মন পাথরে হঠাৎ ঝড় পর্ব -১৫+১৬

#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_১৫
Tahrim Muntahana

ভার্সিটি এসেছে তারিম। আদর, সুবাহ কেউ আসেনি আজ। তারিম জানতো আদর আসবেনা কিন্তু সুবাহ’র আসার কথা ছিলো। হঠাৎ ফোন করে বলল আসবেনা। তারিম ভাবছে সুবাহ তো কথার খেলাপ করার মেয়ে না। তাহলে এমন করবে কেন? এর পেছনে কিছু কারণ নেই তো? ভাবতে ভাবতেই গেটে আতইয়াব কে দেখে তারিমের আর বুঝতে বাকি থাকলো না এই সব আতইয়াবের ই কাজ। মনে মনে নিজেও প্ল‍্যান করে নিলো উল্টো চাল দেওয়ার। ভিড়ের মধ‍্যে ঢুকে নিজেকে আড়াল করে নিলো। আতইয়াব সরাসরি তারিমের ক্লাসের দিকে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই ভিড়ের মধ‍্যে একটা মেয়ের কথা শুনেই তারিম রেগে ফুসে উঠলো। মেয়েটি আতইয়াব কে দেখেই ক্রাশ খেয়েছে। তারিম আর সেখানে থাকতে পারলো না। রেগে গেলেই তার সব প্ল‍্যান ফ্লপ। চুপি চুপি ভার্সিটির পেছন দিয়ে রাস্তায় এসে দাড়ালো। বাড়ি ফিরার কথা ভাবছে না সে। সুবাহ কেও একটা শিক্ষা দিতে ইচ্ছে করছে তার। বেস্টুর সাথে এমন করলো? রিকশা নিয়ে সুবাহ’র বাড়ির দিকে রওনা হলো।

নিজের শশুড় বাড়িতে হঠাৎ করে তারিম কে দেখে চমকে উঠলো সুবাহ। তারিম স্বাভাবিক ভাবেই সোফায় বসে শরবত গিলে যাচ্ছে। ফালাহ’র মা যত্ন করে খাওয়াচ্ছে তাকে। সুবাহ মাথা নিচু করে বসে আছে। তারিম খাওয়ার মাঝেই বলে উঠলো,

তুই আবার বেইমানি করলি আমার সাথে? একে তো পিরিত করে বলিস নাই তার উপর আজকে এমন করলি। অল্পের জন‍্য ফেঁসে যাচ্ছিলাম আমি। কি হতো? সবটা প্ল‍্যান গন্ডগোল হয়ে যেতো। এতকিছুর পরেও যে আমার না হওয়া শশুড় বাড়িতে এসেছি ; কই একটু যত্ন করবি। তা না করে মাথা নিচু করে অপরাধির মতো বসে আছিস! বলি লজ্জা করে না?

তারিমের এমন কথায় ফালাহ’র মা হিহিহি করে হেসে দেয়। সুবাহ কটমট চোখে তাকিয়ে থাকে তারিমের দিকে। তারিম ভ্রু নাচিয়ে কিছু বলার জন‍্য মুখ খুলতে নিবে সুবাহ ঝটপট তারিমের হাত ধরে নিজের ঘরে ঢুকে পড়ে। তারিম ঘরে ঢুকেই হো হো করে হেসে বিছানায় শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর বিছানা থেকে উঠেই বিচলিত কন্ঠে বলে,

এই না এই বিছানায় শুয়া যাবে না। আল্লাহ কি করতে যাচ্ছিলাম। আমার না হওয়া বিছানাটা! এইখানেই দুজনে রোমান্স করো তাইনা। অথচ তোদের কিছু সময় পর বিয়ে করে জামাইকে ভালোবাসিই বলতে পারলাম না। হাই কপাল!

ডং করে সোফায় বসে পড়লো তারিম। সুবাহ দাড়িয়ে শুধু তারিমের কান্ড দেখছে। তাকে যে আজ তারিম জ্বালাতে এসেছে সে প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলো। তারিম আবার সোফা থেকে দাড়িয়ে গেলো। মুখে হাত দিয়ে অবাক কন্ঠে বলল,

এই আবার ভুল করতে যাচ্ছিলাম। ছি ছি। আমার না হওয়া সোফাটাই ; ভাইয়ার কোলের উপর বসে থাকো তাইনা? নট নট এখানেও বসা যাবে না। আমি বরং দাড়িয়েই থাকি।

সুবাহ এবার বিরক্ত হলো। চোখ ছোট হয়ে এলো তার। সুবাহ কে বিরক্ত করতে তারিমের তো অসম্ভব ভালো লাগছে। দেখ এবার কেমন লাগে। তাকে ভার্সিটিতে একা ফেলে এখানে সংসার করা হচ্ছে। আজকের দিনটাই মাটি করে দিবে সে। ভেবেই একগাল হেসে সুবাহ কে জড়িয়ে ধরলো। বলে হঠাৎ করেই ছেড়ে দিয়ে বলল,

এই আমি কোথায়? এইখানে থাকা যাবে না। এ তো আমার না হওয়া সেই ঘর টা। কি অলক্ষুণে ব‍্যাপার। আর তুই তো আমার না হওয়া জামাই টার বউ। ছি ছি তোকে জড়িয়ে ধরে কি পাপ টাই না করলাম। এ তো ঘোর পাপ। আল্লাহ আপনি মহান প্লিততত হেলেপস মি। আমাকে পরিশুদ্ধ করে দিন। আমি এ মুখ কাকে দেখাবো। আমি…

