বেস্টু পর্ব ১

পাএ পক্ষের সামনে এক হাত লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে আছি।রাগে আমার শরীর জ্বলছে।না পারছি উঠে যেতে আর না পারছি বসে থাকতে।আমাদের সমাজেতো মেয়ে দেখতে আসে না।আসে পন‍্য দেখতে।হাত দেখবে পা দেখবে চুল দেখবে এমনকি হাত পায়ের নখও দেখবে।গায়ের রং এর কথাতো বাদি দিলাম।একটু হেটে দেখাও এভাবে হাটো ওভাবে হাতো ইত্যাদি ইত্যাদি।আর এই দেখা দেখি শেষ হলে শুরু হয় প্রশ্ন। আল্লাহ আমি বুঝিনা তারা এতো প্রশ্ন করে কিভাবে।আমার মনে হয় ভাইভার পরিক্ষা দিতে গেলেও এতো প্রশ্ন করে না।আর আমরা মেয়েরা কাপাকাপি করতে করতে তাদের প্রশ্নের উওর দিতে থাকি।

দেখলেন এতো কথার মাঝে তো আমি আমার নাম বলতেই ভুলে গেছি।মনে হয় দিন দিন আমি ভুলো মন হয়ে যাচ্ছি।
আমি মানহা খান । ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পরি।দেখতে মোটেও সুন্দর না।গায়ের রং উজ্জল ফর্সা।হাইট ৫”৪।

আজ সকালে আমার ফুপিমা আমাকে কল করে তাদের বাসায় আসতে বলল।আমি প্রথমেই না করে দেই।কেননা আজ আমার ঘুমানোর দিন।মানে আজ শুক্রবার।আর শুক্রবার মানেই নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে ঘুম।শুধু শুধুই ঘুম। কিন্তু পরে ফুপিমা বলল সে নাকি অসুস্থ।তাই ঘুম বাদ দিয়ে তার কাছে চলে এলাম।এসে দেখি ফুপিমা কাজ করছে।আমি ফুপিমাকে জিগ্গেস করলাম….

—-তুমি নাকি অসুস্থ???কি হয়েছে তোমার???পেশারের ঔষধ ঠিক মত খেয়েছ???

ফুপিমা মিষ্টি হেসে আমাকে আদর করে বলল…..
—- আমি ঠিক আছি।আমার মা টাকে আমার দেখতে মন চেয়েছে তাই এভাবে নিয়ে আসলাম। অসুস্থ না বললে তো আসতে না।

—তাই বলে এভাবে অনবে।জানো আমি কত ভয় পেয়েছিলাম।আমি তোমার সাথে কথাই বলবনা।

—ওরে আমার মারে আর মেয়ের সাথে রাগ করতে হবে না।আর এমন করে তোকে আনবো না।সরি….

আমি ফুপিমাকে জরিয়ে ধরে বললাম….
—ওকে।

—পাগলি যা এবার ফ্রেস হয়ে আয়।

—ওকে এই বলে আমি আমার রুমে চলে গেলাম।এখানে আমার জন‍্য একটা রুম সবসময়ই আলাদা করা।আমি আসলে ঐ রুমেই থাকি।

বিকেলে ফুপিমা আমাকে একটা শাড়ি পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিল। আমি কিছু জিগ্গেস করলে বলল….
আমারতো মেয়ে নেই।আর তোকেতো আমি আমার মেয়ের চোখেই দেখি।আমি কি আমার মেয়েকে একটুও সাজাতে পারবোনা??আমি আর কি করব ফুপিমার কথা শুনে চুপ করে রইলাম।আসলেই ফুপিমা,ফুপা আমায় নিজের মেয়ের মত মনে করে।আমাকে তারা অনেক আদর করে।আর নিহাদ ভাইয়া(ফুফাতো ভাই)তার কথা আর কি বলব,আমি আর সেতো পুরো টম এন্ড জেরি।

ফুপিমা আমাকে সুন্দর করে সাজিয়ে ঘোমটা দিয়ে নিচে এনে মেহমানদের সামনে বসিয়ে দিল।আর এতোক্ষনে আমি খেড় খেলাম থুক্কু বুঝতে পারলাম আমাকে দেখতে এসেছে।আমাকে আগে জানালে যে বাড়িতে ছোটখাট ঘূর্ণিঝড় হয়ে যাবে তাই এতো কিছু। আমি মাথা নিচের দিকে দিয়ে বসে আছি।কি আর করবো এখান থেকেতো উঠেও যেতে পারছিনা।আমি যদি এখানে কোন উলটা পালটা করি তাহলে সব দোষ যাবে আমার ফেমিলির উপর।বলবে তারা আমাকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারেনি।তাই রাগে দুঃখে এখানেই দাতে দাত চেপে বসে আছি।
তাদের দেখাদেখি আর প্রশ্নের পালা শেষ হলে আমি উপরে রুমে চলে গেলাম।

____________________

ফোনের কড়া রিংটনের শব্দে ঘুম ভাংলো আহাদের।ঘুম ঘুম চোখে ফোন রিসিভ করে বলল….
—জানু আমি ঘুমাচ্ছি প্লিজ এতো সকালে আমাকে ডিস্টাব করিস না।

ওপাস থেকে জঝালো কন্ঠে একজন মেয়ে বলল….
— ঐ বদমাইশ এখন কয়টা বাজে তোর খবর আছে??তুই আসছোস সকাল কইতে।বেবিরে ফোন দিতেছি ওর ফোন বন্ধ কেন???

