ভালোবাসি বলেই তো পর্ব -৪৭+৪৮

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৪৭

মাথাটা কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে পূর্ণতার । মাথায় হাত দিয়ে টিপ টিপ করে পলক ঝাপটিয়ে তাকাতেই দেখলো রুমটা অন্ধকার অন্ধকার । হালকা লালচে আলো দেখা যাচ্ছে । তবে চারদিক মিষ্টি সুবাসে মৌ মৌ করছে । পূর্ণতা শোয়া থেকে উঠে বসে আশেপাশে তাকিয়ে দেখল পুরো রুমটা ফুল দিয়ে অসম্ভব সুন্দর ভাবে সাজানো । চারিদিকে অসংখ্য মোমবাতি জ্বলজ্বল করছে । বিষয়টা পূর্ণতার কাছে সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার হতেই মনে ধুক করে উঠল । রুমটাতে এসি চলছে কিন্তু পূর্ণতা ঘেমে একাকার । পূর্ণতা বিছানা থেকে পা ঝুলিয়ে নেমে বসে মনে মনে বলল ,

– তার মানে আমার আর সায়নের বিয়েটা হয়ে গিয়েছে ! আমি এখন সায়নের ব‌উ ! আর জল আপুর সাথে আবরনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে । ওরা ও এখন আলাদা বাসর ঘরে ??

পূর্ণতার অস্থির লাগছে । মন চাইছে শরীর থেকে সব টেনে ছিড়ে ফেলতে । ভাবতে ভাবতেই পা ফেলে নিচে নেমে দাঁড়াতেই নরম কিছুতে পা পড়ল । পূর্ণতা চমকে লেহেঙ্গা টা টেনে উঁচু করতেই দেখলো গোলাপ ফুলের পাপড়ির জন্য ফ্লোর ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে না ।

পূর্ণতা বিরক্তি নিয়ে মাথা এবং শরীর থেকে লেহেঙ্গার ওরনাটা খুলতেই যাচ্ছিল হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ কানে ভেসে এলো ।

পূর্ণতা বুঝলো সায়ন এসেছে । ঘোমটা না খুলে সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে ভাবতে শুরু করলো ,

– সবে মাত্র আজ‌ই তো বিয়ে হলো ! সায়ন কি এখনি আসবে আমার উপর অধিকার খাটাতে ?? আমি কি করে উনার স্পর্শ সহ্য করবো ?? আমি তো উনাকে ভালোবাসি না । আমি বিয়েতে মত দিয়েছি ঠিক‌ই কিন্তু বিয়েতে কবুল বলার ঠিক আগ মূহুর্তেও আমার মাথায় একটা কথা ই ঘুরছিল আর তা হলো আবরন এই বিয়েটা ঠিক ভেঙে দিবে । কিন্তু আমার আগে তো উনি নিজেই কবুল বলে জল আপুকে নিজের জীবনসাথী বানিয়ে নিলেন ।

পূর্ণতার মন চাইছে চিৎকার করে কাদতে । কিন্তু তা তো আর পারবে না , তাহলে তো সায়ন বুঝে যাবে সব । তাই মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে শুধু চোখ দিয়ে পানি ফেলতে শুরু করলো । ও কান্নার মাঝেই বুঝতে পারছে যে সায়ন পেছন থেকে এগিয়ে আসছে ওর দিকে । হয়তো একদম কাছে এসে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরবে এমন একটা ফিলিং কাজ করছে ওর মধ্যে । যত‌ই বিয়ে করা ব‌উ হ‌ই না কেন , আমি তো উনাকে মন থেকে মেনে নিতে পারছি না ।

পূর্ণতা মনে মনে এসব ভাবছে , সাথে আরো ভাবলো ,

– না , আমি সায়নের স্পর্শ সহ্য করতে পারবো না । কিছুতেই না , উনি আমাকে ছোঁয়ার আগেই আমি উনাকে বলবো যেন উনি আমাকে না ছোঁয় । আমার সময় চাই । হ্যা , এটাই বলবো । আমার সময় লাগবে আপনার সাথে নিজেকে এডজাস্ট করে নিতে । আপাতত এইটুক বলে কাটাতে হবে । পরের টা পরে দেখা যাবে ।

এই ভেবে পূর্ণতা চোখ মুছে নিতেই বুঝলো ওর পেছনে একদম কাছাকাছি কেউ দাঁড়িয়ে আছে । পূর্ণতা বুঝলো সায়ন দাঁড়িয়ে আছে আর এই মূহুর্তে ওর দিকে হাত বাড়াচ্ছে । পূর্ণতা চোখের পানি আটকে রাখতে না পেরে চোখের পানি ফেলতে ফেলতেই মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিল ও সায়নের কাছে সময় চাইবে ।

পূর্ণতা যখন দেখল সায়ন ওকে ধরতে যাচ্ছে ঠিক তখন কাদতে কাদতে পেছনে ঘুরে তাকিয়ে এক নিঃশ্বাসে বলল ,

– প্লিজ , ডোন্ট টাচ মি ! প্লিজ ! আই নিড সাম টাইম ফর এডজাস্টিং মাইসেল্ফ উইথ ইউ ! প্লিজ , গিভ মি সাম টাইম !

এক নাগাড়ে নিচে তাকিয়ে চোখে জল ভর্তি করে কথা গুলো বলে থামতেই রাগি রাগি গলায় উত্তর শোনা গেল ,

– কেন ?? আমি যে ১০ লাখ ১ টাকা তোমাকে দেনমোহর দিয়ে বিয়েতে কবুল বলেছি সেটা কি কম পড়েছে নাকি যে আমি তোমাকে ছুঁতে পারবো না !!

পূর্ণতা এমন উত্তর আশা ই করেনি , তাই উত্তর শুনে অবাক হয়ে সামনে থাকা ব্যক্তিকে তাকিয়ে দেখার আগেই সে পূর্ণতা কে বিছানায় ঠেলে ফেলে পূর্ণতার হাত চেপে ধরে ওর পাশেই শুয়ে বলল ,

– নাউ আই হ্যাভ দ্য অফিসিয়াল রাইট ফর টাচিং ইউ মিস পূর্ণতা জামান !! আই মিন দ্য গ্ৰেট ওয়াইফ অব শাহরিদ আহনাফ আবরন । Also, অল ক্যান সে মিসেস চৌধুরী !!

পূর্ণতা যেন অবাকের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে আবরনকে এই মূহুর্তে এই রুমে দেখে আর ওর কথা শুনে ।

পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবছে ,

– এটা হয়তো আমার মনের ভুল । আমি সায়নকেই আবরন দেখছি । না , উনি আমাকে টাচ করতে পারেন না ।

ভেবেই পূর্ণতা নিজের হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলল ,

– দেখুন , সায়ন ! আপনি প্লিজ আমার কথা বোঝার চেষ্টা করুন । আমার সময় লাগবে কিছুটা । আপনি আমাকে জোর করে আমার মনে বিরুদ্ধে কিছু করতে চাইবেন না প্লিজ ।

– এই তুমি পাগল টাগল হলে নাকি বিয়ের প্রথম রাতে ?? তুমি কি কানা ?? আমাকে কোন এঙ্গেল থেকে তোমার সায়ন মনে হচ্ছে ??

আবারো আবরনের গলা শুনে পূর্ণতা চমকে উঠে ওর দিকে তাকিয়ে বলল ,

– আপনি কি সত্যিই তাহলে আবরন ??

আবরন শোয়া থেকে উঠে ওর সামনে আসন গেড়ে বসে বলল ,

– হ্যা , কোনো সন্দেহ ??

পূর্ণতাও উঠে বসে আবরনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,

– জোরে চিমটি কাটুন তো !

আবরন দাঁত কেলিয়ে পূর্ণতার হাতে চিমটি কাটতেই পূর্ণতা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,

– আপনি এই রুমে কি করছেন ?? আপনার তো জল আপুর সাথে থাকার কথা !! এই মূহুর্তে বেরিয়ে যান বলছি , গেট লস্ট ফ্রম দিস রুম ।

আবরন বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে পূর্ণতার মুখ হাত দিয়ে চেপে বলল ,

– শশশশশশশশ 🤫 !! আস্তে … বাসর ঘরে কেউ চিৎকার চেঁচামেচি করে ?? রিল্যাক্স !!

