মাদকাসক্ত স্বামী
___________________
লেখিকা:বাবুনি
________________
(পার্ট:৯)
তারপর সে ঐ ভাঙ্গা ফোন টা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো__ না ওর ফোন টা আর ফোন মনে হচ্ছে না মনে হচ্ছে এইটা কোন খেলনার জিনিস__ ভেঙ্গে গিয়ে একদম টুকরো টুকরো হয়ে গেছে উপরের গ্যালাক্স __ ফোনের ভেতরের নারী ভুঁড়ি সব দেখা যাচ্ছে__ সে ঐ ভাঙ্গা টুকরো গুলোই হাতে তুলে নিচ্ছে__ হাতে তুলার সময় অসাবধানতাবশত, নিচে পড়ে থাকা গ্যালাক্স হাতের আঙ্গুলে ফুটে গেলো__
কলকল করে রক্ত বের হচ্ছে ওর আঙ্গুল দিয়ে__ ওর ঐদিকে কোন ভ্রূক্ষেপ নেই, ও ফোনের ভাঙ্গা টুকরো কুঁড়াতেই ব্যস্ত__
ওর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে কান্না ও পাচ্ছে, কিন্তু চোখ দিয়ে একফোঁটা পানিও বের হচ্ছে না আর__ যেনো পাথর হয়ে জমে গেছে চোখের পানি চোখেই __
আঙ্গুলে ব্যাথা অনুভব করতে পারলো হঠাৎ, আঙ্গুলের দিকে তাকিয়ে রইল__ লাল টকটকে রক্ত বের হচ্ছে আঙ্গুল থেকে__
“তাম্মি” মনে মনে বললো, বের হোক এ আর তেমন কি__ হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেটা তো এর থেকেও বেশি__ বেশকিছুক্ষণ এইভাবে বসে থাকলো সে ফ্লোরে__ তারপর আনমনেই বলে উঠলো, সবিই তকদির __ ঐ তকদির টা যে আল্লাহ লিখেন__ ওনি যা করেন বান্দার ভালোর জন্য ই তো করেন__ তাছাড়া যার দুঃখ বেশি তার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা টাও বেশি__ কি হবে আর কষ্ট পেয়ে , উঠে রুমটা আগে পরিষ্কার করার দরকার __তা না হলে বাসার আর কেউ দেখে ফেললে উপায় নেই__ “রিমি” দেখলে তো তুলকালাম কাণ্ড করে ফেলবে ,আম্মু আব্বুকে ও বলে দেবে__ আসলে ও আমায় খুব ভালোবাসে তো তাই, আমার কষ্ট সহ্য করতে পারবে না__ তাছাড়া ওনাকে ও হয়তো বাসা থেকে বের করে দেবেন আব্বু__ থাক আমার জন্য ওনি কেন ওনার নিজের বাসা থেকে বের হবেন__ আমি ই চলে যাবো দুটো দিন সময় চেয়েছি__মাত্র ই তো দুটো দিন, না হয় একটু সহ্য করে নেই এসব পাগলামি__
সে রুমটা ভালোভাবে পরিষ্কার করলো, তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজ টা পড়ে নিলো ফজরের__ নামাজ শেষে রান্না ঘরে চলে গেল, নাস্তা তৈরি করতে__ হাতে খুব ব্যাথা করছে ওর আঙ্গুল টা কেমন হাঁ করে আছে কেটে __ ঐদিকে আর বেশিক্ষণ না তাকিয়ে “রাহিমাকে”(কাজের মেয়ে) ডেকে নিলো__
তারপর দুজনে মিলে নাস্তা তৈরি করতে লেগে গেলো__
“তাম্মির” হঠাৎ খেয়াল হলো ওয়ারড্রভের আয়না তো ভেঙ্গে গেছে__ এখন যদি কেউ দেখে ফেলে, তাহলে কি হবে__ “রামিমের” আজকের এই পাগলামির কথা নিশ্চয়ই কারো অজানা নয় এই বাসার সবার__ যে কেউ ঐ ভাঙ্গা আয়নার দিকে তাকালেই বুঝতে পেরে যাবে , কি ঘটেছিল__
কি করা যায় এখন, চট করে ওর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল__ সে “রহিমা কে ” বলল , তুমি কাজ কর আমি একটু আমার রুম থেকে আসছি__
“রহিমা” আইচ্ছা ভাবিজান __
“তাম্মি” দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমে প্রবেশ করলো__ কেউ উঠে ওর রুমে এসে গেলে কেইস খেয়ে যাবে__ তাই দরজা টা বন্ধ করে দিল, দিয়ে তাড়াতাড়ি করে ওর একটা নতুন ওড়না বের করে নিল__ তারপর কাঁচি দিয়ে কেটে নিল ওরনা টাকে আয়নার মাপে__ সেলাই করে নিল নিজ হাতে, যদিও কষ্ট হচ্ছিল সেলাই করতে হাতের আঙ্গুল কেটে যাওয়ায়__ তবুও তার এখন এসব ভাবার সময় নেই, সে ব্যস্ত কিভাবে তার স্বামীর অপরাধ টা ঢাকা যায়__ যাইহোক সবে মাত্র সে পর্দা টা আয়নার সামনে নিয়ে গেছে লাগানোর জন্য__ ওমনি রুমের দরজায় এসে ডাক দিল, “রিমি” ভাবি ও ভাবি___ ওঠো নি তুমি , আজ এতো লেট যে___
