#ভালোবাসা_তুই
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃসাদিয়া_আক্তার
________________________
কনে বেশে খাটে বসে আছে ইরা।ঘরের চারদিকটাকে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে।আর চোখ গুলো থেকে পানি বেরেই যাচ্ছে অজোরে।বিয়েরপর এই রাতের স্বপ্ন তো প্রত্যেক মেয়েই নিজের মনের মতো করে সাজিয়ে রাখে।নিজের জীবনের আরেকটি নতুম অধ্যায়ের শুরু হিসেবে।তবে তার তো এমন একজনের সাথে বিয়ে হয়ে গেলো যাকে ইরা চাইই না।কিভাবে পারবে সবকিছু ভুলে,তূর্যকে ভুলে নতুন জীবন শুরু করতে আমিরের সাথে?আজ কি তার সাথে খুব বাজে কিছু হতে চলছে?এই সব প্রশ্নই ইরার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।আর বেশি ভাবতে পারছে না।মাথায় ব্যাথা শুরু হয়ে যাচ্ছে।কিছুক্ষন পর রুমে কেউ একজনের ঢুকার উপস্থিতি ইরা অনুভব করতে পারলো।ভাবনার জগৎ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলো,চোখের পানিগুলো হাত দিয়ে মুছে ফেলল।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে আমিরের কাছে সপে দেওয়ার জন্যে তৈরি করে নিচ্ছে।ইরা বুঝতে পারছে, সে তার পাশে এসে বসছে।ইরার হাতটি নিজের কাছে টেনে নিলো।সাথে সাথে কেঁপে উঠলো ইরা।কারণ তার হাতের স্পর্শটা ইরার চিনতে দেরি হলো না।তবুও সিউর হওয়ার জন্যে একবার মুখ উপরে তুলে তাকালো।দেখাই শোকড।
ইরা চেচিয়ে বলে উঠলো,
—–ত তূর্য!আ আপনি ? এ এখানে কি করছেন?বলেই দুরে সরে গেলো।
—–হ্যাঁ আমি।তো কার থাকার কথা?
—–আপনি প্লিজ যান।আমি জানি না আপনি কিভাবে জেল থেকে বের হয়ে আসলেন কিন্তু প্লিজ এখন এখান থেকে যান।আমির আসবে এখুনি।
——আমির আসবে কেনো?
—–আমির আসবে।কারণ উনার সাথে আমার আজ বিয়ে হয়ে গেছে।এখন আমি অন্যের বউ।(একটু রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে বলে)
এই কথা শুনে তূর্য সঙ্গে সঙ্গে হেসে দিলো।তূর্য হেসেই যাচ্ছে।তা দেখে ইরা ভ্রু কুচকে রেগে গেলো কিছুটা।
——এভাবে হাসছেন কেনো?আর এখন প্লিজ যান এখান থেকে। আমির এসে পরলে উল্টো পাল্টা কিছু ভেবে বসবে।
হাসি থামিয়ে তূর্য বলে,
——তো ভাবলে ভাবুক।ওর কিছু করার সাহস নেই বুঝলে ইরু।
এবার ইরা বুঝছে তূর্য পাগল হয়ে গেছে দুইদিন জেলে থেকে।তাই এবার তূর্যকে রীতিমতো গা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিচ্ছে ।
তূর্য রেগে ইরাকে খাটে ফেলে তার উপর উঠে জোর গলায় বলে,
—–তোমার বিয়ে আমার সাথে হয়েছে।সো ওই আমির কেনো আসবে?
ইরা তা শুনে ৪২০ভোল্টের ঝাটকা খেয়ে গেলো।তূর্যকে নিজের গায়ের উপর থেকে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলে,
—–মানে?কি বলছেন?কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
—–তুমি কি ভাবলে ওই খচ্ছর আমিরের সাথে আমি আমার ইরুর বিয়ে হয়ে যাওয়া অবধি বসে থাকতাম।তা আমি কখনোই হতে দিতে পারি না।
—–মানে আমি কিছু বুঝছি না।আপনি না জেলে ছিলেন তো কিভাবে কি হলো?
—–হুম সবই বলছি।
যেদিন তোমার বিয়ের কথা আমিরের সাথে জেনেছি আমি কি করবো নিজেও জানি না।শুধু আমাকে এই জেল থেকে যেভাবে হক বের হতে হবে এটাই মাথায় আসছিলো।বাট আমার যে পরিচিত লোয়ার আছে সে পারবে না তিনদিনের আগে।চৈতীর এক পরিচিত মামা আছেন তিনিই লোয়ার মেনেজ করে আমাকে বের হতে সাহায্য করেছেন।
—-তারপর?আ আর আমির কোথায়?(অবাক চেয়ে)
—-তারপর আমি বিয়ের হলে পৌঁছায় যেখানে তোমার বিয়ে হবে।কিন্তু আমি বিয়ে ভাঙার মতো গেঞ্জাম করলে সেইটা তোমার ফ্যামিলির বদনাম হতো।আমিরকে ওর যথা স্থানে পৌঁছে দিয়েছি।হাহাহা।
—–মানে?
