#বালির_সংসার(৯)
.
.
স্কুলে সবাই জেনে গেছে আদিত্য অর্থির বয়ফ্রেন্ড।
পাকনা পোলাপান দের কিছু বলতে হয় না। একাই বুঝে।
অর্থি যেনো দিন রাত শুধুই আদিত্য কে চাই।
অর্থির মা বাবা কিংবা আদিত্যর ফ্যামিলি কারো কোন সমস্যা নেই।
দেখতে দেখতে অর্থির ফাইনাল টেস্ট চলে এলো৷
স্কুলে বসে কথা হচ্ছিলো বান্ধুবীদের।
– আদিত্য ভাইয়া তোকে কিস করেছে,?
– কেনো? তা করবে কেনো?
– বাহ্ রে তোর বয়ফ্রেন্ড আর কেনো?
– উনি আমার বয়ফ্রেন্ড হবে কেনো? মাথা গেছে?
– আমরা বুঝি। থাক বলতে হবে না। দেখিস আবার যেনো ভ্রমরা মধু খেয়ে উড়াল না দেয়।
.
সেসময় আদিত্য চলে আসে। আদিত্যর বাইকে উঠে আজকে কাধে হাত রাখতে অস্বস্তি হচ্ছে। আদিত্য খেয়াল করেই জোড়ে ব্রেক কষে। অর্থি হুড়মুড়িয়ে আদিত্যর উপরে পড়ে।
– সমস্যা কি? আদিত্যদা
– তোর সমস্যা কি?
অর্থি সব বলে। আদিত্য কিছু বলেনা।
সেদিন থেকে আদিত্য অর্থিকে দূরে দূরে রাখছে।
অর্থি বিষয় টা বুঝেও কিছু বলে না। এখন আর সারা রাস্তা অর্থি আদিত্য কে কথার জুড়ির গল্প বলে না। দেখতে দেখতে ১৩ দিন পার হয়ে গেলো। এক্সাম শেষ। আদিত্য বসে বসে পড়ছিলো।
অর্থি আজ শাড়ি পড়েছে।
চুপচাপ এসে আদিত্যর বিছানায় শুয়ে পড়ে। আদিত্যর রাগ ভাংগানোর এর থেকে উপায় পায়নি সে। অর্থি কে এতদিনে একবারো আদিত্যর রুমে আসতে দেখেনি।
খুব ক্লান্ত ছিলো অর্থি। এক্সাম দিয়ে। তারউপর বাহিরে ঠান্ডা পড়েছে।
বিছানায় শুতেই ঘুমিয়ে গেছে।
অর্থি কে ছাড়া আদিত্যর থাকতে কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু কখনো তো ওকে ওভাবে স্পর্শ করেনি। চাইলে সে অনেক কিছু পারতো। কিন্তু তাও মেয়েটা কেনো এমন কথা বললো।
সিগারেট ফেলে দিয়ে আদিত্য বিছানায় যেতেই অর্থি কে দেখে চমকে যায়।
চুলগুলো এলোমেলো মুখে ছড়িয়ে আছে। শাড়ী টা একটু উপরর উঠে সাদা ধবধবে পা বেড়িয়ে আছে।
এইমেয়ে টা নিজের সর্বনাশ নিজেই ঢেকে আনবে। এমনিতেই মেজাজ ভালো না তার উপর এই মেয়ের এসব।
বাচ্চা মেয়ে কিছুই বুঝে না আসে পাকনামি করতে। কোলে তুলে নিতেই আবার কি যেনো হলো।
বেশ খানিকটা জোড়েই খাটের উপর ফেলে দেয় অর্থি কে।
ঘুম ভেংগে যায়। দেখে আদিত্য বারান্দায় দাঁড়ানো।
মাথাটা বেশ ঝিমঝিম ধরছে।
উঠতে গিয়ে শাড়িতে পারা লেগে পড়ে যায়। আদিত্য আসেনা।
অর্থির কানে শুধু বাজতে থাকে
– তোমার বাসায় আছি বলে কিন্তু তোমার আয়া না। যে তোমার সব আমাকে করতে হবে। তুমি কি সত্যি ঘুমের মধ্যে হাটো না অন্য কিছু? প্রতিদিন ড্রামা। ইউজলেস ফেলো। মাঝরাতে ঢং। যত্তসব।
.
আদিত্য ইচ্ছে করেই এমন টা করে।
দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এভাবে থাকলে নিজেকে কন্ট্রোল করা দায়। কিন্তু সে চায় না তার ভালোবাসার মানুষকে অপবিত্র করতে।
.
.
অর্থি আর আদিত্যর ঘরে যায় না। কিন্তু অদ্ভূত ভাবে ঘুমে’র মধ্যেও সে এখন আর যায় না।
সিড়ি দিয়ে নেমে চুপচাপ রান্না ঘরে শুয়েছিলো।
বাসার সবাই এটা নিয়ে চিন্তিত। কারণ এমন টা হলে যেকোন সময় মেইনগেটের বাহিরেও যেতে পারে।
.
সবার সমস্যার সমাধান অর্থি নিজেই দেয়।
– আমাকে তালা মেরে রাখো। আমি চাইলেও বের হতে পারবো না।অর্থির কথাতে কেউ রাজি হয় না। আদিত্য বুঝে তার উপর রাগ করেই এসব বলছে অর্থি।
মেয়ের জিদের কাছে হার মানে সবাই। অর্থি খাবারের টেবিল ছেড়ে উঠে যায়৷
– আমার খাবার টা পাঠিয়ে দিও। যেহেতু এক্সাম তাই সারাদিন রাত সবসময় ঘরেই থাকবো। পড়াশোনা হবে আর কোন ঝামেলা হবে না।
.
