#ভয়ংকর_প্রণয়
Part_11
লেখনীতে_#Nusrat_Hossain
প্রকৃতি কত সুন্দর , কত স্নিগ্ধ , কত মনোরম নাফিয়া এত সুন্দর জায়গায় না আসলে জানতে পারতনা ।চারপাশে কত লোকজন ।এত লোকজনের ভীরে ভয়হীন মন নিয়ে আগে কখনো থাকেনি নাফিয়া ।এই প্রথম এত লোকজনের ভীরে থাকা সত্ত্বেও কোনো ভয় কাজ করছেনা তার ।কারন এখন সে আজম খাঁনের বন্দি কারাগার থেকে মুক্ত , সে স্বাধীন ।আজম খাঁন !আজম খাঁনের কথা ভাবতেই নাফিয়ার চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল ।তার মা , বোনের হত্যাকারী ঐ পাষন্ড লোকটা ।নাফিয়ার গাল বেয়ে দুফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল ।ঠোট কামড়ে নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা করল ।নিজের পেছনে কারো অস্তিত্ব টের পেতেই নাফিয়া চোখজোড়া মুছে নিল ।পেছনে ফিরে তাকায় নাফিয়া ।স্পর্শকে দেখে খানিকটা চমকায় সে ।তার গালজোড়া লাল হয়ে যায় তখনকার কথা মনে করে ।স্পর্শের দেওয়া কাঠগোলাপ এখনো তার কানে গুজে আছে ।স্পর্শ শান্তগলায় বলে
এত মনোরম পরিবেশে থাকা সত্ত্বেও তুমি কাঁদছো কেন ?তোমার কি কান্না করার রোগ আছে ?
নাফিয়া থতমত খেয়ে গেল স্পর্শের কথায় ।সে ভাবে স্পর্শ দেখে ফেলেছে তাকে কাঁদতে ।ইশশশ !কি ভাববে এখন ছেলেটা ?সে নিজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে এমন ভাব করল যেন তার চোখে কিছু পরেছে ।সে আমতা আমতা করে বলল
আ্ কি যেন পরেছে চোখে ।তাই চোখে পানি এসে গেছে ।
স্পর্শ ঠিক বুজতে পারল নাফিয়া মিথ্যা বলছে তাকে ।সে স্পষ্ট দেখেছে নাফিয়া কাঁদছিল তখন ।সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে
এখন ঠিক আছো ?
নাফিয়া অস্ফুট গলায় বলল জ্বি ঠিক আছি ।
স্পর্শ বিমোহিত গলায় বলে চারপাশটা কত সুন্দর না ?
স্পর্শের কথায় নাফিয়া চারপাশে তাকাল ।চারদিকে পানি আর পানি । আর এখন তারা রিসোর্টে পুকুরের মাঝখানে খোলামেলা কটেজে দাঁড়িয়ে আছে ।তার চারদিকে যাতায়াত করার জন্য ছোট ব্রিজ বানানো হয়েছে ।এই জায়গাটা বেশ ভালো লেগেছে নাফিয়ার ।
নাফিয়া স্পর্শের কথার প্রত্যুত্তরে বলে খুব সুন্দর ।নাফিয়া এদিক সেদিক তাকিয়ে বলে আচ্ছা ওরা সবাই কই ?ওদের কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা যে ?
স্পর্শ বলে সামনেই ঘুরছে ওরা ।চিন্তা করোনা তোমায় রেখে কেউ চলে যাবেনা ।
নাফিয়া ভ্রু কুঁচকাল ।স্পর্শ বলল
এখন আমাদের যাওয়া উচিত ।
স্পর্শ আর নাফিয়া ব্রিজ পার হয়ে ওদের কাছে গেল ।
রিয়া নাফিয়াকে দেখে চাপাস্বরে বলল কোথায় ছিলি ?তোকে খুঁজছিলাম ।
নাফিয়া চাপাস্বরে বলল আপু পুকুরের দিকে গিয়েছিলাম ।ঐ দিকটা খুব সুন্দর তো তাই ।
আরদিন বলে উঠে সুইমিংপুলে নামবিনা তোরা ?
