#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_৩৮
#নবনী_নীলা
” আচ্ছা দাড়া, দেখছি। তুই দিনে দুপুরে ছায়া দেখে ভয় পাচ্ছিস? বলদ মাইয়্যা।”, বোলেই নানু আলমারির দিকটায় এগিয়ে যেতে লাগলো। রুহি এবার কি করবে? ওইখানে যদি আহানকে দেখে কিংবা আহান যদি ঐখানেই লুকিয়ে থাকে। কি হবে! শেষ সব শেষ।
নানু এগিয়ে গেলো আলমারির দিকে, রুহি এক্ষুনি হার্ট অ্যাটাক করে ফেলবে মনে হচ্ছে। নানু আলমারির কাছে গিয়ে চুপ করে গেলেন, নানুর নিরবতায় রুহি ভয়ে শেষ।
” কোথায়? কিছু নেই তো। কিসের ছায়া দেখেছিস তুই?”, বলেই ভ্রু কুঁচকে তাকালেন তিনি। রুহি যেনো প্রাণ ফিরে পেলো। আরেকটু হলেই হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতো। কিন্তু এইখানে নেই তো কোথায় গেছে আহান? রুহি আড় চোখে ঘরের এদিক সেদিক দেখতে লাগলো।
রহিমা খালা শুকনো গলায় বললো,” কি জানি, বাপু। কি দেখলাম।”
আমি টান মেরে রহিমা খালা থেকে ঝাড়ু নিয়ে বললাম,” খালা! কাজ করতে করতে মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার। আমার রুমটা আমি গুছিয়ে নিবো তুমি যাও।”
এরপর নানু রহিমা খালাকে নিয়ে বেড়িয়ে যেতেই রুহি চটজলদি দরজা লাগিয়ে বুকে হাত রেখে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। আহান আলমারির ঠিক উল্টো দিক থেকে বুকে হাত গুজে বেরিয়ে এলো তারপর বললো,” আমি আমার লাইফে কোনোদিন এমন সিচুয়েশনে পরিনি। কি হচ্ছে এগুলো?”
” এগুলো চোর পুলিশ খেলা হচ্ছে। আপনি চোর আর নানু পুলিশ।”
” যা চুরি করতে এসেছি সেটা না নিয়ে তো আমি যাচ্ছি না।”,
“আপনি কি আজকে এইখানেই থাকবেন?”, শঙ্কিত হয়ে প্রশ্ন করলো রুহি।
” আজ না এখন থেকে এইখানেই থাকবো।”
“হ্যা? এইখানে থাকবেন মানে কি?”, পুরো ভেবাচেকা খেয়ে বললো রুহি।
” তোমায় ছাড়া আমার চলবে না। আর তুমি তো যেতে চাইছো না আমার সাথে, তাই আমাকেই থাকতে হবে।”, বলতে বলতে তোয়ালে নিয়ে আহান ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
রুহি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। এখন থেকে বিপদরেখা সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে তাকে। যেদিন ধরা খাবে সেদিন যে কি হবে ভেবেই গলা শুকিয়ে গেছে রুহির।
_____________
” তুই ভালো করেই জানিস তোর প্রতি আমার অনুভূতিটা কি। সে তুই না বোঝার ভান করে ছিলি এতদিন। তাই বলে হুট করে বিয়ে করে ফেলবি?”, সৌরভ ভাইয়ের কথায় রুহি যেনো আকাশ থেকে পড়লো। এইটা আবার নতুন কোন ঝামেলা এসে জুটলো। এইসব শুনে যদি রাগের চোটে আহান বেরিয়ে এসে গন্ডগোল বাধিয়ে দেয়।
” ভাইয়া কি বলছেন এসব? শুধু শুধু মজা করছেন কেনো?”, বলেই একটা ঢোক গিললো রুহি। আজব এই আপদটাকে আজই আসতে হলো। এসেই ফালতু প্যাচাল শুরু করেছে। সৌরভ আমার দূরসম্পর্কের খালাতো ভাই। আগে এ বাড়িতে আসলেই প্রতিবার হলুদ গোলাপ নিয়ে আসতো। কিন্তু কে জানতো পেটে পেটে এই ছেলের কি চলে।