পূর্ণতা আবরনের দিকে ছল ছল দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ওকে ইশারা করছে মুখ থেকে হাত সরাতে । আবরন পূর্ণতার মুখ ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলল ,

– তুমি মাথা ঠান্ডা করো । আমাকে বলার সুযোগ দাও ।

– আমি আপনার সাথে আর কোনো নাটক করতে প্রস্তুত না ….

– উফফ , তুমি থামবে ???

– আপনি মিছেমিছি আমার সাথে নাটক করে আমাকে কষ্ট দিয়ে যাবেন আর আমি তা মাথা পেতে সহ্য করে যাবো ?

– আমাকে বলতে তো দেবে ??

– আপনি আমার জীবন নিয়ে এভাবে ছিনিমিন খেলতে পারেন না ………..

উমমমম ……উমমমম…..

পূর্ণতা কোনো কিছুতেই থামছে না তাই আবরন আর কোনো উপায় না পেয়ে অসমাপ্ত কাজটা আজ করেই ফেলল ।

পূর্ণতা আবরনকে ধাক্কা ধাক্কি করে বলতে চেষ্টা করছে কিন্তু আবরন ওকে কোনো সুযোগ ই না দিয়ে ওর গাল দুই হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে ১ মিনিট কিস করার মাধ্যমে নীরবতা পালন করে তারপর ছেড়ে দিয়ে বলল ,

– আরো কিস চাও ??

পূর্ণতা মাথা নিচু করে মাথা নাড়িয়ে “না” জানালো ।

আবরন বলল ,

– তাহলে মুখ বন্ধ রেখে আমি যা বলি তা ই করো !!

পূর্ণতা মাথা নেড়ে “ওকে” জানালো ।

আবরন এক গাল হেসে বলল ,

– গুড । যাও গিয়ে এই সব চেঞ্জ করে নরমালি বাসায় যেভাবে থাকো সেভাবে আমার সামনে আসো ।

পূর্ণতা মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছিল কিন্তু আবরন পেছন থেকে আবারো ওর হাত টেনে ধরে ওকে কাছে এনে ওর দুইগালে হাত রেখে নিজের কপাল ওর কপালের সাথে মিলিয়ে ওর‌ই মতন নিচের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– তোমার সায়ন এখন জলের সাথে ফুলসয্যা করছে । so , chill ……

পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে অবাক হয়ে আবরনের দিকে মাথা উচু করে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে তাকালো …..

আবরন ভ্রু নাচিয়ে বলল ,

– কি দেখছো ?

পূর্ণতা বলল ,

– কিছু না ।

– জলদি গিয়ে চেঞ্জ করে এসো । সব আলমারিতে রাখা আছে । আমি তোমার সব আমার আলমারিতে আগেই এনে রেখেছি ।

– ওকে ।

পূর্ণতা গিয়ে আলমারি খুলে দেখল সত্যিই সব রাখা আছে ।

আবরন পূর্ণতাকে বলল ,

– যা ই পড়ো , লাল রং এর পড়ো ।

পূর্ণতা চুপ করে আবরনের কথা মতো লাল কিছু খুঁজতে শুরু করতেই আবরন পূর্ণতার কাধে নিজের থিতুনি টা রেখে পূর্ণতা কে বলল ,

– কেন লাল পড়তে বললাম জিজ্ঞেস করবে না ?

– কেন ?

– পরে বলছি । যাও গিয়ে চেঞ্জ করে এসো । আমি জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে এসব পড়ে থাকতে ।

– হুম ।

পূর্ণতা জলদি জলদি হাতে করে একটা লাল ড্রেস নিয়ে চেঞ্জিংরুমের দিকে এগিয়ে গেল । তারপর ভেতরে ঢুকে জলদি জলদি লক করে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে ভাবতে শুরু করলো ,

– কি যে হচ্ছে ? আল্লাহ ই ভালো জানে । সব‌ই তো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে । কিন্তু মনে হচ্ছে আমার বিয়েটা কোনো ভাবে সায়নের সাথে না হয়ে উনার সাথে হয়ে গিয়েছে ‌। তারমানে আমি এখন শাহরিদ আহনাফ আবরনের বিয়ে করা ব‌উ । শুধু বিয়ে করা বললে ভুল হবে , ১০ লাখ ১ টাকা দেনমোহর দিয়ে বিয়ে করা ব‌উ ।

ইয়য়য়েএএএএএএ !! 🥳🥳
মন তো চাইছে এখানেই ড্যান্স দিই ।

মনে মনে ভাবতেই বাহির থেকে স্বজোরে আবরনের গলা শোনা গেল ,

– পূর্ণতা ! সাবধান ! বেশি খুশি হয়ে নাচতে গিয়ে আবার পড়ে গিয়ে হাত পা ভেঙো না বাসর রাতে । তাহলে কিন্তু মান সম্মান নিয়ে টানাটানি লেগে যাবে !!

পূর্ণতা হেসে চেঞ্জ করতে শুরু করে একটু রাগিরাগি গলায় ‌ই বলল ,

– এই আপনি কি করে আমার মনের না বলা কথা গুলো বুঝে যান বলুন তো ??

– এটার উত্তর তো আগেও দিয়েছি ।

– তখন তো মিথ্যেমিথ্যি বলেছেন !

– তোমার কি মনে হয় শাহরিদ আহনাফ আবরন বলবে মিথ্যে কথা ??

– এহহ , ভালো সাজতে হবে না । আপনার হিসেব আছে আপনি আমার সাথে কত মিথ্যা বলেছেন ??

– তুমি হিসেব করবে জেনেই আমি আর কষ্ট করে হিসেব করি নি ।

পূর্ণতা নিঃশব্দে হেসে হাসি থামিয়ে বলল ,

– আপনি একটা বাজে লোক !

– আমি জানি । এখন আল্লাহর ওয়াস্তে জলদি জলদি চেঞ্জ করে বের হয়ে এসো । অনেক কাজ বাকি !

আবরনের কথা শুনে পূর্ণতা ভ্রু কুচকে মনে মনে বলল ,

– কি কাজ করার কথা বলছেন উনি ??

তারপর কথা না বাড়িয়ে পূর্ণতা জলদি জলদি চেঞ্জ করে নিয়ে লাল এর ভেতর মাল্টিকালার কাজ করা স্কার্ট আর টপস পড়ে অবশেষে গলায় ওরনা পেচিয়ে দরজা খুলে ফাঁকা করে হাত ভর্তি করে গহনা নিয়ে বের হতে হতে বলল ,

– আমি এই প্রথম এতো গহনা পড়েছি । এত গহনা পড়িয়েছে আমাকে যে আমি এক বারে সব চেঞ্জিং রুম থেকে টেনে এনে এই বাক্সে তুলে রাখতে পারবো না ।

আবরন অলরেডি চেঞ্জ করে ট্রাউজার আর টিশার্ট পড়ে নিয়েছে । আবরন চেঞ্জিং রুমের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল ,

– ওকে আমি হেল্প করছি ।

তারপর দুজনে মিলে জলদি জলদি সব গুছিয়ে নিল ।

পূর্ণতা বলল ,

– এখন বলুন । আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না ।

আবরন বলল ,

– তুমি বাচ্চা ন‌ও যে বুঝতে পারছো না !

– আমার কি বিয়ে হয়ে গিয়েছে ?

আবরন পূর্ণতার কাছে এগিয়ে এসে বলল ,

– শুধু তোমার না , আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে ।

– কিন্তু !!

– উফফ , তোমার সব প্রশ্নের জবাব আমি দেব ! আই প্রমিজ ! তোমার সাথে কথা বলার জন্য সারাটা জীবন এখনো পড়ে আছে । এখন আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো ।

– বলুন ।

– জিব্রান ভাইয়া আর নাদিরা ভাবির বাসর ঘর বলে কথা ! একটু মজা না করলে হয় বলো ??

