#বোকা_প্রেমিকা
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট১২
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
পরিকল্পনা মোতাবেক বর্ষা কলেজ শেষে রিশাদের সাথে বেরোয়।রিশাদ ওকে রিশাদের বন্ধু সাদের বাসায় নিয়ে যায়।পুরো বাসা ফাঁকা আজ।ফাঁকা বাসায় দুটো ছেলের মাঝে বর্ষা খুব অস্বস্তি বোধ করে।ভয় হচ্ছে ওর।উল্টোপাল্টা কিছু হবে না তো?বর্ষা ভীত ও সংকীর্ণ কন্ঠে বলে,,,
” রিশাদ তুমি না বলছিলে শুধু তুমি থাকবে।তাহলে এ কে?”
” সাদ।আমার বন্ধু।”
” উনি এখানে কি করছেন?”
রিশাদ কিছু বলে না।সাদের দিকে তাকিয়ে মুচকী পিশাচ হাসি দেয়।বর্ষার কাছে ব্যাপারটা মোটেও সুবিধার লাগছে না।
” আ…আ…আমি বাড়ি যাবো”
” কিসের বাড়ি যাওয়া বেবি?তুমি বাড়ি গেলে আমাদের মজা দেবে কে সোনা?”
বর্ষা পালানোর জন্য দৌড় দিচ্ছিলো।বর্ষাকে খপ করে ধরে কথাটা বলে রিশাদ।কিন্তু এ তো রিশাদ নয়।বর্ষা তো এ রিশাদকে ভালোবাসেনি।বর্ষা যে রিশাদকে ভালোবেসেছিলো সে ছিলো বর্ষার চোখে সবচে সুন্দর মনের মানুষ।যার মধ্যে কোনো হিংস্রতা নেই।কিন্তু এই রিশাদের চোখে,মুখে,কন্ঠে,আচরণে তীব্র হিংস্রতার ছাপ পাচ্ছে বর্ষা।এই মুহুর্তে নিজেকে পৃথিবীর সবচে অসহায় প্রাণী মনে হচ্ছে বর্ষার।বর্ষা কাকুতি মিনতি করছে নিজেকে বাঁচাতে।কিন্তু তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই রিশাদ আর সাদের।হিংস্র হায়নার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে দুজন বর্ষার ওপর।পালাক্রমে চালায় শারীরিক নির্যাতন।বর্ষা তখন গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট করছিলো।নির্যাতন সইতে না পেরে এক পর্যায়ে বর্ষা জ্ঞান হারায়।নিজেদের লালসা মেটানো শেষ হলে দুই বন্ধু বর্ষাকে ছাড়ে।বিধ্বস্ত বর্ষাকে রাতের আঁধারে বাড়ির সামনে রেখে যায় রিশাদ।
মেয়ে এত দেরিতে এভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরতে দেখে মিসেস বেলী মেয়েকে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে।বর্ষা কষ্ট গুলো বুকে পাথর চাপা বলে,,,
” কি গরম পরেছে আর কলেজ প্রাইভেট শেষে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম।তাই আর কি…”
কথাটা বলে জল এক মুহুর্তও অপেক্ষা করে না।নিজের ঘরে গিয়ে সে ঠাস করে দরজা আটকিয়ে দেয়।আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখে। সারা শরীরে জানোয়ার গুলোর হিংস্রতার ছাপ।খুব ঘেন্না করছে বর্ষার নিজের শরীরটাকে।এই প্রথম সে মাকে মিথ্যা কথা বললো।বলবে না ই ই বা না কেন?সত্যটা তো প্রকাশ করার মতো না।আজ বর্ষা ধ*র্ষিতা।আর ধ*র্ষিতাদের এই সমাজে কোনো জায়গা নেই।রিশাদ পারলো বর্ষাকে এভাবে ঠকাতে?বিবেকে বাঁধলো না ওর?কলিজা কেঁপে উঠলো না একবারও এই কাজটা করতে?ইজ্জত মেয়েদের সবচে বড় সম্পদ।আর আজ বর্ষা তাই ই হারালো।জল পই পই করে বলে দিয়েছিলো আবেগের বশে কোনো ভুল কাজ না করতে।আর বর্ষা আজ তা ই ই করলো।বুকটা ফেটে যাচ্ছে বর্ষার।এই মুহুর্তে বর্ষা মরতে পারলে বেঁচে যায়।কিন্তু আত্মহত্যা তো মহাপাপ।কিন্তু এভাবে বেঁচে থাকাও তো বর্ষার পক্ষে সম্ভব নয়।ওয়াশরুমে গিয়ে অঝোর কাঁদে বর্ষা।শাওয়ারের পানি আর চোখের নোনা জল মিশে একাকার।গ্রীষ্মের উষ্ণ বায়ুরও বোঝার সাধ্যি নেই যে বর্ষা কাঁদছে।
________
বর্ষণ আর আদিবা রেস্ট্রুরেন্টের ভেতর বসে আছে।দুজনের মাঝেই শুনশান নিরবতা।যদিও আদিবার নীরবতাটা বিরক্তের।অনেকটা মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই সে এসেছে বর্ষণের সাথে দেখা করতে।
” আধ ঘন্টা ধরে এভাবেই বসে আছি।কি জন্য ডেকেছো বলবে?”
