#ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ4
রাত 11:35 ……..
ঢাকার গ্রিন এভার ক্লিনিকের করিডরে বসে আছে মিরা রহমান,,আজম রহমান,সাথি রহমান ।শিহাব রহমান রিসিভশনে গেছেন ফর্মালিটিজ পূরণ করতে।
মিরা রহমান সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন,,,, তার দুই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পরছে,,, শব্দহীন কান্না করছেন তিনি ।অতিশোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন। তার ছেলে মেয়ে দুজনই এই ক্লিনিকে ভর্তি।মিহিরকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ,, ডাক্তার আসলেই অপারেশনটা করা হবে,,,মেঘকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে,,,হাতে স্যালাইন লাগানো হয়েছে,,,প্রায় পাচ ঘন্টা ধরে মেঘ অঙ্গান হয়ে আছে।অতিরিক্ত মানষিক চাপ, উইকনেস এর কারনে এই অবস্থা হয়েছে,,,তাছাড়া অতিরিক্ত ভয় পাওয়ার কারনে প্যানিক অ্যাটাক হয়েছে যার জন্য শ্বাস নিতে পারছে না,,, তাই অক্সিজেন লাগানো হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন sense না আসা পযর্ন্ত আর কিছু বলা যাচ্ছে না।ওনারা সিলেট থেকে রাত নয়টায় ফ্লাইটে ঢাকার উদ্যেশে রওনা হয়েছেন,,, ঢাকা এয়ারপোর্টে রাত 11 টায় ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে।এয়ারপোর্ট থেকে এখানে 11:30 এ পৌছেছে।শিহাব রহমানের ডাকে চোখ খুলে তাকায় মিরা রহমান।শিহাব রহমান শুকনো গলায় বললেন
কিছু ক্ষনের মধ্যেই ডাক্তার আসছে,,, ওনার বাসা এখান থেকে কাছাকাছি,,,এই ক্লিনিকের ওনারের wife। একজন নামকরা ডাক্তার ।
__________________________________________________
খান ম্যানসন দুই তলার সাদা কালারের একটা ডু প্লেক্স বাড়ি।বাড়িটার চারপাশে কালো রঙের পোশাক পড়ে হাতে বন্ধুক নিয়ে কিছু গার্ডস পাহাড়া দিচ্ছে। এই বাড়ির মালিকের নাম হলো আহাদ খান,,,উনি একজন পলিটিশিয়ান প্লাস একজন বিজনেসম্যান,,,ওনার ওয়াইফ এর নাম মোনা খান,,,পেশায় একজন ডক্টর।ওনাদর দুই ছেলে,,,বড় ছেলের নাম সাবরিদ সিজাত আহান।সবাই আহান বলে ডাকে,,, আহান লন্ডনের একটা ভার্সিটি থেকে MBA করছে।পাশাপাশি তার বাবার লন্ডনের বিজনেস সামলায়। ছোট ছেলের নাম হলো সাফওয়ান সিজাত আহির,,,আহির ঢাকার একটা ভার্সিটিতে অর্নাস সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।
সোফায় বসে কফি খেতে খেতে বিজনেস নিয়ে টুকটাক কথা বলছে আহান এবং আহাদ খান।পাশের সোফায় বসে খুব মনোযোগ দিয়ে ফোনে গেমস খেলছে আহীর।মোনা খান সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো
__”হসপিটাল থেকে ফোন এসেছিল,,, আমাকে এখনি হসপিটালে যেতে হবে,,, একটা এমারজেন্সি কেস আছে।আহান তুমি আমাকে একটু ড্রপ করে দেবে প্লিজ।”
আহান হাতের কফির মগটা টেবিলে রেখে দাড়িয়ে গিয়ে বললো
__”ওকে মা।আমি পাচ মিনিটে রেডি হয়ে আসছি।
আহানের কথা শেষ হতেই আহির বললো
___”মা তোমাদের সাথে আমিও যাবো। বাড়িতে ভীষন বোরিং লাগছে,,,তাছাড়া অনেক দিন হসপিটালে যাওয়া হয়না।”
মোনা খান ওনার ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বললেন
__”ঠিক আছে তারাতারি রেডি হও।হাতে বেশি সময় নেই।”
তাদের কথার মাঝে আহাদ খান হালকা রাগ দেখিয়ে বললো
__”রেডি হও মানে কী?সবাই চলে গেলে আমি বাসায় বসে একা একা কি করবো?”
আহান সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বললো
__”কি আর করবে,,, পেত্নির সাথে কাপল ড্যান্স করবে।”
কথাটা বলেই আহান উপরে রেডি হতে চলে গেল,,, আহানের কথা শুনে আহির ফিক করে হেসে দিল,,,তারপর সিরিয়াস হওয়ার ভান করে বললো
__”বাবা,,,মা কিন্তু প্রায়ই রাতে হসপিটালের কথা বলে বের হয়,,,আদৌ হাসপাতালে যায় কিনা সেটা নিয়ে আমার যঠেষ্ট ডাউট আছে,,, প্লিজ সাবধানে থেকো আর নিজের বউয়ের দিকে নজর রেখো কখন তোমার জন্য সতীন নিয়ে বাড়িতে চলে আসে বলা তো যায়না।”
আহাদ খান আহীরের কান টেনে ধরে বললো
__”তুমি তোমার নিজের চরকায় তেল দাও বাবা,,,আমার বউয়ের ব্যাপার আমি বুঝে নেব।তোমার এতো বেশি না ভাবলেও চলবে।”
আহির তার বাবার থেকে নিজেকে ছাড়িরে নিয়ে বললো
__”হুহ,,,এই জন্য লোকে বলে কারো ভালো করতে নেই।যখন তোমার বউ তোমাকে ছ্যাক্যা দিয়ে ব্যাক্যা করে চলে যাবে,,,, তখন বসে বসে অরিজিৎ সিং এর স্যাড সং শোনা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।”
কথাটা বলেই উপরের দিকে হাটা শুরু করল।আহাদ খান ছেলের কথায় কোনো পাএা দিলেন না,,,দূনিয়ার যতো উদ্ভট কথা তা তার ছোট ছেলের মুখ থেকে শোনা যাবে।এই ছেলের সাথে কেউ পাচ মিনিট কথা বললে তার মাথা খারপ হয়ে যাবে।যার একবার পিছনে লাগে তার জিবন তেজপাতা বানিয়ে ছাড়ে।তার বড় ছেলে ঠিক তার ছোট ছেলের উল্টো একদম শান্ত,গম্ভির বুদ্ধিমান একটা ছেলে।কারো সাথে অতিরিক্ত কথা বলবে না,মিশবে না, বেশি হাসবে না । শুধু দুই ভাইয়ের মধ্যে দুইটা জিনিসের মিল আছে একটা হলো দুই ভাই দেখতে অসম্ভব সুন্দর।
