ভালোবাসি বলেই তোমাকে প্রয়োজন পর্ব -১৬ ও শেষ পর্ব

#ভালোবাসি_বলেই_তোমাকে_প্রয়োজন
লেখক-এ রহমান
শেষ পর্ব

কলিং বেলের আওয়াজ হতেই মাহিন ভাবল অরন্য এসেছে। তাই দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে সম্পূর্ণ একজন অপরিচিত মানুষকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো সে। জিজ্ঞেস করলো
–কাকে চাই?

লোকটা তার কথার কোন উত্তর দিলো না। এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো। তাকে দেখেই সারিয়ার বাবা উঠে দাঁড়ালেন। অবাক হয়ে বললেন
–তুমি এখানে?

লোকটি দ্রুত সারিয়ার বাবার সামনে এসে কলার চেপে ধরে বললেন
–তুমি আমার ভাগ্নিকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছ?

ঘটনার আকস্মিকতায় সারিয়ার বাবা থমকে গেলেন। মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে কলার থেকে হাত ছাড়িয়ে কঠিন গলায় বললেন
–কিসব আজে বাজে কথা বলছ ফিরোজ? আমি কেন আমার মেয়েকে আটকে রাখবো?

ফিরোজ তাচ্ছিল্য হেসে বলল
–তোমার মেয়ে? পরিচয় দাও তাহলে?

ফিরোজের চাপা অপমান সারিয়ার বাবাকে ঘায়েল করে ফেললো। অস্থির ভাবে বলল
–সারিয়া আমার মেয়ে। নতুন করে পরিচয় দেয়ার কিছুই নেই।

ফিরোজ বাকা হেসে বলল
–ওহ। এখন নিজের মেয়ে মনে হচ্ছে তাই না? আমার বোন যখন প্রেগন্যান্ট সেটা শুনেই তুমি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে। তখন কি মনে হয়নি আমার বোনের পেটে তোমার সন্তান? তখন তুমি তোমার অন্য সংসার নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু আমার বাবা যখন বোনের মেয়ের নামে সম্পত্তির অর্ধেক অংশ লিখে দিলো তখন তোমার মনে হয়েছে নিজের গোপন সংসারে আরেকটা মেয়ে বড় হচ্ছে। বাবা হিসেবে যার দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে।

সারিয়া বাবা চোখ নামিয়ে নিলেন। অপরাধীর কণ্ঠে বললেন
–আমি লতার সাথে অন্যায় করেছি। তাকে বিয়ে করেও স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারিনি কারন আমার বাবা মা তাকে পছন্দ করেনি। কোনকালেই এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না। আমি লতাকে ডিভোর্স না দিলে বাবা আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করার হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু লতাকে আমি ডিভোর্স দেয়ার সিদ্ধান্ত জানাতে গেলেই জানতে পারি সে প্রেগন্যান্ট আর সে কোনভাবেই ডিভোর্স চায় না। আমি জোর করে ডিভোর্স দিলেই সে আত্মহত্যা করবে। তার আমার কাছে কিছুই চাওয়ার ছিল না। শুধু বাবা হিসেবে সারিয়াকে মেয়ের স্বীকৃতি যেন আমি দেই। আমি লতাকে কথা দিয়েছিলাম। আর সেই কথা রাখতেই আমি সারিয়াকে নিজের কাছে আনি। কিন্তু তার কারনেই শারমিনের মা অভিমান করে চলে যায়। সে আমার সাথে কোন যোগাযোগ রাখতে চায় না। বছর দুয়েক পরে একটা এক্সিডেন্টে সেও মারা যায়। আর আমি মা মরা দুই মেয়েকে নিয়ে জীবন শুরু করি। সম্পত্তির লোভে সারিয়াকে আমার কাছে রাখিনি।

ফিরোজ হুঙ্কার ছেড়ে বললেন
–তোমার কথা আমি বিশ্বাস করি না। বন্ধু হিসেবে নিজের বোনকে তোমার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তার প্রতিদানে ধোঁকা দিয়েছ।

–লোভ মানুষকে সব সময় ধ্বংস করে এটাই নিয়ম। আর আপনিও এর থেকে পার পাবেন না। খুব তাড়াতাড়ি আপনার পতন হবে।

অরন্যর গলার আওয়াজ শুনে সবাই ফিরে তাকাল। সারিয়া আর অরন্যকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেলো। শারমিন দৌড়ে গিয়ে সারিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল
–তুই ঠিক আছিস রিয়া?