বর্ষণ খানিকটা চমকে যায়।সামনে থাকা ড্রিংকসটায় চুমুক দিয়ে বলে,,
” বলছি।”
” তাড়াতাড়ি।”
” আসলে আদিবা আমার মনে হয় কি জল স্বাভাবিক নয়।ওর আচার আচরণ ব্যবহার বার বার আমায় বলে দিচ্ছে ও সাইকো।”
” তো আমি কি করবো?জলের মেন্টাল প্রবলেম তো তোমার উচিত ব্যাপারটা আমার সাথে শেয়ার না করে জলকে নিয়ে কোনো ভালো ডাক্তারের চেম্বারে যাওয়া।আমায় যে বললে আমি কি এখন জলকে ঠিক করতে পারবো?”
” তুমি কিন্তু খুব রুড বিহেভিয়ার করছো আদিবা!”
” এর থেকে বেশি কি বা আশা করো তুমি আমার থেকে?তোমার সাথে ব্রেকাপের পর আমি মুভ অনের চেষ্টা করছিলাম।ওই রকম মেন্টাল সিচুয়েশনে কোনো মেয়েই চাইবে না তার এক্স বয়ফ্রেন্ডের ছায়া তার জীবনে আসুক।আর সেখানে তুমি আমি আধ ঘন্টা যাবৎ একটা রেস্ট্রুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছি।”
বিরক্তি নিয়ে অনর্গল কথাগুলো বলে আদিবা।বর্ষণ চুপ করে আছে।আদিবা বুঝে গেছে বর্ষণের আর কিছু বলার নেই।সে উঠে চলে যায়।
________
কয়েকদিন ধরে বর্ষা প্রচন্ড মানসিক চাপের মধ্যে আছে।রিশাদ বর্ষাকে আবার রু*মডেটের কথা বলেছে।যদিও সেদিনের ঘটনার পর থেকে বর্ষা রিশাদের সাথে যোগাযোগ করেনি।কয়েকদিন আগে হুট করে রিশাদ বর্ষাকে মেসেজ দিয়ে রু*ম ডেটের কথা বলে।বর্ষা শুরুতেই না করে দেয়।তারপর রিশাদ বর্ষাকে একটা ভিডিও পাঠায়।ভিডিওতে বর্ষা যা দেখে তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সে।ভিডিওতে বর্ষা স্পষ্ট দেখতে পারছে সেদিন তার ওপর কিভাবে নির্যাতন চালিয়ে জানোয়ারগুলো।ঠাস করে বর্ষার হাত থেকে ফোনটা পরে যায়।মুখ চেপে কাঁদতে লাগে সে।এতটা নিচে নামতে পারে কিভাবে রিশাদ!বর্ষা কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা হাতে নেয়।স্ক্রিনে রিশাদের হুমকির মেসেজটা ভেসে উঠেছে।
” তুই যদি আবার না আসিস তাহলে ভিডিওটা ভাইরাল করে দেবো।”
বর্ষার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়।কি করবে সে?রিশাদের কাছে এভাবে বারবার ধরা দেবে না….!রিশাদ যদি ভিডিওটা ভাইরাল করে দেয় তাহলে সমাজ তো বর্ষা,বর্ষার পরিবারকে এক ঘরে করে দেবে।