পূর্ণতা চোখ গোল গোল করে বলল ,

– আপনি কি করতে চাইছেন বলুন তো ??

– কিছুই না , জাষ্ট ছোট্ট একটা প্ল‍্যান !

– সেটা কি ??

আবরন পূর্ণতাকে সব বুঝিয়ে বলতেই পূর্ণতা বলল ,

– বকা খাবো না তো ভাইয়ার হাতে ??

আবরন বলল ,

– হায়রে পাগলি । একটা মাত্র ভাই , এখন মজা করবে না তো কখন করবে । আর আমি আছি তো , সাথে বাকিরাও সহযোগী হিসেবে আছে । চিন্তার কিছু নেই । চলো ।

পূর্ণতা বলল ,

– বিসমিল্লাহ বলে চলুন তাহলে ।

…………………………………………………

জিব্রান আর নাদিরার বাসর ঘর যে বাংলোতে সাজানো হয়েছে সবাই সে বাংলোর নিচে দাঁড়িয়ে গোল মিটিং করছে ।

গোল মিটিং এর নেতা আবরন । তবে প্ল‍্যান মোতাবেক সবাইকেই কাজ ক‍রতে হবে ।

সবাই ধীরে ধীরে শব্দহীন ভাবে সিড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে জিব্রানের রুমের অপর পাশের খালি রুমে গিয়ে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল ।

আবরন আস্তে করে ফাহিম আর তাসিন কে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– তোদের যা বলতে বলেছি তা ই বলিস কিন্তু !!

ফাহিম বলল ,

– ঠিক আছে । তুই টেনশন নিস না !

তারপর তাসিন কে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– চল , তাহলে ।

আবরন দরজা ফাঁকা করতেই ফাহিম আর তাসিন উঁকি দিয়ে আস্তে করে দেখতেই আয়মান দুইজনকে লাথি মেরে বের করে দিয়ে বলল ,

– বলদের দল । জলদি যা ।

আয়মানের কান্ড দেখে প্রেনা , পূর্ণতা , রুহি আর নীরা হেসে উঠলো ।

আবরন‌ও হাসল । ফাহিম তাসিন বের হতেই আবরন রুমের লাইট অফ করে দিয়ে এক আঙুলের মতো দরজা ফাঁকা করে , তারপর বাহিরের দিক বরাবর ওরা তাকিয়ে দেখল ফাহিম আর তাসিন প্রায় ৬ ফুট দূরত্বে জিব্রানের রুমের দরজা বরাবর দাঁড়িয়ে আছে । আবরনরা এমন একটা রুমে যে রুমটা দোতলার করিডোর দিয়ে হেঁটে গেলে সোজা ভাবে দরজা দিয়ে ঢুকে যেতে হয় । আর জিব্রানের রুমটা এক‌ই করিডোর দিয়ে হেঁটে গেলে হাতের বামদিকে দরজাটা পড়ে । তাই ওরা ফাঁকা দিয়ে সব ঘটনা ই স্পষ্ট দেখতে পাবে চোখের সামনে ।

তাসিন আর ফাহিম খেলনা একটা ফায়ার এলার্ম বাজিয়ে জোরে জোরে জিব্রানদের দরজায় নক করতে করতে বলল ,

– জিব্রান ভাইয়া , নাদিরা ভাবি তোমরা জলদি বেরিয়ে এসো । কটেজে আগুন লেগেছে । জলদি , জলদি ।

ওরা এমন ভাবে সিচুয়েশন তৈরি করেছে যে বাহিরে সত্যিই আগুন লেগেছে । ঐদিকে নিচে ওরা কৃত্রিম ধোয়া আগের থেকেই সৃষ্টি করে এসেছে যেন ধোয়ার কারনে ওরা সত্যিই বিষয়টাকে বিশ্বাস করে ।

এদিকে আয়মান এই বাংলোর সকল সিসি ক্যামেরার মাইক অন করে ইউটিউব থেকে চিল্লাচিল্লি আর হৈ চৈ এর সাউন্ড অন করে মাইকে ধরে রেখেছে যেন আগুন লেগেছে এমন একটা ফিলিং ওদের মাঝে আসে ।

জিব্রান প্রায় সাথে সাথেই দরজা খুলে নাদিরার হাত ধরে বেরিয়ে আসতেই ফাহিম আর তাসিন দৌড়ে সিড়ির দিকে যেতে যেতে বলল ,

– জলদি চলো , জলদি চলো । আগুন ধেয়ে এদিকে আসছে । আমাদের বের হতে হবে ।

জিব্রান আর নাদিরা হাত ধরে ওদের পেছনে দৌড়ে সিড়ির দিকে যাচ্ছে । জিব্রান বলছে ,

– বাকিরা সবাই কোথায় ??

– সবাই ই বের হচ্ছে !! তোমরা চলো !!

এই বলে ফাহিম আর তাসিন সিড়ি বেয়ে নেমে একদম নিচে চলে গেল ।ওদের পেছন পেছন ঘটনার চক্রান্তের শিকার হয়ে জিব্রান আর নাদিরা ও নিচে নেমে গেল ।

আবরন , পূর্ণতা , আয়মান আর প্রেনা , রুহি , নীরা বিষয়টা দরজার ফাঁকা দিয়ে খেয়াল করতেই দরজা খুলে নিঃশব্দে জিব্রানের রুমের দিকে এগিয়ে গেল ।

ওরা ছয়জন জিব্রানের বাসর ঘরের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই আবরন বলল ,

– আয়মান ! বাকিটা এখন তোদের হাতে । বেষ্ট অব লাক ।

আয়মান , প্রেনা , রুহি , নীরা একসাথে বলল ,

– আমরা পারবো , তোমরা সাবধানে কাজ করো ।

আবরন আর পূর্ণতা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে তারপর রুমের ভেতরে চলে গেল ।

এদিকে প্রেনা , রুহি , নীরা দরজাটা লাগিয়ে বাহিরে দরজা আটকে দাঁড়িয়ে র‌ইল । আর আয়মান ওদের তিনজনের সামনে গার্ড হিসেবে দাঁড়িয়ে গেল ।

…………………………………………………

জিব্রান ফাহিম আর তাসিনকে কেলাচ্ছে আর বলছে ,

– ফাজিলের দল !! রাত বাজে ১২ টা । মাত্র‌ই বাসর রাতটা শুরু আর তোরা এসেছিস মশকরা করতে ??

নাদিরা হেসে লজ্জায় লাল হয়ে এক সাইডে দাঁড়িয়ে আছে ।

তাসিন বলল ,

– ভাইয়া , তোমরা আগে ভাগে বাসর ঘরে ঢুকে গেলে আমাদের না জানিয়েই তাই তো আয়মান এই বুদ্ধি করে তোমাদের বের করলো বাসর ঘর থেকে !

জিব্রান ফাহিম আর তাসিনের ঘাড় ধরে বলল ,

– চল , দেখি । আয়মান এর বুদ্ধি কত টুকু সফল হয় ?

এই বলে ওদেরকে নিয়ে দোতলায় সিড়ি
বেয়ে উঠতে শুরু করতেই আয়মান প্রেনা একদম রেডি হয়ে দাঁড়ালো আর আয়মান সঙ্গে সঙ্গে আবরনকে ম্যাসেজে জানালো ” ওরা আসছে ” ।

আয়মানের ম্যাসেজ পেয়ে আবরন আর পূর্ণতা এলার্ট হয়ে গেল ।

জিব্রান ফাহিম , তাসিনকে ঘাড় ধরে এনে আবার বাসর ঘরের সামনে এসে দাঁড়াতেই দেখল , দরজায় আয়মান আর প্রেনা ভেটো দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।

নাদিরা পেছন থেকে বিষয়টা দেখে জিব্রান কে বলল ,

– সময় নষ্ট না করে ওরা যা দাবি করে দিয়ে দাও জিব্রান । ছোট ছোট ভাই বোন গুলো এসেছে ।

আয়মান হেসে বলল ,

– এই তো ভাবি বুঝতে পেরেছে । ভাইয়া , দেড়ি না করে দিয়ে দাও তো ।

জিব্রান ফাহিম আর তাসিনের ঘাড় ছেড়ে দিয়ে বলল ,

– কি চাস বল ?

