#বিবর্ণ_বৈশাখে_রংধনু (২য় পরিচ্ছেদ)
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৮
সব শুনে আহান বলে,
“আই থিংক সামওয়ান হু জেলাস উইথ রুহানী। বিকজ, কেউ কি*ডন্যা*প দুই কারণে করবে। ফার্স্ট, ওয়ান্ট মানি এন্ড সেকেন্ড রিমুভ ফর্ম লাইফ! আই থিংক দ্যাট ইজ দ্যা সেকেন্ড ওয়ান। কোনো রেনসম চায়নি।”
আরহান হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“কিন্তু কে ওর প্রতি জেলাস হবে? আর কেনই বা হবে? ওর চাচাতো বোন রিহা, সে এখন এখানেই আছে। নিজের বাবা-মায়ের দেখাশোনা করছেম রিহা এটা করবে না। রিহা ছাড়া আর কে করতে পারে? আর রিহা যদি করতই তবে এতগুলো বছর রিহা অপেক্ষা করত না। রিহা অনেক আগেই করে ফেলতে পারতো। আর যদি রিহা চায় রুহানীর নামে থাকা পোপার্টি নিজের করতে, সেটা করলেও আরো ২-৩ বছর আগে সেটা করতে পারতো। দ্যাটস হোয়াই আমি রিহাকে সন্দেহ করতে পারছি না।”
আহান আবার চিন্তায় পড়ে গেল। কিছুক্ষণ পর সে কিছু একটা ভেবে চট করে বললো,
“হেই ব্রো, ডিড সামওয়ান লাভ ইউ?”
“মানে?”
“এমন কেউ যে তোমাকে ভালবাসে? তোমার পাশে রুহানীকে সহ্য করতে পারছে না? এমন কেউ আছে?”
আহানের কথা শুনে আরহান চিন্তায় পড়ে গেল। তখনই তার মাথায় সাফা নামটা আসে। সাফা তাকে প্রপোজ করেছিল। অনেকদিন যাবত সাফারও কোনো খোঁজ নেই। আরহান উত্তেজিত স্বরে বলে,
“আছে! আমার ফ্রেন্ড। বেস্টফ্রেন্ড। সাফা! ও আমাকে প্রপোজ করেছিল। তখনো আমি রুহানীকে বিয়ে করবো কী-না এই ব্যাপারে জানতাম না। ওকে ভালোবাসে কী-না তাও জানতাম না। সেদিন আমি সাফাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তারপর থেকেই সাফা আমার সাথে খুব একটা কথা বলতো না। তারপর তো আমার এংগেজমেন্টের পর সে হুট করে হাওয়া হয়ে গেল। আর তাকে খুঁজেই পেলাম না। তার কোনো খোঁজও পেলাম না। এখন জানিও না সাফা কোথায় আছে।”
“সাফার খোঁজ করো ভাইয়া।”
“কিন্তু সাফার এমনটা করে কী লাভ?”
আহান আরহানের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“পেয়ার অল জাং মে সব কুচ জায়েজ! সাফা তোমাকে ভালোবাসে। তোমার ফ্রেন্ডের সম্পর্কে এটা শুনতে তোমার হয়তো খারাপ লাগছে। বাট ফ্যাক্ট ইজ ফ্যাক্ট।”
আরহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে গেল। আহান বুঝলো তারও এখন যাওয়া উচিত।
_________
খাওয়া শেষ করে রুহানী কেয়ারটেকারের কাছে একটা কাগজ ও কলম চাইলো। কেয়ারটেকার বলল,
“নো। ইটস নট অ্যালাউড।”
রুহানী ইশারায় অনেক অনুরোধ করল যে সে কিছু বলতে চায় তাই কাগজ-কলম লাগবে। কেয়ারটেকার ভাবলো সত্যি হয়তো। তাই সে একটা নোটবুক এনে দিল। রুহানী কাগজে নিজের প্রয়োজনের কথা লিখতে লিখতে কৌশলে কেয়ারটেকারকে সরানোর প্রয়াস করল। যা তে সে সফলও হয়। লেখার মাঝেই রুহানী শুকনো কাঁশির অভিনয় শুরু করল। যা তার মাঝে মাঝে হয় এবং এর দরুণ গলায় খুশখুশ করে। কেয়ারটেকার জিজ্ঞাসা করলো,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
রুহানী ইশারায় পানি চাইল। কেয়ারটেকার খাবারের ট্রলির কাছে চেয়ে দেখে গ্লাসে পানি নেই। সে পানি আনতে বাহিরের রুমে গেলে রুহানি এই সুযোগে একটা কাগজ ছিঁড়ে নেয়। তারপর তাতে দ্রুত লিখে, “Please help me. I am k*idn*appe*d.”