” তোর সত্যি মনে হচ্ছে আমি মজা করছি।”, বলেই রুহির দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।
সৌরভ ভাইয়ের এগিয়ে আসায় রুহির ভয় হচ্ছে না, রুহির ভয় লাগছে আহান কি করে বসে ভেবে। যদিও আহানকে বুঝিয়ে সুজিয়ে অন্যদিকে রেখেছে রুহি।
রুহি কাশতে শুরু করলো টপিক ঘুরানোর জন্য। তারপর বললো,” এসব বলে কি হবে? আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে।” কথাটা রুহি হাস্যরস ভাবে বললেও কথাটায় সৌরভ থেমে দাড়িয়ে পড়লো। তারপর একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,” ঠিক বলেছিস। যাই হোক তুই ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকবো।”
হটাৎ জোড়ে কিছু ফেলে দেওয়ার আওয়াজ পেয়ে রুহি আঁতকে উঠলো। হায় হায় কুম্ভকর্ণটা ক্ষেপে গেছে মনে হচ্ছে। সৌরভ শব্দের উৎসের দিকে এগিয়ে যেতেই রুহি খপ করে সৌরভের হাত ধরে ফেললো। তারপর বললো,” আরে বিড়াল! আজকাল বিড়ালের উৎপাত অনেক বেড়েছে। তোমায় যেতে হবে না।”
” ও আচ্ছা তাই বল। আচ্ছা নীচে চল, রূমে সারাদিন কি করিস।”, বলেই রুহির হাত ধরতেই রুহি হাত ঝাকিয়ে সরিয়ে নিয়ে গেলো। সৌরভ একটু চমকে উঠলো রুহির আচরণে। পরক্ষনেই রুহি বললো,” আমার না প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে আমি এখন ঘুমিয়ে পড়বো। তোমার সাথে সকালে কথা বলবো।”
” সবে তো সাড়ে নয়টা। আচ্ছা ঠিক আছে তুই রেস্ট নে। ঘুমানোর চেষ্টা কর।”সৌরভের কথায় রুহি হ্যা সূচক মাথা নাড়ল। সৌরভ গভীর দৃষ্টিতে কিছুক্ষন রুহির দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেলো। রুহি দৌড়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে ফেললো। পিছনে ঘুরতেও রুহির বুকের ভিতরে ধুক ধুক করছে। আহানের উপস্থিতি রুহি টের পেয়ে পিছনে ঘুরতেই দেখলো আহান তার অনেক কাছে দাড়িয়ে। রুহি দরজার সাথে ঘেঁষে দাড়ালো। আহানের চোখ মুখ গম্ভীর। আহান থমথমে গলায় বললো,” কে ঐ ছেলেটা ?”
রুহি চোখ পিট পিট করে তাকালো। তারপর শুকনো গলায় বললো,” আমার দূরসম্পর্কের খালাতো ভাই।”
আহান রুহির একপাশে হাত রেখে ঝুকে এসে বলল,” সে যেই হোক। তুমি মানুষকে এলাও করে কেনো তোমার কাছাকাছি আসার। ঐ ছেলেটা সাহস হলো কি করে তোমার হাত ধরার?”
আহানের কন্ঠে রাগ স্পষ্ট, আজব তার কি দোষ। রুহি অন্যদিকে তাকালো।
” আমাকে তো তুমি কিছু বলতে দিলে না জোর করলে। এখন নিজেও চুপ করে আছো। থাকো চুপ করে থাকো।” বলেই রেগে আহান সরে গেলো। রাগ ঝাড়তে না পারলে আহানের মেজাজ প্রচুর খারাপ হয়ে যায়।
আহান বিছানার একপাশে বসে চুপ করে নিজের রাগ সামলাচ্ছে। কারণ রেগে গেলে আহান কন্ট্রোল হারিয়ে বসে।রাগটা এক্ষণ আহানের নিজের উপর বেশী হচ্ছে। সেদিনের ঐ এগ্রিমেন্ট তাকে এতো ভুগাবে কে জানতো। আজ এতো কিছু দেখতে হচ্ছে। আর রুহির নানু !
