ভালোবাসার অনুভূতি পর্ব -০৬+৭+৮

##ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ_6
” love u vaiya.আমাকে ছেড়ে কখনো কোথাও যেও না প্লিজ। তারাতারি সুস্থ হয়ে যাও। নিজের জন‍্য নয় তোমার বোনের জন‍্য তোমাকে সুস্থ হতে হবে। তুমি কি বুঝতে পারছো না তোমার বোনটার খুব কষ্ট হচ্ছে ।”

এটুকু বলেই মেঘ চুপ হয়ে গেলো । সবাই বুঝতে পারলো মেঘ ঘুমিয়ে গেছে। সবার চোখ থেকে পানি পড়ছে। মেঘের কথাগুলো শুনে কেউ নিজেদের সামলাতে পাড়েননি।

মোনা খান নিজের চোখের পানি মুছে মেঘের কপালে একটা চুমু খেয়ে আহানের দিকে তাকালো। তাকিয়েই ওবাক হয়ে গেলো আহান এক দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে ।চোখের পাপড়ি গুলো ভেজা,, ঠোট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। আহানকে শেষ কবে তিনি কাদতে দেখেছে তার মনে নেই। তার এই ছেলে সবসময়ই সিরিয়াস মুডে থাকে। সেই ছেলে আজকে একটা মেয়ের জন‍্য কাদছে কথাটা ভাবতেই আরেক দফা অবাক হলেন তিনি।
আহান ফোনটা কেটে হনহন করে ওটি থেকে বের হয়ে সোজা মিরা রহমানের সামনে গিয়ে দাড়ালো।ওর পিছনে পিছনে মোনা খান রিয়া চৌধুরী এবং সজিদ চৌধুরীও আসলেন।মিরা রহমান বসে বসে নিশব্দে কাদছিলেন । ওনারা সবাই বাহিরে বসে এতক্ষন ফোনে মেঘের সব কথা শুনছিলো। আহানকে দেখে মিরা রহমান উঠে দাড়ালো ।আহান মিরা রহমানের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় জিঙ্গেস করে

“মামনি আই হোপ মেঘ এতক্ষন যা বলেছে তোমরা সবটাই শুনেছো ,, আমি এটা জানতে চাই যে মেঘের এসব কথার মানে কি? আর মিহিরের এই অবস্থা কিকরে হলো? মেঘ কেনই বা বললো যে সবাই ওকে বাজে কথা বলে অপবিএ বানিয়ে দিয়েছে? ওর জন‍্য তোমাদের অপমান সহ‍্য করতে হয়েছে ?অ‍্যাকচুলি ওর সাথে হয়েছেটা কি?”

মিরা রহমান সবার দিকে তাকিয়ে দেখলেন সবাই প্রশ্নসুচক দৃষ্টিতে ওনার দিকেই তাকিয়ে আছেন। ওনি চোখের পানি মুছে লম্বা একটা শ্বাস নিলেন।তারপর এক এক করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটাই বললেন ।মেঘের বিয়ে ভাঙা থেকে শুরু করে মিহিরের গুলি লাগা পর্যন্ত সব ঘটনা ।

সবাই সবটা শুনে বড়োসড়ো ঝটকা খেলো।
মিরা রহমান কথাগুলো বলতে বলতে শব্দ করে কেদে দিলেন।এই মূহুর্তে মোনা খানের নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে। নিজের সো কলড ইগোর জন‍্য তার বোনটা সবার কাছে কতটা অপমানিত হয়েছে। শুধু তাই নয় মেঘ আর মিহিরের এই অবস্থার জন‍্য কোনো না কোনো ভাবে ওনারাই দায়ী। যদি নিজের বোনের ছোট্ট ভুলটাকে যদি ক্ষমা করে দিতেন।তাহলে হয়তো আজকের দিনটা অন‍্য রকম হতো। হাসান চৌধুরী সাজিদ চৌধুরীরও একই কথা ভাবছেন। আহানের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে ।চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝরছে। রেগে দাতে দাত চেপে আজম রহমান ও মিরা রহমানকে উদ‍্যেশ‍্য করে বললো

“লাইক সিরিআসলি। আপনারা এইটুকু একটা পিচ্চি মেয়ের বিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন।আই কান্ট বিলিভ দিস।কতোটুকু বয়স ওর । ডু হ‍্যাব এ এ‍্যানি আইডিয়া আপনারা কি করতে যাচ্ছিলেন ।আপনারা
কেমন বাবা মা ? আমি তো ভাবতেই পারছি না আজকের যুগে এসে আপানারা এরকম কাজ করেছেন।”

আহানের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে ।ইচ্ছে করছে এখানের সব কিছু ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে ।ও ওখানে আর এক মিনিটও দাড়ালো না হনহন করে হসপিটাল থেকে বাইরে বের হয়ে গেলো।

________________________________________________

হাসপাতালের বেডের উপর এক পাশে গুটি শুটি মেরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে মেঘ। তার পাশেই মিহির বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে এক হাত দিয়ে মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর হাত দিয়ে ফোন স্ক্রল করছে।

“Good Eveing গাইস । ”

খুব পরিচত একটা কন্ঠ শুনে ফোন থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকালো মিহির। তাকিয়েই মিহিরের ঠোটের কোনে মুচকি হাসি ফুটে উটলো। দরজার সামনে আহান, আহির, হিয়ান, হিমা, রিয়ান, দাড়িয়ে আছে।মিহির ঠোটে হাসি রেখেই বললো

” Good Eveing হিমা আপু।”

হিমা কেবিনে ডুকতে ঢুকতে বললো

“এখন কেমন আছি?”

“আপু তুমি সারাদিন আমার সাথেই ছিলে তিনটার দিকে বাসায় গেছো ।এখন মাএ সাতটা বাজে এইটুকু সময়ের মধ‍্যে আমার কি হবে?এতো চিন্তা কেনো করো বলতো?”

” তো আমার ভাইটা অসুস্থ এতো বড় একটা অপারেশন হয়েছে ।আর আমার এইটুকু চিন্তা হবে না।”

মিহির অসহায় মুখ করে বললো

“আপু এটাকে চিন্তা করা বলে না। প‍্যামপার করা বলে। তোমরা সবাই মিলে যা শুরু করেছো তাতে আমার নিজেকে দুই বছরের বাচ্চা মনে হচ্ছে।”

মিহিরের কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। হিমা হাসতে হাসতে হাত দিয়ে মিহিরের মাথার চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলো

— “আমার এই ভাইটাকে তো ছোট্ট বেলায় একটুও আদর করতে পারিনি ।তাই একসাথে সব পুষিয়ে নিচ্ছি।বলেই মিহিরের বেডের পাশের চেয়ারের উপর বসলো।”

কারো কথার শব্দ কানে আসতেই পিট পিট করে চোখ খুললো মেঘ। মিহির মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ায় চোখটা একটু লেগে গিয়েছিল। ঘুমু ঘুমু চোখে সামনে তাকাতেই বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে ফেললো। মুখের এক্সপ্রেশন এমন হয়ে গেলো যেনো কেউ ওকে করলার জুস খাইয়ে দিয়েছে। মেঘদের বেডের পায়ের কাছের স্টানে উপরে দুই হাত রেখে ভর দিয়ে দাড়িয়ে হেসে হেসে কথা বলছে আহান। এই একজনকে মেঘ একদম সজ‍্য করতে পারে না। গত দশ দিন ধরে ওর জিবনটা তেজপাতা বানিয়ে দিয়েছে। এই দশ দিনে আহান মেঘকে যতোগুলো ধমক দিয়েছে তা এই ষোলো বছরে ওর মা বাবা ভাইও ওকে দেয়নি।দেখতে কি সুন্দর কিন্তু আস্ত একটা খচ্চর।দশ দিন আগে যখন মেঘের সেন্স এসেছিলো তখন চোখ খুলে দ্বীতিয় বারের মতো আহানকে দেখেছিলো।নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে দেখেছিলো তার বেডের পাশের টুলে বসে একটা ছেলে ফোন স্ক্রল করছে।ছেলেটার গায়ের রং ফর্সা,,ঠোট দুটো হালকা গোলাপি,, মাথার সিল্কি চুলগুলো এলোমেলো,, চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে আছে,,, দেখেই বোঝা যাচ্ছে ঘুম না হওয়ার জন‍্য এই অবস্থা।গায়ের এ‍্যাস কালারের একটা টিসার্ট পড়া। ফর্সা শরিরে এ‍্যাশ কালারের টিশার্ট টা এই ছেলেটার সুন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। ছেলেটাকে দেখে বড্ড ক্লান্ত মনে হচ্ছে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো ছেলেটার এই ক্লান্ত মুখটা দেখতে মেঘের ভীষন ভালো লেগেছিলো।তার লাইফে প্রথম বার সে কারো উপরে ক্রাস খেয়েছিলো। তারপর সুস্থ হওয়ার পর যখন ওদের দুই ভাইবোনকে আহানদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।তখন ওরা ভীষন রকমের শকড হলেও পরে নিজেদের সামনে নিয়েছিলো।ইতিমধ‍্যে ওদের সবার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে। ওরা মেঘদের সাথে এমন ব‍্যবহার করে যেনো ওরা অনেক দিনের পরিচিত।এদের মধ‍্যে একমাএ আহান সেই ব‍্যাক্তি যে কথায় কথায় মেঘকে ধমক দেয়।প্রথমে ওকে দেখে মেঘ যে ক্রাশ খেয়েছিলো তা এখন ধমক খেয়ে খেয়ে বাশে পরিনত হয়েছে।

