(১)
ঘুম ঘুম তুখোড় ভোর, বাহির থেকে বাজখাঁই গলায় ডেকে উঠলো পুরুষালি সেই কণ্ঠ, যা শুনলে ঘুমন্ত মস্তিষ্ক, ঝিমিয়ে থাকা হৃদপিণ্ড ধড়ফড়িয়ে উঠে। আজও তাই হলো, চেনা পুরুষালি সেই কণ্ঠে জেগে উঠলো স্মৃতি। মিনিট দুই ও অপেক্ষা না করেই ছুটে চলে গেলো নিজেদের পুরাতন, রঙচঙে, বিবর্ণ বাড়ির বারান্দায়। দোতালা থেকে উঠোনের কিনারায় দাঁড়ানো মানুষটাকে খুব স্পষ্ট ভাবেই দেখা যাচ্ছে। মোটা গ্লাসের চশমা, বরাবরের মতনই শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পরিহিতা সেই সুঠামদেহী পুরুষ। এই তুখোড় শীতেও মানুষটা কেমন পাতলা পাঞ্জাবি টা পড়ে চলে এসেছে! ঠাণ্ডা লাগে না বুঝি! স্মৃতির ভাবনার মাঝেই নিচ থেকে তার মায়ের ডাক ভেসে এলো।
“স্মৃতি ও স্মৃতি, উঠেছিস? কদম রে,, ”
“হ্যাঁ, মা। আসছি।”
কথাটা বলতে বলতেই ছুট লাগালো সে স্নানাগারে। নাম তার স্মৃতি হলেও তার ছোটো ভাই এবং আরেকজন বিশেষ মানুষ তাকে কদম বলে ডাকে। মাঝে মাঝে মা-বাবাও ঝোঁকের বশে ডেকে ফেলে। এই নামটা অবশ্য প্রথম দিয়েছিল অণুভ’দা। যে সাদা পাঞ্জাবি পড়ে রোজকারের মতন দাঁড়িয়ে আছেন নিচে। চটপট দাঁত ব্রাশ করে ধুয়ে ফেললো মুখ টুকু। মিনিট পাঁচের মাঝেই হাজির হলো পড়ার ঘরের দরজার সামনে। ঘরের ভেতর থেকে স্মৃতির ভাই জীবনের পড়ার শব্দ এলো। হরদম পড়ছে ছেলেটা। স্মৃতি খানিক জিরিয়ে নিলো, নিজেকে ধাতস্থ করে কোমল কণ্ঠে বললো,
“আসবো অণুভ’দা?”
অণুভ তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে ছিলো জীবনের বইয়ের দিকে। পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া জীবন মাথা দুলাতে দুলাতে বেশ চঞ্চল ভঙ্গিতে পড়ছে তখনও। ভাব এমন যে, সে বই ছেড়ে অন্য কোথাও তাকালে দুনিয়া উল্টে যাবে, হয়তো-বা তৃতীয় বিশ্ব যু/দ্ধটাও লেগে যেতে পারে। কিন্তু স্মৃতির আগমনে দু’জনেরই মনযোগের ভাঁটা পড়লো, এতে বিরক্ত হলো অণুভ, বিরক্ত কণ্ঠে স্মৃতির উদ্দেশ্যে বললো,
“এসেই তো পড়েছিস, আবার জিজ্ঞেস করছিস কেন? তাড়াতাড়ি আয়। পনেরো মিনিট লেট তুই।”
স্মৃতি মাথা নত করে ঘরে প্রবেশ করতে করতে অপরাধী কণ্ঠে বললো,
“এত সকালে কী ঘুম ভাঙে নাকি! এত সকালে কে পড়ে?”
“একটা চ/ড় চিনিস? দ্রুত আয়। এত সকালে কে পড়ে তা দিয়ে তুই কী করবি? আর কেউ পড়ুক না পড়ুক, তুই পড়বি। আয়।”
স্মৃতি আর কোনো কথা বললো না, ধীর পায়ে গিয়ে বসে পড়লো জীবনের পাশের চেয়ারটাতে। বসেই নিজের ভাইয়ের কোমড়ে লাগিয়ে দিলো চি/ম/টি। ব্যাথায় এবং তার চেয়ে বেশি অভিনয়ে ইচ্ছেকৃত চিৎকার করে উঠলো জীবন। ভ্যাবাচেকা খেলো স্মৃতি, সাথে অণুভও। জীবনের এত বড় চিৎকার আশা করে নি স্মৃতি। অণুভ অত্যন্ত রকমের অবাক হয়ে বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“কিরে কিরে? চিৎকার করলি কেন, জীবু?”
