মন গহীনের গল্প পর্ব -৪৭ ও শেষ

#মন_গহীনের_গল্প
শেষ পর্ব
#রূবাইবা_মেহউইশ
💞

জোৎস্নামাখা রাত আর প্রদীপের আলোয় জ্বলজ্বল করছে চারদিক। সুইমিংপুলের পানিতে ভাসমান গোলাপের পাপড়ি দূর থেকে লাগছে কার্পেটের মতন। কে বলবে ওই গোলাপ পাপড়ির নিচেই আছে বুকসমান নীল স্বচ্ছ পানি। গমগম করছে হোটেলের উপর থেকে নিচ তলা। চারপাশে দেশি,বিদেশী হাজারো পদের খাবারের ঘ্রাণে ম-ম চারদিক। জ্বলজ্বলে আলোয় সজ্জিত স্টেজের মধ্যমণি বর বেশে রিশাদ রায়হান আর কনে সাজে মেহউইশ রায়হান। আর তাদের মধ্যিখানে বসে আছে তাদের একমাত্র সন্তান নির্জন। তাঁদের ঘিরে আছে সকল আত্মীয় স্বজন আর সামনে বসা কাজী। সকল প্রকার আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে আবারও বিবাহ বন্ধনে বন্দী হলো তারা। এবারের বন্ধন মুক্ত ঝরানো হাসির বিনময়ে । এ বন্ধনে কারো মনে নেই ঘৃণা আর না আছে কাউকে হারানোর ব্যথা। তীব্র অসহ্য যন্ত্রণা নেই এবারের সম্পর্কে আছে একে অপরের প্রতি আস্থা,ভরসা আর হঠাৎ পাওয়া ভালোবাসা। সুখের স্পন্দন এ বন্ধনে প্রতি মুহূর্তে আবেশ ছড়ায় খুব যতনে। ছুঁয়ে যায় পালকের মত কোমল আদুরে উষ্ণতা ।

