বাসন্তী প্রেম পর্ব ৯

#বাসন্তী_প্রেম 🌼🌼
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান (ছদ্মনাম)
#নবম_পর্ব

” আপনারা যারা এই ভিত্তিহীন একটা নিউজের উপর ডিপেন্ড করে আমার আর ঐ মেয়েটার মাঝখানে অনাকাঙ্ক্ষিত সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন তাদের সবার অবগতির জন্য জানানো হচ্ছে যে এই পুরো তথ্যটাই ভুল।
আমার আর ঐ মেয়েটির মাঝে এমন কোনো ক্লোজ কন্টেক্ট নেই যাকে ঘিরে আপনারা সকলেই এভাবে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছেন। আর আমার এই লাইভ শো টেলিকাস্ট করার একটাই উদ্দেশ্য যে আপনারা সবাই পুরো ইনফরমেশন না জেনে অযথা ও মেয়েটিকে অথবা আমাকে নিয়ে কোনো প্রকার ভুল তথ্যাদি শেয়ার করবেন না।
আর হ্যাঁ ভুল ইনফর্মেশনের জন্য এই নিউজের পেছনের সম্পাদক এবং মিডিয়া প্রেসের তিন জন রিপোর্টারকে তিন মাসের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে।
ভার্চুয়াল জগৎ বর্তমানে ঠিক এমন পরিস্থিতিতে এসে পৌঁছেছে যে আজকাল ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর বিষয়কেও এই ভার্চুয়াল জগতে হিউজ একটা ইস্যু করে ফেলে। যার ফলস্বরূপ অনেককেই এর জন্য সাফার করতে হয়। তো আমি আশা করছি আমার এই লাইভ টেলিকাস্টের পর এই ম্যাটার নিয়ে ভবিষ্যতে আর কোনো সমালোচনা হবে না আর এই বিষয়টিকে এখানেই ক্লোজ করা হলো।
ধন্যবাদ সবাইকে।”
বলার পর পরই লাইভ শো শেষ হয়ে গেল। এতক্ষণ এক ধ্যানে মগ্ন হয়ে ফাইয়াজের বলা প্রতিটা কথা মন দিয়ে শুনছিল সিরাত। ফাইয়াজের বলা প্রতিটা কথার জন্য ফাইয়াজের প্রতি অদ্ভুত ভালোলাগা বেড়ে উঠলো সিরাতের মাঝে। হঠাৎ লাইভ শেষ হওয়াতে একটু নড়েচড়ে বসে সিরাত‌। মেয়েদের প্রতি ফাইয়াজের সম্মানবোধ দেখে নিজের অজান্তেই মুচকি হেসে দেয় সিরাত‌।

রাতের ডিনার শেষে রুমে আসতেই ফোনের ভাইব্রেশন এর শব্দ কর্নগোচর হয় চন্দ্রিকার। এত রাতে কার ফোন আসতে পারে ভেবেই সামনের দিকে পা বাড়ায় সে। টেবিলের উপর ফোনের স্ক্রিনে ডক্টর রূপ নামটা জ্বলজ্বল করছে। স্ক্রিনের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে ফোন হাতে তুলে নিল চন্দ্রিকা। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রূপের কন্ঠস্বর ভেসে আসলো,
– ” চন্দ্রিকা?”
– ” ইয়েস ডক্টর রূপ? হঠাৎ এত রাতে ফোন? এনিথিং সিরিয়াস?”
– ” আরে না না! তেমন কিছুই না। আসলে এমনিই হঠাৎ কথা বলতে ইচ্ছে করছিল তাই কল দিলাম।
কেন কোনো সমস্যা আছে কি মিস চন্দ্রিকা?”

