#ভালবাসার_প্রহর
#লেখনীতে_মায়া_মনি
#পর্ব১৯
শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কেবিনে বসেও জেরিনের কপালে ঘাম জমেছে।পিনপতন নিরবতা পুরো কেবিনে।আশরাফ মেহরাব উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে।তার এমন চাহনি দেখে বিভ্রান্ত জেরিন।আশরাফ মেহরাব কপালের ভাজ খানিকটা গাঢ় করে প্রশ্ন করল,
—-“কোনো সমস্যা? স্পর্শের সাথে কী সম্পর্ক তোমার?”
জেরিন বেশ অপ্রস্তুত হয়ে বলে,
—-“ঠিক বুঝতে পারছি না স্যার।”
আশরাফ মেহরাব হতাশ নিশ্বাস ফেলল।অধৈর্য গলায় বলেন,
—-“না, না এটা আমি মানতে পারছি না।আমার ছেলের সাথে কী সম্পর্ক সেটাই তুমি বলতে পারছো না!মেহরাব পরিবারে এতো দুর্বল মেয়ে কী ভাবে থাকবে?”
জেরিন জেনো এবার আরো বিভ্রান্ত এবং বিস্মিত হলো।বিভ্রান্ত হয়েই বলে,
—-“জ্বী দুর্বল মেয়ে?”
আশরাফ মেহরাব এবার গাল ফুলিয়ে নিশ্বাস নিয়ে বলেন,
—-“স্পর্শ মেহরাব আমার ছোট পুত্র।অতি সুদর্শন এবং মেধাবী নাম করা ব্যক্তি। আমি যতদূর জানি তোমাদের মাঝে একটা ভাব-ভালবাসা চলছে।”
জেরিন বেশ লজ্জিত হয়ে ব্যস্ত গলায় বলে,
—-“বিষয়টা এমন না স্যার।স্পর্শ সত্যি খুব ভালো ছেলে।”
—-“তাহলে বিষয়টা এমন না কেনো?ভালো ছেলে হলে তো আমি যেটা বললাম, সেটাই হওয়া উচিত।”
আশরাফ মেহরাবের এমন সহজ শুলভ কথায় জেরিন বেশ বিস্মিত। কী বলা উচিত সত্যি ভেবে পাচ্ছে না।আশরাফ মেহরাব অবাক করে হেসে দিলেন। জেরিন তা দেখে আরো অবাক।বেশ বিস্ময় নিয়ে জেরিন বলে,
—-“আপনি হাসছেন কেনো স্যার?”
আশরাফ মেহরাব হাসতে হাসতে টেবিলের উপর দিয়ে হাত বাড়িয়ে জেরিনের মাথায় টোকা মেরে বলেন,
—-“স্পর্শ লন্ডন যেয়ে আমাকে তোমার কথা বলেছে।সন্দেহ সেদিনই হয়েছিল যেদিন প্রথমবার স্পর্শ তোমাদের কথা বলেছিল।তোমাকে দেখে ওতোটা বুঝতে পারিনি কিছু। তোমার বাবা যে সাথে ছিল্বন।আসলে আমার ছেলেটা খুব কাজ পাগল।ক্যারিয়ার নিয়েই তার ব্যস্ততা। শুভ আমার বড় ছেলে সব সময় বলে, তুই জীবনেও একটা ফুল কিনে আনতে পারবি না কোনো মেয়ের জন্য।তোমাকে সেদিন একবার দেখেই আমার ভালো লেগেছে তবে এখনো ভালো লাগা বাকি আছে আরো।স্পর্শ আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছিল, কাল রাতে আমাকে তোমার কথা বলেছে।আমি প্রথমে অবাক হয়েছিলাম সেও মেয়েদের প্রতি আগ্রহ?”
আশরাফ মেহরাবের হাসি দেখে এবার জেরিনের মুখেও হাসি এলো।স্পর্শের সম্পর্কে এমন কথা শুনে বেশ মজা পেলো জেরিন।নিচুস্বরে জেরিন বলে,
—-“আপনার ছেলের মুখে শুনে ছিলাম আপনাদের কথা।সত্যি খুব অবাক করা আপনি।”
আশরাফ মেহরাব হাসি থামিয়ে গম্ভীর মুখে বলেন,
—-“তাহলে এই হলো কথা?স্পর্শ আমার কথা ও বলেছে তোমাকে?”
নিমিষেই জেরিন অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।তা দেখে আশরাফ মেহরাব শব্দ করে হেসে উঠে।জেরিন সত্যি অবাক মানুষটা কে দেখে । বাবার সাথে তেমন মিল নেই স্পর্শের
.
.
.
.জেরিনের সাথে বিগত অনেক দিন থাকার পর স্পর্শের মনে হলো এ বিষয়টা বলা প্রয়োজন একজন কে।পরিবারের একজন হলেও জানা উচিত।লন্ডন এসেই বেশ ভাবনায় ছিল সে।আসার সময় জেরিনের চোখে অদ্ভুত টান দেখেছে স্পর্শ। যার অর্থ “আপনাকে ছাড়া বিষণ একা আমি” স্পর্শ বনিতা ছাড়াই আশরাফ মেহরাব কে কল দিলো।কয়েকবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো।
—-“হ্যালো বাবা?”