আয়ান বলল তা আর বলতে !এক্ষুণি নামবো ।
ইমাম বলল তাহলে আর দেরি কেন ? সুইমিংপুলের দিকটায় যাই ।
রিয়া মন খারাপ করে বলল ভাইয়া তুই বললি না কেন সুইমিংপুলে নামবি তোরা ? তাহলে সাথে করে জামাকাপড় নিয়ে আসতাম ।
আরদিন বিরবির করে বলল মনে ছিলনা ।
রিয়ার মন খারাপ দেখে স্পর্শ আশিক কে কিছু টাকা দিয়ে বলল , সামনের মার্কেট থেকে রিয়া আর নাফিয়ার জন্য ড্রেশ নিয়ে আসতে ।কিন্তু নাফিয়া বাধা প্রদান করে বলল সে নামবেনা সুইমিংপুলে ।
স্পর্শ নাফিয়ার কথা কানে নিলনা ।সে আশিক কে টাকা দিয়ে পাঠিয়ে দিল ।
রিসোর্টের পাশেই মার্কেট ছিল তাই আশিকের ফিরতে দেরি হলনা ।সে কিছুক্ষণ পরেই দুজনের জন্য জামা নিয়ে হাজির হল ।
সবাই সুইমিংপুলে নেমে পড়ল শুধু আশিক ছাড়া আশিকের ঠান্ডা লেগেছে তাই সে নামেনি।সুইমিংপুলটা বেশ বড় ।ছেলেরা সবাই একসাইডে নেমেছে ।রিয়া আর নাফিয়া অন্যসাইডে নেমেছে ।নাফিয়ার খুব লজ্জা লাগছে ।যদিও ছেলেরা সব তার থেকে দূরে তবুও কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে ।সে নামতে চাইছিলনা প্রথমে ।রিয়া তাকে জোড় করে নামাল ।সে অদূরে থাকা স্পর্শের দিকে তাকাল ।স্পর্শ এদিক থেকে ওদিক সাঁতাড় কাটছে ।সে একমনে তাকিয়ে রইল স্পর্শের দিকে ।
—- এমন খাম্বার মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন ? ডুব দে ।রিয়া নাফিয়াকে ধাক্কা মেরে বলল ।
রিয়ার ধাক্কাতে নাফিয়া ভাবনা থেকে বেরিয়ে এল ।সে মুখ গোমড়া করে বলল
আপু আমি উঠে যাই ।আমার ভালো লাগছেনা ।
রিয়া মন খারাপ করে বলল , প্লিজ বোন উঠে যাসনা ।নাহলে আমায় একা একা গোসল করতে হবে ।আর তুই কি লজ্জা পাচ্ছিস ? ছেলেরা তো আমাদের থেকে অনেকটা দূরে ।ওরা ওদের মত আছে ।আমাদের দিকে খেয়াল করার সময় ওদের নেই ।শুধু শুধু লজ্জা পাসনা ।আমি তো আছি-ই পাশে ।
নাফিয়া মাথা ঝুলিয়ে হ্যাঁ বোঝাল ।
নাফিয়া যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে তার কমোর পর্যন্ত পানি ।নাফিয়ার ইচ্ছে করল একটু সামনে যেতে ।যতই সে সামনে এগোচ্ছে ততই মনে হচ্ছে পানি তার উপরে উঠছে ।আরেকটু সামনে পা বাড়াতেই মনে হল ফ্লোরে তার পাজোড়া আর ঠেকছেনা ।ডুবে যাচ্ছে সে ।নাকে মুখে পানি ঢুকতেই তার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা ।গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছেনা ।খুব চেষ্টা করেও পারছেনা কাউকে ডাকতে ।এই সময় তার কানে কারো চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসে।একজোড়া হাত তার কমোর শক্ত করে ধরে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিল ।নাফিয়া বড় বড় কয়েকটা দম নিয়ে অগান্তুক ব্যক্তিটির দিকে তাকাল ।স্পর্শ তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে ।সময়টা অন্য রকম হলে নাফিয়ার চোখ আটকাত স্পর্শের উন্মুক্ত উদরে আর বুকে কিন্তু এই মুহূর্তে নাফিয়ার বড্ড হাঁসফাঁস লাগছে ।
স্পর্শ হিসহিসিয়ে দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল
এত গভীরে কেন গেলে ?যদি কিছু হয়ে যেত ?মরার শখ জেগেছে ?গাধা নাকি তুমি !
