বাক্সবন্দী চিঠি পর্ব -২৫+২৬

গল্পঃ বাক্সবন্দী চিঠি
লেখিকাঃ নিনিকা জামান নূর
পর্বঃ ২৫
নীল আকাশের বুকে সাদা সাদা গাংচিল পাখি উড়ে যাচ্ছে। সে কি অপরুপ দৃশ্য। কিছু পাখি এসে জাহাজে থাকা মানুষের কাছে এগিয়ে এসে তাদের অবাক করে দিয়ে নীল আকাশের বুকে ফিরে যাচ্ছে। ইতু হাত মেলে ধরে। কিছুক্ষন পর একটা গাংচিল বসে হাতে। ইতুর দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আবার উড়ে চলে যায়।
আবির ইতুর কাছে দাঁড়িয়ে তা ক্যামেরা বন্দী করছিলো।
“মন ভালো হয়েছে তোমার?”
ইতু নিরব থাকল। আবির বুঝতে পারছে না ইতুকে কিভাবে নরমাল করবে।
ঠিক সময়ে সেখানে না পৌঁছাতে পারলে কি যে হতো তা ভেবে তার বুকে মোচড় দিয়ে উঠছে।
তখন পানির বোতল কিনতে গিয়ে দেখে মানি ব্যাগ কেবিনে ফেলে এসেছে।
দোকানটায় ও ভীড় ছিলো অনেক তাই তার সময় লেগে যায়।
ফিরে এসে দেখে তিনজন লোক ইতুকে টানা হেচড়া করছে। আবিরের মনে হচ্ছিলো সে ভুল দেখছে। যখন ইতু আবিরকে দেখে আবির বলে চিৎকার করে উঠে তখন আবির দৌড়ে গিয়ে একজন এর পিঠ বরাবর লাথি মারে। আরেকজন আবিরকে আসতে দেখেই পালিয়ে যায়।
প্রথম লোকটা ইতুকে ফেলে আবিরকে মারতে এগিয়ে যায়।
আবির তার পেটে লাথি দিয়ে আশে পাশে তাকিয়ে এক রড় খুঁজে পায়।
সেটা হাতে নিয়ে এলোপাতাড়ি তাদের মারতে থাকে।
ইতু এক কোনে জড়সড় হয়ে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
আবিরের মাথায় তখন রক্ত উঠে গেছে। তার ইতুকে ছুয়েছে তারা। আবির হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে প্রথমলোকটার হাত মচকে তা ভেঙে দেয়।
লোকটা বিকট চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অন্যলোকটার রড় এর বাড়িতে পায়ের হাড্ডি ভেঙে গেছে।
ইতু তখনও শক কাটিয়ে উঠতে পারছে না।
লোকটার চিৎকারের সাথে আবির রড় ফেলে ইতুর কাছে গেলো।
ইতুকে বুকে জড়িয়ে ধরে। ইতু শরীর কেঁপে যাচ্ছে অনবরত।
আবির ইতুকে ধরে দাঁড় করালো।
“আবির ওরা আমায় ছুঁয়েছে। আমি নোংরা হয়ে গেছি না? ওরা যদি আরো ক্ষতি করে ফেলতো? তুমি যদি না আসতে তাহলে কি হতো? কেন গেলে আমাকে একা ফেলে আমি নিষেধ করেছিলাম।”
আবির কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। সে তো জানতো না ইতুকে কয়েক মিনিট চোখের আড়াল করে এতোবড় বিপদ ডেকে আনবে। তাহলে সে কখনো যেতো না।
ইতু তখনো থরথর করে কাঁপছে। বুকের মধ্যে কিছু একটা খাঁমছে ধরেছে মনে হচ্ছে। ইতু ঠোঁট কামড়ে গলা অবধি আসা কান্নাগুলো আর ধরে রাখতে পারলো না। আবিরের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কাঁদতে লাগলো।
আবির নিজেকে হেল্প লেস মনে হচ্ছে। তা বুকে অজরে কেঁদে যাওয়া তার প্রেয়সী তার অর্ধাঙ্গিনীকে কি বলে শান্তনা দিবে তার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। এমন একটা ঘটনা তাকেও নাড়িয়ে দিয়েছে। আর একটু দেরি হলে কি থেকে কি হয়ে যেতো ভাবতেই শরীরটা শিউরে ওঠে।
ইতুর পিঠটা কান্নার চোটে কেঁপে কেঁপে উঠছে। আবির হাত মুঠ করে নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। ইতুকে নিজের কাছে রেখেও সেফটি দিতে অপরাগ।
আবিরের চোখে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো।
এই জানোয়ার গুলোর জন্য ইতুর এই অবস্থা।
আবিরের ইচ্ছা করছে এদেরকে জানে মেরে ফেলতে।
ইতু তাকে যেভাবে আঁকড়ে ধরেছে আবির এক চুলও নড়তে পারছে না।
আবির ইতুর চুলে পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
