ভ্রান্তির অগোচরে পর্ব ২৩

#ভ্রান্তির_অগোচরে
লেখা আশিকা জামান
পার্ট ২৩

নুরীর সামনে যেতে সবুজের বাড়াবাড়িরকমের লজ্জা লাগছে। মেয়েটা ফাক পেলেই ওকে দেখে মুখ টিপে হাসছে। হাসো হাসো সবাই হাসো। অবস্থা বেগতিক হলে উপহাস করতে আর কেউ বাদ যায়না। সব ঐ তুলার বস্তার জন্যে। সারা রাত আমাকে জ্বালিয়ে কি সুন্দর মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে শুয়ে ছিলো। যেন সারা রাত তার মা জেগে জেগে সেবা করেছিলো।
তারউপর নবাব নন্দিনী এতোক্ষণ রুমে ঢুকে কি করছে কে জানে? খুব করে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও নুরীর জন্য যেতে পারছিলোনা। সবুজ ঘরের বাহিরে একটু উকি দেয় নুরী ইবতিহাজকে নিয়ে কোথায় যেন বেরিয়ে গেলো । যাকগে ভালোই হয়েছে। সবুজ লম্বা লম্বা পা ফেলে পাশের রুমে ঢুকে। মিম ড্রেসিংটেবিলের সামনে চুল আচড়াতেছিলো । মিম কোনকিছু বোঝার আগেই সবুজ খপ করে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে। চুলের ভেতর নাক ডুবিয়ে কিছুক্ষণ বুদ হয়ে থাকলো। আস্তে আস্তে হাতটা ঘুরিয়ে পেটের সুক্ষ্মভাজে আলতো করে ছোঁয়া দিতে থাকে। মিম চিংড়ি মাছের মত লাফিয়ে উঠে সবুজের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।
” কি হচ্ছে কি? আমি রেডি হচ্ছিলাম আপনি দেখতে পাচ্ছেন না?”
মিম রগচটা হয়ে সবুজের দিকে তাকায়।
” হুম পাচ্ছিতো। রোমে আগুন লাগিয়ে সম্রাট নিরো বাঁশী বাজাচ্ছে? ব্যাপারটা তেমন হয়ে গেলনা।”
সবুজ শান্ত দৃষ্টিতে মিমের দিকে তাকায়। তারপর মিনমিন করে বলে উঠে।

” দেখুন কিসের রোম, কিসের নিরু। থামুন আমার আজকে এক্সাম ডিউটি আছে স্কুলে যেতে হবে, সামনে থেকে সরুন।”
মিম সবুজকে সরিয়ে দিতে দিতে কথাগুলো বললো।

” না তোমার আর কোন স্কুলে যাবার প্রয়োজন নাই। ”
সবুজ আরো কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু এটুকু বলতেই মিম অগ্নিগরম চোখে সবুজের দিকে তাকায়।

” আচ্ছা যাও।”
মিমকে এখনই এতো প্রেসার দেয়া যাবেনা। যা করতে হবে আস্তে আস্তে ঠান্ডা মাথায়। তাই এ বিষয়ে আর কথা বাড়ালোনা সবুজ।
শুধু যাওয়ার সময় একবার বললো,
” আমি এই ডিজাইনার পোষাক পড়ে কতোক্ষন থাকবো।”

” নাসিরকে ফোন করে বলুন আপনার কাপড় নিয়াসতে। তারপর জামা কাপড় পড়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যান।”
মিম সবুজের উত্তরের অপেক্ষা না করে হনহন করে বেরিয়ে গেলো
আমি নাসিরকে ফোন করি আর আজকে আবার ৪০০০টাকা গচ্ছা খাই…
নিজের মনে নিজেই বিড়বিড়িয়ে উঠলো।

