বাসন্তীগন্ধা পর্ব -১৭

#বাসন্তীগন্ধা
|১৭|[কপি সম্পূর্ণ নিষেধ]
লাবিবা ওয়াহিদ

————————
–“এখানে একা দাঁড়িয়ে কী করছো প্রিটি গার্ল? তোমার পার্টনার কোথায়?”

মেহের চমকে পাশ ফিরে তাকায়। অভিকে দেখে মেহের যেন আকাশ থেকে করলো। বিস্ময়ে হতভম্ভ হয়ে আমতা আমতা করে মেহের বললো,
–“আ..আপনি?”
–“চিনেছো? এর মানে নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে ভেবেছো, তাই না?”

মেহের আশেপাশে তাকিয়ে বললো, “কই? না তো!”
অভি হেসে বললো,
–“ভের‍্যি গুড। আচ্ছা, একা দাঁড়িয়ে কেন? মন খারাপ?”

মেহের কোনো উত্তর না দিয়ে অভির পাশ কেটে চলে যেতে নিলে অভি মেহেরের পথ আগলে দাঁড়ালো। ফিচেল হাসি দিয়ে বললো,
–“পালাচ্ছো কোথায়? আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাও।”

মেহের চারপাশে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলে,
–“একা দাঁড়ানো মানেই মন খারাপ হবে তা কে বলেছে?”

–“ওহ। এর মানে মন খারাপ না। তাহলে এখানেই দাঁড়াও। কত খোঁজার পর তোমায় পেয়েছি জানো?”

মেহের চমকে অভির দিকে তাকায়। অভি এক গাল হেসে বলে,
–“খুব সুইট তুমি জানো?”

মেহের আটকে গলায় বললো,
–“আ..আমার থেকে দূরে থাকুন।”

–“কেন?”

মেহের কোনো রকম উত্তর না দিয়ে দ্রুত পালালো। অভি মেহেরের যাওয়ার দিকে চেয়ে অবাক সুরে বললো,
–“আমাকে ভয় পাচ্ছে কেন বাচ্চা মেয়েটা?”

———————
রাতে সারিম বাসায় ফিরে সর্বপ্রথম মেহেরের রুমে চলে গেলো। সেখানে গিয়ে দেখলো মেহের সামনে বই নিয়ে বসে আছে। আর তাঁর পাশে রোজা তাকে পড়াচ্ছে। মাঝেমধ্যে গল্পও করছে। রোজাকে দেখে সারিম ভেতরে ঢুকলো না। উলটো দিকে ফিরে নিজের রুমে চলে গেলো। মেহের সারিমের উপস্থিতি টের পেলেও পিছে ফিরে তাকায় না। সে রোজার সাথেই গল্প শুরু করে। মেহের বললো,
–“এর মানে তুমি ভাইয়ার অফিসে জব করতে?”
রোজা লাজুক স্বরে বলে,
–“হু!”

–“ওয়াও। ইন্টারেস্টিং তো। আমিও এভাবে পড়ালেখা করে অফিসে চাকরি করবো। আর বসকে পটাবো!”

রোজা হুঁ হাঁ করব হাসলো মেহেরের কথা শুনে। মেহের আড়চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই। মন খারাপ হলো তাঁর। যাকে শোনানোর জন্যে বললো সেই তো নেই।
রোজা হাসি থামিয়ে বলে,
–“হয়েছে। এখন পড়ো। গল্প অনেক হয়েছে।

সারিম ফ্রেশ হয়ে মাহিমের রুমে প্রবেশ করলো। মাহিম হন্তদন্ত হয়ে উঠে বসলো। আমতা আমতা করে বললো,
–“সত্যি বলছি ভাইয়া। আমি পড়ছিলাম, একটু খারাপ লাগছিলো বলে শুয়ে পরেছি!”

সারিম কোনো কথা ছাড়াই মাহিমের সামনে বসে গম্ভীর স্বরে বললো,
–“সত্যি করে বল। মেহের কলেজ যাওয়ার সময় তোকে কিছু বলেছে?”

সারিমের কথা শুনে মেহেরের দেওয়া হুমকির কথা মনে পরে গেলো মাহিমের। সে বুঝেও না বোঝার ভান ধরে বললো,
–“কী বলবে?”

সারিম মাহিমকে চোখ রাঙিয়ে বলে,
–“অবুঝ সাজার চেষ্টা করিস না। আমার তোদের দুটোকে হারে হারে চেনা আছে। সত্যি বল, নয়তো তোকে উলটো করে বেঁধে পি*টাবো। যার লাইভ টেলিকাস্ট তোর সকল গার্লফ্রেন্ড দেখবে!”

