ভালোবাসার_নীল_জোছনা পর্ব ৬
#আরিয়ান_অরণ্য
সেদিন রাতে রাহুল দিয়াকে ফোন করে ও চলে আসার পর কি ঘটেছে জানায় সব। রাহুল জানায়, বৃদ্ধা আর তার ছেলে শুধু সেই বাড়িতে থাকে, ছেলে প্রতিদিন বিকেলে কাজে যায়, বৃদ্ধা ঘুমিয়ে থাকে বলে বাইরে থেকে তালা মেরে যায়। সেদিন বৃদ্ধার ঘুম ভাঙে তাড়াতাড়ি, এসময় তার খারাপ লাগছিলো তাই দরজার কাছে আসছিলেন। তখনই মাথা ঘুরে পড়ে যান। পরে হাসপাতালে নিলে জানা যায় তিনি স্ট্রোক করেছিলেন, তাকে আনতে আরেকটু দেরি হলেই বিপদ হয়ে যেত। এখন তিনি শঙ্কামুক্ত।
ফোন রাখার পর দিয়ার মনে শুধু রাহুলের কথাই ঘুরতে থাকে। ওর মনে হতে থাকে ছেলেটা অন্য আর সবার মতো নয়, ওর একটা ভালো মন আছে নিশ্চয়ই। কেই বা শুধু শুধু এক অচেনা বৃদ্ধার জন্য এতো কিছু করে? এছাড়া এর আগে সেই বৃষ্টির দিনেও দিয়ার সাথে কোনো খারাপ আচরণ করেনি ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও। দিয়া ভাবে রাহুলের সাথে সে আর খারাপ ব্যবহার করবে না।
পরের দিন ছিলো ওদের সার্ভে কাজের শেষদিন। প্রতিদিন যেমন হয় তেমনি ভাবে শেষ হল সব, কিন্তু যখন ওরা রিকশায় করে ফিরছিলো দিয়ার কেন যেন খারাপ লাগছিলো খুব। ওর মনে হচ্ছিল কেবল আরো কিছুদিন যদি চলতো এভাবে। আচ্ছা রাহুলও কি এমন কিছু ভাবছে? দিয়া রাহুলের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে গেমস খেলছে একমনে। দিয়ার খুব রাগ লাগলো, সে – কি এতো খেলেন দেখি- বলে রাহুলের হাত থেকে মোবাইল নেবার জন্য টান দিলো, তখনই তার হাতটা ছুয়ে গেল রাহুলের হাত। অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে গেল দুজনের ভেতর। দুজন দুজনের দিকে অপলকে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ।
দিয়া ভেতরে ভেতরে লজ্জায় মরে যাচ্ছিলো। ফেরার সময় যখন রাহুল তাকে বাই জানালো তখনও সে লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে পারলো না। সেদিন সারারাত দিয়ার শুধু রাহুলের কথাই মনে হতে লাগল। দিয়া কি আর জানতো, রাহুলও যে তখন কেবল তাকে নিয়েই ভাবছে।
পরদিন রাহুল ক্লাসে বসে আছে, হঠাৎ সবার বিস্ময় মেশানো শব্দ শুনে সামনে তাকালো। দেখলো দিয়া আসছে, পরনে আকাশের মতো গাঢ় নীল শাড়ি, মেঘ কালো ঘন চুলগুলো খোলা,পিঠ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। রাহুল চোখ সরাতে পারছে না, ওকি মানবী না অপ্সরী? দিয়া রাহুলের পাশে গিয়ে বসল, রাহুল আর কোনো ক্লাসেই মনোযোগ দিতে পারলো না, আড়চোখে বারবার দেখতে লাগল দিয়াকে। দিয়া বুঝতে পারল সবই, মনে মনে হাসতে লাগল।
ছুটির পর রাহুল আর দিয়া পাশাপাশি হাঁটছে, কেউ কিছু বলছে না। হঠাৎ রাহুল বললো- দিয়া একটা কথা বলবো।
(চলবে)