নাফিয়া করুন দৃষ্টিতে তাকাল স্পর্শের দিকে ।স্পর্শের চেহারায় রাগ স্পষ্ট ।স্পর্শের কথার প্রত্যুত্তরে কি বলবে ভেবে পেলনা সে ।
স্পর্শ নাফিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে ফিরে যেতে লাগল ।নাফিয়াকে কোলে নিয়ে পানির মধ্যে হাঁটতে তার একটু কষ্ট হচ্ছে ।তবে তার চেহারায় সেটা প্রকাশ পেলনা ।তার খুব রাগ লাগছে ।সাঁতার না জানা সত্তেও মেয়েটা এত গভীরে কেন যেতে গেল !একটা মেয়ে এতোটা গাধা কিভাবে হয় ?যদি কিছু হয়ে যেত ?ভাবতে ভাবতেই স্পর্শ উপরে উঠে নাফিয়াকে নিচে নামিয়ে দিল ।শীতে কাঁপছে নাফিয়া ।দু’হাত দিয়ে নিজেকে ঝাপটে ধরে রেখেছে ।ইতিমধ্যে সবাই সুইমিংপুল থেকে উপরে উঠে গেছে ।সবার চেহারায় একরাশ চিন্তা ফুঁটে উঠেছে ।
রিয়া কান্নারত গলায় নাফিয়াকে ধরে বলল ঠিক আছিস নাফিয়া ? আমার জন্য এমনটা হলরে ।আমি যদি তোকে না জোড় করতাম তাহলে্ নাফিয়া রিয়াকে থামিয়ে দিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল
আ্ আমি ঠ্ ঠিক আ্ আছি আপু ।
আরদিন বিষন্ন গলায় বলল , যদি স্পর্শ না দেখত তাহলে কি যে হত !আল্লাহ রক্ষা করেছে ।
স্পর্শের ইচ্ছা করছে নাফিয়াকে কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দিতে ।কিন্তু মেয়েটার দিকে তাকাতেই সে চুপসে গেল ।শীতে কাঁপছে মেয়েটা ।পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সে বলল
যা…হয়েছে হয়েছে ।এখন সবাই দ্রুত চেঞ্জ করে নাও ।লাঞ্চ করব ।
স্পর্শের কথায় সবাই সায় দিয়ে একে একে চেঞ্জ করতে চলে গেল ।রিয়ার পর নাফিয়া ওয়াশরুমে গেল চেঞ্জ করতে ।আশিক তাদের দুজনের জন্যই শাড়ি কিনে এনেছে ।রিয়ার ব্লাউজটা ঢিলাঢালা হয়েছে আর তার ব্লাউজটা অনেক টাইট ।ঢিলা হলেও চলত ।কিন্তু অনেক টাইট ।তার টাইট জামা কাপড় পড়তে অসুবিধা হয় ।এক কথায় বিরক্তি লাগে টাইট জামা পড়তে।সে কাপড়টা কোনো রকমে পড়ে চোখমুখ কুঁচকে বের হল ওয়াশরুম থেকে ।সবার চেঞ্জ করা শেষ হলে দুপুরের লাঞ্চের জন্য রিসোর্টের রেস্টুরেন্ট টা তে ঢুকল ।
রিয়ার পাশের চেয়ারটাতে ইমাম বসার আগেই আয়ান বসে পরল ।আয়ান রিয়ার পাশে বসতেই রিয়ার গাল লাল হয়ে গেল ।মনে পরে গেল তখন তাকে আয়ানের বলা আই লাভ ইউ কথাটা ।সে লজ্জায় নিচু হয়ে রইল ।রিয়ার ডানপাশে আয়ান আর বামপাশে আরদিন বসেছে ।আরদিনের বামপাশে স্পর্শ বসেছে ।আয়ানের ডানপাশে অন্যান্য বন্ধুরা বসে পরেছে ।নাফিয়া দাঁড়িয়ে আছে ।সে বুজতে পারছেনা কোথায় বসবে ? সে ভেবেছিল রিয়ার সাথে বসবে কিন্তু রিয়ার দুইপাশে দুইজন আগেই বসে পরেছে ।এখন একটা চেয়ার-ই খালি আছে তা-ও আবার স্পর্শের বামদিকের পাশের চেয়ারটা ।আর এই মুহূর্তে স্পর্শকে তার খুব ভয় করছে ।স্পর্শ কতটা রাগী সেটা সে বিয়ের দিনই বুজতে পেরেছিল আর আজকেও স্পর্শের রাগী রূপটা দেখল ।আচ্ছা সে কি জানত পানি এতোটা গভীর হবে ? নাফিয়া ভাবে ।
নাফিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্পর্শ বলল তোমায় কি দাওয়াত দিতে হবে বসার জন্য ?
স্পর্শ নাফিয়াকে ইশারা করল তার পাশের চেয়ারটাতে বসতে ।নাফিয়া ভীতু দৃষ্টিতে স্পর্শের দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে বসে পরল স্পর্শের পাশে ।
নাফিয়া পাশে বসতেই স্পর্শ সবার অগোচরে টেবিলের নিচ দিয়ে নাফিয়ার হাতের মুঠোয় নিজের হাত রাখল ।নিজের হাতে স্পর্শের হাতের ছোয়া পেতেই নাফিয়ার চোখ বড়বড় হয়ে গেল ।সে চোখ বড়বড় করে তাকাল স্পর্শের দিকে ।স্পর্শ ঠোট টিপে হেঁসে তাকে ইশারা করল নিচে তাকাতে ।
চলবে,
@Nusrat Hossain