#বেলা_শেষে- ২
[০৩]
রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত ভূমি। অভি মিষ্টিকে নিয়ে বেড়িয়ে গেছে। যদিও মিষ্টি অভির সাথে যাবে না বলে নানা অজুহাত খুজছিলো বাট যেখানে ভূমির মতো একজন মানুষ আছে সেখানে যে কারো অজুহাত যে টিকে থাকবে সেটা শুধু কাল্পনিক। আদরের সময় যেমন কোমল ঠিক তেমনি কাওকে শাসন করার সময় সে বেশ কঠিন। ভূমির কঠোর নির্দেশে মিষ্টি অভির সাথে যেতে রাজি হয়। অভি মিষ্টিকে নিয়ে বেড়িয়ে যেতেই ভূমি তার ওষ্ঠদ্বয় চেপে হাসে। তারপর সেখান থেকে চলে যেতে নিলে আরাভ ওর হাত ধরে ফেলে। ভূমি তার চক্ষুদ্বয় কিছুটা ছোটছোট করে আরাভের দিকে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকায়। আরাভ বিনা নিঃশব্দে ভূমির হাত ধরে টান দিয়ে ওকে তার কোলে বসিয়ে নেয়। দু-হাতে ভূমির কোমড় জড়িয়ে ধরে ওর কাঁদে মাথা রাখে সে। ভূমি আরাভের থেকে নিজেকে ছাঁড়ানোর চেষ্টা করে বলে,
– কি করছো তুমি আরাভ। ছাড়ো আমাকে ওদিকে আমার অনেক কাজ পরে আছে।
-সারাক্ষণ তো শুধু কাজ কাজ-ই করো। এখন তো আমাকে দেওয়ার মতো তোমার সময় নেই। ভূমিকে আরো শক্তকরে নিজের সাথে চেপে ধরে আরাভ। ভূমি এতক্ষণ নিজেকে ছাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও এখন সে শান্ত হয়ে বসে। সত্যিই তো। আরাভ ভুল কিছু বলেনি। ভূমি এখন তো ওকে সময়ই দিতে পারে না। পরিবারের সব দিকটা দেখতে গিয়ে কখন যে আরাভের সাথে ওর একটা দুরত্ব তৈরী হয়েছে সেটা সে বুঝতেও পারে নি। নিজের স্বপ্ন নিজের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে পরিবারের মধ্যে বন্ধি হয়ে গেছে সে। যেখানে সে পরিবারের সকলের খেয়াল রাখে। শ্বশুড় শ্বাশুড়ি ছেলে আরাভ কে কখন কি খাবে না খাবে তার সব কিছুর খেয়াল রাখে সে। শুধু আরাভকে সময় দিতে পারে না সে। আগের মতো রাতের পর রাত জেগে চাঁদনি রাতে জ্যোৎস্না বিলাস করা হয় না দুজনের। বর্ষায় মন চাইলেই বৃষ্টিতে ভেজা হয় না দুজনের এক সাথে।
আগে আরাভ যখন গভীর রাতে অফিস থেকে ফিরতো তখন ভূমি ওর জন্যে খাবার টেবিলে বসে অপেক্ষা করতো। আরাভ আসলে দুজনে মিলে একসাথে গল্পকরে করে খাবার খেতে। ভূমি খাবার খাওয়ার ফাঁকেফাঁকে আরাভের অফিসের সব কাজ সম্বন্ধে জেনে নিতো। তারপর দুজনে একসাথে ডিনার শেষ করে ঘুমাতে যেত।সেখানেও ছিলো তাদের কত স্মৃতি। কিন্ত সময়ের সাথে সাথে সব কিছুরই পরিবর্তন হতে থাকে। অভিও বড় হতে থাকে। সারাদিন কাজ করে রাতে অভিকে নিয়ে পড়তে বসানো ছিলো ভুমির রুটিন। তারপর তাকে নিয়েই ঘুমিয়ে পরে ভূমি।
