ভালোবাসার_নীল_জোছনা পর্ব ১১+১২ (শেষ পর্ব)

ভালোবাসার_নীল_জোছনা পর্ব ১১+১২ (শেষ পর্ব)
#আরিয়ান_অরণ্য

ঝর্ণা বললো- প্ল্যান অনুযায়ী যেদিন রাহুল আসেন তাকে একটা ফলের জুস খেতে দেয়া হয়, এতে ঘুমের ওষুধ মেশানো থাকে। উনি ওটা খেয়ে বাথ নেয়ার জন্য জামা কাপড় খুলেই ঘুমিয়ে পরেন, এরপর আমি তুলি ছবিগুলো। পরদিন টিনা ম্যাম আমাকে তার বাসায় নিয়ে যান, সেখানে তখন আপনিও আসেন, এরপর টিনা ম্যাম আমাকে যা করতে বলেছিলো তাই করি আমি। ( কাঁদতে কাঁদতে) প্লিজ আমাকে মাফ করে দেন, আমার মা হসপিটালে ভর্তি ছিলো তখন,আর আমার অনেক টাকার দরকার ছিলো, শুধু মাকে বাঁচানোর জন্যই খারাপ কাজটা করতে হয়েছিলো আমাকে।
দিয়া কি বলবে বুঝতে পারছিলো না। রাহুল ঝর্ণাকে বললো- আচ্ছা আপনি যান এখন। স্পার মালিককে আপনার ব্যাপারে কমপ্লেইন করবো না কথা দিলাম।
ঝর্ণা চলে গেলে রাহুল দিয়াকে বললো- যখন তুমি বললে সব তোমাকে টিনা বলেছে তখনই আমার খটকা লাগে, কারণ তুমি কলেজ ছেড়ে চলে যাবার পর টিনা ভাব জমাতে আসে , প্রপোজও করে আমাকে কয়েকবার। কিন্তু আমি সারা দেই নি। এরপর চিন্তা করলাম তুমি যেমন ছবি দিয়েছো তেমন কোনো সিচুয়েশন এ ছিলাম কিনা আমি কোনোদিন? তখন মনে পড়লো একবার স্পায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তেমন কখনো হয়নি আর। সন্দেহ হতেই স্পাতে খোঁজ নিলাম আজ সকালে, শুনলাম টিনা যায় সেখানে আর ঝর্ণার সাথে খুব খাতির তার। ব্যস আমিও ঝর্ণাকে পেয়ে গেলাম আর একটু ভয় দেখাতেই সব বলে দিলো ও।
দিয়া- কিন্তু টিনা এটা কিভাবে করলো আমার সাথে?
রাহুল- সেটা শুধু টিনাই বলতে পারবে।
একটু পর দিয়া ফোন করলো টিনাকে, বললো ব্লু মুনে আসতে, একটা সারপ্রাইজ আছে। আধাঘণ্টার মধ্যেই চলে এলো টিনা, কিন্তু দিয়ার পাশে রাহুলকে দেখে মুখ কালো হয়ে গেলো তার।
দিয়া- সরি দোস্ত তাড়াহুড়োতে বলা হয়নি তোকে। আমি আর রাহুল বিয়ে করেছি কালকে।
টিনা- (শুকনো মুখে) ওহ কংগ্রেচুলেশন। দিয়া আমার একটা কাজ আছে আমি যাই।
দিয়া- (টিনার হাত চেপে ধরে) দাঁড়া, তুই কেন আমার আর রাহুলের সাথে এমন করলি? অস্বীকার করতে পারবি না, কারণ ঝর্ণা সব বলেছে আমাকে।
টিনা- (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) কেন করেছি জানতে চাস? বলতো, তোর চেয়ে কি আমি রূপ, গুণ কিসে কম? তবুও তুই কেন সব ভালোটা পাস? শেষে যখন দেখলাম রাহুলও তোর প্রেমে পড়েছে তখন সহ্য হলো না আমার। রাহুলকে পাওয়ার জন্য সবকিছু করলাম। যাক, লাভ হলো না। কিন্তু ডেকেছিস কেন, তুই কি ভেবেছিস কোন শাস্তি দিতে পারবি আমাকে?
রাহুল চুপচাপ অপেক্ষা করতে লাগল, দিয়া কি বলে দেখার জন্য। (চলবে)