ইতু যখন একটু শান্ত হয়ে এলো আবির তার দুগালে হাত দিয়ে বলল,” তোমার কিচ্ছু হয়নি ইতু পাখি৷ আমি থাকতে কি করে তোমার কিছু হতে দিতাম। তুমি আগের মতোই ফুলের মতো পবিত্র। কারো ছোঁয়ায় তোমার কিচ্ছু হয়নি।”
ইতু ছলছল চোখে আবিরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে প্রানে চাইছে আবিরের কথাই যেন সত্যি হয়। কিন্তু লোকগুলো অশ্লীল ভাষা তাদের চাহনি তাদের নোংরা স্পর্শ “তার” মনে হচ্ছে বিষধর পোকামাকড় তার শরীরে কিলবিল করছে।
যদিও লোকগুলো তার বেশি ক্ষতি করার আগেই আবির তাকে বাঁচিয়ে নিয়েছে। তাও কি হতে পারতো, যদি আবির না আসতো এইসব ভেবেই ইতু ভয়ে সিটিয়ে গেলো।
ইতুর চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে, শুধু তার সাথেই কেনো হলো? এতো বড় জাহাজে এমন কিছু তার সাথেই কেনো হতে হলো?
কিন্তু ইগুর অজানা রয়ে গেলো একি প্রশ্ন প্রতি মিনিটে হাজারটা মেয়ে করে যাচ্ছে।
পরের ঘটনাগুলো ঘটলো খুবই দ্রুত। আবির জাহাজে নিয়োজিত থাকা কর্মকর্তাদের সাথে এক দফা কথা কাটাকাটি করলো। তাদের এমন সিকিউরিটির জন্য একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হতে পারতো। লোকগুলোকে সেখানে বেঁধে রাখা হলো, সেন্টমার্টিন পৌঁছালেই তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হবে।
ইতুর ধাঁক্কায় আবিরের ধ্যান ভাঙ্গলো।
“হ্যাঁ বলো? কিছু লাগবে তোমার? শরীর খারাপ করছে?”
ইতু দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বললো,” আমি একটু কেবিনে যাবো আমার সাথে আসবে?”
আবির ইতুর হাত শক্ত করে মুঠে নিলো।
“এখনো ভয় পাচ্ছো?”
ইতু ছলছল চোখে তাকালো। নিজের অসহায়ত্ব আবিরকে বুঝাতে পারছে না।
ভয়ে গা ছমছম করছে তার। আবিরকে ছাড়া এক পাও সে আগাতে পারবে না।
আবির ইতুর চোখের দিকে তাকিয়েই যেন বুঝে ফেললো তার অব্যক্ত কথা।
ইতুকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে কয়েক এক সেকেন্ড পর তার দিকে তাকিয়ে বললো, “এইভাবে ভয় পেয়ে থাকলে তো চলবে না ইতুপাখি। আমি তো সব সময় তোমার সাথে থাকতে পারবো না তোমাকে প্রটেক্ট করার জন্য৷ ইউ হেভ টু বি স্ট্রং ডিয়ার। আজ আমি এসে বাঁচালাম কাল যদি আমি না থাকি তখন নিজেকে নিজে রেসকিউ করতে হবে। মনের জোর বাড়াও। সব সময় অন্যের সাহায্যের আশায় বসে থেকো না। তুমি নিজেকে প্রটেক্ট করার ক্ষমতা রাখো।”
আবিরের এতো এতো কথা ইতু গায়ে মাখছে না। এত যুক্তি এতো মনের জোর তার নেই। দুঃসাহসিক কাজ তাকে দিয়ে হবে না। ইতু আবিরের হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরে অনুনয়ের চোখে তাকালো। আবির এই চোখের ভাষা বুঝে। তার দিকে তাকিয়ে তার মনের কথা বুঝে নিলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে ইতুকে নিয়ে এগিয়ে গেলো তাদের কেবিনের দিকে।
আবিরের আগেই বোঝার উচিত ছিলো যে ইতু ছোট থেকেই তার উপর নির্ভরশীল তাকে দিয়ে আত্মরক্ষা হবে না।
________________________________
সেন্টমার্টিন পৌঁছে তারা প্রথমে থানায় ডায়রি করে জাহাজের সিসিক্যামরার ফুটেজ জমা দিলো। সেখান থেকে তাদের বুক করা রিসোর্ট এ উঠলো তারা। ইতু রুমে ঢুকেই ওয়াসরুমে চলে গেলো। আবির চুপচাপ তাকে লক্ষ্য করে গেলো।
অনেকটা সময় নিয়ে ইতু ফ্রেস হয়ে এলো।
একটা ফুল হাতার থ্রি পিস পড়ে বের হলো সে। কেমন অসস্তি নিয়ে আশেপাশে তাকাচ্ছে।
আবির তাকে পর্যবেক্ষণ করে হাত ধরে কাছে টেনে নিলো।
কিছু না বলেই ইতকে দেখতে লাগল। ইতু বুঝলো না আবির তার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছে কেনো?
“এইভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?”
“এই গরমে তুমি এই জামা কেনো পড়েছো?”
ইতু জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকলো।
“কি হলো কিছু বলছো না যে?”
ইতু অনেকটা আসতে আসতে বললো, “এমনি”
“এমনি এমনি এই গরমে তুমি কেন এটা পড়বে? যাও গিয়ে চেঞ্জ করে এসো।”
ইতু তবুও নড়লো না। হাত মুঠ করে শক্ত হয়ে বসে থাকলো।
ইতুর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবির উঠে গিয়ে লাগেজ থেকে একটা টি-শার্ট আর টাউজার বের করলো। ইতুর হাতে কাপড় দরিয়ে দিয়ে শান্ত গলায় বললো,”হয় তুমি গিয়ে চেঞ্জ করবে না হয় আমি নিজে করিয়ে দিবো, চয়েজ ইজ ইউরস।”
ইতুর চোখ দিয়ে এক দুই ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। একটু একটু করে ফুঁপিয়ে উঠলো সে।
“আমি পারবো না আবির। আমি পারবো না। আমার মনে হচ্ছে যা হয়েছে আমার ওই খোলামেলা শাড়ির জন্য হয়েছে। আমি যদি আরেকটু ডিলে জামা পড়তাম তাহলে হয়ত আমার সাথে এমন কিছু হতো না। ওই নোংরা হাত গুলো আমাকে ছুঁতে পারতো না। সব ওই শাড়ির দোষ।”
“না ইতু। সব ওই জানোয়ারগুলোর দোষ। তুমি যেমন পোশাক পরো না কেন ওদের মানসিকতা এমনই। যাদের ইনটেনশন খারাপ তারা পোষাক দেখে না ইতু। ”
আবির আরো কিছু বলতে চেয়েও ইতুর দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেলো। মেয়েটার তার কোনো কথার প্রতি মনোযোগ নেই সে যেনো অন্য জগতে হারিয়ে গেছে।
আবির ইতুর পুরো মুখে চোখ বুলিয়ে গেলো। ঠোঁটগুলো ঈষৎ কাপছে। আচমকা ইতুকে টেনে তার কোলে বসিয়ে দিল। গাড়ের কাছে হাত দিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি ইতুর গালে ছুঁয়ে দিতে দিতে কোমল গলায় বললো,”কেন বুঝেও বুঝতে চাইছো না? কেন নিজেকে আটকে রেখেছো? কি হতে পারতো তা না ভেবে এটা কেন ভাবছো না তোমার কিছুই করতে পারেনি তারা। সবকিছু বাদ দিয়ে এই সময়টা একটু উপভোগ করো। আর মাত্র একদিন আছি আমরা। পরশু আবার সেই বাড়ি ফিরে যাবো। চাইলেও তখন আমাকে সারাক্ষন কাছে পাবে না।”
আবিরের কথা শুনে নিজের মনের ভয়গুলো দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করে মেকি হাসি দিলো।
“আমি চেষ্টা করছি আবির। আমি আর ওসব নিয়ে চিন্তা করবো না।”
“গুড গার্ল। নাউ চেঞ্জ করে এসো।”
ইতু মৃদু হেসে কাপড় নিয়ে আবার চেঞ্জ করতে চলে গেলো।
পাঁচ মিনিট পরেই বেরিয়ে এলো।
তার দিকে তাকিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে হাসলো। হাতের ইশারায় কাছে ডাকলো তাকে। ইতু গুটি গুটি পায়ে আবিরের সামনে দাঁড়িয়ে গেলো। আবিরের এইভাবে জ্বলজ্বল চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় অন্যদিকে ফিরে তাকালো।
আবির মনোযোগ দিয়ে ইতুর লজ্জা পাওয়া দেখে যাচ্ছে। দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরা ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না।
এক টানে ইতুকে নিজের কোলে বসিয়ে নিলো। কোমল ঠোঁট জোড়া নিজের দখল নিয়ে কামড়ে ধরলো। ইতু হকচকিয়ে গেলো কিছু মহুর্তের জন্য। আবেশে চোখ বন্ধ করে ভেসে যেতে লাগলো ভালোবাসার মানুষটাকে আঁকড়ে ধরে। সদ্য পরিহিত গেঞ্জিটি ভিতরে হাত গলিয়ে ইতুর শরীরে বিচরণ করতে লাগল।
