মন পাথরে হঠাৎ ঝড় পর্ব -১৩+১৪

#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_১৩
Tahrim Muntahana

হৃদানের রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছে আদর। এতবড় রুম! তার ও রুমটা বড় তবে এতটা বড় না। রুমের সব জিনিস ই কালো। তবে আলাদা একটা সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে ঘরটাই। হৃদান সোফায় বসে অপলক দেখছে আদরকে। এত দেখে তবুও যেন স্বাদ মেটেনা। আদরের দেখা শেষ হতেই হৃদানের পাশে এসে বসলো।তখনও হৃদান আদরের দিকেই তাকিয়ে আছে। আদর মুচকি হেসে হৃদানের কাঁধে মাথা দিয়ে বসে রইলো। হৃদান সুযোগ বুঝে আদরের কোমর নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে আরেকটু কাছে নিয়ে আসলো। সময় যেন দুজন দুজনার। কারো মুখেই কথা নেই, দুজনেই চুপটি করে সময়টা উপভোগ করছে। ঠিক তখনি নক পড়লো দরজায়। আদর ছিটকে দূরে সরে বসলো। হৃদান বিরক্ত হলো। এই সময়টাই ই আসতে হলো। শান্তি তে একটু প্রেম ও করতে পারবে না! কে না কে আসলো ভেবে আদর সোফার পেছনে লুকিয়ে পড়লো। হৃদান চোখ মুখ কুচকে আদরের কান্ড দেখছে। বিরক্ত নিয়ে বলে উঠলো,

তুমি চোরের মতো লুকাচ্ছো কেন?

ফুসে উঠলো আদর। তাকে চোর বলল? সে চোর? আদর আহমেদ চোর? এই কথাটাও তার শুনতে হলো! চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

ইউ ক‍্যাবলাব্রিটিশ আপনার সাহস তো কম না আমাকে চোর বলেন! আপনাকে আমি খুন করে ফেলবো!

হৃদান এবার ভ‍্যাবাচ‍্যাকা খেয়ে গেলো। সে তো শুধু উদাহরণ দিয়েছিলো। এ মেয়ে তো সত‍্যিই ভেবে নিয়েছে।

আরে না তুমি চোর হতে যাবে কেন। আমি তো জাস্ট এক্সামপল দিয়েছি।

হৃদান এমন কথাতেও আদরের মন গললো না। আবার চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

আপনার এক্সামপলের গুষ্টির তুষ্টি। আপনি আমাকে চোর বললেন! থাকবো না এখানে। চলে যাবো। এই আদর আহমেদ কে চোর বলা; আপনাকে যদি আমার ভাইয়ার হাতে কেলানি না খাওয়াইছি দেখবেন!

এই বলে চলে যেতে নিবে হঠাৎ করেই কিছু একটা মনে করে থেমে গেলো। পেছনে ঘুরে ভাব নিয়ে দাড়ালো। হৃদান কিছুই বুঝতে পারলো না। এ মেয়ের কখন কি মনে আছে বুঝা বড় দায়। আদর চোখ ছোট ছোট করে বলল,

আমি কেন যাবো। এটা তো আমার ওয়ান এন্ড অনলি শশুড় বাড়ি। শশুড়বাড়িতে ছেলর থেকে বউয়ের অধিকার বেশী। ইউ ক‍্যাবলাব্রিটিশ গেট লস্ট ফ্রম মাই হব্বু রুম!

আদের এমন কথায় হেসে দিলো হৃদান।এই মেয়েটা তাকে কিভাবে হাসায় নিজেই জানেনা। হৃদানের মুখে হাসি দেখে আদর ও হাসলো। এগিয়ে গেলো দরজার দিকে হৃদান। দরজা খুলতেই চোখে পড়লো পান্চু কে। মুখ তার গম্ভীর। পান্চু যে মানুষ তার মুখে অলটাইম হাসি থাকে সেখানে গম্ভীর মুখ দেখে হৃদান বুঝলো ইমপরটেন্ট কিছুই। হৃদান কে দেখে পান্চু সালাম জানালো। তারপর বলল,

বস প্রশিক্ষণ রুমে অচেনা একজন ছেলে ছিলো। গোপন রুমে রেখে এসেছি। আমার মনে হচ্ছে পার্টিতে কিছু একটা হবে। তাই আপনাকে সাবধান করতে আসলাম। আপনি গার্ড ছাড়া কোথাও যাবেন না!

হৃদান চমকে উঠলো। কিছু একটা হবে মানে। তার তো তাকে নিয়ে চিন্তা নেই। চিন্তা তো তার দুই কলিজাকে নিয়ে। এই প্রথম এমন পরিস্থিতিতে তাকে বিচলিত দেখালো। পান্চু নিঃশব্দে হাসলো। হয়তো বুঝতে পেরেছে হৃদান চৌধুরীর বিচলিত হওয়ার কারণ। পান্চু হঠাৎ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,

নিজের সফট পয়েন্ট অন‍্যকে জানানোর মতো বোকামো হৃদান চৌধুরী কেন করছে বুঝতে পারছি না। এতে তাদের উপর বিপদ হতে পারে বস আপনি বুঝতে পারছেন না? তারিম ম‍্যামকে এখনি এক্সপোস করার মানেই হয়না বস। এতে উনার উপর আক্রমণ হওয়ার চান্স বেশী।

হৃদানের টনক নড়লো। পান্চু তো কিছু ভুল বলেনি। শত্রুরা এতদিন তার উইক পয়েন্ট খুঁজার চেষ্টা করেছে; পায়নি বলে তার ক্ষতিও করতে পারিনি। একবার যদি হৃদান চৌধুরীর উইক পয়েন্ট সবাই জেনে যায় চারপাশ থেকে শত্রুরা হানা দিবে। একজুট হয়ে প্রতিশোধ নিতে চাইবে। কতসময় লুকিয়ে রাখবে ওদের। একসময় না একসময় বের তো হতেই হবে। সেও সবসময় সাথে যেতে পারবে না। তখন যদি আক্রমণ হয়। মাথা ভন ভন করে উঠলো হৃদানের। পান্চু হয়তো বুঝতে পারলো বসের মনের অবস্থা। এত বছর ধরে বসের মেইন গার্ড হয়ে কাজ করে আসছে বসের মনের অবস্থা একটু হলেও বুঝতে পারবে না! পান্চু সম্মানের সহিত বলল,

বস আপনি আজ পার্টিটাকে নরমাল বলে চালিয়ে দিন। কিন্তু প্রেস? তাদের কি বলা হবে?