সারিয়া মাথা নাড়তেই অরন্য বলল
–সারিয়া কিডন্যাপ হয়নি আমার কাছেই ছিল। আপনাদের এই চেহারা গুলো তাকে দেখানোটা খুব দরকার ছিল। তাই আমি এটা করতে বাধ্য হয়েছি। ফিরোজ সাহেব আপনি নিজের বোনের মেয়েকে সীমান্তর সাথে বিয়ে দিয়ে তার সম্পত্তির ভাগ নিতে চেয়েছিলেন। অথচ মেয়েটার কথা একবারও ভাবেন নি। সে আপনার কাছে সম্পত্তি পাবার একটা মাধ্যম মাত্র। আর এই আপনিই আজ এতো বড় কথা বলছেন কিভাবে?

ফিরোজ চিৎকার করে বললেন
–তুমি কে এসব কথা বলার? আমি সারিয়ার বাবার সাথে কথা বলছি। যে তার অভিভাবক।

অরন্য হেসে বলল
–আমি সারিয়ার বর্তমান অভিভাবক। আপনার বাবার উইল অনুযায়ী সারিয়ার হাসবেন্ড তার সমস্ত সম্পত্তির মালিক হবে। আর আমি সারিয়ার হাসবেন্ড। এখন আপনাকে আমার সাথেই কথা বলতে হবে।

অরন্যর কথা শুনে ফিরোজ বাক্রুদ্ধ হয়ে গেলেন। সারিয়ার বাবা উইলটা পড়েননি জন্য তিনি এসবের কিছুই জানেন না। ফিরোজ সারিয়ার বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন
–ওর কথা কি সত্যি?

সারিয়ার বাবা প্রশস্ত হেসে বললেন
–হ্যা। ও সারিয়ার হাসবেন্ড আর আমার বোনের একমাত্র ছেলে।

ফিরোজ ভালো করে তাকিয়ে দেখলেন অরন্যর দিকে। তিনি বুঝতে পারলেন এটাই সেই ছেলে যে সারিয়াকে ধোঁকা দিয়ে বিয়ে করেছে। উচ্চ শব্দে হাসলেন ফিরোজ। হাসি থামিয়ে সারিয়ার বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন
–তোমার রক্ত তাহলে? ধোঁকা তো থাকবেই। ধোঁকা দিয়ে বিয়ে করেছে তোমার মেয়েকে। এই বিয়ে কি তোমার মেয়ে মানে?

সারিয়া দরজার কাছে দাড়িয়ে ছিল এতক্ষন। এগিয়ে এসে অরন্যর পাশে দাঁড়ালো। কঠিন গলায় বলল
–আমি বিবাহিত এটা যেমন স্বতঃসিদ্ধ সত্য ঠিক তেমনই অরন্য আমার স্বামী এটাও সত্য।

ফিরোজের মুখ থমথমে হয়ে গেলো। তার জানা মতে সারিয়া এই বিয়েটা মেনে নেয়নি। কিন্তু এখানে তো সে নিজেই বলছে। অরন্য মৃদু হেসে বলল
–আমার মনে হয়না আপনার আরও কিছু জানার আছে।