প্রতিটি ছোঁয়ায় কেঁপে উঠছে ইতু। আরো গভীর ভাবে মিশে যাওয়ার ইচ্ছায় চটপট করতে থাকে।
আবির তার দিকে তাকিয়ে বুঝে নিলো। এক সেকেন্ডে তাকে বিছানায় ফেলে তার উপরে উঠে আসে। কপালে গালে আলতো চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে। মেতে উঠে তারা আদিম খেলায়। আদরে আদরে ইতুর কষ্ট লাগবের চেষ্টা করতে থাকে আবির।
চলবে।গল্পঃ বাক্সবন্দী চিঠি
লেখিকাঃ নিনিকা জামান নূর
পর্বঃ ২৬
আকাশে মেঘের ভেলা দূর দুরান্তে ভেসে যাচ্ছে। সূর্য তখন একটু করে মাথার উপর উঠছে। চারদিকে ঝলমলে রোদ্দুর্র। বসন্তের এক পশলা বাতাস দু’জন কপোত-কপোতীকে ছুঁয়ে দিয়ে গেলো। ইতু আবেশে আবিরের নগ্ন বুকে মুখ গুজে আবার ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো। ইতুর নড়াচড়ায় আবিরের ঘুম ভেঙ্গে গেছে। ইতুকে তার বুকে মুখ গুজে হা করে ঘুমাতে দেখে আলতো হেসে তার কপালে চুমু দিলো। আরেকটু জড়িয়ে ধরে বললো,”উঠবে কখন? ব্রেকফাস্ট করা লাগবে না?”
আবিরের ঘুম জড়ানো গলার কন্ঠ গুনে ইতুর বুকে শিরশির করে উঠলো। আবিরের প্রশ্রয় মাখা কথায় ইতুর বুকে ভালোলাগার বাতাস বয়ে গেলো।
“এখন উঠতে ইচ্ছা করছে না।”
“পাগলিটা, ওঠো। অনেক বেলা হয়ে গেছে। ঘুরতে এসেছি ঘুমাতে না।”
ইতু তাও আবিরের বুকে ঘাপটি মেরে শুয়ে রইলো।
এইভাবে হবে না বুঝে আবির তাকে সরিয়ে নিজে উঠে পড়লো।
ইতু অভিমানী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে। তাকে এইভাবে ফেলে আবির উঠে যাবে সে ভাবে নি।
ইতুকে আরেক দফা অবাক করে দিয়ে আবির তাকে কোলে তুলে নিয়ে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেলো।
ইতুর ঠোঁটে আলতো চুমু দিয়ে বললো,” এমন করে ঠোঁট ফুলিয়ে রাখলে ইচ্ছে করে সারাক্ষন এমন আদর করি।”
ইতুর পেটে তখন হাজারটা প্রজাপতি উড়ছে৷ কাল রাতে আবিরের উন্মাদনা, তাকে আদরের আদরে ভরিয়ে তোলা এগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। লজ্জায় আবিরের বুকে মুখ লাকালো ইতু।
আবির সে দিকে তাকিয়ে হাসলো।
_____________________________________________
ইতু সাদা মেক্সি ড্রেস পড়লো, তার সাথে চিকন ডায়মন্ড এর ব্রেসলেট। চুলগুলো মাঝে সিঁথি করে এলোমেলো বেনি করে সামনে এনে রাখলো।
নেচেরাল লুক মেকাপ করে বেরিয়ে পড়লো। আবির আগেই রেডি হয়ে বাইরে ওয়েট করছিলো। ফোন এ কথা বলতে বলতে ইতুকে আসতে দেখে স্তব্ধ হয়ে চুপ করে গেলো। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বুকে শিরশির করে উঠে। ফোনের অপর পাশের মানুষটা যে তাকে ডেকে যাচ্ছে সে দিকে খেয়াল নেই তার। ইতু কাছে এলে তার দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে বললো, “ইউ আর লুকিং সো প্রিটি।” কথাটা শেষ করেই আবির ফোন কেটে ইতুকে কাছে টেনে তার গালে কয়েক সেকেন্ড ধরে চুমু খেলো।
ইতু লজ্জায় এদিক ওদিক তাকালো। আশেপাশে কেউ না থাকলেও লজ্জায় চিবুক এসে বুকে ঠেকলো তার। আবির তার গাল ধরে মুখ তুলে বলে,”এইভাবে লজ্জা পেলে তোমাকে নিয়ে যাই কি করে বলোতো?”