—-“বলো মাই সান?”
স্পর্শ নিঃশব্দে হেসে বলে,
—-“কেমন আছো তোমরা?”
আশরাফ মেহরাব বেশ সচ্ছল কন্ঠে বলেন,
—-“সবাই ভালো আছে, তুই কেমন আছিস?”
—-“ভালো বাবা, আসলে অনেক ভালো আছি।”
আশরাফ মেহরাব সন্দিহান গলায় বলেন,
—-“কী ব্যপার সান?অনেক ভালো আছো কারণ?”
স্পর্শ হেসে বলে,
—-“বাবা তোমাকে কিছু বলার ছিল।খুব গুরুত্বপূর্ণ! ”
আশরাফ মেহরাব এবার বেশ সিরিয়াস হলেন,
—-“হ্যা বল?এনিথিং রং? ”
—-“নো বাবা! আই থিং আ’ম ইন লাভ উইথ আ বিউটিফুল গার্ল।”
আশরাফ মেহরাব জুস খাচ্ছিলেন।ছেলের মুখে এমন কথা শুনে বেশ বিষম খেলেন।চোখ গোল হয়ে এলো উনার।স্পর্শ মৃদু ব্যস্ত হয়ে বলে,
—-“ঠিক আছো বাবা?”
আশরাফ মেহরাব এক গ্লাস পানি খেয়ে নিশ্বাস নিলেন,
—-“আমি ঠিক আছি তুই বল?”
স্পর্শ গলা পরিষ্কার করে বলে,
—-“বাবা মেয়েটার নাম জেরিন জাহান।তুমি দেখেছো একবার।সেদিন হার্টের প্যাসেন্ট দেখতে বলেছিলাম তোমায়, জসীম সাহেব?উনার মেয়ে জেরিন।বাবা আমি জানি না কীভাবে কী হয়েছে, শুধু জানি আমার জীবনে মেয়েটার অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ স্থান আছে।আশা করছি আর বলতে হবে না।”
আশরাফ মেহরাব এতো সময় সব শুনে এখন সে কাৎ হয়ে সোফায় পরে আছেন।কাজ পাগল ছেলেটাও প্রেমে পড়েছে?আশরাফ মেহরাব কাশি দিয়ে বলেন,
—-“বুঝতে পেরেছি বাবা তুই চিন্তা করিস না।”
বাবাকে জানিয়ে স্পর্শ বেশ স্বস্তির নিশ্বাস নিলো।একটা চিন্তা জেনো কমে গেলো তার।স্পর্শ জানে আশরাফ মেহরাব আর যাই হোক স্পর্শের পছন্দ কে না করবেন না।স্পর্শ ফোনের স্ক্রিণে জেরিনের একটি ছবি এনে আপন মনে দেখতে লাগে।
___________________________
দুদিন শেষ আজ!স্পর্শের আসার অপেক্ষায় অস্থির মন।জেরিন নিজেই অবাক এমন বেহায়াপনা দেখে মনের।কবে থেকে মনটা এতো খারাপ হয়ে গেলো?সাথে সাথেই মন উত্তর দিলো,সে তো আমারই! প্রকৃতি নিজেই স্পর্শ কে আমার করেছে।এক বৃষ্টিময় বর্ষার রাতেই তো দুজনের জীবন এক হয়ে গেছে।দুহাতে চেপে ধরল বাম পাশে থাকা হৃদয়।ক্রমাগত বেড়েই চলেছে এই অস্থিরতা। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে জেরিন।দৃষ্টি বাড়ির সামনে থাকা বিশাল গাড়ি চলাচল করা রাস্তায়।এখন রাত ১০টা বাজে।স্পর্শ কী জেগে আছে এখন?জেরিন বোকার মত একটা প্রশ্ন ভাবলো!হয়তো কাজে ব্যস্ত তবে,ফোন কেনো বন্ধ?সেই সন্ধ্যা থেকে ফোন করেও পাচ্ছে না স্পর্শ কে।মনটা যে আর শান্তি দিচ্ছে না।বুক টেনে নিশ্বাস নিলো জেরিন।হঠাৎ দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে চমকে উঠে।পিছন ফিরতেই দম আটকে আসে।অস্থির হয়ে পরে পুরো শরীর।থরথর করে কাপতে শুরু করে জেরিন।ভয়ে চোখ ঝাপ্সা হয়ে এলো।হাসান দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে।ভয়ে জানালার পর্দা খামছে ধরে।হাসান বাজে হাসি দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।জেরিন কাপতে কাপতে বলে,
—-“আপনি এখানে কেনো?আব্বু….!”
জেরিনের চিৎকার শুনে হাসান হেসে উঠে দাঁড়ায়।ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
—-“চিৎকার করে লাভ নেই।তোমার মা নিজেই আমাকে এখানে পাঠিয়েছে।শুনলাম তোমার নাগর নাকি দুদিন নেই?ইশ এমন জানলে আরো আগেই চলে আসতাম।”
ভয়ে জেরিনের চোখে পানি চলে এলো।ধরা গলায় বলে,
—-“কেনো আসছেন? দরজা খুলুন বলছি!”