ফিরোজ বিফল হয়ে গেলেন। হতাশা আর তীব্র অপমানের তোড়ে তিনি অস্থির হয়ে উঠলেন। কোন রকমে নিজের রাগটা সামলে নিয়ে তিনি আর সেখানে এক মুহূর্ত দাঁড়ালেন না। বের হয়ে যেতেই অরন্য সারিয়ার বাবার দিকে তাকাল। স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–আমি উইলটা খুব ভালভাবে পড়েছিলাম। সেখানে লেখা ছিল যতদিন সারিয়ার বিয়ে হয়নি ততদিন তার বাবা সমস্ত সম্পত্তির দায়িত্তে থাকবে কিন্তু বিয়ে হলে তার স্বামী সেটার দায়িত্ব নেবে। তাই সারিয়াকে বিয়ে দেয়ার এতো পায়তারা। কিন্তু এখন সব ঠিক আছে। আর কোন ঝামেলা নেই। আর আমি সব ব্যবস্থা করছি। খুব তাড়াতাড়ি সমস্ত সম্পত্তি সারিয়ার নামে হয়ে যাবে। হয়ে গেলেই মুক্তি। আমার আর কোন দায়ভার থাকবে না।

অরন্য দরজার বাইরে পা রাখতেই সারিয়ার বাবা ডাকলেন। নিজের নামটা কানে আসতেই থেমে গেলো সে। সারিয়ার বাবা এগিয়ে গিয়ে অরন্যর সামনে দাঁড়ালেন। প্রশস্ত হেসে বললেন
–আমি তোমাদের আবার বিয়ে দিতে চাই। তুমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলে ঠিক করে নাও। আমি নিজে যাবো তোমাদের বাসায়। তোমার মায়ের সাথে কথা বলে তোমাদের বিয়ের আয়োজন করবো।

সারিয়ার বাবার কথা শুনে সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। এতো সহজে যে তার বাবা মেনে নেবে সেটা ভেবেই সবাই অবাক হচ্ছে। সারিয়ার মন ভীষণ খারাপ। বাবার উপর তীব্র অভিমান। সে এই বাড়িতে আর থাকতে চায়না। চলে যাবে অরন্যর সাথে। তার ভাবনার মাঝেই সবাইকে অবাক করে দিয়ে অরন্য বলল
–আমি সারিয়াকে বিয়ে করেছিলাম প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে। কারন আমি যদি বিয়ের কথা না বলতাম তাহলে সীমান্ত না হলেও অন্য কারো সাথে বিয়ে হতো সারিয়ার। ফিরোজ সাহেব এতো সহজে হার মানত না। আর শুধু বিয়ের কথা বললেও তারা বিশ্বাস করত না। তাই বাধ্য হয়ে সারিয়াকে না জানিয়েই সাইন নিতে হয়েছিলো। কারন সে জানলে এতো সহজে বিয়ে করতে রাজি হতনা। আর তাকে সবটা খুলে বলাও সম্ভব ছিলোনা। কিন্তু এখন সমস্ত পরিস্থিতি অনুকূলে। আর কোন ঝামেলা নেই। খুব তাড়াতাড়ি সারিয়ার নামে সমস্ত সম্পত্তি ট্রান্সফার হয়ে যাবে। তারপর আমার দায়িত্ব শেষ। সারিয়াকে মুক্ত করে দেবো। ডিভোর্স দিয়ে দেবো।

কথাটা বলে থামল অরন্য। নিচের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল
–আমার বাবা কোনদিন চায়নি আমার মা আবার এই বাড়িতে আসুক। আবার আপনার সাথে সম্পর্ক ঠিক হয়ে যাক। কারন আপনি তাকে জীবিত অবস্থায় অনেক ছোট করেছেন। কিন্তু এখন তার অনেক সম্মান। তিনি নেই কিন্তু তার বলা প্রতিটা কথা আমার মা নিজের মধ্যে ধারন করে রেখেছেন। কোন কথার বরখেলাপ করেন না। এমন কি বাবার কথার বরখেলাপ করার জন্য তিনি তার ছেলে মেয়েকেও মাফ করবেন না। খুব স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। আমি আমার মাকে কোনদিন কষ্ট দিতে পারব না। মা এই বিয়ের কথা জানে না। আর আমি চাইওনা জানুক। বিষয়টা এখান থেকেই থেমে যাক। আমি আমার ভুলের জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি। পারলে আমাকে মাফ করে দেবেন।