“যাক ঘুম কুমারির ঘুম ভাঙলো তাহলে ”

আহিরের কথায় ভাবনার জগত থেকে বেড় হয়ে এলো মেঘ।তাকিয়ে দেখলো আহির তার পাশেই দারিয়ে আছে।মেঘ আহিরের দিকে তাকিয়ে একটি মুচকি হাসি দিয়ে বললো

“গুড ইভেনিং ভাইয়া।”

আহির ও মুচকি হেসে বললো

“গুড ইভেনিং মাই ক্লাউড”

আহান মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো

এই সন্ধ্যা বেলায় কেনো ঘুমিয়েছিলে?এই অসময়ে কেউ ঘুমায়?সারাদিন অনিয়ম না করলে পেটের ভাত হজম হয়না তাইনা।

মূহুর্তেই মেঘের হাসি গায়েব হয়ে গেলো বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে বিরবির করে বললো

“ব‍্যাস আসতে না আসতেই শুরু হয়ে গেলো।চলতি ফিরতি ডিসিপ্লিনের ফ‍্যাক্টরি কোথাকার।”

কথাটা বিরবির করে বললেও সবাই শুনতে পেলো। সবাই হু হা করে হাসতে লাগলো। আহান রাগি চোখে মেঘের তাকালো আহান এভাবে তাকাতেই মেঘ ভয়ে চুপসে গেলো। আহির আহানকে উদ‍্যেশ‍্য করে বললো

” ভেরি ব‍্যাড ব্রো। আমার বোনের দিকে একদম রাগি চোখে তাকাবে না।”

রিয়ান সিরিয়াস হওয়ার ভান করে বললো

“খবরদার আহান আমার শালিকাকে একদম ভয় দেখাবি না।তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

মিহির অভিযোগের স্বরে বললো

“ব্রো তুমি ওদের কারও কথা শুনবে না। ও কাল রাত চারটা পর্যন্ত বসে বসে আমার ফোন দিয়ে গেমস খেলছে।বারবার বারন করেছি কিন্তু আমার একটা কথাও শুনেনি।রাতে ঘুমাতে পারেনি তাই এতোক্ষন পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিল।আমি বলেছিলাম তোমাকে বলে দেবো কিন্তু ও বললো ও নাকি তোমাকে ভয় পায় না।”

মেঘ কটমট করে মিহিরের দিকে তাকালো কিন্তু মিহির ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে রইলো।আহান রাগি চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। আহানকে এভাবে তাকাতে দেখে মেঘের আত্মারাম খাচা ছাড়া হয়ে গেলো। কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে শোয়া থেকে উঠে বসলো। ও বুঝতে পারছে আজকে ওর কপালে শুনি আছে ।আহান খুব শান্ত কন্ঠ মেঘকে বললো

“মেঘ তারাতারি ফ্রেস হয়ে রেডি হও আমারা এখন
বের হবো।”

মেঘ কাপা কাপা গলায় বললো

“ক্ কোথায়?”

” শপিং মলে যাবো।”

” ক্ কেনো?”

আহান ঝাঝালো কন্ঠে বললো

“ডান্স করতে। শপিং মলে মানুষ কেনো যায়। অভিঅ‍্যাসলি শপিং করতে।তোমার আর মিহিরের জন‍্য রেগুলার প্রয়োজনিয় কিছু জিনিস কিনবো।”

“কিন্তু ‘মা’ ‘বাবাই’ সিলেট থেকে তো আমাদের প্রয়োজনিয় জিনিস পএ সব নিয়ে এসেছে।”

“সবকিছু নিয়ে আসলেও, তোমার আর মিহিরের অল্প কিছু ড্রেস এনেছে। বাকিগুলো ওখানকার গরিবদের দিয়ে এসেছে। এতোদিন তোমরা হাসপাতালের ড্রেস পড়েছিলে । কালকে মিহিরের ডিসচার্জ হবে তখন বাসায় গিয়ে কি পড়বে?আর তোমার তো ডিসচার্জ অনেক আগেই হয়ে গেছে ।তাও এখনো তুমি হসপিটালের ড্রেস পড়েই আছো।এবার কি এগুলো বাসায় নিয়ে যাওয়ার প্লান আছে।”

” কিন্তু —-”

“সাট আপ। কোনো কিন্তু না ।আর একটা কথাও যদি বলো মাথায় তুলে একটা আছাড় মারবো (একটা ব‍্যাগ মেঘের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো) এটার মধ‍্যে তোমার একটা ড্রেস আছে দুই মিনিটের মধ‍্যে রেডি হয়ে এসো।”

মেঘ বুঝতে পাড়লো ও যদি এখন আর কিছু বলে তাহলে আহান ওকে সত‍্যি সত‍্যি আছাড় মারবে। তাই শুকনো একটা ডোক গিলে ব‍্যাগটা নিয়ে সোজা দৌরে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ওকে এভাবে দৌড়ে যেতে দেখে সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।হাতে চিপস নিয়ে দরজা দিয়ে ঢুকছিলো সারিকা সাইফা হটাৎ সাইফা দাড়িয়ে গেলো সাইফাকে এভাবে দাড়াতে দেখে সারিকা দাড়িয়ে ব্রু কুচকে বোনের দিকে তাকালো ।সারিকা দেখলো সাইফা একদৃষ্টিতে মিহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।সারিকা সাইফার দিকে তাকিয়ে ব্রু নাচালো ,যার মানে কি?

সাইফা সারিকা কে ফিসফিস করে বললো।

“মিহির ভাইয়ার হাসিটা কি সুন্দর তাই না?দেখতেও পুরো চকলেটের মতো ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলি ।ওনাকে দেখলেই আর হার্ট জোরে জোরে বিট করে। আমিতো ওনাকে প‍্রথম দিন দেখেই ক্রাশ খেয়েছিলাম।তারপর থেকে যতোবার ওনাকে দেখেছি ততোবার ক্রাশ খেয়েছি। ”
তারপর মন খারাপ করে বললো
“ওনি তো আমার দিকে ফিরেও তাকান না।”

সারিকা হেসে দিয়ে বললো

” তোর বাজে বকা বন্ধ হলে আমরা ভিতরে যাই। তুই দেখতে তো পেত্মির মতো, তাই ফিরেও তাকায় না।”

সাইফা রেগে বললো
” তুই এটা ভুলে যাচ্ছিস আমরা দুজন একই রকম দেখতে।

_____________________________

বড়ো একটা শপিং মলের সামনে দাড়িয়ে আছে মেঘ,আহির , হিয়ান, সাড়িকা। সাইফা , হিমা, রিয়ান আসেনি ওরা মিহিরের সাথে আছে ।আহান পার্কিলডে গাড়ি পার্ক করতে গেছে। মেঘ বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে আছে। বাকিরাও পচন্ড বিরক্ত হয়ে আছে আহানের উপর প্রায় দশ মিনিট হয়ে গেছে আহানের আসার কোনো নাম নেই। মেঘ বললো

“একটা গাড়ি পার্কি করতে এতোক্ষন লাগে।গাড়ি পার্কি করতে গেছে নাকি প্লেন ল‍্যান্ড করতে গেছে সেটাই তো বুঝতে পারছি না।”

হিয়ান বললো

“তোরা এখানে দাড়া আমি গিয়ে দেখছি।”

মেঘ বিরক্তি নিয়ে বললো

“কোনো দরকার নেই ভাইয়া ।তারপর দেখবো তুমিও তোমার ভাইয়ের মতো হাপিশ হয়ে গেছো।”

পিছন থেকে আহান বললো
” কাউকে কোথাও যেতে হবে না আমি এসে গেছি।”

সবাই ঘুরে পিছনে তাকালো।আহানের সাথে একটা মেয়ে আর একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে। ছেলেটা আহানের বয়সি হবে । আর মেয়েটা আহানদের থেকে একটু ছোট হবে।

সাড়িকা ভাবি বলে চিৎকার করে মেয়েটাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।

আহির অবাক হয়ে বললো

“তোমরা এখানে কিভাবে এলে । তোমরা তো এতোদিন তোমাদের গ্রামের বাড়িতে ছিলে তাইনা।”

মেঘ প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকিয়ে রয়েছে । আহান সেটা বুঝতে পেরে মেঘের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো

“মেঘ ও আমার আরেক ফ্রেন্ড অভি। আমাদের সাথে লন্ডনের একই ভার্সিডিতে পড়ে। (মেয়েটাকে দেখিয়ে বললো )ও হলো আলিশা অভির ছোট বোন। আর ‘অভি’ ‘আলিশা’ ও হলো মেঘনা।”

অভি মুচকি হেসে মেঘনার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো

” হ‍াই মেঘনা।”