হাসান চোখ গরম করে জেরিনের কাছে এলো।শক্ত গলায় বলে,
—-“একদম চুপ! কী হ্যা, সমস্যা কী?আমার বউ তুই আমি আসবো না?তিন বছর আগে যেটা করেছি আজ আবার ও করবো।এতো দিন না করে অনেক ছাড় দিয়েছি।আজ আমার অধিকার বুঝেই ছাড়বো।”
—-“নাহহহহ!আব্বু????”
চিৎকার করেও কেউ এলো না রুমে।জসীম সাহেব আসবে কী করে উনি তো বাইরে গেছেন লতিফ সাহবকে নিয়ে।বাসায় শুধু সেলিনা এবং নাজমুন বেগম।জেসমিন তখন মাত্র বাসায় ফিরলো মার্কেট থেকে।জেরিনের এমন চিৎকার শুনে বেশ অবাক হয়ে রান্নাঘর থেকে ছুটে আসা সেলিনা কে প্রশ্ন করল,
—-“কী হয়েছে সেলি?জেরিন চিৎকার করছে কেনো?”
সেলিনা বেশ অস্থির হয়ে বলেন,
—-“জানি না আপা,হাসান এসেছে শুনলাম আমি চা বানাতে গেছি। জেরিনের চিৎকার শুনে আমিও এলাম।”
সোফায় বসে আছে নাজমুন বেগম।চেহারায় বেশ গম্ভীর ভাব।দুজনের কথায় তিনি বলেন,
—-“হাসান আজ এখানে থাকবে।হাসান জেরিনের রুমেই আছে।এ’বিষয় আমি আর কিছু বলতে বা শুনতে চাই না।”
হাসান দুহাত চেপে ধরতেই জেরিন কেঁদে দিলো।এক প্রকার ধস্তাধস্তি শুরু হলো।জেরিনের চিৎকার জেনো তীব্র হলো।তা শুনে সেলিনা বলেন,
—-“নাজমুন তুই কী পাগল হয়েছিস?স্পর্শ বাসায় নেই আর তুই?এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছ্র না।”
সেলিনার কঠিন কথা শুনে নাজমুন বেগম কিছুই বলল না।জেসমিন রুমের দরজায় ধাক্কা দিতে লাগে।কিন্তু ভিতর থেকে যে বন্ধ।দরজা না খোলায় জেসমিন উচ্চস্বরে বলেন,
—-“নাজু স্পর্শ জানলে কিন্তু ছেড়ে দিবে না।জসীম কোথায়?”
ধস্তাধস্তির এক পর্যায় জেরিন চিৎকার করে কেঁদে উঠে।হাসানের সাথে জেনো পেরেই উঠছে না।হাসান জেনো আজ অধিকার বুঝেই নিবে।টানা টানির এক সময় জেরিন গলায় আচড় লেগে যায়।ছিড়ে যায় জামার কিছু অংশ।বিছানায় চেপে ধরেও হাসান তেমন কাছেই যেতে পারছে না।জেরিন আর পারছে না।হাতের ব্যথা থেকে স্পর্শকে হারানোর ভয় বেশি কাঁদাচ্ছে। চোখ বন্ধ করতেই স্পর্শের সেই কথা মনে এলো।”কখনো যদি নিজেকে একা লাগে,আমাকে প্রয়োজন মনে হয় শুধু ডাকবেন।আমি চলে আসবো আপনার পাশে।”জেরিন স্পর্শের নাম ধরে চিৎকার করে হাসানকে ধাক্কা মারে।হন্তদন্ত হয়ে টানাটানির মাঝে দরজা খুলে জেরিন।রুমের বাইরে পা রাখতেই হাসান পিছন থেকে হাত চেপে ধরে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে।এখানে নাজমুন বেগম এবং অন্যরা আছে তা বেমালুম ভুলে গেছে হাসান।জেরিনের হাল দেখে সেলিনা এবং জেসমিন তাজ্জব বনে গেলো।হাসান কে আবারো সব শক্তি দিয়ে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো।হুশ ভুলে মেইন দরজা খুলতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলো জেরিন।এক সেকেন্ড ও সময় লাগেনি গায়ের গন্ধ নাকে আসতেই মানুষটা কে।দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে সেলিনার মুখ থেকে বেড়িয়ে এলো,
—-“স্পর্শ? ”
নাজমুন বেগম জেনো হতভাগ। ”
স্পর্শের হাস্যউজ্জ্বল মুখ প্রথমে ভয় এবং নিমিষেই জেরিনের পিছন থেকে আসা মানুষটাকে দেখে চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।গরম চোখে তাকিয়ে জেরিনকে বুকে শক্ত ভাবে চেপে ধরে শুধু শক্ত গলায় বলে,
—-“কী হয়েছে জেরিন?”
জেরিন ফুঁপিয়ে উঠে।শার্ট শক্ত করে খামছে ধরে হাপাতে হাপাতে বলে,
—-“আমাকে, আমাকে বাচান..!”