—–মানে ওকে ওর জাগায় পৌঁছে দিতে আমাকে আমার ছোট বোন মানে তোমার ফ্রেন্ড চৈতী হেল্প করেছে।
—–চৈতী কি করেছে?
—–চৈতী আমিরকে জামাই আদর করে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে ঘুমের দেশে তলিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।বলেই তূর্য হেসে দিলো।হাসি থামিয়ে আবার বলল,”শালা, ভেবেছে কি এভাবে জেলে ফাসিয়ে আমার থেকে তোমাকে ছিনিয়ে নিবে”?
—–হ্যাঁ নিবে। আপনার মতো ক্রিমিনালের সাথে এমনটায় হওয়া উচিৎ।
তূর্য রেগে যায় এবার।বলে,
—–আমি ক্রিমিনাল?আজ আমার কাছে প্রুফও আছে।
এই বলে তূর্য তার পকেট থেকে কিছু ছবি বের করে দেখালো যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ফাহিম কিছু লোককে দিয়ে তূর্যদের কোম্পানির গোডাউন থেকে প্রোডাক্ট চুরি করার নির্দেশ দিচ্ছে।এবার তূর্য ইরার কাছে গিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফাহিমের কল রেকর্ডিং শুনালো যেখানে ফাহিম একজন ড্রিলারের সাথে প্রোডাক্ট চুরি করে হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছে।
তা দেখিয়ে তূর্য আবার বলে,
——-আমি জানতাম তোমার ভাই এই বিয়েতে রাজি হবে না তাই সোজা চলে গেলাম ফাহিম তোমার ভাইয়ের কাছে।উনার বিরুদ্ধে যে প্রমাণ আমার কাছে আছে তাই দেখালাম।তা দেখে তোমার ভাইয়ের মাথার ঘাম মাটিতে পরার প্রতিক্রম।আমিও শর্ত জারি করে বসলাম যদি আজ আমিরের সাথে ইরার বিয়ে হয় সব প্রমাণ পুলিশের কাছে যাবে যা তাকে গ্রেফতার করতে যথেষ্ট।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ইরা প্রশ্ন ছুড়ে বলে,
—–তার মানে আমার ভাইই এমন এক অপকর্মের সাথে জরিত?
—–এতো কিছু দেখানোর পরও কি ইরা তুমি চোখে তালা দিয়ে রাখবে?
তা শুনে ইরা কিছুটা কান্নামাখা কন্ঠে বলে,
—–ফাহিম ভাই এমন কিছু করতে পারে তা আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। বলে তূর্যের বুকে মাথা গুজে কাদঁতে থাকে।
তূর্য ইরাকে সান্তনা দিয়ে বলে,
—–আচ্ছা ইরা তুমি কান্না করো না প্লিজ।অন্তত আজকের এই দিনে কান্না করে আমাদের এই সুন্দর মুহুর্তটা নষ্ট করো না।ফাহিম ভাই আমার কাছে মাফ চেয়েছেন।কিন্তু এখনো আরও একটু ডোজ দেওয়া বাকি।
ইরাকে তূর্য তার বুক থেকে উঠিয়ে চোখের পানি গুলো মুছে ইরার কপালে ভালোবাসার পরশ ছুয়ে দিলো।ইরা তূর্যকে ভুল বুঝার জন্যে নিজেও খুব লজ্জিত।তাই মুখ নিচু করে রেখেছে।তা দেখে তূর্য বলে,
—–ইরু মাথা উপরে তুলো।তোমাকে কতোদিন দেখি না আর তুমি এভাবে আমার কাছে মুখ লুকিয়ে রাখছো?