এখন যখন আরাভ অফিস থেকে ফিরে তখন সে দেখে ভূমি ঘুমাচ্ছে। সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমায় ভূমি তাই আর আরাভ তাকে ডাকে না। লাকি এসে আরাভের খাবার রেডি করে দেয় আর আরাভ খেয়ে ভূমির অপর পাশে শুয়ে ভূমির একটা হাত শক্তকরে ধরে ওকে দেখতে দেখতে ঘুমের রাজ্যে পারি জমায় সে। আর সকালে অফিসে যাওয়ার সময় ভূমি তার কাজে ব্যাস্ত থাকে। কখনো অভিকে নিয়ে ব্যস্ত আবার কখনো তার শ্বশুড় শ্বাশুড়িকে নিয়ে ব্যস্ত সে। আরাভকে তার ব্রেকফাস্ট দিয়ে অন্য কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরে। আরাভ চুপচাপ ব্রেকফাস্ট করে বেড়িয়ে যায় অফিসের উদ্দেশ্যে।
-কি হলো জানপাখি, কোন কথা বলছো না যে। ভূমির ঘাড়ে নিজের ওষ্ঠদ্বয় ছুঁইয়ে দিয়ে বলল আরাভ। ভূমির থেকে কোন জবাব না পেয়ে সে আবারও ভূমির ঘাড়ে চুমু খেয়ে নিলো।
-আ-আরাভ এটা ড্রয়িংরুম। ভূমির জড়ানো কন্ঠ।
-ও আচ্ছা, তাহলে চলো রুমে যাই। ঠোঁট চেপে হেসে বলল আরাভ। আরাভের এমন লাগামহীন কথাবার্তা শুনে ভূমি ওকে পিছনের দিকে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। ঘটনাক্রমে একটু পিছিয়ে যায় আরাভ। ভূমি ওর সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কড়া গলায় বলে,
-লাজলজ্জার মাথা খেয়ে নিয়েছো। এত বড় একটা ছেলের বাপ হয়ে এরকম লাগামহীন কথা বলতে লজ্জা করে না তোমার।
-না করে না। সোজাসাপ্টা জবাব আরাভের। বউয়ের সাথে প্রেম করতে আবার লজ্জা কিসের। বলেই ভূমিকে ধরার জন্যে হাত বাড়িয়ে দেয় আরাভ। আরাভের হাত বাড়িয়ে দিতেই দু-পা পিছিয়ে যায় ভূমি। চক্ষুদ্বয় ছোটছোট করে বলে,
– একদম অসভ্যতামি করবে না বলে দিলাম। কিছুদিন পর বুড়ো দাদু হইবা আর এখনো তোমার অসভ্যতামি গেলো না।
– এই রকম সুইট কিউট বউ যদি সবসময় পাশে থাকে তাহলে কি অসভ্যতামি যাবে বলো। আমার তো মনে হয় পুরনো প্রেমটা নতুন করে শুরু করে দেই। কি বলো জানপাখি। বলেই চোখ টিপ দেয় আরাভ। ভূমি লজ্জামাখা হাসি দিয়ে শাড়ির আঁচলে হাত পেঁচাতে পেঁচাতে রান্নাঘরের দিকে চলে যায়। তারপর সে ব্যাস্ত হয়ে পরে তার রান্নাঘরের কাজে।
আরাভ এতক্ষণ বসে বসে ভূমির কাজ দেখছিল। তারপর সে উঠে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যায়। ভূমির পাশে এসে দাঁড়াতেই ভূমি কাজ করার ফাঁকে বলে উঠে,
-আজ অফিস নেই তোমার??