“তাম্মি” জবাব দিলো আসছি দাঁড়াও__ তাড়াতাড়ি পর্দা টা ভাঙ্গা আয়নার উপর লাগিয়ে দিল__ তারপর সুঁই সুতোর বক্স টা জায়গা মতো রেখে দিয়ে দরজা খুলে দিল___ চোখে ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে বললো, আর বলো না মাথা টা খুব ব্যাথা করছিলো__ তাই শুয়ে পড়লাম রান্না ঘর থেকে এসে__
“রিমি” ওহ আচ্ছা তাহলে শুয়ে থাকো পরে কথা হবে__ আমি দেখছি রান্না ঘরে গিয়ে __
“তাম্মি” বললো হুমমম___
“রিমি” রান্না ঘরে এসে , দেখলো রহিমা রুটি তৈরি করছে__ ওর উদ্দেশ্যে বললো__
কি রে রান্না ঘরটা তুই সামলাতে পারিস না নাকি__ ভাবির মাথা ব্যথা নিয়ে রান্না ঘরে আসতে হয় কেন__!
“রহিমা” ওর এমন কথা শুনে বেকাচেকা খেয়ে গেলো বলল, আফা ভাবি তো আমার আগেই উঠছে__ আমারে ডাইকা আনলো নাস্তা বানাইতে , তয় হঠাৎ কইলো রুমে যাইতেছে এহটু পর আইবে__ আমারে মাথা ব্যথার কথা কয় নাই__
“রিমি” ও ওযেনো বোকা বনে গেলো একথা শুনে__ মনে মনে বলল, তাহলে ভাবি কি আমাকে মিথ্যা বললো__ আর ভাইয়া কে ও তো রুমে দেখলাম না__ তাহলে কি ভাবি আমার কাছ থেকে কিছু লুকোচ্ছে__ দেখতে হবে বিষয় টা কি, কেন ভাবি মিথ্যা কথা বলল__ ভাবি তো মিথ্যা কথা বলার মতো মানুষ না __ তাহলে____ এসব ভাবতে ভাবতে ও নাস্তা তৈরি করে সবাইকে নাস্তা খেতে ডাকলো___
সবাই নাস্তার টেবিলে হাজির, শুধু “রামিম” নেই__
“রামিমের আম্মু” তাম্মিকে জিজ্ঞেস করলেন__
বউমা ,”রামিম” কোথায়__! ও কি এখনও ঘুমোচ্ছে__!
“তাম্মি” ইয়েয়য় মানে আম্মু____
ও কি বলবে বুঝতে পারছে না__ এর মধ্যেই “রিমি” বলে দিলো__
আম্মু তোমার গুনধর ছেলে ভোর হতেই বের হয়ে গেছেন বাসা থেকে___
এ কথা শুনে “আসমা বেগম” কিছুক্ষণ রফিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে , খাওয়ায় মন দিলেন আবার__ যেনো কোনো চিন্তাই নেই , “রামিমের” জন্য থাকবেই বা কেন__ ওর স্বভাব কি তাদের জানা নেই__ ওর কষ্ট হলে অথবা রাগ হলে বাসা থেকে বের হয়ে যায় কিছু না কিছু ভাঙ্গা ভাঙ্গি করে__
কিন্তু “আসমা বেগম , এবং রফিক সাহেব” দুজন ই বেশ অবাক হলেন __ না ওর বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়া নিয়ে না, কিছু যে ভাঙচুর হয় নি আজ তাই___
“তাম্মি” বিষয়টি অনুধাবন করতে পারলো, তার মুখে রাজ্য জয়ের হাসি ফুটে উঠলো__ সে মুচকি হেসে মনে মনে বলল, যাক বাঁচা গেল কেউ বুঝতে পারে নি___
কিন্তু “রিমির” কিছুতেই ঘুর কাটলো না এই বিষয়ের উপর থেকে__ ওর বাবা মা বিষয়টিকে সহজ ভাবে নিতে পারলেও ও নিতে পারে নি__ কারণ ওর ভাইকে হাড়ে হাড়ে চিনে , ওর ভাই কিছু না ভেঙ্গে যে এত সকাল বাসা থেকে বের হয়ে গেল__ সেটা ওর বিশ্বাস ই হলো না__
হঠাৎ সে “তাম্মির” দিকে লক্ষ্য করলো__ তাম্মি, ভালো ভাবে খেতে পারছে না সে হাতে চামচ টা ঠিক মতো ধরে নি সে__ মধ্যমা আঙ্গুল এর সাহায্যে খাচ্ছে__ “রিমি” বুঝতে পারছে না কি হয়েছে , কিন্তু এটা বুঝতে পারছে কিছু একটা তো হয়েছে নিশ্চয়ই___
সে এই মূহুর্তে কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে , স্বাভাবিক ভাবে খেতে লাগলো__ এ বিষয়ে সে পরে কথা বলে নিবে তাম্মির সাথে__
খাওয়া শেষে যে যার রুমে চলে গেল,
“তাম্মি” শুয়ে আছে বিছানায় ওর মাথাটা খুব ধরছে এবার সত্যি সত্যি___
“রিমি” রুমে আসলো__ ভাবি কি করছো__!