হৃদান নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,

কয়েকদিন আগে ডিল কনফার্ম হয়েছে না? রেফারেন্স হিসেবে দেখিয়ে দিতে হবে। সিকিউরিটি বাড়িয়ে দাও। আমি কোনো রিস্ক নিতে চাইনা। নিজেদের সাথে সাথে আমার সকল গার্ডদের সুরক্ষিত দেখতে চাই। একা একা কোথাও নজর রাখবে না। মিনিমাম তিনজন একসাথে থাকবে। ওকে?

পান্চু অবাক হলো। তাদের বস সিকিউরিটিদের কথা ভাবছে? আগে কখনো এমন করতে দেখেনি। বরং রাগলে কাকে কখন মেরে দিতো তার ইয়াত্তা থাকতো না। হয়তো আদরের জন‍্যই সম্ভব হয়েছে। আদরের প্রতি সম্মান টা বেড়ে গেলো পান্চুর। এ যেন নতুন রূপে দেখছে তাদের বসকে। সম্মতি জানিয়ে চলে গেলো পান্চু। পান্চু যাওয়ার পরেই হৃদান দৌড়ে এসে আদর কে জড়িয়ে ধরলো। কেঁপে উঠলো আদর। হৃদানের এই প্রথম ভয় হচ্ছে। প্রিয়জন হারানোর ভয়ে বুকের মধ‍্যে কেমন চিনচিন করছে। আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আদরকে। আদর কিছু না বুঝলেও চুপ রইলো। এই বুকটা তার জন‍্য নিরাপদ সে এতদিনে বুঝে গেছে। হৃদান হঠাৎ করেই আদর কে ছেড়ে দিলো। মুখটা গম্ভীর করে বলল,

বি এলার্ট আন্ডাবাচ্চা। পাবলিক প্লেসে আমি কে তুমি চিনো না ; না তোমাকে আমি চিনি। হৃদযা কে এখনি এক্সপোস করা পসিবল না। এখন তুমি নিচে যায় আমি আসছি।

আদর কিছু না বলেই চলে গেলো। সে অবুঝ নয় যে বুঝেনা হৃদানের ভয়টা। কিন্তু সেও অপারগ। আসল দোষী কে ধরার জন‍্য তাকে রিস্ক নিতেই হবে। আবার ঘুরে হৃদানের রুমে ঢুকে পড়লো। হৃদান কিছু বলার আগেই আদর বলে উঠলো,

আমি চাই আজ আমার এক্সপোস হোক আহনাফ চৌধুরীর মেয়ে হিসেবে আর আপনার কাজিন হিসেবে!

হোয়াট? কি বলছো আদুপরী?

আমি ঠিক ই বলছি হৃদ। ভেবে দেখুন আহনাফ চৌধুরীর মেয়ে কে দেখার পর আহনাফ চৌধুরীর শত্রুরা বসে থাকবে না? অবশ‍্যই আমাকে হয়তো মারার চেষ্টা করবে নয়তো কিডন‍্যাপ করার চেষ্টা করবে। এইটুকু রিস্ক নিতেই হবে হৃদ। বুঝার চেষ্টা করুন।

আদরের কথায় চমকে উঠলো হৃদান। তার এখনি মনে হচ্ছে আদর কে সে হারিয়ে ফেলছে। ধমকে উঠলো সে,

চুপ একদম চুপ। আর একটা কথাও শুনতে চাইছি না। নিচে যাও আদর।

আদর হাসলো। এগিয়ে গিয়ে হৃদানকে জড়িয়ে ধরলো। হৃদান তখনো চুপ গম্ভীর। আদর কিছুক্ষণ পর বললো,

ক‍্যাবলাব্রিটিশ থাকলে তার আন্ডাবাচ্চার ক্ষতি কিভাবে হয়? এটা সম্ভব? উপর ওয়ালা ব‍্যতিত কারো ক্ষমতা আছে ক‍্যাবলাব্রিটিশের থেকে আন্ডাবাচ্চাকে আলাদা করবে?

হৃদান আদরের চোখের দিকে তাকালো। চোখ দুটোতে তার জন‍্য অগাধ ভরস খুঁজে পাচ্ছে। নিজেও ভাবলো সবকিছু ঠিক করতে একটু রিস্ক নিতেই হবে। সম্মতি দিলো মাথা নেড়ে। তবুও কথা বললো না। তার হৃদপিন্ডটা দ্রুত লাফাচ্ছে। বার বার মনে হচ্ছে সে হারিয়ে ফেলবে আদরকে। আদর নিজেও হৃদান কে ছেড়ে হাটা ধরলো। তার যে ভয় লাগছে না; তা না। প্রচন্ড ভয় লাগছে তার। তবুও কাজটা তাকে করতে হবে।

তারিম সুবাহ দুজনে লুকিয়ে আছে। কারণ আদর এখনো আসেনি। আর আদর কে যদি তাদের সাথে না দেখে আতইয়াব বুঝে যাবে। তাই তাদের লুকিয়ে থাকা। আতইয়াব খুঁজে চলছে আদর কে। মুখ তার গম্ভীর। হয়তো সন্দেহ করেছে আদর হৃদানের সাথেই আছে।