মেঘ হ‍্যান্ডশেক করতে যাবে তার আগেই আহান অভির সাথে হ‍্যান্ডশেক করলো। ঘটনার আকষ্মিকতায় অভি আহমোক হয়ে গেলো।আহান অভির দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো

“হাই হ‍্যালো পড়েও করা যাবে এখন ভিতরে যাওয়া যাক।”

আহানের এরকম কান্ডে সবাই মুখ টিপে হাসছে ।মেঘ অবাক হয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে ।ব‍্যাপারটা অন‍্য দিক ঘোরানোর জন‍্য আলিশা এসে মেঘকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো

” কেমন আছো মেঘনা ”

” আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আপু ।আপনি কেমন আছেন।”

ওদের কথার মাঝে সাড়িকা মেঘকে উদ‍্যেশ‍্য করে বললো

” ‘মেঘা আপুই’ আলিশা আপুর কিন্তু আরেকটা পরিচয় আছে ।আপু আমাদের উড বি ভাবি হয়। আমরা সবাই আপুকে ভাবি বলে ডাকি। ”

মেঘ ঠোট টা গোল করে বললো

“ও ও ও তার জন‍্য তুমি আপুকে তখন ভাবি বলছিলে।আমি ভাবছি তুমি মজা করছো।”

আহির এসে আলিশার কাধে এক হাত রেখে বললো

“মজা কেনো করবে ।ও আমার একমাত্র ভবিষ্যত বউ । (তারপর আলিশার দিকে তাকিয়ে বললো ) তুমি তো আমায় ভুলেই গেছো বেবি।আমাকে রেখে পনেরো দিন একা একা দাদুর বাড়ি থেকে ঘুড়ে এলে তুমি কি নিষ্ঠুর । ”

মেঘের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।অবাক কন্ঠে জিঙ্গেস করলো
“আহির ভাইয়া আপু তোর উড বি ওয়াইফ?”

মেঘের এরকম চেহারা দেখে সবাই হেসে দিলো। হিয়ান এসে আহিরের কান টেনে দিয়ে বললো

“তুই শেষ পর্যন্ত আমার বউ নিয়ে টানাটানি শুরু করলি।তোর লজ্জা করে না বড়ো ভাইয়ের বউকে নিজের বউ বলতে।”

” আহ ভাই লাগছে তো। পাবলিক প্লেসে এভাবে কান ধরে টানাটানি করো না প্লিজ। আমার মান সম্মানের ফালুদা হয়ে যাবে।”

হিয়ান আহিরের কান ছেড়ে দিলো। আহির মুখটাকে পেচার মতো বানিয়ে একহাত দিয়ে নিজের কান ডলছে ।মেঘ বুঝলো আলিশা হিয়ানের উডবি ওয়াইফ। আলিশা মুচকি হেসে মেঘকে বললো

“ননোদিনী তুমি কিছু মনে কোরো না। আসলে আমি আর আহির একই কলেজে পড়ি ।আমি ওর এক ব‍্যাস সিনিয়র কিন্তু আমরা খুব ভালো বন্ধু । তাই আমরা মাঝে মাঝে এরকম মজা করি।”

মেঘ কিছুই বললো না শুধুই হাসলো। এদের সবাইকে মেঘের ভিষন ভালো লাগে। সবাই কতো ফ্রি সবাই মাইন্ডের । একে অপরের সাথে কতো সুন্দর ভাবে কথা বলে কেয়ার করে। এটা ওর আরেকটা ফ‍্যামেলি।এখন থেকে এদের সাথে থাকবে ভাবতেই ওর খুশি খুশি লাগে। এতোদিন তো জানতোই না ওর এতো সুন্দর একটা পরিবার আছে।

__________________________________________________________________________

রাত এগোরোটার দিকে ওরা শপিং মল থেকে বের হলো।টানা তিন ঘন্টা সবাই শপিং করেছে। সবার চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ।সবাই নিজেদের জন‍্য টুকিটাকি শপিং করেছে। মাঝখানে সবাই ছোট একটা ব্রেক নিয়ে রেষ্টুরেন্টে গিয়ে ডিনার করেছে । বলা বাহুল‍্য মেঘ আর মিহিরের জন‍্য সবাই মিলে পুরো দোকান তুলে নিয়ে আসছে। একেক জন একেকটা ড্রেস পছন্দ করছে। আহানই মেঘের বেশিরভাগ ড্রেস পছন্দ করেছে।মেঘ শুধু বসে বসে সবার পাগলামো দেখেছে।ও বলেছিলো এখন এতোগুলো ড্রেস লাগবে না পড়ে এসে আবার নিয়ে যাবে । কিন্তু আহানের এক ধমক খেয়ে আর কিছু বলার সাহস হয়নি। ইতিমধ্যে অভি আর আলীশার সাথেও মেঘের খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। ওদের সবার শপিং এর বিল আহানই দিয়েছে। বাইরে এসে অভি আর আলিশা গাড়িতে উঠলো। ওরা সবাইকে বাই বলে ওদের গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।আহান পার্কিলড থেকে গাড়ি নিয়ে এলো।তারপর গাড়ি থেকে নেমে হিয়ানকে বললো

“আমি ড্রাইভার কে ফোন দিয়েছিলাম কাছাকাছি আছে ।তুই আহির সাড়িকা সেই গাড়িতে করে বাড়িতে চলে যা।আমি মেঘকে হসপিটালে দিয়ে আসছি।”

ওদের কথার মাঝে ড্রাইবার গাড়ি নিয়ে চলে এলো ।হিয়ান ওকে বাই বলে ।আহির আর সাড়িকা কে নিয়ে সেই গাড়ি তে চলে গেলো।

আহান মেঘের হাত থেকে ব‍্যাগগুলো নিয়ে গাড়ির পিছনের ছিটে রেখে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটের দরজা খুলে মেঘকে বসতে বললো মেঘও আর কিছু না বলে ভালো মেয়ের মতো চুপচাপ গিয়ে বসলো।
আহান দরজা আটকে দিয়ে নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইব করতে লাগলো।কিছুদূর আসার পর মেঘ বললো

“একি এটা তো হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তা না।আমরা আসার সময় তো অন‍্য রাস্তা দিয়ে এসেছিলাম। ”

স্বাভাবিক ভাবেই বললো

” এখন অনেক রাত হয়ে গেছে, ওই রোড দিয়ে গেলে অনেক লেইট হবে। তাই শটকাট দিয়ে যাচ্ছি ।”

মেঘ আর কিছু বললো না।অনেক ক্লান্ত লাগছে তাই সিটে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো। আহান একবার আর চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে গাড়ি ড্রাইব করায় মনোযোগ দিলো।

চলবে…..ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_7

মেঘ আর কিছু বললো না।অনেক ক্লান্ত লাগছে তাই সিটে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো।আহান একবার আর চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে গাড়ি ড্রাইব করায় মনোযোগ দিলো।

কিছুক্ষন পর মেঘদের গাড়ি গন্ত‍্যব‍্যে পৌছে গেলো। গাড়ি থেমে যাওয়ায় মেঘ চোখ খুলে তাকালো।আহান মেঘকে বললো
—-আমরা পৌছে গেছি।

মেঘ মাথা তুলে সোজা হয়ে বসে ,জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো।আর তাকিয়েই চারশো চল্লিশ বোল্টের শক খেলো।

“আহান বললো নামো আমরা এসে গেছি ।”

মেঘ চিল্লিয়ে বললো
“এসে গেছি মানে কি।এটা তো হসপিটাল না।দেখে তো কারো বাসা মনে হচ্ছে।”

আহান সিটবেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নেমে মেঘের পাশের দরজা খুলে বললো

“এটা আমাদের বাসা।আজকে রাতে তুমি এখানেই থাকবে।কালকে খুব সকালে আমরা গিয়ে মিহিরকে রিলিজ করিয়ে আনবো।এখন গাড়ি থেকে নামো।”

” না আমি রাতে এখানে থাকবো না।আমি এখনি হসপিটালে যাবো। ”

আহান শক্ত কন্ঠে বললো
“মেঘ তোমাকে আমি গাড়ি থেকে নামতে বলছি। এক্ষনি গাড়ি থেকে নামো নাহয় খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

মেঘ রেগে চিল্লিয়ে বললো
” বললাম তো আমি হসপিটালে যাবো।”

আহান আরও জোরে চিল্লিয়ে বললো
” শেষ বারের মতো বলছি মেঘ গাড়ি থেকে নামো।তুমি এখন আমাদের বাড়িতে যাবে ।”

মেঘ নামলো না।ওভাবেই চুপ করে বসে রইলো।ওর চোখে পানি চিকচিক করছে,,ভিষন কান্না পাচ্ছে । এই লোকটা এমন কেনো? শুধু কথায় কথায় রাগ দেখায় , ধমক দেয়।বুঝতে পারে না যে মেঘ তাকে ভিষন ভয় পায়।আহান কিছুক্ষন শান্ত দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর বাকা একটা হাসি দিয়ে মেঘকে কোলে তুলে নিলো। হটাৎ এমন হওয়ায় মেঘ হকচকিয়ে উঠলো।চোখ বড়ো বড়ো করে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো

“কি করছেন নামান আমকে? কেউ দেখলে কি ভাববে?”

