#বিষাদময়_জীবন
#পর্ব২
#অধরা_ইসলাম
মায়া নিরব আর নয়নার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। বুঝে ওঠতে পারছে না নয়না খাবারের প্লেট কেন ফেলে দিলো? তবে কি মায়া কিছু উল্টাপাল্টা করলো? না তো মায়ার তো কিছুই মনে হচ্ছে না সে এরকম কোনো গন্ডগোল করেছে যাতে নয়না খাবার ফেলে দিবে। এমনিতেই মা’থা ব্যা”থার জন্য দাঁড়াতে পারছে না এর উপর নয়নার এরকম ব্যবহার মেনে নিতে পারছে না মায়া…..
—“এটা কেনো করলেন আপনি? আমার খাবারে বি*ষ কি করে মেশাতে পারলেন বলুন তো! আমি নিরবকে বিয়ে করেছি বলে সেজন্য আপনি এরকম করবেন সেটা তো ভাবিও নি আমি।”
নয়নার বলা কোনো কথাই যেনো মায়া বুঝে ওঠতে পারছে না। সে খাবারে অযথা বি*ষ কেনো মিশাবে? কিছুই বুঝছে না সে!
—“নিরব? তুমি না বলেছিলে তোমার বউ শান্ত শিষ্ট। তোমাদের বাচ্চা হয়ে গেলে তুমি ওকে ডির্ভোস দিয়ে দিবে একেবারে তাহলে?”
—“আমিও তো সেটাই বুঝে ওঠতে পারছি না নয়না মায়া এরকম করবে! এটা তো আমার ভাবনাতেও ছিলো না জানো?”
—“তোমরা বিশ্বাস করো আমি কিচ্ছু করিনি কিচ্ছু না!আমি একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের ক্ষতি কি করে করবো বলো?”
—“মিথ্যা বলো না তুমি মায়া। আমি দেখেছি তখন তোমাকে কি যেনো মিশিয়েছো তুমি? আর এই দেখো সেই প্যাকেট! এটা থেকেই তো তুমি মিশিয়েছো তাই না? আমি বাড়িতে সবে এলাম কি এলাম তুমি তাতেই শুরু করে দিলে তাও আবার আমাকে মা’র’তে চাচ্ছো!”
নয়নার কথা শুনে নিরব রে’গে গেলো। মায়ার কাছে গিয়ে থা*প্পড় দিলো মায়াকে। মায় থম মে*রে দাঁড়িয়ে আছে!
—“কি পেয়েছি আমি তোকে বিয়ে করে? হ্যাঁ কি পেয়েছি? কিছুই না! মা বেঁচে থাকতে মায়ের জন্য তোকে বিয়ে করেছি কারন মা’র তোকে পছন্দ ছিলো বলে। তোকে বিয়ে করে না পেয়েছি শশুড়বাড়িতে কোনো মর্যাদা আর না তুই আমাকে কোনো ভাবে সুখী করতে পেরেছিস! আর যেই আমি নিজের সুখের জন্য নয়নাকে নিজের করে আনলাম ওমনি তোর শুরু হয়ে গেছে না!”