স্পর্শের চোখে আগুন জ্বলে উঠে।জেরিন কে বুক থেকে তুলে ইশারায় জেসমিনের বুকে দিলো।গলায় থাকা টাই শান্ত হাতে হাল্কা করে কোনো কথা ছাড়াই হাসানকে শক্ত হাতে কষে থাপ্পর এবং ঘুষি দিলো।নাজমুন বেগম ভয়ে কেপে উঠে।এরি মাঝে চলে আসে জসীম সাহেব এবং লতিফ সাহেব।প্রথমে কিছু না বুঝলেও স্পর্শের কথায় সব বুঝে নিলো।
—-“কুত্তার*** তোর সাহস কী করে হলো আমার জেরিন কে ছোঁয়ার?এই হারামি তোর এই হাত আমি শেষ করে ফেলবো।জেরিন আমার বউ, আমার প্রোপার্টি, আমার মান-সম্মান, আমার সুনাম,আমার অহংকার। আর তুই সেটা নষ্ট করতে চাইলি?যেদিন থেকে জেরিন কে কবুল বলেছি, জেরিন শুধুই আমার।”
স্পর্শের বলা প্রতিটা কথায় চোখ থেকে বেয়ে পরে পানি।জেরিন কাতর চোখে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে আছে।হাসানকে বেহালে মারছে স্পর্শ। হাসান নাজমুন বেগম কে ডেকেও বিশেষ ছাড় পেলো না।জসীম সাহেব অসম্ভব ক্ষিপ্ত নয়নে নাজমুন বেগমের দিকে তাকিয়ে আছে।নাক আর মুখ দিয়ে রক্ত পরছে হাসানের।লতিফ সাহেব এসে স্পর্শকে থামানোর চেষ্টা করলেন।এক সময় হাসান কোনো ভাবে পালিয়ে গেলো।হাসান যেতেই স্পর্শ অশ্রুভেজা জেরিনের চোখের দিকে টাকাল।রিয়া পাশের রুম থেকে হাপাতে হাপাতে এলো।দেখেই মনে হচ্ছে সেও ক্লান্ত।স্পর্শ অসহায় চোখে জেরিনের দিকে তাকাল।চোখে তার ও পানি।জেরিন এক পা সামনে দিলে স্পর্শ এসে জেরিন কে শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে।জেরিনের প্রতিটা বেকুল হওয়া নিশ্বাস শুনতে পাচ্ছে স্পর্শ। দুহাতের কব্জিতে দাগ পরে গেছে।সেলিনা রিয়াকে দেখে ব্যস্ত গলায় বলেন,
—-“তুই কোথায় ছিলি?”
রিয়া হাপাতে হাপাতে কেঁদে দিলো।স্পর্শকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—-“ভাইয়া আপনি তাহলে এলেন।”
স্পর্শ বেশ উচ্চস্বরে বলে,
—-“তোমার হাতে তুলে দিয়েছিলাম জেরিন কে।আমি কী ভুল করেছি তাহলে?”
রিয়া কেঁদে বলে,
—-“ভাইয়া আমি চেষ্টা করেছি অনেক।হাসান আমার মুখ আর হাত পা বেধে দিয়ে ছিল।আমি ফুপিকে অনেক ডেকেছি কিন্তু আসেনি।”
সবাই বেশ অবাক হয়ে গেলো।স্পর্শ জেরিন কে কোলে তুলে রুমে নিয়ে গেলো।জেরিন এখনো স্তব্ধ, আতঙ্কিত। বিছানায় বসিয়ে দ্রুত এক গ্লাস পানি দিলো।এক নিশ্বাসে ফুপাতে ফুপাতে খেয়ে নিলো।নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে জেরিন।স্পর্শ চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে নরম গলায় বলে,
—-“আমি চলে এসেছি কাঁদছ কেনো?”
জেসমিন ব্যস্ত পায়ে রুমে এসে কিছুটা কেঁদে দিলেন।জেরিনের পাশে বসে জড়িয়ে ধরেন।জেসমিন সবটা স্পর্শকে বলেন।স্পর্শ চোখ বন্ধ করে লম্বাশ্বাস নিলো।রুম থেকে বেড়িয়ে ড্রয়িং এলো।জসীম সাহেব বেশ কঠিন গলায় বলেন,
—-“এসব কী দেখছি নাজমুন?আমি বাইরে গেছিলাম এই জন্য?”
নাজমুন বেগম মুখ কালো করে বলেন,
—-“হাসানের অধিকার আছে।”
—-“আমার ও অধিকার আছে জেরিন মেহরাবের স্বামী হয়ে আপনার নামে কেস ফাইল করার।”
নাজমুন বেগম বেশ স্তম্ভিত গলায় বলেন,
—-“কী বলতে চাও তুমি?”