আহানের ধারণা তিনি ইচ্ছে করেই ছেলেটাকে এনেছেন রুহির জন্যে। এটা ভেবেই রাগ তুঙ্গে উঠে বসে আছে আহানের।
রুহি কিছুক্ষণ চুপ থেকে আহানের রাগ কমার অপেক্ষা করলো। কিন্তু সে রাগ আর কি কমে? রুহির ইচ্ছে করছে আহানের রাগ ভাঙিয়ে দেয়। কিন্তু সাহস পাচ্ছে না। আবার এভাবে চুপ চাপ ভালোও লাগছে না। শেষমেস সাহস করে রুহি উঠে আহানের সামনে দাড়ালো কিন্তু আহান একবারো তাকালো না। আরে! কি রাগ রে বাবা! কিন্তু রুহি কি জিনিস আপনি তো জানেন না। রুহি আহানের গলা জড়িয়ে আহানের কোলে বসে পড়লো। আহান এতে খুব একটা প্রতিক্রিয়া দেখালো না। রুহি কোলে বসে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু আহানের দৃষ্টি বাহিরে।
রুহির মনে একটা ইচ্ছা জাগলো। আহানকে চমকে দিলে কেমন হয়। রুহি আস্তে আস্তে মুখ এগিয়ে এনে আহানের গালের কাছে এনে আলতো করে কিস করতেই আহান দৃষ্টি সরিয়ে রুহির দিকে তাকালো। রুহি আহানের দিকে তাকিয়ে বললো,” সরি আর এমন হবে না।”
” না না যাও গিয়ে হেসে হেসে কথা বলো। আমার সাথে তো দেখলাম না এভাবে হাসতে।”, বলেই আবার দৃষ্টি বাহিরে নিলো আহান। আহানের কথায় রুহি ঠোঁট উল্টে ফেললো। কি জেলাস রে বাবা! রুহি আহানের মুখের সামনে মুখ নিয়ে আহানকে দেখতে লাগলো। তারপর আহানের ঠোঁটের দিকে একটু এগিয়ে যেতেই আহান দৃষ্টি সরিয়ে রুহির দিকে তাকাতেই একটা ঘোরের মাঝে চলে গেলো। আহান এগিয়ে আসতেই আহানকে চমকে দিয়ে রুহি আহানের অন্যগালে কিস করলো। তারপর নীচের ঠোঁট কামড়ে হাসি থামলো। আহানকে টিজ করতে ভালোই লাগছে রুহির। দেখাযাক কতক্ষন রাগ দেখায় জনাব।
রুহির কাজে আহানের মেজাজ বিগড়ে গেলো। এতক্ষণ রাগগুলো দমিয়ে রেখেছে এবার রাগ দেখানোর পালা। আহান রুহির কোমড় ধরে বিছানায় শুইয়ে দিতেই রুহি চমকে তাকালো। তারপর রুহির দুই হাত শক্ত করে বিছানার সাথে মিশিয়ে ধরতেই রুহি একটা ঢোক গিললো। রুহি যে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছে সেটা তার বুঝতে বাকি রইলো না
” কাজটা একদম ঠিক করলে না তুমি। বাই দা ওয়ে আমি যতদূর জানি কিস করলে নাকি রাগ কমে যায়। লেটস সী হাও ইটস ওয়ার্ক।”, বলেই বাকা হাসি দিলো আহান। কথাটা শুনেই রুহির বুকের ভিতরটা কেপে উঠলো।কিছু বলার আগেই আহান অধর ছুয়ে দিলো। অনেক্ষন পর রুহি মুখ ঘুরিয়ে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলো। আর পারছে না সে।
আহান রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর একটু এগিয়ে এসে বলল,” আরে এতো তাড়াতাড়ি হাপিয়ে গেলে কি করে হবে? সুইট হার্ট! আমার রাগ তো কমেনি।”
রুহি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো আহানের দিকে। লোকটার মাথা খারাপ হয়ে গেছে মনে হয়। দম বন্ধ হয়ে যেতো আরেকটুর জন্য।রুহি ঠোটে চেপে না সূচক মাথা নাড়লো। আহান আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বললো,” নেক্সট টাইম থেকে এভাবেই রাগ কমাবো। সো বিকেয়ারফুল! আর হ্যাঁ জলদিই তোমাকে আবার মিস থেকে মিসেস রুহি রহমান করছি। জাস্ট ওয়েট করো।”