আদরকে সিড়ি দিয়ে নামতে দেখে সুবাহ তারিম দৌড়ে আদরের পাশে দাড়ালো। এতক্ষণ ভয়ে মরে যাচ্ছিলো তারা। তখনি চোখ পড়লো আতইয়াবের। সুবাহ কেবল ই বলতে যাচ্ছিলো আদরকে কি করলো এতক্ষণ। আতইয়াব কে দেখে থেমে গেলো। আতইয়াব আর কিছু বললো না। ফালাহ’র পাশে দাড়ালো। কি ভাবছিলো এতক্ষণ! মাথা মধ‍্যে শুধু এসবই ঘুরে।

পার্টিতে এসে পৌঁছালো খান পরিবার। সবার নজর যেন সেদিকেই। শর্ট টপস, হাইহিল পড়ে কোমর বাঁকিয়ে হেটে আসছে হিয়া। চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে ছেলেরা। হিয়ার তো নিজেকে সবার থেকে সুন্দর মনে হচ্ছে কারণ সবার নজর তার উপরেই। পার্টি স্পটে গিয়ে আদর কে দেখেই হিয়া রেগে গেলো। এই মেয়ে এখানে কেন? অনেক মানুষ দেখে কিছু বললো না। অন‍্যদিকে এগিয়ে গেলো। এদিক ওদিক তাকিয়েই আসছিলো পান্চু। তার চোখ যেন শত্রু পক্ষকে খুঁজতেই ব‍্যস্ত। হঠাৎ ই কারো সাথে ধাক্কা লেগে নিজের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেলো। হিলের গুতাটা খেয়ে মাথা তার ভনভন করছে। হিয়া যে এভাবে পড়ে যাবে ভাবেনি। সবার সামনে এরকম লজ্জিত হয়ে ধপ করে রেগে গেলো সে। আদরের রাগটাও পান্চুর উপর খাটালো হিয়া। ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো। চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

স্ক্রা!উ!ন্ডে!ল মেয়ে দেখলেই ধাক্কাধাক্কি করতে ইচ্ছে করে। তোর সাহস কি করে হয় হিয়া খানের শরীর স্পর্শ করার।

পান্চু মাথা নিচু করে নিলো। তার ও যে রাগ হচ্ছে না এমন না; কিন্তু সে তো বসের থেকেই শিখেছে মেয়েদের কে সম্মান করাটা। কিন্তু অপমানে সে মাথা তুলে আর তাকাতে পারলো না। নিচু হয়ে চলে আসতে নিবে সামনে এসে দাড়ালো আদর। চোখ মুখে যেন রাগ উপচে পড়ছে। আরেকটা চড় লাগালো আদর। পান্চুর চোখ এবার ছলছল করে উঠলো। আদর ও তাকে ভুল বুঝলো? হিয়ার কথায় অপমানিত হলেও আদরের চড়টা তার বুকে লাগলো একদম। এরকম অপমান সে কোনোদিন ও হয়নি। হৃদান এসে কেবল দাড়িয়েছে ওমনি আদরের এমন কাজে সে হতবাক। এগিয়েও যেতে পারছে না যেন। আদর পান্চুকে খুব পছন্দ করে সে জানে। তাহলে এমন করার কারণ? সবার নজর এখন আদর হিয়া পান্চুর উপরেই। এসব বিষয়ে কৌতুহল সবার বেশীই। আদরও হিয়ার মতো চেঁচিয়ে বলে উঠলো;

এতবড় শরীর কিসের জন‍্য বানিয়েছো। সবার সামনে অপমানিত হতে? হাত নেই নিজের? হৃদান চৌধুরী তোমাদের এভাবেই প্রশিক্ষণ দিয়েছে? অপমানিত হয়ে লেজু খুটিয়ে পালিয়ে যেতে শিখিয়েছে? ও মেয়ে তাই কি হয়েছে? সম্মান তাকেই করা উচিত যে সম্মানের যোগ‍্য। নিজের অপমানের সঠিক জবাব দিতে পারো না নিজেকে পুরুষ ভাবো?

পান্চুর চোখে বিষ্ময়। আদর এভাবে ভেবেছে ব‍্যাপারটা? আর সে ভাবলো আদর তাকে ভুল বুঝেছে। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। আদর আর দাড়ালো না হিয়াকে কষিয়ে আরেক চড় বসালো। চমকে উঠলো সবাই। হিয়া নিজেও চমকে উঠেছে। গাল টা যেন ব‍্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে। সেদিনের রাগটাও আজকে আদর মিটিয়ে নিলো যেন। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,

তোমার শরীর হাত দিয়ে বা শরীর দিয়ে না পার্টির প্রায় সবাই চোখ দিয়েই স্পর্শ করে যাচ্ছে। এই শরীর নিয়ে গর্ভ করছো। লজ্জা থাকা উচিত। আর এই পার্টিতে এসেছিস ভালো কথা ভালোভাবে থাকবি না হলে এই আদর আহমেদ কি করতে পারে নিশ্চিয় এতক্ষণে বুঝে গেছিস? আর হৃদের আশেপাশে দেখলে তোর গলাটা একদম কে ** টে দিবো। মনে যেন থাকে।

কথাটা বলেই আদর পান্চুর হাত ধরে সোফায় বসালো। গাল টা লাল হয়ে আছে। দুটোই থাপ্পড় একগালে পড়েছে। ব‍্যাথাও পাচ্ছে মনে হয়। সারভেন্ট কে বলে বরফ আনিয়ে নিজেই সুন্দর করে গালটা মালিশ করে দিলো। হৃদানের কেন জানি হিংসে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আদর বড় বোন হয়ে ছোট ভাইয়ের যত্ন নিচ্ছে। আদরের এসব গুণ ই হৃদানকে বেশী টানে। পার্টির প্রায় সবাই মুগ্ধ আদরের ব‍্যবহারে। শুধু রেগে আছে হিয়ান খান ও হিয়া খান। কিন্তু তার মধ‍্যে একজন অপলক দেখছে আদর কে। আদরের এমন রুপ থেকে সে বিমোহিত। সে হলো হিয়ার ভাই হিমেল খান। জীবনে বহুত মেয়ে দেখেছে সে। কত মেয়ের সাথে রিলেশনে গেছে। কিন্তু কারোর প্রতি তার এমন ফিলিংস কখনোই হয়নি। যাও বা একজনের জন‍্য হয়ে সেতো তাকে ছেড়ে অন‍্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছে। হিমেলের মুখে মুচকি হাসির রেষ। যেভাবেই হোক তাকে এই মেয়েকে পেতেই হবে!

