#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ১
আজ মেডিক্যালের “নবীন বরন” অনুষ্ঠান । প্রতি বছরের মতো এবারো সকল অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিজ ঘাড়ে নিয়েছে মেডিক্যালের ভিপি । তবে তার ইচ্ছা অনুযায়ী এবারের অনুষ্ঠান গুলো কিছুটা ব্যতিক্রম ভাবে উদযাপিত করা হবে । তবে সব আয়োজন সে , তার বন্ধু এবং অন্যান্য সহযোগীদের সাথে নিয়ে করবে ।
অন্যান্য বছর গুলো ক্যাম্পাস ৩ দিন আগের থেকে সাজালেও , এবছর ৭ দিন আগের থেকে সাজ-সজ্জার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে ।
এ বছর ক্যাম্পাসে প্যান্ডেল করা হয় নি । সরাসরি প্রকৃতির সাথে সংযোগ রেখে স্টেজটা করা হয়েছে ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে । আর ছায়াঘেরা জায়গাটাতেই রাখা হয়েছে কয়েক হাজার চেয়ার । সব গাছগুলোর কান্ডকে রঙ্গিন জরি কাগজের সাহায্যে ডিজাইন করে পেচিয়ে লাগানো হয়েছে । আর উপরের দিকটাতে অসংখ্য রঙ্গিন কাগজ আর ফিতার মেলা । কিছু কিছু জায়গা ফুল দিয়েও সাজানো হয়েছে ।
অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করা ইনভাইটেশন কার্ডে সকল ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ১২ টায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে ।
………………………………………………
সকাল ১১ টা ,
নীল শাড়ি গায়ে জড়িয়ে বিছানার উপর পা তুলে গাল ফুলিয়ে বসে আছে পূর্নতা ।
এর কারন হচ্ছে , তার একমাত্র বান্ধবী তাকে এসে রেডি করিয়ে দিবে বলেছে । ১২ টায় অনুষ্ঠান , আর তার এখনো আসার কোনো নাম গন্ধ নেই । পূর্ণতা মনে মনে বিরক্ত হয়ে বলছে ,
– সেই কখন আম্মু শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল । আর প্রেনার এখনো আসার কোনো নাম গন্ধ নেই । তারপর শেষে তাড়াহুড়ো করে বের হতে হবে । ধূর , ভাল্লাগেনা ।
এই বলে পূর্ণতা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতেই কলিং বেলের শব্দ শোনা গেল । পূর্ণতার বুঝতে বাকি রইল না , প্রেনা এসেছে । ও নিজের রুমের দরজাটা খুলে দিয়ে আবার গাল ফুলিয়ে বিছানায় আবার একই ভাবে বসে রইল ।
কলিং বেল বাজতে শুনে মিলি রহমান রান্নাঘর থেকে বের হয়ে গিয়ে দরজা টা খুলে দেখলেন নীল শাড়ি পড়ে সেজেগুজে প্রেনা দাঁড়িয়ে আছে । মিলি রহমান বললেন,
– এতক্ষন পর তোর সময় হলো আসার ?? গিয়ে দেখ পূর্ণ গাল ফুলিয়ে আছে ।
প্রেনা হেসে বলল ,
– তুমি চিন্তা করো না আন্টি । আমি ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করছি ।
এই বলে প্রেনা এগিয়ে গেল পূর্ণতার রুমের দিকে । ওর রুমের দরজাটা খোলা পেয়ে প্রেনা ভিতরে প্রবেশ করে দেখলো পূর্ণতা উল্টো দিকে মুখ করে বিছানায় বসে আছে । প্রেনা বলল ,
– কিরে !! এভাবেই বসে থাকবি নাকি রেডি হবি ??
পূর্ণতা উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,
– এতক্ষন পর আসতে মন চাইলো ?? নিজে তো একেবারে সেজেগুজে রেডি হয়ে চলে এসেছেন । এখন আমাকে কে রেডি করিয়ে দেবে ??
– কেন ? আমিই দিব । আয় চুলে খোপা করে এই বেলী ফুলের মালা পেচিয়ে দিই ।
– সত্যি ? তুই এনেছিস মালা ??( চোখ খুশিতে চকচক করে উঠলো)
– হ্যা , এনেছি তো । এটা কিনতে গিয়েই তো একটু লেইট হয়ে গেল ।
পূর্ণতা খুশি হয়ে দৌড়ে এসে প্রেনা কে জড়িয়ে ধরে গলে চুমু খেল । প্রেনা হেসে বলল ,
– হয়েছে , হয়েছে । এখন বস । নাহলে দেড়ি হয়ে যাবে ।
……………………………………………….