#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_৩৯
#নবনী_নীলা
আহান আরেকটু এগিয়ে এসে বললো,” নেক্সট টাইম থেকে এভাবেই রাগ কমাবো। সো বিকেয়ারফুল! আর হ্যাঁ জলদিই তোমাকে আবার মিস থেকে মিসেস রুহি রহমান করছি। জাস্ট ওয়েট করো।”
রুহি আহানের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো,” তাহলেই হয়েছে, ততদিনে আমার মাথার চুল পেকে যাবে, দাত পড়ে আমি বুড়ি হয়ে যাবো।” এর মাঝেই নানুর ডাক কানে এলো রুহির। রুহি উঠে দাড়ালো। আহান আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” চ্যালেঞ্জ করছো আমায়? ঠিক আছে, তাহলে তৈরি থেকো।” রুহি আহানকে মুখ বাকিয়ে রুম থেকে বের হতেই ছোটো মামার মুখোমুখি হলো। রুহি চটজলদি দরজা চাপিয়ে ফেললো। ছোটো মামা দরজার ফাঁকে দেখার চেষ্টা করতে লাগলো। রুহি দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,” মামা কিছু বলবে?”
” সে ভিতরে আছে?”, বলেই কি জানি একটা ঈশারা করলো।
রুহি চোখ পিট পিট করে তাকালো। তারপর বললো,” সে আছে মানে? কে… কে… থাকবে?”
” ঢং করতে হবে না আমার সামনে। আমি সব জানি।”
ছোটমামার মুখে এই কথা শুনে রুহির বুকের ভিতরটা ঢুক করে উঠলো। সব জানে মানে! রুহি কিছু না বোঝার ভান করে বললো,” মানে কি! তু…..মি কি জানো?”
” আহান ভিতরে আছে কিনা বল ওর সাথে আমার দরকার আছে।”, কথাটা ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলো ছোটো মামা। মামার কথায় রুহির পিলে চমকে উঠলো। অ্যহায় কি বলে মামা! রুহিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে ছোটো মামা বলে,” এমন বড়ো বড়ো চোখে তাকানোর কিছু হয় নি। আহানের সাথে আগেই কথা হয়ে আছে আমার। দেখি সর!”বলেই তিনি রুমের ভিতরে চলে গেলেন। রুহি খাম্বার মতন দাড়িয়ে আছে। মামা তাহলে সব জানে। বাহ্! বাহ্! এই লোকটা দেখছি তলে তলে আমার মামাকেও হাত করে নিয়েছে।
রুহি সময় নষ্ট না করে ছোটো মামার পিছু পিছু গেলো।
আহান ছোটো মামাকে দেখেই উঠে বসলো। তারপর বললো,” আরে আপনি কষ্ট করে আসতে গেলেন কেনো? আমাকে বললেই আমি যেতাম।”
ছোট মামা আহানের পাশে গিয়ে বসলো, তারপর বললো,” কোনো ব্যাপার না এইটা।”রুহি ভিতরে ঢুকে দরজাটা চাপিয়ে আড় চোখে তাকালো।
” তোমার দিদার সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনিও একমত।”,
রুহি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। এরা তলে তলে কিসব করে বেড়াচ্ছে। রুহি প্রশ্ন করে উঠার আগে আবার নানির ডাক কানে আসতেই রুহি তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে এলো পরে আবার নানু উপরে উঠে আসবে, তাকে খুজতে।সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে হটাৎ রুহির মাথাটা কেমন যেনো করে উঠলো। রুহি চোখ বন্ধ করে মাথাটা একহাতে ধরে অন্যহাতে দেওয়াল ধরে ধরে নামলো। ইদানিং তার মাথাটা কেমন যেনো করে মাঝে মধ্যে। এতো চিন্তায় চিন্তায় পাগল না হয়ে যায় কোনদিন।