লেখাটা শেষ করে কাগজটা দলা মোচড়া করে নিজের কাছে লুকিয়ে রাখল। অতঃপর আবার কাঁশতে শুরু করে। কেয়ারটেকার পানি দিলে রুহানী পানি খেয়ে নোটবুকটা তার হাতে দেয়। সেখানে লেখা ছিল,
“I have a dry cough problem. Arrange to get honey for me. I will drink 1 glass of warm water, salt, and honey every morning. (আমার শুকনো কাঁশির প্রবলেম আছে। আমার জন্য মধু আনানোর ব্যাবস্থা করুন। প্রতিদিন সকালে ১ গ্লাস গরমপানি, লবন ও মধু মিশিয়ে খাব।)”
কেয়ারটেকার সম্মতি দিয়ে নোটবুক ও কলম নিয়ে দরজা লক করে চলে যায়। কেয়ারটেকার চলে যাওয়ার পর রুহানী কাগজটা খুলে আর জানালার দিকে তাকায়। এই জানালাতে গ্রিল আছে সাথে থাই গ্লাস। রাফাত তাকে জানালার কাছে যেতে কখনো নিষেধ করেনি। কারণ রাফাত জানে রুহানী কথা বলতে পারে না। কাউকে ডাকতেও পারবে না। আর তার কাছে কোন খাতা, কলমও দেওয়া হয়নি, যে কারো কাছে সাহায্য চাইবে। তাই রাফাত নিশ্চিন্ত। রুহানী গিয়ে জানালার কাছে বসে। আর দেখতে থাকে রাস্তার কাছে কোনো পথচারী যাওয়া আসা করে কী-না। সচরাচর লন্ডনের মানুষজন রাস্তায় ময়লা কাগজ ফেলে না। তাই হুট করে কোন পথচারীর সামনে কোনো কাগজের দলা এসে পড়লে অবশ্যই সে সেটা তুলে খুলে দেখবে। প্রায় কিছুক্ষণ পর একজন পথচারীকে আসতে দেখল রুহানী। তাই সে চট করে কাগজটা দলা করে ছুঁড়ে ফেলল। পথচারীটি হঠাৎ একটা কাগজের দলা এসে পড়তে দেখে অবাক হয়। সে ঝুঁকে কাগজের দলাটা হাতে নিয়ে দেখল। তারপর দিক অনুসরণ করে তাকিয়েই দেখতে পেল, জানালার গ্রিলের কাছে একটা মেয়ে দাঁড়ানো। মেয়েটি হাত দিয়ে বারবার গ্রিলে আঘা*ত করছে। পথচারীটা কাগজের দলাটা খুলে সেখানের লেখাটা পড়ে। তারপর সে মেয়েটিকে হাতের ইশারায় আশ্বস্ত করে নিকটস্থ পু*লিশে ইনফর্ম করতে যায়।
রুহানী এবার জানালার ধারে বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। এবার সে উদ্ধার হবে। রাফাত কালকেই দেশে ফিরে গেছে। তাই এখন এতো দ্রুত আসতেও পারবে না।
_______
রহমত শেখ চোখ বন্ধ করে ব্যালকনির রকিং চেয়ারে বসে আছেন। আজ দুই সপ্তাহ ধরে রুহানী নিখোঁজ। রিহার যত্নে জাহানারা শেখ সুস্থ হলেও রুহানীর জন্য কষ্ট তো কমে না। ছোটো থেকে নিজের সন্তানের থেকে বেশি ভালোবেসে আগলে রেখেছেন। রিহা ব্যালকনিতে এলো। এসে বাবার মলিন মুখশ্রী দেখে কাঁধে হাত রাখল।
কাুধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকান রহমত শেখ। অতঃপর মেয়েকে দেখে বলেন,
“ওহ তুমি। বলো।”
“এমনি তোমাকে একটু বলতে এসেছিলাম। আমি কালকে লন্ডন যাব। তারপর পরশু ইটালি। এরপর আবার এখানে আসব। একটা আর্জেন্ট দরকার।”
“আচ্ছা যাও তবে।”
রিহা তার বাবার সামনে এসে বসলো। বাবার হাত ধরে বলল,
“রুহানীকে আমরা ঠিক খুঁজে পাব। এখন আমারও ওর প্রতি রাগ নেই। আমি দোয়াও করেছি।”
রহমত শেখ রিহার মাথায় হাত রেখে বলেন,
“রুহানী জানলে অনেক খুশি হবে। এটা জানার জন্য হলেও ওকে ফিরতে হবে।”
রিহা হালকা হাসে। তারপর বলে,
“হু। আচ্ছা আমি যাই। মায়ের ঔ*ষুধ দিতে হবে।”
“যাও।”
রিহা চলে গেলে রহমত শেখ পূর্বের ন্যায় বসে থাকে। তবে এবার তার ওষ্ঠকোণে খনিক স্বস্তিময় হাসির রেখা।
_______
রাফাতের সিক্রেট ফ্লাটে পু*লিশ এসেছে। সেই পথচারীটা সাথে করে নিয়ে এসেছে। কেয়ারটেকার এটা দেখে রাফাতকে মেসেজ করে পালিয়ে গেছে। পু*লিশ এসে রুহানীকে উদ্ধার করে পাশের রুম থেকে সাফাকেও অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যায়। রুহানী পু*লি*শ স্টেশনে রুহানী তার সম্পর্কে সব তথ্য দেয়। তাকে কি*ডন্যা*প করার পর থেকে সবটা বলে। তার চাচা ও আরহানের নাম্বারও দেয়। লন্ডন পু*লিশ তাদের সাথে যোগাযোগ করছে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
রুহানীর উদ্ধারটা অন্যভাবে হতো তবে চেঞ্জ করলাম।
রিচেক করা হয়নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।