মই বেয়ে ফাহিম গেইটের উপরে উঠেছে মেইন গেইটটা সাজাবে বলে । নিচে আয়মান দাড়িয়ে আছে দুই ঝুড়ি ফুলের মালা নিয়ে । ওর ই পাশে তাসিন দাড়িয়ে আছে এক ডালা ভর্তি গাদা ফুলের পাপড়ি হাতে নিয়ে ।
প্ল্যান মোতাবেক ফাহিম আয়মানের কাছ থেকে ফুলের মালা গুলো চেয়ে চেয়ে গেইট ডেকোরেশন করছে । অবশেষে ডালা ভর্তি ফুলের পাপড়ি গুলো নিয়ে এমন ভাবে সেট করলো যেন দড়ি ধরে টান দিলেই ডালা কাত হয়ে উপর থেকে ফুলের বৃষ্টি ঝরে । এটা শুধুমাত্র প্রধান অতিথিকে বরণ করার জন্যই ।
ফাহিম সবকিছু সেট করে নিচে নামতেই উপর থেকে ঠাস করে সব ফুলের পাপড়ি নিচে পড়ে গেল । আয়মান বলল,
– আয় হায় !! ফাহিম !! কি করলি তুই ??
তাসিন বলল ,
– আজকে কপালে শনি আছে যদিও আজকে মঙ্গলবার !! আবরন যদি দেখে অতিথি আসার ৩০ মিনিট পূর্বে তুই এই কাজ করেছিস , তোকে আস্ত চিবিয়ে খাবে ।
ফাহিম কাদো কাদো ফেস করে বলল ,
– ভাই হেল্প কর প্লিজ । কিভাবে যে পড়ে গেল বুঝতে পারছি না ।
– আকাম করলি তুই !! আমরা কেন হেল্প করবো ?? ( আয়মান )
– আরে , দৌড় দে । আবার ফুলের পাপড়ি নিয়ে আয় । আমি আর তাসিন ততক্ষনে এই জায়গাটা পরিষ্কার করে ফেলি । নাহলে আবরন এসে দেখলে আজকে কপালে সত্যিই শনি আছে ।
জলদি যা ।
– ধূর !! যাচ্ছি আমি । জলদি পরিষ্কার কর । আবরন এসে দেখলে তোকে এই ময়লা ফুলের পাপড়ি ব্লেন্ড করে জুস বানিয়ে খাওয়াবে ।
এই বলতে বলতে আয়মান চলে গেল ফুলের পাপড়ি আনতে ।
ফাহিম আর তাসিন মিলে পরিষ্কার শুরু করলো ।
……………………………………………..
প্রেনা পূর্ণতাকে সাজিয়ে দিয়ে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে বলল ,
– তোকে একদম নীল পরি লাগছে রে !! কারো নজর যেন না লাগে তোর উপর ।
এই বলে নিজের চোখের থেকে কাজল নিয়ে পূর্ণতার কানের পেছনে লাগিয়ে দিল ।
পূর্ণতা আয়নায় তাকিয়ে দেখলো নীল শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে হাতে নীল চুড়ি , কানে সোনালি কানের দুল , গলায় একটা চিকন চেইন পড়িয়েছে প্রেনা । আর সাজ বলতে মুখে একটু ফেইস পাউডার , চোখে কাজল , ঠোঁটে হালকা ন্যুড লিপস্টিক দিয়েছে । ব্যস , রেডি ।
পূর্ণতা হ্যান্ড ব্যাগ টা হাতে নিয়ে রুম থেকে প্রেনা কে নিয়ে বের হয়ে গেল ।
– আম্মু , আসছি ।
মিলি রহমান বললেন ,
– অনুষ্ঠান শেষ হলে জিব্রানকে কল করিস । ও তোকে নিয়ে আসবে ।
– ভাইয়া না কক্সবাজার গিয়েছে বন্ধুদের সাথে ?
– কাল রাতে এসেছে । ওর বন্ধুর বাসায় উঠেছে । বাসায় ফেরার পথে তোকে নিয়ে আসবে ।
– আচ্ছা , ঠিক আছে । তুমি চিন্তা করো না । আসছি । আল্লাহ হাফেজ ।
– আল্লাহ হাফেজ আন্টি । ( প্রেনা )
– আল্লাহ হাফেজ । আর শোন প্রেনা , একসাথে থাকবি দুজনে । আলাদা হবি না । মনে যেন থাকে ।
– ওকে , আন্টি । ডোন্ট ওয়ারি ।
প্রেনা আর পূর্ণতা বেরিয়ে পড়লো । রাস্তায় এসে প্রেনা রিকশা ডাক দিল ,
– এই মামা , যাবেন ??
পূর্ণতা চোখ গোল গোল করে বলল ,
– প্রেনা , ওয়েট ওয়েট ওয়েট !!
প্রেনা পেছনে তাকিয়ে বলল ,
-আবার কি ??
– তোর স্কুটি কোথায় ?? আমরা রিকশায় যাবো নাকি !!