আয়মান বলল ,

– বেশি কিছু না । আমার ১০ হাজার টাকা লাগবে !

– আর আমার‌ও ১০ হাজার টাকা লাগবে । ( ফাহিম )

– আর আমার‌ও সেইম । ১০ হাজার হলেই চলবে । ( তাসিন )

– আর ভাইয়া , আমাদের তিনজনকে একটা করে স্বর্ণের হার গিফট করলেই হবে । ( প্রেনা )

রুহি আর নীরা বলল ,

– হ্যা , ঠিক তাই ।

ওদের কথা শুনে জিব্রান প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা , এদিকে নাদিরা হেসে জিব্রানকে কোনো মতে ধরে রেখে সামলাচ্ছে ।

আর ভেতরে বসে আবরন আর পূর্ণতা ওদের চাওয়া পাওয়া শুনে পেট ধরে মুখ চেপে হাসছে । #ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৪৮

জিব্রান ওদের সাথে না পেরে অবশেষে ওদের বুঝিয়ে অর্থাৎ ভুলিয়ে ভালিয়ে ৩৫ হাজার টাকা ওদের হাতে নগদ দিয়ে নাদিরা কে নিয়ে রুমে ঢুকতে পেরেছে ।

রুমের ভেতরে ঢুকেই জিব্রান দরজা জলদি জলদি লাগাতে বলল ,

– ভালো হয়ে যা তোরা । এর শোধ হারে হারে তুলবো দেখিস !

সবাই হেসে উঠলো । আয়মান হাসতে হাসতে বলল ,

– গাইজ , লেটস গো ! এখনো আবরন – পূর্ণতা এবং সায়ন ভাইয়া আর জল বাকি !

নাদিরা হেসে বলল ,

– আমাদের থেকে তো ৩৫ নিলে , ওদের থেকে কত নিবে ?

– আরো বেশি ।

জিব্রান হেসে দরজা লাগাচ্ছিল আর আয়মান সহ সবাই চলে যেতে যেতে বলল ,

– বেষ্ট অব লাক ভাইয়া এন্ড ভাবি । কিছু লাগলে কিন্তু অবশ্যই জানিও ।

জিব্রান ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে নাদিরা কে বলল ,

– ফাজিলের দল সবগুলো ।

নাদিরা হেসে খাটে বসতে বসতে বলল ,

– ওরাই তো মজা করবে , নাহলে আর কে করবে বলো ??

জিব্রান ও খাটে বসতে বসতে বলল ,

– হ্যাঁ , সেটা ঠিক । এখন আবার বাকিদের জীবন বেদনা করতে গিয়েছে ।

নাদিরা হেসে উঠল । জিব্রান মুগ্ধতার দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ নাদিরার দিকে তাকিয়ে র‌ইল । নাদিরা হাসি থামিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল ,

– কি দেখছো ?

জিব্রান বলল ,

– তোমাকে ।

– আমাকে কি নতুন দেখছো নাকি ?

– উহু , কিন্তু নতুনভাবে দেখছি ।

নাদিরা বলল ,

– যেমন ?

– যেমন আগে তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড ছিলে আর এখন আবার ব‌উ ।

– আচ্ছা । কিন্তু মানুষটা আর মনটা তো সেই এক‌ই !

– হুম । তুমি ই তো আমার প্রথম আর শেষ ভালোবাসা । অনেক ভালোবাসি তোমাকে নাদিরা ! আমি যে তোমাকে নিজের করে পাবো কখনো ভাবতেই পারি নি । আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে ।

– সব ই কিন্তু পূর্ণতার জন্য হয়েছে । ওকে একটু জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলাম । কিন্তু ও তো অজ্ঞান হ‌ওয়ার পর পর ই আবরন ওকে নিজের রুমে নিয়ে চলে গেল ।

– আবরনের বিয়ে করা ব‌উ বলে কথা ! তাই ভালোবেসে কষ্ট না দিয়ে নিয়ে গিয়েছে । এই কয়দিন অনেক কষ্ট পেয়েছে , অবশ্য সব ই আমাদের প্ল‍্যান করা অংশ । কি করবো আর !

জিব্রান আর নাদিরার খাটের নিচে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে আবরন আর পূর্ণতা । প্রথম ওদের কথা এনজয় করলেও যখন‌ই পূর্ণতা শুনলো যে সব কিছু প্ল‍্যান করে করা হয়েছে , ওকে জেনে শুনে ইচ্ছে করে কষ্ট দেওয়া হয়েছে তখন‌ই পূর্ণতা চোখ গরম করে নাক ফুলিয়ে আবরনের দিকে তাকালো ।

আবরন ওকে দেখে দাঁত কেলাচ্ছে । পূর্ণতা আস্তে আস্তে আবরনের কানে কানে বলল ,

– সবাই আমার সাথে নাটক করলো ? এত বড় নাটক ?? মন তো চাইছে আপনাদের ………..

পূর্ণতা কথা বলে শেষ না করার আগেই আবরন পূর্ণতার কানে আস্তে করে বলল ,

– সবাই ই কম বেশি বুদ্ধি দিয়েছে । মার খেলে আমি একা কেন খাবো , সবাইকে নিয়েই খাবো !

পূর্ণতা বলল ,

– কে কে জানে সব কিছু ?

আবরন বলল ,

– জল বাদে সবাই ।

– মানে ?

– মানে তোমার ফ্যামিলি , আমার ফ্যামিলি , আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেল , প্রেনাসহ প্রেনার ফুল ফ্যামিলি । সবাই ই জানে ।

পূর্ণতা অবাক হয়ে বলল ,

– আর সায়ন ভাইয়া ?

– সায়ন‌ও জানে । ওকে তো জলের ছবি দেখিয়েই এদেশে নিয়ে এসেছি । তোমার খালামনি পাত্রী দেখছিল ওর জন্য । তাই তো ওকে আনলাম । আর জল তো এখন বদলে গিয়েছে । আর যতদিন যাবত সায়ন এসেছে ততদিন যাবত ও যা যা করেছে সব প্ল‍্যানের মধ্যেই ছিল । শুধু জল এ বিষয়ে কিচ্ছু জানতো না । আর জল‌ও সায়ন কে দেখার পর থেকে ওকে পছন্দ করে কিন্তু ওকে বলেনি কারন ও সায়নকে তোমার হবু বর ভেবে বিয়েটা ভাঙতে চায় নি । তাই নিজে নিজে মনে কষ্ট পাচ্ছিল আর আমাকে বিয়ে করতেই রাজি হয়েছিল ।

পূর্ণতা বলল ,

– আপনারা সবাই খারাপ । আমি খেলবো না । আমি এখন চলে যাবো ।

আবরন ওর হাত চেপে ধরে ওকে বলল,

– পাগল হলে নাকি ?? ভাইয়া আর নাদিরা ভাবি কি করে দেখি আগে !!

– না আমি দেখবো না ।

আবরন পূর্ণতার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল ,

– তুমি এখন চলে যেতে চাইলে কিন্তু আমি তোমাকে রুমে নিয়ে ধোলাই করবো দেখো ।

– আমি আপনাকে ভয় পাই না ।

এর‌ই মধ্যে নাদিরা আর জিব্রানের রোমান্টিক কথা বার্তার সাউন্ড ভেসে আসতে লাগল । আবরন আর পূর্ণতা কথা বাদ দিয়ে ওদের কথা শোনার দিকে মনোযোগ দিল ।

– বিয়ে করলাম সবে মাত্র , এখন একটু রোম্যান্স করবো তা না আমাকে তোমার থেকে দূরে চলে যেতে হচ্ছে । সবসময় আমার সাথেই এমন হয় ।

– সমস্যা কি ? যে কয়দিন আছো সে কয়দিন ভালো মতো রোম্যান্স করে নাও তাহলেই তো হয় ।

– তবুও হবে না । আমাদের হানিমুনে যাওয়ার মতো ও সময় নেই দেখো । কতটা ব্যাড লাক !