জীবন কোনোমতে অতিব পরিশ্রম করে চোখে দু’ফোটা জল এনে অসহায় কণ্ঠে বললো,
“অণুভ’দা, এই কদমের বাচ্চা আমারে চি/ম/টি কেটেছে।”
অণুভ চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো স্মৃতির পানে। কাঠের স্কেলটা দিয়ে সশব্দে তিন চারটে কর্কশ মা°র বসিয়ে দিলো মেয়েটার কোমল পিঠে। বা’হাতে মেয়েটার কান ম/লে দিয়ে বললো,
“বড়ো হবি কবে? দু’দিন পর টেনে উঠবি। তোর বয়সের মেয়েরা একটা সংসার সামলাতে পারে অথচ তুই!”
“বিয়ে দিয়ে দেও, দেখবে আমিও কেমন সংসার সামলাচ্ছি।”
পিঠ ডলতে ডলতে আরও একটা লাগামহীন কথা স্মৃতির। অণুভ’দা স্কেল দিয়ে কাঠের টেবিলটাতে শব্দ করে শাসনের স্বরে বললো,
“কদম, বড়ো হচ্ছিস। শরম লজ্জা আয়ত্তে আন।”
স্মৃতি আর কিছু করলো না তখন। অণুভ’দা বেশি রেগে গেলে তারই বিপদ। তবুও টুকটাক কতই টালবাহানা করলো। মা/রও খেলে অগণিত। এ আর নতুন কী? অণুভ’দা আর স্মৃতির রোজকার সকালের রঙিন গল্প।
(২)
বেশ ভারী, কোমল লাল রাঙা উলের সোয়েটার টা গায়ে জড়িয়ে পিঠ সমান চুল গুলোতে বেণী গেঁথে বেরিয়ে এলো স্মৃতি। উদ্দেশ্য তার স্কুলে যাওয়া। জীবুও স্কুলের ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে ভদ্র মানুষের মতন বেরিয়ে এলো। দুই ভাই-বোন একসাথেই স্কুল যায়। স্মৃতির মা টিভি ছেড়ে বসেছেন বোধহয়। ভদ্রমহিলার কাজই এটা। ভোরে উঠে স্বামী, ছেলে-মেয়ের জন্য গরম গরম ভাত তরকারি রেঁধে তারপর তাদের খাইয়ে অতঃপর টিভি দেখতে বসবেন। তারপর আবার দুপুর বারোটার দিকে উঠে দুপুরের রান্না করবেন। ছোটো পরিবার, ঝামেলাও নেই। স্মৃতি আর জীবুর স্কুল ছুটি হয় তিনটে। আর তাদের অনেক দুষ্টুমি সেড়ে বাসায় আসতে আসতে বাজে চারটে। ততক্ষণে তাদের মায়ের রান্না শেষ হয়ে, খাওয়া দাওয়া করে ভাতঘুম দিতে চলে যায়।
স্মৃতি একবার উঁকি দিয়ে সাবধানী চোখে দেখলো মা কী করে। টিভির দিকে মায়ের সকল মনোযোগ দেখতেই সে স্বস্তির শ্বাস ফেলে। পা টিপে টিপে রান্নাঘরে গিয়ে যত্নের সাথে বেড়ে নেয় এক টিফিন ভর্তি ভাত-তরকারি। সতর্কতার সাথে তা ছোটো একটা শপিং ব্যাগের ভেতর ঢুকিয়ে ব্যাগের ভেতর নিয়ে নেয়। অন্যদিকে জীবু অসহ্য কণ্ঠে বার বার ডেকে যাচ্ছে,
“কদম, ও কদম, আয় রে। কই গেলি রে! কই ম/র/লি রে? ওরে কদমের বাচ্চা, তাড়াতাড়ি আয়৷”
“পটলার বাচ্চা পটলা, দাঁড়া একটু। হা/গু দিচ্ছি, দু মিনিট সময় দে।”
স্মৃতির মিথ্যে কথার পরিবর্তে তৎক্ষনাৎ জীবুর কণ্ঠ ভেসে এলো,
“রান্নাঘরে কবে থেকে তুই ইয়ে করিস রে, কদম? ছিহ্ ছিহ্ ছিহ্, এভাবে মান ইজ্জত খেলি?”