আর বলতে পারলো না তারিম। তার আগেই তার পিঠে ঝাটার বারি পড়লো। লাফিয়ে উঠলো সে। পেছনে সুবাহ কে শাশুড়ি রিনা খানের মতো দাড়িয়ে থাকতে দেখে আত্মা কেঁপে উঠে তারিমের। বেশীই বিরক্ত করে ফেলেছে সে। আরো কয়টা ঝাটার বারি যে তার পিঠে পড়বে এখান থেকে এই মুহূর্তে না গেলে সে ভালোয় বুঝতে পারছে। দৌড় দিতে যাবে সামনে এসে দাড়ালো ফালাহ। তারিম হাহা হেসে ফালাহ’র পেছনে দাড়িয়ে পড়লো। ফালাহ তো এতক্ষণ দরজায় দাড়িয়ে সবকিছুই শুনেছে। তার বেশ হাসিও পাচ্ছে কিন্তু বউয়ের যে রূপ দেখছে হাসা মানেই ফাঁসা!

তারিম যা ভেবেছিলো তার কিছুই হলো না। সুবাহ ঝাটা টা রেখে বিছানায় বসলো। মুখ ভার করে বলে উঠলো,

তুই কেন এসব বলছিস আমি জানি। আমার কোনো দোষ নাই। সব দোষ তোর না হওয়া জামাইটার!

তারিম কিছুটা ইতস্তত করলো। ফালাহ’র সামনে নিজের স্বরূপ বের হয়ে গেলে সেরেছে। ফালাহ সুবাহ’র কথা শুনে হো হো করে হেসে দিলো। দুই জনের চোখ ই এখন তার উপর। হয়তো ভাবছে হাসির কি হলো। হাসি থামিয়ে ফালাহ বলল,

আমার কোনো দোষ নাই। সব দোষ তোমার জামাই য়ের। আমার না হওয়া বউটার সাথে তার জামাই একান্তে কিছু সময় কাটাতে চেয়েছিলো তাই আমাকে শাসিয়ে বলেছে সুবাহ কে যেন আজকে সময় দিই! না হলে বউ ইগনোরের মামলা ঠুকে দিবে!

ফালাহ’র কথায় তারিম ভ্রু কুচকালো। ও তাহলে এই ব‍্যাপার। তারিম ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠলো,

বুঝলাম! দোষ তো আপনারাও আছে। আপনি সবটা জেনেও রাজী হয়ে গেলেন। ওওও বউয়ের সাথে সারাক্ষণ লেপ্টে থাকতে ইচ্ছে হয় তাইনা? আপনারও শাস্তি পাওয়া উচিত। তার জন‍্য কি করতে হবে এই হৃদযা চৌধুরী জানে!

ফালাহ এবার থতমত খেয়ে গেলো। এই যাহ দোষ না করেও শাস্তি। একটু তো বউকে কাছে পেতে চেয়েছিলো কি এমন পাপ করেছে সে! সুবাহ মিটমিটিয়ে হাসছে ফালাহ’কে জব্দ হতে দেখে। তারিম ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। ফালাহ করুণ চোখে সুবাহ’র দিকে তাকালো। ফালাহ ভাবছে তারিম আজ ঘর থেকে যাবে না! অন‍্যদিকে তারিম ভাবছে অন‍্যকিছু। কিছুক্ষণ ভেবে আবেগি কন্ঠে বলে উঠলো,

সুবু চল আদুকে দেখে আসি। বাড়িতে একা একা কি করছে কে জানে। ওই ইবলিশ টা তো এখনো ভার্সিটি আমাকে খুঁজে চলছে। হিহিহি উচিত শিক্ষা হয়েছে। এবার বুঝবে এই হৃদযা চৌধুরী কি? এখন আমি সম্পূর্ণ হৃদযা চৌধুরী যে তার ভাইয়ের ভালোবাসার জন‍্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এই সংগ্রাম চলতেই থাকবে। দরকার পড়লে হরতাল ধর্মঘট অবরোধ অনশন সব করবো তবুও পিছিয়ে যাবো না! আমার দাবী মানতেই হবে।

তারিম যেন হৃদানের বোন হৃদযার ক‍্যারেক্টারে ঢুকে গেছে। এ যেন বিপ্লবি কন্ঠস্বর। হৃদান চৌধুরী ছুরি চালায় এ চালাচ্ছে কথার বুলি! ফালাহ সুবাহ হা করে তারিমের কথা শুনে যাচ্ছে। তারিম একপলক ওদের কে দেখে নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে আবার নরম কন্ঠে বলল,

চল না সুবু। আদুর খুব ভালো লাগবে আমাদের দেখে। কত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে ওর সাথে আমরা গেলে কিছুটা সময় ভালো কাটবে ওর। ফোন ও তো নিয়ে নিয়েছে ইবলিশে!

তারিমের সম্মোহনী কথায় সম্মোহিত হয়ে সুবাহ’র মুখটাতেও দুঃখী দুঃখী ভাব এসে গেলো। আহারে! তারিম তো ঠিকই বলেছে। মেয়েটা সারাদিন একা একা কি করবে! তারা বেস্ট ফ্রেন্ড; এই সময়ে পাশে থাকা তাদের বন্ধুত্বজনিত কর্তব্য! ভেবেই থ্রিপিস নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো। সুবাহ যেতেই ফালাহ’র গলা টিপে ধরলো তারিম! ফালাহ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। তারিম কিটকিটিয়ে হেসে বললো,

ভালো হয়েছে না। বউয়ের সাথে রোমান্স করবেন? করাচ্ছি না? এখন ঘরে একা একা বসে কোলবালিশের সাথে রোমান্স করেন। আমার ভাইকে কষ্ট দেওয়ার ফন্দি এটেছে ওই আতইয়াব তাযিন ইততেয়াজ। নিজেও টের পাবে হুহ! ইটস তারিম এও নট ইটস হৃদযা চৌধুরী!