‘কোথায় হারিয়ে গেলেন আবার!’ রিশাদের বা কাঁধে আলতো করে ঝাঁকিয়ে প্রশ্ন করলো মেহউইশ। সেই কখন থেকে স্টেজের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে সে ভেবে যাচ্ছে কত কি! নিজেদের সম্পর্কটাকে আজকাল পরিত্যক্ত লাগে তার। উহুম সম্পর্ক না শুধু নিজেকেই লাগে। বোঝার মত পড়ে আছে মেহউইশের কাঁধে । একা হাতে হোটেল, নির্জন, ফুপি, রাইমার বিয়ের ভার সব সামলে যাচ্ছে। রিশাদ কবে সুস্থ হবে,কবে পায়ে হেঁটে চলাফেরা করবে আদৌও করবে কিনা জানা নেই। তবুও দৃঢ় আত্মবিশ্বাস মেহউইশের খুব দ্রুত নিজের পায়ে দাঁড়াবে রিশাদ। সেই দ্রুত সময় আজও এলো না দীর্ঘ পাঁচ মাসে। সেই দূর্ঘটনার চার মাস পেরিয়ে পাঁচ মাস চলছে। অর্ধমৃত রিশাদকে সেদিন খুঁজে পেতে বেগ পায়নি পাহাড়ি লোকজনরা। মেহউইশকে ফোন করেই যখন রিশাদ নিচে পড়লো তখনি মেহউইশ হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে বিছানায় বসে৷ তার কান্না শুনে রেহনুমা যখন এলো মেহউইশের ঘরে৷ কাঁদতে কাঁদতে যতটুকু মেহউইশ বলল তাতে রেহনুমা অনুমান করলো রিশাদ এক্সিডেন্ট করেছে৷ আর কিছু জানার সাহস তার হলো না সে মেহউইশকে সে অবস্থায়ই ছেড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। বাড়ির দারোয়ান আর আনতুংকে ডেকে সঙ্গে নিতে চাইলে আনতুং নিজেই প্রতিবেশী আরও অনেক ছেলে,বুড়োকে ডেকে নিয়ে আসে সঙ্গে করে। ভোরের আলো তখন পূব আকাশে জ্বলে উঠেছে সগৌরবে। আঁধার ছুটে পালিয়ে গেল ভূলোক ছেড়ে বহুদূরে৷ রিশাদ যে পথে গেছে সে পথে দ্বিতীয় কোন মোড় নেই। নিঃসন্দেহে সে পথ ধরে চলতে চলতেই সকলে যখন ক্লান্ত। এক ঘন্টারও বেশি পথ পায়ে হেঁটে তারা যখন সমতল রাস্তার কাছে প্রায় তখনি চোখে পড়লো রাস্তার ঢালুতে রিশাদের ভাঙাচোরা গাড়িটা৷ খুঁজে ফেরার শক্তি যখন সকলের নিঃশেষ তখনি সেই গাড়ি সবার পুনরায় শক্তির জোগান দিলো শুধু রেহনুমা ছাড়া। পাহাড়ের ঢালুতে গাছপালার আড়ালে ঝুলে থাকা ভাঙা গাড়িটা দেখতেই রেহনুমা চেতনা হারায়৷ এলাকাবাসী পাহাড় বেয়ে অনেকেই তরতরিয়ে নিচে নেমে গেল তৎক্ষনাৎ, কিছুলোক গেল থানার দিকে আর আনতুং শুধু দাঁড়িয়ে রইলো অচেতন রেহনুমাকে ধরে৷ এখানে জমি থেকে রাস্তার উচ্চতা বেশি নয় বলেই সবার ধারণা ছিলো রিশাদ ততোটা আহত হয়নি। আবার গাড়ির সুরতহাল দেখে মনে হলো হয়তো মানুষটা বেঁচেই নেই। সুভাগ্য কিংবা দূর্ভাগ্য যাই বলা হোক রিশাদকে পাওয়া গেছে জীবিত কিন্তু সেই জীবদ্দশা তার কাছে অভিশপ্ত৷ মাথায় আঘাত লেগেছিলো ট্রাকের সংঘর্ষে এসে গাড়ির ড্যাশবোর্ডে লেগে। আর পা দুটো প্রায় থেলতে পড়েছিলো গাছ থেকে পড়ার সময়। সুভাগ্য হলো তার বেঁচে থাকা,মেহউইশের কাছে আবারও ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ পাওয়া এবং একমাত্র সন্তানের মাথার উপর ছাঁদ হিসেবে রয়ে যাওয়া। আর দূর্ভাগ্য তার পঙ্গুত্ব যা মেহউইশকে চরম বিপদে ফেলছে প্রতি মুহূর্তে। লজ্জা লাগে রিশাদের এভাবে হুইল চেয়ারে বসে মেহউইশকে কষ্ট দিতে। এক সপ্তাহ তার কেটেছিলো মৃত লাশের মত। মাথার আঘাতে ভয় ছিলো তার স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়ার, পাগল হয়ে যাওয়ার কিন্তু উপরওয়ালার দয়ায় আর আপনজনদের একনিষ্ঠ দোয়া’ই হয়তো তাকে সুস্থ করেছে। তিন মাস ঢাকায় হাসপাতালে পড়ে থেকে কেটেছে তার। ম্যানেজার সৎমানুষ ছিলো বিধায় তার হোটেলটা সচল ছিলো সঠিকভাবে এবং মেহউইশকেও সাহায্য করেছে দ্বায়িত্ব সামলে নিতে। ঢাকা টু কক্সবাজার করতে করতেই মেহউইশ আজ নিজেও কাহিল৷ তবুও হাল ছাড়েনি।বিমর্ষ,নির্লিপ্ত রিশাদের মনে প্রতিমুহুর্তে সাহস জুগিয়ে গেছে সুস্থ হওয়ার। রেহনুমা হাল ছেঁড়ে দিয়েছিলো রিশাদের বেঁচে থাকার তার মনেও সাহস সঞ্চয় করে গেছে। জেবুন্নেসা সব জেনেও কাগজপত্রের বড় কোন গোলযোগে আটকে থাকায় ছটফট করতে থাকে বিদেশের মাটিতে। মাস খানেক আগেই সে সুযোগ পেয়ে ফিরে আসে দেশে৷ রিহান পরীক্ষার ঝামেলায় আসতে পারেনি কিন্তু কালই সে ফিরেছে দেশে৷ রিশাদের মাথার ঘা শুকিয়ে উঠতেই মেহউইশ মনে করে জেবুন্নেসার সাথে কথা বলে রাইমার বিয়ে নিয়ে। রাইমা সরাসরিই না করে দিয়েছে। তার দাদাভাই যতদিন না সুস্থ হয় সে বিয়ে করবে না এতে যদি তানভীর তাকে ছেড়ে যায় তো যাক। রিশাদের দু’টো পায়েই প্লাস্টার বাঁধা। এক পায়ের হাটুর কাছে হাঁড়ে ফাটল ধরছে অন্য পায়ের দু’টো আঙ্গুলই ভেঙে গেছে সম্পূর্ণ৷ আর শরীর জুড়ে আছে ছোট ছোট কিছু ক্ষত। তবুও মেহউইশ ভরসা রাখে রিশাদ দাঁড়াবে আবারও দু’পায়ে৷ তার বিশ্বাস তাদের জীবন বদলে যাবে আর এ বদল নিশ্চয়ই ভালোর হবে, সুখের হবে৷ পলকা মেঘের মত ভালোবাসা ভেসে বেড়াবে তাদের মাথার উপর ছাউনি হয়ে। সুখের পাখি হানা দেবে তাদের পাহাড়ের ছোট্ট সেই বাড়িতে। না না, সে বাড়িতে আর নয়। সেই যে ছেড়ে এসেছে তাদের পাহাড়ি বাড়ি আর ফিরতে চায় না মেহউইশ সেখানে। যত সুন্দর তত ভয়ংকর, যত মনোমুগ্ধতা তত যন্ত্রণা। মেহউইশ এই যন্ত্রণা আর বইতে চায় না এর চেয়ে মধুর ছিলো রিশাদের হাতে বিয়ের রাতের সেই চড়গুলো৷