পান্চু ছলছল নয়নে হাসি মাখা বদনে চেয়ে আছে আদরের দিকে। আদর ব‍্যাথাতুর মুখ নিয়ে বরফ ডলে যাচ্ছে পান্চুর গালে। আর বিড়বিড় করছে,

সাহস কত বড় মেয়ের! একেতো আমার ক‍্যাবলাব্রিটিশের দিকে নজর দিয়ে ঘোর পাপ করেছে তার উপর কিসব নান্টুফান্টু ড্রেস পড়েছে। আবার নিজে চোখ থাকতে আন্ধা হয়ে আমার আধা টাকু পান্চু কাকুকে থাপ্পড় মারে। আরেকটা দিতে পারলে শান্তি লাগতো। আরে আদর চাপ নিস না আরেকদিন আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে পুষিয়ে নিবি। আদর তুই জিনিয়াস তুই ভুলে গেছিস! হাহ!

আদরের কথা গুলো প্রথমে বিড়বিড় করে বললেও ; পরে হালকা চেঁচিয়ে বলায় পান্চু, আতইয়াব, হৃদান তারিম ওরা ঠিকই শুনেছে। সবাই একসাথে জোরে হেসে দিতেই আদর বুঝতে পারলো সে কি বলে ফেলেছে। জিভে কামড় দিয়ে মাথা নিচু করে নিলো। আতইয়াবের হৃদানের দিকে তাকাতেই অবাক হলো। মুগ্ধতার সহিত তার বোনকে দেখে চলছে হৃদান। চাহনীতে না আছে কোনো খারাপ দিক; একদম স্বচ্ছ ভালোবাসার রেষ। কেন জানি আতইয়াবের মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। আতইয়াব অবাক হলেন। সে বুঝতে পারে তার পরে কোন পুরুষ যদি আদরকে খুব ভালোবাসে সে হলো হৃদান। তবুও ভয় হয়! বোনকে হারানোর ভয় হয় তার।
আদর পরিবেশ স্বাভাবিক করতে পান্চুর দিকে চোখ রাঙিয়ে বলে উঠলো,

এই আধা টাকু পান্চু কাকু আমার সাথে তো খুব ঝগড়া করতে পারো। তখন মুখে কুলুপ এটেছিলে। গাধাআআআআ! যাও আমার চোখের সামনে থেকে। দুচোখে দেখতে ইচ্ছে করছে না তোমাকে। ভিতুর আন্ডা কোথাকার। তোমার বউ টাক হবে দেইখো।

পান্চুর মুখ ভোতা হয়ে এলো। সে টাক এই নিয়ে কম কথা শুনতে হয়? আবার তার বউ ও যদি টাক হয় আল্লাহ মালুম সারাজীবন তাকে খোটা শুনেই বাঁচতে হবে। পান্চু উঠে চলে গেলো। আদর তার ভাইয়ার পাশে দাড়ালো। হৃদান কে ইশারা করতেই হৃদান মাইক নিয়ে ঠিক মাঝখান টাই দাড়ালো,

হেলো এভরিওয়ান। ওয়েলকাম মাই পার্টি। আজকে আমার জ‍ন‍্য একটি বিশেষ দিন। আপনারা আহনাফ চৌধুরীকে নিশ্চয়ই চিনেন? খবরের কাগজ, নিউজ চ‍্যানেলে উনার সুনাম অনেক শুনেছেন। আজকে আপনাদের মাঝে পরিচয় করিয়ে দিবো আহনাফ চৌধুরী ওরফে আমার মামা’র মেয়ে আদর চৌধুরীকে। এতদিন সে গুপ্ত ছিলো। যার যথেষ্ট কারণ ও আছে। প্লিজ কাম আদর!

আতইয়াব চমকে তাকালো আদরের দিকে। আদর শান্ত হয়ে দেখছে। আতইয়াব কিছু বলবে আদর থামিয়ে দিলো। হাত ধরে বলে উঠলো,

ভাইয়া সবকিছু প্ল‍্যান মতোই এগোচ্ছে। আমার কিছুই হবে না। তুমি আর হৃদান আছো তো। কিচ্ছু হবে না। প্লিজ!