নিজের কথা শেষ করে কাউকে আর কথা বলার সুযোগ দিলো না অরন্য। চলে গেলো। অরন্যর প্রতিটা কথা সারিয়াকে ভেঙ্গে দিলো। পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে যাওয়ার উপক্রম। কোন কিছু না ভেবেই এক দৌড়ে চলে গেলো অরন্যর পিছে পিছে। অরন্য গাড়িতে বসেছে সবে। পাশ ফিরে সারিয়াকে দেখে নেমে গেলো। অরন্যকে দেখে সারিয়া আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না। দুই হাতে মুখ চেপে কেদে উঠলো। অরন্য কাছে গেলো না। গাড়িতে হেলানি দিয়ে হাত গুঁজে দাঁড়ালো। শান্ত সরে বলল
–এভাবে কান্নাকাটি করে আমার সময় নষ্ট করছ কেন? যা বলতে চাও বলে ফেল।

অরন্যর কথা শুনে সারিয়ার তীব্র অপমানবোধ হল। এখানে আসার আগে পর্যন্ত সব ঠিক ছিল কিন্তু হুট করেই সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো। সে এই বাড়িতে থাকতে চায়না। আর তার বাবার সাথে তো নয়ই। এই লোকটাও সত্য গোপন করে তাকে ধোঁকা দিয়েছে। আর তার মায়ের সাথে অন্যায় করেছে। সে কিভাবে মেনে নেয় সেটা। এতে যে তার মায়ের অপমান হবে। কেদে ফেলে বলল
–আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও। আমি এই বাড়িতে থাকব না। আমি বাবার কাছে থাকতে চাই না। বাবা আমার মাকে ধোঁকা দিয়েছে।

অরন্য খুব সহজ স্বাভাবিক ভাবে বলল
–আমিও তো তোমাকে ধোঁকা দিয়েছি। তাহলে আমার সাথে কেন যেতে চাও? তোমার বাবা আর আমার মাঝে পার্থক্য নেই তো। বরং আমি তোমার বাবার থেকে আরও নিকৃষ্ট। তিনি তোমার মাকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিতে না পারলেও তোমাকে মেয়ের স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর ভালোভাবেই মানুষ করেছেন। এই যে দেখো আজ তোমার কত নাম জশ। আর আমি তো দায়িত্ব নিতেই ভয় পাচ্ছি। লুকিয়ে রাখতে চাইছি সবটা।

অরন্যর কথা শেষ হতেই মাহিন এসে দাঁড়ালো। তার পেছনেই শারমিন। তারা একদম চুপচাপ। সারিয়া নাক টেনে বলল
–আমার এসব নাম জশ কিছুই আমার বাবার দেয়া না। সবটা তোমার দেয়া। তুমিই গোপনে আমাকে ভার্জিনিয়া থেকে চিঠি লিখতে। তুমিই আমার গল্প উপন্যাস হিসেবে প্রকাশ করেছো।

সারিয়ার কথা শুনে অরন্য থমকে গেলো। এসব কথা সারিয়া কিভাবে জানল? বিষয়টা মাথায় ঢুকতেই মাহিনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেললো। মাহিন অপ্রস্তুত হেসে বলল
–আসলে পরিস্থিতিটাই এমন ছিল বন্ধু। না বলে কোন উপায় ছিল না।

অরন্য কিছু বলবে তার আগে সারিয়া আবারো কান্না জড়িত কণ্ঠে বলল
–আমার বাবা খুব খারাপ। আমার মাকে কষ্ট দিয়েছে। আমি বাবাকে কোনদিন মাফ করতে পারব না।