—-আমারেতো বেবি বইলা রখছে আমি ফোন বন্ধ কইরা রাখতাছি তুই জানু ফোন দিলে বইলা দিস কেন বন্ধ কইরা রাখছি।

—ঐ কুত্তা জীবনেও তুই ঠিক হবি না।আর তুই সারারাত কি চুরি করতে গেছিলি যে এখন মরার মত ঘুমাইতাছোস???

—আরে জানু কইসনা কাল রাতে বেলায় হরর মুভি দেখে সারারাত ঘুমাতে পারি নাই।তাই এখন ঘুমাসতাছি।

—হা হা হা তুই দেখছস হরর মুভি।হা হা হা….

—-ঐ বান্দর ছেরি তুই থামবি।আমার ঘুমের ১৩টা বাজাইয়া আবার হাসতাছোস।ফোন রাখ….

—ঐ তুই আমার সাথে এভাবে কথা বললিনা দেখিস তোর খবর আছে।
এই বলে মেয়েটি ফোন কেটে দিল।

_______________________

আমি রুমে পায়চারি করছি আর একা একাই বিরবির করছি…..
—নিহাইদ্দা তোর আজকে খবর আছে।তোর ঘটকালি করা আমি ছুটাইটাছি।কোন বুইড়া বেটার জন‍্য তুই ঘটকালি করতাছোস আল্লাহ্ মালুম।
আমি নিচে গিয়ে জেনেছি যার জন‍্য আমাকে দেখতে এসেছে
সে নাকি ভাইয়ার বন্ধু।আর পাএকে বুড়ো বললাম আমি পাএকে দেখিনি।আরে দেখবো কি করে পাএতো আসেই নি।

আমি একা একাই বিরবির করছি আর রুমের মধ্যে পায়চারি করছি।কখন যে নিহাদ ভাইয়া রুমে এসেছে আমার সেদিকে কোন খেয়াল নেই।পিছন থেকে ভাইয়া বলল….

—-কিরে বুড়ি কার গুষ্ঠি বকে উদ্ধার করছিস।

আমি ভাইয়ার কথা শুনে পিছনে ঘুরেই ভাইয়াকে মারতে লাগলাম আর বললাম….
—তোর ঘটকারি করার শখ আমি জীবনের মত মিটিয়ে দিব।তোরে কে বলছিল ঘটকালি করতে??তা আবার তোর বন্ধুর জন‍্য।তোর বন্ধুতো তোর মতই ভাদাইম্মা হইবো।

ভাইয়া আমার হাত থেকে পালাতে পালাতে বলল….
—আরে আমার বন্ধু আমার মত না।দেখতে পুরো তামিল হিরো।জানিস ওর পিছনে কত মেয়েরা ঘুরঘুর করে।কিন্তু ও কাউকে পাত্তা দেয় না।ও মেয়েদের কে অনেক সম্মান করে।

—তোর সম্মানের খেতায় আগুন।আমার ওতো তামিল হিরোর দরকার নেই।দেখিস আমি যদি তোর ঐ ময়দা সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড এর সাথে ব্রেকআপ না করাইছি তাহলে আমার নামও মানহা খান না।হুহ….

—আরে তোর নাম তো পালটাবে খানের যায়গায় চৌধুরী হবে।মানহা চৌধুরী।

—ঐ আমার নাম পালটাইব কেন??আমার নামে খান আছে খানই থাকব।বুঝলি….

—তোর বিয়ের পর তো তোর জামাই এর নামের সাথেই মিলাইয়া তার সারনেম লাগাবি।তখন দেখুমনে খান থাকে না কি থাকে।

—দরকার পরলে জামাইয়ের সারনেমই পালটাইয়া দিমু।তারপরেও আমার টা পালটাম না।হুহ..

—তুই আমার যেই কিউট বোইন।তুই বললে তোর জামাই তাই করবে।

—-হুহ আসছে আমারে পটাইতে।তোর এই মিষ্টি কথায় কোন লাভ হবে না।তুই গেলি এখান থেকে।এমনি আমার মাথা গরম আছে আর গরম করিস না।

—আরে শুন আরহাম কথা বলবে তোর সাথে।আ….

আমি পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই বললাম….
— এই আরহামটা কে?? কোন গ্রহ থেকে আসছে??আমি কোন আরহাম টারহামের সাথে কথা বলতে পারবো না যা ভাগ এখান থেকে।

—বোইন চুপ যা আমার মান সম্মান সব ধুলোয় মিশাস না।পাগলামি করিস না।

আমি তেড়ে গিয়ে বললাম…..
— কি..আমি পাগলামি করতাছি??তুই আমাকে পাগল বললি??তুই পাগল তোর গালফ্রেন্ডরা পাগল।তোর ঐ বন্ধু পাগল।

—-পাগলের সাথে থাকতে হলে তো পাগলি হতে হবে।

পিছন থেকে কথাটা কেউ বলল। আমি ঘুরে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি একজন দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।তাকে দেখার সাথে সাথে আমার হাত পা কাপাকাপি করতে লাগল। আমি কাপাকাপা গলায় বললাম….

—-আ…পনি…….

#চলবে

#বেস্টু
#পর্ব_০১
#Ariyana_Nur

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন‍্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here