আতইয়াব হাত ছাড়িয়ে অন‍্যদিক ঘুরে রইলো। বোন তার কলিজা। কিছু হলে সে বাঁচবে কি করে। ইতিমধ‍্যে হিয়া ভয়ে কাঁপছে। আদরের পরিচয় আগে জানলে সে কখনোই লাগতে আসতো না। কি হবে এবার? হৃদান কে যদি সব বলে দেয় তার যতই ক্ষমতা থাকুক না কেন তাকে কুচিকুচি করে কা!! ট!! বে! আদরের সাথে সবাই পরিচিত হলো। অনেকেই আহনাফ চৌধুরী সম্পর্কে অনেক কথায় বললো। আবার অনেকেই দুঃখ প্রকাশ করলো। কিন্তু পুরো ঘটনাটা একজন নিরব শান্ত চোখে দেখে গেছে। টু শব্দ পর্যন্ত করেনি। নিজের মেয়েকে সবার সামনে থাপ্পড় খেতে দেখেও এগিয়ে যায় নি হিয়ান খান। তার মাথায় অন‍্য কিছু চলছে।

সবাই যার যার মতো আড্ডা দিচ্ছিলো। পান্চু উপরে বসে সিসি ফুটেজ দেখছে। তার মন বলছে কিছু হবে। তাই তো চারদিক নজর রাখছে। হঠাৎ একজন কে হৃদানের দিকে এগিয়ে যেতে দেখে পান্চু উঠে দাড়ালো। কারণ তার শার্টে হৃদানের দেওয়া লগো নেই। দৌড় ছুটলো হৃদানের দিকে। আদর ভাইয়ার পাশে বসে ছিলো চুপ করে। ভালো লাগছে না তার। পিপাসা পেতেই উঠে দাড়াতে গিয়ে একজনের হাতে চা**কু দেখে অবাক হলো। ভাবলো কাজ করবে হয়তো। তাই এত কিছু না ভেবে পানি খেতে যেতে নিতেই কেউ তার হাতে ছুরির আঁচড় বসিয়ে দিলো। শব্দ করে উঠলো সে। আতকে উঠলো পার্টির সবাই,,,,,,!
#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_১৪
Tahrim Muntahana

পার্টিতে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে। প্রত‍্যেকটা মানুষের নিশ্বাসের শব্দটাও যেন ভয়ানক লাগছে। আদরের চিৎকারে সবাই এগিয়ে আসলেও হৃদান আসে নি। সে এগোতে পারছে না। তার মনে হচ্ছে ভেতর থেকে হৃদপিন্ডটা কেউ খুবলে নিচ্ছে। পান্চু দৌড়ে সিড়ি টপকে এসেই আগন্তুক আক্রমণকারীকে ধরে ফেলে। চারপাশ থেকে গার্ডরা ঘিরে ধরে তাকে। আতইয়াব দৌড়ে গিয়ে আদর কে নিজের কাছে নিয়ে আসে। হাতে ভালোই কেটেছে ছুরির আঘাতে। গলগল করে রক্ত পড়ছে হাত থেকে। আদর চোখ মুখ কুচকে আছে। হাতটা ব‍্যাথায় শিরশির করছে। জ্বালাটা যেন একটু একটু করে বাড়ছে। তারিম ঝটপট ওদের নিয়ে উপরে চলে গেলো। এখানে থাকা নিরাপদ নয়। আবার কখন আক্রমণ হয় কে জানে!

পার্টিতে আর একটা মানুষ ও নেই। সবাই নিজ নিজ বাড়ি চলে গেছে। যাওয়ার আগে গার্ডরা ভালো করে চেক করে নিয়েছে। এর মধ‍্যে তিনজন কে সন্দেহজনক মনে করে গোপন কক্ষে নিয়ে এসেছে। হৃদান সেভাবেই দাড়িয়ে আছে। নড়ার শক্তিটুকু তার মধ‍্যে নেই। চোখের সামনে শুধু আদরের হাত থেকে গল গল করে রক্ত পড়া ; চিৎকার কানে ভেসে আসছে বারবার। হাত দিয়ে কান চেপে ধরলো হৃদান। গগণ কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠলো। আতকে উঠলো সবাই। আদরের ব‍্যান্ডেজ প্রায় শেষ। ফিনিশিং টা বাকি। হৃদানের চিৎকারে আদর ভয় পেয়ে যায়। এটার ভয় ই সে পাচ্ছিলো। দৌড়ে নিচে নেমে আসে। ওর দেখাদেখি তারিম আতইয়াব ওরাও নেমে আসে। হৃদান ড্রয়িং রুমে ভাঙচুর করছে। একের পর এক ফুলদানি টি-টেবিল ভেঙে চলছে। একটু আগের পাওয়া মনের ধাক্কা টা যেন রাগ দিয়ে পুষিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু এ জ্বালা তো এসব ভেঙে হবে না। তার মনে আগের সেই হৃদান চৌধুরীর অস্তিত্ব টের পাচ্ছে। রক্ত নিয়ে খেলার ইচ্ছেটা পুনরায় জেগে উঠছে তার। পিয়াস চুপটি করে দাড়িয়ে আছে। সে বুঝে নিয়েছে এরপর কি হবে কিন্তু সে চাইলেও এটা পরিবর্তন করতে পারবে না। তার থেকে চুপ থাকায় শ্রেয়।

আতইয়াব আদরের একহাত শক্ত করে ধরে আছে। আদর চাইলেও হৃদানের কাছে যেতে পারছে না। আতইয়াবের চোখে মুখে রাগ উপচে পড়ছে। মনের মধ‍্যে রাগ জমা হচ্ছে হৃদান চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তার বোনের সাথে হওয়া একটু আগের ঘটনা টার জন‍্য হৃদানকে দোষ দিচ্ছে সে। যেও বা একটু আগে ভেবেছিলো হৃদানের সাথে আদরের এই সম্পর্কটা সে স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিবে কিন্তু নাহ! এখন কোনো ভাবেই সম্ভব না। হৃদান চ‍ৌধুরীর সাথে তার বোনের জীবন জড়িয়ে গেলে তার বোনের জীবন হুমকিতে থাকবে। কোনো ভাই ই চায় না তার বোন কষ্টে থাকুক।

আদরের অস্তিত্ব টের পেয়ে ভাঙচুর বন্ধ করে হৃদান। পাগলের মতো এগিয়ে আসে আদরের দিকে। মনে হচ্ছে ছুরিটা আদরের হাতে না তার কলিজায় লেগেছে। চোখ দুটো অসম্ভব লাল! মাঝখানে বাধাপ্রাপ্ত হলো আতইয়াবের। চোখ মুখ শক্ত করে বলে উঠলো,

আমি চাইনা আমার বোনের জীবনে হৃদান চৌধুরীর কোনোরকম ছায়া থাকুক। আমার বোন থেকে দূরে থাকবেন। নাহলে আমি আতইয়াব তাযিন ইততেয়াজ কি করতে পারি সেটিও দেখতে পারবেন।একদম মাটির সাথে মিশিয়ে দিবো হৃদান চৌধুরীর নাম। মাইন্ড ইট!

