#ভ্রান্তির_অগোচরে
লেখা আশিকা জামান
পার্ট ২৯
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে চাতক পাখির ন্যায় হন্যে হয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে কোন সদুত্তর নিয়াজ খুঁজে পায়না। ওর মাথাটা নায়রা একরকম কেটেকুটে নিজের মত করে দিয়েছে। নাহলে নায়রার কথাটা ওর হৃদয়ে কেন তোলপাড় করে দিবে। নিয়াজের এই মুহুর্তে নিজেকে বড্ড অচেনা মনে হচ্ছে। শুধু শুধু নায়রার কথা গায়ে মাখার মত মানুষতো নিয়াজ নয়। তাহলে কি মিমের প্রতি গোপণ অনুভূতিতাকি এতোদিন সুপ্ত ছিলো? নায়রার উস্কানিতে হৃদয়পটের সুপ্ত বাসনা প্রকাশ হওয়ার ব্যাকুলতায় আকুপাকু করতে থাকল।
উফ্ নিয়াজ প্রচণ্ড ঘামতে লাগলো। নাহ্ ও আর কিছু ভাবতে পারছেনা। শুধু মনে হচ্ছে ইবতিহাজ আর মিম ওর পাশে থাকলে নেহাৎ মন্দ হয়না।
————————————
দু’দিন জ্বরের ঘোরে থেকে খাওয়ার রুচি একদম চলে গেছে। খাবার দেখলেই গা গুলোয়। বেশ কয়েকবার বমিও হয়েছে। তবে এখন আগের থেকে একটু সুস্থ বলা চলে।
শরীর একটু ভালোর দিকে যেতেই ইবতিহাজ আর মিমের কথা খুব মনে পড়তে লাগলো। কি করছে কে জানে?
রাগ করে চলে এসেছে বলে কি একটিবার ফোন করা যেত না? এতো ইগো নিয়ে কি করে থাকে কে জানে। ওরতো একমুহর্তও কাটছেনা!
সবুজের ফোনের রিংটোন বেজেই চলেছে। ও একটা দ্বিধায় পড়ে গেছে ফোনটা ধরবে কি ধরবেনা? নায়রা মেয়েটার ন্যাকামো গুলো বরাবরের মতই অসহ্য লাগে। একটা মানুষ এতোটা গায়ে পড়া কি করে হতে পারে কে জানে? অসুস্থ শোনার পর থেকে এই ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন করে খবর নেয়াটা ওর কাছে একরকম বাড়াবাড়িই মনে হচ্ছে।উফ্ কেন যে ওর ফোন ধরে মা বলেছিল অসুস্থ হওয়ার কথাটা! এখন বসে বসে ওর ন্যাকামিগুলা চুপচাপ গিলতে হবে।
” হ্যালো, সবুজ! এখন কেমন আছো?’.?.
” এক ঘন্টা আগে যেমন ছিলাম এখনো তেমনি আছি।”
” ওহ তাহলে তো এখন একটু ভালোর দিকে। তোমাকে তাহলে কথাটা এখন বলাই যায়।”
” কোন কথা? বরাবরের মত হুটহাট বলে দিলেইতো পারো এত ভণিতা করারতো কিছু নাই।”
” দেখ ঠিক ভণিতা না আমি জাস্ট হেজিটেট করছি এতবড় একটা সত্যি কি করে জানাবো? কোন মুখে জানাবো বুঝতে পারছিনা?”
” বুঝা লাগবেনা যা বলতে চাও ক্লিয়ার করে বলো?”
” তোমার ওয়াইফ তোমার বাসায় কেন যাচ্ছেনা এই কথাটা একবারো তোমার মাথায় আসেনি?”
” ওটা আমার পারসোনাল ম্যটার তোমার নাক না গলালেও চলবে।”
” হ্যা আমার বিন্দুপরিমাণ ইচ্ছে ছিলোনা যদি আমার ভাই এখানে জড়িত না থাকতো। এটা এখন আর তোমার পারসোলাম ম্যটারের মধ্যে পড়েনা।”
” হুয়াট? তোমার ভাই মানে বুঝলাম না।”
” হ্যা মিম আর আমার ভাই নিয়াজ একটা রিলেশনশিপে আছে।”
” হুয়াট কিসের রিলেশনশিপ?”
” এটাও কি বুঝতেছোনা। এতোদিন তোমার বউ কি একা একা থেকেছে? এটা কি পসিবল? এক্সট্রা ম্যারিচুয়াল অ্যাফেয়ার বুঝো!”
সবুজ নায়রাকে ধমকে চুপ করিয়ে দেয়।
” জাস্ট, সেট আপ, আমার ওয়াইফ সম্পর্কে আর একটা বাজে কথা আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাইনা। কি করে ভাবলে তুমি আমি তোমাকে বিশ্বাস করবো?”
” বিশ্বাস করতে হবেনা আজ বিকেলে একবার এসো। প্রমাণ নিজেই পাবে?
আসার আগে আমাকে একবার কষ্ট করে ফোন করো কেমন!”
সবুজের মাথা হ্যাং হয়ে গেছে। ওর সাথেই বারবার কেন এমন হয়। বাকী সবারমত স্বাভাবিক লাইফ লিড করা বোধ হয় স্বপ্নই থেকে যাবে।?
————————————
মাগরিবের আযান দিয়ে দিচ্ছে তারপরো ইবতিহাজকে দিয়ে যাওয়ার নাম নেই। মিমের মেজাজ খুব খারাপ হচ্ছে। এখনো কি ছাদেই আছে নাকি কে জানে। বাহিরে বাতাস বইছে এরকম অবস্থায় বাচ্চাটাকে নিয়ে ছাদে কি করছে কে জানে?