– আমারে কি পাগলা কুত্তায় কামড়াইছে যে আমি শাড়ি পড়ে যাবো স্কুটি চালাতে !! এখন কথা না বাড়িয়ে রিকশায় উঠ । উপস্থিত থাকতে বলেছে ১২ টায় । আর আমরা এখানেই ১২ টা বাজিয়ে দিয়েছি ।
পূর্ণতা রিকশায় উঠে বসে বলল,
– ওও , আসলেই তো । আমাদের নবীনদের তো আজ নীল রং পরিধান করে যেতে বলা হয়েছে । মেয়েরা নীল শাড়ি , আর ছেলেরা নীল পাঞ্জাবি । আজ তার মানে সব মেয়েরা হিমুর রূপা হয়ে যাবে । তাই না ??
প্রেনা বলল ,
– হিমুই যেখানে নেই অনুষ্ঠানে , রূপা হয়ে কি লাভ !!
– ধুর ! তুই ও না …………..
……………………………………………..
ফাহিম মই থেকে নেমে দাড়াতেই পেছন থেকে কারো গলা শোনা গেল ,
– তোদের এখনো হয় নি ?? একটা গেইট সাজাতে এতো সময় নিচ্ছিস ?? অতিথিরা তো ওন দ্য ওয়ে ।
ফাহিম , আয়মান , তাসিন পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখলো আবরন নাক ফুলিয়ে রাগি রাগি ফেস করে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে ।
ফাহিম একটা ঢোক গিলে মনে মনে ভাবছে , ” যাক , মাত্রই কাজ শেষ করলাম । একদম পারফেক্ট টাইমিং । ”
তারপর জবাব দিল ,
– ইয়ে মানে !! কাজ তো শেষ । এই যে আমার হাতে দড়ি দেখছিস , এটা ছেড়ে দিলেই ডালা ভর্তি ফুলের পাপড়ি কাত হয়ে বৃষ্টির মতো ঝড়বে ।
– সব ঠিক ঠাক করেছিস তো ?? কোনো কিছুতে যেন ভুল না হয় । নাহলে অনুষ্ঠান শেষে খবর করে দিব । ( আবরন )
আয়মান তাসিনকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিস কি ?? যা , মইটা জায়গা মতো রেখে আয় ।
তাসিন মই হাত দিয়ে ধরে বলল ,
– যাচ্ছি , যাচ্ছি ।
আবরন বলল ,
– অতিথিরা কিছুক্ষনের ভেতরেই চলে আসবে । তাই আমি এখানেই দাড়াচ্ছি । তোদের কোনো কাজ থাকলে জলদি সেড়ে আয় ।
আয়মান বলল ,
– আমি বরং স্টেজের দিকটায় গিয়ে দেখে আসি ।
ফাহিম বলল ,
– আমি এখানেই দাড়াই , আমাকে দড়ি ধরে থাকতে হবে ।
– ঠিক আছে , দাড়িয়ে থাক । অতিথি প্রবেশ পথে আসতেই দড়ি ছেড়ে দিস ।
( আবরন )
– আচ্ছা , চিন্তা করিস না । ( ফাহিম )
…………………………………………….
আয়মানকে স্টেজের সামনে দেখেই জল দৌড়ে গিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে হাপাতে হাপাতে জিজ্ঞেস করলো ,
– আয়মু , আমার আবরন বেবি কে দেখেছো ??
আয়মান জলকে দেখে মনে মনে ভাবছে ,
-” লে , চিপকুগাম এসে পড়েছে । এখন তো আবরনকে পেলেই চিপকে থাকবে । ”
আয়মানকে চুপ করে থাকতে দেখে জল বলল ,
– কি হলো ! চুপ করে আছো কেন ? আবরন কোথায় ??
আয়মান রেগে বলল ,
– আমি কি দেখেছি নাকি ?? দেখলে তো বলেই দিতাম । আর আবরন স্বর্গে গিয়েছে । তুমি গিয়ে তোমার কাজ করো ।
এই বলে আয়মান সেখান থেকে কেটে পড়লো ।
জল দাড়িয়ে দাড়িয়ে বলতে শুরু করলো ,
– আমার সাথে এভাবে কথা বলার সাহস ও পেলো কোথায় ?? দাড়াও , আবরন বেবির সাথে দেখা হলেই বিচার দিব । তখন বুঝবে , জলের সাথে মিসবিহেইভ করার মানে !!
এই বলে আবার আবরনকে খুঁজতে শুরু করলো ।
………………………………………………
পূর্ণতা এবং প্রেনা মেডিক্যালের মেইন গেইটের সামনে এসে রিকশা থেকে নেমেছে মাত্র । পূর্ণতা প্রেনাকে বলল ,
– রিকশা তুই ডেকেছিস ! ভাড়া ও তুই দিবি !
এই বলে দাঁত কেলিয়ে সে গেইটের দিকে হাঁটতে শুরু করলো ।
প্রেনা রিকশাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে ওর ৫-৬ হাত পেছনে হাঁটতে শুরু করে বলল ,
-পূর্ণ দাড়া , আমি আসছি ।
পূর্ণতা মেইন গেইটে পা রেখে প্রেনার ডাকে পিছনে ঘুরে তাকাতেই ………..
#চলবে ♥️