ভাব নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে এলো তারিম। ফালাহ এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এ যেন অন‍্য তারিম কে দেখছে সে। আগে তারিম কখনোই এমন ছিলো না। এখন তো কিলার কিলার লুক নিয়ে থাকে। হৃদান চৌধুরীর বাতাস পেয়েছে বলে কথা! বড় করে শ্বাস নিলো ফালাহ! আহা কষ্ট বন্ধুকে সাহায‍্য করে নিজে ফায়দা লুটাতে চেয়েছিলো আর এখন বন্ধু তো ছ‍্যাকা খেলো খেলোই; সাথে তাকেও ছ‍্যাকা খেয়ে আহম্মক হয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। সুবাহ রেডি হচ্ছে খুশী মনে। ফালাহ’র দিকে তাকাচ্ছে না একটুও। ফালাহ অসহায় চোখে সবটা দেখে যাচ্ছে। সুবাহ রেডি হয়ে ঘর থেকে বের হতেই দেখতে পেলো তারিম তার শাশুড়ির সাথে জমিয়ে আলাপ করছে। সুবাহ যেতেই তার শাশুড়ি বলে উঠলো,

সাবধানে যাস। সন্ধ‍্যার দিক দিয়ে ফালাহ গিয়ে নিয়ে আসবে চিন্তা করিস না। আদরের সাথে একবার কথা বলিয়ে দিস আমাকে। আহারে মেয়েটা!

সুবাহ মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো। ওরে শাশুড়ি। ধন‍্য জীবন! তারিম বিদায় নিয়ে সুবাহ কে নিয়ে বের হয়ে গেলো। ফালাহ নিজের ঘরের জানালা দিয়ে সুবাহ’র যাওয়া টা দেখে বিছানায় শুয়ে পড়লো চিত হয়ে। আহা বিবাহিত জীবন! পুরাই প‍্যারাময়!
______________________

ফোনে কথা বলা শেষ করে বেলকনিতে বসেছিলো আদর। কিছুক্ষণ পর পর মুচকি হাসছিলো। হটাৎ নিজের ঘরে তার দুই বেস্টুকে দেখে অবাক হই সে। তার চেয়ে বেশী খুশী হয়। আনস্পেক্টেড ছিলো। তারিম সুবাহ আদরকে মুচকি মুচকি হাসতে দেখে ঠোঁটে দুষ্টু হাসি এনে ভ্রু নাচাতেই আদর লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। ভাবতে থাকে সকালের কথা,

সকালে ঘুম থেকে উঠেই হঠাৎ করে রাতের কথা মনে হয় আদরের। আবছা ছায়াটা সে এখনো টের পাচ্ছে মনে হয়। কে এসেছিলো? এত ঘুম ই বা আসলো কি করে তার চোখে? ভাবতে ভাবতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো ফ্রেশ হতে। বাম হাত নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে। ব‍্যাথাটা একটু কমলেও পুরোটা যায়নি। ওয়াশরুমের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়লো একটি শপিং ব‍্যাগ। কৌতুহলী হয়ে এগিয়ে গেলো সে। ব‍্যাগ টা নিয়ে আবার ঘরে চলে আসলো। কি হতে পারে ব‍্যাগটায়? ভেতরের জিনিসটা বের করতেই আদরের মুখ হা হয়ে গেলো। আই ফোন! নিউ! তার তো আছে। সাদা চিরকুট দেখে ঝটপট হাতে তুলে নিলো,

অবাক হয়েছো আন্ডাবাচ্চা? তোমার থেকে দূরে থাকা সম্ভব না। লুকিয়ে রেখো। কথা হবে! আই নিড ইউ পাখি!

আদরের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। রাতে আবছা ছায়াটা যে তার ক‍্যাবলাব্রিটিশ ছিলো বুঝতে পেরেই আনন্দিত হলো সে। বক্সটা লুকিয়ে রেখে ফ্রেশ হয়ে এলো। এখনি আবার ভাইয়া এসে যাবে। ঠিক তাই হলো ; আদর ফ্রেশ হয়ে আসতেই আতইয়াব খাবার আর ঔষধ নিয়ে ঘরে ঢুকলো। আদর কিছুই বললো না। চুপচাপ আতইয়াব যা ফলে শুনে নিলো। খাবার, ঔষধ খাইয়ে আতইয়াব নিচে চলে গেলো। আদর অপেক্ষা করতে থাকে আতইয়াবের যাওয়ার। ঠিক আধাঘন্টা পর আতইয়াব বাড়ি থেকে বের হয়। তখনি ফোন টা অন করে ফোন লাগাই হৃদের নম্বরে। সেই থেকে যে কথা বলে যাচ্ছে কলিং বেলের শব্দে ফোন রেখে বেলকনিতে বসে আদর।

আদর কে ভাবনার জগতে হাসতে দেখে তারিম, সুবাহ জোরে হেসে উঠে। আদরের কাছে সবটা শুনে ওরা এটা ওটা বলে আদর কে লজ্জা দেওয়ার চেষ্টা করলেও; তেমন লাভ হয়। আদরের লজ্জাটা আবার একটু কম!