শিউলি চৌধুরীর মেজাজ চরম খারাপ। নাসিরের বাচ্চাকে এত প্রশ্ন করা সত্বেও ওর পেট থেকে কিচ্ছু বের করা যাচ্ছেনা। ঘোর সন্দেহ হচ্ছে নাসির আর সবুজ দুইজন মিলেই কোন একটা গুপ্ত কাজে নেমেছে। এখনতো আবার এই নায়রা টায়রা নামের মেয়েকেও সন্দেহ হচ্ছে। এই মেয়ের বাসার কথা বলে বেরিয়ে গেলো। আবার মেয়ে বলে ওর বাসায় আসেইনি। উফ্ পুরো ব্যাপারটাই ধোঁয়াটে। নাহ্ ছেলেটা আর ইহজন্মে ওকে শান্তি দিবেনা।

নায়রার মন খুব খারাপ। এক হলো এই বাসায় নুরী নামের কাজের মেয়েটার যখনতখন আসা! সুযোগ পেলেই বাচ্চার ভ্যা ভ্যা চিৎকার। সাথে ভাইয়া আর মায়ের আদিখ্যেতা উফ্ অসহ্যকর। কথা সেটা না কথা হলো, ও আজকে এই বাচ্চার ব্যাপারে কয়েকটা নেগেটিভ কথাই বলেছিলো। তাতে মিঃ নিয়াজ ক্ষেপে গিয়ে তাকে যা নয় তাই শুনিয়েছে। ভাবা যায়! কার না কার বাচ্চার জন্য ও এতগুলো কথা শুনলো। আর নিয়াজের বিহেভিয়ার দেখে যে কারো মনে হবে বাচ্চাটা ওরই। নাহ্ ওর মাকে তো দেখতেই হচ্ছে। সফট কর্ণারটা কি বাচ্চার প্রতি নাকি মায়ের প্রতি এটা আগে খুঁজে বের করতে হবে।
আর সবচেয়ে মর্মান্তিক খবরটা হচ্ছে ওর ট্রাম্প কার্ড সবুজের ফোন সুইচড অফ আর সে বরাবরের মত আবার নিখোঁজ। ইশ্ কিচ্ছু ভালো লাগছেনা।

সবুজ সোফায় বসে বাচ্চার সাথে বেশ মজা নিয়ে খেলছিলো। বাচ্চাটার পেটে সুড়সুড়ি দিতেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে। উফ্ হাসিটা সেই।
” এতো হাসিস নারে বাপ। মেয়েরাতো বাসার সামনে লাইন লাগাবে।”
বাচ্চাটা কি বুঝলো কে জানে আবার খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।
কলিং বেল বাজতেই বাপ ছেলে চঞ্চল হয়ে উঠলো।
সবুজ ছেলে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।
নুরী এসে দরজা খুলে দিলো। মিম কয়েকটা শপিং ব্যাগ হাতে ঘরে ঢুকে।
সবুজ অতিউৎসাহে ইবতিহাজকে মায়ের কোলে দিতে যায়।
” আমার হাতে জীবাণু। মাত্র বাইরে থেকে আসলাম। কবে আক্কেল হবে আপনার?”
মিম একরাশ বিরক্ত নিয়ে প্যাকেটগুলো সেন্টার টেবিলের উপর রাখে।
সবুজ বাচ্চাটাকে নুরীর কোলে দিয়ে দেয়।
“যেদিন বউ একটু আদর করতে দিবে সেদিন মনে হয় একটু আক্কেল হলেও হতে পারে?”
নুরী জিভে কামড় দিয়ে ওখান থেকে সরে পড়ে।
মিম কপালে হাত দিয়ে ধপ করে সোফায় বসে পড়ে। মানুষটাকে ওর চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে হচ্ছে।
” আচ্ছা তোমার কি মাথা ব্যাথা করছে। টিপে দেব?”