আদরকে নিয়ে হাটা ধরলো আতইয়াব। হৃদানের নিজেকে হেল্পলেস লাগছে। এই প্রথম কেউ তাকে হুমকি দিলো। এই প্রথম হৃদান চৌধুরী তার পরাজয় মেনে নিচ্ছে শুধুমাত্র ভালোবাসার জন‍্য। পেছন ঘুরে তাকালো আদর। চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ করে নিলো হৃদান। ওই চোখে তার মরণ লুকিয়ে আছে! ওই চোখেতেই হৃদান চৌধুরী নিঃশেষ! আদর রা চলে যেতেই হৃদান ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। তারিমের চোখেও পানি। কিন্তু সে একটা কথাও বলেনি আতইয়াবকে। না বুঝে এমন করার কারণে আতইয়াব কে শাস্তি পেতে হবে! সেই শাস্তি সে ভালোবাসা থেকে দূরে থেকেই পাবে। দুটো লাফবার্ড কে আলাদা করে সে তো নিজে ভালোবাসার গল্প রচনা করতে পারেনা। তার ও প্রাপ্রতা আছে। কষ্টের বদল কষ্ট!

গোপন কক্ষের দরজায় দাড়িয়ে আছে পান্চু। তার চোখে মুখে রাগের সাথে ব‍্যাথাতুর একটা আবাশ পাওয়া যাচ্ছে। সন্দেহজনক চারজনের এখনো জ্ঞান ফেরেনি। ফেরার পরেই পান্চু তার খেলা দেখাবে এই আশায় দরজায় দাড়িয়ে আছে। যদিও সে যথেষ্ট কনফিউস হৃদান চৌধুরী তাকে সেই সুযোগ দিবে কিনা তবুও আশা তো থাকতেই পারে! অন্ধকার নয় আলোতেই চারজন কে রাখা হয়েছে। যেন জ্ঞান ফেরার পর একেঅপরকে দেখে চমকে উঠে। ভয় ই তো দেখবে আজকে হৃদান চৌধুরী। হঠাৎ ভেতর থেকে চিৎকার আসতেই পান্চু হেসে দিলো। জ্ঞান ফিরেছে সবার। নিশ্চিত পান্চু; একেঅপরকে দেখে ওরা ভাবছে কি করে হলো। দরজাটা একটু খুলে চোখ রাখলো ভেতরে। আদরের উপর ছুরি চালানো লোকটা একজন কে বলছে,

তুই এখানে কিভাবে? সারাবাড়ি খুঁজেছি তোকে। তোর জন‍্যই সব ব্লান্ডার হলো!

লোকটি হতাশ কন্ঠে বলে উঠলো,

আমি প্রশিক্ষণ রুম চেক করছিলাম। হঠাৎ কে যেন এসে এমন জোরে চিৎকার করে উঠলো আমি ভেবেছি আমাকে দেখে চিৎকার করেছে। সে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম!

পান্চু ফট করে নিচের দিক তাকালো। তাকাতেই তার চোখ মুখে ব‍্যাথা ফুটে উঠলো। যেন চেইন লাগানোর সময় পাওয়া ব‍্যাথাটা এখনো পাচ্ছে সে। আবার নিজেকে বাহুবাও দিলো পান্চু। সে যদি ব‍্যাথার জন‍্য ওইভাবে প্রশিক্ষণ রুমে গিয়ে চিৎকার না করতো চক্র টা ধরা পড়তো না। খুব বড় ক্ষতি হয়ে যেতো তাহলে। তার জন‍্যই সম্ভব হয়েছে ভেবেই নিজের টাক মাথায় হাত বুলিয়ে নিলো সে। ভেতরে গার্ড চারটি নিজেদের মধ‍্যে ঝগড়া করেই যাচ্ছে। কে কার দোষ কাকে দিতে পারবে। তারা ভুলেই গেছে যে হৃদান চৌধুরীর হাতে পড়েছে তারা। প্রাণপাখিটা উড়ার অপেক্ষা শুধু। হঠাৎ ই পায়ের ফট ফট শব্দে পান্চু দরজাটা ঠাস করে অফ করে দিলো। সোজা হয়ে দাড়িয়ে রইলো। এই হাটা তার বসে। সে চিনে!

গোপন রুমের সামনে পান্চুকে দেখেও হৃদান কিছু বললো না। সে বলার মধ‍্যেই নেই। দরজা টা খুলে ভেতরে ঢুকে গেলো। পিছনে পান্চুও গেলো। পিয়াস দরজায় এসে দাড়িয়েছে। আবার সেই রক্তের খেলা। অনেকদিন হলো দেখে না। ভালোয় চলছিলো তো হঠাৎ করে কার মরার শখ হলো যে ঘুমন্ত নিষ্ঠর হৃদান চৌধুরীকে জাগিয়ে তুলতে হলো। আবার শুরু হবে রক্ত দেখে আনন্দ নেওয়া। যতদিন পযর্ন্ত শেষ না দেখছে হৃদান ততদিন থামবে সে পিয়াস শিউর।সে বললেও কিছু হবে না উল্টো তাকে বন্দী করে নিজের কার্য সচল রাখবে হৃদান।

হৃদানকে দেখেই চারজন গার্ড ঝগড়া থামিয়ে দেয়। এতক্ষণে হয়তো মনে পড়েছে তারা জমের দুয়ারে রয়েছে। চোখ মুখে একরাশ ভয় এসে হানা দিলো। কাঁপতে লাগলো তারা। সবচেয়ে বেশী ভয় তো তার রে ছুরিটা চালিয়েছে। হৃদান এটিটিউটের সাথে চেয়ারে বসলো। কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,

তোদের কে পাঠিয়েছে জিজ্ঞেস করবো না। হৃদান চৌধুরীর রুলসের বাহিরে এটা। সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবো। তোদের সাহস আছে তাইনা? হৃদান চৌধুরীর বাড়ি এসে হৃদান চৌধুরী কলিজার উপর হামলা! দম আছে বলতে হবে! তো শুরু করা যাক দমের খেলা! কত দম আমাকেও তো দেখতে হবে নাকি?