স্পর্শ চেঁচিয়ে উঠে।গরম গলায় বলে,
—-“কচি খুকি আপনি?নিজের চোখেও দেখে বুঝতে পারছেন না নিজের মেয়ের অবস্থা?আপনার সাহস কী করে হলো আমার ওয়াইফের রুমে অন্য পুরুষ আনার?হাও ডের ইউ?আজ যদি ওর কিছু হয় আমি কিন্তু আপনাকে ছেড়ে দিবো না।আমি অবাক হচ্ছি কেমন মা আপনি?নিজের চোখেও দেখে বুঝতে পারছেন না আপনার হাসান কেমন?ভালো করে দেখুন জেরিনের কী হাল করেছেন আপনি।আমারই ভুল হয়েছে কেনো একা রেখে গেলাম।আপনারা এতো গুলো মানুষ থেকেও আমার জেরিন নিশ্চিন্ত না।যেদিন জেরিন আমার জীবনে এসেছে, দুজনে নতুন জীবনে পা দিয়েছি সেদিন থেকে দুজন শুধু দুজনের হয়েছি।আপনাকে আমি এতো সহজে ছেড়ে দিবো না ম্যাডাম।”
স্পর্শ শাসিয়ো রুমে চলে গেলো।জসীম সাহেব নাজমুন বেগমকে ধিক্কার জানিয়ে রুমে চলে গেলো।লতিফ সাহেব বেশ অপ্রস্তুত হয়ে বলেন,
—-“আর যাই হোক এমন কিছু আশা করিনি আমি।”
#ভালবাসার_প্রহর
#লেখনীতে_মায়া_মনি
#পর্ব২০
পরিবার আর কাজের বাইরে ও একটা দুনিয়া আছে।বেচে থাকার, নিশ্বাস নেওয়ার কারণ আছে।সব কিছুর পর কেউ একজন আছে যাকে বলা যায় তুমি শুধুই আমার।সবার পরে স্বস্তির, ভালবাসার, শান্তির, মায়ার, শান্তনার,স্থান আছে।পরিবার, কাজ সব কিছুর থেকেও অনেক অনেকটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানুষ আছে সেটা আজ বুঝতে পারছে স্পর্শ। প্রতিটি মুহূর্ত, সময়,প্রহর সে অনুভব করছে জেরিন কে।আজ যদি স্পর্শ সময় মতো না আসতো তবে কী হতো?
কথাটা ভাবতেই শক্ত করে জড়িয়ে নিলো বুকের গহীনে স্তম্ভিত হওয়া জেরিন কে।আতঙ্কিত থমথমে মুখটি স্পর্শের বুকে লুকিয়ে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলল জেরিন।বারবার একটাই কথা মাথায় ঘুরছে তার, হাসানের মতো জঘন্য লোক ছুঁয়েছে তাকে।স্পর্শকে এই মুখ কীভাবে দেখাবে সে?লজ্জায় ঘৃণায় হঠাৎ নিজেকে শেষ করে দেওয়ার মতো ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিলো জেরিন।স্পর্শ লম্বাশ্বাস নিয়ে জেরিনের মুখ উঁচু করে ধরলো।চোখ মুছিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে,
—-“কাঁদছ কেনো?আমি চলে এসেছি তো বাবু!”
জেরিন থমথমে ধরা গলায় বলে,
—-“এখান থেকে চলে যাওয়ার পর কী হবে?আপনি তো থাকবেন না পাশে।”
স্পর্শের চোখ কেপে উঠে।এই মেয়েকে রেখে সে যাবে কীভাবে?বাড়িতে না জানালে কীভাবে জেরিন কে সাথে নিয়ে যাবে?হঠাৎ তার চোখে মুখে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস দেখে গেলো।মৃদু হেসে দুগাল ছুঁয়ে বলে,
—-“তোমাকে সাথে নিয়েই যাবো।স্পর্শ মেহরাব তার কোনো জিনিস ফেলে যায় না।সেখানে তুমি তো আমার জীবনের একটা অংশ।তোমাকে রেখে গেলে আমি অর্ধেক মানুষ কীভাবে যাবো?”
জেরিন স্তির চোখে তাকিয়ে রইল।স্পর্শ বিছানা থেকে উঠে আলমারিতে হাত দিলো।সাদা রঙের নাইট সুট বেড় করে এগিয়ে দিলো জেরিনকে। আলতো কন্ঠে বলে,
—-“ফ্রেশ হয়ে এসো জেরিন।আমি থাকতে আর কিছু হবে না।”
জেরিন স্তির চোখে কিছু সময় সেদিকে চেয়ে ধির পায়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।স্পর্শ বিছানায় বসে ঘাড় নিচু করে দুহাতে মাথা চেপে ধরে।কী ভেবে ছিল আর কী হয়ে গেলো।জেরিন কে মনের কথা বলার জন্য দীর্ঘ ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে বাসায় ফিরে সে।কিন্তু দরজা খুলেই যে প্রিয়তমার এমন ভয়ংকর চেহারা দেখবে আশা করেনি।রুমের দরজা খোলাই ছিল।জসীম সাহেব এবং জেসমিন দরজায় শব্দ করল।দরজায় তাকিয়ে দ্রুত স্পর্শ দাঁড়িয়ে গেলো।ভদ্রতাসূচক হাসার চেষ্টা করে বলে,
—-“ভিতরে আসুন বাবা,খালামনি।”
জসীম সাহেব রুমে উকি মেরে একবার দেখলো।জেসমিন শান্ত গলায় বলেন,
—-“জেরিন কোথায়?”