” এই না। একদম না । এরকম বেহায়া নিলজ্জ কবে থেকে হয়েছেন?”
দাতে দাত চেপে মিম কথাটা বললো।
সবুজ দুই হাত দিয়ে মিমকে ঝাপটে ধরলো।
খালি গায়ে মিমকে জড়িয়ে ধরায় ওর বড্ড অস্বস্তি হতে লাগলো।
” বিশ্বাস করো কালকে থেকে তোমাকে দেখে আমার লজ্জা শরম সব উবে গেছে। খালি তোমার কাছে যেতে মন চায়। আল্লাহর কসম কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিনা। ইশ এতোদিন তোমাকে ছাড়া আমি ছিলাম কি করে?
প্লিজ এইবার আমাকে একটু শান্ত করো লক্ষীটি। ”
কথাটা শেষ হতেই মিম সজোরে একটা ধাক্কা দিয়ে সবুজকে সরিয়ে দেয়।
” আপনি আমার চোখের সামনে থেকে যান বলছি। মেজাজ খারাপ হচ্ছে।”
মিম ধমক দিয়ে বলে উঠে।

” যাও তোমার থেকে দূরে সরে বসছি। কিন্তু চোখের সামনে থেকে যেতে পারবো না।”
সবুজ ভেজা বেড়ালের মত বলে উঠলো।

” এখানে আপনার কিছু জামাকাপড় আছে। যান পরে আসুন। আর নেক্সট টাইম আমার সামনে খালি গায়ে আসবেন না।”

” ওহ মা সত্যিই। লক্ষি বউ আমার।”
সবুজ ঠোট উচিঁয়ে বেশ শব্দ করে মিমের গালে চুমো খায়।
মিম অগ্নিচোখে সবুজের দিক্র তাকায়।
” আচ্ছা এতো রাগতে হবেনা। শুধু গালেই দিয়েছি অন্যকোথাও না। এইরকম প্লে লেভেলের চুমো খেয়ে কেউ এভাবে রাগতে পারে আমার জানা ছিলোনা”
মিম ধপ করে সোফা থেকে উঠে পড়ে।
” আপনি অসহ্যরকমের গায়ে পড়া সাথে সীমাহীন নির্লজ্জ। কানাডা থেকে কি এইগুলাই শিখে আসছেন।”

” হ্যা আরো অনেককিছুই শিখেছি কিন্তু আফসোস ওইগুলা এপ্লাই করার সময়ই পাচ্ছিনা। ইশ কখন যে আসবে সেই শুভক্ষণ। ”
সবুজ হাত উঁচিয়ে মিমকে ধরতে গেলে মিম এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।
সবুজের দিনটা বেশ ভালোই কাটতে লাগলো। অবশ্য ভালো হওয়ারই কথা বউ সাথে ওর কার্বন কপি তুলার বস্তা! উফ্ কানাডা থেকে ফিরেই এমন একটা চমক পাবে এটা বোধ হয় ও ভাবেনি।
মিম বেশ কিছুক্ষণ আগেই বাবুকে ঘুম পাড়াতে গেছে। এতোক্ষনে বোধ হয় ঘুমিয়েও গেছে। এই সুযোগ!

মিমের বিশ্বাস নেই কখন আবার দরজাটা ভিতর থেকে লক করে দেয়। কালকে যে অবস্থা করেছে এটা ভাবলেই ওর গলা শুকিয়ে আসতে লাগলো।
সবুজ পা টিপেটিপে রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিয়ে বিজয়ীর হাসি হাসতে লাগলো। মিমের চোখটা একটু লেগে এসেছিলো। দরজা লক করার শব্দে এক লাফে বিছানা থেকে নেমে পড়ে । সবুজের দুষ্টু মার্কা হাসিতে মিম দুই কদম পিছিয়ে যায়। কলিজাটা মুহুর্তেই ঢক করে উঠলো। অসভ্যটা ওর সাথে একি বিছানায় ঘুমোবে? প্রশ্নটা মাথায় আসতেই ও ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেলো। ওর প্রচণ্ড আনইজি লাগতে লাগলো। বিয়ে হলেও সবুজের সাথে বেড শেয়ারে ও অভ্যস্ত নয়। নাহ্ এ হতেই পারেনা।
তাছাড়া এতোকিছুর পর ওর সাথে রাত্রিযাপন করা অসম্ভব।
” আপনি এ ঘরে কেন?পাশে আরেকটা রুম আছে প্লিজ ওখান ঘুমোন।”