—“নিরব বিশ্বাস করো আমি কিছু করিনি বিশ্বাস করো আমাকে। আমি নয়না নই যে এক মেয়ে হয়ে আরেক মেয়ের সংসার ভা’ঙবো।”
—“নয়না আরো কিচ্ছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই মায়া চলে গেলো। যদিও বা নয়না কিছু বলছিলো কিন্তু সে দিকে শুনে নি মায়া। মায়া বেশ বুঝতে পারছে নয়না তাকে নিরবের কাছে খারাপ বানানোর জন্য মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে! কিন্তু মিথ্যা অপবাদ না মায়া নিজেই নিজের মনে মনে ঠিক করে নিছে সে বাচ্চাটা পৃথিবীতে এলেই যেদিকে চোখ যায় সেদিকে চলে যাবে।
কি লাভ আর এখানে থেকে? দু’টো খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার জন্য? আল্লাহ তো আমাকে দু’টো করে চারটে হাত পা সবই দিছে আমি খেটে খাবো, চলবো। নিজে উর্পাজন করে তারপর সংসার চালাবো তবুও এখানে আর থাকবো না। বাচ্চা টা না থাকলে আমি নিজেই চলে যেতাম। কিন্তু এখন তো আমি একা নয় আর?আমার সঙ্গে তো একজন আছে তার কথাও যে ভাবতে হবে আমার। তার কথা ভেবেই তো এই ক’টা মাসগুলো থাকতে হবে সহ্য করে। বাপের বাড়ি যে যেনো থেকেও নেই! বুক চি*ড়ে বেরিয়ে আসলো এক চা’পা দীর্ঘশ্বাস! না পারছি কিছু করতে আর না পারছি সবটা সহ্য করে থাকতে। এই সময় তো মেয়েরা বাপের বাড়িতে আদর যত্নে থাকে আমিও থাকতাম যদি মা বেঁচে থাকতো তাহলে সে ভাগ্য আমারও হতো। কিন্তু আল্লাহ তাকেও নিয়ে নিছেন আমাকে একলা করে। বাপের বাড়িতে থাকতেও সৎ মায়ের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতাম নইলে যে সেদিন অ’ক’থ্য ভা’ষা গা*লা*গালি আর খালি পেটে থাকতে হতো আমাকে। বাবা শুরুতে মায়ার নতুন মা’কে কিছু বললেও আস্তে আস্তে যেনো বদলাতে৷ শুরু করে। নতুন মায়ের ঘরে যখন ছোটো ভাই আসে তারপর থেকে বারবার তো আর মায়ার সঙ্গে কথা বলা আমাকে দেখার কথা মনেই থাকে না! বোধহয় উনি ভুলে গেছিলো মায়া বলে উনার মেয়ে আছে। তবুও কোনো অভিযোগ ছিলো না আমার সেসব নিয়র। চুপচাপ মেনে নিতাম।রাত হলে আল্লাহর কাছে নিজের সকল কথার ঝুড়ি খুলে বসতাম ভেবেছিলাম সংসার জীবনে হয়তো সুখী হবো। আর হলোও ঠিক তাই আমার শাশুড়ি বেঁচে থাকতে আমি যেনো স্বর্গ সুখে ছিলাম। মায়ের অভাব শাশুড়ির ভেতর দিয়ে যেনো পূরন করতে পেরেছিলো খানিকটা হলেও। সে মা ও অসুখে চলে গেলো। তাও দিনকাল মন্দ নয় বেশ ভালোই কাটছিলো। কিন্তু কপালে যেনো সুখ কিছুতেই রইলো না আর! নিরবের জন্য মায়ার সুখী জীবন এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো! নিরবের রুম যেখানে আমি এতোদিন ছিলাম নিজের রুম ভেবে। সেই রুমে দখল নিয়েছে অন্য কেউ! আমি এখন রান্নাঘরের পাশে ছোট্ট একটা রুম আছে সেখানেই বসে আছি। পুরো বাড়িতে এখনো কেউ নেই আমি নিরব নয়না ছাড়া। ননদ এখনো বাড়িতে আসেনি আর শশুর মশাই বেড়াতে গেছেন বন্ধুর কাছে আসতে আসতে রাত হবে। ততক্ষণে একটু শুয়ে নিলাম। শরীরটা যেনো অল্পতেই ক্লান্ত লাগে!
চোখে মুখে পানির ছিটেফোঁটা পড়তেই মায়া ধড়’ফ’ড়ি’য়ে ওঠলো ঘুম থেকে! কখন যে চোখ৷ লেগে গেছিলো নিজেও বলতে পারবে না। সামনে দেখে নিজের শশুড় আর ননদ কলি দাঁড়িয়ে আছে।
—“কলি তুমি কি কিছু বলবে?”