“তাম্মি” তাড়াতাড়ি ডান হাত টা শাড়ির আঁচলে লুকিয়ে বলল, কিছু না একটু শুয়ে ছিলাম__ মুখে মিথ্যে হাসির রেখা টেনে___🙂
“রিমি” ভাবি , তুমি কি আমার থেকে কথা লুকিয়ে রাখতে পারবে___
“তাম্মি” মানে___!
“রিমি” এত মানে মানে করছো কেন, তোমার হাতে কি হয়েছে__!
“তাম্মি” কই কিছু না তো ___
“রিমি” ভাবি , তুমি আমাকে কেন পর মনে করছো__ আমি তো তোমার ছোট বোনের মতোই__ আমাকে সব খুলে বলো প্লিজ , আমি আব্বু আম্মু কে কিছু বলবো না প্রমিজ করছি___
“তাম্মি” এবার ওকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল__ তারপর সবকিছু খুলে বললো__
“রিমি” তাম্মিকে, শান্তনা দিয়ে ওর হাতে ব্যান্ডেজ করে দিল__ আর বললো ভাবি, আম্মু আব্বু কে কিছু বলো না প্লিজ__ যদি দেখে ফেলে তাহলে বল হালকা কেটে গেছে সবজি কাটতে গিয়ে__ তা না হলে যে ভাইয়া কে বের করে দিবে বাসা থেকে , আব্বু ওর উপর খুব অসন্তুষ্ট ___
“তাম্মি” আমি এমনিতেই কিছু বলতে চাই না, রিমি___ এই জন্য ই সব কিছু গোপন রাখতে চেয়েছিলাম__
“রিমি” আমি বুঝতে পারছি ভাবি__
দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো , এখনও বাসায় ফিরার নাম নেই “রামিমের”___
রাত ১০টার দিকে ও রোজকার মতো, মাতাল হয়ে ঘরে ফিরলো__
খুব শান্ত ছিমছাম পরিবেশ___ কেউ কোনো কথা বললো না, ও নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো__ ওর খেয়াল ই নেই , “তাম্মি” যে সোফায় ঘুমোতে পারে না__
সে এতটাই নেশাগ্রস্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে__
“তাম্মি” রুমে এসে, ওর ঘুমন্ত মায়াবী চেহারার দিকে তাকিয়ে চোখের জল ছেড়ে দিলো__ তারপর রামিমের, হাত থেকে হুইস্কির বোতল টা ছাড়িয়ে নিয়ে বাইরে ফেলে দিল__ তারপর “রামিমের” পায়ের পাশে বসে জুতো জোড়া খুলে দিলো___” রামিম “অঘুড়ে ঘুমোচ্ছে কিছুই বুঝতে পারলো না___
তারপর, কাঁথা টা হালকা গায়ের উপর টেনে দিলো___
সোফায় গিয়ে ও বসে রইল, ওর যে সোফায় ঘুম আসে না___ বসে বসে ভালো লাগছিল না ওর, সে কিছুক্ষণ ছাদে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করলো__ স্নিগ্ধ চাঁদের আলো গায়ে মেখে নিয়ে, রুমে এসে তাযুদের নামাজ পড়লো__ তারপর আবার সোফায় বসে বসে ঝিমুচ্ছে ও, কখন যে চোখে ঘুম নেমে এসেছে ওর তা ও নিজেই জানে না____
চলবে___!