#বোকা_প্রেমিকা
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট১০
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
রেডি হয়ে শার্টের হাতা ফোল্ডার করতে করতে নিচ থেকে নামছিলো বর্ষণ।হঠাৎই তার চোখ পরে শুকিয়ে থাকা কালচে রক্তবিন্দুর ওপর।এত রক্ত?একটা মুরগীতে এতই রক্ত থাকে যে নীচতলা,সিঁড়ি,দোতলায় এভাবে পরে থাকবে!বর্ষণ রক্তবিন্দু গুলোকে অনুসরণ করতে করতে বর্ষণের ঘরের পাশের ঘরের সামনে গিয়ে ঠেকে।রক্তবিন্দুর ছাপ গুলো এখানে এসে শেষ হয়েছে।বর্ষণ ঘরে ঢোকার জন্য দরজা খুলতে যাবে ঠিক সেই সময় জল ভুতের মতো হাজির।আকষ্মিকতায় বর্ষণ ভয়ে চমকে ওঠে।
” কি হলো? ”
” ক..ক…কিছু না।”
” এখানে কি করছো?”
” ঘরটা দেখে আগ্রহ জাগলো তাই আর কি…”
” ঘরটার ভেতর যেতে কৌতুহল জাগলো?”
” exactly”
” কিছুই নেই ঘরটাতে।পুরোনো আসবাব আর ধুলোবালি ছাড়া।এগুলো তোমার না দেখলেও চলবে।তোমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
জলের কথা শুনে বর্ষণ ঘড়ি দেখে।আসলেই অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে যায় বর্ষণ।বর্ষণ চলে গেলে জল যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস ফেলে জল।এই ঘরটা এভাবে অরক্ষিত রাখা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।আজই ঘরটাতে তালা দিতে হবে।আর রক্তগুলোও মুছে ফেলতে হবে।আচ্ছা!এই রক্তবিন্দুগুলো নিয়ে কি বর্ষণের মনে একটুও প্রশ্ন জাগলো না?জল মুরগীর রক্ত বলে চালিয়ে দিলো আর তাই বর্ষণ মেনে নিলো?বর্ষণ কি পরে থাকা রক্ত বিন্দুতে জল জল ঘ্রাণ পায় নি?জল বিষাদের দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের ঘরে যায়।ঘরের দরজা খুলতেই ভেতরে জমে থাকা গ্যাস আর সিগারেটের গন্ধ মিশে এক বিদঘুটে গন্ধের বায়ু বেরিয়ে আসে।জলের জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এতক্ষণে তার অস্বস্থি শুরু হয়ে যেত।কিন্তু জল সম্পুর্ন স্বাভাবিক।ঘরটায় ঢোকে ঠাস করে দরজা আটকিয়ে দেয় সে।ঘরে গিয়ে দুইটো সিগারেট শেষ করে বের হয় জল।আলমারি থেকে একটা পুরোনো কাপড় নেয় জল।বাথরুম থেকে একটা পুরোনো বালতিতে পানির সাথে খানিকটা স্যাভলন লিকুইড মেশায় জল।ফিনাইল বা লাইজল দিয়ে মানুষ সাধারণত ঘরের মেঝে পরিষ্কার করে। জল এর আগে কখনো এই বাড়িটার মেঝে পরিষ্কারের প্রয়োজন বোধ করেনি।তাই লাইজল বা ফিনাইল কখনো কেনা হয় নি জলের।তাই খালিকটা স্যাভলন লিকুইড আর ডিটার্জেন্ট পাউডার দিয়েই কাজ চালিয়ে দিচ্ছে জল।
দীর্ঘদিন এভাবে অবহেলা আনাদরে পরে থাকায় রক্তবিন্দু জলের সাথে অভিমান করে পাথরের মতো শক্ত হয়েছে।হাজার ঘষামাজার পরেও এগুলোর উঠার কোনো নাম গন্ধ নেই।খানিকক্ষণ পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখলে উঠবে হয়তো।যা ভাবনা তাই ই কাজ।জল তাই ই করে।রক্তবিন্দু গুলোর ওপরে পানি ছিটিয়ে দেয় যাতে সেগুলো পানিতে ভিজে খানিকটা নরম হয়।কিন্তু এতটা জায়গা পরিষ্কার করতে জলের বেশ অনেকটাই পরিশ্রম হবে।এবং তা জল ইতিমধ্যে আন্দাজ করতে পেরেছে।কিন্তু ব্যাপার না!মানুষের সন্দেহ কাটাতে এই টুকু পরিশ্রম করাই যায়। জল রক্তবিন্দুকে নরম হওয়ার জন্য খানিকটা সময় দেয়।এর ফাঁকে জল রিফ্রেশমেন্টের জন্য আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে নেয়।সিগারেট খেতে খেতে এখন এমন দশা হয়েছে যে ক্লান্ত লাগলেই জলের সিগারেট খেতে হয়।