-না, আজ বাসায় থেকে বউকে আদর করবো।
-নির্লজ্জের মতো কথাবার্তা। বিরবির করে বলে ভূমি। তবে সেটা আরাভের কানে ঠিকই পৌঁছালো। কিন্ত আরাভ কোন রকমের প্রতিক্রিয়া করলো না। সে সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে যখন বুঝতে পারলো ভূমির কাজ শেষ হতে অনেক সময় লাগবে। তখন সে নিজেই ভূমির সাথে কাজে হাত লাগায়। এতে ভূমি বারন করলেও কথা শুনে না আরাভ।
গাড়ির জানালায় হেলান দিয়ে বসে বাহিরের প্রাকৃতিক দৃশ্যবলি দেখছি আমি। গাড়ি চলার সাথে সাথে বাহিরে থাকা গাছ বাড়িঘর কেমন দ্রুত চোখের আড়াল হচ্ছে। মনে হচ্ছে তারা যেন দৌড়ে যাচ্ছে। বাহির থেকে ধমকা হাওয়া এসে পড়ছে আমার মুখের উপর। তাই মাঝে মাঝে দু-চোখ বন্ধকরে নিচ্ছি আমি। তখন যেন এই প্রকৃতিকে আরো ভালো করে অনুভব করছি। আর ভাইয়া সমনের দিকে তাকিয়ে একমনে ড্রাইভ করে যাচ্ছে।
হঠাৎ করে ব্রেক করায় সামনের দিকে ঝুকে পড়লাম আমি। আর তখন ভাইয়া তার এক হাত বাড়িয়ে দেয় আমার সামনে আর আমাকে আঘাত পাওয়া থেকে বাঁচিয়ে নেয়। ভাইয়ার এমন কান্ডে আমি অবাকের চরম সিমানায় পৌঁছে গেলাম। হা করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। ততক্ষণে মহাশয় আমাকে সোজা করে বসিয়ে দিয়ে নিজের সিটবেল্ট খুলতে খুলতে বলে,
-সিটবেল্ট বাঁধিস নি কেন?
আমি কোন জবাব দিলাম না। এখনো হা করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। আমার থেকে কোন জবাব না পেয়ে মাথা তুলে আমার দিকে তাকায় ভাইয়া। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে বলে উঠে,
-এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন? মুখটা বন্ধকরে নে। ভাইয়ার এমন শান্ত গলায় কথা শুনে আমি আপনমনে মাথা নাড়িয়ে মুখ বন্ধকরে নিলাম। তারপর আমার হাত তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,
– আমাকে একটা চিমটি কাটতো??
ভাইয়ার আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হাসলো। তারপর সে আমার হাত ধরে চিমটি কাটার নাম করে আমার তর্জনীতে কামড় বসিয়ে দিলো। তাতে আমি হালকা ব্যথায় কুকড়িয়ে উঠলাম। আর তখনি সে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দুই ঠোট প্রসারিত করে ভুবল ভুলানো হাসি দিলো। আমি হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার হাতে ভাইয়ার দুটো দাত বসে গেছে। চোখে একরাশ ক্রোধ নিয়ে তাকালাম ভাইয়ার দিকে আর ঝাঁঝালো গলায় বললাম,
-রাক্ষস নাকি তুমি হুম। ইশ আমার হাতের কি অবস্থা করছে।
-গাড়িতে বসে বসে স্বপ্ন দেখছিলি তাই তো তোর স্বপ্নটা ভেঙে দিলাম। ওকে ফাইন বল, এতক্ষণ কি স্বপ্ন দেখছিলি।
-কোন স্বপ্ন টপ্ন দেখছিলাম না আমি। ইনোসেন্ট মুখ করে বললাম।
ভাইয়া আমার দিকে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকালো। মানে তাহলে আমি তাকে চিমটি কাটতে কেন বললাম। ভাইয়ার চাওনি উপেক্ষা করে আমি গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম।কারন আমি কলেজের সামনে পৌঁছে গেছি। গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির সামনে এসে দাঁড়াতেই ভাইয়াও নেমে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো তারপর আমাকে ঞ্জান দিতে লাগলো। ওনার ঞ্জান দেওয়া শেষ হলে আমাকে সামনের দিকে ইশারা করে বলে,
– এবার যেতে পারিস।
আমি এক পা ও সামনে এগিয়ে গেলাম না। মৌনতা অবলম্বন করে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম। ভাইয়াও পকেটে দুই হাত গুজে দিয়ে তাকিয়ে রইলো কলেজের দিকে। এটাই সুযোগ, আমি ভাইয়ার হাতে একটা কামড় বসিয়ে দিলাম। ঘটনার আকস্মিক কিছুই বোধগম্য হয়নি তার। সে হিতাহিত ঞ্জানশুন্য হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। ততক্ষণে আমি দৌড়ে কলেজের ভেতরে চলে আসলাম। ততক্ষণ পর্যন্ত ভাইয়া সেখানেই দাঁড়িয়ে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।
চলবে,,,,,,
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।
[গল্প ভালো লাগছে না বুঝি। কোন রিসপন্স নাই যে!!!]