#ভালোবাসতে_চাই_প্রিয়_তোমাকে
#পর্ব_সপ্তম
#লেখিকা_দিয়া
বাড়ির ড্রইংরুমে থমথমে ভঙ্গিতে বসে আছে শুভ্রের আম্মু আব্বু।হঠাৎই শুভ্রের আম্মু বলে উঠলো,
ওগো তুমি বরং এক বার কল করো ওকে রাত ১ টা বেজে গেছে আমার ছেলেটা এখনো আসলো না।আমার যে আর ভাল লাগছে না এসব।ছেলেটা আমার কেমন জেনো হয়ে গিয়েছে। নিজের কোনো যত্ন নেয় না।সারাক্ষণ শুধু হসপিটালে নিজেকে কাজের মধ্যে ডুবিয়ে রাখে।বাসায় ও আসতে চায়না।আর আসলেও রাত দুই তিনটার দিকে এসে আবার সকাল ৮ টায় চলে যায়।- শুভ্রের আম্মা
শূণ্যতা শব্দ টা বড্ড কষ্টের।আর সেই শূণ্যতা যদি মানুষের হয় তাহলে তো কথাই নেই। আজ ৫ টা বছর হতে চললো ঝিলিক চলে গেছে।শুভ্র কিভাবে ঠিক থাকবে বলো।এতদিনে ওদের বাচ্চা টা ও কত বড় হয়ে গেছে ভাবো। এসব ভাবার পর শুভ্র নিজেকে সামলাতে পারবে না এটাই তো স্বাভাবিক – শুভ্রের আব্বু
সব হচ্ছে আমার পাপের ফল।কেনো যে সেদিন তোমার কথা মতো ঝিলিককে মেনে নিলাম না।আমি ছেলের সংসারটা আমি নিজ হাতে শেষ করে দিলাম।ইশিতাকে যদি ওদের থেকে দূরে রাখতাম।ইশিতা এডিট করা ওইসব ছবি দেখে এমনিই শুভ্র মেয়েটার উপরে অনেক অত্যাচার করেছে।ওদের মধ্যে অনেক দূরত্ব ও এসে গিয়েছে আমি তো দেখেছি। তার মধ্যে আবার রিয়ার ঘটনাটা। ঝিলিকের এখানে কোনো দোষ নেই গো।কোন স্ত্রীই বা মানতে পারবে স্বামীর পাশে অন্য মেয়েকে – শুভ্রের আম্মু
দোষটা শুভ্রেরই। ও যদি ঝিলিকের সাথে খোলামেলা ভাবে সব কিছু আলোচনা করতো তাহলে এমন কিছুই হতো না।ও প্রথম ভুল করেছে ঝিলিককে অবিশ্বাস করে।দ্বিতীয় ভুল করেছে রিয়ার ঘটনাটা ঝিলিকের থেকে লুকিয়ে। ঝিলিক বড্ড বুদ্ধিমান মেয়ে ওকে বুঝিয়ে বললে ও ঠিকই সব বুঝতো – শুভ্রের আব্বু
ওনাদের কথার মাঝেই বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো।শুভ্রের আম্মু উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন।শুভ্র ভিতরে প্রবেশ করতে করতে বললো,
আমি যখন বলেছিলাম আমি আসবো।তাহলে আমি আসবোই।এতবার কল না দিলেও হতো।আর তোমাকে না ডাক্তার রাত জাগতে নিষেধ করেছে আব্বু – শুভ্র
কি করবো ছেলের চিন্তায় যে শেষ হয়ে যাচ্ছি – শুভ্রের আব্বু
বাবা আমরা আর কয়দিন আছি বল।মরার আগে তোর জীবনটা ঠিকঠাক করে দিয়ে যেতে চাই। আমরা নতুন একটা মেয়ে দেখেছি তোর জন্য। তুই যদি অনুমতি দিতি আমরা বিয়ের কথা পাকা করে ফেলতাম – শুভ্রের আম্মু
আমি তোমাকে আর কতবার বলবো আম্মু যে আমি বিবাহিত আমার একটা সন্তান আছে আমি কেনো আরেকটা বিয়ে করতে যাব। পারলে আমার ঝিলিককে আর আমার বাচ্চাকে আমার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসো।নাহলে নেই।এসব যদি আরেক বার বলো তাহলে কিন্তু আমি আর বাসায়ই আসবো না বলে দিলাম – শুভ্র