________
জল আর বর্ষণের বিবাহিত জীবনের দুমাস হয়ে গেলো।কিন্তু এখনো জল বর্ষণকে নিজের কাছে আসতে দিলো না।প্রতিরাতেই যখন জলকে বর্ষণ নিজের করে পেতে চায় ঠিক তখনই জল বিয়ের প্রথম রাতের মতো বর্ষণকে দূরে সরিয়ে দিয়ে জল দৌড়ে ছাদে চলে যায়।ছাদের যাওয়ার রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ থাকায় বর্ষণও আর সাহস পায় না জলকে অনুসরণ করার।ভোর রাতের দিকে ছাদ থেকে ফিরে জল।সেই প্রথম রাতের মতো ঘুমন্ত বর্ষণের দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাঁদে।তারপর হঠাৎ করেই যখন বর্ষণের কাজের কথা মনে পড়ে জল তীব্র ঘৃণা নিয়ে বর্ষণের থেকে দূরে সরে যায়।আর নিজের ঘরে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে।সকালে বর্ষণের আগেই সে ঘুম থেকে জেগে যায়।বর্ষণকে আর পাঁচটা বিবাহিত নারীর মতোই জেগে তোলে।নাস্তা বানায়।একসাথে নাস্তা করে।তারপর বর্ষণ অফিসে চলে যায় আর জল বাসায়ই বসে থাকে।কখনো কখনো জলের ক্লাস থাকলে তখন জল বর্ষণ একই সাথে বেরোয়। প্রতিদিনই জলের এমন আচরণে বর্ষণের মনে খানিকটা সন্দেহ জাগে।একটাই কথা ঘুরেফিরে বর্ষণের মনে আসতে লাগে যে জল আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো নয়।সে মানসিক ভাবে কিছুটা বিকারগ্রস্থ। আদিবাকে বর্ষণ বিয়ের কয়েকদিন পরেই বলে দিয়েছে যে সে বিয়ে করেছে।তাই আদিবার সাথে রিলেশনটা কন্টিনিউ করা বর্ষণের পক্ষে আর সম্ভব না।আদিবা ভেতরে ভেতরে বেশ অনেকটাই আঘাত পায়।তারপরও মুখে হাসি নিয়ে সম্পর্কের সমাপ্তি টানে আর বর্ষণকে নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা জানায়।বর্ষণ আদিবার সাথে যোগাযোগ রাখতে চেয়েছিলো।আদিবা তাতে সায় দেয় নি।জবাবে বলেছে,,,
” আপনি মানুষটা বড্ড মায়াবী।নতুন করে আপনার মায়ায় জড়াতে চাই না।”
আগে জলের সাথে প্রায়ই বর্ষার কথা হতো।নিকে থেকেই ফোন দিতো মেয়েটাহ।কিন্তু আজ অনেকদিন হলো বর্ষা ফোন দিচ্ছে না জলকে।জল নিজে থেকে দুবার কল দিয়েছিলো ওয়েটিংয়ে পেয়েছে।বর্ষণকে বর্ষার কথা জিজ্ঞাসা করলে বর্ষণ জলকে বলে,,,
” ফোন হাতে পাওয়ার পর কখনো আমার বোন বিনা প্রয়োজনে আমায় কল দেয় নি।আর তোমায় প্রায় প্রতিদিনই কল দিতো।কথা হতো তোমাদের।তুমি আমায় ওর থেকে ভালো জানো।ও আমার নাম মাত্র বোন। আত্মার মিল তো রয়েছে তোমার সাথে।”
বর্ষণের কথাটা শুনে জলের খুব ভালোলাগে।অজান্তেই হেসে দেয় সে।বর্ষণ হাস্যোজ্জ্বল জলকে দেখে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।এই প্রথম জলের মুখে বর্ষণ নির্ভেজাল হাসি দেখতে পেলো।যার মাঝে কোনো কৃত্রিমতা নেই।জল বর্ষাকে আবার কল দেয়।এইবার বর্ষা কল রিসিভ করে।
” ব্যপার কি?কল দাও না।আবার আমি কল দিলেও ওয়েটিংয়ে পাই।”
” ভাইয়া কাছে আছে?”
” হু।”
” তাহলে তুমি একটু দূরে সরে যাও।”
” কেন?”
” তোমার প্রশ্নের উত্তর দেবো তো!”
বর্ষার কথায় জল বর্ষণের থেকে দূরে যায়।তারপর বর্ষাকে বলে,,,
” এসেছি দূরে। ”
” আগে প্রমিজ করো ভাইয়াকে কিছু বলবে না।”
” আচ্ছা প্রমিজ।”
” আপু আমি একজনের সাথে রিলেশনে গিয়েছি।”
জল অবাক হয়।এইটুকু বাচ্চা মেয়ে রিলেশনে গিয়েছে!নিজেকে স্বাভাবিক করে মজার ছলে বলে,,,
” অহ আচ্ছাহ!তাই এত ওয়েটিংয়ে থাকে ফোন?”
” জ্বী।”
লাজুক কন্ঠে বলে বর্ষা।
” ছেলে কেমন?”
” মাশাআল্লাহ।”
” তোমার কাছে তো লাগবেই।ভালোবেসেছো…”
থেমে যায় জল।বর্ষণকেও জল এভাবে ভালোবাসতো।ভালো খারাপ সবটা মিলিয়ে ভালোবাসতো।কিন্তু বর্ষণ জলের ভালোবাসার কদর করলো না!জল দীর্ঘশ্বাস ফেলে।জলকে চুপ থাকতে দেখে ফোনের ওপাশ থেকে বর্ষা বলে,,,
” আপু?”
বর্ষার ডাকে জলের ধ্যান ভাঙে।জল হেসে বলে,,
” ভালোবাসা অপরাধ না।কিন্তু সবাই এটার কদর করতে পারে না।সাবধানে থেকো।আবেগের বশে পথভ্রষ্ট হইয়ো না।”
” হলেও তুমি আছো না?টেনে হিঁচড়ে সঠিক পথে আনবে আমায় আবার।”
চলবে,,ইনশাআল্লাহ