দিত্বীয় হলো এদের মাথায় একবার রাগ উঠলে যা খুশি তাই করতে পারে। বিশেষ করে আহান সবসময় রাগ তার নাকের ডগায় থাকে।
আহাদ খান মোনা খান কে উদ্যেশ্য করে বললো
_” আমিও যাবো তোমাদের সাথে।”
মোনা খান এবার রেগে গেলেন,, তিনি রাগি গলায় বললেন
___”Why not,,,তুমি একা কেন যাবে,,,এই বাড়িটাকে সাথে করে উঠিয়ে নিয়ে চলো,,আমি তো পিকনিক করতে যাচ্ছি ওখানে। ”
সিড়িতে দাঁড়িয়ে আহির তার বাবাকে উদ্যেশ্য করে বললো
__”দেখেছো ড্যাড,,মম তো তোমাকে বলতে পারতো ঠিক আছে চলো,,,কিন্ত মম উল্টো রাগ দেখাচ্ছে,,,মম তোমাকে সাথে করে কোথাও নিয়ে যেতে চায় না,,,নিশ্চই ডালমে কুছ কালা হে।”
মোনা খান আহির কে তাড়া করে বললো
__” অসভ্য ছেলে তোমাকে আমি জুতা পেটা করবো,,,মুখে যখন যা আসে তখন তাই বলো।”
__”bro আমাকে এই ঘসেটি বেগমের হাত থেকে বাচা।”
কথাটা বলেই আহির দিলো এক ভো দৌড়।তাকে আর পায় কে?
গ্রিন এভার ক্লিনিকের লিফট থেকে তিন তলায় নামলো মোনা খান,আহাদ খান, আহান এবং আহির সাথে দুইজন নার্স,,,তাদের কে দেখে রিসিভশনের মেয়ে গুলো দাঁড়িয়ে গিয়ে হ্যালো বললো।উওরে উনারা হ্যালো বলে সামনে এগোলো।
একজন নার্স মিরা রহমান দের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বললো এনারা পেশেন্টের বাড়িড় লোক ম্যাম।নার্সের কথা শুনে, মিরা ও আজম রহমান চোখ তুলে মোনা খানদের এর দিকে তাকায়,,,তাকিয়ে তারা একটা বড়ো সড়ো একটা ঝটকা খায়,,,মিরা রহমান বসা থেকে দাড়িয়ে যায়,,,মোনা খান দুই পা পিছিয়ে গিয়ে পরে যেতে নিলেই আহাদ খান ধরে ফেলেন।তাদের পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে গেছে,,,এনারা একেক জন আরেক জনের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে।ওনারা সবাই রিতিমতো স্টাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে ।মোনা খান আর মিরা রহমানের চোখ দিয়ে গরিয়ে পানি পরছে।
মোনা খান কাপা কাপা গলায় ডাক দেয়
___”মিরা।”
মোনা খানের ডাকে হুস ফিরে মিরা রহমানের,,,,সে দৌড়ে গিয়ে মোনা খানের পা ধরে জোড়ে শব্দ করে কেদে দেয়,,আর কেদে কেদে বলে
__”আপা আমার ছেলেটাকে বাচিয়ে নাও প্লিজ,,আমি তোমার কাছে আমার ছেলের প্রান ভিক্ষা চাইছি,,,আমার দুই ছেলে মেয়ের অবস্থাই খারাপ,,,আমার উপর একটু দয়া করো,,আমার ছেলেটা কে তুমি বাচিয়ে নাও।”
মোনা খান মিরা রহমান কে ধরে দাড় করালেন ,,তারপর অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলেন
___” বাচিয়ে নেবো মানে ,,কি হয়েছে তো ছেলের?”
মিরা রহমান কাদতে কাদতে বললেন
__”গুলি লেগেছে।প্লিজ আমার ছেলেটাকে বাচিয়ে নাও ।আমার ছেলে মেয়ের কিছু হয়ে গেলে আমি মরে যাবো।”
মোনা খান চমকে উঠলেন।মায়াভরা দৃষ্টিতে মিরা রহমানের মুখের দিকে তাকালেন,,,কতোগুলো বছর পর দেখলেন তার এই বোনটা কে,,,তার সেই ছোট্ট বোনটা কতো বড়ো হয়ে গেছে।আজকে এতোগুলো বছর পর বোনটাকে দেখলেন তাও আবার এই অবস্থায়।বোনটাকে এতো বছর পর কাছে পেয়েও সে খুশি হতে পারছে না কারন তার বোনটা যে খুব কষ্টে আছে।মোনা খান হাত বাড়িয়ে মিরা রহমানের চোখের পানি মুছে দিলেন।একবার বোনকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলেন।তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন
___” ইনশাআল্লাহ ,,,I will try my Best. আজকে যদি তোর ছেলেকে তোর কাছে ফিরিয়ে দিতে না পারি,,,তাহলে আর কোনো দিন এই ডাক্তারের এ্যাপরোনটা পরবো না ।
এখানে উপস্থিত সবাই চমকে উঠে মোনা খানের দিকে তাকালো।কেউ ভাবতেই পারেনি মোনা খান এই কথা বলবেন।
মোনা খান এবং মিরা রহমান দুজন আপন বোন ।আহাদ খান মিরা আর আজম রহমান কে দেখেই চিনতে পেরেছিলেন ,,,আহান এবং আহির বাস্তবে কখনও মিরা রহমানকে না দেখলেও ছবিতে দেখেছে,,,তাই তাদের খালামনি কে চিনতে কোনো আসুবিধা হলো না।
মোনা খান মিরা রহমানকে ছেরে দিয়ে ,,,,তার কপালে একটা চুমু খেলেন তরপর বললেন
__”একদম কান্নাকাটি করবি না,,,তোর ছেলে মেয়ের কিচ্ছু হবে না,,,আমি আছি তো,,,, আমি সব কিছু ঠিক করে দেব।”
মিরা রহমান যেন বোনের কথায় কিছুটা ভরসা পেল,,, মোনা খান মিরা রহমানকে ধরে বসিয়ে দিলেন,,,তারপর আহানের সামনে এসে গলার স্বরটা নিচু করে বললেন
__”আহান তোমার মামাদের ফোন করো ,,,,,,সবাইকে এক্ষুনি এখানে আসতে বলো ।”
আহানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মোনা খান তাড়াতাড়ি করে ওটির মধ্যে চলে গেলেন। এতক্ষন এখানে যা হলো তা শিহাব রহমান এবং সাথী রহমানের মাথার উপর দিয়ে গেল,,,,তাদের মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না কারা এরা,,,মিরা রহমানকেই বা কিভাবে চেনে? কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে,,, শিহাব রহমান এবার অাজম রহমানকে জিঙ্গেস করলেন?
