ভালোবাসার-রাত
#রোকসানা রাহমান
পর্ব (৭)
তিল হাজার চেষ্টা করেও ঘুমকে বস করতে পারছেনা। বস করতে করতেই মাঝরাত হয়ে গেলো। যেইনা চোখ লেগে আসছে অমনি অদ্ভুত অদ্ভুত ফিলিং তাকে চুলকিয়ে দিচ্ছে।আর ঘুম ভেংগে যাচ্ছে।তিল শুয়ে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেনা শুধু মনে হচ্ছে তাকে কেউ সুড়সুড়ি দিচ্ছে। ঘুমের ঘোরে বারবার নড়েচড়ে উঠছে। এপাশওপাশ করেও যখন শান্তি পেলোনা,উঠে বসতেই মনে হলো তার পাশে কেউ বসে আছে। পাশে মুখটা বাকাতেই তিল অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো,
“”লিদ ভাইয়া””
রিদ এতক্ষনে বসে থাকলেও তিলকে উঠতে দেখে তিলের পাশেই শুয়ে শুয়ে বললো,
“” আমার অনেক শীত লাগছে রে তিল,কাথাটা শরীরে জড়িয়ে দেতো।””
তিল নিজের শরীরের কাথা রিদের গায়ে দিতে নিলেই রিদ বলে উঠলো,
“” তোর শরীরের লাগানো জীবানু আমাকে দিচ্ছিস কেন? যা অন্য কাথা নিয়ে আয়। তোর জীবানুমাখা কাথা গায়ে দিলে আমার আরো বেশি শিত লাগবে!””
রিদের কথায় তিল চিন্তায় পড়ে গেলো। আমার গায়ে জীবানু? আমি তো ডেইলি সাবান দিয়ে গোসল করি,তাও লাইফবয় সাবান দিয়ে তারপরও জীবানু রয়ে গেলো?? অতো ছোট ছোট জীবানুও রিদ ভাইয়া দেখতে পাচ্ছে??
“” ছোট ছোট কই পেলি? এক একটা হাতির মতো জীবানু, দেখ কেমন কিলবিল কিলবিল করছে। এই যে তোর নাকটা যে ঘেমে ছোটছোট বিন্দু জমে আছে,তোর কি মনে হয় এগুলো ঘাম? এগুলো হলো জীবানুর পায়খানা। দেখি একটু সরে বসতো। তোর নাকের জীবানুর পায়খানা থেকে গন্ধ আসছে,বমি বমিও লাগছে।””
রিদের কথা শুনে তিলের ভেতরেও মোচড় দিয়ে উঠলো। তারমানে সে সবসময় এই জীবানুর পায়খানা নিয়েই ঘুরাঘুরি করে? ছি! ছি!! ছি!!! জীবানুরা আর কোনো জায়গা পেলোনা শেষে কিনা আমার নাকের আগায় পায়খানা করলো??
“” কি হলো এখনো কাথা দিলি না? তুই কি চাস আমি শীতে কাপতে কাপতে মরে যায়?? আমি মরে গেলেই তো তুই বাচিস তাইনা?””
তিল বিছানায় নিজের কাথাটা ছাড়া আর কোনো কাথা খুজে পেলোনা। পাবেই বা কিভাবে? এই জৈষ্ঠমাসে ও কি কেউ কাথা গায়ে দেই?
তিল বিছানা ছেড়ে রুম থেকে বের হতে নিলেই রিদ ডেকে উঠলো,
“” এই মাঝরাতে কোথায় যাচ্ছিস তুই?””
“” আম্মুল কাছে,আপনাল জন্য কাথা….””
“” রাত কয়টা বাজে দেখেছিস? এখন তুই কাকিমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলবি? উনারা কি তোর মতো হাওয়া খেতে খেতে নেচে বেড়ায়? কাথা আনতে হবেনা,তোর কান্ডকারখানায় আমার শীত চলে গেছে। যা আমার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আয়। আমার এখন কফি খেতে ইচ্ছে করছে।””
“” হুম।””
তিল গুনগুন করতে করতে কফি বানাচ্ছে। তিলের মনে হলো এই প্রথম তার কফি বানাতে এতো ভালো লাগছে। কিন্তু কেন? রিদ ভাইয়ার জন্য বানাচ্ছি তাই??
তিল খুবই মনোযোগ সহকারে কফি বানিয়ে বার বার চেক করে নিলো,কোনোকিছু কম পড়ে গেলো নাতো??
হাতে কফি নিয়ে রুমে ঢুকতেই রিদ বলে উঠলো,
“” তুই কি রেষ্টুরেন্ট খুলে বসেছিস? একটা কফির জন্য আমাকে ১ ঘন্টা ওয়েট করিয়ে রাখলি? একটা কফি বানাতে তোর এতো সময় লেগে গেলো??””
“” সলি!””