মাহিম অসহায় ভঙ্গিতে বললো,
–“সকলে আমাকে আমার গার্লফ্রেন্ডের নিয়েই কেন ভয় দেখায়? আজব তোহ!”

–“কারণ এই একটা জিনিসেই তুই সোজা হস!”

মাহিম মুখ বাঁকিয়ে বললো,
–“শুধু এইটুকুই বলেছে ইলিরা আপুকে তুমি বিয়ে করলে মেহের বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে!”

মাহিমের কথায় সারিম হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারলো না। মাহিম কোণা চোখে সারিমের দিকে চেয়ে আছে। বোঝার চেষ্টা করছে সারিমের ভাব-ভঙ্গি। সারিম মাহিমের আশায় পানি ঢেলে দিয়ে বললো,
–“ঠিকাছে। পড়তে বস!”

বলেই সারিম রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। মাহিম তো সারিমের কান্ডে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। অবাক নয়নে সারিমের যাওয়ার পানে চেয়ে অস্ফুট স্বরে বললো,
–“ভাইয়ার মনে চলছে কী?”

——————
রোজা রুমে ঢুকতেই দেখলো সাইয়ান ল্যাপটপে কাজ করছে। রোজা সাইয়ানের থেকে চোখ সরিয়ে জানালার কাছে চলে গেলো। রাতের স্নিগ্ধ হাওয়ার ঘ্রাণ নিতে আগ্রহী রোজা। সাইয়ান আড়চোখে রোজাকে লক্ষ্য করলো। রোজা জানালার সামনে দাঁড়াতেই সাইয়ান হালকা গলা খাঁকারি দিলো। রোজা পাশ ফিরে চাইলো সাইয়ানের দিকে। সাইয়ানের দৃষ্টি তখনো ল্যাপটপে নিবদ্ধ। সাইয়ান বললো,
–“কাল ডক্টরের কাছে এপোয়েন্ট আছে। আমার সাথে যাবে তুমি!”

ডাক্তারের কথা শুনে রোজার ভ্রু কুচকে যায়। ডাক্তার কেন? সাইয়ান কী অসুস্থ? সাইয়ানের কথা মাথায় আসতেই রোজার বুক কেঁপে ওঠে। জানালা থেকে সরে সাইয়ানের দিকে এগিয়ে যায়। সাইয়ানের পাশে বসে তাঁর কপালে, গালে হাত দিয়ে বলে,
–“আপনি ঠিকাছেন? কী হয়েছে আমায় বলুন!”

সাইয়ান রোজার হাত নিজের গাল থেকে সরিয়ে হাতে মুঠিবদ্ধ করে রোজার চোখে চোখ রাখলো। রোজা নির্বিকার চাহনিতে সাইয়ানের চোখ জোড়া দেখছে। সাইয়ান আলতো স্বরে বলে,
–“আমার জন্যে নয়। তোমার জন্য। সাইক্রিয়াট্রিস্টের কাছে যাবো আমরা!”

রোজা স্তব্ধ হয়ে যায়। সে কখনো কল্পনাও করতে পারেনি যে সাইয়ান তাকে মানসিক ভারসম্যহীন ভাববে। রোজার চোখ উপচে জল বেরিয়ে এলো। সাইয়ান রোজার এরকম অবস্থা দেখে চমকে গেলো। অবাক স্বরে বলল,
–“আরেহ। কী হলো? কাঁদছো কেন?”

রোজা সরে যেতে চাইলো। কিন্তু সাইয়ান তার হাত ছাড়লো না। বরং শক্ত করে চেপে ধরলো। সাইয়ান লহু কন্ঠে আওড়ায়,
–“কিছু জিজ্ঞেস করেছি রোজা!”

রোজা চারপাশে এলোমেলো নজর ফেলে বলে,
–“আপনিও আমাকে পাগল ভাবছেন?”