ইতু চোখ বড় বড় করে তাকালো। ইতুর এমন চোখ পাকানো রাগী চেহারা দেখে আবির হেসে উঠলো।
“এমন করে তাকালো আমার এই ইতুপাখী কে আরো বাচ্চা বাচ্চা লাগে। সো কিউট।”
“অনেক হয়েছে এইবার চলো তো। লেট হয়ে যাচ্ছে তো।”
“ওকে চলো।”
আবির ইতুর কোমর জড়িয়ে ধরে হাটতে লাগলো।
ইতুর একটু লজ্জা লজ্জা লাগলেও মনে মনে তার খুশির ইয়ত্তা নেই। আবিরের এমন ভালোবাসার প্রকাশ করা দেখলে তার বুকে শান্তির ডেউ খেলে যায়।
আবির তাকে নিয়ে গেলো ছেঁড়া দ্বীপে। এখানে এসেই ইতু থমকে গেলো। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকলো সচ্ছ পানির দিকে। নীল আকাশ যেনো মিশে গেছে পানিতে। ইতুর ইচ্ছা করছে এখনই পানিতে নেমে যেতে। কিন্তু যে কাপড় পড়ে এসেছে নামা যাবে না কিছুতেই। একটু মন খারাপ হলেও চারদিকের সৌন্দর্য আর পাগল করা বাতাসে মনটা সাথে সাথে ফুরফুরে হয়ে গেলো।
ইতু আবিরকে জড়িয়ে ধরে বলে,”থ্যাঙ্ক ইউ সো সো মাচ। এখানে না আনলে এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটা আমি সত্যি মিস করে যেতাম।”
আবির ইতুর কপালে চুমু দিয়ে বললো,”ইউ আর ওয়েলকাম। আমি জানতাম তোমার ভালো লাগবে। তাই ভাবলাম কক্সবাজার যখন এসেই গেছি তাহলে তোমাকে এখান থেকেও ঘুরিয়ে নিয়ে যাই।”
“আমার খুব খুব খুব ভালো লেগেছে।”
আবির ইতুর খুশি দেখেই তার শান্তি লাগছে। কাল যা হলো মেয়েটা ভুলিয়ে উঠতে পেরেছে এটাই তার জন্য অনেক।
“চলো সামনে যাই। ওই যে ডাব দেখা যাচ্ছে। ডাব খাবো। এখানকার ডাব নাকি খুব মিষ্টি হয়।”
ইতুর আবদারে তারা সামনে এগিয়ে গেলো।
একটা বৃদ্ধ লোক ডাব বিক্রি করছিলো।
আবির তাকে ডেকে বললো,”চাচা দুইটা ডাব দিন।”
লোকটা মনে হয় কানে কম শুনে। কিছুক্ষন তাদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে বললো,”ডাব খাইবা?”