________
বেশ কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড গরম পরেছে।প্রকৃতি পুরো নিস্তব্ধ।গরমে তারাও নেতিয়ে পরেছে।বিকালের দিকে আকাশের কালো মেঘের উপস্থিতি পৃথিবীতে আশার সঞ্চার করে।মেঘের সাথে তাল মিলিয়ে গাছের পাতা গুলো ঝড়ো হাওয়ায় দুলতে লাগে।জল ক্লাস করে এসে পড়েছে।শাওয়ার নিয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে।শাওয়ার নিতে গিয়ে জলের মনে হলো কেউ যেন ফুটন্ত পানি ট্যাংকিতে ঢেলে দিয়েছে।আর জল সেগুলো দিয়ে শাওয়ার নিচ্ছে।বর্ষণ এখনো আসে নি।জল নিজের ঘরে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে শুয়ে আছে।এরই মধ্যে আকাশে মেঘের ধরণী কাঁপানো গর্জন শুনতে পায় জল।দৌড়ে দোতলার বারান্দায় যায় জল।অন্ধকার হয়ে এসেছে।খুব তাড়াতাড়ি হয়তো বৃষ্টি নামবে।জলের ভাবনা শেষ হতে না হতেই আকাশ ভেঙে পানি বর্ষিত হতে শুরু করে।জল আর দেরি করে না।বাগানে চলে যায় বৃষ্টিতে ভেজার জন্য।যদিও তা নাম মাত্র বাগান।একটা কৃষ্ণচূড়া,বকুল,শিউলি গাছ ছাড়া কোনো গাছ বাগানে নেই।
বর্ষণ বৃষ্টিতে আধভেজা হয়ে বাসায় ঢোকে।ড্রয়িংরুমে থাকতেই চিৎকার দিয়ে জলের কাছে টাওয়েল চায়।কিন্তু জলের কোনো সাড়া পায় না।বাধ্য হয়ে ভেজা শরীর নিয়েই ওপরে যায় বর্ষণ। টাওয়েল খুঁজে বের করে গা মুছতে মুছতে জানালার কাছে যায় বর্ষণ।বাগানে কারও উপস্থিতি টের পায় বর্ষণ।যদিও মুষলধারে বৃষ্টির জন্য বাগানে কে তা বর্ষণ স্পষ্ট ভাবে দেখতে পারছে না।কিন্তু বাগানে কেউ লাফিয়ে লাফিয়ে বৃষ্টিতে যে ভিজছে এটা বুঝতে বর্ষণের বাকী রইলো না। বর্ষণ গা মুছে ড্রেস চ্যাঞ্জ করে নিচে যায়।ড্রয়িংরুমের জানালা দিয়ে বাগানের অংশটুকু বেশ ভালোভাবেই দেখা যায়।বর্ষণ জানালার কাছে গিয়ে বাগানে জলকে দেখতে পায়।জল লাফিয়ে লাফিয়ে হেসে বৃষ্টিতে ভিজছে।সেই আগের মতো।ঠোঁটে নির্ভেজাল হাসি।চোখে মুখে বাচ্চামি।সম্পর্কের শুরু দিকে জল এভাবে বর্ষণকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছিলো।বর্ষণের ধারণা ছিলো আগেকার জল আর এখনকার জলের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ।কিন্তু না,বর্ষণ ভুল।জল বদলে যায় নি।নিজেকে আড়াল করেছে।রুক্ষতার শক্ত খোলসে নিজের কোমলতাকে আড়াল করে রেখেছে সে।মেয়ে মানেই মায়ের জাত।আর কোমলতা নারীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই কোমলতা,সরলতা,মায়ার জন্যই নারী সৃষ্টিকর্তার এত সুন্দর সৃষ্টি।
চলবে,,,,ইনশাআল্লাহ্