হো হো করে বিকট আওয়াজে হেসে উঠলো হৃদান। উন্মাদ লাগছে তাকে এখন। পান্চু পিছিয়ে এসে পিয়াসের সাথে দাড়িয়েছে। তার ও ভয় করছে এখন। তবুও সাহস নিয়ে বলে উঠলো,

বস ক্ষমা করবেন কাজের মধ‍্যে কথা বলার জন‍্য। কিন্তু আমার একটা অনুরোধ আছে। আর অনুরোধ টা আপনাকে রাখতেই হবে। আমি বিনা পয়সায় আপনার গোলামি করে যাবো সারাজীবন তবুও আমার অনুরোধ আপনাকে আজ রাখতেই হবে।

হৃদান ভ্রু কুচকে তাকালো পান্চুর দিকে। এই মুহূর্তে তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কতটা বিরক্ত হয়েছে সে। পান্চু ঢোক গিলে স্ট্রং হয়ে বলল,

আপনি সবাইকে মারেন কাটেন যাই করেন ছুরি চালানো কালপ্রিটটাকে শেষ আঘাত আমিই করবো। আমার সামনে ম‍্যামের গায়ে ছুরি চালিয়েছে ও। আমি শেষ করতে চাই ওকে। প্লিজ বস!

হৃদান হাসলো। ভালোবাসা! সত‍্যিই ভালোবাসা সুন্দর। আগে কখনোই এমন সময়ে তার মুখে হিংস্রতা ছাড়া কিছু থাকতো না বাট আজকে! তার মুখে হাসি, প্রিয়জনকে পাওয়ার আকুলতা, প্রিয়জনকে হারানোর ব‍্যাথা প্রকাশ পাচ্ছে! ভালোবাসা সুন্দর! মাথা নেড়ে সায় জানাতেই পান্চুর মুখ কঠিন হয়ে এলো। যেন সে এখনি কুচি কুচি করে কা! ট! ছে। পান্চু এগিয়ে গিয়ে হৃদানের সামনে কিছু অস্ত্র তুলে ধরলো। পছন্দ সই অস্ত্র নিয়ে একের পর এক আঘাত করতে লাগলো তিনজন কে। বেচারা তিনজন চিৎকার ও করতে পারছে না মুখ বন্ধ থাকায়। ভেতর থেকে মরে যাচ্ছে। প্রাণ পাখি যাই যাই তবুও যেন যায় না। আর একজন তো এসব দেখে ভেতর থেকে শেষ ই হয়ে যাচ্ছে ভয়ে। ওদের তিনজনকে ছেড়ে হৃদান ছুরি চালানো লোকটার সামনে এসে দাড়ালো। চিৎকার করে বলে উঠলো,

এই হাত দিয়ে আঘাত করেছিলি আমার কলিজাকে? এই হাত দিয়ে? এই কেমনে পারলি আঘাত করতে। তোর একটুও মনে হলো না হৃদান চৌধুরীর সামনে তার কলিজাকে আঘাত করলে এর পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে। কিছু না ভেবেই ছুরিটা বসিয়ে দিলি। এই দেখ মনে হচ্ছে তোর ছুরির আঘাতটা ওর হাতে না আমার কলিজায় লেগেছে। ক্ষত বিক্ষত হয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে কলিজাটা। দগ্ধ হচ্ছি প্রতি সেকেন্ড। যাকে ধরতে গেলে আমি একশো বার ভেবে ধরি, ব‍্যাথা পাবে কিনা; যার সাথে কথা বলতে গেলে একশো বার ভাবি, আমার কথায় কষ্ট পাবে কিনা; সেই ফুলটাকে তুই আঘাত করলি? এমন আঘাত করলি রক্ত ঝরলো ফুলের শরীর থেকে। ওর লাল রক্ত যে তোর রক্তের পিপাসা জাগিয়েছে আমার। রক্ত চাই তোর! তোর চোখ মুখে আতঙ্ক দেখতে চাই! বাঁচার জন‍্য আকুলতা দেখতে চাই! হৃদান চৌধুরীক শেষ করে দিতে চাইছিলি তুই? নিজের চোখে নিজের মৃত‍্য দেখ!

কথাটা বলেই শরীর থেকে হাতটা আলাদা করে দিলো লোকটা। চোখ থেকে টপটপ পানি পড়ছে। চোখে মুখে আঘাতের ভয়াবহ ব‍্যাথা স্পষ্ট। হৃদান থামলো না একেরপর এক আঘাত করতে লাগলো বাকি অংশ টুকুই। এই ভাবে সারা শরীরে
দুটো ঘন্টা নিজের নিষ্ঠুর তম অত‍্যাচার চালিয়ে চুপ করে বসে রইলো হৃদান। তাকে কে বসতে দেখেই পান্চু দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে ছুরি চালানো লোকটা সামনে গিয়ে দাড়ালো। নিজের হাত দিয়ে চোখের ভেতর আচড় মারলো। এই চোখ তার ম‍্যামের উপর পড়েছে এই চোখে কোনো অধিকার নেই বেঁচে থাকার। পিয়াস চুপচাপ সব দেখে যাচ্ছে। পান্চুর কাজ দেখে সে রিতীমতো অবাক। আজ পান্চু যথেষ্ট স্ট্রং থেকে সবটা দেখে গেছে আর নিজেও আঘাত করছে! অন‍্যদিন তো তার পেছনে চোখ মুখ খিঁচে দাড়িয়ে থাকে। ভালোবাসা সুন্দর! পিয়াস হাসলো। হৃদান বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। গোপন রুমের দরজাটাও বন্ধ হয়ে গেলো!