সারাটা দিন অনেক ভালো কেটেছে আদরের। প্রিয় মানুষটা হঠাৎ করে চমক দেওয়া; কথা বলা; দুই বেস্টুর আগমনে আদর যেন ভুলেই গেছে কালকের হামলার কথা। অন‍্যদিকে হৃদান এতকিছুর মাঝেও আদরের সাথে কথা বলতে পেরে মহাখুশী। গুনগুনিয়ে গান করছে; হাটার তালে তালে নাচছে; এ যেন অন‍্য হৃদান! আগের হৃদান চৌধুরী ড্রেনে ডুবে গেছে! পান্চু তো বসের আচরণে বারবার টাকলা মাথায় হাত বুলাচ্ছে। তার মনে এখন অন‍্য চিন্তা ঘুরছে। চিন্তাটাও বিশাল। মনের মধ‍্যে প্রেম প্রেম পাচ্ছে তার! প্রেম করলে সে বসের মতো উুরুউুরু মন নিয়ে থাকতে পারবে। গুনগুনিয়ে গান গাইবে, ডিউটি করতে করতে হালকা নাচবে; এও জাস্ট ইয়ো ইয়ো ব‍্যাপার! প্রেমের কথা মনে পড়তেই পান্চুর চোখে একটা মেয়ের ছবি ভেসে উঠে। চিক চিক করে উঠে চোখ! আহা কি সুন্দর মেয়েটা। শালীন ভাবে চলাফেরা করে। তাকে দেখেও কেমন মুচকি হাসছিলো। তাহলে কি সে ধরে নিবে মেয়েটির তাকে পছন্দ হয়েছে। ভাবতেই খুশিতে ভরে উঠলো ভেতরটা। সে ও প্রেম করবে!

সেদিন একটি কাজে বাইরে গিয়েছিলো পান্চু। হেটে হেটে আসছিলো বিকেল দিকে। হটাৎ করেই একটা মেয়েকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অবাক হয় পান্চু। প্রথমে মনে হয়েছে মেয়েটি তার টাক মাথা থেকে বিদ্রুপ করে হাসছে পরে যখন মেয়েটি লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে হাসছিলো তখন পান্চু তাড়াতাড়ি চলে আসে সেখান থেকে। আল্লাহ’ই জানে শত্রুপক্ষের ফাঁদ কিনা। সে এসবে জড়াবে না। পরক্ষণেই পেছনে একপলক তাকিয়ে দেখে মেয়েটি তখনো মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে। গর্বে পান্চুর বুকের ছাতি ফুলে দ্বিগুন হয়ে যায়। ভাব নিয়ে গেট দিয়ে ঢুকতেই আরেকজন গার্ডের সাথে ধাক্কা খেয়ে টাকলা মাথায় ঠুস করে বারি খেয়ে আবার অজ্ঞান হয়ে পড়ে পান্চু। ইতিহাস গড়েছিলো সেদিন। এরপর আর মনেই ছিলো না মেয়েটির কথা। হঠাৎ মনে আসায় ভালোই লাগছে। এবার প্রেম না বিয়েই করে ফেলবে সে। য‍দি টাকু দেখে পরে ছেড়ে দেয়। সে ছ‍্যাকা খেতে একদম অপটু! পান্চুর মতে ছ‍্যাকা খাওয়া মানেই বিয়ের জন‍্য একবছর দেরী করা। সে এটা কোনো ভাবেই চায়না!

বিষণ্ন মনে বাড়ি ফিরছে আতইয়াব। রাত ৮ টা বাজে। মুখে মলিনতা ছড়িয়ে আছে। পুরো একঘন্টা খুঁজেছে তারিম কে। না পেয়ে হসপিটাল চলে গিয়েছিলো সে। এরপর থেকেই মনটা বেশ খারাপ। একটুখানি কথা বলার জন‍্য ছটফট করছে সে। মনের মধ‍্যে নানান চিন্তা আঁকাবুঁকি করছে। মনে হচ্ছে তারিম কে হারিয়ে ফেলবে। ভাইয়ের এমন মলিন মুখ দেখে আদরের খারাপ লাগলো। বাট বেস্টুকে কথা দিয়েছে সে একদম চুপ থাকবে। তাই কিছু বলতে পারছে না। ভালো কিছুর জ‍ন‍্য কিছু কষ্ট ফেস করতে হয়! দেখা যাক সামনে কি হয়!
#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_১৬
Tahrim Muntahana

আদরের মামা-মামি এসেছে গ্রাম থেকে। সাথে পরশ রোহানি। অসুস্থতার খবর পেয়েই ছুটে চলে এসেছে তারা। গ্রাম থেকে আদরের পছন্দের বিভিন্ন রকম আচার, পিঠা, ফল সবকিছু নিয়ে সন্ধ‍্যা নাগাদ এসে পৌঁছেছে। বেশ ক’দিন থাকবে তারা। আদর তো আনন্দে আত্মহারা। মামির মাঝে সে মা মা গন্ধ পায়। মামিও তো একজন মাটির মানুষ। দুনিয়ার সব ভালোবাসা যেন তার মধ‍্যেই উপর ওয়ালা ঢেলে দিয়েছে।
তারা তো আদরের আসল মামা-মামি না!আতইয়াবের মামা-মামি তবুও এতটা দিন আদর কে ভালোবেসে আসছে! বুঝতেও দেয়নি আদর ওদের কেউ নয় বরং সবসময় এটা বুঝাতে চেয়েছে আদর ছাড়া ওরা অচল।
বিশ্রাম করছে সবাই। মাগরিবের নামাজ আদায় করে আদর ছাদে দাড়িয়ে আছে। ভালো লাগছে না হঠাৎ করে। মন টা কেমন করছে। মনে হচ্ছে আবার খারাপ কিছু হবে। হঠাৎ রাস্তায় চোখ যেতেই আদর ভয় পেয়ে গেলো। কয়েকটা লোক আবছা আলোয় রিভলবার নিয়ে পায়চারি করছে। বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আদর এক দৌড়ে নিচে চলে গেলো। এই ভয়টাই সে পাচ্ছিলো! নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে হাঁপাতে থাকে আদর। ভয়ে হাত পা কাঁপছে তার। ভয়টা তাকে নিয়ে না গ্রাম থেকে মামা-মামি কাজিন রা এসেছে ওদের কিছু হয়ে গেলে। কি করবে মাথায় ঢুকছে না। হৃদানের কথা মনে হতেই ফোন লাগালো। রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে!

