বিবর্ণ বৈশাখে রংধনু পর্ব -০৭

#বিবর্ণ_বৈশাখে_রংধনু (২য় পরিচ্ছেদ)
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৭
রাফাত ফোনে লন্ডনে যেখানে রুহানী ও সাফাকে রেখেছে সেই বাসার কেয়ারটেকারের সাথে কথা বলছিল। তখনই তন্নি পেছন থেকে এসে ‘ভাউ’ শব্দ করে। আচমকা এমন হওয়াতে রাফাতের হাত থেকে ফোনটা ফ্লোরে পড়ে যায়। তন্নি খিলখিলিয়ে হেসে বলে,

“এমন একটা ভাব করলি যেন তোর চুরি ধরা পড়ে গেছে!”

রাফাত দ্রুত ফোনটা তুলে নিলো। কানে নিয়ে বলল,
“আই উইল কল ইউ লেটার। বায়।”

তন্নি ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“তুই ইদানিং কোথায় থাকিস রে? তোকে ফোন করলেও খুঁজে পাওয়া যায় না। আর দেখা তো যায়ই না।”

রাফাত খানিক তোঁতলানো স্বরে বলল,
“কই..কই? এইযে আমি তোর সামনে।”

“সেটা তো এখন। তিন দিন ধরে কই ছিলি?”

“এখানেই ছিলাম। টাইট সিডিউল ছিল। মাঝে একদিন রেস্টে ছিলাম।”

তন্নি রাফাতের কাছে এগিয়ে এলো। বেশ কাছে। যতোটা কাছে আসলে নিঃশ্বাসের শব্দ কানে আসে। রাফাতের চোখে চোখ রেখে নরম কণ্ঠে বলে,

“আমাদের সার্কেলটা হুট করেই ভেঙে গেল। তাই না? সাফা লাপাত্তা। আরহান তার স্টাডি ও জব নিয়ে বিজি। এখন তো রাজনীতিতেও যোগ দিয়েছে সেই সাথে রুহানীর খোঁজ নিয়ে বেশ টেনশনে। তুইও ইদানীং কোথায় হারিয়ে যাস! বাকি রইলাম আমি ও রাইদা। রাইদাও ভাইয়াকে নিয়ে বিজি হলেও ওর সাথে দেখা-সাক্ষাত হয়। একদিন হয়তো আমরাও হারিয়ে যাব।”

তন্নি কথাগুলো বলে নিষ্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। রাফাত এক পা পিছিয়ে গিয়ে অন্যদিকে দৃষ্টি হটিয়ে বলল,
“সবার লাইফেই ব্যস্ততা আছে। আমি তো দুইদিন ছিলাম না। কিন্তু আরহান ও সাফা? ওদের দূরে সরে যাওয়ার কারণ কিন্তু কোনো না কোনোভাবে মিলেই যায়।”

তন্নি নিজেকে সামলে নিল। তারপর লম্বা নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বলল,
“সাফা আরহানকে ভালোবাসত। আর আরহান রুহানীকে। সাফা বলেছিল সে প্রপোজ করবে। করেছিল কিন্তু রিজেকশন পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিল। কিন্তু এভাবে হাওয়া হয়ে যাবে তা কল্পনাও করতে পারিনি। ভালোবাসা সাকসেসফুল না হওয়াতে ফ্রেন্ডশিপটা নষ্ট হবে এটা চিন্তা করলেও মনে হতো এটা আরহান ও সাফা। কিছু হবে না। কারণ ওরা বেস্টফ্রেন্ড।”

“বাদ দে সেসব। আমার ফ্লাইট এখন। তোর কখন?”

“তোর সাথেই। লন্ডনের ফ্লাইট। কালকে আমি আর তুই ঘুরাঘুরি করব। তারপর আবার নেক্সট ফ্লাইটে চলে আসব।”

তন্নির কথায় রাফাত কিছুটা জোড়েই বলে ফেলে,
“না! আমার কাজ আছে।”

তন্নি আশেপাশে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলে,
“আস্তে রাফাত। তোর কাজ থাকলে সেটা এতো জোড়ে বলার কী আছে?”