রূপের কথা শুনে আলতো হাসলো চন্দ্রিকা।
– ” না তেমন কোনো সমস্যা নেই ডক্টর রূপ। তবে এভাবে মাঝরাতে দিয়েছেন তাই ভাবলাম পূরবীর রিপোর্ট নিয়ে কোনো প্রসঙ্গ হতে পারে। তাই জিজ্ঞেস করলাম।”

– ” তা ঠিক আছে। তবে কথায় কথায় আমাকে ডক্টর রূপ বলাটা কি খুব জরুরি মিস চন্দ্রিকা? তোমাকে কতবার বলেছি যে উই আর ফ্রেন্ডস। এখানেও আবার নামের পেছনে কিছু না লাগিয়ে নরমালি রূপ বললেই পারো!”
রূপের এমন উদ্ভট কথাবার্তায় থমকে যায় চন্দ্রিকা। মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। ওপাশ থেকে পিনপতন নীরবতা পেতেই খানিকটা হাসলো রূপ। অতঃপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলো,
– ” আচ্ছা কাল বিকেলে যদি ফ্রী থাকো তাহলে কি আমরা মিট করতে পারি?”
হঠাৎ দেখা করার কথা শুনতেই খানিকটা ভ্রু কুঁচকে নেয় চন্দ্রিকা। পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে বলে উঠে,
– ” ঠিক আছে। আগামীকাল বিকেল চারটায় দেখা হচ্ছে তাহলে।”
– ” আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তাহলে কাল বিকেলে তোমাকে পিকআপ করে নিবো। তাহলে এখন রাখি মিস চন্দ্রিকা। গুড নাইট এন্ড হ্যাভ এ সুইট ড্রিম!”
চন্দ্রিকাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই খট করে কল কেটে দিলো রূপ। আর রূপের এ কান্ডে ফোনের দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে পুনরায় টেবিলের ওপর সেটা রেখে দিল চন্দ্রিকা।

নিস্তব্ধ বিকেলের মধ্যপ্রহর‌। চট্টগ্রাম শহরের ব্যস্ত নগরীর মতো মানুষের ব্যস্ততাও সময়ের সাথে বেড়ে চলেছে। তার মাঝেই পাওয়া অবসর সময়টুকু পার করার জন্য রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি হয়ে বসে আছে চন্দ্রিকা আর রূপ। পড়নের সাদা এপ্রোন‌ টাও পাশে চেয়ারে ঝুলিয়ে রাখা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে হসপিটাল থেকেই সরাসরি চন্দ্রিকাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে এসেছে রূপ। দুজনেই চুপচাপ বসে আছে। কারো মুখে কোনো কথা না থাকলেও মেনু কার্ড থেকে চোখ সরিয়ে আড়চোখে চন্দ্রিকার দিকে তাকাচ্ছে রূপ।
এর মাঝেই একজন ওয়েটার‌ এসে উপস্থিত হতেই মেনু কার্ড থেকে মাথা তুলে তাকালো চন্দ্রিকা।
– ” ওয়ান কাপ বাটারস্কচ আইসক্রিম!”
– ” ওয়ান কাপ ব্ল্যাক কফি!”
ওয়েটার দুজনের অর্ডার নিয়ে পুনরায় চলে গেল।
– ” শুধুমাত্র এক কাপ ব্ল্যাক কফি খাওয়ার জন্যই কি আমাকে এখানে ডেকেছেন ডক্টর রূপ?”
রূপের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ক্ষীণ কন্ঠে জিজ্ঞেস করে উঠলো চন্দ্রিকা। আর সেটা কর্ণপাত হতেই রূপও চোখ তুলে তাকালো। দুজনের চোখাচোখি হতেই চন্দ্রিকার অস্বস্তিবোধ বেড়ে যায়। তাই কোনোমতে নিজের দৃষ্টিকে সংযত করতে নিচের দিকে তাকায় সে।
– ” কই না তো! আমি কি একবারও বলেছি যে আমি এখানে শুধু কফি খেতে এসেছি। আমি তো এসেছিলাম তোমার সাথে টাইম স্পেন্ড করতে। ঘোরাঘুরি, রাতের ডিনার করেই তবে বাসায় ফিরবো।”

– ” অসম্ভব!”
রূপের এমন ভাবলেশহীন প্রশ্নোত্তরে হতবিহ্বল হয়ে যায় চন্দ্রিকা। অবাক হয়ে একপ্রকার চিল্লিয়ে উঠে সে।
চন্দ্রিকার এরূপ আচরণ রেস্টুরেন্টের আশ পাশের টেবিলে থাকা লোকজন রূপ আর চন্দ্রিকার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে রয়েছে। আর সেটা খেয়াল করতেই ছোট একটা শ্বাস ফেললো চন্দ্রিকা।