আবির বুঝতে পেরে এইবার একটু জোরেই বললো,”জি চাচা দুইটা দিন।”
ডাব খেয়ে আবির ইতুর পিক তুলে দিলো কিছু। নিজেদের কিছু কাপল পিকও তুললো। অনেক চেষ্টা করেও আবিরের কোনো পিচ তুলতে পারলো না।
কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করে তারা রিসোর্ট এ ফিরে এলো।
দুপুরের খাবার তারা রিসোর্ট এ খাবে।
ইতু খেতে গিয়ে বললো সে ইলিশ ছাড়া আর কোনো মাছ খাবে না।
আবির তাকে বুঝাতে লাগলো এখানে অনেক ধরণের মাছ পাওয়া যায় সেগুলো একবার ট্রায় করে দেখতে। ইতু কিছুতেই খাবে না ওগুলো।
আবির নিজের জন্য এক গাদা মাছের আইটেম অর্ডার করে দিলো।
খাওয়া শেষে ইতু বায়না ধরলো সে পানিতে নামবে।
যে বলা সে কাজ।
কাপড় চেঞ্জ করে নেমে গেলো পানিতে।
ইতুর এমন হইচই লাফালাফি দেখে আবির প্রশ্রয় মাখা গলায় বললো,”তোমাকে এখন ছোট্ট বাচ্চা মনে হচ্ছে।”
ইতু হেসে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো।
________________________________________
“অহনা পাগলামি করো না। আমাকে তুমি কতোটা চিন? কয়েকদিনের পরিচয়ে এতো বড় সিদ্ধান্ত তুমি নিতে পারো না। আর এটা কি করে ভাবছো আমি তোমাকে নিয়ে পালাবো? তোমার নাম ছাড়া আর কিছুই জানি না আমি। চিনি না জানি না এমন একটা মেয়েকে নিয়ে আমি পালাবো? আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড?”
অহনা নিরবে চোখের জল ফেলছে।
“প্লিজ আপনি আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করুন। আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে তারা। আমি বিয়ে করতে চাই না।”
“এই কথাগুলো তুমি তোমার বাব- মা কে বলো। তাদের বুঝাও। দেখো অহনা আমি তোমার সাথে রুড হতে চাচ্ছি না। তুমি এখন ছোট নেই। এইভাবে বললেই সব হয়ে যায় না। আমি তোমাকে ভালোবাসি না। তুমি ফিরে যাও।”
অহনা কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। তার বাবা এক কথার মানুষ। ছেলে পক্ষকে তারা হ্যাঁ বলে দিয়েছে৷ অহনার কাছে এখন পালানো ছাড়া উপায় নেই। তার একমাত্র ভরসা ছিলো শ্রাবণ। তাই সকালেই তার কাছে ছুটে এসেছিলো। অনেক কষ্ট এখন তার সাথে দেখা করেছে। শ্রাবণ এখন তাকে ফিরিয়ে দিলে ওই অচেনা লোককে বিয়ে করা ছাড়া উপায় থাকবে না।
অহনা চোখের জল মুছে শান্ত চোখে শ্রাবণ এর দিকে তাকিয়ে বললো,” এখন আমার জায়গায় যদি ইতু থাকতো?”
শ্রাবণ স্তব্ধ হয়ে তাকালো তার দিকে। তার ফিলিংস এর কথা সে কারোর সাথেই শেয়ার করেনি।
“চমকাচ্ছেন কেন? আপনি যেভাবে ইতুর দিকে তাকিয়ে থাকে যে কেউ দেখলেই বুঝবে।”
“আজেবাজে কথা বলো না অহনা।”
“আপনি বলতে পারবেন আমি মিথ্যা বলছি?”
শ্রাবণ কিছু না বলে উঠে যেতে চাইলো।
“প্লিজ যাবেন না। আজ আপনি চলে গেলে আমি হারিয়ে যাবো শ্রাবণ। ”
শ্রাবণ এর বুকে শিরশির করে উঠে। অহনার দিকে তাকিয়ে বললো, “ইতু আর তুমি সেম না অহনা। ইতুর সাথে নিজের তুলনা করবে না। আমি কখনো ইতুর ভালোবাসা হবো না। না তুমি আমার হবে।”
অহনা কেঁদে যাচ্ছে অনবরত। শ্রাবণ নিজেকে শান্ত করে অহনার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, “সবাই ভালোবাসার মানুষ পায়। না পাওয়ার মাঝেই ভালোবাসা বাঁচিয়ে রাখতে হয়। ভালো থেকো অহনা।”
অহনা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে শ্রাবণের যাওয়ার পথে। শ্রাবণ এর শেষ কথাগুলো তার ভিতরে ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছে যেন। সেও কি না পাওয়ার মাঝেই থেকে যাবে?
চলবে।
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here