জসীম সাহেব ও বলেন,
—-“ঠিক আছে তো মেয়েটা?”
স্পর্শ ওয়াসরুমের দরজায় চোখ বুলিয়ে বলে,
—-“ফ্রেশ হতে পাঠিয়েছি আমি।চিন্তা করবেন না আমি সামলে নিবো।”
জসীম সাহেব বেশ লজ্জিত গলায় বলেন,
—-“বাবা একটু গেস্ট রুমে আসবে?তুমি সেখানে ফ্রেশ হয়ে নিও।একটু কথা ছিল তোমার সাথে।”
স্পর্শ সম্মতি জানিয়ে পা দিলো।গেস্ট রুমে বিছানায় বসে আছে স্পর্শ এবং জেসমিন। কিছুটা দূরে সোফায় বসে আছেন জসীম সাহেব।থমথমে মুখে হঠাৎ কান্নার ঝলক দেখা গেলো।জেসমিন নিজেও মাথা নিচু করে কেঁদে দিলেন।বিষয়টা দেখে স্পর্শ বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পরে।বেশ অস্বস্তি নিয়ে সে বলে,
—-“আপনারা কাঁদছেন কেনো?”
জসীম সাহেব বেশ লজ্জিত এবং অনুতপ্ত হয়ে বলেন,
—-“এ’ছাড়া কী করবো বাবা?আমি তোমার কাছে কীভাবে ক্ষমা চাইবো জানি না।”
স্পর্শ ব্যস্ত গলায় বলে,
—-“ছি, ছি বাবা কী বলছেন এসব?আপনি আর ক্ষমা, কেনো চাইবেন? ”
জেসমিন স্পর্শের হাত ধরে চোখের পানি ছেড়ে বলেন,
—-“আমার কোনো মেয়ে নেই বাবা, দুই ছেলে আছে।বড় ছেলেকে অনেক শখ করেই হাসানের মেঝ ভাবির বড় বোনের মেয়ের সাথে বিয়ে দেই।কিন্তু সেই মেয়ে এবং হাসানের ভাবির পরিবার সব নষ্ট করে দেয়।আমার ছেলেকে ছেড়ে চলে যায় মেয়েটা।জেরিনকে আমি প্রচুর ভালবাসি।হাসানদের আসল রুপ জানার পর থেকে অনেক চেষ্টা করেছি বাচানোর।কিন্তু খুব দেড়ি হয়ে যায়।হাসানের সাথে নাজু বেশ কয়েকবার থাকতে বাধ্য করে।মেয়েটা সুইসাইড করার চেষ্টা করার পর যখন নাজু থাকতে বাধ্য করে তখন মেয়েটার দুনিয়া অন্ধ হয়ে যায়।নাজু কে সব থেকে বেশি ভালবাসে জেরিন।তাই মায়ের কাছ থেকে পাওয়া এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা নিতে পারছে না।জসীম দেশের বাইরে ছিল, দেশে আসার পর মেয়েটা হাসানের এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায়।কিন্তু দিনে দিনে মানুষিক রুগী হয়ে যাচ্ছিল।জেরিন আমার মেয়ে বলতে গেলে।আজ আমি মার্কেট থেকে এসে যা দেখলাম, আমি নিজেই হতভাগ। ”
স্পর্শ স্তির চোখে জেসমিনের সবটা কথা শুনলো।জসীম সাহেব ধরা গলায় বলেন,
—-“মেয়েটার এই ১৮ বছর অথচ, আমি একটা দিন ও সময় দিতে পারিনি।কাজেই ছিলাম দেশের বাইরে।আমি বা আমরা জানি না কীভাবে তোমাদের সম্পর্ক হয়েছে।এই ঝামেলার মাঝে তোমার মতো মহান যুবক কীভাবে ওর স্বামী হয়েছে জানি না।শুধু জানি আমার মেয়েটার তুমি ছাড়া কেউ নেই।”
স্পর্শের চোখেও কিছুটা বেদনা প্রকাশ পেলো।হাত জোড় করে নিচুস্বরে বলে,
—-“আমাকে ক্ষমা করবেন সবাই।আমি জানি অনেক কষ্ট দিয়েছি হুট করে বিয়ে করে।আসলে আমরা ও বুঝতে পারিনি জীবনে কী হবে বা হচ্ছে।তবে জেরিন কে আমি কষ্ট পেতে দিবো না বিশ্বাস করুন।আমার সবটা দিয়ে হাসি-খুশি রাখবো।ভালো রাখবো আমি!”
.
.
.
.
