবো কফি।
ফুলি আপত্তি করেনা।কাজ ফাকি দেওয়ার বেলায় সে একশো তে একশো।
ফটাফট অপুর হাতে কফির প্যাকেট দিয়ে পাশে দাড়ায়।
অপু গুনগুন করতে করতে কফি বানায়।
ফুলি বলে,
—আজ আপনারে অনেক খুশি খুশি লাগতাছে ম্যাডাম?
—কেনো এমনিদিন লাগেনা?
—লাগে,তবে আজ একটু বেশিই খুশি খুশি লাগতাছে।
অপু হাসে।
সত্যিই সে আজ খুশি।মন থেকে খুশি।
নোমান মেনে নিয়েছে অপুকে।এর থেকে বড় আর কি হতে পারে?
এখন থেকে অপুর জিবনের দুঃখের হয়তো অবসান হবে।
একটা সংসার হবে তার।
ছোট ছোট বাচ্চা থাকবে।
কোনরকম কষ্ট থাকবেনা তার জিবনে।
ভেবেই আরো একদফা হাসে অপু।
তবে হুট করে মনের কোনা থেকে কেউ একজন সতর্কতা জানায়।
অপুর কপালের কথা স্মরন করায়।ফিসফিস করে বলে,তোর কপালে কি এতো সুখ সইবে রে মুখপুড়ী?
তুই তো জন্মদুঃখী।
অপু ভেতরে ভেতরে নিজের এই সত্তাকে দাবিয়ে রাখে।
জোর করে নিজেকে বোঝায়,অবশ্যই এই সুখ সইবে আমার কপালে।
,
,
চলবে……