___” আজম কি হচ্ছে এসব,,,এনারা কারা,,, এনারা মিরাকেই বা কিভাবে চেনেন? আর ওই ভদ্র মহিলাকে মিরা কেনই বা আপা ডাকছিল? ওনি তো ডাক্তার মোনা খান ।এই হসপিটালৈর ওনারের wife. তাহলে মিরার সাথে ওনাদের কি সম্পর্ক?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
আজম রহমান কিছু বলতে যাবে,,, তার আগেই আহাদ খান সামনে এগিয়ে আসতে আসতে বললো
__” আমি বলছি।”
শিহাব রহমান এবং সাথি রহমান প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আহাদ খানের দিকে তাকালো,,,আহাদ তাদের সামনে এসে দাড়িয়ে বললোঃ
___”একটু আগে যে ভদ্রমহিলা কে জরিয়ে ধরে মিরা কাদছিলো,,,,উনি হলেন ডক্টর মোনা খান। মিরার আপন বড়ো বোন।আর আমি ডাক্তার মোনার হাসবেন্ড,,, মিরার একমাত্র দুলাভাই,,(তারপর আহান এবং আহিরের দিকে তাকিয়ে বললো) আমার বড় ছেলে আহান আর ছোট ছেলে আহির।তাছাড়া আমার আরো একটা পরিচয় আছে,,,আমি আর আজম একসময় খুব ভালো বন্ধু ছিলাম।আমরা একই ভার্সিটিতে একই ইয়ারে পরতাম।”
আহাদ খানের কথায় শিহাব রহমান এবং সাথি রহমান চমকে উঠলেন ,,, কারন উনারা এতোদিন জানতো ,মিরা রহমানের বাবার বাড়ির লোক খুবই গরিব,,,তাই মিরা রহমানের কেউ কোনো খোজ খবর নেয় না। আর এইজন্য মিরা রহমানকে তার শশুর বাড়ির অনেকেই অনেক অপমান করতো।বিশেষ করে আবিদা রহমান উনি কথায় কথায় মিরা রহমানকে সবার সামনে ছোটলোক বাড়ির মেয়ে বলে অপমান করতেন।মিরা রহমান কিংবা আজম রহমান কখনও বলেননি মিরা রহমানের বাবার বাড়ি কোথায়,, কিংবা বাড়িতে কে কে আছে । আর তার বাবার বাড়ির কোনো লোক এতো বছরে মিরা রহমানের কোনো খোঁজ খবর নেয়নি। তাছাড়া মিরা রহমানকে ছোট ফ্যামিলির মেয়ে বললে সে কখনো কোনো প্রতিবাদ করতো না,,,তাই সবাই এটাই ভাবতো যে তার ফ্যামিলি লোক সত্যিই গরিব।কিন্তু মোনা খান আহাদ খান কে দেখে যথেষ্ট রিচ বলে মনে হচ্ছে শিহাব রহমানের। শিহাব রহমানের ভীষন Confusing লাগছে ব্যাপারটা। confusion দূর করতে সে আজম রহমান এর দিকে তাকিয়ে কিছু প্রশ্ন করতে চাইলো। কিন্তু আজম রহমান তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো
__” আমি জানি ভাইয়া আপনি কি বলবেন,,,আমিও আপনাকে সবটা খুলে বলতে চাই।এটা যদিও বলার সঠিক সময় না,,,তবুও বলবো।আজকে যদি না বলি তাহলে হয়তো আরও দেরি হয়ে যাবে।তাছাড়া অতীত যখন সামনে এসেই গেছে,,,তাহলে সবটা বলে দেওয়াই ভালো।”
________________________________________________________________________________________________
ওটির সামনের করিডোরের একপাশের সিটে বসলেন আহাদ খান,,তার পাশে আজম রহমান,,আর তারপরে শিহাব রহমান।
ওপর পাশে ওনাদের মুখোমুখি হয় বসে আছেন সাথি রহমান,,মিরা রহমান,এবং আহির। আহির একহাতে মিরা রহমানকে জড়িয়ে ধরে আছে,,, মিরা রহমান আহিরের কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছেন।আহান তার মামাদের সাথে ফোনে কথা বলতে একটু নিচে গেছে।এখানে কথা বললে পেশেন্টের ডিষ্টার্ব হবে তাই।নিচে যাওয়ার আগে মিরা রহমানকে একবার জড়িয়ে ধরে,,,কপালে চুমু দিয়ে বলেছে
__” একদম চিন্তা করবে না মামনি। সব ঠিক হয়ে যাবে ,,, তুমি এখানে একটু বসো ,,,আমি নিচ থেকে এখনি আসছি,,”
মিরা রহমান উওরে কিছুই বলেননি শুধু মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো আহানের মুখের দিকে।
আজম খান লম্বা একটা শ্বাস নিলো,,,তারপর গলার স্বরটা একটু আস্তে করে বলা শুরু করলো
___”আমি আর আহাদ খুব ভালো বন্ধু ছিলাম।আমি ইন্টার ফাষ্ট ইয়ারে ঢাকায় ভর্তি হই আর তখন থেকেই ওর সাথে আমার বন্ধুত্ত্ব হয়। আমরা এতটাই ভালো বন্ধু ছিলাম যে একজন আরেকজনকে রেখে একগ্লাস পানিও কখনো খেতাম না।আমাদের যখন অর্নাস শেষ হয়,,তখন আহাদের বাবা জানায় তার বন্ধুর মেয়ের সাথে আহাদের বিয়ে ঠিক করছে।আহাদও বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছিল,,,ও অন্য কাউকে পছন্দ কিংবা ভালোবাসতো না,,,বিয়েতে অমত করার কোনো কারণ ছিলো না।