“না মানে। কিছু না। আমার একটু কাজ আছে। তোকে সময় দিতে পারব না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। দিতে হবে না। এখন চল। ফ্লাইটের সময় হয়ে গেছে।”
“হুম চল।”

রাফাত দ্রুত পায়ে আগে আগে চলতে লাগল। রাফাত ভাবছে, ‘তন্নিকে কিছুতেই কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না।’ অপরদিকে তন্নি ভাবছে, ‘রাফাতের আবার কী হলো? এতো উইয়ার্ড বিহেভ করছে কেন? লন্ডনে ওর আবার কী কাজ? আগে তো কোনো কাজ থাকলে আমাদের সাথে শেয়ার করত। তাহলে?’
এসব ভাবতে ভাবতেই ওরা প্লেনে উঠার গাড়ির কাছে চলে যায়।

_________
পরেরদিন সকালে নাস্তার পর রুমে বসে আরহান ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিল তখন দরজায় টোকা পড়ে। আরহান ভিতরে আসতে বললে আহান ভেতরে আসে। আহান ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে বলে,

“হাই ভাইয়া। আমি আহান। তোমার কাজিন।”

“ওহ হাই। কেমন আছো?”

“গুড। ফাস্ট টাইম বাংলাদেশ আসলাম। এখানকার কিছুই চিনি না। তাই বাসায় আছি। কিন্তু বোরিং লাগছে তাই ভাবলাম তোমার সাথে এসে একটু আড্ডা দেই। তুমি কি বিজি? ”

আরহান হালকা হেসে বলল,
“নো। আই অ্যাম নট বিজি। প্লিজ সিট।”

আহান বসলো। অতঃপর রুমের চারপাশে নজর বুলিয়ে বলল,
“শুনেছি তুমি পাইলট। তোমার রুম দেখে তো এখন পুরোপুরি নিশ্চিত। ওয়ালের পেইন্টিং পোট্রেটটাও খুব নাইস। তুমি এঁকেছ?”

আরহান পেন্টিংটার দিকে তাকালো। রুহানীর আঁকা এটা। আরহান মুচকি হেসে বলে,
“না। আমি এসব আঁকতে পারি না। এটা তো রুহানীর আঁকা।”

আহান কিছু একটা ভেবে বলল,
“রুহানী? ইউর ফিয়ন্সে?”

“হুম।”

“সি ইজ মিসিং?”

আরহান কোনো জবাব দিল না। অপলক নয়নে দৃশ্যটার দিকে চেয়ে আছে। দৃষ্টিতে তার বিমর্ষতা। আরহানের মৌনতা ও দৃষ্টির বিষাদ আহান কিছুটা বুঝল। সে বলল,
“আই ওয়ান্ট টু হেল্প ইউ। আমার ডিটেকটিভ ওয়ার্ক ভালো লাগে। আমার ইউনিভার্সিটিতে টিচার্সরা আমাকে ডিটেকটিভ বলে। যদিও আমি ল এন্ড এথিক্সে পড়াশোনা করি।”

আরহান হেসে বলে,
“তুমি হেল্প করতেই পারো কিন্তু বেড়াতে এসেছ। এসব ঝামেলাতে না পরাই বেটার।”

“আই ওয়ান্ট ইট। চুপচাপ জিনিসটা বোরিং। সেরিনা তো সারাক্ষণ নিজের মতো রুম লক করে বসে থাকবে। আমার ভরসা তুমিই। তুমি পুরো ব্যাপারটা আমাকে খুলে বলো। টোটালি সব। কোনো ইনফো মিস করবে না। স্মল ইনফো কেন গিভ আস দা প্রিসিয়াস ক্লু।”