– মানুষের স্বভাব ই এমন ! থাকতে দিলে খেতে চায় , খেতে দিলে বসতে চায় আর বসতে দিলে শুতে চায় । যেখানে আমাদের বিয়ে হ‌ওয়ার ই কোনো চান্স ছিল না সেখানে বিয়েটা হয়ে আজ বাসর ঘরে একসাথে আছি তার কোনো খবর নেই , তুমি আছো তোমার হানিমুন আর রোম্যান্স নিয়ে ।

জিব্রান হেসে নাদিরাকে কাছে টেনে বলল ,

– তাহলে দেড়ি করছো কেন ? চলো শুরু করি ।

– কি ?

– রোম‍্যান্স !

এই বলে জিব্রান নাদিরার ঠোঁটের দিকে চুমু খেতে এগিয়ে যেতেই নাদিরাও এক গাল হেসে সায় দিল ।

পূর্ণতা শব্দ শুনে লজ্জায় লাল হয়ে আছে । আর আবরন মুচকি হেসে পূর্ণতা কে আস্তে করে ধাক্কা মেরে বলল ,

– দেখেছো , ভাইয়া আর ভাবি কত রোম্যান্টিক । আর তুমি একটা গাছ বলদ !

পূর্ণতা রেগে জোরেই বলল ,

– ওরা ভালোবেসে কিস করছে । আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন নাকি ??

আবরন জিহ্বে কামড় দিয়ে পূর্ণতার মুখ ঠেসে ধরল । পূর্ণতা মনে মনে বলল ,

– আয় হায়! কি আকাম টা ই না করলাম !!

জিব্রান আর নাদিরা শব্দ পেয়েই দুজন দুজনের থেকে ১০ হাত দূরে সরে গিয়ে একে অপরের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকালো । জিব্রান বলল ,

– এটা পূর্ণতার গলা না ?

নাদিরা বলল ,

– আমার‌ও তো তা ই মনে হলো । কিন্তু ও তো নিশ্চয়ই আবরনের সাথে বাসর ঘরে আছে ।

– তা ই তো ! কিন্তু আমি তো স্পষ্ট ওর গলা শুনতে পেলাম !

– আমি ও তো ।

নাদিরা কিছু একটা ভেবে জিব্রানকে বলল ,
– তুমি এক কাজ করো , আবরনকে কল দাও ।

জিব্রান ফোনটা হাতে নিয়ে জলদি আবরনকে কল দিল ।

এদিকে আবরন পূর্ণতার মুখ চেপে ধরায় পূর্ণতা ইশারা করলো ,

– হাত সড়ান । আমি দম আটকে মরে যাচ্ছি তো ।

আবরন হাত সরিয়ে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে আছে । আর পূর্ণতা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে ব্যস্ত ।

আবরন পূর্ণতা কে এক দৃষ্টিতে দেখছে আর ভাবছে ,

– আমাদের ভালোবাসা কেমন অদ্ভুত ! মনে মনে ভালোবাসি একে অপরকে । তার উপর কেউ এখনো নিজের মুখ দিয়ে সত্যিটা বলি নি । অথচ বিয়ে হয়ে গেল । আমরা এখন ম্যারিড কাপল আর এখনো ভালোবাসার রহস্যটা অপ্রকাশ্য ই রয়ে গিয়েছে ।

পূর্ণতা আবরনকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে ভ্রু নাচালো । আবরনের দৃষ্টি তবুও বিচ্যুত হচ্ছে না । হঠাৎ ই স্বজোরে কারো ফোন বেজে উঠতেই আবরন চমকে গেল । পূর্ণতা বলল,

– কার ফোন ?

আবরন চোখ বড় বড় করে বলল,

– আমার । ওওওও শিট !! আমি ফোনটা সাইলেন্ট করতে ভুলে গিয়েছি ।

জিব্রান আর নাদিরার বুঝতে বাকি নেই আবরন আর পূর্ণতা এই রুমের‌ই কোথাও লুকিয়ে আছে ।

ওরা খাট থেকে নেমে দাড়াতেই আবরন জলদি জলদি ফোনটা চাপ দিয়ে সাইলেন্ট করে দিল ।

পূর্ণতা হাত দিয়ে গলায় ইশারা করে দেখালো ,

– নাউ উই আর ডেড !!

আবরন পূর্ণতার দিকে কাদো কাদো ফেস নিয়ে তাকাতেই জিব্রান রুমের লাইট অন করে কান ধরে আবরনকে খাটের নিচ থেকে টেনে বের করতে করতে বলল ,

– বদমাইশের দল ! আমার থেকে টাকা তো মারলি‌ ই সাথে আমার রোমান্টিক টাইম‌ও বরবাদ করলি । তোর আজকে খবর আছে ।

আবরন বলল ,

– আউউউ , ভাইয়া । কানটা ছেড়ে দাও ‌ । ভুল হয়ে গিয়েছে । আর কক্ষোনো হবে না ।

জিব্রান বলল ,

– আর কক্ষোনো হবে কি করে রে ?? এই দিনটা তো আর প্রতিদিন ই ফিরে আসবে না ।

– আসলেই তো ।

জিব্রান আরো জোরে কান মুচড়ে বলল ,

– আবার আসলেই তো বলছিস ?? ফাজিল কোথাকার ??

পূর্ণতা চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আর নাদিরা মুখ টিপে হাসছে ।

আবরন বলল ,

– ভাইয়া , এভাবে কেউ বোনের হাজবেন্ডের সাথে ব্যবহার করে বলো ?

জিব্রান কান ছেড়ে আবরনের কাধে চাপড় মেরে বলল ,

– ওরেএএএএ ! আসছে আমার বোনের হাজবেন্ড রে !! বলি আমিও তো তোর ব‌উর বড় ভাই !! আমার সাথে তো এসেছিস মশকরা করতে । এখন বল তোকে কি করবো ?

আবরন নাদিরার দিকে কাদো কাদো ফেস করে বলল ,

– ভাবি !! দেখছো ভাইয়া বকা দিচ্ছে । তুমি কিছু বলবে না ?

নাদিরা হেসে আবরনকে বলল ,

– আমি আর কি বলবো ভাই ? তোমরা যা দুষ্টুমি করলে , শাস্তি পাওয়া উচিত ।

জিব্রান বলল ,

– দেখেছিস , ভাবিও আমার সাথে একমত !

আবরন ঠোঁট উল্টে পূর্ণতার দিকে তাকালো । পূর্ণতা আবরনকে দেখে কি করবে বুঝতে পারছে না ।

জিব্রান আবরনকে ছেড়ে দিয়ে পূর্ণতা কে বলল ,

– তুই ও জড়িত ?

পূর্ণতা চুপ করে আছে ।

জিব্রান বলল ,

– কি পাপ করেছিলাম যে আমাদের বাসরের সময় নষ্ট করছিস ? তোদের বাসর তো আমি আটকে রাখি নি । যা না , গিয়ে নিজেরা রোম্যান্স কর । আমাদের কেন ডিষ্টার্ব করছিস ।

পূর্ণতা বলল ,

– একদম উচিত হয়েছে । আমাকে যে এই এতদিন যাবত কষ্ট দিয়ে দিয়ে মারছিলে তাই এমনটা হয়েছে ।

জিব্রান ভ্রু কুচকে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে নাদিরার দিকে তাকিয়ে পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– কষ্ট পেয়েছিস তুই ??

পূর্ণতা বলল ,

– শুধু কষ্ট না অনেক কষ্ট পেয়েছি ।

জিব্রান বলল ,

– এখন কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়েছিস ?

– হু ।

– কষ্ট কেন পেয়েছিস ? সায়নের সাথে বিয়ে হচ্ছিল বলে ?