তারপর মোনার সাথে আহাদের বেশ ধুমধাম করে বিয়েটা দেওয়া হয়। তখন থেকেই আমি আহাদের সাথে মাঝে মাঝে মোনাদের বাড়িতে যেতাম,,, আর সেখানেই আমার মিরার সাথে পরিচয় হয়,,,,আর আস্তে আস্তে ওকে ভালোবেসে ফেলি। সবকিছু ঠিকই চলছিল,,,তোমরা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেললে বড় ভাবির বোনের সাথে।আর আমি সেই কথা মিরাকে বলি,,মিরা কোনো উপায় না পেয়ে ওর বাড়ির সবার কাছে আমাদের বিষয়টা বলে দেয়।ওদের বাড়ির কেউ আমাদের সম্পরর্কটা মেনে নেয়নি।কারন জিঙ্গেস করলে মিরার বাবা বলেছিলেন ওনার যতো টাকা আর প্রোপ্রার্টি আছে,,,সেই টাকার প্রোপ্রার্টির চারভাগের একভাগ ও আমার বাবার নেই ।অনেক বোঝানোর পরও মিরার বাবা ভাইরা আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিতে চায় নি।উল্টে মিরার অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করেন।আমি আহাদ আর মোনার কাছেও সাহায্য চেয়ে ছিলাম,, কিন্তু ওরা আমাকে সাফ সাফ জানিয়ে দেয় যে,,ওরা পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো গিয়ে কোনো কথা বলবে না,,,তারচেয়ে আমি যেনো মিরা কে ভুলে যাই সেটাই সবার জন্য ভালো হবে। তাই আমরা আর কোনো উপায় না পেয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে নেই।তোমাদের ইচ্ছে করেই মিরা ওর পরিবারের সম্পর্কে কিছুই বলে নি।কারন তোমরা সত্যিটা জানলে তোমাদের সামনে আমি ছোট হয়ে যেতাম।নিজে তো বলেই নি আমাকে দিয়েও প্রমিজ করিয়ে ছিলো ,,যাতে ওর পরিচয়টা কখনো কাউকে না বলি।নিজে সবার হাজার অপমান সহ্য করেছে,,, কাউকে কখনো এটা বুঝতে দেয় নি যে,, আমরা বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছি ,,,মিরা আমার অযগ্য বলে নয়,,,,আমি ওর অযগ্য বলে।”
কথাগুলো একসঙ্গে বলে থামলো আজম রহমান,,,তারপর আস্তে করে নিজের চোখের কোনে জমে থাকা পানিটা মুছে নিলেন।এবার শিহাব রহমান বেশ আগ্রহ নিয়ে জিঙ্গেস করলো
___” পালিয়ে আসার পর আর কখনো মিরার বাবার বাড়ি গিয়েছিলি?”
আহাদ খান বেশ শান্ত সুরে বললো বাকিটা আমি বলছি। কথাটা শুনেই সবাই ওনার দিকে তাকালো।তারপর ওনি বললো
___”মিরা চলে যাবার পর,,,,সবাই এটা জেনে যায় যে মিরা ওর বয়ফেন্ডের সাথে পালিয়ে গেছে ।মিরার সাথে যে ছেলেটার বিয়ে ঠিক হয়েছিল ,,,,,সেই ছেলেটার বাড়ির লোক ,,মিরাদের বাড়িতে এসে,,,মিরার বাবাকে,, মাকে,,ভাইদের,,মোনাকে,, আমাকে খুব অপমান করে।শুধু ওনারা না পাড়া, প্রতিবেশি,আত্মীয়, স্বজন যে যেখানে পারতো সেখানেই অপমান করতো।আমার আজম আর মিরার উপর ভীষন রাগ হয়েছিল।তাই ওদের কখনো কোনো খোজখবর নেইনি।ওরা যাওয়ার প্রায় তিন বছর পর আমার স্বশুর -স্বাশরি গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট হয়।সেখানেই আমার শ্বাশরির স্পট ডেড হয়।আমার স্বশুরকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।আর তার দুইদিন পর উনি মারা যান। মারা যাওয়ার আগে,,,উনি সবাইকে ডেকে বলেছিলেন,,,উনি মিরাকে আর আজমকে মাফ করে দিয়েছেন।মোনা আর মোনার ভাইদের বলে ওরাও যাতে মিরাদের মাফ করে দেয়।আর ওদের বিয়েটা মেনে নেয়। কিন্তু ওদের মনে মিরার প্রতি অনেক রাগ ছিল ,,,, তাই মাফ তো করেইনি ,,,, উল্টে মিরার মা বাবার মৃত্যুর খবরটাও ওকে জানায়নি।ওনাদের মৃত্যুর পনেরো দিন পর,,,মিরা আর আজম কিভাবে যেন খবরটা পেয়ে যায়।খবরটা শুনেই ওরা মিরাদের বাবার বাড়িতে আসে,,,মোনা আর মোনার ভাইরা ওদের বাসায় ঢুকতে দেয়নি।এমনকি ওর মা বাবার কবরটা কোথায় সেটাও বলেনি।মিরা মোনার পা ধরে অনেক কেদেছিল ,,, কিন্তু মোনার মোন একটুও গলেনি।উল্টে বলেছিল মিরা যাতে কখনও এই বাড়ির চারপাশেও না আসে। সেদিন মিরা কাদতে কাদতে বলেছিলো ও আর কখনও ওই বাড়ি যাবে না। তারপর সেই যে মিরা চলে এসেছিল,,,তারপর আর কোনোদিন ওই বাড়িতে আসেনি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সব কিছু বদলে যায়,,,আমাদের সবার রাগ অভিমান সব কমে গেছিলো। আর ওরাও মিরাকে মাফ করে দিয়েছিল।তারপর মিরাকে আমরা অনেক খুজে ছিলাম কিন্তু কোথাও পাইনি। ”
কথাগুলো বলেই একটা দীর্ঘস্বাস ফেললা আহাদ খান। কথাগুলো শুনে শিহাব রহমান এবং সাথি চোখে পানি এসে গেছে।
#ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_5
রাত 1:25 বাজে।…..
আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো মেঘ। মাথাটা ভিষন ভারি হয়ে আছে মাথায় চিনচিনে ব্যাথ্যা অনুভব করলো।চারপাশে ভালো করে তাকালো ,,,একটু নড়াচড়া করতেই হাতে কিছুতে টান খেলো।মেঘ তাকিয়ে দেখলো তার হাতে স্যালাইন লাগানো ,,,গায়ে হাসপাতালের ড্রেস,,,মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগানো।তারমানে সে হাসপাতালে আছে।হাসপাতালের কথা মনে হতেই তার মিহিরের কথা মনে পরল,,,চোখের সামনে ভেষে উঠলো মিহিরের রক্তাক্ত শরীরটা ,,, মূহুর্তেই মেঘ হাইপার হয়ে গেল,,,তার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে তার ভাইয়া কোথায় আছে?কেমন আছে?পাগলের মতো বিরবির করে বলতে লাগলো,, আমাকে ভাইয়ার কাছে যেতে হবে,,,কথাগুলো বলতে বলতে মেঘ শোয়া থেকে উঠে বসলো,,,হাত থেকে টান দিয়ে ক্যানোলা সহো স্যাল্যাইন খুলে ফেললো,,,মুখের অক্সিজেন মাক্সটা ছুটিয়ে ফেললো,,,শ্বাস নিতে ভিষন কষ্ট হচ্ছে মেঘের,,,কন্তু সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই।সে বেড থেকে উঠে দাড়িয়ে একপ্রকার দৌরে বাইরে চলে গেল।
________________________________________________________________________________________________
ওটির বাইরে বসে আছে সবাই,,,সবার মুখেই চিন্তার ছাপ।একটু আগে একজন নার্স ওটি থেকে বাইরে বের হয়েছিল,,তাকে মিহিরের কথা জিঙ্গেস করায় সে বলে ,,,পেশেন্টর অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। আহান একপাশের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে,,,একটু আগে সে তার মামাদের সাথে ফোনে কথা বলে উপরে এসেছে।তার মামা-মামি,ভাই -বোনরা সবাই এখানে আসতেছে।মিরার কথা শুনেই সবাই সাথে সাথে হাসপাতালের উদ্যেশে রওনা দিয়েছেন।
মা,,. কারো ডাক শুনে চোখ তুলে সেদিকে তাকায় সবাই,,,তাকিয়ে সবাই হতবম্ব হয়ে যায়।মেঘ দাড়িয়ে আছে ,,,হাত দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে,,,জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে,,,দেখেই বোঝা যাচ্ছে শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।চোখ দুটো অসম্বব লাল হয়ে আছে,,, এইটুকু সময়ের মধ্যে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে।আহান একদৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে এতক্ষন মেঘকে পর্যবেক্ষন করছিলো,,,তার মনে একটা প্রশ্ন জাগলো ,,,কে এই মেয়েটা?মিরা রহমান এর কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বের হলো আহান। মিরা রহমান বসা থেকে দাড়িয়ে গিয়ে বেশ উএেজিত হয়ে বললে
___”মেঘ তুমি কেন এখানে উঠে এসেছো?”
মেঘ ভাংগা গলায় বললো
__”ম মা, ভ ভাইয়া কোথায়,,,,আ আমি ভাইয়ার কাছে যাবো।”
মেঘ ঠিক ভাবে দাড়াতে পাড়ছে না,,,কথা বলার সময় সব কথা গলায় আটকে যাচ্ছে,,,ঠিক করে কথা বলতে পারছে না,,,মেঘের হাত পা কাপছে মনে হচ্ছে এখনি পরে যাবে,,,মিরা রহমান গিয়ে মেঘকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলেন,,,আহান , আহির,আহাদ খান বুঝতে পারলেন এটাই মিরার মেয়ে।কিন্তু ওদের মনে একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে ,,,,ওর হয়েছে টা কি এভাবে কেনো বিহেব করছে?আজম রহমান মেয়েকে শান্ত করার জন্য বললেন
__” মামনি তোমার ভাইয়া একদম ঠিক আছে।কিচ্ছু হয়নি মিহিরের।”
__”তাহলে আমাকে এক্ষনি ভাইয়ার কাছে নিয়ে চলো,,,আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলবো।”
মিরা রহমান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো
__”,তুমি তো এখন অসুস্থ মেঘ ,,,একটু সুস্থ হও,,,তারপর তোমাকে তোমার ভাইয়ার কাছে নিয়ে যাবো।”
মেঘ এবার মিরা রহমানকে জোরে ধাক্বা দিয়ে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো,,,তারপর চেচিয়ে বলতে লাগলো
__” তোমরা মিথ্যে বলছো,,, তোমরা পরে আমাকে আমার ভাইয়ার কাছে নিয়ে যাবে না। ”
কথাটা বলেই আসে পাশে তাকিয়ে কিছু খুজতে লাগলো।কিছু নার্স মেঘের চেচামেচি শুনে এখানে দৌড়ে এসেছে।তাদের মধ্যে এজনের হাতে একটা ট্রে,,,,আর সেই ট্রেটার মধ্যে কিছু Surgical instument (সারজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট),,,,মেঘ নার্সটার কাছে গিয়ে নার্সটা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছো মেরে ট্রে থেকে একটা surgical knife নিয়ে নেয়,,,তারপর সেটা হাতে জোরে চেপে ধরে ,,,আর বলে