রিদ তিলের হাত থেকে কফিটা নিয়ে ঢিল মেরে নিচে ফেলে দিলো।
“” এমন রেষ্টুরেন্টওয়ালির কফি রিদ খায় না।””
তিল ছলছল নয়নে রিদের দিকে তাকিয়ে রইলো। সে কি জানে তার জন্য সব থেকে সুমিষ্টি কফিটা বানাতে আমি ৭ মগ কফি নষ্ট করেছি?? তার জন্য সকালে আম্মুর কাছে ৭০০ বকা খেয়ে ৭০০০চোখের পানির ফোটা ফেলতে হবে?? আর সব থেকে বড় কথা ঐ কফিতে যে আমার রিদয়ে রাখা ৭০০০০ হাজার সমুদ্রের পানির থেকেও বেশি ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম।
“” এভাবে হেবলার মতো তাকিয়ে কি দেখছিস? যা এখনি ৫ মিনিটের মধ্যে ২ কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আসবি।””
“” দু কাপ কেন?””
“” আমি কত কাপ চা খাবো কেন খাবো সেটাও তোকে বিশ্লেষন করে বলতে হবে? তুই কি বড় বিশ্লেষক হয়ে গেছিস?””
রিদের বাকি কথা শুনার সময় না নিয়ে তিল বেরিয়ে পড়লো রান্নাঘরের দিকে। আপনি সবসময় আমার সাথে এভাবে কথা বলেন কেন? আমি তো আপনার সব কথা শুনার চেষ্টা করি। একটু ভালো করে বললে কি হয়? এতো রাগ দেখিয়ে কথা বলেন কেন? আমার যে আপনার প্রত্যেকটা কথায় খুব বেশি কষ্ট হয়।
তিল তাড়াহুড়ো করে চা বানাতে লাগলো। চা কাপে ঢালতে গিয়ে ছিটকে নিজের হাতে পড়ে গেলো। না চাইতেও মুখ দিয়ে আহ! শব্দ বের হয়ে আসলেও তিল সেদিকে ভ্রক্ষেপ করলোনা। তড়িঘড়ি করে কাপে চা ঢেলে নিয়ে উল্টোঘুরতেই রিদের সাথে ধাক্কা খেলো।
“”চা খেতে চেয়েছি বলে গরম চায়ের ছেকা খাওয়াবি? তোর মনে এতো কটুক্তি ছিলো তাতো জানতাম না,তিল! দিনে দিনে তোর এতো অধোপতন হচ্ছে? কাকা,কাকিমা তোকে এই শিক্ষা দিচ্ছে?””
“” আমি ইচ্ছে কলে,,,,””
“” ইচ্ছে করে দিসনি তো,আমি ইচ্ছে করে তোর কাছে ছেকা খেতে এসেছি তাইনা?””
“” না। কিন্তু আমি…””
রিদ তিলের গালদুটো চেপে ধরে বললো,
“” এখন আমার মুখে মুখে তর্ক করাও শিখে গেছিস?? খুব বড় হয়ে গেছিস তাইনা??””
রিদ তিলের মুখটা অমন করে চেপে ধরে হালকা উচু করে ধরতেই তিল ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। তিলের এমন ভয়ার্ত চেহারায় রিদ মুচকি হেসে ফেলে। তিলের কোমড়টা বা হাতে জড়িয়ে তিলকে নিজের একটু কাছে টেনে নিয়ে বললো,
“” তোর নাকে করা জীবানুর পায়খানাগুলো ধুয়ে ফেল। নাহলে আমি প্রতিরাতেই তোর ঘুমের বারোটা বাজিয়ে চা খেতে চলে আসবো!””
রিদের কথায় তিল চোখ মেলতেই ওকে ছেড়ে দিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় রিদ। ঠোটে এখনো হাসিরা উকি দিয়ে যাচ্ছে।
“” কিরে,তুই একটু পরপর মুখ ধুচ্ছিস কেন? তোরে কি মুখ খারাপ ব্যারামে ধরলো?””
মুখে পানির ঝটকা দিতে দিতে তিল তাসমিয়া বেগমের কথার উত্তরে বললো,
“” মুখ খারাপ ব্যারাম? সেটা আবার কেমন ব্যারাম আম্মু?””
“” বার বার বাথরুম পায়লে যদি পেট খাওয়া ব্যারামে ধরে তাহলে বারবার মুখ ধুলে তো মুখ ধুয়া ব্যারামই হয়। তোর কি মনে হয় আমি কিছুই জানিনা? আমি ক্লাস ৮ পাশ। তোর বাপের জন্যই তো আর পড়তে পারলাম না। তুই জানিস আমাদের ক্লাসে সব থেকে ভালো ছাত্রী তোর মা ছিলো?””
“” তাই?””
তাসমিয়া বেগম মেয়ের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
“” নিশ্চয় কোনো ভুলভাল জিনিস মাখছোস তাইনা?””
“” আমি আবার কি মাখালাম?””
“” নাহলে তোর মুখ খারাপ ব্যারাম কি করে হলো?””