আহান শয়তানি হাসি দিয়ে বললো

“এতক্ষন ভালো করে বলেছিলাম শুনলে না। তোমাকে তো ভালো ভাবে বললে তুমি বুঝতেই পারো না । তোমাকে তো সবকিছুতে ত‍্যারামি করতেই হবে।”

মেঘ ছটফট করতে করতে বললো
” ভাইয়া আমাকে নামান প্লিজ ।আমি নিজেই পায়ে হেটে ভিতরে যাচ্ছি। ”

কিন্তু আহান মেঘের কোনো কথাই শুনলো না ও মেঘকে কোলে নিয়েই সামনে এগোতে লাগলো ।মেঘ হাত পা ছোড়াছুড়ি করছে। আহানের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই ও ওর মতোই হাটতে লাগলো।আহানকে এভাবে একটা মেয়েকে কোলে করে নিয়ে আসতে দেখে গার্ডদের চোখ বড় বড় হয়ে হয়ে গেলো।যে ছেলে ঠিকভাবে মেয়েদের সাথে কথা বলে না।সে একটা মেয়েকে কোলে করে নিয়ে আসছে ।এটা যেনো রাতের আকাশে সূর্য দেখার মতো ঘটনা।একজন গার্ড এগিয়ে এসে আহানের সামনে দাড়িয়ে জিঙ্গেস করলো

“এনি প্রভলেম স‍্যার?”

আহান সাভাবিক ভাবেই বললো
” নো প্রভলেম। আপনি একটা কাজ করুন গাড়ির পিছনে কিছু ব‍্যাগ রাখা আছে, গাড়িটা পার্ক করে ,ব‍্যাগ গুলো ভিতরে নিয়ে আসুন।”

গার্ডও ওকে স‍্যার বলে গাড়ির দিকে চলে গেলো।আহান আবার সামনের দিকে হাটা শুরু করলো।

আহানদের বাসার ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে চা খাচ্ছিলেন আহাদ খান ,মোনা খান, মিরা রহমান , আজম রহমান। শিহাব রহমান আর সাথি রহমান সিলেট চলে গেছেন।পাচদিন আগে আজম রহমান, মিরা রহমান, শিহাব রহমান, সাথী রহমান সিলেট গিয়েছিলো ।ওখানের সবকিছু গুছিয়ে মিরা রহমানদের বাকি জিনিস পএ নিয়ে মিরা রহমান আর আজম রহমান দুইদিন পরই ঢাকা এসে পড়েছিলেন বরাবরের জন‍্য ।শিহাব রহমানের জরুরি কাজ থাকায় শিহাব রহমান আর সাথি রহমান আসতে পারেননি। বলেছেন পড়ে এসে আবার সবার সাথে দেখা করে যাবেন। মিরা রহমানদের আনা জিনিস পএ সব ওনাদের নতুন বাড়িতে শিফট করা হয়ে গেছে।কালকে মিহিরকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করিয়ে ওনারা সবাই ওই বাড়িতে যাবেন। চায়ে চুমুক দিয়ে মোনা খান বললো

“আহান তো বললো মেঘকে নিয়ে আসছে। সাড়ে এগারোটা বাজে এখনো আসলো না কেনো ।তাহলে কি মেঘকে রাজি করাতে পারেনি।”

আহাদ খান মুচকি হেসে বললো
” তুমি তোমার ছেলেকে চেনো মোনা ,যখন একবার বলেছে মেঘকে নিয়ে আসবে তখন যেভাবেই হোক নিয়ে আসবে।”

আজম রহমান আহাদ খানকে উদ‍্যেশ‍্য করে বললো

“তুই আমার মেয়েকে চিনিশ না । ওকে যতটা ভদ্র দেখতে তারথেকে দুইগুন ঘ‍্যাড়ত‍্যাড়া।বিশেষ করে যাকে ও পছন্দ করে না তার কথা জিবনেও শুনবে না ।তাই আহানের কথা না শোনারই চান্স কম।”

আহাদ খান একটু ভাব নিয়ে বললো
” দেখা যাক কি হয়।”

মোনা খান উদাশ গলায় বললেন
” আহান যদি মেঘকে নিয়ে আসতে পারে আমার থেকে বেশি খুসি কেউ হবে না। আজ বারো দিন যাবোত মেয়েটা হসপিটালে আছে। মেঘ তো মিহিরের অপারেশনের দুই পরই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। আর এই দশ দিন নিজের হাতে মিহিরের সেবা করেছে।মিহিরকে খাবার খাওয়ানো থেকে শুরু করে ওর ঔষধ খাওয়ানো সব নিজের হাতে করেছে । ভাইকে ছেড়ে কোথাও একটুর জন‍্যও বের হয়নি।সারা রাত জেগে মিহিরের খেয়াল রেখেছে একটুর জন‍্যও ঘুমায়নি ।যদি রাএে মিহিরের কস্ট হয় আর ও যদি ঘুম থেকে উঠতে না পারে সেইজন‍্য।”

কথাটা বলেই মোনা খান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
ওনাদের কথার মাঝে কলিং বেল বেজে উঠলো। ওনারা সবাই দরজার দিকে তাকালেন। মিরা রহমান বললো

——–“ওইতো ওরা মনে হয় এসে গেছে।”

একজন মহিলা র্সাভেন্ট গিয়ে দরজা খুলে দিলো। আহান মেঘকে নিয়ে বাসার ভিতরে ডুকলো। মোনা খান, মিরা রহমান, আহাদ খান, আজম রহমান বসা থেকে দাড়িয়ে গেলেন।ওনারা সবাই বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছেন আহানের দিকে। মেঘ রেগে হাত পা ছোড়াছুড়ি তো করছেই সাথে আহানকে কিল ঘুসিও দিচ্ছে। আর আহান কিচ্ছু বলছে না চুপচাপ সব সহ‍্য করছে। র্সাভেন্টরাও সবাই চোখ বড় বড় করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। আহান সোফার কাছে এসে মেঘকে ধরাম করে সোফায় ফেলে দিলো।মেঘ আহ বলে জোরে একটা চিৎকার দিয়ে বললো

—– ” ও মা আমার কোমরটা ভেঙে গেলো। ইউ ইডিয়েট , ননসেন্স, ম‍্যানারলেস এতো জোরে কাউকে ফেলে।”

কথাগুলো বলেই মেঘ জিভ কাটলো ।এতোক্ষনে হুশ এলো ও কাকে কি বলছে।মেঘ ভিতু চোখে আহানের দিকে তাকালো আহান রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ মুখটা কাচুমাচু করে ফেললো। মিরা রহমান , আজম রহমান ,মোনা খান , আহাদ খান বুঝতে পারলো আহান মেঘকে জোড় করে এখানে নিয়ে এসছে।বাইরের সেই গার্ডটা ব‍্যাগগুলো হাতে নিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকে আহানকে উদ‍্যেশ‍্য করে বললো স‍্যার এগুলো কোথায় রাখবো।

“আহান বললো উপরে গিয়ে আহিরের পাশের রুমটায় রেখে এসো ।”

গার্ডটা ব‍্যাগগুলো নিয়ে উপরে চলে গেলো।মিরা রহমান অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলো

“আহান এই এতোগুলো ব‍্যাগ কিসের?”

” এগুলোতে মেঘ আর মিহিরের কিছু ড্রেস আছে।”

মিরা রহমান অভাক গলায় প্রশ্ন করলেন

“তোমরা শপিং এ গিয়েছিলে । আমাদের বলোনি কেনো? আর একসঙ্গে এতোগুলো ড্রেস কিনে টাকা নষ্ট করার কোনো মানে হয়। আমি পরে ওদের আস্তে আস্তে কিনে দিতাম।”

“মামনি এই ড্রেস গুলো আমি আমার ভাই বোনদের কিনে দিয়েছি তাই টাকা নষ্ট হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। তোমার ভালো লাগলে তুমি আবার ওদের নতুন ড্রেস কিনে দিও। আমি এই বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে চাই না। এখন আমার অনেক টায়ার্ড লাগছে। আমি একটু রেষ্ট নেবো। ”

মোনা খান আহানের সামনে এসে জিঙ্গেস করলো

“ডিনার করবে না?”

” না করবো না। শপিং করার মাঝে শপিং মলের একটা রেষ্টুরেন্টে গিয়ে আমরা সবাই ডিনার করে আসছি।”

কথাগুলো বলেই আহান সিড়ি দিয়ে উপড়ে চলে গেলো।

_________________________________________

ফোনের আর্লামের কর্কশ শব্দে ঘুমের ঘোরে চোখ মুখ কুচকে ফেললো মেঘ। মুখ দিয়ে বিরক্তিকর একটা চ শব্দ উচ্চারণ করে পাশে থাকা একটা বালিশ নিয়ে কানের উপড়ে চেপে ধরলো ।কিন্তু আর্লাম কিছুতেই থামছে না। তাই মেঘ আর কোনো উপার না পেয়ে জোরে মাম্মাম বলে চিৎকার দিলো। ওর চিৎকার শুনে মোনা খান, আহাদ খান , মিরা রহমান,আজম রহমান , আহান সবাই দৌরে মেঘের রুমে এলো।দরজা হালকা করে লাগানো ছিলো তাই কারো আসতে কোনো সমস‍্যা হলো না। এসে দেখলো মেঘ গুটিশুটি মেরে কানের উপর বালিশ চেপে ধরে শুয়ে আছে ।মেঘকে এভাবে দেখে ওনারা সবাই ভয় পেয়ে গেলেন ।মিরা রহমান হন্তদন্ত হয়ে মেঘের কাছে গিয়ে মেঘকে জিঙ্গেস করলো
—-“কি হলো মেঘ এভাবে চেচাচ্ছো কেনো ? ভয় পেয়েছো মা?”