– অবশ্যই ।

– আবরনের সাথে বিয়ে হয়েছে শুনে খুশি হয়েছিস ?

পূর্ণতা এক্সাইটেড হয়ে বলল ,

– খুশি মানে ! অনেক খুশি । কারন আমি তো উনাকেই …………

পূর্ণতা কথাটা বলতে বলতে আবরনের দিকে তাকাতেই দেখল আবরন এক ভ্রু উঁচু করে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে ।

পূর্ণতা থেমে যাওয়ায় নাদিরা বলল ,

– কি ? কথাটা শেষ করো !

পূর্ণতা বলল ,

– ভাবি , সরি ।

– সরি কেন ?

– তোমাদের সময় নষ্ট করেছি ।

জিব্রান বলল ,

– কথা ঘোরাচ্ছিস কেন পূর্ণ ??

পূর্ণতা মাথা নিচু করে আছে ।

আবরন জিব্রান কে ইশারা করতেই জিব্রান বলল ,

– অনেক হয়েছে । যা তো তোরা । দূর হ। রাত থেকে মাঝরাত হয়ে যাচ্ছে আর আমরা এখনো এখানেই আটকে আছি । যা বলছি । ভাগ এখান থেকে ।

জিব্রান কথা বলতে দেড়ি নেই আর ওদিকে আবরন আর পূর্ণতা গায়েব ।

…………………………………………………

জিব্রানের বাংলোর নিচে দাঁড়িয়ে আবরন আর পূর্ণতা জোরে জোরে হাসছে । কি বাঁচাটাই না বেঁচেছে ওরা ।

আবরন হাসির মাঝেই বলল ,

– ওরা অনেক ভালোবাসে দুজন দুজনকে ।

পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে হাসি থামিয়ে বলল ,

– হুম ।

আবরন বলল ,

– অনেক রাত হয়েছে । চলো যাই ।

– বাকিরা কোথায় ?

– ওরা সায়ন আর জলের বাসরের ১২ টা বাজাচ্ছে নিশ্চিত ।

পূর্ণতা হাসলো । আবরন বলল ,

– চলো , চলো । কেউ দেখলে বকা খাবো ।

– চলুন ।

আবরন আর পূর্ণতা হেঁটে নিজেদের বাংলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । পূর্ণতা কিছু বলছে না । চুপচাপ ওর সাথে হেঁটে যাচ্ছে । তাই আবরন হঠাৎ হাঁটা থামিয়ে দিয়ে বলল ,

– তুমি যেভাবে কচ্ছোপের মতো হাঁটছো এভাবে চললে তো আমাদের বাংলোতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল হয়ে যাবে ।

পূর্ণতা হেসে উঠতেই আবরন ওকে পাজকোলা করে নিয়ে বলল ,

– এখন দেখবে খরগোশের মতো দৌড়ে ২ মিনিটেই পৌঁছে যাবো ।

পূর্ণতা বলল ,

– আমি গুনছি , দেখি আপনি যেতে পারেন কিনা !

– ওকে , লেটস গো ।

আবরন পূর্ণতা কে কোলে নিয়ে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছে আর পূর্ণতা আবরনের গলা না পেচিয়ে ধরে ১ , ২ , ৩ গুনে যাচ্ছে ।

বাংলোতে ঢুকে সিড়ির সামনে যেতেই পূর্ণতা বলল ,

– ব্যস , ব্যস । নামিয়ে দিন এখানেই ।

আবরন বলল ,

– কেন ?

– আপনার কষ্ট হবে তো আমাকে নিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলে ।

– তাই ? হবে না কষ্ট । তুমি গুনো ।

পূর্ণতা বলল ,

– না না , আপনার কষ্ট হবে । আপনি নামান আমাকে । আমি হেঁটেই যেতে পারবো ।

আবরন পূর্ণতা কে বলল ,

– আমার কষ্ট হলে তোমার কি ?

আবরনের প্রশ্ন শুনে পূর্ণতা মন খারাপ করে বলল ,

– আমার কি মানে ? আপনি বোঝার চেষ্টা করুন । তিনতলায় আমাদের রুমটা । কি করে আপনি আমাকে নিয়ে ঐ পর্যন্ত উঠবেন । আপনার যদি দম আটকে যায় ?

– কিছুই হবে না । চেন্নাই এক্সপ্রেস মুভিটা দেখেছো ?

– হু ।

– সেখানে শাহরুখ খান দীপিকা কে কোলে নিয়ে কয়টা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠেছে মনে আছে ??

পূর্ণতা বলল ,

– ৩০০ সিড়ি ।

– হু । আর এখান থেকে তিন তলা পর্যন্ত তো মাত্র ৩৯ টা সিড়ি ।

– আপনাকে ফিল্মের নায়কের অভিনয় দেওয়া হয় নি !

আবরন কথা না বাড়িয়ে পূর্ণতা কে কোলে নিয়েই একেবারেই অর্ধেকটা পর্যন্ত চলে গেল ।

আবরন থেমে নিঃশ্বাস নিচ্ছিল , পূর্ণতার তখন খুব মায়া হচ্ছিল আবরনের জন্য । আবরন আবার‌ও সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে দোতলা ছেড়ে তিনতলার সিড়ির কাছাকাছি পর্যন্ত যেতেই পূর্ণতা আবরনের দিকে ছল ছল দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে দেখল আবরন তিনতলায় অলরেডি পা রেখেছে ।

তবুও ওকে নামিয়ে দেয় নি কোল থেকে । ওকে নিয়ে একেবারে বিছানায় নামাতেই পূর্ণতা আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না । আবরনকে বলল ,

– আপনি এমন কেন করেন ?

আবরন দরজা লক করে এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিয়ে পূর্ণতা কে বলল ,

– কেমন করি ?

– এইযে , পাগলামি করেন মাঝে মাঝে ।

আবরন পূর্ণতার একদম কাছে এসে ওর কানে কানে বলল ,

– তুমি কথা চালাতে থাকো , আমি উত্তর দিচ্ছি । থামবে না । এই রুমে তুমি আমি ছাড়াও আরো কেউ আছে । এখন কিছু বলো না , চুপচাপ কথা চালিয়ে যাও ।

এইটুকু আস্তে করে বলে আবরন আবার জোরে জোরেই বলল ,

– আমি পাগল বলেই তো পাগলামি করি ।

পূর্ণতা বলল ,

– আপনি আমাকে এতো কষ্ট দিলেন কেন ?

– কোথায় কষ্ট দিলাম ?

– এই যে , এই কয়দিন ।

– তুমি কষ্ট পেয়েছো কেন ?

পূর্ণতা আবরনের শিখানো কথা মনে রেখেছে তবে সিরিয়াস হয়েই আবরনকে বলল ,

– আজ কিছু সত্যি কথা বলতে চাই শুনবেন ?

আবরন পূর্ণতার কথা শুনবে বলে ওর সামনেই বিছানায় পা উঠিয়ে বসে বলল ,

– শুনবো । কিন্তু তোমার কোলে মাথা রেখে ।

পূর্ণতা নিজের কোলে আবরনকে শোয়ার জন্য জায়গা করে দিল । আবরন মুচকি হেসে ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে ওর হাত দুটো নিজের কপাল আর চোখে রেখে বলল ,

– এখন বলো । আমি শুনছি ।

পূর্ণতা আবরনের মাথা ম্যাসাজ করে দিতে দিতে বলল ,

– যখন বাবা প্রথম আমাকে বলল সায়ন ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে ঠিক সেই মূহুর্ত থেকে শুরু করে বিয়েতে কবুল বলার আগ পর্যন্ত আমি প্রতিনিয়ত কষ্ট পেয়ে গিয়েছি । জানি না কেন মনে হতো সবসময় যে আপনার চেয়ে ভালো আমাকে অন্য কেউ বুঝতে পারবে না । আপনার চেয়ে বেশি খুশি অন্য কেউ আমাকে রাখতে পারবে না । আপনার মতো করে অন্য কেউ আমার খেয়াল রাখতে পারবে না । আপনার মতো করে আমার মনের না বলা কথা আর কেউ বুঝতে পারবে না । আপনার মতো করে কেউ আমাকে আগলে রাখতে পারবে না । সবসময় এসব কথা মনে ঘুর ঘুর করেছে । আমার মনে হয়েছে আপনিই একমাত্র একজন মানুষ যে কিনা সব দিক থেকে আমার জন্য বেষ্ট । আপনি কি শুনছেন ?