তিল মুখে পানির শেষ ঝটকা টা দিয়ে টাওয়াল টা হাতে নিলো। মুখটা মুছে নিয়ে মায়ের দিকে নাকটা বাড়িয়ে বললো,
“” আম্মু, দেখোতো আমার নাক থেকে পায়খানার গন্ধ আসছে নাকি?””
“” নাক থেকে পায়খানার গন্ধ?””
“” হুম। আব্বুকে বল তো ফার্মেসী থেকে একটা ভালো ওষুধ এনে দিতে,যেটা মাখলে আমার নাকটা ঘামবেনা আর জীবানুরা পায়খানাও করতে পারবেনা।””
নিজের হাতে থাকা টাওয়ালটা মায়ের গলায় পেচিয়ে দিয়ে তিল রুম ছেড়ে বেড়িয়ে আসলো।
“” এই তিল,তরকারীটা একটু নেড়ে দিয়ে যাতো। আমার হাতে ময়লা।””
“” চুলার ধারে গেলেই আমার নাকে জীবানুরা পায়খানা করবে,বড় আম্মু। তুমি কি চাও,তোমার ভাতিজির নাক দিয়ে গন্ধ বের হোক?””
তিল বড় আম্মুর কথার অবাধ্য হয়ে রিদের রুমের দিকে এগুলো। এখন নাকে কোনো পায়খানা নাই,উনাকে একটু দেখালে কেমন হয়??
তিল রিদের দরজার কাছে যেতেই রিদ বলে উঠলো,
“” পায়খানাওয়ালা নাক নিয়ে আমার রুমে আসবিনা। আমার আবার বমি আসছে!””
রিদের কথায় তিল নাকে হাত দিতেই হাতের আংগুল ভিজে এলো। তিলের ইচ্ছে হলো নিজের নাকটা কেটে ফেলতে। এতো কেন ঘামতে হয়? পৃথিবীর সব জীবানু কি আল্লাহ আমার নাকেই দিলো? আর ওদেরও কি সেকেন্ডে সেকেন্ডে পায়খানা হয়? কয় আমার তো এতো পায়খানা পায়না। তাহলে ওদের কেন পেতে হয়? আর একটু আটকে রাখলে কি হতো? ওরা কি বুঝেনা আমার রিদ ভাইয়ার কাছে না গেলে ভালো লাগেনা???
“” এমন সরু ঠ্যাংওয়ালা কি তোর বর?””
তিল রিদের রুম থেকে ফিরে এসে ফুল পাওয়ারে ফ্যান ছেড়ে খাতা কলম নিয়ে বসেছিলো। ছবি আকা নিজের তেমন একটা পছন্দ না হলেও কেন জানি হঠাৎ করে নিজের রিদ ভাইয়ার হাসি মুখটা একে দেখতে ইচ্ছে হলো। বাস্তবে রিদের হাসি মাখা মুখটা তিলের চোখ ছুতে না পারলেও পেনসিল দিয়ে ছুতে চাইলো। অনেক কষ্টে ২ ঘন্টাভরে একটা ছেলে আকৃতি দিতে পারলেও মুখটা কিছুতেই আকতে পারলোনা। রাবার দিয়ে মুছতে মুছতে খাতা ছেড়ার অবস্থা হয়ে এলো। মুখটার মধ্যে একটা বড় হাসির ইমুজি একে নিলো। এতেও তিলের মন ভরলোনা। ইচ্ছে হলো নিজের হাসি হাসি রিদভাইয়ার সাথে পাশে দাড়ালে,নিজেকে কেমন লাগে তা দেখতে। সেই ইচ্ছে পুরনেই তিল খাতায় আকা রিদের পাশে একটা মেয়েকে আকছিলো। ঠিক তখনি রিদ পেছন থেকে এসে ছো মেরে তিলের খাতাটা নিয়ে নিলো।
“” তোর বর কি পাঠকাঠি দিয়ে বানানো? তুই নিজে বানিয়েছিস? আর এই পাশের মেয়েটা কে? তোর বরের দুই নাম্বার বউ?””
তিল বিছানা থেকে উঠে সোজা হয়ে দাড়িয়ে গেলো। মাটির দিকে তাকিয়ে বললো,
“” এক নাম্বাল বউ।””
রিদ খাতা থেকে চোখ সরিয়ে তিলের দিকে তাকিয়ে বললো,
“” তাই? কিভাবে বুঝলি? এটা এক নাম্বার বউ?””
“” জানিনা।””
তিল সেখান থেকে দৌড়ে চলে আসলো। রিদ ভাইয়া এগুলো কি বললো? বর বউ? আমি তো রিদ ভাইয়া আর আমাকেই আকঁছিলাম,তাহলে কি রিদ ভাইয়া বর আর আমি….তিল নিজের হাত দিয়ে লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেললো। আমি রিদভাইয়ার বউউউ???
“”will you marry me,???””
চলবে