মেঘ ওর বেডের পাশের টেবিলে থাকা নিজের ফোনটাকে দেখিয়ে ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বললো

” মাম্মাম এই স্টুপিড এর্লামটাকে বন্ধ করো প্লিজ আমি ঘুমাতে পাড়ছি না।”

আহাদ খান, মোনা খান, আহান হতবম্ভ হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে রইলো। মিরা রহমান রেগে বললো

“মেঘ তোমাকে ঠাটিয়ে একটা চড় মাড়বো।অসভ‍্য মেয়ে কোথাকার।এজন‍্য এতো জোরে কেউ চিৎকার করে।”

“মাম্মাম চড়টা পড়ে মেরো ।আগে ওটাকে বন্ধ করো আমি ঘুমাবো।”

আহান রেগে গিয়ে বললো
” পড়াচ্ছি আমি তোমাকে ঘুম। ”

বলে মেঘের কাছে গিয়ে ওকে এক জটকায় কোলে তুলে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ।ওয়াশরুমে ঢুকে ধরাম করে মেঘকে বাথটবের ভিতরের পানিতে ফেলে দিলো।মেঘ আ আ আ আ বলে জোরে একটা চিৎকার দিলো।আহানের এমন কান্ডে মিরা রহমান এবং আজম রহমান শকড হয়ে দাড়িয়ে আছে।আহাদ খান আর মোনা খান মুখ টিপে হাসছে।মেঘ রেগে বললো

“হোয়াট দ‍্যা হেল ।কোন ছাগল আমায় পানিতে ফে—”

মেঘ কথাটা ষেশ করতে পারলো না তার আগেই আহান ধমক দিয়ে বললো
” আর একটাও যদি উদ্ভট কথা বলো তাহলে মেরে তোমার দাত ভেঙ্গে দেবো।পাচ মিনিটের মধ‍্যে ফ্রেস হয়ে বের হও নাহলে তোমাকে রেখেই আমি হসপিটালে চলে যাবো।”

বলেই আহান হনহন করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে গেলো ওর পিছনে পিছনে বাকিরাও বের হয়ে গেলো।

আহান নিজের রূমে ঢুকতে ঢুকতে মোনা খান কে উদ‍্যেশ‍্য করে বললো

“মা আমার জন‍্য এক্ষনি রুমে এক মগ কফি পাঠিয়ে দেও।”

বলেই রুমে ডুকে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিলো।তারপর ধুপ করে গিয়ে খাটের উপর বসে পড়লো। তখন মেঘ ওভাবে চিৎকার দেওয়ায় আহান প‍্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলো ভেবেছিলো হয়তো পড়ে টরে গেছে। কিন্তু গিয়ে যখন শুনলো আর্লাম বন্ধ করার জন‍্য ওভাবে চিৎকার করেছে তখন ইচ্ছে করছিলো মাথায় তুলে একটা আছাড় মাড়তে। কারো দরজায় নক করার শব্দে ওর ভাবনায় ছেদ পড়ে। আহান গিয়ে দরজা খুলে দেয় একজন সার্ভেন্ট ভিতরে এসে কফি রেখে চলে যায়। ও দরজা টা আটকে দিয়ে কফি মগ নিয়ে ব‍্যাকনিতে চলে যায়।
____________________________________________________________________________________
মেঘ সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে খাটের উপর বসে চুল মুছতে মুছতে ফোনটা হাতে নিয়ে অন করলো দেখলো মাএ সকাল সাতটা বাজে।মেঘের এবার ভিষন রাগ হলো ।
এই সকাল সাতটার সময় এই স্টুপিড ফোনটার জন‍্য ওকে সাওয়ার নিতে হোলো ইচ্ছে করছে একটা আছার মেরে ভেঙ্গে ফেলতে ।পরক্ষনেই আবার মনে মনে বললো না না ফোনটা ভাঙা যাবে না।মাএ দুই মাস হলো কিনেছি এিশ হাজার টাকার ফোন যদি ভেঙে ফেলি তাহলে মাম্মাম আমাকে মেরে এিশ টুকরা বানাবে।তাছাড়া আমার ফোনের তো কোনো দোষ নেই এর্লাম টা তো আমি দিয়েছিলাম। কিসের জন‍্য যে সকাল ছয়টার এর্লাম দিতে গেলাম।তারপর আবার ভাবলো আজব আমার ফোন আমার এর্লাম আমি যা খুশি করবো তার জন‍্য আমাকে পানিতে ফেলে দিতে হবে ।সব দোশ ওই ডিসিপ্লিনের ড্রামের ওর জন‍্য আমার সাধের ঘুমটা নষ্ট হয়ে গেলো। এসব ভাবছিলো তখনি মেঘের ফোন বেজে উঠলো স্কিনে তাকিকে দেখলো হিমা আপি লেখা মেঘ ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে হিমা বললো

“গুড মরনিং বনু। রাতে ঘুম কেমন হলো।”

এবার যেনো মেঘের দুঃখটা আরো বেড়ে গেলো মেঘ কাদো কাদো গলায় বললো

” ব‍্যাড মরনিং আপি। ”

“কেনো সোনা, ব‍্যাড মনিং কেনো? কাদছিস কেনো কিছুকি হয়েছে?”

মেঘ ন‍্যাকা কান্না করে এতক্ষন যা যা হয়েছে সবটা বললো।সবটা শুনে হিমা, হিয়ান ,রিয়ান, আহির, মিহির, সাড়িকা, সাইফা সবাই হু হা করে হেসে দিলো।আসলে হিমা এতক্ষন ফোন লাউড দিয়ে কথা বলছিলো তাই ওরা সবাই সবটা শুনতে পেয়েছে। মেঘ রেগে গিয়ে বললো

“ওই খচ্চরটা আমকে পানিতে ফেলে দিলো আর তোমরা সবাই হাসছো।বাই দা ওয়ে তোমরা সবাই হসপিটালে তারমানে তোমরা কাল রাতে কেউ বাসায় যাওনি ।সবাই সাড়া রাত হসপিটালেই ছিলে । ”

মেঘের মোনটা এবার আরো খারাপ হয়ে গেলো। তাই আর কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলো।মাথার তোয়ালেটা খাটের উপর রেখে ব‍্যালকনিতে চলে গেলো।ব‍্যালকনিতে গিয়েই ওর কালো আধার নামা ঠোটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।মেঘ দৌড়ে রুমের মধ‍্যে এলো তারপর গায়ে ওরনা জরিয়ে হাতে ফোনটা নিয়ে এক দৌরে নিচে চলে গেলো। সিড়ি দিয়ে এবাবে মেঘকে দৌড়ে নামতে দেখে মোনা খানা জিঙ্গেস করলো

“এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছিস?”

” বাইরে গারডেনে এরিয়ায় যাচ্ছি।”

” তো এভাবে দৌড়ানোর কি আছে আস্তে যা।পড়ে গেলে ব‍্যাথা পাবি।”

মেঘ পড়বোনা বলে এক দৌড় দিয়ে বাইরে চলে গেলো।

মেঘ বাইরে এসে ভিষন অবাক হয়ে গেলো।এই বাড়ির বাইরের দিকটা অনেক সুন্দর করে সাজানো। মেঘের মনে হচ্ছে মেঘ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে তাই সিউর হওয়ার জন‍্য মেঘ নিজের হাতে একটা জোরে চিমটি কাটলো।নিজে চিমটি কেটে আবার নিজেই আহ বলে মৃদু চিৎকার দিল। মেঘ পুরো বাড়িটা ভালো করে দেখতে লাগলো। বাড়িটা তিন তলার ।পুরোটা সাদা রঙ করা।বাসা থেকে গেট পর্যন্ত সোজা একটা রাস্তা গেছে ।রাস্তার দুইপাশে কমলা আর হলুদ রঙের গাধা ফুল গাছ লাগানো।গাছ গুলো একদম এক সমান করে কাটা ।রাস্তাটার এক পাশে বেশ বড়োসড়ো একটা সুইমিংপুল ।পুলের পাশে তিনটা গোল টেবিল ,প্রত‍্যেকটা টেবিলে পাচটা করে চেয়ার রাখা ।ছয় জন কালো ড্রেস পড়া গার্ড বন্ধুক হাতে নিয়ে সেখানে বসে আছে। রাস্তার আরেক পাশে একটা বাস্কেট বলের মাঠ। তার থেকে একটু দূরে একটা সার্ভেন্ট কয়াটার । সেটাও সাদা রঙের ।বাড়ির পিছনের দিকে ছোট একটা গ‍্যারেজ যেখানে দুইটা বাইক আর তিনটা প্রাইভেট কার পার্ক করা। গ‍্যারেজের পাশে ছোট্ট একটা ফুলের বাগান সেখানে কয়েক ধরনের ফুল আছে।বেশির ভাগই গোলাপ ফুলের গাছ।আহান ব‍্যালকনিতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কফি খাচ্ছিলো। হটাৎ নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেঘ নিচে দাড়িয়ে আছে ।কালো রঙের একটা লিলেনের গাউন আর হোয়াইট কালারের লেগিন্স পড়া সাথে হোয়াইট কালারের ওরনা গলায় রাউন্ড করে ঝুলিয়ে রেখেছে । ভেজা চুল গুলো ছেড়ে রাখার কারনে কোমর পর্যন্ত এসে পড়েছে। সামনের ছোট চুলগুলো বারবার হাত দিয়ে কানের পিছনে গুজে দিচ্ছে।ভেজা চুলে মেঘকে অসম্ভব স্নিগ্ধ লাগছে। আহান মুগ্ধ হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। সে মনে মনে বললো।