আবরন চোখ বন্ধ করে থেকেই বলল ,

– হুম ।

পূর্ণতা আবারো বলতে শুরু করলো ,

– আপনি আমার আশেপাশে থাকলে আমি প্রথম প্রথম নার্ভাস ফিল করলেও চিটাগাং গিয়ে আপনার সাথে সব জায়গায় গিয়ে মনে হয়েছে আমি আপনার সাথে থাকা কালেই সবচেয়ে বেশি সেইফটি ফিল করি । আপনার সাথে কাটানো প্রতিটা মূহুর্ত আমি অসাধারণ ভাবে উপভোগ করেছি । আমার মনে হয়েছে আপনি ও হয়তো আমাকে ঠিক আমার মতো করেই ফিল ক‍রতে পারেন । কিন্তু …….

এইটুকু বলে পূর্ণতা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল ।

আবরন বলল ,

– কিন্তু কি পূর্ণতা ?

– কিন্তু আমার সব ফিলিংস আর ভাবনাকে মিথ্যা প্রমাণ করে আপনি আমার সামনেই জল আপুকে নিজের করে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন । তখন আমার মনে হয়েছে কেউ আমাকে মিথ্যা মোহ দেখিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেই আমার পেছন থেকে চাকু মেরে দিয়ে চলে গিয়েছে । তারপর থেকে প্রচুর অস্থিরতা কাজ করেছে , রাতে ঘুম পর্যন্ত হতো না । তারপর যখন দেখতাম আপনি দিব্যি হাসি খুশি ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তখন নিজেকে বোঝাতাম এসব শুধুমাত্র মোহ । ইমোশন ছাড়া আর কিছুই না । কিন্তু বাহির থেকে শক্ত হয়ে থাকলেও ভেতরে ভেতরে কষ্ট পেতে পেতে আর কষ্ট জমা করতে করতে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম । আর সায়ন ভাইয়ার কোনো কথাই আমার ভালো লাগতো না । অনেক রাগ লাগত উনি কিছু বললে । কিন্তু কে জানতো ভাইয়াও মিথ্যে নাটক করছিল আমার সাথে । এমনকি আমার আপন ভাই আর ছোট্ট বেলা থেকে এক সাথে বড় হয়েছি সেই বান্ধবী পর্যন্ত আমার সাথে মিথ্যা নাটকটা চালিয়ে গেল । আমি ব্যতীত সবাই জানতো সব কিছু । কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে কেন ? কেন আমাকে এত কষ্ট দেওয়া হলো ? কি দোষ করেছি আমি ? কেন আমাকে কষ্টের বোঝা বয়ে বেড়াতে হলো । একটু সত্যিটা জানালে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত ??

পূর্ণতা বলতে বলতে কাদতে শুরু করলো । চোখ থেকে ফোটা ফোটা করে পানির স্রোত বেয়ে নামতে লাগলো ।

আবরন এতক্ষন মনোযোগ দিয়ে পূর্ণতার প্রতিটা কথা শুনছিল আর ওর কষ্টটা ফিল করতে চেষ্টা করছিল । কিন্তু পূর্ণতা হঠাৎ কেদে উঠায় আবরন শোয়া থেকে উঠে জলদি জলদি পূর্ণতা কে জড়িয়ে ধরে ওকে নিজের বুকে আকড়ে ধরে বলল ,

– শশশশশ ,, কেদো না । প্লিজ কেদো না । তুমি যে এতোটা কষ্ট পাবে যদি আমি জানতাম তাহলে আমি তোমাকে এতোটা কষ্ট কখনোই দিতাম না , বিশ্বাস করো । তোমার মতো ধৈর্য্য শীল মানুষ খুব কম‌ই হয় । এত এত কষ্ট পেয়েও অপেক্ষা করেছো শেষ পর্যন্ত কি হয় তা দেখার জন্য !

আমি তো চেয়েছিলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো । কারন , তুমি সারপ্রাইজ খুব পছন্দ করো । কিন্তু আমি তো জানতাম না তুমি এতোটা কষ্ট পাবে । আমার বোঝা উচিত ছিল কিন্তু আমি ………

পূর্ণতা হু হু করে কাদছে ।

আবরন পূর্ণতার মাথা নিজের বুক থেকে তুলে ওর চোখ নিজের আঙুল দিয়ে মুছে দিতে দিতে বলল ,

– তুমি এত কষ্ট না করে মুখ দিয়ে সত্যিটা যদি একবার বলতে আমি তখন‌ই সত্যিটা তোমাকে জানিয়ে দিতাম । কিন্তু তুমি তো ধৈর্য্য ধরতে ধরতে নিজেই কষ্টের বোঝা বয়ে এই পর্যন্ত নিয়ে এলে । একবার বলতে আমাকে ।

পূর্ণতা আবরনের বুকে কিল ঘুষি মেরে কাদতে কাদতে বলল ,

– কেন , আমাকে মুখ দিয়ে এসে বলতে কেন হবে ? আপনি বোঝেন নি আমি কি চাই ? আপনি তো সব কথাই আমার বলার আগে বুঝে নেন তাহলে এই কথাটা কেন বোঝেন নি বলুন ?? কেন বলেন নি !!

আবরন হেসে বলল ,

– ব্যথা পাচ্ছি তো । বিয়ের প্রথম রাতে এভাবে কেউ মারে ??

পূর্ণতা রেগে বলল ,

– একদম ফাজলামি করবেন না । আল্লাহর দুনিয়ার সব কথা আপনি বলতে পারেন আর সত্যিটা বলতে পারেন না । বাজে লোক আপনি একটা ।

আবরন হেসে পূর্ণতার দুই গাল নিজের দুই হাত দিয়ে চেপে নিজের কপাল পূর্ণতার কপালের সাথে ঠেকিয়ে বলল ,

– চোখ বন্ধ করো ।

পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে নিল । আবরন বলল ,

– এবার আমি যা বলি তা শুধু শুনবে । কোনো প্রশ্ন করবে না । আর চোখ ও খুলবে না যতক্ষন না পর্যন্ত আমি চোখ খুলতে বলছি ।

পূর্ণতা বলল ,

– হুম ।

আবরন বলতে শুরু করলো ,

– সারাটা জীবন আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে ভেবে ভেবে কখনোই কোনো মেয়েকে পাত্তা দিই নি । কত কত মেয়ে প্রোপোজ করেছে , আমার বাসায় প্রোপোজাল নিয়ে গিয়েছে কিন্তু আমি এক্সেপ্ট করি নি । কারন ওদের কাউকে দেখেই আমার মনে হয় নি ওরা পারফেক্ট । একটা মেয়ে একটা ছেলেকে সরাসরি প্রোপোজ করার সাহস রাখে এমন মেয়েদের আমার কখনোই পছন্দ না । আমার তো ইচ্ছা ছিল আমি কাউকে যদি ভালোবাসতে না পারি তাহলে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তারপর ফ্যামিলির চয়েজেই বিয়ে করবো এবং বিয়ের পর তাকে ভালোবাসবো । কিন্তু তোমাকে দেখার পর থেকে আমার জীবনের রাস্তাটা বদলে গেল । আমি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তোমাকেই বিয়ে করবো ভেবেছি । কিন্তু তোমাকে যত দেখলাম তত‌ই বদলে যেতে শুরু করলাম ।