আজকে ৫ বছর হতে চললো শুভ্র ঝিলিক চলে যাওয়ার।ও কোথায় আছে ? কেমন আছে ? অদৌ ও কি বেঁচে আছে নাকি একটা কিছু জানতে পেরেছিস তুই বল আমাকে – শুভ্রের আম্মু
পারিনি তো কি করবো।খুব জলদি ওকে তোমাদের সামনে দেখতে পারবা। বাদ দাও। আমি কালকে রাতে সিলেট যাচ্ছি সাপ্তাহ খানেকের জন্যে। চিন্তা করো না কাজেই যাচ্ছি। কাজ শেষ হলে আবার ফিরে আসবো – বলে শুভ্র নিজের ঘরে চলে গেল।
ঘরে গিয়ে ঝিলিকের এক ছবির সামনে দাঁড়িয়ে আপন মনে বলতে লাগলো,
কেনো ঝিলিক আমাকে বোঝার চেষ্টা করলা না ? একটু চেষ্টা করতা। আমাকে নাহয় সত্যি টা জিজ্ঞেস করতা।কেনো আমার সাথে এমন করলে তুমি? আমাকে বাবা ডাক শোনা থেকে বঞ্চিত করলে এর শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।দেখা হচ্ছে খুব জলদি বউজান।- শুভ্র
~~~~~~~~
শুভ বাবা দেখো দুষ্টমি করে না বাবা। জলদি নাস্তা টা শেষ করো।নাহলে কিন্তু আমাদের যেতে লেট হয়ে যাবে। – ঝিলিক
না না আমি আর খাব না।আমার পেট ভরে গেছে।আমার পেট টা এইটুকু।এত খাবার আমি কিভাবে খাবো ? – শুভ
বাবা তুমি না আমার ভালো ছেলে।আর ভালো ছেলেরা কিন্তু মাম্মার সব কথা শুনে। শুভ তো ভালো ছেলে শুভ কি পচা ছেলে হতে চায় ? – ঝিলিক
খাচ্ছি খাচ্ছি । – বলে শুভ আধো খাওয়া নাস্তা টা আবার খেতে শুরু করলো।
রিনি মিনি তোরা কি আজকে বের হবি নাকি শপিং করতে ? – ঝিলিক
হ্যা আজকে রনি আর শিহাব দুজনেই আসবে শপিং করতে – মিনি
তাহলে তো হলোই।বিয়ের কিন্তু বেশি সময় বাকি নেই।যত জলদি পারিস কেনাকাটা শেষ কর।আর তোরা যেই জুয়েলারির কথা বলছিলি শোরুমে গিয়ে নিশাকে ডিজাইন দিয়ে আসিস। তোরা সাবধানে চলে যাস। শুভ তুই কি ওদের সাথে যাবি নাকি বাসায় থাকবি ? – আমি
হ্যা আমিও যাব – শুভ
আচ্ছা বাবা ।তাহলে রিনি তুই ভার্সিটি থেকে আসার সময় শুভকে স্কুল থেকে নিয়ে আসিস।আমার আসতে আজকে লেট হবে একটু – আমি
ওকে আপু।- রিনি
তারপর রিনি মিনিকে বিদায় দিয়ে আমি শুভকে নিয়ে বের হয়ে আসলাম।এতক্ষণে আপনারা অবশ্যই বুঝে গিয়েছেন শুভ হচ্ছে আমার ছেলে।কেজি ক্লাসে পড়ছে এ বছর।কিন্তু দুষ্টুমিতে যে কাউকে হারিয়ে দিবে।এই পাঁচ বছরে অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। আমার আম্মুও চলে গিয়েছে আমাদের তিন বোনকে একা করে দিয়ে।এই তো চলছে তাও সবকিছু নিজ গতিতে। এরই মধ্যে পৌঁছে গেলাম শুভর স্কুলে।ওকে স্কুলে ঢুকিয়ে দিয়ে আমি বের হয়ে গাড়ি বসে পরে চলতে লাগলাম অফিসের উদ্দেশ্য। শো-রুম যেতে যেতে পেজের ইনবক্সের মেসেজগুলো চেক করতে লাগলাম সাথে করতে লাগলাম জুয়েলারি অর্ডারগুলো কনফার্ম। কালকে রাতের লাইভের পর ইতোমধ্যে ১৫০+ অর্ডার এসেছে জুয়েলারির।৪ বছর ধরে আমি এই বিজনেস টা করছি।শুরুটা খুব বেশি সহজ ছিল না।কিন্তু অনলাইনে পেজ খোলার পর বিক্রি অনেকটা বেড়েছে। সেই সাথে ভালো পণ্যের জন্য আমার কোম্পানি ও বেশ সুনাম অর্জন করেছে।