“মেঘের পরি বারবার এভাবে কেনো আমার সামনে আসো বলোতো।তোমাকে দেখলেই আমার সবটা এলোমেলো হয়ে যায়।নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগে । তোমাকে খুব করে কাছে পেতে ইচ্ছে করে । তুমি যানো আমি নিজেকে কতো কষ্টে সামলে রাখি ।প্লিজ আমাকে এভাবে তোমার প্রতি দূর্বল করে দিয়ো না।তাহলে তোমাকে ছেড়ে থাকা আমার জন‍্য অসম্ভব হয়ে যাবে।”

আহান কফি মগটা ব‍্যালকনিতে রেখে রুমে গেলো ।রুম থেকে ওর ক‍্যামেরাটা নিয়ে আবার ফিরে এলো। তারপর দাড়িয়ে দাড়িয়ে মেঘের ছবি তুলতে লাগলো।মেঘ হেটে হেটে সবকিছু ঘুরে দেখছিলো তখনি দেখলো—-#ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_8

আহান কফি মগটা ব‍্যালকনিতে রেখে রুমে গেলো। রুম থেকে ওর ক‍্যামেরাটা নিয়ে আবার ফিরে এলো। তারপর দাড়িয়ে দাড়িয়ে মেঘের ছবি তুলতে লাগলো।মেঘ হেটে হেটে সবকিছু ঘুরে দেখছিলো তখনি দেখলো

একজন পয়তাল্লিশ ছিচল্লিশ বছর বয়সের লোক রাস্তার দুইপাশের ফুল গাছে পানি দিচ্ছে। মেঘ দৌড়ে তার কাছে গিয়ে মৃদ‍ু হেসে বললো

” গুড মরনিং আঙ্কেল।কি করছেন?”

লোকটি মুচকি হেসে জবাব দিলো
“ভেরি গুড মরনিং ম‍্যাম। এইতো ফুল গাছে পানি দিচ্ছি।”

” আমিও ফুল গাছে পানি দেবো ।”

” না না ম‍্যাম , কেউ আপনাকে কাজ করতে দেখলে আমার চাকরি চলে যাবে।”

মেঘ এবার একটু রাগ দেখিয়ে বললো
” কি তখন থেকে ম‍্যাম ম‍্যাম করছো ।আমার নাম তাসনুবা সায়াজ মেঘনা। সবাই মেঘ বলে ডাকে। তুমিও মেঘ বলে ডাকবে।”

” কি বলছেন ম‍্যাম।আমি আপনাকে কিভাবে নাম ধরে ডাকবো।”

মেঘ হাসি মুখে বললো

” যেভাবে সবাই ডাকে সেভাবে ডাকবে।আপনি করে কেনো বলছো, তুমি করে বলবে।”

লোকটি একটু ভীত গলায় বললো
“আপনাকে যদি নাম ধরে ডাকি আর সেটা যদি কেউ শুনতে পায় তাহলে সবাই রাগ করবে।আমার চাকরিটাও চলে যাবে।”

” কেউ কিচ্ছু বলবে না।তোমার চাকরিও যাবে না আমি তো আছি।জানো আমাদের আগের বাড়িতে যারা কাজ করতো তারা তো সবাই আমাকে ছোট মা বলে ডাকতো। (তারপর মেঘ একটু আহ্লাদি গলায় বললো) আঙ্কেল আমি তো তোমার মেয়েরই মতো ।আমাকে নাম ধরে ডেকো প্লিজ প্লিজ।”

লোকটি কতক্ষন চুপ থেকে এরপর বললো
” আচ্ছা ঠিকাছে। কিন্তু আমি তোমাকে নাম ধরে ডাকতে পারবো না। আমিও বরং তোমাকে ছোট মা বলে ডাকবো।”

মেঘ খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো
” ওকে,,, তাহলে এবার আমি গাছে পানি দেই।”

বলেই লোকটাকে আর কিছু বলার সুজোগ না দিয়ে, তার হাত থেকে পানির পাইপটা নিয়ে গাছে পানি দেওয়া শুরু করলো।

লোকটি বারবার বারন করলো কিন্তু কে শোনে কার কথা। মেঘ তার মতো পানি দিয়েই যাচ্ছে। মেঘের এরকম বাচ্চামো দেখে আহান মুচকি মুচকি হাসছে।এতক্ষন মেঘ ওই লোকটাকে যা যা বলেছে আহান সবটা শুনেছে। সে মনে মনে বললো
তোমার নাম যেমন মেঘ, তেমনি তোমার মনটাও মেঘের মতো স্বচ্ছ, স্নিগ্ধ, পবিত্র । সাড়া জিবন এমনই থেকো ।তারপর একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে। আবার ছবি তোলায় মনোযোগ দিলো।

___________________________________________________________________________
নয়টার দিকে ব্রেকফাস্ট করে আহান আর মেঘ হসপিটালের উদ‍্যশ‍্যে বেরিয়ে পড়লো। বড়রা সবাই সরাসরি মেঘদের নিউ বাড়িতে চলে যাবে। আর ছোটরা সবাই মিহিরকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করিয়ে একসাথে চলে যাবে। কিছুক্ষন পরই মেঘ আর আহান হসপিটালে পৌছে গেলো । ওখানে গিয়ে দেখলো অভি আর আলিশাও এসেছে।আহান আর মেঘ সবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বললো ।তারপর আহান হিয়ানকে নিয়ে রিসিভশনে গিয়ে সব ফরমালিটিজ শেষ করে, সব কিছু গুছিয়ে, সবাই বাসার উদ‍্যশ‍্যে রওনা দিলো। গাড়িতে ওঠার আগে আহান দোকানে গিয়ে সবার জন‍্য ব‍েশি করে চকলেট, চিপস, আইসক্রিম কিনে নিলো। ওরা এতোজন তাই দুটো গাড়ি লেগেছে। প্রথম গাড়িতে হিয়ান, আলিশা, রিয়ান, হিমা , উঠলো। হিয়ান গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আলিশা তার পাশে বসেছে। পিছনে রিয়ান এবং হিমা বসেছে। আর অন‍্য গাড়িতে মেঘ, মিহির ,আহান, আহির ,সাড়িকা ,সাইফা , অভি, বসেছে। আহান ড্রাইভিং করছে তার পাশের সিটে অভি বসেছে। তাদের পিছনের সিটে সাড়িকা ,সাইফা, আর মেঘ বসেছে। আর ওদের পিছনের সিটে মিহির এবং আহির বসেছে। কিছুক্ষনের মধ‍্যেই ওরা সবাই মেঘদের বাড়ির গেটের সামনে এসে পৌছে গেলো । একজন দারোয়ান এসে গেট খুলে দিলো ।গেট দিয়ে ঢোকার সময় সবাই দেখলো গেটের উপরের নেইম প্লেটে বড় বড় করে “মেঘ নীড়” লেখা।মেঘ নেইম প্লেটটা দেখে ভিষন খুশি হলো। গাড়ি ভেতরে এসে বাসার সামনে দারালো ।একে একে সবাই গাড়ি থেকে নামলো। এই বাড়িটা ছয় তলার। হোয়াইট এবং ব্লু কালারের মিক্স কম্বিনেশন করা।
বাসার নিচ তলার একপাশে সিড়ি এবং তারপাশেই একটা লিফট। আর বাকিটা পুরোটা কার পাকিং জোন। বাসা থেকে গেট পর্যন্ত মাঝ বরাবর একটা পাকা রাস্তা গেছে। রাস্তার একপাশে মিডিয়াম সাইজের একটা কৃএিম ঝর্না। আরেক পাশ পূরোটা খালি । কিন্তু মেঘের মন খারাপ হয়ে গেলো এটা দেখে যে পুরো বাড়িতে একটাও ফুলের গাছ নেই। মিহির তাকিয়ে দেখলো মেঘ মুখ ফুলিয়ে রয়েছে তাই সে মেঘকে জিঙ্গেস করলো

“মেঘ মন খারাপ কেনো?নিউ বাড়ি পছন্দ হয়নি?”