#ভালোবাসার_নীল_জোছনা
#আরিয়ান_অরণ্য
পর্ব ১২ (শেষ পর্ব)
কিন্তু রাহুলকে অবাক করে দিয়ে দিয়া মুচকি হেসে টিনাকে বললো- আমি তোকে কোনো শাস্তিই দিবো না। কারণ এত চেষ্টাতেও তুই রাহুলকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারিস নি। রাহুল আমার, সারাজীবন আমারই থাকবে। কিন্তু তুই তবুও শাস্তি পাবি। হিংসায় ভরে আছে তোর মন। তুই দেখিস, আমার আর রাহুলের সংসার এতো সুখের, এতো ভালোবাসার হবে, তুই দূর থেকে দেখে নিজেই জ্বলে পুড়ে যাবি তোর হিংসের আগুনে।
টিনা দেখল রাহুল আর দিয়া দুজন দুজনের হাত ধরে চলে গেল ক্যাফে থেকে। রাগে দুঃখে অপমানে চোখে পানি চলে এলো টিনার, চিৎকার করে উঠল সে।
সেদিন আর কোনো কথা হল না রাহুল আর দিয়ার। রাহুল আমেরিকায় যাবার কাগজপত্র ঠিকঠাক করতে বাইরেই কাটিয়ে দিলো সারাদিন, আর দিয়ার দিন কেটে গেল মেহমানদারিতে। অবশেষে ওরা যখন একজন আরেকজনকে পেলো তখন অনেক রাত, সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।
রাহুল কোথা থেকে একগুচ্ছ কদম ফুল জোগাড় করে এনেছিলো। ওটা নিয়ে রুমে ঢুকে দেখল, দিয়া কাঁদছে। রাহুল অবাক হয়ে বলল- কি ব্যাপার দিয়া, কাঁদছো কেন?
দিয়া- (কাঁদতে কাঁদতে) প্লিজ রাহুল আমায় মাফ করে দাও। টিনা যখন আমার কাছে তোমার নামে অপবাদ দিলো তখনই আমার উচিত ছিলো তোমার সাথে কথা বলা। কিন্তু তা না করে তোমাকে আজেবাজে কথা বলেছি, তোমাকে ছেড়ে চলে গেছি। আমাকে তুমি…
আর বলতে পারলো না দিয়া, ততক্ষণে একজোড়া ঠোঁট চেপে বসেছে তার ঠোঁটে। আবেশে বন্ধ হয়ে এলো দিয়ার চোখ।
সময় বয়ে চললো নিঃশব্দে। ওরা দুজন তখন দুজনার। কোনো কথা হলো না ওদের মধ্যে, ওদের অনুভূতিগুলোই যেন পরস্পরের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলো। অবশেষে ওরা যখন আলাদা হলো, দিয়ার মধ্যে তখন ভর করেছে চিরকালের বাঙালি বউয়ের লজ্জা। রাহুলের বুকে মুখ লুকিয়ে জানতে চাইলো ও- আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না তো?
রাহুল ফিসফিস করে বললো- না,কখনো না।
সে রাতে পূর্ণিমা ছিলো। ভালোবাসার নীল জোছনায় ভরে উঠল ওদের ঘর।
(আমার গল্পটি এখানেই শেষ। যারা এতোদিন ধরে গল্পটি কষ্ট করে পড়েছেন, গ্রুপে আমার পোস্ট অ্যাপ্রুভ করেছেন, আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন বিভিন্নভাবে, তাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। সবার জীবন ভরে উঠুক ভালোবাসার নীল জোছনায়।)

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here