___”ত তোমরা আমাকে এ এখনি আ আমার ভাইয়ার কাছে নিয়ে য যাবে,,, নয়তো আমি আমার হাত কেটে ফেলবো।”
মেঘের এরকম কাজে সবাই শকড হয়ে গেছে,,,কি করবে ওনারা কিছুই বুঝতে পাড়ছে না,,সবাই মেঘকে হাত থেকে নাইফটা ফেলে দিতে বলছে,,,,কিন্তু মেঘ কারোর কথা শুনছে না,,,ওর কাছে কেউ এগিয়ে আসলেই নাইফটা আরো জোরে হাতে চেপে ধরে,,,তাই ভয়ে কেউ সামনে এগিয়ে যেতেও পারছে না,,,,সবাই এটা সেটা বলে মেঘের মাইন্ড ডিসট্যাক করার চেষ্টা করছে,,,ঠিক সেই মূহুর্তে আহান খুব সর্তকে মেঘের কাছাকাছি চলে গেল,,,মেঘ আহান কে দেখে দুপা পিছিয়ে গিয়ে কান্নাভেজা গলায় বললো,,,
__” দেখুন একদম আমার দিকে এগোবেন না ।তাহলে কিন্তু আমি আমার হাত কেটে ফেলবো।(তারপর কাদতে কাদতে বললো)আমি তোমাদের কাছে তো আর বেশি কিছু চাইছি না,,,শুধু আমার ভাইয়া কে একটু দেখতে চাইছি,,,শুধু একটুখানি দেখেই চলে আসবো প্রমিজ,,,(আহানের দিকে তাকিয়ে বললো) ওরা আমায় নিয়ে যাচ্ছে না, আপনি একটু আমাকে আমার ভাইয়ার কাছে নিয়ে যাবেন প্লিজ।”
মেঘের শেষের কথাটা আহানের বুকে গিয়ে লাগলো। সে চমকে উঠে মেঘের চোখের দিকে তাকালো,,, অসম্ভব মায়াবি দুটো চোখ,,, চোখ দিয়ে পানি পরছে,,,কান্নার কারনে গোলাপি ঠোট দুটো বারবার কেপে কেপে উঠছে,,,, চোখের ঘনো পাপড়ি গুলো চোখের পানিতে একদম ভেজা,,,,চোখ দুটো সামান্য ফোলা,,,, নাকের ডগা, গাল কান্নার কারনে লাল হয়ে আছে। আহান মেঘের চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকালো,,,এই চোখের ভাষা যেনো সে খুব সহযেই পড়ে ফেললো।।এই চোখে যেনো লুকিয়ে আছে হাজারো কষ্ট যন্ত্রণা।, সে নিযের মনকে প্রশ্ন করলো আচ্ছা কিসের এতো কষ্ট এই মেয়েটার?এই মূহুর্তে ,, তার খুব ইচ্ছে করছে মেঘকে একবার ছুয়ে দিতে,,,তারপর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলতে এই পিচ্চি মায়াপরি তোমার এই মায়া ভরা চোখে পানি একদম মানায় না। কেদো না প্লিজ,,,তোমার কান্না দেখে কোনো এক অজানা কারনে আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে।আমি তোমার চোখের পানি কিছুতেই সহ্য করতে পারছি না।
কিন্তু কথাগুলো তার মনেই থেকে গেল,,,মুখে আর বলা হলো না,,, শুকনো একটা ঢোক গিলে নিজেকে সামলে নেয়।তারপর মেঘের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে
__” মেঘ তুমি না চাইলে আমি তোমার দিকে একদম এগোবো না,,,,এনারাও কেউ এগোবে না। প্লিজ তুমি হাত থেকে নাইফটা ফেলে দাও,,,হাতটা অনেক কেটে গেছে।আমরা তোমার সব কথা শুনবো বিলিভ মি।”
__”আমি এত কিছু শুনতে চাই না,,,আমি এক্ষুনি আমার ভাইয়ার কাছে যাবো,,,এক্ষুনি মানে এক্ষুনি।
আহান বললো
“__মেঘ আমার দিকে তাকাও”
আহানের কথায় মেঘ আহানের চোখের দিকে তাকালো,,,আহান একটা মুচকি হাসি দিয়ে আহ্লাদি গলায় বললো
__”তোমার ভাইয়া ওটিতে আছে,,,আমার মা তোমার ভাইয়ার অপারেশন করছে,,,অপারেশন শেষ হলে যখন তোমার ভাইয়া তোমাকে দেখতে চাইবে,,,,তখন যদি শোনে তুমি নিজেকে এভাবে হার্ট করেছো,,,,তখন তোমার ভাইয়া কতটা কষ্ট পাবে একবার ভেবে দেখেছো।”
মেঘ এক ধ্যানে আহানের মুখের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো শুনছিলো,,,আহান সেই সুযোগে কথাগুলো বলতে বলতে মেঘের দিকে এক পা দু পা করে এগিয়ে গেলো।তারপর মেঘকে একটা হেচকা টান দিয়ে মেঘের পিঠ তার বুকের সাথে ঠেকিয়ে দাড় করায় ।আহান তার একহাত মেঘের দুইহাত চেপে ধরে,,,আর অন্য হাত দিয়ে নাইফটা নিয়ে নিচে ছুড়ে মাড়ে।মেঘ নিজেকে আহানের থেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছে।আহান আরও শক্ত করে মেঘকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো,,তারপর আহান তার হাতের দুই আঙুল দিয়ে মেঘের কানের একটু নিচে জোড়ে চাপ দিলো,,,সাথে সাথে মেঘ সেন্সলেস হয়ে আহানের বুকে ঢলে পড়লো।
সবাই একটা সস্তির নিশ্বাষ ফেললো। এতক্ষন এখানে চেচামেচির কারনে অনেকেই এসে ভির করেছে।এদের মধ্যে কিছু ডাক্তার নার্স আর অন্যান্য পেশেন্টের বাড়ির লোক ।আহান মেঘকে কোলে তুলে নিল তারপর সবার দিক তাকিয়ে রেগে চেচিয়ে বললো