ল‍্যাপটপে কাজ করছিলো হৃদান। কাল ইমপরটেন্ট একটা মিটিং আছে। ফোনটা বিছানায় পড়ে আছে। সেদিকে খেয়াল নেই তার। হঠাৎ কাজের মাঝেই আদর কে দেখতে যাওয়ার ভুত মাথায় চাপলো। মামা-মামি আসছে নিশ্চয়ই মেয়েটা খুব খুশি। এখন কি যাওয়া ঠিক হবে? ভেবেই সিসি ফুটেজ অন করলো আদরদের বাড়ির। হঠাৎ ই আদর কে এতটা বিচলিত হয়ে কাউকে ফোন করতে দেখে চমকে উঠে হৃদান। ল‍্যাপটপ টা পাশে রেখেই ফোন খুঁজতে থাকে। কোথায় রেখেছে ফোন! কিছুক্ষণ খুঁজার পর বালিশের নিচে ফোনটা পেয়ে যায়। তখনো ফোনের উপরে আন্ডাবাচ্চা নামটা জ্বল জ্বল করছে। ধরার আগেই কেটে গেলো। ১৩ টা মিসড কল উঠে আছে। হৃদানের ভয় হলো। ফোন দেওয়ার আগেই আবার ফোন আসলো। ঝটপট ফোনটা ধরেই বলতে লাগলো,

হোয়াট হেপেন্ড আন্ডাবাচ্চা? এমন করছো কেন? এতটা বিচলিত কেন তুমি? কি হয়েছে? প্লিজ সে!

আদর জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে বলে উঠলো,

হৃদ, হৃদ আমাদের বাড়ির সামনে কারা যেন রিভলবার নিয়ে ঘুরছে। ভয় লাগছে আমার। প্লিজ সেইভ আস হৃদ। ওরা ক্ষতি করতেই এসেছে। প্লিজ কাম হৃদ। আমি বাঁচতে চাই আপনার সাথে। অনেকটা বছর একসাথে বাঁচতে চাই। আপনাকে ভালোবাসতে চাই। প্লিজ কামমমমম হৃদ!

মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়লো হৃদান। এর জন‍্য এমন করছে আদর! পরক্ষণেই গার্ডদের উপর রাগ হলো তার। বলেছে লুকিয়ে পাহারা দিতে; রাস্তা দিয়ে ঘুরছে তারা? যার জন‍্য তার প্রেয়সী এমন করছে! এতটা ভয় পাচ্ছে! হৃদান ফুস করে দম নিলো। শান্ত স্বরে বলে উঠলো,

কুলডাউন আদুপরী! ওরা আমার লোক! গার্ড দিচ্ছে তোমাকে। রিস্ক আছে জানোতো। এতটা হাইপার হচ্ছো কেন? ভালো করে খেয়াল করবে না? আ’ম সরি আন্ডাবাচ্চা তোমাকে আগেই বলা উচিত ছিলো। সুযোগ ই পাইনি।

আদর কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। কতটা ভয় পাচ্ছিলো। পরক্ষণেই ফুঁসে বলে উঠলো,

আপনাকে ক‍্যাবলাব্রিটিশ এমনিই বলি?বোকার হদ্দ, প‍্যাঁচার পোনা, ইউ বেটা খ! বি! শ! কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আপনার ধারণা আছে। কত কি ভেবে ফেলিছিলাম যে আমার চল্লিশায় কে কে আসবে, কে কে দোয়া করবে, কে কে বিনা দাওয়াত অন্ন ধ্বংস করতে আসবে, কে কে মজা করতে আসবে; আমার চল্লিশা আমি খেতে পারবো কিনা! আমার অনুপস্থিতে আপনি অন‍্য মেয়ের সাথে লুতুপুতু করবেন কিনা, যাতে লুতুপুতু না করতে পারেন তার ব‍্যবস্থাও করতে যাচ্ছিলাম। আমার মাথায় সব বুদ্ধি আপনি নিয়ে নিলেন। আপনার সাথে ১১ ঘন্টার ব্রেকআপ!

টুস করে ফোনটা কেটে দিলো আদর। আর হৃদান সে হা করে আদরের সব ভাবনা শুনছিলো। এই টুকু সময়ে এই মেয়ে কতকি ভেবে ফেলেছে। তার উপর বলছে তার বুদ্ধি নাকি আমি নিয়েছি! ভাবা যায় এসব? আবার ১১ ঘন্টার ব্রেকআপ! সকালের আগে আর কথা হবে না এজন‍্যই যে বলেছে হৃদান বুঝতে পেরেছে। হাইরে হৃদান চৌধুরী তোর এই দিন আসলো! হালকা হসলো হৃদান। আবার ল‍্যাপটপ টা হাতে নিয়ে যেইনা সোফায় বসবে ওমনি দরজা থেকে ডাক পড়লো,

খাবার দেওয়া হয়েছে; বিশিষ্ট‍ ব‍্যবসায়ী হৃদান চৌধুরী যেন খেতে আসে! বিনা পয়সায় কামলা তো একটা পেয়েছে, যে যার মতো খাটিয়ে যাচ্ছে। আমার কি কোনো দাম আছে? কামের বেটি সকিনার মতো খেটেই যাচ্ছি। এই দিন দেখার আগে তুলে নিলে না কেন আল্লাহ!