–“ভাবী! এসব কি শুনছি আর কি দেখছি? ভাইয়া আরো একটা বিয়ে করেছে আর তুমি সেটা চুপচাপ মেনে নিলে কিচ্ছু না করে?”
–“হ্যাঁ রে তুই মেনে নিলি কি করে মায়া? কি ছেলে জন্ম দিলাম আমি এখন তো নিজেই কিছু বুঝে ওঠতে পারছি না। বাড়িতে ফিরে দেখি নিরবের রুমে তুই নেই ওই মেয়ে আছে নিরবকে জিগেস করাতে বলে ওর বউ। আমি কিছু বুঝে ওঠতে পারছিলাম না তোকেও পাইনি কতোবার ডাকলাম তারপর এই ঘরে এসে খুঁজে পেলাম তোকে। তারপরই কলিকে কল দিয়ে বাড়িতে ডেকে আনি।”
একের পর এক প্রশ্নে মায়া চুপটিই রয়েছে কোনো কথা না বলে। কি বলবে সে? বলার মতন তো কিছুই নেই…..
—“আমি তো কিছু করিনি যা করেছে তো নিরব করেছে। আমারই বা দোষ? আর কে বলেছে আমি মেনে নিয়েছি? হ্যাঁ এখন চুপ করে আছি তা বলে আমি মেনে নিইনি বাবা। সময় আসতে দিন সঠিক জবাব নিরব একদিন না একদিন ঠিকই পাবে! আপনার মনে আছে? ওকে আমি একবার কোনো মেয়ের সঙ্গে ধরেছিলাম? আর নয়নাই হচ্ছে সে মেয়ে! ওকে চিনতে একটুও ভুল হয়নি আমার। সেদিন ও ক্ষমা চেয়ে ছিলো আমার কাছে কিন্তু সেটা মিথ্যা! ও ভেতরে ভেতরে নয়নার সঙ্গে সম্পর্কে ছিলো। আর সেটা আজকে বিয়েতে পরিনত হলো।”
আমার শশুড় চুপ করে আছে। কি বলবে ভাষা নেই যেনো। বৃদ্ধ বয়সে ছেলের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। সে ছেলেই যে এভাবে তাকে ছোটো করবে ধারনাতেও ছিলো না উনার! ছেলরকে ইচ্ছে মতন কথা শুনিয়েছে কিন্তু বোধহয় তাতে নিরবের কিছু যায় আসেনি ঘা ছাড়া ভাব ছিলো আর সে মেয়ে তো যেনো দেখেও দেখেনি এরকম!
সবার চলে গেলে রুম থেকে আমি বেরোলাম। পেটে ক্ষিদে লেগেছে যে আছে তার যত্ন তো করতে হবে? ঘড়িতে বিকেল পাঁচটা বেজে গেছে। ড্রয়িং রুমের দরজাটা হাট করে করে খোলা আছে! বোধহয় ওরা বাহিরে গেছে। আমি কটা ভাত নিয়ে বসলাম কিন্তু খেতে পারলাম না গড়গড় করে পেট থেকে সব বের করে ব’মি করে দিলাম! কেমন যেনো অস্থির অস্থির লাগছে পুরো শরীরটা! নিজেকে বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে কলিকে ডাক দিলাম আমার সন্তানের একটুও ক্ষতি হোক তা আমি চাই না! এটা আজকে প্রথম হলে কিছু হতো না কিন্তু এই নিয়ে তিনদিন যাবত এরকম হচ্ছে….
তখুনি কলি এসে ডাক্তারকে খবর দিলো। ডাক্তার আসলো বাড়িতে। ডাক্তারকে দেখে চোখগুলো যেনো আমার ছা’না’বড়া হয়ে গেলো! উনি এখানে! এই একটা মানুষের জন্যই তো আমার আজকে এই অবস্থা! উনার জন্যই তো সবটা হয়েছে……
#চলবে……