অরন্য হতাশ শ্বাস ছেড়ে বলল
–তোমার বাবা খারাপ না সারিয়া। তিনি তোমার মাকে ইচ্ছা করে কষ্ট দিতে চান নি। পুরোটাই পরিস্থিতির স্বীকার ছিলেন। উনি চাইলেও কিছুই করতে পারতেন না। ভেবে দেখো তিনি যদি খারাপ হতেন তাহলে তোমার মাকে দেয়া কথা রাখতে কোনদিনও তোমাকে মেয়ের মর্যাদা দিতেন না। খেয়াল করে দেখো তোমার কোন কিছুর অভাব নেই। তোমার বাবা তার দায়িত্তে কোন অবহেলা করেন নি। আর প্রতিটা বাবা চায় তার মেয়ের ভালো জায়গায় বিয়ে দিতে। তোমার বাবাও তাই চেয়েছিলেন। এটা অন্যায় নয়। তোমার বাবা কাউকে ধোঁকা দেয়নি। আমি আসছি।

কথা শেষ করেই অরন্য গাড়িতে বসল। সারিয়া আকাশের দিকে তাকাল। তারা জ্বলজ্বল করে জলছে ওই দূর আকাশে। ফুরফুরে বাতাস বইছে।

———–
ফোন থেকে চোখ তুলে কলিং বেলের সুইচে চাপ দেয়ার আগেই চোখে পড়লো বাড়ির সদর দরজা খোলা। কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লো অরন্য। এভাবে তো খোলা থাকার কথা না। একটু ভেবে বেশ ভয় নিয়েই ভেতরে ঢুকল। সোফার দিকে চোখ পড়তেই থমকে গেলো সে। সারিয়া আর তার বাবা বসে আছে। তার ঠিক সামনেই অরন্যর মা আর পাশে বোন আফিয়া। তাদেরকে দেখে অরন্যর মাথা ঘুরে গেলো। এগিয়ে গেলো সেদিকে। সারিয়ার দিকে তাকিয়ে অবাক ভঙ্গীতে প্রশ্ন করলো
–তুমি এখানে কিভাবে আসলে? আমাকে না বলে তুমি এখানে কেন এসেছ?

সারিয়া কোন উত্তর দিলো না। টলমল চোখ গুলো নামিয়ে নিলো। অরন্য একটু বিরক্ত হল। ঠিক তখনই কানে এলো এক কণ্ঠস্বর।
–ভুলে যেওনা এটা আমার বাড়ি। তোমার জীবনে তুমি কি করছ সেটা তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। সেসব কিছু জানাবে কিনা সেটাও তোমার উপরেই নির্ভর করে। কিন্তু আমার বাড়িতে কে আসবে কে যাবে সেসবের কৈফিয়ত নিশ্চয় তোমাকে দিতে হবে না।

মায়ের গম্ভীর আওয়াজ শুনেই অরন্যর বুক কেঁপে উঠলো। অরন্য আফিয়ার দিকে তাকাল। চোখের ইশারায় বুঝতে চেষ্টা করলো ঘটনার ঠিক কতটুকু তার মা জানতে পেরেছে। আফিয়া ইশারা করে বুঝিয়ে দিলো যে তার মা ভীষণ রেগে আছে। অরন্য সারিয়ার দিকে তাকাল। মেয়েটা এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। বেশ বিরক্ত হল সে। কোন কিছু না বলেই হুট করে চলে এলো। তাকে একবারও জানানর প্রয়োজন মনে করলো না। একটু অপ্রস্তুত হয়েই বলল
–মা তোমার সাথে আমার কথা আছে।

অরন্যর মা ছেলের দিকে তাকালেন। হুঙ্কার ছেড়ে বললেন
–আর কি বলবে তুমি? আরও কি গোপন রেখেছ?