হৃদান ভ্রু কুচকে দরজার দিকে তাকালো। পেছন ঘুরে তারিম চেঁচিয়ে কথা গুলো বলে চলে যাচ্ছে। বুঝলো না হৃদান, কি হয়েছে হঠাৎ করে। রেগে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। তাই আর দেরী করলো না। হাটা ধরলো। ডাইনিংয়ে বসে আছে পান্চু, পিয়াস।। পান্চু কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। সে আসতেই চায়নি। তারিম ধমকে নিয়ে এসেছে। বড় হয়ে ছোটদের কে ভয় পেয়ে পান্চুর নিজের উপরেই বিশ্বাস উঠে গেছে। ভবিষ্যতে বউয়ের ঝারি খেয়েই তাকে বাঁচতে হবে নাকি! হৃদান কে আসতে দেখেই পান্চু উঠতে যাবে তারিম ধমকে উঠলো,

চুপ করে বসো। আমার পারমিশন নিয়েছিলে উঠার আগে? সাহস কত বড়। একদম চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দিবো। এখন থেকে বাড়িতে শুধু হৃদযা চৌধুরীর হুকুম চলবে। কোনো হৃদান পৃদানের খাওয়া নেই। সবাই কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও। বাড়ির বস আমি, তাকে দেখে উঠার কিছুই নাই। চুপচাপ খেতে বসো!

তারিমের ধমকে পান্চু আর উঠার সাহস করলো না। কে জানে ধাম করে কয়েকটা দিয়ে বসলে। মেয়ের রাগ সাংঘাতিক। অন‍্যদিকে হৃদানের মাথায় কিছুই ঢুকছে না তার শান্তশিষ্ট বোনটার হঠাৎ কি হয়েছে? এতটা রেগে আছে কেন? তার দিকে তাকাচ্ছেই না! হৃদান বসতে যাবে তার আগেই তারিম নিচের দিক তাকিয়ে বলে উঠলো,

আপনাকে আমি বসতে বলেছি? এই বাড়িতে যা করতে হবে সব আমার পারমিশন নিয়ে করতে হবে। প্রথমবার তাই ক্ষমা করলাম এরপর ভুল হলে বাড়িতেই ঢুকতে দিবো না!

হৃদান এবার নত স্বীকার করে বলে উঠলো,

আপনার মেহেরবানিতে আমি কি বসতে পারি রানীসাহেবা!

হৃদানের এমন অবস্থা দেখে পিয়াস মিটমিটিয়ে হাসছে। পান্চু তো হা করে সব দেখছে। কি দিন আসলো তার বসের। কিন্তু তার খুব একটা খারাপ লাগছে না হৃদানের এমন অবস্থা দেখে। এতদিন আমাদের হুকুম দিয়ে আসছে এখন নিজে কিছুটা হুকুম পালন করুক। হা হা হা বেশ হয়েছে! হৃদানের এমন কথায় তারিমের হাসি পেলেও মুখটা গম্ভীর করে হাত দিয়ে ইশারা করলো বসার জন‍্য। তিনজনকে খাবার দিয়ে সে রান্না ঘরের দিকে যেতে নিবে হৃদান হাত ধরে পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিলো। কিছু বলার আগেই এক লোকমা ভাত মুখে ঢুকিয়ে দেয়। তারিম চোখ রাঙিয়ে খেতে থাকে। এহ এখন ডং দেখানো হচ্ছে। তখন এতবার বলল কাল একটু ঘুরতে যাবে তখন তো হু হু ছাড়া মুখ দিয়ে কিছু বের হলো না এখন দরদ দেখাতে আসছে! তারিম কে খাইয়ে নিজে খেয়ে নিলো হৃদান। তারিম গম্ভীর মুখে সবকিছু গুছিয়ে রাখছে। হৃদান যাওয়ার আগে মুচকি হেসে বলে,

কাল বিকেলে রেডি থেকো। মিটিং শেষে ঘুরতে নিয়ে যাবো!

বলেই চলে যায় হৃদান। এদিকে তারিম সে তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে পান্চুর টাক মাথায় ঢোল বাজাচ্ছে। আর ব‍্যাচারা পান্চু চোখ মুখ কুচকে সবটা সহ‍্য করছে।
_____________________

আদর এখন মোটামুটি সুস্থ। পরশ রোহানির সাথে সময়টা তার খুব ভালো কাটছে। আতইয়াব ও কিছুটা চিন্তামুক্ত হয়ে হসপিটালে ডিউটি করছে। হঠাৎ করেই রোহানি বায়না ধরেছে ঘুরতে যাবে। সাথে সাথে পরশ ও সায় জানালো। পরশ জানে আজ আতইয়াবের হসপিটালে অপারেশন আছে তাই অনেক জোর করেছে আতইয়াবকে যাওয়ার জন‍্য! মিথ‍্যা জোর আরকি। আতইয়াব বোনের খুশির জন‍্য সায় দিলেও গার্ড নিয়ে যেতে বলেছে। আদর ও না করেনি। তার জীবন এখন হুমকির মুখে সে জেনেও তো ইগনোর করতে পারে না!