রুহি নিচে নেমে দেখলো নুড়ি আর সৌরভ ভাইয়া গল্প করছে পাশে নানু বসে আছে। রুহি গিয়ে একপাশ চুপ করে বসলো।
______________________
রুহির নানুর সামনে বসে আছে মনোয়ারা বেগম ( আহানের দিদা) আর পাশে আহান। এখণ বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, গোধূলির রঙ ছড়িয়ে পরেছে চারিদিকে। তবে আকাশটার বুকে ঘন ঘন কালো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। মনোয়ারা বেগম আর আহান পাশাপাশি সোফায় বসে আছে আর কোনাকোনি সোফায় রুহির নানু বসে আছে। রুহির নানাভাই বাড়িতে নেই। ছোট মামা পাশের একটা চেয়ারে বসা। কেউই কোনো কথা বলছে না। রুহির নানু ভালোই বুঝতে পারছে ঠিক কি উদ্দেশ্যে এনারা এইখানে এসেছে।
সব ভঙ্গিমার শেষ করে রুহি নানু বললেন,” আশা করি সবটা জেনেই এইখানে এসেছেন?”
মনোয়ারা বেগম মলিন হাসি হাসলেন তারপর বললেন,” হুম, সবটা জেনেছি। ওরা একটা ভুল করে ফেলেছে। আর ভুলটা মোটেও ছোটো খাটো কোনো ভুল না। এর শাস্তি ওদের প্রাপ্য কিন্তু ওদের এভাবে আলাদা করাও তো ভুল।”
আহান আর ছোটো মামা নিরবে বসে আছে। নানু এক পলক আহানের দিকে তাকিয়ে বললো,” ওদের আমি আলাদা করিনি, এটা আপনার ভুল ধারণা। আহানের করা সাত মাসের বিয়ে নামক চুক্তি অনুযায়ী ওদের মধ্যে আর কোনো সম্পর্ক নেই। ওরা নিজেরাই নিজেদের থেকে আলাদা হওয়ার ব্যাবস্থা অনেক আগে করে রেখেছিল। সেখানে আমি কোনো ভুল করিনি।”
” ওরা তো নিজেরা নিজেদের ভুল স্বীকার করেছে। আর আপনি রাগ করে থাকবেন না। রুহিকে আবার আহানের কাছে ফিরে যাওয়ার অনুমতিটা দিয়ে দেন।”, অনুরোধ করে বললো মনোয়ারা বেগম।
” ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠছে না। যেখানে কোনো সম্পর্ক নেই, ডিভোর্স হয়ে গেছে সেখানে কি পরিচয়ে পাঠাবো আমি আমার নাতনি কে? যা হয়েছে, হয়েছে। ভুলে যাওয়াটাই ভালো”, মুখের গম্ভীর ভাব বজায় রেখে বললেন তিনি।
আহান নিরবতা ভেঙে বললো,” রুহিকে আমি আমার ওয়াইফের পরিচয়ে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই। তার জন্য আবার বিয়ে করতে হলে আমি সেটাতেও রাজি। যেই ভুলটা আমি করেছি, সেটা শুধরে নিতে চাই।”
” প্রয়োজন নেই। আমার নাতনি আমার কাছেই ভালো আছে।”, রুহির নানুর জেদ আহানের সহ্যের পরীক্ষা নিচ্ছে বটেই। আহান একটা নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করলো।
নীচে কি হচ্ছে রুহি কিছুই জানে না। সে নিজের রুমে ঘুমিয়ে ছিলো। ঘুম থেকে উঠেছে কিছুক্ষণ হলো। এমন অসময়ে রুহি কখনো ঘুমায় না তবে আজ শরীরটা তার খুব খারাপ লাগছিলো। রুহি উঠেছে কিছুক্ষণ হলো। মাথাটা কেমন জানি করছে। রুহি ঘুম ঘুম চোখে উঠে দাড়ালো।