তোমার খুশিতেই নিজের সুখ গুলো খুঁজে খুঁজে বের করতে করতে আজ আমি এই পর্যন্ত এসেছি ।

হ্যাঁ , ভালোবাসি আমি তোমায় । অনেক অনেক ভালোবাসি । আর #ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️ নিজের মনে একটু একটু করে তোমার জন্য এত এত ভালোবাসা জমিয়েছি যে এই ভালোবাসা কখনো শেষ হবার নেই । তোমার মতো মিলিয়ন বিলিয়ন পূর্ণতাকে ভালোবাসলে এই ভালোবাসা এই মন থেকে ফুরাবে না । আমার এই অপ্রকাশিত ভালোবাসা আজ আমি তোমার কাছে প্রকাশ করলাম । আর ভালোবাসার জোরেই আজ আমরা এক হতে পেরেছি যদিও সেটা হোক আমাদের অপ্রকাশিত ভালোবাসা । অনেক অনেক ভালোবাসি । ♥️

তুমি জানো , তোমার আমার বিয়ের সব প্ল‍্যানিং আমিই করেছি । কেনা কাটা থেকে শুরু করে প্রতিটা মূহুর্তকে তোমার জন্য আমি নিজে সাজিয়েছি । আমি জানি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি , এই জন্য সরির পাশাপাশি বলছি তুমি যা শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিব । আই প্রমিজ । কিন্তু তোমার হলুদের শাড়ি , বিয়ের লেহেঙ্গা , জুয়েলারি , কসমেটিকস সব আমার চুজ করা । হলুদের দিন তুমি না দেখলেও আমি ই তোমাকে হলুদের ছোঁয়া দিয়েছি । হলুদের দিন রাতেই তুমি ঘুম থেকে জাগার আগেই আমি লাল বাটির হলুদ নিয়ে গিয়ে তোমার রুমে ডুপ্লিকেট চাবি ইউজ করে তোমার গালে ছুঁয়ে দিয়ে তোমার সাথে কথা ও বলেছি কিন্তু তুমি তো আরামের ঘুমে তলিয়ে ছিলে । তোমার জন্য আগের থেকেই হলুদ বেটে রেখেছে প্ল‍্যান মোতাবেক । আমি চাইলে তোমার গালের হলুদ টুকু না মুছে সেভাবেই রেখে আসতে পারতাম কিন্তু আমি চাই নি তুমি বিষয়টা জেনে যাও । তাহলে সারপ্রাইজ টাই মাটি হয়ে যেত । আর হলুদের দিন তোমাকে লাল বাটি থেকে হলুদের ছোঁয়া দেয়া হয়েছে এক‌ই বাটি থেকে আমাকেও হলুদ ছোঁয়ানো হয়েছে । অর্থাৎ আমার ছোঁয়া ই তুমি প্রথম পেয়েছো । আর বিয়ের দিন তো জলের সাথে সায়নের বিয়ে হয়েছে । কিন্তু তোমাকে শোনানোর জন্য সবাই বলেছে আমি কবুল বলেছি । কিন্তু আমি তো তোমাকে কবুল বলেছি আর তোমাকে শোনানো হয়েছে সায়ন কবুল বলেছে । তাই তো তুমি মনকে চাপ দিয়ে কবুল বলেছো আর অজ্ঞান হয়ে গিয়েছো । আর রেজিস্টার পেপারে সাইন যখন করেছো তখন‌ও তুমি কাদছিলে নাহয় নিশ্চয়ই দেখতে তোমার সাথে সায়নের না আমার‌ই বিয়ে হয়েছে ।

পূর্ণতা কে আবরন কথা বলতে নিষেধ করেছে তাই তো ও কথা না বলে আবরনের কথা গুলো শুনে চোখ দিয়ে বন্ধ চোখেই পানি ফেলছে ।

আবরন বলল ,

– এত কিছুর পর আমি তোমার । তুমি কি বলবে না আমায় তোমার অপ্রকাশিত ভালোবাসার গল্প ?? আমি শুনছি , তুমি বলো ।

পূর্ণতা চোখ না খুলেই কাদতে কাদতে বলল ,

– আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি মিষ্টার শাহরিদ আহনাফ আবরন । খুব খুব খুব ভালোবাসি আপনাকে। আর #ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️ আজ সকল কষ্টকে জয় করে আপনাকে নিজের করে পেয়েছি । সারাটা জীবন এভাবেই ভালোবেসে আপনার সাথে আপনার‌ই হাত ধরে পাশাপাশি চলতে চাই । আপনি কি পারবেন আমাকে আপনার পাশে সারাজীবন নিয়ে চলতে ??

আবরন পূর্ণতা কে জড়িয়ে ধরে বলল ,

– সবসময় ।

পূর্ণতা ও শক্ত করে আবরনকে জড়িয়ে ধরল ।

আবরন পূর্ণতা কে কানে কানে বলল ,

– এভাবে ধরো না আমায় , তাহলে পুরোপুরি নিজের করে নিব তোমায় ।

পূর্ণতা মুচকি হাসল ।

আবরন পূর্ণতার কানে কানে আস্তে করে বলল ,

– ফাজিলগুলো এই রুমেই লুকিয়ে আছে । ওরা সবার বাসরের ১২ টা বাজিয়ে এখন আমাদের বাসর টা খারাপ করতে এসেছে ।

– আসলেই সবাই এই রুমে ?

– দাঁড়াও দেখাচ্ছি ।

এই বলে আবরন বলল ,

– সব এই মূহুর্তে রুম থেকে বের হ , কোনো নাটক করবি না । বের হ সব ।
আমি ১-৫ গুনবো । বের হ , নইলে ধোলাই কাকে বলে , কত প্রকার ও কি কি কাল হারে হারে বুঝাবো । আমি গুনছি , ১, ২ , ৩ , ৪

৪ বলতেই সব রুমের একেক জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করলো । কেউ খাটের নিচ তো কেউ আলমারির ভেতর থেকে , কেউ দরজার চিপা তো কেউ আলমারির চিপা । একেক জন বেরিয়ে আসতেই পূর্ণতা অবাক হয়ে সবাইকে দেখছে । আয়মান , প্রেনা , ফাহিম , রুহি , তাসিন , নীরা এমনকি সায়ন আর জল‌ও আছে ।

সবাই বলল ,

– তোরা টের কি করে পেলি ? আমরা তো একটু ও শব্দ করি নি !

আবরন বলল ,

– নেক্সট কোথাও আকাম করতে গেলে ডিম পচা গন্ধের পারফিউম ইউজ করিস না , নাহলে সবাই বুঝে যাবে যে ঘরে ডাকাতি হচ্ছে ।

সবাই হু হা করে হেসে উঠল ।

সায়ন বলল ,

– অবশেষে আমাদের আবরন পূর্ণতার অপ্রকাশিত ভালোবাসা প্রকাশিত হলো ।

সবাই হাসল ।

আবরন বলল ,

– এখনো কিছু অপ্রকাশিত রয়ে গিয়েছে । তোরা বের হলে তা একটু প্রকাশ করতাম আরকি !

জল বলল ,

– এই সবাই চলো , চলো ! কাল ধরবো এদের । আজ মাফ করলাম ।

এই বলে একে একে সবাই বেষ্ট অব লাক জানিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে ।

আবরন দরজা লক করে পূর্ণতার কাছে এগিয়ে এসে বলল ,

– আমার স্বপ্ন ছিল আমি আমার বিয়ের প্রথম রাতে ব‌উকে নিয়ে আইসক্রিম খাবো । তুমি কি আমার সেই স্বপ্ন পূরন করবে ??

পূর্ণতা হেসে বলল ,

– চ্যালেঞ্জ করছেন ?

– ওই না , স্বপ্ন বলেছি , চ্যালেঞ্জ না ।

পূর্ণতা হাসতে শুরু করলো । আবরন‌ও দুষ্টুমি করে হেসে পূর্ণতা কে জড়িয়ে চেপে ধরে বলল ,

– দরকার নাই আইসক্রিম খাওয়ার । কিস খাওয়ার চ্যালেঞ্জ করি ।

পূর্ণতা হেসে আবরনের বুকে মুখ লুকালো লজ্জা পেয়ে । আজ এদের ভালোবাসা পূর্ণ হতে যাচ্ছে ।

#চলবে ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here