আধভেজা ঝরঝরে চুল গুলো বাতাসে উড়ছে।মুখটা একদম স্তম্ভিত হয়ে আছে।কিছু সময় আগের বিশ্রী সেই কাহিনী ভাবতেই গা শিউরে উঠছে জেরিনের।সাদা ধবধবে রুমের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে সে।বিশাল আয়নাতে বাইরে থেকে আসা আলোয় গলায় আঁচড়ের দাগ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে জেরিন।এই মুখ,এই শরীর নিয়ে কীভাবে যাবে স্পর্শের কাছে?লজ্জায়,ঘৃণায় ফুঁপিয়ে উঠে জেরিন।আয়নার সামনে থাকা সাদা টুলটি ফ্যানের নিচে আনে।বিছানায় থাকা ওড়না হাতে তুলে কয়েক মিনিট চেয়ে রইলো।কাপা কাপা হাতে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে গেলো সে।টুলের উপর দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রস্তুত করতে লাগে।ফ্যানে ওড়না ঝুলিয়ে গলায় পরতেই দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে স্পর্শ। জেরিনকে এমন অবস্থায় দেখে সে দ্রুত ছুটে আসে।হাত ধরে টেনে টুল থেকে নামিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো।জেরিন নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর চেঁচিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,
—-“ছাড়ুন আমাকে স্পর্শ, ছাড়ুন আমাকে।আমি এই মুখ আর দেখাতে চাই না।আমি আর বাচতে চাই না।”
স্পর্শ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ধমকের সুরে বলে,
—-“কেনো বাচতে চাও না, কেনো?হাসান তোমার জীবনে এতো গুরুত্বপূর্ণ যে নিজেকে শেষ করে দিতে চাও?আমার কী বিন্দু মাত্র দাম নেই তোমার জীবনে?আমাদের প্রথম দেখায় বলিনি আমি,আর যাই করো নিজেকে শেষ করার মতো কাজ করো না।”
জেরিন কাঁদতে কাঁদতে বলে,
—-“আমার জীবনে আপনার গুরুত্ব বেশি। আমি এই মুখ আপনাকে কীভাবে দেখাবো?আপনি থাকার পর ও অন্য কারো আচড় আমার গায়ে।আমি পারবো না আপনার কাছে আসতে।আপনার সামনে দাড়াতে পারবো না আমি।”
স্পর্শ দুহাতে জেরিনের মুখ ধরে শান্ত গলায় বলে,
—-“প্লিজ থামো তুমি! তোমাকে কেউ ছুঁয়ে দিতে পারেনি আর পারবেও না।এই দেখো আমি আছি,আমি ছুঁয়ে আছি তোমায়।”
জেরিন স্তির হয়ে গেলো।স্পর্শের শিতল হাত জোড়া জেরিনের গাল ছুঁয়ে ঘাড় স্পর্শ করল।স্পর্শের চাহনি একদম শিতল গভীর।জেরিন সেই চোখে তাকিয়ে চুপ হয়ে যায়।বাম হাতে চোখের পানি মুছে দিলো স্পর্শ। এই প্রথম জেরিনের খুব কাছে এলো সে।চাঁদের আলোয় জেরিনের ফর্সা মুখটা জেনো আরো মোহনিও,আরো আবেদনময়ী হয়ে উঠে।স্পর্শ হারিয়ে যেতে লাগে সেই জেরিনের মাঝে।স্পর্শের হাত কোমর ছুতেই চোখ বুঝে নিলো আবেশে জেরিন।স্পর্শ নিজের ওষ্ঠদ্বয় দিয়ে জেরিনের ওষ্ঠদ্বয় নিজের মাঝে আবদ্ধ করে নিলো এই প্রথম বার।বুকের ধুকপুকানি, অসহ্য অস্থিরতায় স্পর্শের টি- শার্ট খামচে ধরে জেরিন।এতেই জেনো স্পর্শের নেশা বাড়িয়ে দিলো সে।শক্ত হাতে কোমর জড়িয়ে নিলো।মুখ তুলে জেরিনের কপালে আলতো চুমু দিলো স্পর্শ। মৃদু হেসে কোলে তুলে নিলো তার প্রিয়তমাকে।সাদা বিছানার চাদর ও জেনো তাদের ভালবাসার প্রহরের অপেক্ষায় ছিল।নিমিষেই দুজনের সাথে মিশে গেলো চাদরটি।দুহাত এক মুঠো বদ্ধ হলো।
_______________________________
বসার ঘরে সবাই গম্ভীর মুখে বসে আছে নাজমুন বেগমকে কেন্দ্র করে।জসীম সাহেবের নজর তীক্ষ্ণ হলো।সেলিনা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন।লতিফ সাহেব বেশ অবাক হয়েছেন আজ।জেসমিন গম্ভীর মুখে নিরবতা কাটিয়ে বলেন,
—-“নাজু এগুলোর মানে কী?”
নাজমুন বেগম নিজেও বেশ লজ্জিত আজ।এমন কিছু দেখবেন আশাও করেন নি।উনার মাঝে মাঝেই মনে হয় কেউ কালো যাদু দ্বারা হাসান কে এতো চোখে রাখেন উনার।নাজমুন বেগম বেশ শান্ত গলায় বলেন,
—-“কোন সব আপা?”