—–না।আমি তাকাবো না।আমার লজ্জা করছে।আমি আপনাকে ভুল বুঝে কতোই না কটু কথা শুনিয়েছি,কষ্ট দিয়েছি।
—–হুম তা তো দিয়েছো।এই কষ্ট আজ তুমিই পুষিয়ে দাও তোমার ভালোবাসা দিয়ে তাহলেই হবে।
তা শুনে ইরা মুচকি হেসে লজ্জায় তূর্যের বুকে মুখ লুকিয়ে নিলো।
🍂
সকাল ৭টা,
জানালা থেকে রোদের আলোর জ্বলকানিতে আমিরের ঘুম ভাঙালো।উঠে দাঁড়াতে পারছে না।মাথাটা খুব ভার ভার লাগছে।তবুও এই ভারযুক্ত মাথাটা ধরেই উঠার চেষ্টা করে দাঁড়লো।নিজেকে সে এক পুরনো গাড়ির গ্যারেজে আবিষ্কার করতে পেলো।আমির কিছুই বুঝতে পারছে না।শুধু কষ্ট করে এটাই মনে করতে পারলো যে তাকে কাল এক গ্লাস শরবত খাওয়ানো হয়েছিলো তারপর প্রচুর মাথা ঘুরায়,, তারপর আর কিছু মনে করতে পারছে না।হঠাৎ ইরার কথা মনে করেই আমির দৌড়ে ছুটতে থাকে ইরার বাসার দিকে।আমিরের ফোনে রিং বেজে উঠলো।নাম্বারটি আননোন। কল রিসিভ করতেই অপরপাশ হতে,
——যেখানে ছুটে আসতেছিস এখুনি ফিরে যা।এসে লাভ নেই।
কন্ঠটা শুনে চিনতে আর বাকি রইলো না আমিরের যে এইটা তূর্যরই কন্ঠ।
——তুই শালা আমাকে এখন ফোন করেছিস কেনো আর কি উল্টা পাল্টা কথা বলছিস?আমার শ্বশুর বাড়ি আমি কখন আসবো না আসবো সেইটা তোর অনুমতি নিয়ে আসবো(আমির)
——হা হা…হ্যাঁ আমার অনুমতি নিয়েই আসবি কারণ ওইটা তোর শ্বশুরবাড়ি না আমার।
—–মানে?(রেগে)
—–কাল ইরার বিয়ে আমার সাথে হয়েছে তোর সাথে না।
—–তার মানে কাল আমাকে তুইই ঘুমের ওষুধ খাওইছিস শালা?
—–বলা যেতে পারে।যদিও আইডিয়াটা আমার না।কারণ তোর মতো ইডিয়েটের থেকে আমার ইরাকে আনার জন্যে আমিই যথেষ্ট তার জন্যে ঘুমের ওষুধ দরকার হয়না।
——তুই ঠিক করি…..বলতে না বলতেই তূর্য ফোন রেখে দেয়।রাগে কটমটিয়ে আমির ফুলে উঠে।ফোনটা ছুড়ে মাটিতে ফেলে টুকরো টুকরো করে দেয়।নাক ফুলতে ফুলতে আমির বলে,”তুই ঠিক করিসনি তূর্য।তোকে এর শাস্তি যে পেটে হবে তাও অনেক খারাপ ভাবে”।
🌺
ইরা ঘুম থেকে উঠে।আজ যেনো নতুনভাবে জীবনের আরেকটা অধ্যায় শুরু হয়েছে।ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে তূর্যকে ডেকে তুলল।
—–উফফ ইরা এখন ডাকছো কেনো?কাল অনেক রাত করে ঘুমিয়েছি।আজ ঘুমোতে দাও প্লিজ।বলে ইরাকে টান দিয়ে নিজের বুকে চেপে ধরে আবার শুয়ে গেলো তূর্য।
—–আরে আরে কি করছেন?এখন উঠেন। কাল যে আপনি আমাকে চালাকি করে বিয়ে করেছেন তা তো আপনার ফ্যামিলি জানে না।আপনার আব্বু আম্মুর কাছে তো যেতে হবে।সব জানাতে হবে।
—–ওহ তুমি ভেবো না তারা জানেন যে আমি আমার ইরাকে কতো ভালোবাসি আর তাকেই বিয়ে করবো।
—–বাট তারপরও চলেন।দেরি না করে আগে যাওয়াই উচিৎ।
—–উফফ!বুঝছি তুমি আমাকে ঘুমাতে দিবা না।মানে ওখানে নিয়েই দম ছাড়বা।যাচ্ছি তাহলে ম্যাডাম বলে ইরার গালে চুমু দিয়ে চলে যায় ফ্রেস হতে তূর্য।
🌹
তূর্য আর ইরা গাড়িতে বসে আছে।হঠাৎ তূর্যের ফোনে আননোন কারো নাম্বার ভেসে উঠতেই তা রিসিভ করে,
—–হ্যালো।কে বলছেন?
—–তূর্য, তূর্য আমাকে বাঁচাও।
—–হ্যালো,হ্যালো ফাহিম।কি হয়েছে তোমার?
——তূর্য ওরা আমাকে ধরে নিয়ে এসেছে মেরে ফেলবে।তুমি জলদি আসো।
——কারা মেরে ফেলবে?কি বলছো?
তা শুনে ইরা ভয়ে কেঁপে উঠে, কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,
——কারা ফাহিম ভাইয়া কে মেরে ফেলবে?
তূর্য ইরার ভয় পাওয়াকে শান্ত করতে কিছু না বলে বলল,
—–আমি দেখছি ইরা।তুমি এতো ভেবো না।সব ঠিক হয়ে যাবে।
গাড়ি তূর্যের বাসার সামনে থামতেই তূর্য ইরাকে তার বাসায় নিয়ে যায়।তূর্যের মা দরজা খুলে,
—–আম্মু তুমি ইরার খেয়াল রেখো।তোমার বউমা।আমি একটু আসছি।কিছুক্ষণ পরই আসছি।
==================
চলবে🌹