স্মৃতির পিলে চমকে উঠে, ছুটে গিয়ে চেপে ধরে ভাইয়ের মুখ। ততক্ষণে তার মা জয়ার কণ্ঠ ভেসে আসে টিভির রুম থেকে, আগ্রহী কণ্ঠে সে প্রশ্ন করে,
“স্মৃতি, রান্নাঘরে কী করিস তুই? কী অকাজ করিস?”
স্মৃতি আগের ন্যায় জীবুর মুখে হাত দিয়ে কণ্ঠ প্রয়োজনের তুলনায় আরেকটু নরম করে বললো,
“মা, তোমার ছোলার ডাল টা না মারাত্মক হয়েছিল। ওটাই একটু টিফিনবক্সে করে নিয়ে নিলাম। মিতুকে দিবো। ওরে কয়েকবার বলেছিলাম তোমার ডাল অনেক মজা হয়। আর মা, মাছের পেটির যে বড়ো টুকরো টা ছিলো, ওটাও নিয়ে নিয়েছি। টিফিনের সময় খাবো। যা মজা হয়েছে।”
স্মৃতির মিথ্যে কথা ধরতে পারলো না বোধহয় জয়া। কিন্তু প্রশংসায় বেশ আহ্লাদী হয়ে বললো,
“পা/গ/লি মেয়ে আমার।”
কথা শেষ করে আবার টিভির দিকে ধ্যান দিলো জয়া, তা দেখে স্মৃতি স্বস্তির শ্বাস ফেললো। কাকে, কোথায়, কোন কথায় ব°শ করতে হয়, তা স্মৃতির ভালোই জানা আছে। জীবু ততক্ষণে বেশ জোরেসোরে একটা কা° ম°ড় বসিয়ে দিলো স্মৃতির হাতে। কোমড়ে দু’হাত দিয়ে আড়চোখে তাকিয়ে বললো,
“তুই মিথ্যে বলেছিস, কদম! তুই স্কুলে মাছ খাবি? আর তোর ঐ ফুলটুসি বান্ধবী ডাল খাবে? অসম্ভব। এটা বাপের জন্মেও সম্ভব না। শেষমেশ স্কুলটাকে হোটেল বানিয়ে দিবি?”
জীবুর মাথার পেছনে ছোটো চ/ড় মেরে স্মৃতি ধমক দিয়ে বললো,
“এখন তোর স্কুলে দেরী হচ্ছে না? চল দ্রুত।”
অতঃপর দুই-ভাইবোন বেরিয়ে গেলো ব্যস্ত পায়ে।
(৩)
স্কুলে পাশে টং দোকানটাতে বসে গরম গরম চায়ের কাপে শুকনো রুটি ভিজিয়ে মুখে পুরে নিচ্ছে অণুভ। খিদেরা হামাগুড়ি দিচ্ছে পেটে। দুপুর একটা বাজতে চললো, আর কত না খেয়ে থাকবে! মা মারা যাওয়ার পর থেকেই দিনকালের রুটিন বদলে গেছে। সকালের খাবার, দুপুরের খাবার, রাতের খাবার বলতে কিছু নেই তার কাছে। বাঁচার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু খেতে পারলেই যেন তার কাজ শেষ।
রুটির মাঝে দ্বিতীয় কা/ম/ড় টা বসানোর আগেই কেউ ছোঁ মেরে নিয়ে নিলো সেটা। অণুভ বিস্মিত চোখে তাকাতেই দেখলো স্মৃতি স্কুলের পোশাক পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুকনো রুটিরে ভিজে অংশটা মুখে পুরে নিয়েছে। অণুভ নাক-মুখ কুঁচকে বললো,
“আজ বাড়ি থেকে খেয়ে আসিস নি? তাহলে বোস এখানে। আমি তোকে চা, রুটি দিতে বলি।”
স্মৃতি রুটির মাঝে দ্বিতীয় কামড়টা দিতে দিতে বাড়ি থেকে আনা টিফিনবক্সটা এগিয়ে দেয় অণুভ’দার দিকে। নিরুদ্বেগ কণ্ঠে বলে,
“এটা তোমার জন্য, নেও। খেয়ে তারপর বাসায় যাবে। তোমার সাথে যেগুলো থাকে ওরা তো একেকজন খাদক, বাসায় নিলে আর ভাগে পাবে না।”
“তুই খাবার এনেছিস কেন?”