জানালার গ্রিলের একাংশ হাতের মুঠোয় নিয়ে তাতে হেলান দিয়ে একমনে দাঁড়িয়ে আছে সিরাত। আধ ঘন্টা আগেই মাগরিবের আজান দিয়েছে। নামাজ পড়ার পর এসে ব্যালকনিতে দাড়াতেই বাইরের শীতল প্রবাহমান বাতাস এসে পুরো শরীর ছুঁয়ে দিয়ে যায় সিরাতের‌। একমনে দাঁড়িয়ে থাকলেও মস্তিষ্কের অভ্যন্তর ঘুরপাক খাচ্ছে ফাইয়াজের কথাগুলো।
– ” আচ্ছা রকস্টার সাহেব দেখতে কেমন? তার গম্ভীর কথাবার্তার মতো কি সেও গম্ভীর নাকি তার কথায় লুকিয়ে মাধুর্যের মতো সেও মাধুর্যময়!
ইশশ্ একবার যদি দেখতে পারতাম তাকে। কিন্তু তার তো উপায়ই নেই।”
নিজের অজান্তেই বিড়বিড় করছিল সিরাত‌। কিন্তু পরক্ষণেই মস্তিষ্কে বিষয়টা বোধগম্য হতেই টনক নড়ে তার।
– ” কি সব ভাবছিলাম আমি? তার কথা আমার মাথা থেকে সরাতে পারছি না কেন? কি করলে মিস্টার ফাইয়াজের কথা আমি মাথা দিয়ে ঝেড়ে ফেলতে পারবো।
উফফ্ মাথা কাজ করছে না।”
দরজায় পরপর কয়েকবার কড়া নাড়ার শব্দ পেতেই চমকে উঠে সিরাত‌। পেছনে ফিরে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই অপর পাশ থেকে নিশাত ঘরে প্রবেশ করে।
– ” কি ব্যাপার নিশাত, এতক্ষণ ধরে নিচে কি করছিলি?”

– ” এইতো রোজকার মতোই একটু বাগানে গিয়েছিলাম আপু। মিশ্মিতার সাথে কিছুক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করার পরেই হঠাৎ করে মাথাটা ধরেছে। তাই উপরে চলে এসেছি।”

– ” আচ্ছা ঠিক আছে। আমার সাথে আয়। আমি মাথায় বাম দিয়ে ম্যাসাজ করে দিচ্ছি।”
সিরাতের কথামতো গিয়ে খাটের উপর বসে পড়ল নিশাত। সিরাতও এগিয়ে গিয়ে নিশাতের মাথায় ম্যাসাজ করা শুরু করে।

মাঝ থেকে কেটে যায় আরো দুটো দিন। নানান ব্যস্ততায় দুটো দিন কাটে সবারই। ট্রাফিক জ্যামের মতো বিব্রতকর একটা অবস্থায় বসে আছে ফাইয়াজ আর ধ্রুব। সামনের রোডে পুলিশ সহ বিভিন্ন র‌্যাব বাহিনী বিশেষ কারণেই প্রতিটি গাড়ির লাইসেন্স সহ বিভিন্ন কাগজপত্র চেক করছে। যার ফলস্বরূপ বিরাট এক ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয়েছে।
একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে ফাইয়াজ বলে উঠে,
– ” ড্যাম ইট! আর কতক্ষণ এই ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে বসে থাকতে হবে?
আমার জাস্ট বিরক্ত লাগছে। ডিজগাস্টিং!”
বলেই বিড়বিড় করলো ফাইয়াজ।
একরাশ বিরক্তি নিয়ে পাশের গ্লাস খোলার উদ্দেশ্য হাত বাড়াতেই গ্লাসের অপর পাশ থেকেই একটু দূরেই হসপিটালের দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা সিরাতের উপর নজর পড়ে ফাইয়াজের।
– ” মিস সিরাত এখানে? হসপিটালে কি করছে সিরাত?”……………

#চলবে 🍂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here