আরহান সবটা খুলে বলতে শুরু করে।

_______

লন্ডনে ভোরের আলো ফুটতেই রাফাত হোটেল থেকে বেরিয়ে সেই ফ্লাটে চলে যায়। তারপর প্রথমে সাফার ঘরে গিয়ে ওকে দেখে রুহানীর ঘরে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে রুহানী ঘুমাচ্ছে। চোখ-মুখ বেশ শুকনো তার। কাল রাতে খাবারে হাই ডো*জের ঘুমের ঔ*ষুধ ও অন্যান্য ঔ*ষুধ দিতে বলেছিল। কেয়ারটেকার বলেছিল, রুহানী ঠিক মতো খাবার খায় না আর ঘুমোয় না। অনেক ক্লান্ত হয়ে গেলে ঘুমোয়। রাফাত ওর পাশে বসলো। ওর মুখশ্রীতে এলোমেলো করে ভীড় জমানো চুলগুলো সরিয়ে দিল। তাতেই রুহানী খানিক নড়ে উঠলে রাফাত বুঝলো, হাই ডো*জের মেডিসিনও লো ডো*জের মতো কাজ করছে। কিছুক্ষণ নিরবে বসে থেকে সেখান থেকে বেরিয়ে এলো।

এদিকে তন্নি তৈরি হয়ে রাফাতের রুমের সামনে গিয়ে কয়েকবার নক করেও সাড়া পায় না। ফোন করেও ফোন বন্ধ পায়। তারপর হোটেলেে রিসেপশনে গিয়ে জানতে পারে, খুব সকালে রাফাত বেরিয়ে গেছে। তন্নি তাতে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে নাস্তা করতে যায়। একটা ফাঁকা টেবিলে খাবার অর্ডার দিয়ে এসে বসে। আরও কয়েকবার রাফাতের নাম্বারে ডায়াল করে রেসপন্স না পেয়ে চুপ করে বসে থাকে। একটু পর খাবার আসার পর খেতে শুরু করবে তখনি হঠাৎ কেউ একজন ধপ করে ওর সামনের চেয়ারে বসে। তন্নি ভড়কে উঠে চেয়ে দেখে রাফাত!
তন্নি বলে,

“তুই? কোথায় গিয়েছিলি? আমি তোর রুমের সামনে গিয়ে কয়েকবার ডাকলাম। তোকে কলও করলাম। তোর ফোন বন্ধ বলছে।”

রাফাত পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করে দেখালো। আর বলল,
“ব্যাটারি ডে*ড! খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল। তাই একটু জগিং করতে গিয়েছিলাম।”

তন্নি রাফাতের বেশভূষা দেখে সন্দিগ্ধ কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
“জগিং তাও এভাবে? এই পোশাকে? তোর তো জগিং করা স্বভাব নেই। তোর তো লেইটে ঘুম ভাঙার অভ্যাস।”

“অভ্যাস তো একদিন-দুইদিন বদলাতেই পারে। তাছাড়া জগিং বলা যায় না, একটু খোলা হাওয়ায়, শীতল, স্নিগ্ধ হাওয়ায় হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। ”

তন্নি মন খারাপ করে বলে,
“আমাকেও বলতে পারতি। একসাথে যেতাম। সকালবেলা হাঁটার মজাই আলাদা। আমি ভাবলাম তুই লেইট করে ঘুম থেকে উঠবি। তাই আমিও একটু বেশি সময় ঘুমিয়ে নিলাম।”

“আরে বাদ দে তো। এখন নাস্তা কর। তুই তো আমার জন্য কিছু অর্ডার করিসনি। আমি আমার জন্য অর্ডার করছি। ”

রাফাত গিয়ে অর্ডার করে আসে। টেবিলের কাছে আসতে আসতে নিজের ফোনের দিকে তাকায়। কাল রাতে ইচ্ছে করে ফোনে চার্জ দেয়নি। যাতে সকালবেলা তন্নি ফোন করে খুঁজলে যাতে ও বলতে পারে ফোনের ব্যাটারি ডেড ছিল! তন্নিকে বোঝানো খুব সহজ। একটু অভিমানী হলেও একটুতেই সেই অভিমান গ*লে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ,

আমার প্রথম বই “মেঘের আড়ালে উড়োচিঠি” প্রিঅর্ডার করুণ আপনাদের পছন্দের যেকোনো বুকশপে। রিচেক করা হয়নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here