সাইয়ান বেশ চমকালো রোজার এরকম ভাবনা দেখে। ল্যাপটপ বন্ধ করে পাশে রাখলো। অতঃপর কোনো কথা ছাড়াই রোজাকে বুকে টেনে নিলো। সাইয়ানের এরূপ কান্ডে রোজা স্তব্ধ, বিমূঢ়। কাঁদতে ভুলে গেলো সে। মস্তিষ্কের কার্যক্রম যেন থমকে গেলো। পাথরের মতো সেভাবেই সাইয়ানের বুকে পরে রইলো। সাইয়ান রোজার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

–“এই বোকা! কীসব বলছো তুমি বলো তো? আমি কেন এসব ভাবতে যাবো? সাইক্রিয়াট্রিস্টের কাছে কী শুধু পাগল’রাই যায়? আমি তোমার চিকিৎসা করাবো এজন্যই যাতে অতীতের কোনো কালো দাগ তোমায় স্পর্শ করতে না পারে। তুমি এখনো অতীতের ঘোরে পরে রয়েছ, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে তো তাই না? আমি চাই না তুমি মানসিক ব্যাধিতে ভুগো। বুঝেছো?”

রোজা চুপচাপ সব শুনলো। কিছুক্ষণ দু’জনই নীরবতা পাগল করলো। রোজা হঠাৎ বলে ওঠে,
–“এটা কথা রাখবেন?”
–“বলো।”

রোজা বিব্রত হয়ে বললো,
–“সারা রাত এই বুকে ঠাঁই দিবেন? এখানে ঠাঁই পেলে আমি আপনার সাথে সব জায়গায় যেতে প্রস্তুত!”

রোজার এরূপ আবদার শুনে সাইয়ান নিঃশব্দে হাসলো। মুহূর্তে-ই রোজার সেদিনের কথাগুলো মস্তিষ্কে তরঙ্গিত হলো। এর মানে রোজা ঘোরে ভুলভাল বলেনি, সত্যি সত্যি রোজার হৃদয়ে সাইয়ানের প্রতি অনুভূতি আছে? মুহূর্তে-ই হৃদয়জুড়ে প্রশান্তি খেলে গেলো। আদুরে স্বরে বললো,

–“ঠিকাছে। শুয়ে পরো। আমি লাইট নিভিয়ে দিচ্ছি!”

রোজা সাইয়ানের কাছ থেকে সরে এসে বললো,
–“কিন্তু আপনার কাজ?”

সাইয়ান রোজার গাল টেনে হেসে বললো,
–“কাজের আগে বউ!”

সাইয়ানের মুখে এই তিন শব্দে বাক্যটি শুনে রোজার সর্বাঙ্গে লাজে’রা ভীড় জমালো। রোজা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।

——————
আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি। একই দিনে ভালোবাসা দিবস এবং পহেলা বসন্ত। যার যেই দিবস পছন্দ সে সেই দিবস-ই পালন করে। আজকে এই দিনে মাহিম বা মেহেরকে সারিম কলেজ যেতে দেয়নি। এমনকি এক মিনিটের জন্যে বাহিরেও যাওয়া নিষেধ। এ কারণে মাহিম মুখ ফুলিয়ে চলাফেরা করছে পুরো বাড়ী জুড়ে। আজকের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ দিনে কী না কলেজে যেতে পারলো না। আজকে তো কলেজ বাংক দিয়ে কোনো এক মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যেতে পারতো। কিন্তু মাহিমের সব প্ল্যানিং এ অঢেল পানি ঢাকলো সারিম। এখন বিকাল। সাইয়ান প্রস্তাব করেছে সকলে মিলে তাঁরা বসন্ত পালন করবে। অর্থাৎ ঘুরতে বেরুবে।

সাইয়ানের এই কথা শুনে রোজা এবং মেহের তো দারুণ খুশি। রোজা কখনোই বসন্ত পালন করতে পারেনি। তবে আজ সুযোগ পেয়ে তার খুশির অন্ত নেই। মেহেরকে রোজা শাড়ি পরতে বলে নিজেও রুমে চলে গেলো রেডি হতে। নিজের জন্যে শাড়ি খুঁজতে যখন ব্যস্ত তখনই সাইয়ান হঠাৎ রুমে প্রবেশ করলো। তার হাতে একটি প্যাকেট। রোজার দিকে সেই প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে সাইয়ান বললো,

–“এই শাড়িটা পরতে পারো। স্পেশালি তোমার জন্যে কিনেছি। আমার পছন্দে।”

একই সময়ে সামিরাও মেহেরের রুমে একটা শাড়ি নিয়ে এসে বললো,
–“নে এটা পর!”

মেহের অবাক হয়ে বলে,
–“কই পেলে?”
–“সাইয়ান ভাইয়া সকলের জন্যে শপিং করেছে।”

——————————-
~চলবে, ইন-শা-আল্লাহ্।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here