মেঘ মুখটা ভার করে বললো
” বাড়ি পছন্দ হয়েছে।কিন্তু বাবাই আমার জন‍্য একটা ফুলের গাছও লাগায় নি। ”

মিহির কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহান বললো

“কে বলছে লাগায় নি । ছাদের চারপাশে তোমার সব পছন্দের ফুল গাছ লাগানো হয়েছে। তাছাড়া তোমার রুমের ব‍্যালকনিতে পাচ রঙের পাচটি গোলাপ গাছ লাগানো হয়েছে।”

মেঘ খুশি হয়ে বললো
“সত‍্যি”

আহান মৃদ‍্যু হেসে বললো
“হুম”

মেঘ আহানের দিকে তাকিয়ে জিঙ্গেস করলো
” কিন্তু এসব আপনি কিভাবে জানলেন?”

” কারন সিলেট থেকে যেদিন তোমাদের বাকি জিনিসপত্র নিয়ে এসেছিলো। সেদিন আমি আর হিয়ান এই বাড়িতে এসেছিলাম।তারপর আঙ্কেল বলেছিলো তোমার কি কি ফূল গাছ পছন্দ। পরে আমরা দুজনে গিয়ে ফুলগাছ গুলো নিয়ে আসি।”

মেঘ ওর ঠোট দুটো গোল করে বললো
“” ওো।””

হিয়ান হালকা রাগ দেখিয়ে বললো
“স‍্যার ম‍্যাম আপনাদের কথা বলা শেষ হলে আমরা ভিতরে যেতে পারি ?”

মেঘ একটু ভাব নিয়ে বললো
” সিওর মিঃ হিয়ান।”

সবাই মেঘের কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো।

____________________________________________________________________________________________________

দুপুরে লাঞ্চ করার পর মেঘরা সবাই ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আইসক্রিম খাচ্ছিলো। ওরা ছোটরা সবাই একসঙ্গে লাঞ্চ করে নিয়েছে। এখন বড়রা সবাই লাঞ্ছ করছে।এই বাসার ড্রয়িংরুম আর ডাইনিং রুম পাশাপাশি। ওরা আইসক্রিম খেতে খেতে সবাই টুকিটাকি কথা বলছিলো।তখনই হটাৎ আহির মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো

“Wow মেঘ তোর চোখের মনি তো একদম সাদা কালারের? কই এতোদিন তো খেয়াল করিনি । ”

আহিরের কথা শুনে সবাই মেঘের চোখের দিকে তাকালো।দেখলো সত‍্যিই মেঘের চোখের মনি সাদা কালারের । এতোদিন কেউ সেভাবে খেয়াল করেনি তাই হয়তো বুঝতে পারেনি।

মেঘ সবাইকে এভাবে নিজের দিকে তাকাতে দেখে ওর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।ওর মনে পড়লো ও এখানে আসার পর তো চসমা পড়তেই ভুলে গেছে।সেদিন যেখানে মিহিরের গুলি লেগেছিলো চশমাটা হয়তো সেখানেই কোথাও রয়ে গেছে। মেঘ হাত দিয়ে নিজের চোখ চেপে ধরলো। মনে মনে বললো এখন কি হবে? তারপর মনে পড়লো বাসা থেকে নিয়ে আসা কসমেটিকস গুলো তো ওর রুমেই আছে সেখানে নিশ্চই ওর অন‍্য চশমা গুলোও আছে। তাই হাত দিয়ে চোখগুলো এভাবে ডেকে রেখেই সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের রুমের দিকে দৌড় মারলো।মেঘের এমন কান্ডে সবাই বোকা হয়ে গেলো। আহির বললো

“এটা কি হলো ? ও এভাবে দৌড়ে চলে গেলো কেনো?”

মিহির উদাশ হয়ে বললো
“চশমা পড়তে গেছে।”

আহান উদ্বিগ্ন হয়ে জিঙ্গেস করলো
“কেনো ওর চোখে প্রভলেম আছে? কই এতোদিন তো চশমা পড়তে দেখিনি।”

মিহির স্বাভাবিক ভাবেই বললো
” না ওর চোখে কোনো প্রভলেম নেই। আর এতোদিন পরেনি কারন এতো ঝামেলার মধ‍্যে হয়তো ওর মনে ছিলো না।”

আহান ব্রু কুচকে জিঙ্গেস করলো
” চোখে কোনো প্রভলেম নেই তাহলে চশমা কেনো পড়ে?”

মিহির একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে বলা শুরু করলো

“তোমরা নিশ্চই মেঘের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার ব‍্যাপারটা জানো। ওর যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো মানে আবির রহমান আমাদের কাজিন আজ থেকে তিন বছর আগে তার বার্থডে উপলক্ষে সে একটা পাটি থ্রো করেছিলো। মা, বাবা,মেঘ, সবাই সেই বার্থডে পার্টিতে গিয়েছিলো। মেঘ তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে ।আমি আবির রহমানকে আগে থেকেই সহ‍্য করতে পারতাম না ।তাই পার্টিতে যাবো না বলে বন্ধুদের সাথে ঘুড়তে গিয়েছিলাম।মেঘ ওই পার্টিতে যাওয়ার পর আবির আর ওর কিছু বন্ধুরা মিলে মেঘের চোখের কালার নিয়ে উল্টো পাল্টা কথা বলে, হাসাহাসি করে। বলেছিলো ওর চোখ নাকি জঙ্গলি বিড়ালের মতো দেখতে। আবির বলেছিলো কি দেখে যে বাবা, ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। discussting একটা মেয়ে।মা, বাবা, আমার চাচারা ফুফিরা সবাই সেই পার্টিতেই দাড়িয়ে ছিলো,, কেউ আবিরকে কিচ্ছু বলেনি। মেঘ কাদতে কাদতে পার্টি থেকে বাড়িতে চলে এসেছিলো । ওর পিছনে পিছনে মা – বাবাও এসেছিলো।কিন্তু ও রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।তাই ওনারা আর মেঘের সাথে কোনো কথা বলতে পারেনি। সেদিন মেঘ ওয়াশরুমে ঢুকে ঝর্না ছেড়ে সাড়া রাত কেদেছিলো। পরদিন সকাল সাতটার সময় মা এসে অনেকবার ওর রুমে নক করে কিন্তু ভিতর থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে ডুবলিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ডোকে ।ঢুকে দেখে রুমে কোথাও মেঘ নেই । ওয়াশরুমের দরজাটা খোলাছিলো। মা ওয়াসরুমে ঢুকে দেখলো,মেঘ সাওয়ারের নিচে অঙ্গান হয়ে পড়ে আছে, সাড়া রাত ভেজার কারনে সাড়া শরীর নীল হয়ে গিয়েছিলো।আমাকে আমার এক কজিন রাতেই ফোন করে সবটা জানায়।আমি এসে দেখি ওয়াশরুমে বসে মা মেঘকে জড়িয়ে ধরে কাদছিলো ।তারপর আমি মেঘকে হসপিটালে নিয়ে আসি। ওর অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। প্রায় মরতে মরতে বেচে গিয়েছিলো।তারপর থেকেই মেঘ চশমা পড়া শুরু করেছে।অনেক বার বারন করেছিলাম যাতে চশমা না পড়ে কিন্তু শোনেনি।

মিহিরের কথা শুনে আহানের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এখন যদি আবির কে একবার হাতের কাছে পেতো তাহলে মেরে মাটিতে পুতে দিতো।হাতটা মুঠো করে দাতে দাত চেপে চুপচাপ বসে রইলো। মিহির তাকিয়ে দেখলো সবার চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। আহির রেগে বললো

“তুই ওই স্কাউনডেল আবির কে কিছু বলিস নি?”

মিহির সাভাবিক ভাবেই বললো
” না।”

হিয়ান রেগে বললো
“না মানে কি ওরা মেঘকে এভাবে অপমান করলো আর তুই ওদের ছেড়ে দিলি?”

মিহির শয়টানি একটা হাসি দিয়ে বললো
“কাম ডাউন ব্রো। ওদের আমি মুখে কিছু বলিনি। হকি স্টিক দিয়ে মেরে আবির সহ সবগুলোর হাত পা ভেঙে দিয়েছিলাম।”

মিহিরের কথা শুনে হিমা, আলিশা, সাড়িকা ,সাইফা ভয়ার্তো চোখে মিহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো। সাইফা মনে মনে বলল
“হায় আল্লাহ্ এই ছেলেকে তো ভদ্র মনে করেছিলাম ।কিন্তু এটা তো আহির ভাইয়াদের জেরক্স কপি।শুধু একটু বোনকে অপমান করেছে বলে হাত পা ভেঙে দিলো।যদি জানতে পারে আমি ওনাকে ভালোবাসি তাহলে আমাকে মেরে হাড় গোর ভেঙে দেবে। তখন আমার জন‍্য শুধু একটা কবিতাই পোযোজ‍্য হবে।

“এক যে ছিলো সাইফা
এাশ খেলো যেই।
“ক্রসের জায়গায় ক্রাশ তো আছে
কিন্তু ছাইফা গেলো কই।

হিয়ান কৌতূহল নিয়ে বললো
” ভেরি গুড। তোকে ওরা দেখেনি?”

