বালির সংসার পর্ব ৮

#বালির_সংসার(৮)
.
.
আদিত্য কে দেখেই অর্থি হাত বাড়িয়ে দিলো।
মেয়েটা যেদিন থেকে আদিত্য কে পেয়েছিলো সেদিন থেকেই অসুস্থ হলে এভাবে হাত বাড়িয়ে দিতো। আন্টি কে আজ অনেক বলে বাসায় পাঠানো হয়েছে।সব সময় দেখার জন্য নার্স রয়েছে।
আদিত্য তো আছেই। হঠাত করে জ্বর কেনো আসলো বুঝলাম না।
জ্বর আসলে তো অর্থি আদিত্যর সাথে পাগলামি করতো।
যা সকালে উঠেই ভুলে যেতো।
এখনো কি তাই করে?
মেডিসিন দেওয়ার পর মেয়েটা একটু ঘুমিয়েছে হাত ছাড়েনি।
ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলে ঘোর লাগা ভালোবাসা কাজ করে। অতীত ফিরে আসে।
.
মেডিক্যাল লাইফ টা প্যারাময়। দুদিন পর পর এক্সাম। পড়তে পড়তে কাহিল অবস্থা।
পড়ার টেবিল ছেড়ে সবে মাত্র উঠবে। বিছানায় অর্থি কে দেখে বেশ চমকে গিয়েছিলো।
তারপর মনে হলো এটা নতুন নয়।
প্রথম যেদিন অর্থিকে নিজের বিছানায় পায় সেদিন মাত্র ১৭ দিন হলো এই বাসায় এসেছে।
অর্থিকে নিজের পাশে দেখে ভয়ের থেকে অবাক হয় বেশি। এই মেয়ে তো আমার সাথে ঠিকঠাক কথাই বলে না। তার থেকে বড় লোকলজ্জার একটা বিষয় আছে। আমি ছেলে আমার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু ও তো মেয়ে। ছেলেদের চরিত্র রঙিন কাপড়ের মতো যেখানে কাদার ছিটা লাগলে বুঝা যায় না। কিন্তু একটা মেয়ের চরিত্র তো সাদা কাপড়ের মতো।
একটু দাগ লাগলেই সবার নজরে পড়ে।
ধীর পায়ে সেদিন আংকেল আন্টি কে ডেকে এনেছিলো।
উনারা হেসে ফেলে আদিত্যর চেহারা দেখে।।
– বুঝলে বাবা! মেয়ে আমার ঘুমের মধ্যে হাটা চলা করে।
– স্লিপিং ওয়াক!
– হ্যাঁ। তুমি কিছু মনে করো না।
.
সেদিনের পর থেকে আজকে তিন দিন।
এর পর আসলে আদিত্য আর আংকেল আন্টি কে ডাকেনি।
নিজেই ওর ঘরে দিয়ে এসেছে।
এবারো তাই করতে যাচ্ছিলো। স্পর্শ করতেই বুঝতে পারলো শরীর খুব গরম।
সামনে ফাইনাল এক্সাম। জ্বর বাধিয়ে বসেছে। আদিত্যদা বলেই ডাক দিতেই ওর দিকে চোখ তুলে তাকায়
– আদিত্যদা! আমায় একটু আদর করবে?
.
অর্থির এমন আবদারে কিছুটা ভ্যাবাচেকা খায় আদিত্য। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে
– এই পিচ্চি কি বলো এইসব৷ চলো নিজের ঘরে চলো।
– আমি মরে গেলে খুশি হও তাই না?
– কি বলছো এসব।
– তাহলে যা বলছি করো।
– মাথা গেছে পুরোপুরি।
অর্থি কিছু বলে না। কিছুক্ষণ পর উঠে যেতে নিয়ে পড়ে যাচ্ছিলো। আদিত্য ধরে ফেলে।
– থাক আর দয়া দেখাতে হবে না।
.
আদিত্য কোন পাত্তা না দিয়ে কোলে উঠিয়ে নিয়ে যায় রুমে।অর্থির মা কে ডাকার পর দেখে ওর জ্বর। আন্টি পানি আনতে গেলে আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে – এই নাও করলাম আদর। খুশি?
.
পরদিন সকালে….
-জ্বর কমেছে মা? (বাবা)
– হুম।
– বলোনি কেনো? আদিত্য না বললে তো জানতামই না। নিজের খেয়াল রেখো আর আজ স্কুলে যেয়ো না।
– আজ ফাইনালের প্রবেশ পত্র দিবে। যেতেই হবে।
– আজ থেকে আয়ানের এক্সাম শুরু! আমি যেতে পারবো না! তোর বাবার মিটিং আছে। আচ্ছা আমি আসার সময় নিয়ে আসবো। একা যাওয়ার দরকার নেই।
– তোমার কাছে দিবে না মা। জানোই তো নিয়ম কানুন।
– আন্টি! কিছু মনে না করলে আমি নিয়ে যেতে পারি।(আদিত্য)
– কিন্তু তোমার ক্লাস?
– সমস্যা নেই।
.
আদিত্য বাইক কিনেছে। বাবার এত টাকা অথচ বাইক? বাবার বন্ধুর ছেলে বাবার মতোই কিপটে।
– কি ভাবছো?
– আমি আবারো কাল রাতে আপনার…
– শুধু কি তাই? সুন্দরী? তুমি তো বেশ আবেদনময়ী!
.
এসব ভাষা অর্থি বুঝে না। তাই চুপচাপ রইলো।
ফিরে আসার সময় ওর বান্ধবীরা এগিয়ে দিতে এসে আদিত্য কে দেখে তো পুরাই ফিদা।
কালো জিন্সের সাথে হালকা নীল শার্ট, দাড়িগুলো ছোট করে কাটা। চুল, বডি সব মিলিয়ে তামিল হিরো।
একেক জনের একেক কথা শুনে অর্থি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।
ওদের কে আর সামনে না নিয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে চলে।
– চলুন।
– তোমার বান্ধবীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলে না তো?
– কি দরকার? কোন দরকার নেই।
আদিত্য বুঝে কিন্তু তবুও কিছু বলে না।
.
.
কয়েকমাস পর
.