এখন এই সিলেট শহরে আমার দুটো শো-রুম আছে জুয়েলারির। কেনাবেচা ও আল্লাহর দোয়ায় বেশ ভালোই হচ্ছে। ২ বছর হলো এখানে জায়গা কিনে নিজের বাড়ি করেছি।নিজের গাড়িও আছে।বলতে গেলে আম্মা আর শুভ্রের অত্যাচারের থেকে শতগুণ বেশি ভালো আছি আমি।নিজেকে এখন স্বাধীন মনে হয় আমার। নিজের যেভাবে খুশি চলতে পারি।কোনো কিছুর জন্যই কারো উপর নির্ভর হতে হয়না।কিন্তু সত্যি বলতে দিনশেষে শুভ্রের শূন্যতা আমাকে বড্ড পীড়া দেয়।সারাদিন সবার সামনে শক্ত থাকলেও রাতের বেলা আর নিজেকে সামলাতে পারিনা।তখন একা একাই নিজের সঙ্গে দুঃখ বিলাস করি।এসব ভাবতে ভাবতেই শোরুমে চলে এলাম।আমি ভিতরে ঢুকতেই এখানকার মেনেজার এগিয়ে আসলো।এসে বলতে লাগলো,
গুড মনিং মেম। কেমন আছেন ? – নিশা
এইতো। তোমার কি খবর ? – আমি
ভালো। মেম কালকে রাতে একটা এওয়ার্ড ফাংশন আছে – নিশা
বেশ ভালো।তো এওয়ার্ড ফাংশন দিয়ে আমাদের কি কাজ ? – আমি
মেম সেখানে আপনি ২০২২ সালের সিলেটের সেরা নারী উদ্যোক্তার এওয়ার্ড টি পাচ্ছেন।ওনারা অনেক রিকোয়েস্ট করেছে আপনাকে সেখানে থাকার জন্য। আমি বলেছি আপনি এসব পছন্দ করেন না। তবুও তারা অনেক বলেছে। এখন তাদের আমি কি বলবো ? আপনি কি যাবেন ? – নিশা
কখন কালকে ? – আমি
সন্ধ্যা ৭ টায় মেম – নিশা
আচ্ছা তাদের হ্যা বলে দাও আমি যাব – আমি
ওকে মেম। মেম আমাদের কেনাবেচা ভালোই চলছে।আমি একটা কথা ভেবেছি মেম – নিশা
কি কথা? – আমি
আমাদের ৬০% কাস্টমারই ঢাকার।অনেকে অনলাইনে বিশ্বাস করতে পারছেনা। ঢাকার ভিতরে আমাদের শোরুম কোথায় জানতে চাচ্ছে। শোরুম সিলেটে বলার পর অনেক কাস্টমাররাই আসতে পারছে না বিধায় আর জুয়েলারি ও কিনছে না।আমার মনে হয় ঢাকার একটা শোরুম খুললে আমার প্রোফিট আরো অনেক বেড়ে যাবে – নিশা
কথা টা খারাপ বলোনাই নিশা। কিন্তু ঢাকায় শোরুম ওপেন করলে সেখানে সকল দায়িত্ব তোমাকেই নিতে হবে।কারণ আমি ঢাকায় যেতে পারবোনা কখনোই।তুমি দেখো কিভাবে কি করলে ভালো হবে।সেই অনুযায়ী সকল ডকুমেন্ট বানিয়ে আমাকে ইমেল করে দিও। আমি দেখবো।আর হ্যা অনলাইনে করা অর্ডারগুলো ৪ দিনের ভিতরে ডেলিভারির ব্যবস্থা কর।- আমি
আচ্ছা মেম আমি ওই সেকশনের সবার সাথে আলোচনা করবো – নিশা
তাহলে আজকে আমি চললাম নিশা তুমি সবটা দেখে সামলে নিও।আর কালকে রেডি হয়ে তুমি ছয়টার দিকে আমার বাসায় চলে এসো। সেখানে থেকেই আমরা এওয়ার্ড ফাংশনে যাব – আমি
ওকে মেম – নিশা
~~~~~
পরদিন,
সময় মতো এওয়ার্ড ফাংশনে চলে আসি।এই প্রথম হয়তো আমি কোনো ফাংশনে উপস্থিত হয়েছি।এতদিন এসব থেকে নিজেকে যথেষ্ট আড়াল করে রাখলেও আজকে কি মনে করে যেন আসলাম।যখনি আমার নাম স্টেজে বলা হলো তখন আমি উঠে দাঁড়িয়ে স্টেজে চলে আসলাম। এওয়ার্ড টা নেওয়ার সময় যে আমাকে এওয়ার্ড টা দিচ্ছে তার চেহারা দেখে আমি চমকে উঠলাম,
একি শুভ্র এখানে,
চলবে🥰