“আমি আনতে যাবো কেন? মা দিয়েছে, অনেক করে বললো নিয়ে যেতে তাই নিয়ে এলাম।”
“আন্টিরে বলবি, এসব যেন আর না করে। যা স্কুল যা। জীবু কই?”
“ঐ তো, পাশের গলিতে ওর বন্ধুর বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, ওর একটা গাইড নাকি ওর বন্ধুর বাসায়।”
“আচ্ছা, সাবধানে যাস।”
স্মৃতি ঘাড় কাঁত করে হেলতে দুলতে চলে গেলো পাশের গলিটাতে। অণুভ দোকানের বিল মিটিয়ে নিজের বাসার দিকে রওনা দিলো। স্মৃতি যতই বলুক, রাস্তায় দাঁড়িয়ে কী আর খাওয়া যায় নাকি! সে ব্যাচেলর থাকে, যার জন্য ভাগাভাগি ব্যাপারটা একটু বেশিই হয় তাদের মধ্যে যা স্মৃতি একটু অপছন্দ করে।
স্মৃতি গলিতে ঢুকতেই দেখে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জীবু। সন্দিহান চোখে তাকিয়ে আছে স্মৃতির দিকে। তা দেখে ক্ষানিক অস্বস্তি অনুভব করলো স্মৃতি, একটু কৃত্রিম হাসি দিয়ে বললো,
“কিরে জীবু, দাঁড়িয়ে আছিস যে? গাইড পেলি।”
“হ্যাঁ পেলাম তো।”
জীবুর উত্তরে স্মৃতি ভাইয়ের হাতের দিকে তাকালো, হাত তখনো খালি ছেলেটার। স্মৃতি অবাক কণ্ঠে বললো,
“কোথায় গাইড? ব্যাগে ভরে নিয়েছিস?”
“না তো, এই যে হাতে। দেখিস না?”
জীবুর প্রশ্নে স্মৃতি জীবুর হাতের দিকে আবার চাইলো। দুই হাতই ফাঁকা ছেলেটার। তবে কী স্মৃতি চোখ কম দেখছে আজকাল! প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে যখন ভাইয়ের পানে তাকালো স্মৃতি, দেখে ছেলেটা মিটমিটিয়ে হাসছে। হাসি দেখেই বুঝে ফেললো যা বোঝার। অতঃপর রেগে চুল টেনে ধরলো জীবুর, ধমকে বললো,
“বড়ো বোনের সাথে টিটকারি করিস? একে তো নাম ধরে ডাকিস, তার উপর ঠাট্টা করিস? এই কোথায় তোর গাইড? হাত তো খালি।”
“যেমন করে তুই আর তোর বান্ধবী মিলে কল্পনায় ছোলার ডাল আর মাছ খেয়েছিস, তেমন করে আমি আমার বন্ধুর থেকে গাইড নিয়েছি।”
ভাইয়ের উত্তরে সাথে সাথে চুল ছেড়ে দিলো স্মৃতি। ছেলেটা যে অত্যন্ত চালাকা তা তো সে জানেই। কী সুন্দর ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বুঝিয়ে দিলো সবটা। স্মৃতি বোকা বোকা হেসে বললো,
“মাকে বলিস না জীবু। জানিসই তো অণুভ’দা খাওয়া দাওয়া তেমন করে না। তাই নিয়ে এসে ছিলাম।”
“আচ্ছা, ভালো করেছিস। এবার স্কুলে চল।”
বেশ জ্ঞানীদের মতন বলেই স্কুলের দিকে হাঁটা ধরলো জীবু। স্মৃতি স্বস্তির শ্বাস ফেলে ভাইয়ের পিছে পিছে ছুট লাগালো। ছেলেটা ছোটো হলেও বুদ্ধির দিকে অনেক বড়ো।
(৪)
শীতের আকাশে কোমল বিকেল। এবার নভেম্বরেই শীত পড়ে গেছে অনেক। বিকেল চারটেতেই যেন সন্ধ্যা সন্ধ্যা ভাব। স্মৃতি আর জীবু স্কুল থেকে বেরিয়ে ফুটপাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে। নিভু নিভু সূর্যের আবরণ ছুঁয়ে দিচ্ছে তাদের। ফুটপাতের কিনারায় একটা বড়ো দোকানের দিকে তাকাতেই স্মৃতির পা থেমে গেলো। কালো রঙের একটা জ্যাকেটে তার চোখ আটকে গেলো নিমিষেই। বোনকে থেমে যেতে দেখে থেমে গেলো জীবুও। বিরক্ত কণ্ঠে বললো,
“কিরে কদম! থামলি কেন?”