__”এখানে সার্রকাস চলছে না।যে সবাই দাড়িয়ে দাড়িয়ে তামাশা দেখছেন।”
আহানের ধমকে সবাই কেপে উঠলো,,,ওখানে যারা বাইরের লোক ছিল তারা দ্রুত সেখান থেকে চলে গেল।আহান মেঘকে কোলে নিয়ে কেবিনের ভিতরে ঢুকলো,,,ওদের পিছনে পিছনে ওদের পরিবারের সবাই ঢুকলো,,,বাইরে দাড়িয়ে থাকা ডাক্তার নার্সরা ভিতরে ঢুকে এক কোনায় মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।আহানের ভয়ে সামনে এগোচ্ছে না,,,,ওর রাগ সম্পর্কে সবার ধারনা আছে।
আহান মেঘকে বেডে শুয়িয়ে দিয়ে ডাক্তারদের দিকে ঘুরে রাগি গলায় বললোঃ
__” এবার আপাদের কি ট্রিটমেন্ট করার জন্য স্পেসাল ভাবে বলা লাগবে।”
এবার ডাক্তাররা দ্রুত এসে মেঘের ট্রিটমেন্ট শুধু করলো।আহান রাগি দৃষ্টিতে এখনো ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।সেটা খেয়াল করে একজন ডাক্তার বললোঃ
___” সরি স্যার।”
আহান রেগে চেচিয়ে বললো
__”go to hell you and with you’re sorry.”😡😡😡
আহাদ খান শান্ত গলায় বললো
” behave yourself আহান,,,এটা hospital এখানে এতো চেচামেচি কেন করছো।”
__” exactly বাবা এটা একটা hospital,,,,এখানে প্রত্যেকটা কেবিনে রোগীর পাশে একজন করে নার্স থাকার কথা। তাহলে এই কেবিনে কেনো ছিলো না বাবা ।আজকে যদি এদের কেয়ারলেসির জন্য এই মেয়েটার কিছু হয়ে যেতো তখন কি হতো।কাদের কাছে হসপিটালের দ্বায়িত্ব দিয়েছো বাবা,,,যারা ঠিকঠাক ভাবে রোগিটা অবদি সামলাতে পারে না। তারা আবার এতো বড়ো হসপিটাল কিভাবে সামলাবে।”
আহাদ খান কি বলবে বুঝতে পারছে না,,,তার ছেলে যে কথাগুলো বলছে তা ঠিক বলছে,,,কিন্ত ওকে এখন থামাতে হবে যা রেগে আছে তাতে সব ডাক্তার নার্সদের চাকরি তো খাবেই,,,নিজের বাবাকেও ছাড়বে না।তাই সে ব্যাপারটা সামলাতে আহানকে বললো
__” একটু শান্ত হও আহান,,,ওদের তরফ থেকে আমি তোমাকে সরি বলছি,,ওদের একটা ভুল হয়ে গেছে এর পরের বার থেকে আর হবে না,,,আমি নিজে এই ব্যাপারটা দেখবো। তুমি এখানে এভাবে চেচামেচি করলে মেঘের কষ্ট হবে।আর ডাক্তাররা ঠিক ভাবে ট্রিটমেন্ট টা করতে পারবে না।”
আহান তার বাবার কথায় কিছুটা শান্ত হলো।তারপর তার বাবার দিক থেকে ঘুরে একবার মেঘের দিকে তাকিয়ে কেবিন দেকে বেড়িয়ে গেল।
আহান বের হতেই ডাক্তাররা যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো।
একজন ডাক্তার আহাদ খানের দিকে তাকিয়ে বললো
__’স্যার যদি কিছু মনে না করেন ,,,আপনারা একটু বাইরে গেলে ভালো হতো,,,এখানে এতোজন থাকলে রোগীর সমস্যা হবে।”
আহাদ খান ঠিক আছে বলে,, সবাইকে নিয়ে বাইরে বের হয়ে এলো।
ভোর সাড়ে চারটা,,,একটু আগেই মিহিরের অপারেশন শেষ হয়েছে,,, শুরুতে কপ্লিকেশন হলেও এখন মোটামুটি ঠিক আছে,,,এখনও সেন্স ফিরেনি,,,আপাততো ডাক্তাররা মিহিরকে icu তে আন্ডার ওফজারবেশনে রেখেছেন,,,সেন্স ফিরলে কিছু টেষ্ট করে তারপর কেবিনে শিফট করা হবে। এদিকে মেঘ বারবার বিড়বিড় করে ভাইয়া ভাইয়া করছে,,, বারবার হাইপার হয়ে যাচ্ছে এভাবে করতে থাকলে ওর শরীর আরো খারাপ হতে পারে,,, তাই জন্য মোনা খান,,ডাক্তার রিয়া চৌধুরী এবং ডাক্তার সায়িদ চৌধুরী মিলে ডিসিশন নিয়েছেন,,,মেঘকে মিহিরের কাছে নিয়ে গিয়ে এটা দেখিয়ে নিয়ে আসবে যে মিহির একদম ঠিক আছে,,,তাহলেই হয়তো মেঘের কন্ডিশন কিছুটা ভালো হতে পারে।
সাইদ চৌধুরী হলো মোনা আর মিরার ছোট ভাই,,,রিয়া চৌধুরী হলো সাইদের ওয়াইফ।মিরা রহমানেররা চার ভাই বোন।দুই ভাই দুই বোন।
সবার বড়ো হলেন হাসান চৌধুরী,,,পেশায় একজন বিজনেস ম্যান,,,ওনার ওয়াইফের নাম শারমিন পেশায় একজন টিচার,,,ওনাদের এক ছেলে এক মেয়ে,,,,বড় ছেলের নাম হলো হিয়ান।আহানের সাথে লন্ডনের একই ভার্সিটিতে একই ক্লাসে পড়ে।ছোট মেয়ের নাম হলো হিমানি,,সবাই হিমা বলে ডাকে।লন্ডনের একটা law কলেজে পড়াশোনা করে।দুই মাস আগে হিমার বিয়ে হয়েছে,,,ওর বরের নাম রিয়ান।আহান এবং হিয়ানের ব্যাসমেইড এবং বেস্টফ্রেন্ড। হিমা আর রিয়ানের লাভ ম্যারেজ হয়েছে,,,মূলতো এই বিয়ের জন্যই আহান, হিয়ান,হিমা,রিয়ান বাংলাদেশে এসেছে।বিয়েটা যেহেতু শেষ হয়ে গেছে তাই ওরা কিছুদিন পর সবাই আবার লন্ডনে চলে যাবে।
আর মেজ হলো মোনা খান,,সেজ হলো মিরা রহমান।
সবার ছোট সাইদ চৌধুরী ,,, ওনি এবং ওনার ওয়াইফ দুইজনই ডাক্তার,,,ওনার তিন ছেলেমেয়ে,,,বড় দুই মেয়ে টুইনজ,,,তাদের মধ্যে বড় হলো সারিকা আর এক মিনিটের ছোট হলো সাইফা।দুজন ক্লাস নাইনে পড়ে। আর ছোট ছেলে নাম হলো ছাহীর ক্লাস ফাইবে পড়ে।