মিমের এই মুহুর্তে ছাদে না গেলেই নয়। যাই হোক কোন বেঅাক্কেল, ননসেন্স মেয়ের কাছে ছেলে ছাড়ার কোন মানেই হয়না।
মিম গুটিগুটি পায়ে ছাদে গিয়ে দাঁড়ায়।
ছাদের রেলিঙ ধরে ইবতিহাজকে কোলে করে নিয়াজকে দেখা যায়।
কিন্তু নায়রা মেয়েটা লাপাত্তা
মিম সজোরে অনেকটা কেড়ে নেয়ার মত করে ইবতিহাজকে নিয়ে নেয়।
নিয়াজ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে মিমের দিকে তাকায়। তারপর আস্তে করে বলে উঠে,
” কোন সমস্যা? মিম কিছু কি হয়েছে? ”
” এইভাবে ভরাসন্ধ্যেবেলায় বাচ্চাদের বাহিরে রাখতে হয়না আপনি জানতেন না। ভালোমন্দ যদি কিছু হয়ে যায় তখন।”
” আচ্ছা মিম আমার যায়গায় ইবতিহাজের বাবা থাকলে কি তুমি সেইম কাজটাই করতে? পারতে এইভাবে ওকে কেড়ে নিয়ে যেতে?”
মিমের চোয়াল শক্ত হয়ে।
” দেখুন এখানে ওর বাবার প্রসঙ্গ কেন আসছে বুঝলাম না। তাছাড়া নিয়ম সবার জন্যই প্রযোজ্য সে যেই হোকনা কেন?”
” ইবতিহাজকে ছাড়া আমার দমবন্ধ লাগে। ইচ্ছে করে সমস্ত নিয়মনীতির উর্ধে গিয়ে যদি নিজেকে ওর বাবা হিসেবে পরিচয় দিতে পারতাম?”
মিম স্তব্ধ হয়ে যায় নিয়াজের কথা শুনে। এইসব কি আবুলতাবুল বলছে মানুষটা। ওর কি রিএক্ট করে উচিৎ?
মিম আর একমুহুর্ত ও দাঁড়ানোর প্রয়োজন মনে করলোনা। চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই নিয়াজ হ্যাংলার মত ওর হাত ধরে ফেলে।
” আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যেখানে খুশি সেখানে যাও। আমি তোমার সুখ দুঃখের সাথি হতে চাই, এটা কি আমার অপরাধ? আমি তোমাকে একটা নিরাপদ আশ্রয় দিতে চাই এটা কি আমার অপরাধ? নাকি আমি তোমার অযোগ্য? প্লিজ ইবতিহাজকে আমার থেকে কেড়ে নিয়ো না।”
মিমের দম বন্ধ লাগছে। শরীর চলছেনা। চারপাশ অন্ধকার লাগছে। কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই, কোন কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ হতেই মিম পেছনে চমকে তাকায়।
অদূরে ছায়ামূর্তির মত খোলা চুল উড়িয়ে নায়রা দাঁড়িয়ে। তার পাশেই ফোন নিচ থেকে তুলে নিয়ে স্বমহিমায় সবুজ দাঁড়িয়ে।
মিম নিয়াজের থেকে হাত ছাড়িতে দ্রুত সবুজের দিকে যেতে থাকলে, সবুজ কথা না বাড়িয়ে পা চালিয়ে সিড়ি বাইতে থাকে।
নিয়াজ ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে থাকে মিমের পথের পানে। নায়রার পাশে ছেলেটি কে? আর মিমই বা কেন হন্তদন্ত হয়ে ছেলেটার দিকে ছুটে গেলো।
সবুজ সোফায় দপ করে বসে পড়লো। এমনিতেই অসুস্থ শরীর তারউপর মেজাজ তুঙ্গে। ইচ্ছে হচ্ছে গুটা দুনিয়া তছনছ করে দিতে পারলে নইতো নিজেকে গুলি করে মারতে পারলে বোধ হয় শান্তি পেত।
মিম উদ্ভান্তের মত ঘরে ঢুকে ইবতিহাজকে সোফায় বসিয়ে নিজে সবুজের বুকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
ও এতোটাই বিকারগ্রস্ত ছিলো যে ফ্ল্যাটের মেইন দরজাটাও বন্ধ করতে ভুলে গেলো।
মিম ভেবেছিলো সবুজ বোধ হয় ওকে ছাড়িয়ে দিয়ে মেজাজ দেখাবে কিন্তু না সবুজ যথেষ্ট স্বাভাবিক থাকলো। কিন্তু মিমের কান্না থামানোর কোন চেষ্টাও করলোনা। কাঁদুক মেয়েটা মন খুলে কাদুক। কত সময় পার হয়ে গেলো কে জানে? মিম সবুজের টিশার্ট নাকের জলে চোখের জলে একাকার করে শান্ত হয়ে সবুজের বুকের কাছটা খামচে ধরে পড়ে থাকলো।
সবুজের ইচ্ছে করছেনা এই মুহুর্তে কোন কথা বলে অনুভূতিটা নষ্ট করতে। চুপচাপ নীরব ভালোবাসা চলতে থাকলো হৃদয়জুড়ে।
চলবে…
নেক্সট পর্বে কি হতে চলেছে এনি আইডিয়া???😁😁