‘অভিনন্দন, কনের ভাবী। তোমার আয়োজন তোমার মতোই চমৎকার হয়েছে।’ ইভানের হঠাৎ এমন কথায় চমকে তাকালো রিশাদ,মেহউইশ। ইভানকে দেখেই মাথায় যন্ত্রণা শুরু হলো রিশাদের হয়তো যন্ত্রণা শরীরের থেকে সৃষ্ট নয়। এটা মন থেকে তৈরি করা ভয়ের যন্ত্রণা। মেহউইশের সামনে ইভানের উপস্থিতিতে ভয়ের উদ্বেগ তৈরি করেছে তার । রিশাদের চোখমুখে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে গেল কয়েক সেকেন্ডেই। আর তা বুঝতে পেরে মেহউইশ অস্থির হয়ে উঠলো৷ তার যা ধারণা হলো সে তা রিশাদকে প্রকাশ করে তাকে শান্ত করতে চাইলো৷ ইভানও লক্ষ্য করলো সবটা আর তাই সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো মেহউইশের দিকে। প্রচণ্ড অস্থিরতায় রিশাদের একটা হাত নিজের মুঠোয় পুরলো মেহউইশ ।

‘প্লিজ রিশাদ উত্তেজিত হবেন না। কিছু বলার আছে আপনাকে একটু সময় দিন আমাকে।’ মেহউইশ বলল তড়িঘড়ি করে। রিশাদ চোখ তুলল না মেহউইশের কথা শুনেও। সে হুইল চেয়ারে নিথর বসে রইলো যেন কিছু শুনতেই পাচ্ছে না। রিশাদের এই আচমকা নির্লিপ্ততা দেখে ভীষণ ভয় হলো মেহউইশের । সে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো সেখানেই। রিশাদের হাতটা সে কিছুতেই ছাড়লো না বরং খুব ধীর স্বরে আবার বলল, ‘ বিশ্বাস করুন ইভানের সাথে আমি কখনোই ফিরে যাবো না। আমি তো নির্জনের মা তাই না! তাকে ছেড়ে আপনাকে ছেড়ে কোথায় যাবো বলুন? আপনি এভাবে ঘাবড়ালে এমন ডেস্পারেট হলে ক্ষতি হবে তো। আমি কিছু বলতে চাচ্ছি আপনাকে একটু শুনবেন আমার কথা?’ মেহউইশ কথাটা বলেই রিশাদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো জবাবের আশায়। রিশাদ নিস্তেজ কোন কথা বলল না তা দেখে ইভান মুখ খুলল, ‘ দেখুন রিশাদ আমি এখানে শুধু মাত্র তানভীরের বড় ভাই হিসেবে এসেছি। ছেলে পক্ষ হিসেবেই থাকবো বিয়ে শেষ হতেই পরিবার সমেত ফিরে যাবো ঢাকায়৷ আমি তো আসতেও চাইনি কারণ জানি আমার উপস্থিতি আপনার পছন্দ হবে না৷ শুধু মাত্র অন্তঃসত্ত্বা বউটার আবদার রাখতেই আসা। প্লিজ আপনি অস্থির হবেন না মেহউইশের সাথে আমার সম্পর্ক এখন শুধুই আত্মীয়তার৷ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটুকুও আর আগের মতন নেই। ‘ ইভান থামলো। মেহউইশ বলতে শুরু করলো আবার৷