বিকেল হতেই তিনজনে বেরিয়ে পড়ে। পরশ অনেক খুশি। কারণ আজ রাইসাও আসবে। অনেক দিন দেখা হয়না তাদের। ম‍্যাসেজে টুংটুং কথা বলেই যাচ্ছে। আদরের মনটা হালকা খারাপ। রোহানির তাড়ার জন‍্য হৃদান কে বলেও যেতে পারছে না। পরে জানলে কেমন রিয়েক্ট করবে কে জানে।

গাড়ি থামলো গ্রামের একটি ব্রিজের উপর। হৃদান কে নিয়ে ভাবতে ভাবতে আদর খেয়াল ই করেনি। গ্রাম দেখে আদর বিস্মিত হয়ে গেলো। কত সুন্দর গ্রামটা। মাঝারি সাইজের নদী, নদীর পাড় টা উঁচু করে বাঁধা; সম্ভবত বন‍্যা থেকে বাঁচার প্রচেষ্টা, নদীর পাড়গুলোতে অনেক গাছগাছালি!ক্লান্ত পথিকরা এখানে অনায়েসেই বিশ্রাম নিতে পারবে, কি স্নিগ্ধ বাতাস। ব্রিজটি নতুন দেওয়া হয়েছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। কিছুটা দূরে কয়েকটা দোকান দেখতে পেলো আদর। আরো অবাক হলো সে। এখানে দোকান। খদ্দের ও আছে দেখছি। আদরের মনটাই ভালো হয়ে গেলো এরকম পরিবেশে এসে। আদর নামতে নিবে রোহানি বাঁধা দিয়ে বলল,

চুপচাপ বস, একটু পর নামতে হবে।

আদর ভ্রু কুচকালো। গাড়িতে বসে থাকবে কেন? একটু অপেক্ষা করতেই আরো দুটো গাড়ি এসে ব্রিজের উপর থামলো। রোহানি ধপ করে নেমে গেলো। পরশ আগেই নেমে ছবি তুলছে। হাতে ক‍্যামেরা। আদর গাড়ি থেকে নেমে সামনে তাকাতেই বিষ্ময়ে হা হয়ে গেলো। কি দেখছে সে? হৃদান এখানে? হৃদান ও তেমন! আদর কে এখানে এক্সপেক্ট ই করেনি সে। তার বুঝতে সময় লাগলো না সব তার বোনের কারসাজি। যাই বলুক বোন একটা ঠিক কাজ করেছে। খুশিতে তারিম কে জড়িয়ে ধরলো হৃদান। তারিম তো হিহি করে হেসে দেয়।
হৃদানের পড়নে সাদা পাঞ্জাবি; কালো সুতার কাজ করা। ঠিক আদর ও সাদা
লং গ্রাউন পড়ছে। তারিম আগে থেকেই প্ল‍্যান করে রেখেছিলো। এগিয়ে গেলো হৃদান। আদরের তো চোখ চিকচিক করছে খুশিতে। কি অসাধারণ লাগছে হৃদান কে। এই প্রথম সে পাঞ্জাবিতে দেখছে; এর আগে দেখবে কেমন করে হৃদান শুধু পাঞ্জাবি তার বাবা-মায়ের মৃত‍্যবার্ষিকীতেই পড়ে তাও চুপিচুপি। একসাথে হয়েই তারিম রোহানি চিল্লিয়ে বলে উঠলো,

সারপ্রাইজজজজজ!

ওদের চিৎকারে পিয়াস পান্চু কান হাত দিয়ে চোখ ছোট ছোট কে চেয়ে থাকে। আর আদর হৃদান তো একে অপরের দিকে তাকিয়েই আছে। পরশ ছবি তোলা অফ করে এগিয়ে এসে হৃদানের সাথে কথা বলে। পিয়াস দোকানের দিকে যাওয়ার তাড়া দিতেই পরশ বলে উঠে,

তোমরা হাটতে থাকো আমি একটু পর আসছি। রাইসা এখনো আসেনি।

পরশের কথায় সায় দিয়ে ওরা হাটতে থাকে। হৃদান আদরের ডান হাতটা নিজের বাম হাতের মুঠোয় নিয়ে হাটছে। বাম হাত ধরেনি যদি ব‍্যাথা পায়। খুব সতর্ক সে! পিয়াস বার বার রোহানির দিকে তাকাচ্ছে। সে তারিমের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। পিয়াসের কেন জানি মেয়েটাকে বেশীই ভালো লেগেছে। হঠাৎ করেই রোহানির ফোন আসায় সবাই চুপ হয়ে যায়। ফোন ধরে কানে তুলতেই অপর পাশের কথা শুনে রোহানি রেগে বলে উঠে,

রেগিং করেছে মানে? প্রপোজ রিজেক্ট করেছে বলে রেগিং দিবে? দাড়া কালকে আসছি ভার্সিটি। কয়েকদিন ছিলাম না ক্ষমতা হাতে পেয়ে গেছে? ওই মাইনকারে যদি কাল ভার্সিটির সবার সামনে মেয়েদের মতো না কান্না করিয়েছে আমার নাম রোহানি ইসলাম না!

রোহানির কথায় আদর হাসলো। সে ভাবছে কাল ছেলেটার কি হবে। কেন যে সেধে সেধে মানইজ্জত খোয়াতে আসে কে জানে। পিয়াস তো চরম লেভেলের শকড। এই মেয়েকে তো সে শান্তশিষ্ট ভেবেছিলো এতো পুরাই আগুন। নাহ পিয়াস নাহ! আর এগোস না! সাবধান! এই মেয়ে জীবনে আসলে জীবন তেজপাতা হয়ে যাবে। রোহানির কথা শুনে হৃদান বুঝলো কোন ঝামেলা হয়েছে। তাই বলল,

একা একা ঝামেলা করতে যেয়ো না। কাল পান্চু গিয়ে ছেলেটাকে দেখে নিবে। হাজার হোক আমার সার্ভিস পাওয়া তোমার শালীগত অধিকার!

হৃদানের কথায় রোহানি জোরে হেসে দিলো। ভাব নিয়ে বলে উঠলো,

আরে নাহ জিজু। এইসব আমার পাঁচ মিনিটের কাজ। বেশ নামডাক আছে ভার্সিটিতে! এক নামে চিনে সবাই। ভয়ে থরথর করে কাঁপে। আমিই সামলে নিতে পারবো!