জসীম সাহেব তেতে উঠে বলেন,
—-“কোন সব বুঝো না?কয়েক ঘন্টা আগে কী করালে তুমি? ”
নাজমুন বেগম অপ্রস্তুত হয়ে বলেন,
—-“আমি নিজেও তো জানি না।”
সেলিনা লম্বাশ্বাস ফেলে বলেন,
—-“সংসার তোর নাজমুন।আমরা কিছু দিনের মেহমান কেবল।স্পর্শের চলা ফেরা দেখতেই মাসের মতো থেকে গেলাম।আমাদের সংসার আছে আমরা ও বাড়ি ফিরবো।কিন্তু মেয়েটা যাবে কোথায়?মায়ের কাছেই তো নিরাপদ না সে না।”
লতিফ সাহেব বেশ উদ্বেগি কন্ঠে বলেন,
—-“আমার মনে হচ্ছে এটা নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসা উচিত।আমরা ভালো দেখছি জেরিন কার সাথে ভালো আছে।এখন আর হাসানের এসব ঝুলিয়ে রেখে লাভ নেই।”
নাজমুন বেগম ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,
—-“কী বলতে চান আপনি?”
লতিফ সাহেব কিছু বলবে তার আগেই জসী সাহেব বলেন,
—-“সাধারণ সুন্দর ভাবে ওদের ডিভোর্স করাতে হবে।”
সেলিনা সায় দিয়ে বলেন,
—-“ওভাবে তো চলতে পারে না।আমাদের একটা সমাধানে আসতেই হবে।”
নাজমুন বেগম উচ্চঘরের বলেন,
—-“তোমাদের একার সিদ্ধান হবে নাকি?আমি ওর মা আমি কোনটা ভালো আর খারাপ জানি।”
লতিফ সাহেব ফোড়ণ কেটে বলেন,
—-“জানলে আজ এই অবস্থা কেনো?নিজের চোখে সব দেখেও জ্ঞান হচ্ছে না তোর?দেখ এখন যদি স্পর্শ কেস ফাইল করে হাসানদের সাথে আমরা ও জড়িয়ে যাবো।”
জেসমিন উত্তেজিত হয়ে বলেন,
—-“স্পর্শ কিন্তু তখন ছোট খাটো ওয়ার্নিং দিয়ে গেছে।বেশি কিছু করলে আর বাচার আশা নেই কারো।”
__________________________
ভোরের সোনালি আলো পর্দা বেদ করে সাদা ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে।বিছানায় চাদর জড়িয়ে দুটি প্রাণ জড়িয়ে শুয়ে আছে।একটু নড়েচড়ে চোখ খুললো জেরিন।উন্মুক্ত ফর্সা বুকে শক্ত দুহাতের মাঝে নিজেকে সজ্জিত দেখে দুফোটা পানি চোখ থেকে গড়িয়ে পরলো।ভালো লাগা আর ভালবাসায় মুখ তুলে ঘুমন্ত স্পর্শের ঠোঁট ছুঁয়ে কয়েক সেকেন্ড চেয়ে রইল।হুট করে স্পর্শ বিছানার সাথে চেপে ধরে জেরিন কে।আকস্মিক টানে জেরিন কিছুটা অবাক।ঘোর লাগানো চাহনিতে চেয়ে আছে জেরিনের লাজুক মুখটি। আর তাকাতে না পেরে জেরিন মুখ ঘুরিয়ে নিলো।স্পর্শ মৃদু হেসে অতি আদরে গভীর চুম্বন দৃষ্টি করল জেরিনের গলায়,ঘাড়ে।জেরিনের মৃদু আর্তনাদ শুনতে পেলো স্পর্শ।
নিশ্চুপ রুমে বাইরে থেকে এক দলা ঠান্ডা শিতল বাতাসের খেলা।আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে স্পর্শ জেরিন কে।মেয়েটা লজ্জায় গাল লাল করে আছে।আলতো ছুঁয়ে কপালে আছে চুল সরিয়ে দিচ্ছে স্পর্শ। হাসানের দেওয়া আঁচড়ের স্থানে এখন স্পর্শের বেশ বড় ভালবাসার আচড় হয়েছে।ভোর থেকে সকাল হয়ে গেলো।ঘড়িতে ভোর ৫টা থেকে ৯টা বাজে।জেরিন নিচুস্বরে বলে,
—-“সকাল হয়ে গেছে। ”
স্পর্শ চোখ বন্ধ রেখে আদুরে কন্ঠে বলে,
—-“তো? ”
—-“উঠতে হবে! ”
স্পর্শ মুচকি হেসে আরো শক্ত করে ধরে বলে,
—-“উঠতে হবে না!”
—-“হবে! ”
—-“হবে না ”
জেরিন হেসে দিলো।স্পর্শের দিকে চোখ রেখে বলে,
—-“স্পর্শ? ”
স্পর্শ ও একই ভাবে বলে,
—-“জেরিন?”
জেরিন মুখ লুকিয়ে হেসে দিলো।স্পর্শ এক গাল হাসি দিয়ে বলে,
—-“উঠতে হবে না আজ।”
জেরিন চোখ পাকিয়ে বলে,
—-“বাইরে সবাই কী ভাববে?”
—-“ওরা যথেষ্ট বড়।ওরা বুঝবে নতুন বিবাহিত বর বউ কী করছে।”
চলবে
চলবে