আদিত্যর বেশ খানিক টা রাগ হয়। এটা কেমন কথা? আংকেল মেনে নিলো কেনো? মেয়ের জেদ তাই কি মানতে হবে?
.
আজ প্রায় এক মাস যাবত অর্থি নিজের রুমেই থাকে। বের হও না। টিউটর এসে পড়িয়ে যায় কিন্তু ও বের হচ্ছে না।
মেয়েটাকে বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছে আদিত্য।
গভীর রাত গুলোতে যখন অর্থির পড়ার শব্দ আসে না তখন বাকী রাত সিগারেটের সাথে কাটে।
দেখতে দেখতে কেটে যায় আরো এক মাস।
অর্থি কে না দেখতে পেয়ে আদিত্য পাগলপ্রায় হয়ে উঠেছে।
ওর ঘুমন্ত চেহারা যে আদিত্যর ঘুমের ঔষধ।
.
সেদিন অর্থির বিদায় অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা।
হালকা আকাশী থ্রিপিস, খোলাচুলে বেরিয়ে এলো অর্থি।
মেয়েটাকে দেখে আদিত্যর বুকের ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠে।
চোখের নিচে কালী, শুকিয়ে গেছে।
কোন কথা না বলে চলে যায় আদিত্যর সাথে। রাস্তায় কোন কথা বলেনি।
ফিরে এসে আবার রুমে চলে গেছে।
নাহ্! আজ রাতে আদিত্য আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। রাত ১ টার দিকে তালা খুলে রুমে গিয়ে দেখে মেয়েটা খাটের নিচে শুয়ে আছে।হাত টা হ্যান্ডকাফ লাগানো।
হাত টা নীল হয়ে গেছে। রাতে যেনো অন্য কোথাও না যায় এর জন্য এই অবস্থা?
আগে উঠো তারপর এই ফালতু জিনিস কে এনে দিয়েছে তার ব্যবস্থা করবো।
বলে আদিত্য কোলে নিয়ে খাটে শুয়িয়ে দেয়। মেয়েটা সারাদিন কিছুই খায়নি। খাবার টাও ওমনি পড়ে আছে।
নিজেকে খুন করতে ইচ্ছে করছে।
ঘুম ভাংগার পর অর্থি আদিত্য কে দেখে আবার ঘুমাতে যাওয়ার সময় চোখ তুলে তাকায়!
আপনি? এখানে কেনো? যান এখান থেকে।
– যাওয়ার জন্য আসিনি! থাকবো বলে এসেছি।
– মানে? কিছুই না। সাইডে চাপো বসতে দাও। আর তুমি ঘুমাও তো।
.
পরদিন সকালে আংকেলের সাথে কথা বলে আদিত্য। এবার আদিত্যর জেদের কাছে অর্থি হার মানে।
.
বারন্দায় দাঁড়িয়ে ঠান্ডা বাতাসে জমে যাচ্ছিলো অর্থি।
এক্সাম টেনশনে ঘুম হারাম৷ এমনিতেও ঘুমাতে চায় না। কি একটা বাজে অভ্যেস। যেদিন টেনশন অথবা মন খারাপ থাকলে এমন হয়।
.
হঠাৎ নিজের কোমরের দুইপাশে দুই হাতের স্পর্শ অনুভব করে।
আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পিছনে দাঁড়ায় আদিত্য।
– এই পিচ্চি! তুমি তো লম্বা হয়ে গেছো।
অর্থি কিছু বলেনা। আদিত্য জড়িয়েই থাকে। অর্থি ছাড়িয়েও যায় না।
– মন খারাপ?
– আপনি চলে যান।
– যাবো বলে আসিনি।
– কিন্তু যেতে হবে।
– উহু। সেদিন এভাবে জড়িয়ে নেইনি বলেই তো এত রাগ।
– আমি রাগ করিনা।
– তাহলে! এত নাটক কেনো?
– আপনার গার্লফ্রেন্ডের কাছে যান। আমার কাছে কি?
.
এতক্ষণে অভিমানের কারণ বুঝে।
কিছু না বলেই আদিত্য গান ধরে
.
মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা,
মন খারাপ হলে কুয়াশা ধোয় ব্যাকুল হলে তিস্তা।
মন খারাপের খবর আসে——- মন খারাপের খবর আসে,
বন পাহাড়ের দেশে, চৌকনো সব বাক্সে, যেথায় যেমন থাকে সে।
মন খারাপের খবর পড়ে, দারুণ ভালবেসে ———
বাগান শেষে সদর দুয়ার, বারান্দাতে আরাম চেয়ার।
গালচে পাতা বিছানাতে ছোট্ট রোদের ফালি।
সেথায় এসে মেঘ পিয়নের সমস্ত ব্যাগ খালি।
মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা,
মন খারাপ হলে কুয়াশা ধোয় ব্যাকুল হলে তিস্তা।
.
আদিত্য অর্থি কে ধরেই আছে। বাহিরে বৃষ্টি পড়ছে।
অর্থি! এই পিচ্চি!
ঘুমিয়ে গেলে না কি? উহু!
জেগেই আছে। আদিত্য কিছু না বলেই উঠিয়ে নেয়।
– আচ্ছা! আদিত্য দা আমাদের সম্পর্কের নাম কি? তুমি কি একটু স্বার্থপর হতে পারো না।
.
.
চলবে (