রোহানির কনফিডেন্সে হৃদান হাসলো কথা বললো না। আর পিয়াস তো ক্রাশ নামক বাঁশটা আবার খেলো। নাহ তার মায়ের জন‍্য এমন একটা বউমাই লাগবে। যেমন মা তেমন বউ হবে। বউ-শাশুড়ি খাপেখাপ।

দোকানের দিকে এসে পৌঁছেছে ওরা। বেশ ভালো পরিবেশটা। কিছু কিছু ছেলেমেয়ে সময় কাটাচ্ছে নিজেদের মতো। একটা ছোট পার্ক সাইট ও বলা চলে। চায়ের দোকান, ফুচকা, ঝালমুড়ির দোকান, আইসক্রিমের দোকান, কসমেটিকসের দোকান ও আছে! আদর তো লাফিয়ে উঠলো এসব দেখে। রোহানি দৌড়ে গিয়ে ফুচকা অর্ডার দিলো। আদরের ঝালমুড়ি খুব পছন্দ। ফুচকা ওতটাও পছন্দ না; তবুও খুব একটা খারাপ লাগে না। রোহানি দোকান থেকে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

আজ তোমার পকেট ফাঁকা করে ছাড়বো জিজু!

হৃদান হাসলো। কতই খাবে আর। হৃদান আর আদর ঘাসের উপর বসেছে। কথা বলছে আর হাসছে দুজনে। এর মধ‍্যে পান্চু দু প্ল‍্যাট ঝালমুড়ি এনে দিতেই আদর লুফে নিয়ে খেতে শুরু করে। প্রথমে টের না পেলেও কয়েক চামচ খাওয়ার পর যখন ঝালে চোখ মুখ লাল হয়ে যায় তখন খাওয়া থামিয়ে দেয় আদর। একদম ঝাল খেতে পারেনা সে। এতটা ঝাল হবে ভাবেনি। হৃদান একটু একটু করে খাচ্ছে। সে ভালোয় ঝাল খেতে পারে। প্রথমে নাক ছিটকালেও আদরের খাওয়া দেখে লোভ সামলাতে পারেনি। মুখে দিতেই নিজেরো ভালো লাগে। হঠাৎ আদর কে খাওয়া থামিয়ে হাঁপাতে দেখে ফট উপর আদরের দিকে তাকায় হৃদান। আদরের চোখ মুখ লাল দেখে ভয় পেয়ে যায়। চেঁচিয়ে পানি আনতে বলে।
পান্চু সবাই কে দিয়ে কেবল একটা ফুচকা মুখে দিচ্ছিলো বসের চেঁচানো তে তেতুলের পানি শার্টে পরে শার্ট ভিজে যায়। সেদিকে না তাকিয়ে পানি নিয়ে দৌড়ে এগিয়ে যায়। ঢকঢক করে পানি গিলে আদর। ঝাল একটু কমলেও হৃদানের রাগ কমলো না। সব রাগ গিয়ে জমা হলো ঝালমুড়িওয়ালার উপর। রেগে গিয়ে বলে উঠলো,

ঝাল দিতে বারণ করা হয়েছিলো না। এত ঝাল দিয়েছেন কোন সাহসে। ঠিক ভাবে বানাতে পারেন না। স্টুপিড!

ঝালমুড়িওয়ালার মুখটা মলিন হয়ে যায়। আদরেরও খারাপ লাগে। এগিয়ে গিয়ে হৃদানের হাত ধরে অনত্র নিয়ে আসে। পিয়াস গিয়ে লোকটাকে সরি বলে। সাথে এও বলে হৃদান পাগল। পান্চু তো পিয়াসের কথায় হেসে খুন। লোকটার মন ভালো করতে পিয়াস হৃদানের নামে উল্টাপাল্টা বলেই যাচ্ছে। একবার যদি হৃদান জানতে পারে পিয়াসের কি হবে আল্লাহ মালুম! লোকটাও হেসে দেয় একসময়। রোহানি সবটা দেখে ফুচকা খেতে খেতে। ব‍্যাপারটা বেশ ভালোলাগে তার!

আদর গম্ভীর মুখে হৃদানের দিকে তাকিয়ে আছে। হৃদান মাথা নিচু করে আছে। মনে হচ্ছে বেশ ভয়ে আছে। আদর শান্ত সুরে বলে উঠলো,

আপনি জানেন উনার কত কষ্ট লেগেছে। ভুল হতেই পারে তাই বলে এমন করবেন। আপনারা এমন করেন বলেই উনারা ভাবে গরিব বলে উনাদের সাথে এমন করা হয়। সব ধনীদের এক ভাবে উনারা। এরপর এমন করলে আপনার খবর করে দিবো। যাওয়ার সময় সরি বলবেন। এমন পাগলামি করার মানে আছে!

আদরের কথায় মুগ্ধ হয় হৃদান। সে এমন কখনোই ভাবেনি। আদরের ভাবনা সত‍্যিই আলাদা। আদরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

আমি প্রেমে পাগল, তাই পাগলামি করি!
উন্মাদনা ছাড়া পাগলামি বুঝাতে পারিনা!
কারণ আমি,
ব‍্যকুলতায় উদ্ভাসিত কবিতা
রচনা করতে পারিনা!
আমি কবি নয়, প্রেমিক আমি!
এক ভয়ংকর পাগল প্রেমিক!
যার সূচনা হয়েছিলো তুমিতে!
তেমনি,
তোমার ভুমিকাতেও আমি,
উপসংহারেও আমি!
উপসংহারের শেষটাও হবে আমাকে ঘিরে,
শুধুই আমি!

চলবে…?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here