এখন অর্থিকে সব জায়গায় আদিত্য নিয়ে যায়।
সকালে যাওয়ার সময় স্কুলে নামিয়ে দিয়ে তারপর ও ক্লাসে যায়। আসার সময় নিয়ে আসে।
আদিত্য যেদিন পারে না সেদিন অর্থির বাবা যায়। একা ছাড়তে ইচ্ছে করে না। আদিত্য ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিলো। সেসময় অর্থি এসে সামনে দাঁড়ায়।
একদম সামনে।
নীল শাড়ী, খোলাচুল,হাতে চূড়ি। লাল লিপস্টিক। আদিত্য হার্টবিট মিস করে।
– কেমন লাগছে আমায়।
– পুরোই হারপিকের বোতল।
– মানে কি? (রেগে গিয়ে)
– শুকনো মেয়ে, নীল শাড়ী, লাল লিপস্টিক। পুরোই হারপিকের বোতল না?
.
অর্থি যেনো সহমত।
– কিন্তু এখন?
– আর শাড়ি নেই।
অর্থি উত্তর না দিয়ে আদিত্য কে টানতে টানতে উপরে নিয়ে যায়। আলমারি খুললে আদিত্য দেখে পুরো শাড়ির দোকান।
– আমার জন্মের পর থেকে বাবা মায়ের জন্য যখন যখন কিনে আমার জন্য কিনে। বলুন কোনটা পড়বো৷
.
আদিত্য কালো শাড়ী বের করে হাতে দেয়।
– পড়তে পারো?
– হুম।
– যাক কিছুতো পারো। নাহলে আমার আবার পড়িয়ে দিতে হতো।
– হুহ! তাতে কি? আমি কি আপনাকে ভয় পাই?
– তাই বুঝি?
– জ্বী! আমি চাইলে আপনার সামনে শাড়ি চেঞ্জ করতে পারবো।
আদিত্য হেসে চলে যেতে নিলে অর্থি ধাক্কা দিয়ে খাটে ফেলে হাত। ওর এক হাতের সাথে হ্যান্ডকাফ বিছানায় লাগিয়ে দেয়।
– কি করছো কি?
– চ্যালেঞ্জ করেন কেনো?
– পিচ্চি মেয়ে তুমিই লজ্জা পাবে। যেতে দেও আমায়।
– যদি পারি?
– পারলে পারলা! আমায় যেতে দেও।
– উহু। বলুন কি দিবেন?
– কি চাই?
– তেতুলের আচার! যা আপনি আমাকে পাঁচ মাস যাবত খেতে দিচ্ছেন না।
.
.
চলবে (আদিত্য প্রেমীদের জন্য সামনে সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে) 🤗🤗
.
Sabiya Moon

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here