” ঠিক আছে তুমিও চলো। একা একা আর কত? অনেকতো হলো এবার না হয় নিজের অধিকারটা একটু খাটাই।”
সবুজ এসে দুম করে মিমের কোমড় জড়িয়ে ধরে।
” এই ছাড়ুন, কিসের অধিকার। কোন অধিকার নাই। আমার উপর আপনার কোন অধিকার নাই। ছাড়ুন।”

” সে আমি বুঝে নিবো আছে কি না আছে। তোমার আপাতত না বুঝলেও চলবে।”

” দেখুন ছাড়ুন। ভালো হবেনা বলে দিলাম। আমার খুব রাগ হচ্ছে কিন্ত।”

” যত রাগ ততো ভালোবাসা। একটু পরতো তুমি নিজেই আমাকে ছাড়তে চাইবে না। অযথা এই অধম বান্দারে এত কষ্ট দিতেছো কেন বলোতো। ইশ আরতো সহ্য হয়না। বুঝোনা কেন? বাচ্চাদের মতো করো কেন?”
মিমের হৃদয়খানি ক্ষতবিক্ষত হতে লাগলো। নিজের ইগো আর সবুজের সহজাত ভালোবাসার মাঝখানে পড়ে মিম আহত পাখির মত তড়পাতে লাগলো।
মিম পলকহীনভাবে এক জোড়া নির্লিপ্ত চোখের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ পরেই চোখ বুঝে ফেললো। বুকের ভেতরটায় কেউ হাতুড়ী দিয়ে অনর্গল পেটাতে লাগলো। দু চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু জল জমা হতে লাগলো
সবুজ দ্বিগবিদিক শুন্য হিয়ে মিমের ঠোট দুটো নিজের দখলে নিয়ে নেয়। বেশ কিছুক্ষণ পর সবুজ ওকে ছেড়ে দেয়।
” এই তুমি কি কাঁদছো। কেমন যেন চুমোটা কান্না কান্না লাগছে । উফ্ একটুও মজা নাই।”
মিম হতবাক হয়ে সবুজের দিকে তাকায়। ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। সবুজ আরো শক্ত করে ঝাপটে ধরে মিমকে বিছানায় ফেলে দেয়।
” ছাড়ুন। অসভ্য একটা । আপনার মুখে কিছু আটকায় না। নাহ্। আপনি যানতো। আমাকে একটু শান্তি দিন।”
সবুজের দুষ্টু হাসিতে আবার ঘরের সমস্ত কোণ আলোড়িত হতে লাগলো।
” আচ্ছা বলোনা ওইদিন তোমার কেমন ফিলিংস হয়েছিলো।”
” কোনদিন?”
” ওই যে ওইদিন। আমিতো মাতাল হয়ে তোমার উপর… ”
এটুকু বলতেই মিম সবুজের মুখ ছাপিয়ে ধরলো।

” উফ্ এভাবে রাক্ষসীর মত মুখ ছাপিয়ে ধরলেতো মরে যাব। এমনিতেও আধমরা হয়ে আছি।”
মিম মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে নিলে সবুজ আবার মুখটা নিজের দিকে নিয়ে নেয়।
” সেদিন কি করছিলাম কে জানে। কিচ্ছু মনে নাই। পুরা মাতাল ভালোবাসা । তবে আজকে হবে…।”
মিম ভয় পেয়ে সবুজের দিকে তাকায়।
” এই নাহ্। কিচ্ছু হবে না সরুন বলছি।”
মিম নিচে পড়ে তড়পাতে লাগলো ওর নাড়াচাড়া বন্ধ করার জন্য সবুজ আরো গাড় চুমোতে মিমের দুঠোট দখল করে নিলো।
কিছুক্ষণ পর মিমের নিঃশ্বাস গাড় হয়ে আসলে সবুজ মিমের মাঝে দ্বিতীয়বারের মত স্বইচ্ছায় স্বজ্ঞানে হারাতে লাগলো।
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here