আহান ফোনে কথা বলার কিছুক্ষন পরই ওনারা সবাই এখানে এসে পড়েছিলেন।ওনারা এখানে এসে রিতিমতো সবাই শকড ছিলেন,,,,কোনোদিন যে মিরা রহমানকে ফিরে পাবেন সেটা ভাবতেও পারেনি কেউ,,,তার উপর আবার মেঘ আর মিহির কে দেখে যতোটুকু মনের অভিমান বাকি ছিলো সেটুকু উড়ে গেছে,,, এখন তাদের কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে কেনো মিরা রহমানকে সেদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলো,,,তাদের আদরের বোনটা এতটাই অভিমান করেছিল যে এতো বছরে সে কেমন আছে কোথায় আছে ভাইবোনদের কাউকে জানায় নি,,,,মিরা রহমান ভাই ভাবিদের জরিয়ে ধরে অনেক কেদেছে,,,,এতো বছর পর আবার নিজের পরিবার কে দেখে, আর তাদের উপর রেগে থাকতে পারেন নি,,, এতো বছরের সব রাগ অভিমান নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে।
Icu এর বাইরে দাঁড়িয়ে আছে হাসান চৌধুরী,, শারমিন চৌধুরী,,হিয়ান,,হিমা,,রিয়ান,,আহীর,,সারিকা সাইফা,, ছাহির,,আহাদ খান, শিহাব রহমান,,শাথি রহমান,মিরা ও আজম রহমান।স্ট্রেচারে করে কেবিন থেকে বের করে মেঘকে icu তে নিয়ে যাওয়া হলো,,,ওর সাথে সাথে মোনা খান,,আহান,,রিয়া চৌধুরী ,,সাইদ চৌধুরীও ডুকলেন।যেহেতু সবাই icu তে ঢুকতে পারবে না তাই আহীর আহানকে কল করে ফোনটা স্পিকারে দিলো,,,কারন সবাই শুনতে চায় মেঘ ঠিক কি কথা বলে।
মেঘের স্ট্রেচার টা এনে মিহিরের বেডের পাশে রাখা হলো,,,মেঘের মাথার পাশে এসে আহান এবং মোনা খান দাড়ালো,,,মিহিরের ওই পাশে দুইজন ডাক্তার আর একজন নার্স,,,মিহির আর মেঘের পায়ের কাছের দিকে দাড়িয়ে আছে রিয়া এবং সাইদ চৌধুরী।
ওখানে থাকা একজন ডাক্তার বললো
__” ডাঃ মোনা ও যদি আবার হাইপার হয়ে যায় তাহলে তো আবার নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে,,,তাছাড়া যদি এখানে ভাংচুর করে তাহলে তো (মিহিরকে দেখিয়ে বললো) এই পেশেন্টরও ক্ষতি হতে পারে।”
মোনা খান বেশ ঠান্ডা গলায় বললেন
__”No Doctor. মেঘ হাইপার হলেও কিছু করতে পারবে না,, কিছুক্ষণ আগে ওর স্যালাইনে হাই ডোজের ঘুমের ঔষধ ইনজেক্ট করা হয়েছে,, যেটা স্যালাইনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ওর শরীরে গিয়ে ওকে অনেকটা দূর্রবল করে দিয়েছে,,, হয়তো স্যালাইনটা আর পাচ মিনিট চলতেই ও ঘুমিয়ে পড়বে।”
মেঘ নিভু নিভু চোখে মিহিরের দিকে তাকালো,,,মিহিরের চোখ বন্ধ করা,, একহাতে স্যালাইন দিচ্ছে ,,অন্য হাতে ব্লাড দেওয়া হচ্ছে,,বুকে ব্যান্ডেস করা,,,মুখে অক্সিজেন লাগানো,,হার্ট রেট মনিটরের টুড টুড শব্দ শোনা যাচ্ছে,,,মিহিরের এই অবস্থা দেখে মেঘের চোখের কোন থেকে গড়িয়ে পানি পড়ছে,,,মেঘ নিজের ব্যান্ডেজ করা হাতটা উঠিয়ে মুখের অক্সিজেন মাক্সটা খুলে ফেললো,,,তারপর কাপা কাপা হাতে এক হাত মিহিরের হাতের উপড়ে রেখে ভাংগা গলায় বললো
__” I’m sorry vaiya .i’m really very sorry. এই সবকিছু আমার জন্য হয়েছে। আমার জন্য তুমি এতটা কষ্ট পাচ্ছো,,,তুমি কেনো আমাকে বাচাতে গেলে,,,আমি মরে গেলেই ভালো হতো,,,আমি সবাইকে কষ্ট দেই প্রথমে আমার জন্য মাম্মাম বাবাই সবার সামনে এতো অপমানিত হলো, আর এখন আমাকে বাচাতে গিয়ে তোমার গুলি লেগেছে,,,,আমি খুব খারাপ ,, আমি সবসময় সবার কষ্টের কারন হয়ে যাই,,,,ভাইয়া আমার সাথে একটু কথা বলবে না?,,,তুমিও কি আমার সাথে রাগ করেছো,,,একটু কথা বলো না প্লিজ,,,কতোগুলো দিন তোমার সাথে ঠিক করে কথা বলা হয়নি,,, একসাথে আইসক্রিম খাওয়া হয়নি। যানো তুমি যখন আমার পাশে বসে এটা ওটা বলে আমাকে হাসানোর চেষ্টা করতে আর আমি চুপচাপ থাকতাম,তখন আমার খুব কষ্ট হতো,,,ইচ্ছে করতো একবার জরিয়ে ধরে বলি ভাইয়া আমি মরে যেতে চাই, ওরা সবাই মিলে বাজে বাজে কথা বলে তোমার বোনকে অপবিএ বানিয়ে দিয়েছে,,,তোমার বোনের বেচে থাকা মুসকিল বানিয়ে দিয়েছে,,,তুমি আমাকে নিজের হাতে শেষ করে দাও ভাইয়া। কিন্তু বলতে পারিনি , সবাই অবহেলা করলেও আমার ভাইয়া তো আমাকে ভালোবাসে ,,,এই একটা কারন আমার বেচে থাকার জন্য যথেষ্ট ছিলো।তুমি আমায় ছেড়ে কোথাও যেও প্লিজ।”
কথাগুলো বলতে বলতে মেঘ চোখ বন্ধ করলো ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বিরবির করে বললো
__”Love you vaiya. আমাকে ছেড়ে কখনো কোথাও যেও না প্লিজ। তারাতারি সুস্থ হয়ে যাও। নিজের জন্য নয় তোমার বোনের জন্য তোমাকে সুস্থ হতে হবে।”
চলবে…….
#চলবে…