” না। হুডি পড়ে ছিলাম তাই ওরা কেউ দেখতে পায়নি। কিন্তু বড্ড ভুল হয়ে গিয়েছিলো। সেদিন যদি আবিরের পা না ভেঙে, জানে মেরে দিতাম ।তাহলে এবার আমার বোনটা এতোটা কষ্ট পেতো না।”

আহান শক্ত কন্ঠে মিহির কে উদ‍্যশে করে বললো

” যে ভুলটা করেছিস সেটা সুদরে নে ।ওই রাসকেল টাকে এখন মেরে দে।”

সবাই অবাক হয়ে আহানের দিকে তাকালো। দেখেই মনে হচ্ছে ভীষন রেগে আছে।মিহির শান্ত গলায় বললো

” সেটা করার এখন কোনো উপায় নেই । মেঘ আমাকে দিয়ে প্রমিস করিয়েছে। আমি যেনো আবির কে আর জেরিন কে হার্ট না করি। নাহলে এতোদিনে ওই দুটোকে মেরে মাটিতে পুতে দিতাম।”

মেঘ সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো
” তুই আবার কাকে মাটিতে পুতে দিবি?”

মেঘের কথা শুনে সবাই সিড়ির দিকে তাকালো ।মেঘ সত‍্যি সত‍্যি চোখে একটা চশমা পড়ে এসেছে। আহান এতক্ষন এমনিতেই রেগে ছিলো। এবার মেঘকে চশমা পড়তে দেখে রাগটা মাথায় চড়ে গেলো। মনে মনে বলতে লাগলো তোমার এতো সাহস মেঘ তুমি ওই ছেলের কথায় চশমা পড়ো।তারপর সোফা থেকে উঠে মেঘের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে শক্ত গলায় বললো

“চশমাটা চোখ থেকে খুলে ফেলে দাও মেঘ।”

হটাৎ করে আহান এভাবে বলায় মেঘ সহ সবাই ভ‍্যাবাচ‍্যাগা খেয়ে গেয়ে গেলো। মেঘ কিছু বুঝতে না পেরে ড‍্যাবড‍্যাব করে আহানের দিকে তাকিয়ে রইলো। আহান এবার জোরে ধমক দিয়ে বললো

“কি বলছি কথা কানে যায় না?চশমা টা খুলে ফেলে দাও।”

আহানের ধমকে মেঘ কেপে উঠলো ।প্রায় কেদে দিবে এমন অবস্থা । আহানের এতো জোরের ধমক শুনে বড়রাও সবাই খাওয়া ছেড়ে ড্রয়িং রুমে দেখতে এলো কি হয়েছে। আহান দেখলো মেঘ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে । আহান ওর দিকে কিছুক্ষন অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে শক্ত কন্ঠে বললো

“তারমানে তুমি আমার কথা শুনবে না। চশমাটা খুলবে না তাই তো ।তাহলে যা করার আমাকেই করতে হবে।”

বড়রা সবাই দাড়িয়ে দাড়িয়ে আহানের কান্ড দেখছে কিন্তু কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।আহান একটান দিয়ে মেঘের চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিজের হাতের মধ‍্যে নিয়ে জোরে একটা চাপ দিয়ে চশমাটা ভেঙে ফেললো।তারপর মেঘের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো

“আর কখনো যেনো তোমাকে চশমা পড়তে না দেখি। যদি পরেছো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।আর একটা কথা কি জানো মেঘ, যে তোমাকে ভালোবাসবে সে তোমার ভালো খারাপ সবটা দেখেই তোমাকে ভালো বাসবে। আর যে তোমাকে পছন্দ করে না,তার জন‍্য তুমি যদি নিজেকে হাজার বারও বদলাও ,তাও সে তোমাকে পছন্দ করবে না।তাই তোমার কারোর জন‍্য নিজেকে পাল্টানোর কোনো প্রয়োজন নেই, তুমি যেমন সবসময় তেমনই থাকবে।”

আহানের কথাগুলো সব মেঘের মাথার উপর দিয়ে গেলো।ও ফ‍্যালফ‍্যাল করে আহানের দিকে তাকিয়ে রইলো।মেঘকে এভাবে তাকাতে দেখে আহানের রাগ গলে জল হয়ে গেলো।ও কিছু একটা ভেবে ঠোট চেপে হেসে মেঘকে উদ‍্যেশ‍্য করে বললো

“আমিও বা কাকে কি বোঝাচ্ছি। থাক তোমাকে আর বেশি কিছু ভাবতে হবে না ।এতো কঠিন কঠিন কথা তোমার এই ছোট্ট মাথায় ঢুকবে না।শুধু একটা কথা মনে রেখো অকারণে কখনো চশমা পড়বে না বুঝেছো।”

মেঘ উপর নিচ করে হ‍্যা সূচক মাথা নাড়ালো ।
আহান মুচকি হেসে বললো

“গুড গার্ল ”

তারপর আহান সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে মেঘের রুমে চলে গেলো। মেঘ গিয়ে ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। তারপর ঠোটটা উল্টিয়ে কাদো কাদো হয়ে হিমাকে জিঙ্গেস করলো

” হিমা আপি….. আহান ভাইয়া আমার রুমে কেনো গেলো”

মেঘের এরকম ফেইস দেখে ওরা সবাই হেসে দিলো। হিমা হাসতে হাসতে মেঘকে উদ‍্যেশ‍্য করে বললো

“তোর রুমে যে বাকি চশমা গুলো আছে সেগুলোকেও ভাঙতে গেছে। যাতে তুই আর চমশা পড়তে না পাড়িস”।

মেঘ ঠোট বাকিয়ে বললো

“ভেঙে ফেললেও কিছু হবে না। আমি আবার নতুন করে কিনে তারপর পড়বো “।

অভি সিড়িআস মুখ করে বললো

“খবরদার মেঘ আর যাই করো… আহানের কথা কখনো অমান‍্য করবে না… ও রেগে গেলে কতটা ভয়ংকর হতে পারে তুমি ভাবতেও পারছো না।”

হিয়ান নরম স্বরে বললো

“তাছাড়া তোর চশমা পড়ার কোনো প্রয়োজন নেই ।তোর চোখের মনির কালার অনেক সুন্দর দেখতে।তুই আমার বোন বলে আমি একথা বলছি না ।বাইরের যেকোনো কাউকে গিয়ে জিঙ্গেস কর তারাও এই একই কথা বলবে।”

মেঘ মুখটা কালো করে বললো

“তাহলে ওরা কেনো বলেছিলো আমার চোখ বিড়ালের মতো দেখতে?”

আলিশা মৃদু রাগ দেখিয়ে বললো

“কোন গাধারা যে তোমার চোখকে বিড়ালের চোখ বলেছে আল্লাহ জানে। আর তুমিও বোকার মতো সেগুলো এখনো ধরে বসে আছো। তুমি জানো, কতো মেয়েরা নিজেদের চোখের মনির কালার তোমার মতো বানানোর জ‍ন‍্য হাজার হাজার টাকা খরচ করে লেন্স কিনে পড়ে। আর সেখানে আল্লাহ্ তোমার চোখ আগে থেকেই এতো সুন্দর করে বানিয়েছে।আর তুমি সেটার অবহেলা করছো।”

“আলিশার কথার পরিপেক্ষিতে মেঘ কি বলবে খুজেই পেলো না। মেঘ মনে মনে বললো আলিশা আপু তো ঠিকই বলেছে কিছু লোকের বাজে কথার জন‍্য , আমি আল্লাহর দেয়া উপহার কে অপমান করছি।”

মেঘকে চুপচাপ ভাবতে দেখে ।সবাই শস্তির নিশ্বাস ফেললো। বুঝলো আলিশার কথায় কাজ হয়েছে।

সবাইকে উদ‍্যেশ‍্য করে মোনা খান জিঙ্গেস করলো

“এখানে এ‍্যাকচুলি হচ্ছেটা কি?দয়াকরে আমাদের কেউ বলবে প্লিজ।”

মোনা খানের কথায় ওরা সবাই পিছনে ঘুরে তাকালো।দেখলো বড়রা সবাই সেখানে দাড়িয়ে আছে । এতোক্ষন ওনারা চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে এখানে কি হচ্ছিলো সেটা দেখছিলো। তাই ওরাও কেউই ওনাদের খেয়াল করেনি।আহির ওনাদের কাছে গিয়ে, এতক্ষন এখানে যা যা হয়েছে শুরু থেকে সবটা বললো।

______________________________________________
সাড়াটা দিন ওদের সবার অনেক হাসি মজায় কাটলো। স‍ন্ধ‍্যার দিকে সবাই নিজেদের বাড়িতে চলে গেলো। তার দুইদিন পর আজম রহমান আহিরের ভার্সিডিটে গিয়ে মিহিরের এডমিশন করিয়ে আসলেন। মেঘের এ‍্যাডমিশন আগেই এখানের একটা কলেজে করিয়ে রেখেছিলেন । নতুন বাড়িতে আসার কিছুদিন পরই মেঘ মিহির নিজেদের পড়ালেখা নিয়ে ব‍্যাস্ত হয়ে গেলো।
# চলবে

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here