আহান চুপ করে রুহির দিদার কথা শুনছে। উনি ওনার জেদে অটল। হটাৎ রুহির চিৎকার শুনতেই আহান চমকে উঠলো। আহান কোনোকিছু না ভেবেই ছুটে রুহির রূমে চলে এলো। সবাই রুহির চিৎকারে ঘাবড়ে গেলো।
__________________
হাসপাতালের সিটে বসে আছে রুহির নানু আর মনোয়ারা বেগম। চোখে মুখে তাদের চিন্তার ছাপ। আহান রূমের সামনে পায়চারি করছে।ভিতরে ডাক্টার রুহিকে দেখছে। আহানের ভয় হচ্ছে ভীষন। রুহির রুমে এসে রুহিকে অজ্ঞান অবস্থায় মেঝেতে পরে থাকতে দেখে আহান যেনো পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। রুহি মাথায় আঘাত পেয়েছে, সেই রক্ত আহানের সাদা শার্ট জুড়ে লেগে রয়েছে।
কিছুক্ষণ পর ডাক্টার বেরিয়ে এলো। তারপর বাহিরের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,” পেশেন্টের হাসব্যান্ড কে?”
আহান ছুটে ডাক্তারের কাছে গেলো। আহানের চোখে মুখে অস্থিরতা দেখে তিনি আহান কোনো প্রশ্ন করার আগেই বললেন,” অস্থির হবেন না। আপনার ওয়াইফ ঠিক আছে। তবে তিনি এখন ভীষন দুর্বল।” কথাটা শুনে আহান যেনো প্রান ফিরে পেলো।
রুহির নানু কাছে এসে প্রশ্ন করলো,” ওকে দেখতে যেতে পারি কি আমরা?”
” না, এখন না। আপনি [ আহানকে উদ্দেশ্য করে বললো] আর মহিলাদের মধ্যে একজন আমার সাথে আসুন।”
আহান আর রুহির নানু ডাক্তারের কেবিনে ঢুকলেন। তিনি চিন্তিত মুখে ওনাদের বসতে বললেন। আহান ডাক্তারের চিন্তিত চেহারা দেখে ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,” ইজ এভরিথিং ওকে?”
” আপনার ওয়াইফের একমাসের মাথায় মিস্ক্যারিজ হয়ে গেছে। যেহেতু অল্প সময়ের মধ্যে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তাই পেশেন্টের ক্ষতিটা কম হয়েছে। যেই ভাবে তিনি পা পিছলে পড়ে গেছেন এতে করেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।”
ডাক্তারের কথা শুনে আহান নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে রইলো, ভাবতেই বুকের ভিতরটা খা খা করে উঠলো। কিন্তু মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিলো। তারপর রুহি কথা মাথায় আসতেই আহান বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,” রুহি কি জানে যে…” এতটুকু বলেই থেমে গেলো আহান। রুহি নানু থমকে তাকিয়ে আছে। এতো বড়ো ক্ষতি হয়ে গেছে তিনি সেটা মানতেই পারছে না।
” দেখুন, কনসিভ করার দুই সপ্তাহের মাথায় প্রতিটা মেয়েই কিছু পরিবর্তন খেয়াল করে। আপনার স্ত্রী ও বুঝেছে, তাকে যদিও আমরা কিছুই জানাই নি তবে তিনি নিজে থেকেই বুঝে নিয়েছেন। সত্যি কথা বলতে ওনার মানসিক অবস্থা খুব খারাপ। হয়তো আগে থেকেই মানসিক চাপের স্বীকার তিনি। তাই ওনার দিকে একটু বিশেষ যত্ন নিবেন।” ডাক্তারের কথায় আহানের চিন্তা আরো বেড়ে গেলো। রুহিকে সামলানটাই এখন আহানের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
[ #চলবে ]
[ #চলবে ]