‘ইভানের সাথে আমার ঢাকায় গিয়ে প্রথমবার দেখা হয়েছিলো৷ যখন আপনার ডেঙ্গু হয়। কিন্তু সে তখন আমায় দেখে লুকিয়ে সরে যায়। আর কেন লুকায় তা জানতে পারলাম এবার আপনাকে যখন ঢাকায় হাতপাতালে ভর্তি করা হয় তখন৷ আপনিই নাকি তাকে হুমকি দিয়েছিলেন কখনও যেন আমার সামনে না আসে। ইভান সত্যিই কখনো আসতে চায়নি আর এবার যখন পুনরায় মুখোমুখি হয়েছি তখন আমি আর আগের আমি ছিলাম না। আমি তখন সম্পূর্ণরুপে রিশাদ রায়হানের স্ত্রী, নির্জনের মা৷’ বলতে বলতে মেহউইশের গলায় কান্নারা দলা পাকালো। সে সত্যিই রিশাদের প্রেমে পড়ে গেছে৷ সে শুধুই রিশাদের আমানত মনে করে নিজেকে৷ এখন আর ইভানের জন্য কান্না নেই বুকে, ইভানকে ফিরে পাওয়ার আবেগ,আকাঙ্ক্ষা কোনটাই আর বাকি নেই। রিশাদের হাত নিজের মুঠো থেকে আলগা করলো মেহউইশ আর তাতেই চোখ তুলে রিশাদ তাকালো মেহউইশের চোখে। জল ছলছল মেহউইশের চোখ দুটো পদ্ম পাতার মত লাগছে৷ এই বুঝি অশ্রু ফোঁটা গড়িয়ে পড়বে দু’দিকে। চিকন পেলব ঠোঁট দুটো আকুতিতে বড্ড রুক্ষ হয়ে আছে যেন রিশাদের কাছে একটু পরশ চাইছে৷ মেহউইশও পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রিশাদের মুখের দিকে। দু দিনের সদ্য মাথা উঁচানো খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, অভিমানী চোখ আর কদম ফুলের ন্যায় মাথার ছোট ছোট চুল। এই রিশাদের চোখে মুখে ক্রোধের প্রলেপ নেই,নেই কোন অহংবোধ । আছে শুধুই অভিমান আর অভিযোগ৷ এত কিসের অভিযোগ কে জানে! রিশাদের চোখে চোখ রেখেই বলল মেহউইশ, ভালোবাসা বদলায় তাই বদলেছে। আমিও বদলেছি আর আমার ভালোবাসাও। আপনাকেই ভা,,,,,,’ মেহউইশের মুখে এতটুকু শুনেই নীরবে সরে গেল ইভান। যতোই বলুক সে তার স্ত্রীকেই ভালোবাসে কিন্তু তার ভালোবাসায় প্রথমভাগটা আজও মেহউইশের নামে তুলে রাখা। তাই আর সইতে পারবে না ভালোবাসার মানুষের মুখে অন্য কাউকে ‘ভালোবাসি’ বলাটা। সে দূরেই থাকুক এ ভালোবাসার।অনুভূতিতে মেহউইশ থাকুক স্মৃতির মত তার স্ত্রী’ই থাকুক তার সুখের পায়রা।