“জ্যাকেট টা অনেক সুন্দর না, পটলা?”
“হ্যাঁ সুন্দর। কেন? কিনবি নাকি?”
ভাইয়ের প্রশ্নে একবার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে সে ভাইয়ের হাতটা ধরে রাস্তা পাড় হলো। ঢুকে পড়লো দোকানটার ভেতর। হলুদ নিয়ন আলোয় পোশাকটা আরও সুন্দর লাগছে। স্মৃতি একটু ছুঁয়ে দেখলো সেটা। অতঃপর উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বললো,
“জীবু, সুন্দর না বল?”
“হ্যাঁ, সুন্দর। কিন্তু তুই এটা কার জন্য কিনবি?”
“আছে একজন। দাঁড়া দেখি দাম কেমন।”
ভাইয়ের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দোকানদারের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো স্মৃতি। উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বললো,
“প্রাইস কত এটার?”
“ওয়ান থাউজ্যান্ড, মেম।”
দাম শুনতেই স্মৃতির হাসি হাসি মুখটা চুপসে গেলো। সাথে সাথে জ্যাকেট টা থেকে হাত সরিয়ে নিলো সে। মুখটা ছোটো করে বললো,
“একটু কমানো যাবে না?”
“ফিক্সড প্রাইস, মেম।”
স্মৃতির মন খারাপ হয়ে এলো। বাবার কাছে চাইলে এমন হাজার টাকা কোনো ব্যপার না কিন্তু সে তো চেয়েছিল নিজের টাকায় কিনতে অথচ তার কাছে সাতশ টাকা জমেছে মাত্র।
জীবু বোনের মন খারাপ বুঝলো, তাই তো ফিসফিস করে বললো,
“কিরে, কী ভাবছিস?”
“না রে কিছু না। চল চলে যাই। এটা তেমন সুন্দর না।”
জীবু হাসলো, বিজ্ঞদের মতন করে বললো,
“তোর কাছে আছে কত?”
স্মৃতি মন খারাপ করে বললো, “মাত্র সাতশ। চল, চলে যাই।”
জীবু তার ব্যাগের ভেতর ছোটো আরেকটা ব্যাগ থেকে একশ টাকার চকচকে তিনটে নোট বের করে এগিয়ে দিলো বোনের দিকে। বড়োদের মতন করে বললো,
“বোনের মন খারাপ আমার ভালো লাগে না। যতই হোক, আমি তো ভাই। আর পৃথিবীর সব ভাইদের উচিৎ বোনের ইচ্ছে পূরণ করা। সব সুখ এনে দিবো আমি তোরে, কদম।”
স্মৃতি ভাইয়ের হাতে টাকা আর মুখে এমন স্বচ্ছ বুলিতে প্রায় কেঁদে দিবে ভাব। কম্পিত কণ্ঠে বললো,
“টাকা পেলি কোথায়?”
“জমিয়ে ছিলাম। সাড়ে তিনশো হলো। নে ধর, তিনশো তুই নে, আর বাকি পঞ্চাশ দিয়ে আমরা আইসক্রিম খাবো কেমন? শীতকালে আইসক্রিম মজা।”
স্মৃতি আনন্দিত মনে কিনে নিলো জ্যাকেট টা। অতঃপর জীবু তার কথা অনুযায়ী আইসক্রিম কিনে দিলো বোনকে। স্মৃতির শীতকালে আইসক্রিম বেশ পছন্দ তা যে ছোটো জীবু জানে। স্মৃতি আনন্দে আত্মহারা। ভাইটা তাকে খেপালেও অনেক ভালোবাসে। ভাই জাতির স্বভাবই যেন এমন। শক্ত আবরণে কোমল কেউ।
জীবু আইসক্রিমের মাঝে ছোটো কা/ম/ড় বসিয়ে বললো,
“কার জন্য নিলি রে, কদম?”
স্মৃতি উত্তর দেয় না। কেবল মিষ্টি হাসে। জীবু ভাবুক স্বরে বলে,
“অণুভ’দাকে অত যে ভালোবাসিস, সে বুঝবে তো?”
#চলবে
(সূচনা পর্ব)
#ভুলিয়া_না_যাইও
#মম_সাহা
[