#বালির_সংসার(১৪)
.
.
আদিত্যর এই কয়েকটা শব্দ যেনো বিষের মতো লাগলো অর্থির।
চিৎকার করে কাদতে লাগলো আর বলছিলো এর মানে কি? আরশ কে তার চাই। তার সন্তান তার বুক খালি করে এভাবে মারা যেতে পারে না।
কম বেশি সবাই জানতো আরশ বাঁঁচবে না।
রুপ কে সেদিন বুঝিয়েছিলো রুপ বলেছিলো দেশের বাহিরে নিয়ে যাবে। কিন্তু কোন লাভ হতো না।
বাচ্চার পাকস্থলী,হৃদপিণ্ড এতটা সক্রিয় ছিলো না।
প্রথমত ওরা টুইন বেবি ছিলো যার ফলে ওদের কারো গ্রোথ ঠিক মতো হয়নি৷ দ্বিতীয়ত প্রেগ্ন্যাসির সময় কিছু কমপ্লিকেশন + সঠিক পরিমানের পুষ্টি না থাকায় আজ এই পরিনতি।
.
অর্থি এক সময় আদিত্যর বুকের শার্ট খামছে ধরে শুধু আকুতি করতে থাকে
– আদিত্যদা প্লিজ আমার আরশ কে ফিরিয়ে দাও। তুমি যা বলবে আমি করবো। কোন দিন তোমার সামনে আসবো না।আমি মরে গেলেও আসবো না প্লিজ এনে দাও।
.
কিছুক্ষণ পর দেখে রুপ কে। সেখানে গিয়েও পাগলের প্রলাপ শুরু করে।
– শুনো না! আমি প্রমিজ ঠিক মতো খাবার খাবো। সব খাবো। মাছ,দুধ,ডিম সব। যা বলবে সব শুনবো। প্লিজ আমার সন্তান এনে দাও।
.
.
সবাই অর্থি কে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলো তখন অর্থির মা এসে অর্থির কাধে হাত রাখে।
অর্থি যেনো এবার আরো ক্ষেপে উঠে।
মা কে জড়িয়ে ধরে বলে
-মা!মা! তুমি কেনো অভিশাপ দিলা? আবার দুই সন্তান কে কেড়ে নিলা? আমি কি ক্ষতি করছিলাম তোমার? আল্লাহ আমার দুই সন্তান কেড়ে নিলো, তোমার অভিশাপে? মা আরেক টা অভিশাপ দেও না। দাও না মা…..
বলো না… আল্লাহ কে আমাকেও নিয়ে যেতে। আমিও যেনো মরে যাই৷ মা
বলো না গো….
.
.
অর্থি মা কে ছেড়ে উঠে দাড়াতেই জ্ঞান হারায়।। রুপ, আদিত্য দুজনেই দৌড়ে গিয়ে ধরতেই আদিত্যর বাম হাতদিয়ে অর্থি কে জড়িয়ে তুলে নেয়।
আদিত্য এবার আর রুপ কে কিছু বলে না৷ চুপচাপ গাড়িতে করে বাসায় নিয়ে আসে।
.
.আরশ কে কবর দেওয়া হয়েছে অরুনীমার পাশেই।
এবার অর্থি কে নিয়ে যাওয়ার সাহস পায়নি অর্থির বাবা৷
কিভাবেই পাবে? তার ছোট্ট মেয়েটার জীবনে কি সব হচ্ছে?
আল্লাহ তুমি একটু রহমত নাজিল করো।
বুকের বাম পাশে প্রচন্ডরকম ব্যথা হয় ইদানীং। তবুও মালুম করছে না সে।
.
.
আদিত্যর রাত গুলো এখন সিগারেটে কেটে যায়।
রাত গুলো যখন গভীর হয় অর্থির রুম থেকে ভেসে আসে চাপা চিৎকার।আয়ান বোনের মুখের দিকে তাকাতে পারে না। খুব কষ্ট হয় কিছু খাওয়াতে। তবুও তো খেতে হবে? রুপ কখনো আসে, কখনো আসেনা। বড্ড ব্যস্ত। কোথাও না কোথাও সে বাচ্চাদের মৃত্যুর জন্য অর্থি কে মানে। নিশির কথা গুলো বড্ড তাকে ভাবায়। মা চাইলে সব পারে তবে কেনো অর্থি নিজের ভুলের জন্য ওর সন্তানদের মেরে ফেললো? কি হতো যদি একটু কেয়ারফুল থাকতো?
এসব ভাবলে মাঝেমধ্যে খুব রাগ হয় রুপের। আবার মনে হয় জন্ম,মৃত্যু সব তো আল্লাহর হাতেই।
মেয়েটার দিকে তাকানো যায় না। চোখের নিচে কালি,মুখ শুকিয়ে গেছে। চুল উস্কশুস্ক।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো ১ মাস।
আদিত্য, রুশার বিয়ের দিন ঘনিয়ে এসেছে।
আদিত্যর বিয়ের কথা মনে হলে অর্থি না চাইতেও
বড্ড কষ্ট হয়।
রুশা আপুর ভাগ্য অনেক ভালো! সে আদিত্য দা কে পেয়েছে। রুশা আপুর তো অর্থির সব পছন্দ হতো তাই হয়তো আদিত্য দা কেও পছন্দ হয়েছে।
যাক ভালোই হলো, আদিত্য দা এক পবিত্র মেয়ে কে বিয়ে করবে, সংসার করবে। অর্থির মতো অপবিত্র মেয়েকে না৷
.
অর্থির বাসায় বড্ড বিরক্ত লাগছে। তাই চুপচাপ নিজের বাসায় চলে এলো৷ আসার সময় মা কে বলে এসেছে।
আয়ান, আদিত্য কারো মুখোমুখি হয়নি। কারণ এরা আসতে দিতো না।
বাসা ভিতর থেকে লক। অর্থির কাছে চাবি ছিলো।
আজ প্রায় চার মাস পর বাসায় এলো অর্থি।
বড্ড অচেনা লাগছে। হয়তো অনেকদিন পর এলো তাই এমন লাগছে।
বেখেয়ালি ভাবে হাটতেই পায়ের সাথে কারো জুতো লাগে। মেয়ে জুতো। কিন্তু এ জুতো তো অর্থির নয়।
দ্রুত পায়ে বেডরুমের দিকে গিয়ে চোখ আটকে যায়।
বিছানায় রুপ শুয়ে আছে। আর ওয়াশরুমে কেউ শাওয়ার নিচ্ছে। অবশ্যই সে কেউ মেয়ে।
কারণ বাহিরে থেকে কিছুটা বুঝা যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর অর্থি কে অবাক করে দিয়ে টাওয়াল প্যাচিয়ে বেরিয়ে এলো রুপের বেস্ট ফ্রেন্ড নিশি।
.
.