রাতের প্রথম প্রহর শেষের পথে। হোটেল নির্জন আজ আর নির্জন, নিরিবিলি নেই। অষ্টাদশীর চাঁদের আলোয় আলোকিত চারদিক সেই সাথে জ্বলছে অসংখ্য প্রদীপ আর বৈদ্যুতিক রঙিন বাতি। হোটেল নির্জনের সবচেয়ে সুন্দর আর মোহনীয় জায়গা তার সুইমিংপুল আর সংলগ্ন বাগান। আজ সেখানেই আয়োজন করা হয়েছে রিশাদ রায়হানের একমাত্র বোন রাইমার বিয়ের। কোন কমতি নেই সেই আয়োজনে, কমতি নেই আত্মীয়স্বজনের। সুইমিংপুলের বিপরীত দিকে বর কনের স্টেজ। সেখানেই বসে আছে নববধূ রাইমা আর তার বর তানভীর। জেবুন্নেসা বসে আছে পাশেই তানভীরের মায়ের সাথে আর রেহনুমা! সে’ই যেন কনের মা। সন্ধ্যা থেকে ফ্যাচফ্যাচ করে কান্না করে চলছে। এই নিয়ে মেহউউশের সে কি হাসি! সুযোগ পেলেই রিহান আর মেহউইশ মিলে ক্ষেপিয়ে দিচ্ছে রেহনুমাকে৷ মেহউইশের মা আর জেবুন্নেসাও কম যাচ্ছে না এদিক দিয়ে। কে বোঝাবে তাকে মেয়ে আজ বিদায় হলেও পরশুই তারা বৌভাতে গিয়ে মেয়েকে দেখতে পারবে। জেবুন্নেসারও যে কষ্ট হচ্ছে না তা নয় কিন্তু সে আপাতত নিজেকে শক্ত করেই রেখেছে। রাত বারোটার ফ্লাইটে বর কনে ঢাকায় যাবে আর এখন বাজে সাড়ে দশটা। মেহউইশ ম্যানেজারকে ডেকে গাড়ি তৈরি রাখতে বলল এখনি বিদায় পর্ব হবে। আর আশ্চর্যজনকভাবে এই বিদায় পর্বে সবচেয়ে বেশি কান্না করলো রিশাদ আর রিহান। জেবুন্নেসার কান্না শুরু হতেই রিশাদের কান্নার আওয়াজ কানে এলো৷ রিশাদের পাশে বসে তাকে জড়িয়ে কাঁদছে রাইমা হাউমাউ করে। অটোমেটিক্যালি কান্না বন্ধ হয়ে গেল জেবুন্নেসা আর রেহনুমার। তারপরই আবার দেখা গেল রিহানের কান্না। তিন ভাইবোনের এ কান্নায় শামিল হলো নির্জনও৷ সে কেন কাঁদছে কে জানে! মেয়েদের বিয়েতে হৃদয়বিদারক এই মুহূর্তটা উপস্তিত থাকা প্রত্যেকটা মানুষের মনকে ভারী করে তোলে৷ এখানেও তাই হলো।

গভীর রাত, বারান্দার কাঁচগুলো সরিয়ে দিয়েছে মেহউইশ। গ্রিলের ফাঁকে চাঁদের আলো হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ছে রিশাদের ডিম্বাকৃতির বারান্দাটাতে। সমুদ্রের জোলো হাওয়ায় ধাক্কা খেয়ে বারান্দার প্রতিটা পর্দা পত পত করে উড়ছে লাগাতার৷ ঘুম নেই চোখে মেহউইশ, রিশাদ কারোই। হুইল চেয়ারে বসা রিশাদকে খুব যত্ন করে নিচে নামালো মেহউইশ ম্যাট্রেস বিছানো এই বারান্দায় । নিঃশব্দে সেও বসলো পাশে রিশাদের গা ঘেঁষে । শীত শীত আবহাওয়ায় প্রিয় মানুষের দেহের উষ্ণতা বড্ড কামুক করে মন প্রাণ। এত আদর আদর লাগে মানুষটার স্পর্শ তা যেন শুধু প্রিয়জন আছে এমন মানুষরাই অনুভব করতে পারে। ভালোবাসার অতল সাগরে এই অনুভূতির কতশত নাম! আকাশের চাঁদটা উঁকি মেরে দেখছে দুজনকে। তারাও দেখছে চাঁদটাকে আর মনে মনে বলছে, ‘হে চাঁদ তুমি খুব অভাগা জানো তো! তোমার কেউ নেই। এই দেখো আমার আছে আপন একজন।’

হঠাৎ মনে হলো চাঁদটা মুখ বাঁকিয়ে তাদের ধমকে উঠলো, ‘ঢং দেখিয়ো না৷ তোমার পাশে আছে একজন আর আমার দিকে দেখো, লক্ষ কোটি তারার মেলা৷ আমিও একা নই।’ আনমনেই খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠলো মেহউইশ । সেই হাসিতে আধো আলোয় মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো রিশাদ। মন গহীনের গল্প গুলো কি দারুণ হয়ে প্রকাশিত হলো তাদের জীবনে!

___________ সমাপ্তি ________

)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here