নিজের ঘরে উদাসীন হয়ে বসে আছে আদর। হাতের ব‍্যাথার থেকে মনের ব‍্যাথাটা প্রখর বেশী। সে হৃদান কে ছাড়া কিভাবে থাকবে। আতইয়াব কে বুঝাতেও পারছে না তার উপর হামলার পেছনে হৃদান দায়ী না। সে যে প্ল‍্যান টা করেছে এমন হওয়ার ই ছিলো। আতইয়াব আদরের ফোন টাও নিয়ে নিয়েছে। হৃদান কেমন আছে, কি অবস্থায় আছে সে খুঁজ ও নিতে পারছে না। ঘুম যেন চোখে ভর করে আছে। আতইয়াব ব‍্যাথার ঔষধের সাথে ঘুমের ঔষধ ও খাইয়ে দিয়েছে আদরকে। সে জানে তার বোন আজ এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমাবে না। তাই তো এই পন্থা।

ঘুমে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিবে হঠাৎ কিছু পড়ার শব্দ আসতেই ফট করে চোখ খুললো সে। আবছা চোখে একটা অবয়ব দেখেও কিছু বলতে পারলো না। আদরের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। অস্পষ্ট সুরে হৃদ নামটা বলে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো আদর। তখনি কাছে এসে দাড়ালো হৃদান। অনেক কষ্টে বেলকনি টপকে আদরের ঘরে এসেছে সে। কালো টিশার্ট আর ট্রাউজার পড়ে এসেছে। বাম হাতের ঠিক মাঝখানটাই ব‍্যান্ডেজ করা। যেমনটা আদরের ব‍্যান্ডেজ করা। নিজেকেই নিজে আঘাত করেছে সে। নিজের ভালোবাসাকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে না পারার দায় টা মাথায় নিয়ে নিজের হাতেই ছুরি চালিয়ে দিয়েছে। ব‍্যান্ডেজ ও করতে চায়নি। পিয়াস জোর করে ; ইমোশনাল ব্ল‍্যাকমেইল করে ব‍্যান্ডেজ করিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।

আদরের ঘুমন্ত মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে হৃদান। মুখটা তেলতেলে হয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে বিছানায় ছড়িয়ে আছে। পাগল পাগল লাগছে আদর কে। কিন্তু হৃদানের চোখে এই আদর টাকেও অসম্ভব সুন্দর লাগছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী সে তার মাকেই মনে করতো। তারপর যোগ হয়েছিলো ছোট হৃদযা। এখন তার জীবনে তিনজন রয়েছে। তাদের মধ‍্যে আদর একজন।
আদর কিছুটা হা করে ঘুমাই। দেখতে খুব খারাপ না লাগলেও বেশী ভালোও লাগেনা। হৃদান মুচকি হেসে হা টা বন্ধ করে দিলো। একটু পর আবার মুখটা হা হয়ে এলো। হৃদানের বেশ ভালো লাগছে এমন করতে। যতবার হা করছে ততবার বন্ধ করে দিচ্ছে হৃদান। আর মরার মতো দিনদুনিয়া ভুলে ঘুমাচ্ছে আদর। টেরই পাচ্ছে না তার অগোচরে কেউ একজন তার পাশে বসে চোখ, মনের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে!

ভোর রাত হতেই হৃদান অনিচ্ছা সত্তেও বের হয়ে আসে ঘর থেকে। আদরের অগোচরে সে গভীর ভাবে স্পর্শ করেনি। যদিও কপালে চুমু খাওয়ার ইচ্ছে টা জেগে উঠেছিলো ; পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়েছে সে। আসার আগে একটা প‍্যাকেজ রেখে এসেছে হৃদান। যা শুধু আদরের চোখেই পড়বে। ভুল বশত ওই ইবলিশটার চোখে পড়লে তার গর্দান নিবে নিশ্চিত!

সকাল ১০ টা বাজে। আতইয়াব একেরপর এক ফোন দিয়ে যাচ্ছে তারিম কে। কিন্তু তারিম ফোন সামনে রেখে বসে আছে তবুও ফোন ধরছে না। তার ভাইকে কষ্ট দিয়ে এখন পিরিত করতে আসছে! তা তো হবে না চান্দু। শিক্ষা কাকে বলে এবার টের পাবে আতইয়াব। এসব ভেবে কিটকিটিয়ে হেসে দিলো তারিম। তার যেন এমন করতে খুব আনন্দ হচ্ছে। অন‍্যদিকে আতইয়াব রেগে যাচ্ছে। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে ফোন দিয়ে যাচ্ছে। প্রবলেমটা হৃদানের সাথে; সে কেন নিজের বউ ছাড়া থাকবে? দরকার পড়লে মামলা করবে তবুও তার বউ লাগবেই। এই তারিম কে যদি শিক্ষা না দিয়েছে সে। তার সাথে এমন করা, তাকে ইগনোর করা; একবার কাছে পাই তখন বুঝাবো। মনের মধ‍্যে ফন্দি এটে নিলো আতইয়াব।

কে কাকে শিক্ষা দিবে? শেষে কার জয় হবে? তারিমের প্ল‍্যান কি সফল হবে? হৃদানের ভালোবাসা কি জয়ী হবে? নাকি আতইয়াবের ভুলের জন‍্য হেরে যাবে?

চলবে….?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here