অরন্য ভ্যাবাচ্যকা খেয়ে দাড়িয়ে থাকলো। মায়ের রাগ সম্পর্কে পুরোপুরি ধারনা আছে তার। এখন কথা বাড়ালেই বিপদ। তাই চুপ হয়ে গেলো। কিন্তু মনে মনে সারিয়া আর তার বাবার উপরে ভীষণ রাগ হল। সে নিষেধ করার পরেও তারা তার মাকে সব বলে দিয়েছে। অরন্যর মা এগিয়ে গেলেন ছেলের কাছে। বললেন
–তুমি বিয়ে করেছো অরন্য অথচ কেউ জানে না। ধোঁকা দিয়েছ তুমি সবাইকে। এমন ছেলে তো তুমি ছিলে না।

অরন্য অনুনয়ের সুরে বলল
–মা আমি পরিস্থিতির স্বীকার। বিয়ে করা ছাড়া আমার কোন উপায় ছিল না। আমাকে একটু কথা বলার সুযোগ দাও।

অরন্যর মা একটু নরম হলেন। বললেন
–বুঝলাম। কিন্তু এখন কি এমন পরিস্থিতির স্বীকার তুমি যে কাউকে জানানর আগেই মেয়েটাকে ডিভোর্স দিতে চাইছ?

অরন্য নিচের দিকে তাকিয়ে বলল
–আমি আসলে…।

অরন্যকে থামিয়ে দিলো তার মা। বলল
–এতকিছু হয়ে গেছে অথচ তুমি আমাকে কিছুই জানাওনি। তোমার ড্রয়ারে কাগজ না দেখলে আমি তো কিছুই জানতে পারতাম না। আফিয়াও আমাকে কিছুই বলেনি। এমনকি সারিয়া রাস্তায় অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল আর তার সাথে সেদিন কথাও হয়েছিলো সেটাও আমি কিছুক্ষন আগেই জানতে পারলাম। ভাই বোন তোমরা এখন আমার কাছ থেকে কথা লুকিয়ে রাখো। বাহ!

অরন্যর দিকে ফিরে বললেন
–শোন অরন্য। আমার ভাইয়ার মধ্যে কি ঝামেলা আছে সেটা আমরা দেখে নেবো। কিন্তু তুমি এই মেয়েটার সাথে কোন অন্যায় করতে পারোনা। আমার ভাই তার মায়ের সাথে যেটা করেছিল তুমিও তার সাথে সেরকম কিছু করো আমি সেটা কখনই হতে দেবোনা। আমি সবটা শুনেই তাদেরকে ফোন করে ডেকেছি। তোমরা দুজন নিজেদের মধ্যে ঝামেলা মিটে নাও। শারমিন আর মাহিনের বিয়ে শেষ হলেই তোমাদের বিয়ে হবে। এটাই আমার সিদ্ধান্ত। আর কোন পরিবর্তন হবে না।

অরন্য মায়ের দিকে তাকাল। সে বুঝতে পারছে না তার মা এতো সহজে মেনে নিলো কিভাবে? অরন্যর মা আবারো বলল
–তোমরা ঘরে যাও। আমার ভাইয়ার সাথে কিছু কথা আছে। একা।

আফিয়া রান্না ঘরে চলে গেলো। সারিয়া অরন্যর পেছন পেছন তার ঘরের দিকে গেলো। ঘরে গিয়ে দাঁড়াতেই অরন্য গভীর দৃষ্টিতে তাকাল তার দিকে। সারিয়া মৃদু হেসে বলল
–এরকমই এক রাতে আকাশে তারা জ্বলজ্বল করছিলো। ফুরফুরে বাতাসে দূর থেকে ভেসে আসছিল এক সম্মোহনী ঘ্রাণ। খোলা আকাশের নিচে দাড়িয়ে তুমি বলেছিলে ‘আর যদি ফিরে না আসি?’ আর আমি বলেছিলাম ‘তুমি আসবে। তোমাকে আসতেই হবে। কারন ভালোবাসি তোমাকে।

অরন্য মৃদু হাসল। বলল
–আর ভালোবাসি_বলেই_তোমাকে_প্রয়োজন।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here